তোমাকে_চাই (Season 2) Part:-19+20

0
1724

তোমাকে_চাই (Season 2) Part:-19+20
#আরবী_আরভী
বাস্তব জীবনকাহিনী

#Part_19

ভেজা কাপড়ে এখান থেকে বের হলে অনেকের কুদৃষ্টি আমার উপর পরবে তাই উনি নিজে ভেজা শরীরে দাড়িয়ে শীতে কাঁপছেন,,,,,,যাইহোক তারাতারি করে গোসলটা সেরে বেরিয়ে দেখি উনি নিচে সাদা ভেজা টাওয়ালে দাঁড়িয়ে থেকে মোবাইলে গেইমস খেলছেন।। আমি লোকিয়ে আলতো পায়ে সেখান থেকে কেটে পরতে চাইলে উনি পেছন থেকে আমার হাতটা শক্ত করে ধরে এক টানে উনার বুকের সাথে চেঁপে আমাকে মিশিয়ে নিয়ে মোবাইলটা বিছানায় ফেলে আমার ভেজা চুলগুলো গুটিয়ে গুটিয়ে বলতে লাগলেন,,,,
– গোসল করতে আবার কবে আসবা,,,
-আর জন্মেও না,, (চেহারা বিবরণ করে)
-ইচ্ছা পূরণ হয়েছে তাহলে,,, (মুচকি হেসে)
-হ্যাঁ ,,আর আপনার ডং টা ছাড়েন বুঝলেন আমাকে আর ধরতে হবে না সাফার সাথে থাকেন আপনে,,,(রাগান্বিত কন্ঠে)
-এখানে সাফা কোথা থেকে এলো,,,(মন মোরা করে)
-আকাশ থেকে পরেছে এখন ছাড়েন আমাকে প্লিজ,,
-এত তাড়া কিসের ছাড়বো তো আগে অসম্পূর্ণ কাজটা শেষ করে নেই,,,(মুচকি হেসে)
-মানে,,,(সন্দেহ কোন দৃষ্টিতে তাকিয়ে)

কথাটা বলে উনি আস্তে আস্তে করে আমার গলার কাছে এলে আমি আমার চোখগুলো বন্ধ করে উনার স্পর্শের অপেক্ষায় থাকলে উনি আমার খুব কাছে এসে আমার অবস্থা দেখে একটা পৈশাচিক হাসি দিয়ে সেখান থেকে সরে আলতো করে আমার মুখটা চেঁপে ধরলে আমি আঁতকে উঠে উনার চেহারাটা সামনে দেখে মুচকি হেসে লজ্জায় মাথা নিচু করলে উনি বলে উঠেন,,,,
-জানি তো তুই শুধু আমারই,,,,,,লক্ষী বউ আমার আর কয়েকটা দিন অপেক্ষা করো ওকে,,,,,এখন শুধু এটাই এনাফ,,,(আমার গালে জোরে একটা কিস করে)
আমি উনাকে ধাক্কা দিয়ে নিজ থেকে সরিয়ে হাটতে হাটতে বলতে লাগলাম,,,,
-আমার সাথে থাকতে হবে না সাফার সাথে থাকেন,,,,
-কালকে স্কুল শেষে রেডি থাকিস আমি পিক আপ করবো,,,,
-পারবো না,,,, (জোরে আওয়াজ দিয়ে)

পরের দিন দুপুরে স্কুল থেকে ফিরছি এমন সময় দেখি রেহান আমাদের স্কুল গেটে আমার জন্য অপেক্ষা করছে উনার কাছে যেতেই অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও আমাকে উনার বাইকে চরিয়ে দেন।। মেজাজটা খারাপ লাগে।। সবকিছুতে উনার মর্জি হবে নাকি।।
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা

◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।

আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share


কিছুদূর গিয়ে পৌছালাম একটা কফি শপে যাতে প্রবেশ করে আমার চোখগুলো কপালে উঠে গেলো।।এ কাকে দেখছি আমি,,,,,,সাফা ডাইনীটা এখানে বসে কি করছে।। চেহারাটা কালো করে সেখান থেকে চলে আসার পদক্ষেপ নিলে রেহান আমার হাতটা ধরে ফেলে উনার কথা ভেবে আমি আর কিছু না বলে টেবিলের পাশে গিয়ে দাড়ালে সাফা রেহানকে দেখে বসা থেকে উঠে দৌড়ে এসে উনাকে জড়িয়ে ধরে আবার নিজ স্থানে ফিরে যায়।।আমি তাও কিছু বলিনি।। বাসায় যাই তারপর মজা দেখাবো ডেভিলটাকে।।

রেহান অর্ডার করে কথা শুরু করলে আমি উনার কথা শুনে অবাক হয়ে যাই,,,
-সাফা কেমন আছো,,,,
-হুমমম ভালো তুমি,,,,(মোবাইলে ব্যস্ত হয়ে)
-আচ্ছা তুমি যে আমাকে এভাবে যেখানে সেখানে জড়িয়ে ধর কিস করো এসব কেন করো,,,,,, আমার বউ দেখলে কত মাইন্ড করে তোমার কোন ধারনা আছে,,,,,
-রেহান আমি তোমার গফ,,,, ওয়েট ওয়েট তোমার বউ মানে,,, তুমি বিয়ে করলে কখন,,,,(হাসতে হাসতে)
-তোমাকে কতবার বলেছি তোমার সাথে রিলেশন আমি জাস্ট বাজি ধরে করেছিলাম,,,, তুমি আমার ফ্রেন্ডকে পাত্তা দিতে না তাই এমনটা করেছি আর তুমি তা মেনেও নিয়েছিলে তাহলে হঠাৎ কি হলো,,,,,
-হা হা হা,,, তোমাকে দেখলে না আমার ক্যান্ট্রল হয় না রেহান বায় দ্যা ওয়ে তোমার বউ কোথায় আর এই মেয়েটাই বা কে??,,,,,(আমার দিকে তাকিয়ে)
-নিসা,,,,,,,,আমার বউ,,
-তুমি এর জন্য আমাকে ছাঁড়ছো,,(হাসতে হাসতে)
-হ্যাঁ,,, কারন ওঁ তোমার মতো বানর না যার তার ওপর ঝাপিয়ে পরে না,,,
-ওও আচ্ছা ভালো,,,, আমি এখন উঠি আমার একটা কাজ আছে বায়,,,,, বায় নিসা,,(হাতে ব্যাগ আর চোখে চশমা দিয়ে)

আমিও কম কি জানি হাতে টাটা ইশারা দিতে দিতে ঠোঁটে মিথ্যা হাসি দিয়ে বলেই ফেললাম,,,,
-ক্যান্ট্রল ইউর সেলফ আপু,,,
-তোমাকে বলে দিতে হবে না যত্তসব ,,,,,(রাগান্বিত কন্ঠে)

সাফা চলে যাওয়ার পর আমি উনার দিকে রেগে চোখগুলো রসগোল্লার মতো করে তাকিয়ে সাফার সাথে চক্করটা কি আর কিসের বাজি সে কথা জিজ্ঞাসা করলে উনি জানান যে আমার সাথে রিলেশন করার আগের ঘটনা সাফাকে নাকি সাব্বির (উনার বেস্ট ফ্রেন্ড) খুব পছন্দ করতো কিন্তু সাফা আপু পাত্তা দিতো না আর বেশি অহংকার করতো পরে রেহান নাকি সবফ্রেন্ডদের সাথে বাজি ধরে সাফার সাথে কিছুদিন রিলেশন করে তাকে বাজির ব্যাপারে জানিয়ে দেয় এবং সেও তা মেনে নেয়।।।

তার কথা শুনে আমি কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বলতে থাকি,,,,
-তার মানে আপনে ঐ মেয়ের সাথে রিলেশনে থাকতে ও রে কিস করেছেন,,,
-কসম নিসা বিশ্বাস কর আমি তোর আগে কোন মেয়ের দিকে ভালো করে তাকাতাম পর্যন্ত না,,,, সাফার সাথে রিলেশন এক প্রকার ফ্রেন্ডসদের উস্কানি বলতে পারিস,,,, কিন্তু আমি ওর দিকে ভালো করে কখনো তাকায়নি,,, জাস্ট বিরক্ত লাগতো মেয়েদের ডং গুলা বুঝেছিস,,,যাইহোক তোর জন্য একটা গিফট আছে,,,

মেয়েটার সাথে উনি এত কনফিডেন্টলী কথা বললেন বিশ্বাস না করে যাবো কোথায়।। তাই মনে আর সন্দেহ না রেখে ঠোঁটে হাসি মাখিয়ে বলে উঠলাম,,,
-কি গিফট??? দেখান,,,,
উনি একটা আংটির বক্স থেকে অনেক সুন্দর একটি আংটি বের করে আমাকে পড়িয়ে দিয়ে বললেন,,,,
-কেমন,,,সবসময় তোর সাথে রাখবি ওকে,,,
-সুন্দর কিন্তু পিংক কালার আমার খুব পছন্দ পিংক কালার হয় না, চেইনটাও এই কালারের দিয়েছেন?,,,(মুখ ভার করে)
-স্বর্ণ কখনো পিংক কালার হতে দেখেছিস যদি থাকতো তাহলে তাই আনতাম,,,,পরেরবার স্বর্ণ কারিগরদের বলবো আমাকে পিংক কালারের জুয়েলারি বানিয়ে দিতে কারন আমার বউয়ের পিংক কালার পছন্দ খুশি তো,,,, (কিছুটা রেগে)

কথাটা শুনে আমি লজ্জায় নিচের দিকে তাকিয়ে থাকলে উনি মুচকি হেসে আমাকে বলতে থাকেন,,,,
-আচ্ছা আমাকে কিছু দিবি না,,,,
আমি কিছুই ভাবতে পারছি না কি দিবো উনাকে।। আমার কাছে তো এত টাকাও নেই উনার মতো দামী কিছু কিনব।। আমার কোকড়ানো অবস্থা দেখে উনি হাসি মুখে দুই কাধে হাত রেখে বলে উঠলেন,,,
-আরে বাবা আমি তো মজা করছি,,তোকে কিচ্ছু দিতে হবে না,,, তুই নিজেই আমার জন্য আল্লাহ পাকের থেকে এক বিশেষ গিফট আমার লক্ষী বউ শুধু কখনো আমাকে ছেড়ে যাবি না প্লিজ,,,,
-হুমম যাবো না,,
মনটাকে মানাতে পারছি না।। সত্যি উনি আমাকে অনেক অনেক গিফট দিয়েছেন কিন্তু আমি কিছুই দিতে পারিনি।।। তাই নিজের দুঃখ টাকে কমাতে হাতে থাকা আমার নরমাল আংটিটা খুলে উনাকে পড়িয়ে দিয়ে মন খারাপ করে বলতে লাগলাম,,,,
-জানি কম দামী জিনিস আপনে পড়েন না,,, সত্যি এটা ছাড়া আমার কাছে এখন আর কিছু নেই আপনাকে দেবার প্লিজ রেখে দেন প্লিজ,,,
-বিউটিফুল,,,, ভালোবাসার জিনিস কখনো ছোট হয় না নিসা,, সবসময় সাথে রাখবো আমার ,,থ্যাংকস আমার জানু আই লাভ ইউ,,
-আমিও,,,
-আমিও কি?
-আই লাভ ইউ রেহান,,,এবার হয়েছে,,

কিছুদিন পর রেহানদের বাড়িতে অনেক মেহমান রিয়া আপুর ফ্যামিলি উনার সব মামা মামানী আরো কত জন।। মানুষের এত ভীড় যে উনাকে খোঁজে পাওয়াটাও মুশকিল হয়ে গেছে।।ধুর ছাই কিছু ভালো লাগে না।। মন মালিন্য নিয়ে উনার রুমে ঢুকে উনার পড়ার টেবিলে বসে লেপটপটা সরিয়ে উনার বিভিন্ন বই খাতা ঘাটতে ঘাটতে হঠাৎ একটা বইয়ের লাস্ট সাদা পেইজে দেখি একটা হার্ট আঁকা যার ভেতর খুব সুন্দর করে নিসা লেখা।। দৃশ্য টা দেখে আমার ঠোঁট থেকে আপ্নাআপ্নি মুচকি হাসি বের হয়ে আসছে।।কিছুক্ষন ডিজাইনটার দিকে তাকিয়ে থেকে ভাবছি একটু লেপটপে গেইমস খেললে কেমন হয়।।এম্নিতে তো উনি এখানে নেই খুব বিরক্ত লাগছে উনাকে ছাড়া।। তাই আর দেরি না করে লেপটপটা ওপেন করে দেখি এতে লক করা।।। এমাাা!!এখন লক খুলব কি করে আমি তো পাসওয়ার্ড জানি না।।মন খারাপ করে বসে থাকলে হঠাৎ আমার কেন জানি না মনে হলো উনার মোবাইলের পাসওয়ার্ডটা এখানে দিয়ে একবার ট্রাই করা যেতে পারে,,, ঝটপট I love you Nisha লিখে এন্টার করলে লক টা এক ঝুমুকে খুলে গেলে দেখি ওয়ালপেপারে আমার আর রেহানের হেড টু হেড মিলানো হাসি মাখা একটা ছবি।। ছবিটা দেখতে বেস ভালো লাগছে ।।আমি ছবিটার দিকে মুগ্ধভাবে তাকিয়ে থাকলে কয়েকটা পিচ্চি এসে আমাকে জিজ্ঞাসা করে বসে,,,,
-আমাদেরকে একটু খেলতে দেবে,,,
উনার অনেক ইম্পরট্যান্ট কিছু থাকতে পারে ভেবে আমি বাচ্চাদের শান্তনা দিয়ে বললাম,,,
-এটাতো আমার না ঐ যে রেহান ভাইয়া আছে না এটা উনার।।। উনি জানতে পারলে অনেক বকা দিবে আমাদের ,,চল চল যাই এখান থেকে,,,,(লেপটপটা অফ করে)

রুম থেকে বেরিয়ে দেখি আমার ডেভিলটা মেহমানদারী করতে ভীষণ ব্যস্ত।।সবাইকে খাবার সাভ করছেন।।কার কি লাগবে দেখছেন যেহেতু উনাদের বাড়ির দাওয়াত।।। আমি মুচকি হেসে উনার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলে হঠাৎ উনি আমার ধ্যান ভঙ্গ করে দিয়ে আমাকে একটা চোখ টিপ মেরে আবার নিজ কাজে মনোযোগী হয়ে পরলেন।।উনার এরুপ দুষ্টু মিষ্টি ভালোবাসায় মাতাল হয়ে গেছি আমি ।। আর যাইহোক না কেন এই ডেভিলটাকেই আমি সারা জীবনের জন্য নিজের পাশে চাই,,,,,,,,

চলবে….
#তোমাকে_চাই
#আরবী_আরভী
বাস্তব জীবনকাহিনী
#Part_20 (Season 2)

আমি মুচকি হেসে উনার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলে হঠাৎ উনি আমার ধ্যান ভঙ্গ করে দিয়ে আমাকে একটা চোখ টিপ মেরে আবার নিজ কাজে মনোযোগী হয়ে পরলেন।।উনার এরুপ দুষ্টু মিষ্টি ভালোবাসায় মাতাল হয়ে গেছি আমি ।। আর যাইহোক না কেন এই ডেভিলটাকেই আমি সারা জীবনের জন্য নিজের পাশে চাই।।

সন্ধ্যায় রেহানদের বাড়ি বেস রমরমাট হয়ে উঠেছে।রেহানের সব মামা মামানী কাজিন রিয়া আপুসহ তার চার ভাই জিনিয়া আপু আমার মামাতো ভাইবোনে প্রায় ২০-২৫ জন ছেলেমেয়ে এক জোট হয়ে ছাদে আড্ডা দিচ্ছি।।আড্ডা দিচ্ছি বললে ভুল হবে সবার ছোট বলে গণনার বাহিরে আছি।।রেহান আড্ডার লিডার বলা যেতে পারে।। যদিও উনার থেকে বয়সে বড় আরও অনেকেই এখানে আছেন তবুও সবার মনোযোগ রেহানের কথাতেই।। উনার কথাতেও মন মাতানো একটা ব্যাপার আছে।। উনি কথা বলার ফাঁকে ফাঁকে হাতে থাকা টাইগারের বোতলটাতেও চুমুক মারছেন।।উউফফফফ কিযে হ্যান্ডসাম লাগছে না আমার ডেভিলটাকে।।এক নিমিষে কারো ক্রাস হবার জন্য উনার এই লুকটাই যথেষ্ট।। না জানি কত মেয়ে না কুদৃষ্টি দিচ্ছে আমার ডেভিলটার উপর।।উনি অনাবরত বিভিন্ন বিষয়ে হাসিঠাট্টা করে চলছেন এখন আমার তো কোনো পাত্তাই নেই উনার কাছে।। ধ্যাৎ।। ভালো লাগে না।।

সবাই অনেক মজা করছে হাসা হাসি করছে শুধু আমাকে ছাড়া।। তার মধ্যে রেহানের কাছে জিনিয়া আপু আহ্লাদী হওয়ার কোন প্রকার সুযোগ হাতছাড়া করছেন না ।। আড্ডার একপর্যায়ে সবার রিকুয়েস্টে রেহান গানে সুর ধরেন।। তাও আবার জিনিয়া আপুর পছন্দের গানে।।।জাস্ট বিরক্ত লাগছে।।আর কোনো গান পেলেন না নাকি।।জিনিয়া আপুর পছন্দের গানই উনাকে গাইতে হবে।। অসহ্যকর।।

কথাগুলো নিজের মধ্যে বিরবির করছি এমন সময় সুন্দরী এক আপুমনি মুগ্ধভাবে রেহানের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে বললেন,,,
-তুমি কি সিংগেল???
কথাটা শুনে মনে হলো এখুনি মেয়েটার গালে তিন-চারটি থাপ্পড় বসিয়ে দি।।লুচ্চা মেয়ে কোথাকার।।উনি সিংগেল নাকি না তা কেন তোকে জানতে হবে।।বেয়াদব।। ,,,,যাইহোক একগাদা মানুষের সামনে মেয়েটার এমন অবাঞ্চিত প্রশ্নে রেহান ভ্রু কোচকে আমার দিকে তাকিয়ে ডেভিল মার্কা একটা হাসি দিয়ে প্রশ্নের জবাবে বলে উঠলেন,,,,,
-হ্যাঁ আমি সিংগেল,,,,কেন প্রেম করবা নাকি,,,।।মাশাল্লাহ তুমি তো খুব সুন্দর দেখতে।। করতে চাইলে করতে পারো,,,, (হাসতে হাসতে)

উনার জবাবে আমি বাদে সবাই হেসে উঠে আর মেয়েটা তো বেস খুশি হয়েছে মনে হচ্ছে।।যার আভাস তার চোখে মুখে স্পষ্ট।। কিন্তু আমি তার জন্য একেবারে প্রস্তুত ছিলাম না।। উপরে যেন সমগ্র আকাশটা ভেঙে পড়লো।।ভেবেছি এবারও উনি আমাদের ভালবাসার জয় ঘটাবেন।। কিন্তু এ আমি কি শুনছি।। রেহান অন্য একটা মেয়ের সাথে প্রেম করতে চাইছেন।।তাকে সুন্দর বলছেন।।কিন্তু কেনো,,,,, কেনো রেহান।।কথাগুলো ভেবে না চাইতেও অশ্রু ধারায় ভেসে যাচ্ছে আমার দুই নয়ন।।বুকটাতে চিনচিন ব্যাথাও অনুভব হচ্ছে।। কোনোরকমে সেখান থেকে উঠে চোখের পানি মুছে এক দৌড়ে রেহানের রুমে গিয়ে বিছানায় বসে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেদে নিজেকে হালকা করার চেষ্টা করছি।।

কিছুক্ষণ পর রেহান রুমে এলে আমি উনাকে দেখে কাঁন্নারত চেহারাটা নিয়ে সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে চাইলে রেহান আমাকে থামিয়ে দিয়ে হাতটা ধরে বলতে থাকেন,,,
-রেগে আছিস না,,,
আমি এক জাটকায় উনার কাছ থেকে হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে কাঁদো কাঁদো সুরে ধমকের দিয়ে বলে উঠলাম,,,
-টার্চ করবেন না আমাকে জাস্ট দূরে থাকবেন আমার থেকে বুঝেছেন,,,
-আমি মজা করছিলাম নিসা এত রাগ করছিস কেন,,,,(করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে)
-মজা?? আমি যদি এখন এই মজাটি করতাম তাহলে আপনে কি করতেন রেহান,,,,,,, এতক্ষণে ঠিক কষে ৩-৪ টা থাপ্পড় মেরে দিতেন আমাকে,,,

কথাটা বলে আমি পথ থেকে উনাকে সরিয়ে ড্রয়িংরুমে চলে যাই।।ধৈর্য্যের একটা সীমা আছে।।যার যেমন ইচ্ছা তাই করে বেড়াচ্ছে।।আর আজকেতো রেহান আমার সাথে থাকা সম্পর্কটাও অস্বীকার করলো।।কেনো রেহান আপনে আমার সাথে এমনটি করেন।। তবে ব্যাপার না আমারও সময় আসবে।।

ড্রয়িংরুমে সোফার এক কোনায় মন মরা হয়ে বসে আছি।। আমার পিছু পিছু ডেভিলটাও সেখানে হাজির হয়ে সোফায় ধুপ করে বসে হাতে রিমোটটা নিয়ে মুখটা গম্ভীর করে এক দৃষ্টিতে টিভি দেখতে লাগলেন।। এমন সময় আগে থেকে উপস্থিত থাকা তামিম ভাইয়া (জিনিয়া আপুর ভাই) কিছুটা কাছে এসে আমার দিকে তাকিয়ে মন খারাপের কারন জানতে চাইলে আমি তাকে কিছুই না বলে এড়াবার ট্রাই করছি।।

বাড়ি থেকে নাকি তার জন্য মেয়ে দেখছে ব্যস্ততার কারনে যেহেতু বয়সটা কম হয়নি তাই আর দেরি করতে চায়না।। আমি তা কিছুই জানতাম না যদি রেহান না বলতো।। উনারা আসার আগেই আমাকে রেহান তামিম ভাইয়ার সামনে পর্যন্ত আসতে বাড়ন করেছেন।। কথা বলা তো দূরের কথা।।কথাগুলো ভাবতেই মাথায় একটা দুষ্ট বুদ্ধি এলে আমি রেহানের দিকে তাকিয়ে দেখি উনি সেই আগের মতোই গম্ভীর মুখে টিভি দেখছেন।।ডেভিলটাকে একটু রাগিয়ে দিলে কেমন হয়।। এদিকে তামিম ভাইয়াও একনাগাড়ে আমাকে মন খারাপের কারন জিজ্ঞাসা করেই চলছেন।।।আর দেরি না করে শান্ত কন্ঠে তামিম ভাইয়াকে উত্তর দিয়ে দিলাম,,,,

-আপনে তো আমার সাথে কথাই বলেন না তাই আমার মনটা ভীষণ খারাপ,,,(ঢঙী কন্ঠে)

কথাটা শুনে রেহান টিভি দেখা বাদ দিয়ে চোখগুলো রসগোল্লার মতো করে আমার দিকে ফিরে তাকালেন।।রাগে চেহারাটা লাল হয়ে গেছে উনার।।বেস আনন্দ লাগছে আমার চুপিচুপি মুচকি হাসছি।। তামিম ভাইয়া আমার জবাব শুনে উজ্জ্বল মুখ নিয়ে আরও কাছে এসে বলে উঠলেন,,,

-তাই নাকি আগে বলনি কেনো তুমি খুব লক্ষী একটা মেয়ে,,,,
– না ভাবলাম আপনে যদি মাইন্ড করেন তাই বলি নি,,,,(মুচকি হেসে)

এবার তামিম ভাই যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেয়ে গেলেন এমনই হাবভাব নিয়ে আমার একদম কাছে এসে হাতটা ধরে বলতে শুরু করলেন,,,,
-ভালবাসলে বলতে হয়,,,,, তোমার মতো একজনের খোঁজে ছিলাম আজ পেয়েছি ,,,
-জ্বী বুঝতে পেরেছি,,,(হাতটা ছাড়িয়ে নেয়ার চেষ্টায়)
-বিয়ের তারিখটা পাকা করলে ভালো,,,,,

বুড়োটা কথাটি শেষ করার আগেই রেহান এক জাটকায় সোফা থেকে উঠে তামিম ভাই থেকে আমার হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে রেগে তামিম ভাইকে বলতে লাগলেন,,,
-নিজের বয়সের দিকে একটু তাকান,,,একসাথে দুজন দাড়ালেন মেয়ে আর বাবা দেখা যাবে।।। (ভীষণ রেগে)

বেচারা তামিম ভেবাচেকা খেয়ে রেহানের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে ধমকের সুরে বলে উঠেন,,,
-আমাদের মধ্যে যা হবার তা হবে তাতে তোমার সমস্যা কি রেহান,,,
-আমার সমস্যা কি মানে আমার বউয়ের সাথে ফ্লাডিং করছেন আবার আমাকে বলছেন আমার সমস্যা কি,,,,
-কে বউ কার বউ পাগলের মতো কি যাতা বলে যাচ্ছে ছেলেটা ,,,, (বেখেয়ালি হাসি দিয়ে)

কথাটিতে রেহান খুব রেগে গিয়ে তামিম ভাইয়ার নাকের ডগার কাছে এসে নাক মুখ লাল করে বলতে থাকেন,,,,
-নিসা আমার বউ,,, ওর কাছ থেকে একশো মাইল দূরে থাকবেন,,, তা না হলে এমন অবস্থা করবো বিয়ে করার চিন্তা একদম ভেনিস হয়ে যাবে,,,

উনার এমন রুপে খুব ভয় লাগছে আমার।।ভয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে বসে থাকলে রেহান শক্ত করে আমার হাতটা ধরে এক টানে সোফা থেকে উঠিয়ে টেনে হিছরে উনার রুমে নিয়ে দরজাটা লক করে রাগান্বিত হয়ে চোখগুলো আগুনের গোলা করে জিজ্ঞাসা করতে লাগলেন,,,,
-তুই লোকটার জন্য মন খারাপ করে বসেছিলিস,,,
উনার রাগ দেখে আমার কথায় জড়তা বেঁধে যাচ্ছে।। আমতা আমতা করে যেই না কিছু বলতে যাবো অম্নি উনি আমার বাম গালে খুব জোরে কষে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দেন।।আমি ছিটকে গিয়ে উনার ড্রেসিং টেবিলের উপর জাপ্টে পড়ি।।। নিচের ঠোঁটায় হাত দিয়ে দেখি তা থেকে রীতিমতো রক্ত বেরিয়ে গেছে।।

তারপর উনি আবার আমার কাছে এসে শক্ত করে মুখটা চেঁপে ধরে বলতে লাগলেন,,,,
-আমার সামনে পরপুরুষের সাথে ফ্লাডিং করতে লঁজ্জা করে না তোর,,

আমি ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেদে উনাকে বিনয়ী সুরে বিস্তারিত বলতে থাকলে,,,,
-রেহান বিশ্বাস করেন আমি সত্যি মজ,,,,
কথাটা আর শেষ করতে পারিনি উনি আবার আমাকে অনেক জোরে কষে আরেকটা থাপ্পড় মেরে বলে উঠলেন,,,,
-বারন করেছিলাম না লোকটার সামনে যেতে তাও কি দেখাতে গিয়েছিস,,,,নিজের রুপ নাকি যৌবন,,,, বল ,,(ধমকের সুরে)

আমি কোনো জবাব না দিয়ে থাপ্পড় দেয়া গালটায় হাত দিয়ে উনার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে অনাবরত চোখের জল ফেলে ভাবছি এটাই কি রেহান।।বিশ্বাসই হচ্ছে না।। উনি কিভাবে পারেন এগুলো বলতে।।?,,,,,,,,চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে