ত্রিভুজ প্রেম পর্বঃ২২

0
1125

ত্রিভুজ প্রেম
পর্বঃ২২
জান্নাতুল ফেরদৌস সূচনা

পু্ষ্প রাইয়ানের সাথে বাসায় এসেই দাদার রুমে ঢুকে পড়ে। পুষ্পকে দেখে রাইয়ানের দাদা চোখের পানি ছেড়ে বলে,
– কোথায় গিয়েছিলি, দাদুভাই?
দাদার মুখে এমন কথা শুনে পুষ্প অবাক হয়ে ভাবে,
-এ বাড়িতে তাকে কেউ পছন্দ করে না অথচ দাদার এতো আপন হয়ে গেলাম কিভাবে? অবশ্য আমার বিয়ের সত্যিটা জানলে তিনিও হয়তো আর আমাকে আপন ভাববেন না।

– কিরে নাতবৌ কথা বলছিস না কেন?
দাদার কথায় হুশ ফিরে পুষ্প। দাদার দিকে ফিরে মলিন একটা হাসি দিয়ে বললো,
– কথা তো বলবোই না। তুমি খাবার খাচ্ছো না, ঔষধ খাচ্ছো না? আবার এখন কান্নাও করছো। তোমার মতো পঁচা দাদার সাথে কে কথা বলবে?
দাদা পুষ্প এমন কথায় হেসে বললো,
– কি করবো বল, সকাল থেকে তোর সাথে দেখা করতে চাচ্ছি অথচ কেউ তোর সাথে আমাকে দেখাই করতে দিচ্ছে না। তাই রাগ করে কিছু খাই নি।
– শোনো দাদার কথা। আমি না থাকলে কি তুমি এইভাবেই খাওয়া দাওয়া ছেড়ে দিবে?
-হ্যা। কিছুই খাবো না।
-খবরদার, আবার যদি এমন কথা বলো তো এখন সত্যিই সত্যিই চলে যাবো।
– না…না, তোকে যেতে হবে না। আমি এখন সব খেতে রাজি।
– তো এখন লক্ষ্মি দাদুর মতো খাবার গুলো খাও। আমি তোমাকে খাইয়ে দিচ্ছি।

দাদার রুমের দরজার পাশে দাড়ীয়ে রাইয়ান এসব দেখে ভাবছে,
– একদিনে মেয়েটা এসেই দাদাভাইয়ের এতো আপন হয়ে ওঠলো। ওফ, আর পারা যায় না দাদাভাইকে নিয়ে।

বিছানায় শুয়ে শুয়ে পাপড়ি ভাবছে,
– স্যার তো আপুর শর্তে রাজি হয়েছে। আমি কি কাল অফিসে যাবো? স্যারের কাছে তো আমাকে ক্ষমাও চাইতে হবে। আপুর ভুলের জন্য তো আর আমি নিজের জীবনটা নষ্ট করতে পারি না। আমি কালকে গিয়েই আমার সব ভুলের জন্য ক্ষমা চেয়ে নিবো। আর স্যার ডাকছি কেন? তিনি তো আমায় পছন্দ করে তাকে তো আমি নাম ধরেই এখন ডাকতে পারি।
বলেই মুচকি হাসি দিল পাপড়ি।

পুষ্প দাদাকে খাইয়ে, ঘুম পাড়িয়ে রুম থেকে বের হয়ে এসেছে। কিন্তু এখন রাতে কোথায় থাকবে সেটাই চিন্তা করছে সে। এ বাড়িতে তো তার কোন অধিকারই নেয়।
সকাল থেকে এখনো কিছু খাইনি পুষ্প। শরীরটাও তার দুর্বল লাগছে। কাউকেই দেখছে না আশেপাশে।
কিছুক্ষণ চুপচাপ দাড়িয়ে পুষ্প রাইয়ানের রুমের দিকে দুকদম এগুতেই মাথা ঘুরিয়ে পড়ে যায় পুষ্প।

সকালে চোখ খুলতেই নিজেকে বিছানায় আবিস্কার করে পুষ্প। বিছানা থেকে ওঠে দেখে সে রাইয়ানের রুমে শুয়ে আছে। হঠাৎ পাশ থেকে কেউ চা আর নাস্তা এগিয়ে দেয় তার দিকে। পাশে তাকিয়ে দেখলো রাইয়ান দাড়িয়ে আছে।
– নাস্তাটা করে নিন। কাল হয়তো সারাদিন কিছু খান নি তাই হয়তো শরীর দুর্বল হয়ে গেছে আপনার।
-কিন্তু আমি এখানে..
– আমি এনেছি। আপনি আমার রুমের সামনে অজ্ঞান হয়ে পড়ে ছিলেন।
-আপনি আমাকে এই রুমে…
– হুম এনেছি বলে এটা ভাববেন না যে আমি আপনাকে মেনে নিয়েছি। আমি আপনাকে এই এখানে কেনো এনেছি এটা ভুলে যাবেন না। দাদাভাই একটু ভালো হলেই আমি আপনাকে ডিভোর্স দিয়ে দিবো। আর ততোদিন আপনি এ বাড়িতে মেহমানের মতো থাকবেন।
বলেই রাইয়ান অফিসের জন্য রওনা হলো।

“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
পাপড়ি আজ একটু সুন্দর করে সেজেছে। কপালে কালো টিপ, নীল শাড়ি সব মিলিয়ে দারুণ লাগছে তাকে। খুব সকাল সকাল বেরিয়ে পড়ে সে অফিসের জন্য। আজ নীলের জন্যও অপেক্ষা করে নি সে। অফিসে গিয়েই রাইয়ানের কেবিনে ঢুকে পড়লো পাপড়ি।
একটুপরই রাইয়ান আসে। মুখ ভার করে আছে। অন্যদিনের মতো আজ তাকে হ্যান্ডস্যাম দেখা যাচ্ছে না। অফিসে এসেই কারো সাথে কথা না বলে হনহনিয়ে নিজের কেবিনে ঢুকে পরলো। কেবিনে ঢুকেই পাপড়ি দেখেই তার মেজাজ বিগড়ে যায়। আর রাইয়ানকে দেখেই পাপড়িও বসা দেখে দাঁড়িয়ে ওঠে। রাইয়ান রাগে বললো,
-তুমি এইখানে?
পরক্ষণেই তার পুষ্পের শর্তের কথা মনে পড়ে যায়।
পাপড়ি এগিয়ে এসে বলে,
-প্লিজ স্যার, আমাকে মাফ করে দিন। আমি জানি আমার নিজের পরিচয়টা আপনার কাছে লুকানোটা আমার ভুল হয়েছে। কিন্তু এ বিয়েতে আমার কোন হাত ছিলো না। আমি তো জানতামই না যে আপুর বিয়ে আপনার সাথে হবে, জানলে আমি এ বিয়ে কখনোই হতে দিতাম না।
বলেই রাইয়ানের হাতটা ধরলো পাপড়ি  আর বললো,
– প্লিজ স্যার, আমাকে বিশ্বাস করুন। আমিই সত্যিই কিছু জানতাম না।

পাপড়ি রাইয়ানের হাত ধরায় রাইয়ান মনে পাপড়ির জন্য লুকানো অনুভুতি গুলো জেগে ওঠে। সে আর পাপড়ির ওপর আর রেগে থাকতে পারলো না। রাগটা একটু কন্ট্রোল করে নিজের হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে বললো,
– তোমার বোনের শর্ত অনুযায়ী আমি তোমাকে এ চাকরিতে রেখেছি। তাই নিজের কাজের মনোযোগ দেওয়াটাই তোমার জন্য এখন ভালো। আর এখন তুমি আমার থেকে দূরত্ব বজায় রাখে চলবে। অযথা আমার কেবিনে আসবে না। যাও এখন এখান থেকে।
পাপড়ি আর কিছু না বলে মাথাটা নিচু করে যেতে লাগলো।
পেছন থেকে আবার রাইয়ান বললো,
– আর শোনো মিস্ পুষ…. ওহ সরি, কি যেন তোমার নাম? ওহ, হে.. পাপড়ি কালকে নিজের আসল সার্টিফিকেটগুলো নিয়ে আসবে।
পাপড়ি কিছু না বলে মাথাটা নাড়িয়ে হ্যা বলে কেবিন থেকে চলে গেলো।
চলতে চলতে পাপড়ি মনে মনে বলতে লাগলো,
– শুধুমাত্র আপুর জন্য আজ আমায় রাইয়ানের সামনে এতোটা ছোট হতে হয়েছে। তবে আমিও হাল ছাড়ছি না, যে করেই হোক আমাকে রাইয়ানের মনে জায়গা করে নিতেই হবে।

সকালের নাস্তাটা দাদাকে খাইয়ে রুম থেকে বেরিয়ে আসে পুষ্প। মা, দাদীর কথা খুব মনে পড়ছে তার। ফোনটা হাতে নিয়ে কল করে আফিয়া বেগমের কাছে পুষ্প।
রান্নাঘরে রান্না করছে আফিয়া বেগম। পুষ্পর কলটা আসতেই কল ধরলেন তিনি।
-হ্যালো পুষ্প?
– হ্যালো মা, কেমন আছো?
-আমি ভালো আছি। তুই কেমন আছিস মা?
-আমিও ভালো আছি। দাদী, পাপড়ি কেমন আছে?
– তোর দাদী ভালো আছে তবে এখনো কাঁদে তোর জন্য। তোর কথা না শুনে তোকে বিয়ে দিয়ে অনেক বড় ভুল করে ফেলেছি রে মা, আমাদের মাফ করে দিস।
– কি বলছো এসব মা। তোমরা কিছুই করো নি, সবি আমার ভাগ্যের লিখন। তাই হয়তো এসব হয়েছে। দাদীকে কাঁদতে মানা করবে। আমার জন্য যেন আর একফোঁটাও চোখের জল না ফেলে।
-হুম। ওখানের সবাই তোকে মেনে নিয়েছে?
– না।  আমাকে এখানে কেউ কখনো মেনে নিবে না। আমি শুধু দাদার জন্য এখানে এসেছি। পাপড়ি কোথায় মা?
– অফিসে গেছে। সকালে কিছু খেয়েও যায়নি। না জানি কি করছে মেয়েটা অফিসে।
-হুম। আচ্ছা রাখি এখন।
ফোনটা রেখেই পুষ্প পাশে তাকাতেই মি. রাশেদকে দেখতে পেলো। মি. রাশেদ তার দিকে তাকিয়ে আছে। মি. রাশেদ কিছু একটা বলতে যাবে তখনি তাদের মাঝে মিসেস মাহমুদা চলে আসে।
– এই মেয়ে, এখানে কি করছো?
– না মানে?
– তোমার সব ফন্দি আমি বুঝি বুঝেছো? তুমি সবাইকে বোকা বানাতে পারলেও আমাকে পারবে না। তোমাকে এখানে বাবার খেয়াল রাখার জন্য আনা হয়েছে তো সেই কাজ ছাড়া আর কিছু যেন তোমাকে করতে না দেখি। মেহমানের মতো এসেছো মেহমানের মতো থাকবে বুঝেছো। যাও তোমার রুমে গিয়ে বসে থাকো। অযথা বাহিরে ঘুরাঘুরি করবে না।
পুষ্প আর কিছু না বলেই রুমে চলে যাই।
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন

কেবিনে বসে বসে রাইয়ান ভাবছে,
– পাপড়ি আমার সামনে থাকলে অফিসে আমি কোন কাজই করতে পারবো না। পাপড়িকে দেখলে পাপড়ি প্রতি আমার মনের অনুভুতি গুলো জেগে ওঠে। আর আগের কথাগুলো মনে পড়লে খুব কষ্ট হয় আমার। মনে হয় আমার হৃদয়টা কেউ ছিড়ে ফেলেছে। নিজের ইমোশন গুলো কন্ট্রোলে রাখতে পারি না আর।
কিন্তু কি করবে আমি? এছাড়া যে আর রাস্তা নেই আমার কাছে। দাদাভাইকে সুস্থ রাখতে হলে পুষ্পর শর্ত আমাকে মানতে হবে।

চলবে…..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে