তোমায় ঘিরে পর্ব-০৫

0
1182

#তোমায়_ঘিরে❤️
#Labiba_Islam_Roja
#Part_5
.
.
🥀
পানি নিয়ে ফিরে আরাভ মেহরীমাকে গাড়ীতে পায় না।গাড়ীর দরজা খোলা ভিতরে কেউ নেই।তড়িঘড়ি করে যাওয়ায় গাড়ীটা লক করতে ভুলে যায় আর তাই এই বিপদ ঘটলো।আশেপাশে কেথাও খুঁজে পায় না তাকে।কেউ ওকে দেখেছে বলেও বলতে পারছে না।এখন মেহরীমাকে কোথায় পাবে কিছুই বুঝতে পারছেনা আরাভ।দিন দুপুরে জল জ্যান্ত একটা মেয়ে উধাও তো হয়ে যেতে পারে না।কোথায় যেতে পারে ভাব আরাভ ভাব! ওর বাবার বাসায়।না সেখানে যাবে না।যাওয়ার হলে আরো আগেই চলে যেতো এত সময় নিতো না।তবুও সেখানে লোক লাগিয়ে দিয়েছে সে কিন্তু মেহরীমা যায় নি।তাহলে কোথায় গেলো।নাকি কেউ ওকে তুলে নিয়ে গেলো কিচ্ছু ভাবতে পারছেনা। ঘোটা দিন কেটে সন্ধ্যা হয়ে আসছে কিন্তু মেহরীমার কোনো খবর নেই।আরাভের লোকেরাও ব্যর্থ।কেউ কোনো আশার খবর দিতে পারেনি।
.
উদাস মনে গাড়ীতে বসে ভাবছে আরাভ।আজ যদি ওকে খুঁজে পাওয়া না যায় তাহলে কি জবাব দেব আমি।যখন জানবে মেহরীমা পালিয়ে গেছে তখন কি বাঁচানো যাবে।ওর জন্যই তো এতকিছু যদি ওই না থাকে তাহলে কেন এসব করলাম আমি।কিসের জন্য…?আর বাচ্চা যদি কোনো ক্ষতি করে দেয় তখন….না আর ভাবতে পারছিনা আমি।মেহরীমা তুমি পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাকো না কেন তোমাকে আমি খুঁজে বার করবোই করবো….!!
.
.
হাত পা বাধা অবস্থায় চেয়ারের উপর অচেতন অবস্থায় পড়ে আছে মেহরীমা।বর্তমানে কোনো হুশই নেই তার।তার মুখোমুখি অন্য একটি চেয়ারে পায়ের উপর পা তুলে বসে আছে একটা লোক।মেহরীমার জ্ঞান ফিরেনি।তাই ওর মুখের উপর এক গ্লাস পানি ছুড়ে মারলো সে।কিছুক্ষণেই জ্ঞান ফিরে আসলো তার।ধীরে ধীরে চোখ খুলে নিজেকে অন্ধকার একটা রুমে আবিষ্কার করলো।আরাভও তাকে এরকম একটা ঘরে আটকে রেখেছিলো।মূহুর্তে ভয়ে চোখ মুখ শুকিয়ে গেলো তার।হাত নাড়ানোর চেষ্টা করতেই বুঝতে পারলো তার হা পা বাধা।সামনে আবছা আলোয় কারোর ছায়া স্পষ্ট কিন্তু মুখ দেখতে পারছে না।ভয়ে ভয়ে বলে উঠলো….কককে আআপনি…?আআমাকে বেধে রেখেছেন কেন…?
.
সামনে থাকা লোকটা হুংকার করে হেসে উঠলো হা হা হা!আমাকে চিনতে পারছো না ডার্লিং।
.
গলাটা খুবই পরিচিত কোথায় যেন শুনেছি কিন্তু কোথায় এই মুহূর্তে মনে পড়ছে না আমার।কিন্তু কন্ঠ টা চেনা বড্ড চেনা।
.
কি এখনও চিনতে পারো নি বুঝি…?
.
ররাফি……!!
.
হুম এই তো চিনে গেছে থ্যাংস গড!আমাকে যে চিনতে পেরেছো এটাই অনেক।আমি তো ভেবেছিলাম এখন ওই আরাভকে ছাড়া আর কাউকেই চিনতে পারবে না তুমি।কিন্তু না তুমি আমার এই ধারণা কে একেবারে ভুল প্রমাণ করে দিয়েছো।
.
তুমি আমাকে এখানে এভাবে নিয়ে এসেছো কেন…?ছেড়ে দাও আমায় আমি বাড়ি যাবো।
.
ছাড়ার জন্য তো ধরে আনিনি।তবে ছাড়বো এটাও ঠিক।কিন্তু এখন নয় সেদিনের সব অপমানের শোধ নিয়ে তবেই ছাড়বো।
.
কিসের অপমান…?দেখ রাফি ওই দিন যা হয়েছে তার কিছুই আমি ইচ্ছে করে করিনি।কিভাবে যেন হয়ে গেছে।আমি মানছি আমি তোমার সাথে অন্যায় করেছি।মানুষ মাএই ভুল।আমিও ভুল করেছি।প্লিজ তুমি আমায় ক্ষমা করে দাও।
.
ক্ষমা!হুম ক্ষমা করবো তো।কিন্তু মামুনি ভুল করলে তো ভুলের মাশুল দিতে হয় সেটা কি তুমি জানো।সেদিন সবার সামনে আমাকে তুমি হাসির পাএ বানিয়ে দিয়েছিলে কাউকে মুখ দেখাতে পারিনি।তাই আজ তোমারও এমন অবস্থা করবো যাতে তুমিও সমাজে আর মুখ দেখাতে না পারো হা হা হা।
.
আমার ক্ষতি করে তুমি বাঁচতে পারবে না রাফি।আমার ভাইয়া তোমাকে শেষ করে দেবে।
.
আর তোমার স্বামী….ওর কথা বললে না যে।শোন আমি তোমাকে এখানে তুলে এনেছি এটা তুমি আর আমি ছাড়া কেউ জানে না।যখন সবাই জানবে আমি তোমার সাথে খাটাপ কিছু করেছি সেটা কেউ বিশ্বাস করবে না।কারণ তুমি বিবাহিত আর আমি সেরকম ছেলেও নই।সবাই ভাববে তুমি মিথ্যা বলছো।
.
দেখ তুমি আমার সাথে এমন করো না।প্লিজ আমায় ছেড়ে দাও
.
কিছুতেই না বলে আমার হাত পায়ের বাধন খুলে দিলো রাফি।দু হাত পেছন থেকে আটকে দিয়ে হাসতে শুরু করলো।এবার তোমায় কে বাঁচাবে সুন্দরী বলে আমার দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো।ভয়ে কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমা হয়ে গিয়েছে।ভয়ে হাত পা কাঁপছে।আর চোখ দিয়ে অনবরত ঝরছে ঝর্ণার পানি।হঠাৎ মাথায় বুদ্ধি আসলো দিলাম রাফির পেটের নিচে এক লাথি রাফি আহহ!বলে আমার হাত ছেড়ে নিজের পেটে হাত দিয়ে ঝুঁকে পড়লো তখনই দৌড়ে ছুটতে লাগলাম আমি।হাত পা যেন চলছে না মাথা ভনভন করছে কিন্তু দুর্বল হলে চলবে না নিজেকে বাঁচাতেই হবে আমায়।আমি দৌড়াচ্ছি পেছন পেছন রাফিও দৌড়াচ্ছে আমার!দৌড়াতে দৌড়াতে একটা লোকের সাথে ধাক্কা খেলাম আমি।লোকটার হাত ধরে বলে উঠলাম আমাকে বাঁচান প্লিজ ওই লোকটা আমাকে….প্লিজ প্লিজ আমাকে বাঁচান।
.
লোকটা শক্ত করে আমার হাত ধরে বলে উঠলো কোন লোকটা…?
.
কন্ঠটা খুব চেনা আমার।মুখ না দেখেই বলে উঠলাম আরাভ!
.
হ্যাঁ তুমি কোথায় চলে গিয়েছিলে জানো সারাদিন আমি তোমায় কোথায় না খুঁজেছি।আমি তো ভেবেছিলাম তোমাকে হারিয়ে ফেলেছি আর খুঁজে পাবো না।থ্যাংক গড পেয়ে গেছি।তুমি ঠিক আছো তো। কে তোমাকে কি করবে কই সে…?
.
এই তো এখানেই ছিলো বলে পেছন ফিরে তাকালাম আমি।না কেউ নেই।তাহলে উনাকে দেখে রাফি কি পালিয়ে গেছে নাকি।রাফি!
.
রাফি…?কে রাফি…?
.
ওই যার সাথে আমার বিয়ে হওয়ার কথা ছিলো সেই রাফি।সেদিন বিয়ের আসর থেকে ও ফেরত যাওয়ায় আমার উপর শোধ তুলতে এখানে নিয়ে আসে আমায়।জানেন ও আমাকে গাড়ী থেকে অজ্ঞান করে নিয়ে সামনের একটা ঘরে আটকে রাখে।তারপর বলেই কেঁদে উঠলাম আমি।
.
তারপর কি বলো….কি করেছে ও তোমার সাথে।
.
আমার সাথে হওয়া সব ঘটনা খুলে বললাম উনাকে….তখনই ওকে লাথি দিয়ে ছুটতে ছুটতে এখানে চলে আসি আমি।কিন্তু এখন ও কোথায় গেলো।আপনাকে দেখে পালিয়েছে মেবি।
.
নো মিসেস আরাভ!রাফি পালাতে শিখেনি।তুমি আমার শিকার। সেটা আজ আমি শিকার করেই ছাড়বো।আর এই আরাভকে তো আজই দেখে নিবো আমি।কথাগুলো শুনে পেছনে তাকালাম আমি।রাফি কিছু গুন্ডা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।এখন আমি শেষ।
.
তাই নাকি!মেহরীমা তোর শিকার। ওর উপর একটা আছড় কেটে দেখা দেখি। আরাভের ওয়াইফের উপর হাত দেওয়ার সাহস কি করে হয় তোর।সারাদিন ওকে আটকে যতটা কষ্ট দিয়েছিস ততটাই ফেরৎ পাবি।আমি জানতাম তুই কোনো ভালো ছেলে নস।মেয়েদের লাইফ নষ্ট করাই তোর একমাএ উদ্দেশ্য।কত মেয়ের জীবন যে নষ্ট করেছি ইয়াওা নেই।এজন্যই তোর সাথে ওর বিয়েটা হতে দেই নি আমি।আমি জানতাম ওর জীবনটাও নরক করে ছাড়বি।আমার অবর্তমানে ওকে অনেক কষ্ট দিয়েছিস এখন আমার উপস্থিতিতে ওকে ছুয়ে দেখা।দেখি কত বড় বুকের পাটা তোর।
.
এই তোরা এই আরাভটাকে সাইজ কর।আমি মেয়েটাকে দেখছি।
.
আপনি একা ওদের সাথে পারবেন না।চলুন পালাই।আপনাকে মেরে আমাকে ওরা নিয়ে চলে যাবে।প্লিজ আপনি ওদের হাতে আমায় ছেড়ে দিবেন না সময় থাকতে পালাই চলুন।একা একা এতজনের সাথে পারা ইম্পসিবল!
.
ভয় পেও না!চুপচাপ দাড়াঁও।কথা দিচ্ছি আমার প্রাণ থাকতে তোমার কিচ্ছু হবে না।একটু ভরসা করো প্লিজ!
.
মুহুর্তের মধ্যেই সবকয়টাকে মেরে তক্তা বানিয়ে দিলেন উনি।এবার রাফির পালা।রাফিকে ইচ্ছে মতো রাম ধোলাই দিচ্ছেন উনি।ব্যাথায় চিৎকার করে উঠছে রাফি।কিন্তু উনি ছাড়ছেন না।দূর থেকে উনাকে থামতে বলছি আমি কিন্তু কিছুতেই শুনছেন না উনি,মেরেই চলেছেন।উনার সামনে গিয়ে আর কত মারবেন লোকটা মরে যাবে তো…এবার ছাড়ুন!আমার কথায় থামলেন উনি।একটু সুযোগ পেতেই ছুরি দিতে উনাকে আঘাত করলো রাফি।ছুরিটা একদম পেট বরাবর ঢুকাতে যাবে তখনই হাত দিয়ে আটকে দিলেন উনি।গড়গড় করে রক্ত ঝরছে উনার হাত থেকে।রক্ত দেখলেই মাথা চক্কর দিতে উঠে আমার।ভয়ে নিঃশ্বাস আটকে যায়।দাঁড়িয়ে থাকার শক্তি হারিয়ে ফেলেছি।একসময় শরীরের সমস্ত ভর ছেরে দিয়ে সেখানেই মাথা ঘোরে পড়ে গেলাম আমি…!!
.
যখন জ্ঞান ফিরলো তখন নিজেকে আরাভের রুমে আবিষ্কার করলাম আমি।আমার সাথে কি হয়েছে সেটা জানার জন্য ব্রেনে চাপ দিতেই মনে পড়লো আমার।আরে আমি তো রাস্তায় জ্ঞান হারিয়ে ছিলাম এখানে আসলাম কি করে। আরাভের কি হলো আর রাফিরই বা কি হয়েছিলো।আরাভ কোথায় সেটা জানার জন্য পুরে ঘরে চোখ বুলাচ্ছি তণই চোখে পড়লো ডানে একজন মধ্য বয়স্ক মহিলা এবং বামে ইয়াং একজন মেয়ে বসে আছে আমার।কিন্তু রুমের কেথাও আরাভ নেই।গতকাল থেকে এ বাড়ীতে এসেছি কিন্তু আগে কখনও উনাদের দেখিনি আমি।আজই প্রথম দেখছি।আমাকে উঠতে দেখে মহিকাটি বলে উঠলেন….এখন উঠো না মা।শুয়ে থাকো তোমার রেস্টের প্রয়োজন বলে মিষ্টি একটা হাসি দিলেন উনি।
.
উনার কথায় বিছানায় শুয়ে পড়লাম আমি।মাথায় একটাই প্রশৃন আরাভের কি হলো…?রাফি উনার সাথে খারাপ কিছু করে নি তো!তখনই ইয়াং মেয়েটি বলে উঠলো বউমণি তুমি নিশ্চয় ভাইয়ার কথা ভাবছো…?ভাইয়ার সাথে কি হলো তাই তো।ও হ্যাঁ আমাকে তো তুমি চিনোই না।আমি হলাম নাদিরা।ভাইয়ার ছোট বোন আর উনি হলেন আমার মা।মানে তোমার কাকি শাশুড়ী।
.
মেয়েটার কথা শুনে যা বুঝলাম এরা আরাভের চাচী আর চাচাতো বোন।আচ্ছা আরাভ…?
.
ওয়েট বলছি কিন্তু তুমি কি এটা সহ্য করতে পারবে বউমণি বলেই কেঁদে উঠলো মেয়েটি।মেয়েটির কান্না দেখে অজানা ভয়ে কেঁপে উঠলাম আমি।তাহলে কি আরাভ নেই….নাকি রাফি উনার সাথে বাড়াবাড়ি কিছু করেছে….?
.
.
#চলবে…..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে