তোমায় ঘিরে পর্ব-০৭

0
1123

#তোমায়_ঘিরে❤️
#Labiba_Islam_Roja
#Part_7
.
.
🥀
খাওয়া দাওয়া শেষে রুমে এসে বসে আছি আমি।এখনও রুমে আসেন নি উনি।লোকটার সাথে এক বিছানায় কিছুতেই থাকবো না আমি।হয় আমি সোফায় থাকবো নয়তো অন্য কোনো রুমে।এতে যদি আন্টি কিছু মনে করেন তো করবেন কিচ্ছু করার নেই আমার।বসে বসে দাঁত দিয়ে নখ কাটছি আর ভাবছি কি করা যায়…..এমন সময় রাক্ষুসের কথা কানে এলো আমার…!!
.
ছিহ!তুমি এখনও নখ খাও।ইট’স এ বেড হেবিট ম্যান!এটা স্বাথ্যের জন্যও ক্ষতিকর।এখানে বসে নখ না খেয়ে শুয়ে পড়ো।
.
উনার কথায় চট করে মুখ থেকে আঙ্গুল সরিয়ে নিলাম আমি!!কোনোকিছু না ভেবে “আমি আপনার সাথে ঘুমাবো না”।
.
আমার কথায় ভ্রু কুঁচকে তাকালেন উনি….যেন কি একটা কথা বলে ফেলেছি আমি যা উচিৎ হয়নি আমার।আমি কখন তোমাকে আমার সাথে ঘুমাতে বললাম….?তুমি কি কোনোভাবে আমার সাথে ঘুমাতে চাইছো নাকি…?কিন্তু সরি আমি তোমার সাথে থাকতে পারবোনা।তুমি বিছানায় শুয়ে পড়ো আমি সোফায় শুচ্ছি।
.
ছিঃ ছিঃ!!লোকটা কিসব বললো।আমিও কথা শোনার আগে কথা বলে ফেলি।যদি কথাটা ভালো করে শুনে নিতাম তাহলে এই লজ্জায় পড়তে হতো না আমায়।
.
কি ভাবছো!হয়তো এটাই ভাবছো যে…জোর করে বিয়ে করলো অথচ নিজের পাশে জায়গা দিতে নারাজ কেন…?
.
জ্বী না আমি এসব কিছুই ভাবছি না বলপই উঠে বিছানায় বসলাম আমি।
.
আমি জানি তুমি তাই ভাবছো।হুম বিয়ে করেছি জোর করে বা ব্ল্যাকমেইল করেও বলতে পারো।কিন্তু আমি কখনও তোমার কাছে স্বামীর অধিকার চাইবো না।তেমাকেও স্ত্রীর অধিকার দিতে পারবো না।তুমিও এসব কখনও আমার কাছ থেকে এসব এসপেক্ট করো না।তুমি এখন আমার কাগজে কলমের বউ ব্যস এইটুকুই।কে বলতে পারে হয়তো সময়ের ব্যবধানে সেটাও থাকবে না।
.
উনার শেষের কথাটায় চমকে উঠলাম আমি।এসব কি বলছেন উনি।তাহলে এই বিয়ের মানে কি!এত কাঠখড় পুড়িয়ে আমাকে বিয়ে করলেন কেন উনি।
.
এই যে এত ভাবাভাবির কিছু নেই যাও শুয়ে পড়ো!জানি কথাগুলো তোমার কাছে ভালো লাগছে না।তবুও ভাবলাম জানিয়ে রাখা ভালো।আমি কোনোকিছু চেপে রাখতে চাই না।তাই যা হবে তাই বলে দিলাম।তবে ভেবো না তোমার জীবনটা নষ্ট করে দিলাম আমি।এই বিশ্বাস রেখ….
যে হাতে ভাঙ্গবো,সেই হাতেই আবার সাজিয়েও তুলবো আমি!ওকে গুড নাইট বলেই লাইট নিভিয়ে সোফায় টুপ করে শুয়ে পড়লেন উনি।এই কথাগুলোর কি মানে বুঝতে ব্যর্থ আমি।কি ভাঙ্গবেন আর কি সাজাবেন উনি।ভাঙ্গারই যদি ছিলো তাহলে সাজালেন কেন উনি….আর যদি সাজাতেই চান তাহলে ভাঙ্গার প্রয়োজন কি!অদ্ভুত সব প্রশ্ন ঘুরছে আমার মাথায়।যার কোনো সঠিক উওর পাচ্ছি না আমি।একমাত্র সেই উওর জানে যে কথাগুলো বলেছে।কিন্তু তিনি তো এই সম্পর্কে এর থেকে বেশি কিছুই বলবেন না।যা বুঝার উনার কথার ইঙ্গিত থেকেই বুঝতে হবে আমায়।নয়তো ভাবনা থামিয়ে ঘুম ধরাতে হবে।সো মেহরীমা তের ছোট্ট মাথায় এত চাপ না নিয়ে ঘুমিয়ে পড়।যা হবে দেখা যাবে।
.
সকালে উঠেই তড়িঘড়ি করে বেড়িয়ে গেছেন উনি।খাওয়ার সময়ও হয়নি উনার।খান নি সেটা অবশ্য ভালোই হয়েছে আমার জন্য।সারাদিন খেয়ে বসে কাটিয়ে সন্ধ্যায় ছাদে নাদিরার সাথে গল্পের আসর বসিয়েছি আমি।মেয়েটা খুবই মিশুক আর প্রাণবন্ত যা নজর কেড়েছে আমার।অতি সহজে সবাইকে আপন করে নেওয়ার এবিলিটি আছে ওর মাঝে।আমার সাথে মাএ একদিনের আলাপ ওর কিন্তু ওর ব্যবহারে মনে হয় কত চেনা আমি।সবসময় হাসি খুশী থাকে।মন খারাপ জিনিসটা যেন কিছুতেই স্পর্শ করতে পারে না ওকে।ওরা আসার আগ পর্যন্ত এটা একটা ভুতুরে বাড়ী ছিলো আমার কাছে।কিন্তু এখন বেশ ভালোই লাগছে।নাদিরার কল্যাণেই জানতে পেরেছি আরাভের বাবা মা নেই।ওর জন্মের সময় মা মারা গেছেন আর সেই থেকে এই আন্টিই উনাকে মানুষ করেছেন।আর উনার বাবা কয়েকবছর আগে গত হয়েছেন।শুনেছি ছেলেকে খুব ভালোবাসতেন তাই ছেলের কষ্ট হবে ভেবে দ্বিতীয় বিয়ে করার কথা কখনও চিন্তাও করেন নি উনি।নাদিরার বাবা নেই।ওরা এক ভাই এক বোন।ওর সাথে কথা বলার মাঝেই আমার কাছে এসে দাঁড়ালেন উনি।মেহরীমা রুমে চলো কিছু কথা আছে তোমার সাথে…?
.
উনার কথায় চমকে উঠলাম আমি….কিহ!আমার সাথে কথা তাও আবার উনার।নাদিরা আমার দিকে একবার তো উনার দিকে একবার তাকিয়ে মুখ টিপে হাসছে।
.
ওই হাসবি না!সত্যি প্রয়োজন আছে ইট’স আর্জেন্ট।হারি আপ!বলেই ওখান থেকে প্রস্থান করলেন উনি।কি এমন কথা যে এত আর্জেন্ট কে জানে।
.
যাও বউমণি যাও!তোমার সাথে ভাইয়ার কথা আছে তাও আর্জেন্ট তাড়াতাড়ি যাও দেরি হলে রেগে বোম হয়ে যাবে আর সেটা তোমার মাথায় ফাটবে বলে হেসে উঠলো ও।সত্যি কি শুনেই আসি।
.
রুমে ঢুকে অবাক আমি কেউ নেই।দেখসো আমাকে তাড়া দিয়ে এখন উনিই নাই হাওয়া।কোমড়ে দুহাত দিয়ে এংরি লুকে দাঁড়িয়ে আছি।তখন দরজা আটকানোর শব্দ কানে এলো আমার।পেছনে তাকিয়ে দেখি উনিই দরজা আটকেছেন।কিন্তু কেন…?আমাকে কোনোকিছু বলার সুযোগ না দিয়ে আমার দু বাহু চেপে ধরে বলে উঠলেন উনি…..
.
বাচ্চাটা কোথায় গেলো…?কি করেছো ওর সাথে…?
.
উনার কথায় রেগে ফায়ার হয়ে গেলাম আমি!!আবার সেই বাচ্চা নিয়ে পড়েছেন উনি।এক ঝটকায় উনার হাত সরিয়ে বলে উঠলাম আমি…এই আপনার কানে কথা যায় না তাই না।কতবার বলবো আমি কখনও প্রেগন্যান্ট ছিলাম না।শুনতে পান না আপনি।
.
উনাকে দেখেই বুঝতে পারছি বেশ রেগে আছেন উনি।চোখগুলো ভয়ংকর আকৃতি ধারণ করলো মুহুর্তেই।হাত মুষ্টিবদ্ধ করে আছেন উনি।কপালে রগ ফুলে উঠছে বার বার।দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠলেন…..
.
মিথ্যা বলছো কেন…?কি করেছো ওকে মেরে দিয়েছো।কবে করেছো…?রাফির সাথে বিয়ের আগে তাই তো!
.
ধুর ভাল্লাগেনা!আপনি পাগল হয়ে গেছেন।কেন এমন পাগলামি করছেন যেখানে বাচ্চাই ছিলো না সেখানে মারার কথা আসছে কোথা থেকে।
.
আমার কথা শুনে হিংস্র হয়ে উঠলেন উনি।টপে থাকা ফুলদানি টা হাতে নিয়ে ছু্ড়ে মারলেন ড্রেসিং টেবিলে।সাথে সাথে ঝংকার করে শব্দ করে উঠলো….উনার এহেন আচরণে কেঁপে উঠলাম আমি। কাঁচগুলো টুকরে টুকরো হয়ে লুটিয়ে পড়লো মেঝেতে।সেই টুকরো আয়নায় নিজের প্রতিবিম্ব দেখতে পাচ্ছি আমি।
.
ছিহ!কি করে এটা করতে পারলে তুমি।একটা মেয়ে হয়ে নিজের প্রথম বেবিটাকে মেরে দিলে।এখন কি হবে ওই বাচ্চাটা নেই!নেই বাচ্চাটা!বলে বিছানায় বসে নিজের চুল টানছেন উনি।একটা বাচ্চার জন্য এতটা ডেস্পারেট কেন উনি।জানো তোমাকে আমার খুন করতে ইচ্ছে করছে এখন বলেই আমার গলা চেপে ধরলেনউনি। নিজেকে ছাড়ানোর জন্য চেষ্টা চালাচ্ছি আমি কিন্তু পারছি না।নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে।চোখ থেকে বড় বড় ফোঁটায় বেড়িয়ে আসলো লোনাজল গুলো।কিছুক্ষণ পর আমাকে ছেড়ে দিলেন উনি।কাশতে কাশতে শুকনো বার কয়েক ডুক গিললাম আমি।নিজেকে সামলে আপনি মানুষ নন,অমানুষ একটা।আমার জীবনটাকে নরক বানিয়ে দিয়েও শান্তি হয়নি।আর কি চান বলুন আমাকে মেরে ফেলতে নিন মেরে ফেলুন!আমিও আর বাঁচতে চাই না।আপনার মতো অমানুষের সাথে তো একেবারে না।
.
এই কি বললে….আমি অমানুষ!!আরে অমানুষ তো তুমি যে কিনা নিজের সন্তানকে খুন করে ফেলেছো।পৃথিবীতে আসার আগেই, একটা সুন্দর পৃথিবীর দেখার আগেই খুন করে দিয়েছো ওকে বলে আমাকে মারতে উদ্ধৃত হলেন উনি।উনার হাত ধরে মোচড় দিয়ে বলে উঠলাম আমি…..
.
একদম বাড়াবাড়ি করবেন না!!আমি আট দশটা মেয়ের মতো স্বামীর নির্যাতন সহ্য করবো না।নিজের হাত নিজের কন্ট্রোলে রাখুন।মেয়েদের সম্মান দিতে নাই বা পারেন কিন্তু অসম্মান করবেন না প্লিজ!আমার কথায় কিছুটা শান্ত হলেন উনি।আমার থেকে কিছুটা দূরে গিয়ে ব্যান্ডেজ দেওয়া হাতে দেয়ালে ঘুষি মারলেন।মুহূর্তেই হাত থেকে গড়গড় করে রক্ত ঝরতে লাগলো সেদিকে কোনো হুশই নেই উনার।আমি কাঁপা কাঁপা সুরে বলে উঠলাম…..ররক্ত!!নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে অদ্ভুত হাসি উপহার দিলেন উনি!তুমি কেবল আমার হাতের রক্তটাই দেখছো এখন।কিন্তু তুমি কি জানো আমার বুকের ভিতরে কতটা ঝড় বয়ে যাচ্ছে।কতটা রক্তক্ষরণ হচ্ছে আমার।জানো না!!জানতেও চাইছো না হয়তো চাইলেও পারবেনা।
.
দেখুন আপনি শান্ত হন!!শান্ত হয়ে আমার কথাগুলো শুনুন।কি লাভ মিছেমিছি আমায় দোষারোপ করে।নিজের মাথায় যেটুকু বুদ্ধি আছে সেগুলো ঠান্ডা মাথায় খরচ করে দেখুন তো আপনি যা বলছেন তা কি হওয়ার নাকি হওয়ার নয়।কাউকে কোনোকিছু নিয়ে দোষারোপ করার আগে তার সম্পর্কে দশবার জানুন,তাকে বুঝুন তারপর যদি মনে হয় তাকে দোষারোপ করার যোগ্য তখন না হয় করবেন।আমার সম্পর্কে আপনি আমাদের এলাকায় খোঁজ নিন।দেখুন তারা কি বলে!!তারা যদি বলে আমি ওই টাইপ মেয়ে বা আমি প্রেগন্যান্ট তখন আপনি যা শাস্তি দেবেন মাথা পেতে নেবো আমি।
.
তোমাকে দেখলে যতটা সহজ সরল মনে হয় তুমি ততটাই জটিল প্রকৃতির মানুষ।সবসময় নিজেকে একটা খোলসের ভিতরে রাখতে পছন্দ করো।তোমাকে চেনা হয়ে গেছে আমার।কিন্তু তুমি আজ যেই ক্ষতিটা করলে সেটার জন্য একদিন তোমাকেই পস্তাতে হবে।
.
আচ্ছা ঠিক আছে!!আপনি হাত টা ব্যান্ডেজ করে নিন।রক্ত ঝরছে।
.
ঝরতে দাও!!জানো আমি ব্যর্থ।আজ সারাজীবনের মতো ব্যর্থতার খাতায় নাম উঠে গেলো আমার।যেখান থেকে কখনও আমার নামটা মুছতে পারবো না আমি।তুমি এটা না করলেও পারতে মেহরীমা।খুব কি ক্ষতি হয়ে যেতো ও থাকলে….হ্যাঁ আমি জানি লোকে দশটা কথা বলতো।তোমাকে অপমান করতো।কিন্তু তোমার ভালোবাসার উপর ভরসা ছিলো না।তোমার একবারও মনে হয় নি কেউ তোমাকে কিছু বলার আগেই সবার মুখ বন্ধ হয়ে যাবে।দেখ তোমাকে বিয়ে করে আমি সবার মুখ বন্ধ করে দিয়েছি যাতে কেউ তোমার দিকে আঙ্গুল তুলতে না পারে।হ্যাঁ তোমাকে খুঁজে পেতে একটু সময় লেগেছে আমার কিন্তু বিশ্বাস হারাই নি আমি বিশ্বাস করতাম তুমি ওর কিচ্ছু হতে দেবে না।কারণ তখনও আমিও জানতাম নিজের থেকে ওকে বেশি ভালোবাসো তুমি।কিন্তু তুমি আমাকে ভুল প্রমাণ করে দিলে।আবারও প্রমাণ হয়ে গেলো পৃথিবীতে ভালোবাসা বলে কিছু নেই সবই সময়ের প্রয়োজন মাএ।
.
আচ্ছা আপনি যে এতগুলো বলছেন কিসের উপর ভিওি করে বলছেন।আমি আপনাকে চিনি না অথচ আমি আপনার বাচ্চার মা।আপনি কি কোনো জিন যে আমার স্বপ্নে আসতেন,আমাকে ভালোবাসতেন।তা নন তো!!তাহলে কেন এই ভিওিহীন কথাগুলো বলছেন।আপনি জানেন আমি সব থেকে বেশি কাকে ভালোবাসি…..
.
জানি মেহরীমা জানি!!তবুও আজ তোমার মুখ থেকে শুনতে চাই আমি।বুঝতে পারছি হয়তো ফ্যামিলির চাপে তুমি এটা করতে বাধ্য হয়েছো কিন্তু তবুও তেমাকে ক্ষমা করবো না।আমার দিকে প্রশ্নবিদ্ধ চোখে তাকিয়ে আছেন উনি।জানেন না তাই তো!!আমার বাবা-মা’কে।আপনি এটা জানেন কি বাবা-মা যেমন সন্তানের ক্ষতি চায় না তেমনি সন্তানও চায় না তাদের কোনো ক্ষতি হোক।আমি আপনাকে আমার সেই বাবা-মা’র দিব্যি খেয়ে বলছি আমি প্রেগন্যান্ট ছিলাম না।এবার অন্তত বিশ্বাস করুন।আমার কথাগুলো ঠান্ডা মাথায় একবার ভাবুন!!আপনার কথায় কোনো যৌক্তিকতা নেই কিন্তু আমার কথায় আছে।
.
আমার কথায় কোনো ভাবান্তর হলো না উনার মধ্যে।কোনো প্রতিক্রিয়াই নেই।যেমন ছিলেন তেমনই বসে আছেন উনি।বুঝতে পারছি উনাকে কথা বলে কোনো লাভ হবে না।আচ্ছা উনি কি সত্যি পাগল।হবে হয়তো নইলে এমন আচরণ করেন কেন উনি।আচ্ছা এই নিয়ে কি নাদিরাকে প্রশ্ন করতে পারি….!!
.
.
#চলবে……

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে