তোমায় ঘিরে পর্ব-০৪

0
1115

#তোমায়_ঘিরে❤️
#Labiba_Islam_Roja
#Part_4
.
.
🥀
উনি যেই কাগজটা আমার হাতে দিয়েছিলেন সেটা আর কিছু নয় প্রেগন্যান্সি টেস্টের রিপোর্ট।সেখানে পেশেন্টের নামের জায়গায় বড় বড় করে আমার নাম লিখা রয়েছে মেহরীমা।এইজ ২১।হোয়াট!আই’এম প্রেগন্যান্ট।রিপোর্ট হাতে নিয়ে বিছানায় ধপ করে বসে পড়লাম আমি।মাথা চক্কর দিচ্ছে।কি হচ্ছে এসব আমার সাথে।একটা অপরিচিত লোক তার প্রেমিকা বলে আমাকে জোর করে বিয়ে করলো এখন আমার বলছে আমি তার বাচ্চার মা।যেখানে রিপোর্টের সব ডিটেইলস আমার দেওয়া।কিন্তু আমি তো তাকে চিনিনা আর কারো সাথে কোনো রিলেশনেও ছিলাম না।তাহলে বাচ্চা আসলো কোথা থেকে….?
.
কি হলো সব কথা হাওয়া হয়ে গেলো!এবার বলো এটা তোমার রিপোর্ট না।বা এটাও বলতে পারো নামটাও তোমার না।
.
এখনও কেমন একটা ঘোরের মধ্যে আছি আমি।সত্যি কি এটা আমার রিপোর্ট!কিন্তু তা কি হরে হয়।তবে কি উনি এটা কোনো বানোয়াট রিপোর্ট নিয়ে এসেছেন।ডেইট টাও তো প্রায় মাস খানেক আগের দেওয়া।আপনি মিথ্যা বলছেন…?সত্যি এটা আমার রিপোর্ট না।আপনি ইচ্ছা করে আমাকে ফাঁসানোর জন্য এটা বানিয়ে নিয়ে এসেছেন।
.
হোয়াট!হেই আর ইউ ক্রেইজি!আচ্ছা তোমার মিথ্যা প্রেগন্যান্সি রিপোর্ট বানিয়ে আমার কি লাভ…?
.
আপনার তো সব দিকেই লাভ!আমাকে জোর করে এখানে নিয়ে এসে আমার বাবাকে আটকে আমাকে বিয়ে করতে বাধ্য করেছে।এখন আমি যাতে পালিয়ে না যাই সেই জন্য আমার ফ্যামিলিকে শেষ করার হুমকিও দিয়ে রেখেছেন।আর আজ আবার বাচ্চা নিয়ে পড়েছেন যাতে বাচ্চার দিকে তাকিয়ে আমি সব ভুলে যাই।কিন্তু এসব কিচ্ছু হবে না।আমি এই রিপোর্ট মানি না।কারণ আমি ভালোভাবেই জানি আমি প্রেগন্যান্ট নই।আর রিপোর্টও আমার নয়।এটা আপনার চক্রান্ত!
.
এটা দেখার পরও কি করে বলছো তুমি…?ওয়েট ওয়েট! এই মেয়ে বলে আমার দুই বাহু চেপে ধরলেন উনি…বাই এনি চান্স তুমি বাচ্চাটাকে নষ্ট করে দাও নি তো…?
.
উনাকে এক ধাক্কা দিয়ে উনার কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলাম আমি।আপনি পাগল,উন্মাদ হয়ে গেছেন।হিতাহিত জ্ঞান শূন্য একজন মানুষ।যার বিয়ের দিন তাকে তুলে আনলেন সে মেয়ে বাচ্চা পাবে কোথায়…?আরে বাচ্চাই যদি থাকতো তাহলে কি সে বিয়ে পিঁড়িতে বসতো!বসতো না।এই সহজ বাংলাটা কেন বুঝছেন না।
.
কারণ কথাটাগুলো যতটা সহজ তুমি ততটাই জটিল একজন মানুষ!আর কেউ হলে মানতাম কিন্তু তুমি বলেই মানছি না।ভালোয় ভালোয় বলো বাচ্চাটার সাথে কি করেছো…?
.
ডিজগাস্টিং!আবার সেই এক কথা বাচ্চা হুহ!বলে রুম থেকে বের হওয়ার জন্য পা বাড়ালাম।তখনই হাতে হেচকা টান অনুভব করলাম আমি।আচমকা টান সামলাতে না পেরে উনার বুকে হুমড়ি খেয়ে পড়লাম আমি।কোথায় যাচ্ছ…?
.
কোনোকথা না বলে দাঁড়িয়ে আছি।আসলে এই ব্যাপারে কথা বলতে আর ইচ্ছে করছে না আমার।মস্তিষ্কে হাজারো প্রশ্ন ঘোরপাক খাচ্ছে।যেই প্রশ্নগুলোর উওর পাওয়ার জন্য ব্যাকুল আমি কিন্তু পাচ্ছি না।ছাড়ুন আমাকে!
.
কি হলো কথা বলছো না কেন…?বলো কি করেছো…?
.
লোকটার মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে বেশ রেগে আছেন উনি…গলার স্বর নরম করে বলে উঠলাম….আপনি বিশ্বাস করুন আমাকে আমি প্রেগন্যান্ট নই!আর কখনও ছিলামও না।যখন ছিলাম না তখন নষ্ট করার কথা কোথা থেকে আসছে আপনিই বলুন।
.
আমাকে ছেড়ে দিয়ে তুমি সিওর তুমি প্রেগন্যান্ট নও…?
.
১০০% সিওর!
.
ঠিক আছে আমার সাথে চলো আর শোন আজ যদি জানতে পারি বাচ্চাটা নেই তাহলে তুমি ভাবতেও পারছো না তোমার সাথে কি হতে চলেছে।জানো তোমার আর আমার সম্পর্কের ভিওি কি…? একমাত্র ওই বাচ্চাটা।যার জন্য আমি তোমাকে ওইভাবে বিয়ে করেছি।এখন যদি জানতে পারি….বলে আমাকে টানতে টানতে ড্রয়িংরুমে নিয়ে গেলেন উনি।রামীম ভাই সোফায় বসে ফোন ঘাঁটছেন।আমাদের দেখে বলে উঠলেন উনি…..
.
শালা বউ পাগল! এখন আসতে মন চাইলো তোমার!সেই কখন বউয়ের কাছে গেছো এখনও আসার নাম নেই তাও যা এলে বউকে হাত ধরে নিয়ে একেবারে তবেই এলে। বউ ছাড়া এক মুহুর্তও চলে না তাই না।
.
রামীম চুপ করবি!এটা মজা করার সময় নয়।আর তুই তো জানিসই বউ প্রেমিকা এসব বোকা বোকা জিনিসের উপর আমার ইমোশন কাজ করে না।প্রত্যোকটা মেয়েই লোভী,বেইমান আর প্রতারক।
.
আপনি কিন্তু মেয়েদের অপমান করছেন।হ্যাঁ প্রত্যেকটা মেয়েই লোভী হয়।কিসের জন্য জানেন একটু ভালোবাসার লোভী।একটু কেয়ারিং ব্যস আর কিচ্ছু চাই না তাদের।কিন্তু আমাদের পুরুষশাসিত সমাজে মেয়েরা সেইটুকুও পায় না।পায় শুধু অপমান তাচ্ছিল্য।
.
চুপ কর!তোমার লেকচার কেউ শুনতে চায় নি।আগে নিজে ঠিক হও তারপর অন্যকে জাজ করো।চল আমার সাথে আমরা এক্ষুনি হসপিটাল যাবো।
.
রামীমঃহসপিটাল…?(ভ্রু কুঁচকে)কেন কার কি হয়েছে…?
.
আপনার বন্ধুর মাথার ব্যামো হয়েছে এখন তিনি সাইকোলজিস্ট দেখাতে যাচ্ছেন।এই শুনুন আমি কোথাও যাবো না।আপনার যেখানে মনে হয় আপনি সেখানে যান।আমাকে নিয়ে যদি কোথাও যেতে হয় তাহলে আমার বাসায় গিয়ে সবাইকে সত্যি টা বলে আমাকে পৌছে দিয়ে আসেন।
.
বাসায়..?এই জীবনে তোমার আর ওখানে যাওয়া হবে না।এই পার্ট সারাজীবনের মতো ইন্ড হয়ে গেছে।বেশি বাড়াবাড়ি না করে চলো।
.
কিন্তু কেন যাবি বললি না তো…?
.
ওর চেকাপ করাতে যাবো।তুই তো জানিস এই বাড়ীর বংশধর আসতে চলেছে তাই ও কেমন আছে সেটা জানার জন্যই যাচ্ছি।
.
ওহহ! হুম তাহলে চল আমিও আসছি তোদের সাথে।মুখে এত রাগ দেখাস কিন্তু ঠিকই ওদের নিয়ে ওরিড বলে হেসে উঠলেন উনি।চোখ বড় বড় করে তার মানে উনিও জানেন আমি প্রেগন্যান্ট!হায় খোদা!
.
আরে ধুর ভাল্লাগেনা!এই আপনার কানে কথা যায় না।আপনি কি বয়রা কানে শুনেন না।আমি বলছি তো আমি প্রেগন্যান্ট না তাহলে কেন জোরাজোরি করছেন বলুন তো!একদম ফালতু ঝামেলা করবেন না।
.
এই চুপপ!বলে আমাকে হির হির করে টানতে টানতে নিয়ে গেলেন উনি।রামীম ভাইয়া কাজের বোয়া কারোর কোনো কথাই শুনলেন না উনি।
.
.
.
রাস্তায় জ্যামে আটকে আছি আধঘন্টা হলো এভাবে বসে থাকতে আর ভালো লাগছে না আমার।রিপোর্ট সন্ধ্যার পর পাওয়া যাবে।এই একটা রিপোর্ট নিয়ে উৎসাহের শেষ নেই উনার।যদিও আমি জানি রিপোর্টে কি আসবে।কিন্তু আমার কথাকে পাওা না দিয়ে উনি তো আশাবাদী।হঠাৎ আমাকে রেখে গাড়ী থেকে নেমে পড়লেন উনি…..এই সুযোগ পালানোর যখনই গাড়ী থেকে নামতে যাবো তখনই দেখি গাড়ীটা লক।যা আমার প্ল্যানে জল ঢেলে দিলো ব্যাটা রাক্ষুস!এখন আর পালানো যাবে না।এখান থেকে পালিয়ে অনেকদূর চলে যেতাম।যেখানে আরাভ নামের ছায়াটা থাকতো না।আব্বু আম্মু ভাইয়া কারো সাথে যোগাযোগ রাখতাম না।তাহলে আরাভ কারো ক্ষতিও করতো না।কিন্তু কোথায় যাবো আমি।একা একটা মেয়ে কোথায় যেতে পারি।এই শহর থেকে দূরে কিন্তু সেখানে গিয়ে থাকবো কি করে।কথাগুলো এক মনে ভেবে চলেছি আমি হঠাৎ কারো তুড়ির আওয়াজে ধ্যান ভাঙ্গলো আমার।হুম আরাভ এসেছে এক হাতে আইসক্রিম!সেটা আমার দিকে এগিয়ে দিচ্ছে সে।আমি সেটা দেখেও না দেখার ভান করে বসে আছি।
.
আইসক্রিম টা নাও।তোমার তো বাইরে বের হলে আইসক্রিম ছাড়া চলেই না তাহলে এখন এত ভাব দেখাচ্ছ কেন..?নাও আইসক্রিম খাও ভালো লাগবে।
.
ভেতর থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে নাহ!খাবো না আপনি খান।আগে অনেককিছুই করতাম কিন্তু এখন করি না।জানেন আগে আম্মুকে ছাড়া থাকতে পারতাম না।কিন্তু এখন পারি।নিজের হাতে খেতে পারতাম না এখন সেটাও পারি সমস্যা হয় না বলেই বড় বড় দুফোঁটা চোখের পানি গড়িয়ে পড়লো আমার।নিজেকে যেন সামলে উঠতে পারছিনা আমি।একদৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন উনি।হয়তো কিছুটা দয়া হচ্ছে উনার তাই নরম সুরে বলে উঠলেন উনি…..
.
ট্রাই টু আন্ডারস্ট্যান্ড মেহরীমা!এভাবে কেঁদো না।রাস্তার লোকেরা কি ভাববে।একটা টিস্যু এগিয়ে দিয়ে নাও মুখ মুছো।
.
টিস্যু হাতে নিয়ে বলে উঠলাম আমি….এক বোতল ওয়াটার হবে…?
.
ওহ্হ সীট !!গাড়ীতে পানি নেই।তুমি একটু ওয়েট করো আমি এক্ষুনি নিয়ে আসছি।পানি নিয়ে ফিরে এসে শকড আমি।এমন কিছু হতে পারে কখনও মাথায়ও আসেনি আমার।তবে কি ভুল করে ফেললাম আমি।ভুল….হুম মারাত্মক “ভুল” করে ফেলেছি।আর তার মাশুল কড়ায় গণ্ডায় আমাকেই দিতে হবে…!!
.
.
#চলবে……

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে