তোমার ছায়া পর্ব-০৩

0
1936

#তোমার ছায়া (পর্ব ৩)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ

ফারহা ভালোই বুঝতে পারছে কিছু একটা গন্ডোগল আছে। কারণ ফারদিন এতো সহজে কাঁন্না করার মানুষ না। তবুও এই মুহুর্তে ফারদিনকে কিছু বলাটা ঠিক মনে করছে না সে।

তখনই আবরার তাদের পাশে গিয়ে দাড়ায়। বাকিরা আয়রিনকে বিদায় দিয়ে সবাই বাড়ির দিকে হাটা ধরলো। আবার কেও গেটের কাছে দাড়িয়ে এখনো তাকিয়ে আছে।
আবরারের সামনে ফারদিন সম্পূর্ণই স্বাভাবিক। যেন কিছুই হয়নি তার। আবরারের কাধে হাত রেখে বললো,
– আচ্ছা দোস্ত, ফারহাকে নিয়ে আমি চলে যাচ্ছি বাড়ির দিকে। বুঝিসই তো বাবা মা তাকে নিয়ে কেমন টেনশন করবে।
আবরারের মনটা আজ খুবই বিষণ্ন। এক মাত্র বোনটাকেও বিদায় দিয়ে দিয়েছে আজ। বাসাটা ও কেমন ফাকা ফাকা লাগবে আজ থেকে। এসব চিন্তা ভাবনা তার মনকে আরো বিষণ্ন করে তুলছে। আবরারের দিকে চেয়ে বললো,
– এখনই চলে যাবি? আজকে থেকে যা, মনটা খুবই বিষণ্ন আমার। তোর সাথে থাকলেও মনটা কিছুটা ভালো হবে আমার। তাচারা ফারহাও তো আয়রিনের মতো আমার বোনই। তোরা থাকলে মনকে কিছুটা হলেও শান্তনা দিতে পারবো।

আবরার আর ফারদিন সেই ছোট বেলার বন্ধু। কখনো কারো কথা কেউ ফেলে দিতে পারে না। কিন্তু আজ এখানে একটুও মন টিকছে না ফারদিনের। অস্থির লাগছে খুব তাকে। একটা শ্বাস নিয়ে আবরারকে বললো,
– নারে দোস্ত, বাবা মা খুব টেনশন করবে। আর গতকালকেও ফারহাকে এখানে রেখে যাওয়ার জন্য খুব কষ্ট করে বুঝাতে হয়েছে তাদের। যানিসই তো, আমার একটাই বোন। বাবা মা কখনো তাদের একমাত্র মেয়েকে চোখের আড়াল করতে চায় না। কলেজে গেলেও তারা অস্তির হয়ে থাকে মেয়ের জন্য। চোখের আড়াল হলেই যেন ফারহাকে খুজতে থাকে তারা। বুঝিসই তো বাবা মায়ের মন।

আবরার একটু হাসির রেখা টানার চেষ্টা করে বললো,
– আচ্ছা তাহলে ফারহাকে পৌছে দিয়ে তুই আবার এখানে আসিস।
– হুম, আমি সন্ধার আগেই তোর কাছে আসছি।
আবরার একটু হেসে বললো,
– আচ্ছা।

ফারহা কে নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলো ফারদিন। ফারহা এতো কথা বললেও ফারদিন নিশ্চুপ।
বাসায় এসে জামা চেঞ্জ করে খাটে লম্বা হয়ে শুয়ে রইলো ফারহা। হিসেব মেলানোর চেষ্টা করছে। প্রথমতো সাদাফের সাথে প্রায় এক বছর পর দেখা। তাও কি বিশ্রি ভাবে। ভাবতেই ‘ছি’ সূচক শব্দ মুখ দিয়ে বেড়িয়ে আসে।
দ্বিতিয়ত ফারদিন ভাইয়া কখনো এমন আচরণ করে না। আর ফারদিনকে ছোট থেকে তেমন একটা কাঁদতে দেখেনি ফারহা। কিছু কারণ তো নিশ্চই আছে। যা ভাইয়া বার বার আড়াল করতে চাইছে।
আর শেষে হবো কালকে আবরারের সাথে ঘটে যাওয়া মুহুর্ত গুলো। রুমে ঢুকায় আবরারের করা বকাবকির মাঝেও একটা মায়াময়ি দৃষ্টি দেখেছে সে। কিছুক্ষন পর আবার সব রাগ হাওয়া হয়ে গেলো। তাকে মেহেদী লাগিয়ে দেওয়া মুহুর্ত টা। সকালে ছাদে দুজন একা কথা বলা। সময় গুলো বার বার চোখের সামনে ভেষে উঠছে তার।

সন্ধার সময় মায়ের ডাকে উঠে রুম থেকে বের হয় ফারহা। মায়ের কাছে যেতেই মা বললো, চার কাপ চা বানাতে। প্রতিবেশি চাচি এসেছে।
ফারহা চুপচাপ রান্নাঘরে গিয়ে চা বসালো।
ওদিকে তাদের মাঝে জমিয়ে আলোচনা চলছে। ফারহা বার বার বিয়ের কিছু টপিক শুনতে পারছে আলোচনার মাঝখানে।
বাড়িতে কোনো বিয়ের টপিক উঠলেই বুকটা ধুক ধুক করতে তাকে তার। না জানি কোন দিন তার বিয়ে নিয়ে পরে সবাই। আজও একটু একটু ভয়ে বুকটা টিপ টিপ করছে তার।

চা হাতে তাদের সামনে এগিয়ে গেলো ফারহা। চা রেখে মায়ের এক পাশে গিয়ে দাড়ায় সে।
চাচি চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বললো,
– আজ কালকার মেয়ে গুলো বড় হওয়ার পর তাদের বিয়ে না দিলে এমন কান্ড করে বসে। মেয়ে উপযুক্ত হয়েছে, তাহলে তাদের বাসায় রাখবে কেন? পরে বাবা মাকে নিজে থেকে কিছু বলতে পারে না, কোনো ছেলের হাত ধরে ভেগে গিয়ে বংশের মুখে চুন কালি মাখে।
এর মাঝে মা বললো,
– তো পরে মেয়েটাকে পেয়েছে কোথায়?
চাচি আমারও চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বললো,
– আরে খুজতে খুজতে পরে ঐ ছেলেটার সাথে একটা হোটেলে হাতেনাতে ধরেছে।
চাচির কথা থামিয়ে ফারহার মা তাকে বলে,
– তুই চলে যা ফারহা। বড়দের কথার মাঝে থাকতে নেই।
মায়ের কথায় চুপচাপ সেখান থেকে চলে যাচ্ছে ফারহা। প্রতিবেশি নামক এই মহিলাটাকে দেখলেই মেজাজ খারাপ হয় তার। এই মহিলার কাজই হলো, এর কথা গিয়ে তাকে বলা ওর কথা এসে অন্যকে বলা। এখানেও এসেছে নিশ্চই তানিয়া নামক মেয়েটার কথা সবাইকে বলতে।

এর মাঝে ফারহা কে নিয়ে টপিক উঠলেই থমকে যায় সে। তবুও চুপচাপ দরজার আড়ালে গিয়ে শুনতে চেষ্টা করে ওই মহিলা বাবা মাকে কি কান পরা দিচ্ছে।

– বিষয় টা বুঝবেন ভাবি, ফারহা এখন বড় হয়েছে বিয়েরও সময় ঘনিয়ে এসেছে তার। এই বয়সে মেয়েদের বুক ফাটে তো মুখ ফোটে না। বিয়ে না দিলে পরে দেখবেন সেও অন্য কারো সাথে চলে যাচ্ছে।
এর মাঝে বাবা তাকে থামিয়ে দিয়ে বললো,
– এতোক্ষন অন্যের গিবত গািছেন, কিছু বলিনি। কিন্তু শেষে আমার মেয়েকে নিয়ে যে বাড়তি দুই তিন লাইন এড করলেন, এগুলো আর কখনো বলার চেষ্টা করবেন না। বিশেষ করে আমার সামনে কখনো বলবেন না।
চাচি নির্লজ্জের মতো আবার বললো,
– আরে ভাইজান তানিয়ার মা ও এই কাথাই বলেছিলো, এখন ঠিকই তো মেয়ে এমন কান্ড করেই বসেছে।
বাবা আবার বললো,
– আমাদের মেয়ের প্রতি আমাদের পুরো বিশ্বাস আছে। আমাদের মেয়ে কখনো আমাদের কথার বাইরে যায় নি, আর কখনো যাবেও না।
এর মাঝে মা পোড়ন কেঁটে বলে,
– আর ফারহা কখনো এমন কাজ করলে তাকে মেয়ে হিসেবে স্বীকারই করবো না আমরা। তেজ্জ মেয়ে করে দিবো তবুও কখনো অন্যায়কে প্রশ্রয় দেবো না।

একটা কথায় যেন ভয়ে বুকটা কেঁপে উঠে ফারহা’র। মায়ের কথায় বুকটা ধুক ধুক করলেও বাবার কথা শুনে ভালো লাগছে যে, তার প্রতি তাদের কতো বিশ্বাস।
,
,
সারা বাড়িতে কোলাহ পূর্ণ পরিবেশ। আসার সময় সারা রাস্তা কেঁদেছিলো আয়রিন। আয়রিন অনেকের কাছেই শুনেছে, বিয়ের পর স্বামীর বাড়ি যাওয়ার সময় মেয়েটা কাঁন্না করলে তাদের হাসবেন্ট অনেক ভাবে বুঝানোর ট্রাই করে তাদের। কতো বাবে কথা বলে তাদের স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে। কিন্তু আয়রিনের হাসবেন্ট মাহিন তার দিকে একবারের জন্য ফিরেও তাকায় নি। পুরোটা সময় আয়রিনের থেকে দুরে বসে বাইরের দিকে তাকিয়ে ছিলো।

এখন রাত হয়েছে অনেক। সারা ঘর জু্রে কোলাহল, বাট এখানে আসার পর মাহিনকে এক মুহুর্তের জন্যও চোখে পরছে না তার।একানে প্রায় সবাই অচেনা। মাহিনকে একটু চিনে তাও বিয়ে হয়েছে নিজের স্বামী এটা ভেবে। বিয়ে ঠিক হওয়ার পর তেমন কথা বলার সুজুগ পায়নি তার সাথে। ফ্যামিলি গত ভাবে ঠিক হয়ে হুটহাট হয়ে গেছে সব। আয়রিন প্রথমে কাঁন্না করলেও মাহিনের ছবি দেখার পর সেও রাজি হয়ে যায়।

আয়রিনকে একটা সাজানো ঘরে বসিয়ে দিয়ে চলে গেলো সবাই। একা একা বসে আছে সে। বার বার মাথা তুলে দরজার দিকে তাকিয়ে দেখছে মাহিন আসছে কি না। কিন্তু প্রায় ঘন্টা খানেক হতে চললো, একনো মাহিনের খবর নেই। ভয়ে বুক ধুকধুক করছে আয়রিনের। তার সামনে কি বলবে সে? কি করবে কিছুই ভেবে পাচ্ছে না। তবুও অপেক্ষা করে যাচ্ছে চুপচাপ।
,
,
ওদিকে বেলকনিতে ফ্লোরে বসে দেওয়ালের সাথে হেলান দিয়ে চুপচাপ আকাশের দিকে চেয়ে আছে ফারদিন। হাতে আয়রিনের একটা ছবি। চক্ষু যুগল রক্তিম আভা ধারণ করে আছে তার।

গত কাল রাতের ও দিনের বেলায় ভাইয়ার অদ্বুত আচরণ টা নিয়ে টেনশন কমছে না ফারহা’র। তাই বিসয়টা জানতে ভাইয়ের রুমের দিকে আগাতে তাকে সে।
রুমে এসে ফারদিনকে না দেখে বেলকনিতে আসে সে। দেখে ফারদিন হাতে কাগজ আকৃতির কিছু নিয়ে ফ্লোরে বসে আছে। ফারহা এগিয়ে গিয়ে তার কাছে বসলো। ছবিটা হাতে নিতেই চমকে উঠলো সে। ফারদিনের দিকে অদ্ভুত চাহুনি দিয়ে বলে,
– কারণ টা তাহলে এটা ছিলো ভাইয়া? তাহলে কেন আগে কাউকে কিছু বলেনি।
ফারদিন এবার কেঁদে উঠে বলে,
– আজ ওর বাসর,, বিয়ে হয়ে গেছে ওর। বন্ধুর বোন দেখে মান সম্মানের দিকে তাকিয়ে, চাইলেও কিছু করতে পারিনি আমি।

To be continue,,,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে