ত্রিভুজ প্রেম পর্বঃ২৩

0
1126

ত্রিভুজ প্রেম
পর্বঃ২৩
জান্নাতুল ফেরদৌস সূচনা

বিয়ের পর আজ এক সপ্তাহ কেটে গেছে পুষ্পর এ বাসায়। এ ৭ দিনে পুষ্প দাদার খুব ভালোই সেবা-যত্ন করেছে। এতে দাদাও আগের থেকে কিছুটা সুস্থ হয়ে ওঠেছে। তবে পুষ্প এখনো নিজের শ্বশুরবাড়িতে মেহমানের মতোই আছে। তার এ বাড়িতে কোন অধিকার নেই। আর সেও কোনো কিছুতেই দাবি রাখছে না।

কেবিনে বসে বসে রাইয়ান তার দাদার ডক্টরের দেওয়া রিপোর্টগুলো দেখছে। আগের থেকে খুব ভালো ইমপ্রোভ করছে দেখে রাইয়ান খুব খুশি।

– আসতে পারি?
– আরে উকিল সাহেব, আসেন।

অফিসে উকিলকে রাইয়ানের কেবিনে ঢুকতে দেখে পাপড়ি অবাক হয়। তাই সে চুপিচুপি রাইয়ানের কেবিনের বাহিরে দাড়িয়ে ভিতরের কথা শোনার চেষ্টা করছে।
পাপড়ি সব কথা না শুনলেও রাইয়ান আর উকিল যে ডিভোর্স নিয়ে কথা বলছে তা ঠিকই বুঝতে পেরেছে।
পাপড়ি মনে মনে খুশি হয়। আপু আর রাইয়ানের ডিভোর্স হলেই সব ঝামেলা শেষ। এরপর রাইয়ান তাকে বিয়ে করবে। এসব ভেবে পাপড়ির মনটা আনন্দে ভরে ওঠে।

একটুপর উকিল রাইয়ানের কেবিন থেকে বেরিয়ে যেতেই পাপড়ি কেবিনে যায়।
– মে আই কামিন স্যার?
-হুম।
পাপড়ি ভিতরে ঢুকেই টেবিলের ওপর রাখা ডিভোর্স পেপারগুলো দেখতে পায়। ডিভোর্স পেপারগুলো দেখে পাপড়ি একটা মুচকি হাসি দিয়ে বলে,
-স্যার, আপনি তাহলে আপুকে ডিভোর্সটা দিয়েই দিচ্ছেন?
রাইয়ান কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,
-হ্যা। শুধু শুধু মিথ্যে সম্পর্ক নিয়ে আমি থাকতে পারবো না।
-এরপর কি করবেন আপনি?
রাইয়ান পাপড়ির দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসি দিয়ে বললো,
– এরপর আমার মা যেই মেয়েকে পছন্দ করবে তাকে বিয়ে করবো।
রাইয়ানের মুখে এমন কথা শুনে পাপড়ির মুখের হাসি উধাও হয়ে যায়। সে চমকে ওঠে বলে,
-কিন্তু আপনি তো আমাকে…..
-ভুলেও তা চিন্তা করো না। তোমাকে এখন আমার আর সহ্য হয় না। তোমার কারণে আমি এতোটা কষ্ট পেয়েছি। তোমাকে সহ্য করছি শুধু তোমার বোনের শর্তের কারণে৷ আর আমাদের ডিভোর্সের কথা শুনে এতো খুশি হওয়ার দরকার নেই কারণ এ ডিভোর্স হলে এ শর্তও শেষ হয়ে যাবে আর সাথে তোমার এই চাকরিটাও। এরপর তোমাকে আমার আর এই অফিসে দেখতে হবে না।
বলেই ডিভোর্স পেপারগুলো নিয়ে রাইয়ান কেবিন থেকে বের হয়ে যায়।

রাইয়ানের মুখে এমন কথা শুনে পাপড়ির মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। রাইয়ান কি তাকে আর ভালোবাসে না? রাইয়ানের মনে তাকে নিয়ে এতোটাই বিষাদ ভরে ওঠেছে যে রাইয়ান এখন তাকে সহ্য করতে পারে না। এসব ভাবতে ভাবতেই পাপড়ির চোখ থেকে দুফোটা পানি নিচে পড়ে যায়।

রাইয়ান বাসায় এসেই সরাসরি পুষ্পর কাছে গিয়েই তার সামনে ডিভোর্স পেপারগুলো ছুড়ে মারে। রাইয়ানের এমন আচরণ দেখে পুষ্প অবাক হয়ে তাকায় রাইয়ানের দিকে আর বলে,
– কি এগুলো?
– ডিভোর্স পেপার। আমার দাদাভাই এখন আগের থেকে অনেকটা সুস্থ হয়ে গেছে। এখন আর আপনার এখানে থাকার কোনো দরকার আছে বলে আমার মনে হয় না। ডিভোর্স পেপারে সাইন করে আপনি কালকেই চলে যেতে পারেন।
রাইয়ানের কথাগুলো পুষ্পর মনে কাটার মতো বিধে ওঠে। কিন্তু এতো কষ্ট পাচ্ছে কেন সে? এটাই তো হওয়ার কথা ছিলো।
কিছুক্ষণ চুপ থেকে পুষ্প বলে,
-আমি এ বাড়ি থেকে চলে গেলে কি আমার শর্তটাও শেষ হয়ে যাবে?
– হুম।
-তাহলে আমি ডিভোর্স পেপারে সাইন করবো না।
-মানে? কি বলতে চাচ্ছেন আপনি?
– আমি বলতে চাচ্ছি যে, আপনি আগের শর্তটা মানলেই আমি এ ডিভোর্স পেপারে সাইন করবো। আমার ভুলের কারণে আমার বোনের জীবনটা নষ্ট হয়ে যাক তা আমি চাই না। তাই আমি চাই আমি এ বাড়ি থেকে চলে গেলেও পাপড়িকে আপনি অফিস থেকে বের করে দিবেন না।
পুষ্পর এমন কথা শুনে রাইয়ান চিন্তায় পড়ে যায়। সে এসব কিছু থেকে নিজের পিছুটা ছাড়াতেই পারছে না।
রাইয়ানকে চুপচাপ দাড়িয়ে থাকতে দেখে পুষ্প আবার বললো,
– কি হলো কথা বলছে না যে?
-ওকে, আপনার শর্তে আমি রাজি। সাইন করুন।
পুষ্প ডিভোর্স পেপারগুলোতে সাইন করে দেয়। সাইন করার সময় পুষ্পর বুকে চিনচিন ব্যাথা করছে। এ ব্যথার কারনটা খুঁজে পাচ্ছে না পুষ্প।
– তিন দিন পর আমাদের দুজনকে কোর্টে যেতে হবে। ঐদিন আমাদের ডিভোর্স পেপারগুলো কোর্টে সাবমিট করবো। আর আশা করি ঐদিন আমাদের শেষ দেখা হবে।

বলেই ডিভোর্স পেপারগুলো নিয়ে রাইয়ান বাহিরের দিকে চলে যায়। বাহিরে যেতেই মিসেস মাহমুদার সাথে রাইয়ানের দেখা হয়।
– কি ব্যাপার রাইয়ান, এখন আবার কোথায় বের হচ্ছিস? আর হাতে কিসের পেপার এগুলো?
– ডিভোর্স পেপার। এগুলো নিয়ে উকিল সাহেবের কাছে যাচ্ছি।
ডিভোর্সের কথা শুনে মিসেস মাহমুদা খুশি হয়ে বলল,
-মেয়েটা সাইন করেছে পেপারে?
– হুম।
-যাক আপদ বিদায় হবে। এরপর তোকে আমি আমার পছন্দের মেয়ের সাথে খুব ধুমদাম করে বিয়ে দিবো।
রাইয়ান আর কোন কথা না বলে চুপচাপ বাহিরে চলে যায়।

রাতে দাদাকে খাবার খাওয়াচ্ছে পুষ্প আর মনে মনে ভাবছে,
-কাল থেকে এসব কিছু করার আর সুযোগ থাকবে না আমার। দাদার সাথেও হয়তো আর কোনদিন দেখা হবে না। এ বাড়িতে দাদাকে পেয়েই আমি নিজের কষ্টগুলো ভুলে থাকতে পেরেছি।
পুষ্পকে এমন আনমনা দেখে দাদা জিজ্ঞেস করলো,
-কিরে দাদুভাই এমন আনমনা হয়ে আছিস যে? কি হয়েছে?
-কই, কিছু না তো। নাও ঔষধগুলো খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ো। আমিও যাই।
ঔষধ গুলো খাওয়ায়ে পুষ্প পেছন ফিরতেই পেছন থেকে দাদা তাকে ডাক দেয়,
-শুন দাদুভাই?
– আবার কি হলো?
-বস আমার পাশে।
পুষ্প দাদার পাশে বসতেই দাদা ওর হাত ধরে বললো,
– তুই এ বাড়িতে আসায় এ বাড়িটা পরিপূর্ণ হয়ে ওঠেছে। তোকে একএক করে এ বাড়ির সব দায়িত্ব নিতে হবে। সবার খেয়াল রাখতে হবে। আমার নাতি রাইয়ানের দিকে খেয়াল রাখবি। ওকে অনেক ভালোবাসবি। ছোটবেলা থেকে মা-বাবার আদর খুব কম পেয়েছে ও। ওর কাছের মানুষ বলতে আমিই আছি। আর আমিও চলে গেলে ওকে আর একা হতে দিস না।
-চুপ করবে তুমি। এসব কি কথা বলছো তুমি?
-বলতে যে আমাকে হবেই। তোর শ্বাশুড়ি তোকে অনেক বকে তাই নাহ?
-কই নাহ তো।
-তুই না বললেও আমি জানি। তবে তোর শ্বাশুড়ি ওপরে ওপরে নিজেকে কঠোর দেখালেও কিন্তু ভিতর থেকে মনটা অনেক নরম। তোকে তোর শ্বাশুড়ির মনটাও জিততে হবে। আর আমার রাশেদের কথা আর কি বলবো। ও ওপরে সবাইকে নিজেকে হাসিখুশি দেখালেও ওর ভিতরে ভিতরে যে কতটা কষ্ট পায় সেটা আমি জানি। প্রতি রাতেই আমার পাশে বসে কাঁদে রাশেদ। সে ভাবে আমি ঘুমিয়ে থাকি কিন্তু আমি যে ওর বাবা ওর সব কষ্টই আমি বুঝি। আমি চলে গেলে সবাইকে সামলানোর দায়িত্ব তোর। তুই এসব দায়িত্বগুলো ঠিকমতো নিতে পারবি তো?
দাদা এসব কথায় পুষ্পর চোখের কোণে পানি জমে যায়। আর মনে মনে বলে,
– কাল থেকে যার এ বাড়িতে কোন অস্তিত্ব থাকবে না তাকে তুমি এসব দায়িত্ব দিতে চাচ্ছো দাদুভাই?
দাদা আবার বললো,
– কি হলো কিছু বলছিস না যে?
– আরে দাদাভাই তুমি এসব সেন্টি কথা বলো না তো। তুমি আরো অনেকদিন বাঁচবে। এসব কথা বলে আর নিজেকে ইমোশনাল করো না। ঘুমাও এখন।
দাদা একটু হাসি দিয়ে বলল,
– আমি জানি, তুই সব দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করবি। তুই ই এ বাড়ির যোগ্য বউ।

দাদাকে ঘুম পাড়িয়ে রুমে চলে আসে পুষ্প। এসে দেখে রাইয়ান বিছানায় শুয়ে আছে। পুষ্প কোনো কথা না বলে সে পাশের সোফায় শুয়ে পড়ে।

মাঝরাতে রাইয়ানের ঘুম ভেঙে যায়। তার মনটা কেমন খা খা করছে। সবকিছুই তো তার ইচ্ছে মতো হচ্ছে তবে কেনো এমন অস্বস্তি লাগছে তার। পাশ ফিরতেই সোফায় শুয়ে থাকা পুষ্পকে দেখতে পায়।
পুষ্প শীতে কুজো হয়ে শুয়ে আছে। তাই পাশ থেকে কাঁথাটা নিয়ে রাইয়ান পুষ্পর শরীরে মুড়িয়ে দেয়। পুষ্পর চুলগুলো এলোমেলো হয়ে আছে। রাইয়ান তার চুলগুলো হাত দিয়ে সরিয়ে দেয়। জানালা দিয়ে চাঁদের আলো এসে পড়ছে পুষ্পর মুখে। ঘুমের মধ্যে পুষ্পর চেহারাটা মায়াবী হয়ে ওঠেছে। রাইয়ান অপলক ভাবে তাকিয়ে থাকে পুষ্পর দিকে।

“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
কিছুক্ষণ পরই রাইয়ান হুশ ফিরে। নিজেকে সামলে নিয়ে রুমের বাহিরে গিয়ে রাইয়ান বলে,
-এসব কি করছি আমি। আমি পুষ্পকে এমন নজরে কেন দেখলাম। আমার মনে তার জন্য কোন ফিলিংস নেই। এসব ভাবাও পাপ আমার জন্য।

রাতে কিছুতেই ঘুম আচ্ছে না মি. রাশেদের। তার মনটা খুব আশফাশ করছে।
-বারবার কেন বাবার মুখটা চোখে ভেসে ওঠছে। একটু আগেই তো বাবাকে দেখে এসেছি তবুও মনটা এমন ব্যাকুল হয়ে ওঠেছে কেন। কিছুতেই ঘুম আসছে না। নাহ! এভাবে আর থাকতে পারছি না, যাই বাবাকে একবার দেখে আসি।

রাইয়ান তার রুমে সামনে পায়চারি করে সব ভাবছে।
-যা করছি সব ঠিক করছি তো।  যাকে ভালোবাসি না তাকে নিয়ে সারাজীবন থাকাটাও ঠিক হবে না।
হঠাৎ মি. রাশেদের চিৎকার শুনতে পায় তার দাদার রুম থেকে। রাইয়ান দৌড়ে তার দাদার রুমে যায়।

চলবে…….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে