তোকে চাই❤(সিজন-২)part:54+55+56

0
4056

তোকে চাই❤(সিজন-২)part:54+55+56
#writer: নৌশিন আহমেদ রোদেলা❤

?

হলুদ শেষ করে রুমে ঢুকতেই দরজা বন্ধ করার শব্দ কানে এলো। পেছনে তাকিয়ে দেখলাম চিত্রার বদলে দরজায় ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে শুভ্র। আমার দিকে তাকিয়ে দুষ্টু হাসি দিয়ে এগিয়ে এসেই জড়িয়ে ধরলেন আমায়। কোমরে ঠান্ডা পরশ পেয়ে নড়ে উঠলাম আমি। হাতটা টেনে সামনে এনে ভ্রু কুঁচকে তাকালাম। উনার দু’হাত ভর্তি হলুদ। আমি অবাক চোখে একবার উনার হাতের দিকে তাকিয়ে আবারও নিজের কোমরের দিকে তাকালাম। কোমরের দু’পাশেই হলুদ দিয়ে ল্যাপ্টে দিয়েছেন উনি। আমি চোখ বড় বড় করে উনার দিকে তাকাতেই ঘাড়ে হাত দিয়ে কাছে টেনে নিলেন উনি। কপাল থেকে শুরু করে পুরো গলা হলুদে মাখামাখি করে ক্ষান্ত হলেন। দাঁত কেলিয়ে বলে উঠলেন,

— বাহ্। আমি হলুদ লাগাতেই একদম রসগোল্লার মতো লাগছে তোমায়। এই? এভাবে দাঁড়িয়ে আছো কেন? আমায় হলুদ লাগাবে না?

কথাটা বলেই হলুদ হাতে পকেট থেকে ফোন বের করলেন উনি। আমার গালের সাথে গাল ঘষে হলুদের সাথে কয়েকটা ছবিও তুলে নিলেন ঝটপট। মাথায় একটা চুমু খেয়েই বেরিয়ে গেলেন চুপচাপ। আমি হ্যাবলার মতো দাঁড়িয়ে আছি। উনি আইলার মতো এসে ঘূর্নিঝড়ের মতো চলে গেলেন। আর আমি এক হ্যাবলাকান্ত, যে কি না কিছুই বুঝতে পারলাম না। ঠোঁট উল্টিয়ে বিছানায় গিয়ে বসতেই আম্মু,আপু, চিত্রা আর কয়েকজন আন্টি এলেন। তারা নাকি গোসল করাবেন আমায়। আমি বিস্মিত গলায় বলে উঠলাম,

— আশ্চর্য! আমি কি ছোট নাকি যে আমায় গোসল করাবে? আমি একা গোসল করতে পারি মা।

কিন্তু কে শুনে কার কথা? বিয়ের গোসলে নাকি দুবলা ঘাস, পাথর, তেল কি কি লাগে আর সাথে লাগে বড়দের আশীর্বাদ। মুসলিমদের ভাষায় দোয়া। মার কথার বাইরে যাওয়া মানেই সবার সামনেই ইজ্জতের ফালুদা বানানো। তাই সেই রিস্ক না নিয়ে চুপচাপ ঢুকে গেলাম ওয়াশরুমে আর আমার সাথে ঢুকলো আরো চারজন।হায় অনিষ্ট! এই দিনটাও দেখার ছিলো? সাড়ে ছয়টা নাগাদ গোসল সেড়ে বেরিয়ে এলাম। গায়ে টি-শার্ট আর থ্রি-কোয়াটার প্যান্ট। বিয়ের দিন কোনো বিয়ের কনেকে এমন ড্রেস পড়তে দেখলে মুরব্বি সকল নিশ্চয় হার্ট অ্যাটাক করতো। কিন্তু আমার ভাগ্য ভালো দরজাটা ভেতর থেকে বন্ধ। তোয়ালেটা সোফায় ছুড়ে ফেলেই গা এলিয়ে দিলাম আমি। উদ্দেশ্য জবরদস্ত একটা ঘুম দিবো। বিয়ে মানে যে এতো ঝামেলা সেটা আগে জানলে শুভ্রকে বলতাম, “ওহে স্বামী,প্রয়োজনে আমাকে নিয়ে পলায়ন করুন তথাপি পুনরায় বিবাহ করতে চাহিবেন না! না! না! ” কথাগুলো ভাবতে ভাবতে চোখটা একটু লেগে আসতেই দরজায় তুমুল আন্দোলন শুরু হলো। অনিচ্ছা সত্ত্বেও দরজা খুলতে হলো আমায়। আমার ড্রেস আপ দেখে তারা অবাক হয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলেও তেমন কিছু বললো না। চিত্রা কোথা থেকে দৌড়ে আমার ঠিক সামনে এসে দাঁড়ালো। হাতে লাল বেনারসী আর গহনার বাক্স। ওগুলো নিয়েই দুষ্টু হাসি দিয়ে লাফাতে লাগলো ও। আমার কাঁধের সাথে কাঁধ লাগিয়ে বলে উঠলো,

— “লাল টুকটুক পুতুল আমার যাবে শশুড় বাড়ি….” কি রে? লাড্ডু ফুটে?( চোখ টিপে)

— না জানু। ঘুম ফুটে। ঘুমোতে দে আমায়।

আমার কথায় যেনো মস্ত আকাশটা ভেঙে পড়লো ওর মাথায়। চোখ বড় বড় করে বলে উঠলো,

— পাগল নাকি? ক’টা বাজে দেখেছিস? সাতটা বেজে পাঁচ মিনিট। আর বিয়ে কয়টায়? পুরো আটটায়। আমাদের হাতে মাত্র পঞ্চান্ন মিনিট আছে। সো ঘুম টুমকে বাই বাই বলে চুপচাপ সাজতে বসে যা, বুঝলি?

আমি ঘুমু ঘুমু চোখে বসে আছি আর ওরা সাজাচ্ছে আমায়। সারাজীবন যে বিয়ে নিয়ে এক্সাইটমেন্ট কাজ করে সেই বিয়েতে মেয়েদের ঘুমই পায়, নয়তো তারা বিরক্ত হয়, এটাই নিয়ম। আটটা বাজার ঠিক একমিনিট আগে সাজ কমপ্লিট হলো আমার। এতো তাড়াতাড়ি বউ সাজিয়ে ফেলেছে দেখে পার্লারের মেয়েদের গর্বের শেষ নেই। সবাই বেরিয়ে গেলে লাজুক চোখে আয়নার দিকে তাকালাম। কেনো যেনো নিজেকেই ভীষণ লজ্জা লাগছে আজ। চিত্রা পাশেই দাঁড়ানো ছিলো। আমাকে লজ্জা পেতে দেখে কানের কাছে ফিসফিসিয়ে গেয়ে উঠলো,

— “আয়নায় এই মুখ দেখবে যখন
চারদিকে শুভ্র ভাইয়ের মুখ পড়বে চোখে।” হিহিহি মাশাআল্লাহ খুব সুন্দর লাগছে তোকে। আজ রাতে যে কি হববববে….ওহহো ওহহো।

— শাট আপ।

— আজ রাতে থামতে মানা বেবি। সো আজ নো শাট আপ। মুখটা মাষ্টারনীর মতো না করে একটু রোমান্টিক হ বুঝলি?

চিত্রার কথাটা শেষ হতে না হতেই বাবার সাথে রুমে এলো মাঝবয়স্ক কাজি সাহেব। আবারও এলো কবুল বলার পালা। প্রথমবার ঘোরের মাঝে থাকলেও এবার যেনো হাজারো কথা ঘুরতে লাগলো মাথায়। মনে হতে লাগলো এই কবুল বলা মাত্রই হয়তো বাবার মুখের প্রিন্সেস নামটা থেমে যাবে, ভাইয়ার সাথে ঝগড়া, কথাকথায় মরামারি সব যেনো এখানেই থমকে যাবে, বিনা কারণে আম্মুর থেকে খাওয়া বকুনি আর বকুনি খাওয়ার পর ভাইয়ার সাথে খিলখিল করে হেসে ওঠা সবটায় যেন নিঃশেষ হয়ে যাবে। চোখ ফেটে বেরিয়ে এলো জল। পাশ থেকে চিত্রার বলা কথা, “এই রোদু কবুল বল!” কথাটা শুনেই ডুকরে কেঁদে উঠলাম আমি। মনে হলো এই বুঝি আদর মাখা দিনগুলো শেষ হলো সব। এই বুঝি অবাধ্য আবদারগুলো হারিয়ে গেলো দূর অজানায়….

#চলবে….

#তোকে চাই❤
……. (সিজন-২)
#writer: নৌশিন আহমেদ রোদেলা❤
#part:55
?
— এই রোদ? এতো কাঁদতে হয় নাকি? কবুলটা বলে দে সোনা।
— হ্যাঁ রোদ। কবুলটা বলে দে মা। এভাবে কাঁদতে হয় না। বল….
সবার কথার ধাপটে হেঁচকি তুলতে তুলতে “কবুল” নামক বুকভারি করা শব্দটা বলেই দিলাম আমি। বিয়ে পড়ানো শেষ হলে খেতে গেলো সবাই। এদিক সেদিক থেকে ছবি তোলার কতো বাহার। কিন্তু আমার মাথায় ঘুরছে হাজারো উলট পালট ফুলঝুড়ি। আজকের এই দিনটাতে কেন জানি বাড়িটাকে বড্ড আপন লাগছে। মনে হচ্ছে, এই বাড়ির আনাচে কানাচে কতো শত স্মৃতি মিশে আছে আমার। প্রতিটি কোণায় কতো ভালোবাসা মেশানো আবেগ। এই আবেগগুলো ছাড়া থাকবো কি করে আমি? সকালে ঘুম থেকে উঠে কফি হাতে সেই দোলনা। টিভির ওই রিমোট নিয়ে ভাইয়া আর আমার ঝগড়া। মাঝরাতে ঘুম ভেঙে গেলে সারা বাড়ি হাঁটাহাঁটি করায় মার বকুনি। সব বাচ্চামোতে সাপোর্ট দেওয়া বাবার হাসিমুখ। মার সাথে ঝগড়া লাগিয়ে মুখ ফুলিয়ে বাবার পেছনে দাঁড়াতেই কাছে টেনে নিয়ে বাবার বলে উঠা “আমার লক্ষী মা!” ভাইয়ার টি-শার্ট পড়ে সারা বাড়ি দৌড়ে বেড়ানো। সবকিছু তো হারিয়ে ফেললাম আজ। আপু না হয় আমার সাথেই থাকবে কিন্তু বাকি তিনটি মানুষ! ওরা যে আস্ত তিন তিনটি পৃথিবী আমার। ইশশ…মেয়েদের ভালোবাসা এতো কষ্টময় হয় কেন ? তাদের বুঝি ছেড়ে যেতেই হয় বারবার? চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়ছে আমার। ঘড়িতে ঘন্টা পড়তেই ভাবনায় ছেদ ঘটলো,,টং টং করে দশ দশটা ঘন্টা বেজে গেলো বড্ড নির্মমভাবে,,ভেঙে দিলো হাজারও ভাবনার প্রহর।। কিভাবে যে দু দুটো ঘন্টা কেটে গেলো বুঝতেই পারলাম না!! ঘড়িতে দশ-টার ঘন্টা বাজতেই কেঁপে উঠলাম আমি। বেজে গেলো বিদায়ের শানাই। গাড়ির কাছে যেতেই বুকটা ফেটে কান্না এলো । মনে হচ্ছে… নিজের সবটায় ফেলে যাচ্ছি আমি। মা-বাবা- ভাই নামক তিন পৃথিবী সমান ভালোবাসা ফেলে যাচ্ছি আমি। ছোট ছোট মধুময় স্মৃতিগুলো ফেলে যাচ্ছি আমি। আজ ভাইয়ার চড়গুলোও কি ভয়ঙ্কর ভালোবাসাময় লাগছে। মাকে হুট করে জড়িয়ে ধরে জারি খেয়ে খিলখিল করে হেসে উঠাতেও কি অদ্ভুত প্রশান্তি লাগছে। বাবা বুঝি আর মামনি বলে ডাকবে না আমায়!! বাবার গলা জড়িয়ে ধরে অদ্ভুত সব প্রশ্ন আর অদ্ভুত সব আবদারও করা হবে না আর। কারো একটা বকায় পাশ থেকে হাজারটা প্রতিবাদী স্বর ভাসবে না আর। কথাগুলো ভেবেই বাবাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে চোখ ভাসাচ্ছি আমি। মনে হচ্ছে, এই বুঝি নিয়ে গেলো আমায়। অনেক দূরে….আমার বাবার এই ছোট্ট রাজত্বের বাইরের কোনো দুনিয়ায়। অবশেষে গাড়িতে উঠলাম। হেঁচকি তোলে চলেছি ক্রমাগত। পাশ থেকে কেউ একজন টিস্যু বক্স এগিয়ে দিয়ে করুণ গলায় বলে উঠলো,
— এভাবে কাঁদছো কেন রোদপাখি? প্লিজ কেঁদো না। আমার নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে খুব।
উনার কথায় নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা চালালাম আমি। উনি কিছুটা চেপে বসে কোমর জড়িয়ে নিজের কাছে টেনে নিলেন আমায়। টিস্যু দিয়ে চোখ মুছিয়ে দিতে দিতে ফিসফিস করে বলে উঠলেন,
— ইশশ চোখ মুখের কি ভয়ানক অবস্থা করেছো রোদ। এভাবে কেউ কাঁদে নাকি? তোমার কান্না দেখে তো মনে হচ্ছিল বেঁচে দিচ্ছি তোমায়। পাগলী! আমি তো আছি। চিন্তা করছো কেন? তোমায় বলেছি না? তোমার সব চিন্তা আমায় দিয়ে দাও। তোমার বাবার রাজ্য থেকে প্রিন্সেস নিয়ে যাচ্ছি আমার রাজ্যের রাণী করবো বলে। আমার কতোটুকু সামর্থ্য আছে জানি না কিন্তু তোমার মুখে হাসি ফুটানোর জন্য ভালোবাসাটা আছে যথেষ্ট। কি আছে না?
আমি মিষ্টি হেসে উনার বুকে মাথা লুকালাম। মাথা নেড়ে মৃদু স্বরে বললাম, “হুম আছে।” কিছুক্ষণের মধ্যেই পৌঁছে গেলাম মামুর বাড়ি। এখন থেকে যে বাড়িটার নাম হয়ে গেলো শশুড় বাড়ি, আমার শশুড় বাড়ি! আপু আর মামানি মিলে বরন করলেন আমায়। পুরো বাড়িটা অসম্ভব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। মামানি আমার হাত ধরে নিয়ে বসালেন সোফায়। আমার পাশের সোফায় বসে আছেন শুভ্রর একঝাঁক বন্ধু। রোহুন ভাইয়া, সাব্বির ভাইয়া, নীলি আপু সবাই। তাদের অদ্ভুত অদ্ভুত সব কথার কিছু বুঝতে পারছিলাম আর কিছু না বুঝেই মাথা নিচু করে বসে ছিলাম। শুভ্র এতোক্ষণ ধারে কাছে ছিলেন না। বাড়িতে ঢুকেই কোথায় হারিয়ে গিয়েছিলেন কে জানে? উনাকে সিঁড়ি দিয়ে নামতে দেখেই ফোঁড়ন কাটার মতো বলে উঠলেন রোহুন ভাইয়া,
— আহা! আমাদের হিরো চলে আসছে। তা শুভ্র? আমরা কিন্তু ভাবতেও পারি নি যে তোর মতো একটা পোলা চড় খেয়ে প্রেমে পড়ে যাবে।
শুভ্র হাসলেন। রোহুন ভাইয়ার কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলে উঠলেন,
— ভাবতে তো আমরাও পারছি না যে নীলি তোর মতো একটা ডাফারকে বিয়ে করবে।
কথাটা বলতেই চারপাশ থেকে একসাথে হেসে উঠলো সবাই। রোহুন ভাইয়া মুখ কালো করে বললেন,
— হেসে নাও মামা হেসে নাও। আজকে রাতে যা হবে না? কাল সকালে উঠে আফসোস করবা। হুহ।
— সে পরে দেখা যাবে দোস্ত। আমি মেন্টালি প্রিপিয়ার। বাসর ঘরে ফ্রেন্ডদের ডিস্টার্ব করার হক আছে। করতেই পারিস.. ইট’স নট আ বিগ ডিল। এনিওয়ে প্রচুর গরম লাগছে তোরা কেউ ঠান্ডা খাবি? ওয়েট! ওই রাতুল??
— জি ভাই?
— ওখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেন? আমাদের সাথে বসে আড্ডা দে। আর আসার সময় কয়েকটা কোক আনিস তো। ফ্রিজেই আছে!
— আচ্ছা ভাই।
রাতুল ভাই কোক আনতেই সবার মধ্যে একরকম টানাটানি পড়ে গেলো। শেষে দুটো কম হওয়ায় রাতুল ভাইয়া আবারও গিয়ে শুভ্র আর তার জন্য কোক আনলেন। কিছুক্ষণ যেতেই শুভ্র ও রাতুল ভাই বাদে সবকটা হাই তুলতে লাগলেন। আমি অবাক চোখে তাকিয়ে ওদের কান্ড দেখছি। হঠাৎ সাব্বির ভাই হাই তুলতে তুলতে বলে উঠলেন,
— কি রে? এতো ঘুম পাচ্ছে কেন হঠাৎ?
— আমারও!!
ওদের কথায় মিষ্টি হেসে চোখ টিপলেন শুভ্র। হাসিমুখেই বলে উঠলেন,
— বাচ্চারা? যা ঘুমো গিয়ে। অন্যের বাসরে উঁকিঝুঁকি মারতে নেই বৎস।
— শালা! তুই আসলেই হারামি। কই ভাবছিলাম তোকে ঘুমের পিল খাওয়াবো আর তুই উল্টো আমাদেরই খাইয়ে দিলি?
— তোমাদের বুঝা উচিত ছিলো বৎস আমি তোমাদের থেকে কয়েক ডিগ্রী উপরে। যা এবার ঘুমো গিয়ে। কাল ১০/১১ টার আগে তোদের চোখ খুলছে না আমি সিউর।
শুভ্রকে গালি দিতে দিতে কেউ কেউ রুমের দিকে গেলো তো কেউ সোফায় শুয়েই ঘুম। আমি চরম বিস্ময় নিয়ে উনার দিকে তাকিয়ে আছি। উনি কোক মুখে নিতে নিতে আমার দিকে তাকিয়ে বাম চোখটা টিপে দিয়ে অন্যদিকে তাকালেন। তখনই একঝাঁক মেয়েরা এসে ঘিরে ধরলো আমায়। আমাকে নিয়ে হাঁটা দিলো বাসর ঘরের উদ্দেশ্যে। ধুরুধুরু বুক নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি আমি। ওই রুমটাতে এর আগেও এসেছি আমি কিন্তু তবুও কিছুতো আছে আজ। একদম অন্যরকম কিছু একটা। ঘরের চৌকাঠে পা দিতেই কেঁপে উঠলাম আমি। পুরো ঘরটা লাল গোলাপ আর বেলীফুলের সুবাসে হয়ে আছে মাতাল। ঘরের দু’ কোনায় জ্বালানো মোমবাতির লাল আলোতে চারপাশটা হয়ে উঠেছে কোনো এক মায়াপুরি। আমি ধীর পায়ে এগিয়ে গিয়ে খাটে উঠে বসলাম। চারপাশে হাসি-মজা কানে আসছিলো ঠিক তার থেকেও বেশি কানে আসছিলো আমার ছুটে চলা ওই হার্টবিট! কতোক্ষণব্যাপী বসে ছিলাম জানি না। তবে একসময় অপেক্ষার পালা শেষ করে শুভ্র এলেন। দরজাটা লাগিয়ে আমার পাশে বসতেই গলা শুকিয়ে এলো আমার। উনি হেসে বললেন,
— সালাম করবে না আমায়?
উনার কথায় ফটাফট ওঠে দাঁড়িয়ে উনার পা ছুঁতেই মাথায় হাত রেখে বললেন,
— আশীর্বাদ করি বৎস্য শত কন্যার জননী হও!
কথাটা বলেই দুষ্টুমি ভরা হাসিতে মেতে উঠলেন উনি।। আমি শুধু অবাক চোখে তাকিয়েই আছি। মনে হচ্ছে গলায় যেন স্টেপলার লাগিয়েছে কেউ, গলা দিয়ে স্বর বের হচ্ছেই না। উনি হাসিমুখেই আমাকে টেনে তুলে পরম আবেশে বুকের সাথে জড়িয়ে নিলেন আমায়। আমিও বাধ্য কিশোরীর মতো পরে রইলাম উনার বুকে। উনার গরম নিঃশ্বাসের বর্ষন কাঁপিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে উঠলেন উনি,
— আজই শেষ। এরপর কখনো পা ছুঁয়ে সালাম করো না আমায়। এই বিষয়টা একদমই ভালো লাগে না তার থেকে মুখে সালাম দিও। পায়ে ধরে কখনো নয়।
আমার কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে দু’হাতে টেনে সামনে দাঁড় করালেন আমায়। কপালে একটা গভীর চুমু দিয়ে হাত ধরে এনে দাঁড় করালেন বারান্দায়। চারদিকে জ্যোস্নার হলদে আলো। উনি আমাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বললেন,
— আমার খুব ইচ্ছে ছিলো পূর্নিমার রাতে বাসর করবো। চারদিকে থাকবে উজ্জল চাঁদের আলো। সেই ইচ্ছেটা পূরণ না হলেও চাঁদমামা কিন্তু কৃপণতা করে নি রোদপাখি। দেখো, চারদিকে কি উজ্জ্বল জ্যোস্না!!
আমি মুগ্ধ দৃষ্টিতে চারদিকে দেখছি। বিধাতার এক অন্যন্য সৃষ্টি হলো এই চাঁদের আলো। তার আরেকটা অন্যন্য সৃষ্টি হলো স্বামীর প্রতি স্ত্রীর ভালোবাসা। “স্বামী” শব্দটায় যেন কতো আপন, কতো ভালোবাসাময়। আমার পাশে জ্যোস্নার আলোয় ডুবে যে ছেলেটি দাঁড়িয়ে আছে সে “আমার স্বামী!” এই একটা শব্দই প্রতিটি মেয়ের হৃদয় কাঁপিয়ে দিতে যথেষ্ট। কোমরে ঠান্ডা কিছু অনুভব করায় ঘোর কাটলো আমার। কোমরের দিকে তাকাতেই বুঝলাম শুভ্র হাঁটু গেড়ে নিচে বসে কিছু একটা লাগাচ্ছেন আমার কোমরে। আমি তাকাতেই মিষ্টি হেসে বলে উঠলেন উনি,
— তোমার বাসর রাতের উপহার!
উনি ওঠে দাঁড়িয়ে আমার দু’হাত নিজের হাতে নিয়ে চোখ রাখলেন চোখে। নেশামাখা চোখে বলে উঠলেন,
— তোমার দেনমোহরের সব টাকা কিন্তু পরিশোধ করে দিয়েছি রোদপাখি। তোমার হাতে পৌঁছেছে কিনা জানি না তবে পরিশোধ করা হয়েছে। তুমি দেখে নিও….ওটা তোমার অধিকার।
— এতো টাকা দিয়ে কি করবো আমি?(মাথা নিচু করে)
— তোমার যা ইচ্ছে। (একটু থেমে) রোদপাখি?
উনার এমন শীতল কন্ঠে আবারও কেঁপে উঠলাম আমি। মাথাটা হালকা উচুঁ করে উনার দিকে তাকাতেই নেশাভরা কন্ঠে বলে উঠলেন উনি,
— আই ওয়ান্ট ইউ রোদ পাখি। মে আই?
উনার কথায় লাজুক হেসে বুকে মুখ লুকোলাম আমি। উনি হুট করেই কোলে তুলে নিয়ে কানের কাছে ফিসফিস করে বলে উঠলেন,
— আজ জ্যোস্নার হলদে আলোয় ভালোবাসা মেশাবো রোদ পাখি! এক পৃথিবী ভালোবাসা!
আমি চুপচাপ বুকে মুখ গুঁজে পড়ে আছি। উনার গায়ের মাতাল করা ঘ্রান আমার চোখে -মুখে। জ্যোস্নায় রাঙা হয়ে ভালোবাসার এক নতুন অধ্যায় শুরু হবে আজ। শুরু হবে জীবনের নতুন এক পর্ব। খানিকটা পরিপূর্ণতার গল্প।
?
আযানের শব্দে ঘুম ভেঙে গেলো আমার। রুমময় আবছা অন্ধকার। গায়ের সাথে ল্যাপ্টে আছে অন্যকারো শরীর। মাথা তুলে মানুষটার দিকে তাকালাম। ঘুমের মাঝে উনাকে কি নিঃষ্পাপটায় না লাগছে। একদম বাচ্চাটা….কথাটা ভেবেই মুচকি হেসে উনার কপালে চুমু এঁকে দিলাম আমি। চুলগুলো বার কয়েক এলোমেলো করে দিতেই চোখ বন্ধ রেখেই মুচকি হাসলেন উনি। হাতের বাঁধনটা আরো শক্ত করে পেঁচিয়ে নিয়ে ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলে উঠলেন,
— ঘুমাও রোদপাখি!
আমি ভ্রু কুঁচকে উনার দিকে তাকানোর আগেই আবারও ভারি নিশ্বাসের শব্দ এলো কানে। একটা মানুষ এতো জলদি ঘুমোতে পারে বুঝি? উনার হাতটা সরিয়ে কোনোরকম উঠে দাঁড়ালাম আমি। লম্বা একটা শাওয়ার নিয়ে নামায শেষে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালাম। চারপাশে ফ্যাকাশে আলো আর আমার চোখে রঙিন স্মৃতির ঝিলিক। শুভ্রর সাথে প্রথম দেখা, উনার গালে চড় বসিয়ে নিজেও এক রাম চড় খাওয়া, ক্যান্টিনে পানি ছুঁড়া, লাইব্রেরিতে শুভ্রর ঠোঁটের প্রথম ছোঁয়া, কতো খুনশুটি। আমার কথা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর উনার করা দুষ্টুমি। হুট করেই শুভ্রর বউ হয়ে যাওয়া সবকিছুই যেনো এক স্বপ্ন ছিলো। ক্রাশ তো আমি আগে খেয়েছিলাম কিন্তু ভালোটা উনিই আগে ভেসেছেন। এতোটা ভালোবাসেছেন যা হয়তো কখনো কল্পনায় করতে পারি নি আমি আর হয়তো পারবোও না। আসলে ছেলেরা হয়তো এমনই হয় যারা ভালোবাসতে জানে তারা নিজের সবটা দিয়েই ভালোবাসে তার প্রেয়সীকে। ভালোবাসতে তো সামর্থের প্রয়োজন হয় না, ভালোবাসতে ভালোবাসাটার প্রয়োজনই সবচেয়ে বেশি। তাদের ভালোবাসায় পাগলামোটা সবসময়ই থাকে। কখনো তা থাকে সুপ্ত তো কখনো প্রকাশিত। আমার ভাবনার মাঝেই দরজায় কড়া নাড়লো কেউ। উঁকি দিয়ে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম, আটটা বাজে। এতো তাড়াতাড়ি সময় কিভাবে কেটে গেলো বুঝতেই পারলাম না।
?
ঘড়িতে প্রায় সাড়ে দশটা বাজে। শুভ্র এখনও বেঘোরে ঘুমোচ্ছে । এদিকে সবাই এই নিয়ে কি হাসাহাসি! আমি তাকে হাজারবার ডেকেও উঠাতে পারি নি। উনার এক কথা, ” ঘুমোতে দাও প্লিজ। দরকার হলে তুমিও ঘুমাও তবু ডিস্টার্ব করো না ” উনার কথা শুনেই মেজাজ খারাপ হয়ে গিয়েছিলো আমার। ইচ্ছে হচ্ছিল একটা কিক দিয়ে খাট থেকে নিচে ফেলে দিই। কিন্তু তা কি আর করা যাবে?স্বামী বলে কথা! শেষবার চেষ্টা করে ড্রয়িংরুমের সোফায় চুপচাপ বসে রইলাম আমি। রোহুন ভাইয়ারা এই নিয়ে হাসিতে ফেটে পড়ছেন আর ভেতরে ভেতরে রাগে ফেটে পড়ছি আমি। ঠিক ১১ টায় ঘুম থেকে উঠলেন উনি। শাওয়ার নিয়ে তাড়াহুড়ো করে খেয়ে নিয়েই রিসেপশনের কাজে লেগে গেলেন।। আহা মহাশয়ের কি ব্যস্ততা!! উনাকে যে সারাদিনের মাথায়ও পাওয়া যাবে না তা ঠিক বুঝে গেছি আমি। সাড়ে বারোটার দিকে পার্লারের লোক এলো সাজাতে। একঝাঁক মেকাপ আর গোল্ডেন ও ব্লু এর মিক্সিং এ একটা ভারি লেহেঙ্গা চড়িয়ে দিলো গায়ে। একটার দিকে স্টেজে নিয়ে যাওয়া হলো আমায়। শুভ্র আগে থেকেই বসে ছিলেন, উনার গায়ে নীল রঙের শেরওয়ানি। শেরওয়ানির গায়ে সোনালি সুঁতোর কাজ। ছেলেদের গায়ে খয়েরী রঙের পাঞ্জাবি আর মেয়েরা পড়েছে বিভিন্ন রঙের লেহেঙ্গা। শুভ্র একটু এগিয়ে এসে মিষ্টি হেসে হাত বাড়িয়ে দিলেন। আমি ওনার হাত ধরে সামনের দিকে এগিয়ে যেতেই পেছন থেকে কানে এলো খুবই পরিচিত এক কন্ঠ।
— এই সানশাইন? তোমায় খুব মিষ্টি লাগছে আজ।
সাহেল ভাইয়ার কন্ঠ শুনে আমি- শুভ্র দু’জনেই চমকে উঠলাম। শুভ্রর মুখটায় মুহূর্তেই রাজ্যের খুশি ভর করলো যেনো। দু’জনেই পেছন ফিরে তাকাতেই দেখি…..
#চলবে?
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা

◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।

আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share

#তোকে চাই❤
……. (সিজন-২)
#writer: নৌশিন আহমেদ রোদেলা❤
#part:56
?
দু’জনেই পেছন ফিরে তাকাতেই দেখি হলের বড় পর্দায় সাহেল ভাইয়ার ছবি। গাঢ় খয়েরী রঙের পাঞ্জাবী পড়েছেন উনি। আমরা তাকাতেই মিষ্টি হাসি দিয়ে বলে উঠলেন, “কনগ্রাচুলেশন!” আমি অবাক চোখে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকেই মুচকি হাসলাম। শুভ্রর চোখদুটো চিকচিক করছে, পারলে হয়তো জড়িয়ে ধরতেন উনাকে। সাহেল ভাইয়া কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে মাথা নিচু করে জোড়ে একটা নিশ্বাস ছেড়ে মাথা তুলে সরাসরি শুভ্রর মুখের দিকে তাকালেন। হাসিমুখে বললেন,
— ওই কি ভাবিস তুই আমায়? আমার লাইফের সবচেয়ে ভালোবাসাময় মানুষ দুটোর এমন একটা স্পেশাল দিনে আমি থাকবো না, তা কি হয়? তোদের দু’জনকেই খুব সুন্দর লাগছে আজ।
শুভ্র এতোক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকলেও হেসে উঠলেন এবার। ঠোঁটে হাসির রেখা টেনে নিয়ে বললেন,
— অনেক মিস করছি রে। কবে আসবি তুই?
সাহেল ভাইয়া কিছু বলতে যাবেন তার আগেই পাশ থেকে রোহুন ভাইয়া বলে উঠলেন,
— শালা তুই টিঙ্গে বসে আছিস আর এদিকে শুভ্র আমাদের আধাজল খাইয়ে ছেড়ে দিয়েছে। জানিস কাল আমরা সব ঘুমের ঔষধ খেয়ে ঘুমাইছি। তুই থাকলে দলটা ভারি হতো বুঝলি। কিসের স্কলারশিপ কিসের কি,, এই চলে আয় তো।
সাহেল ভাইয়া হাসলেন, কিছু বললেন না। সবার সাথে টুকিটাকি কথা বলে আমাদের দু’জনকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলেন উনি,
— তোদের দু’জনকে কি গিফ্ট দেওয়া যায় বল তো? দেওয়ার মতো কিছুই তো নেই আমার কাছে। আচ্ছা একটা গান গাই, তোদের দু’জনকে ডেডিকেট করে। কি গাইবো?
সাথে সাথেই শুভ্র বলে উঠলেন, ” শালা! পারমিশন চাস কার থেকে?”
সাহেল ভাইয়া হালকা হেসে পাশ থেকে গিটার নিয়ে গান ধরলেন। সাথে সাথেই উনার ছবিটা কোণায় চলে গিয়ে পুরো পর্দায় ভেসে উঠলো আমার ঘুমন্ত সেই ছবি। উনার গানের তালে তালে ছবিগুলো চেঞ্জ হতে লাগলো…

বলতে যেয়ে মনে হয় বলতে তবু দেয় না হৃদয়
কতোটা তোমায় ভালোবাসি…( মাথায় লাল উড়না দিয়ে দাঁড়িয়ে হাসিময় ছবি)
চলতে গিয়ে মনে হয় দূরত্ব কিছু নয়
তোমারই কাছেই ফিরে আসি ( চিত্রার পিঠে ধুমধাম মারার সময়কার আকস্মিক ছবি)
তুমি,,তুমি,,তুমি শুধু এই মনের আনাচে কানাচে
সত্যি বলো না কেউ কি প্রেম হিনা কখনো বাচে??( নীল শাড়ি পড়ে কারো দিকে তাকিয়ে হাসছি আমি, কিছুটা দূরেই শুভ্র অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে আছেন সেই মুহূর্তের ছবি)
তুমি,,তুমি,,তুমি শুধু এই মনের আনাচে কানাচে
সত্যি বলোনা কেউ কি প্রেম হিনা কখনো বাচে??( ভার্সিটির বাগানে আমার হাত ধরে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা শুভ্রর ছবি)
বলতে যেয়ে মনে হয় বলতে তবু দেয় না হৃদয়
কতোটা তোমায় ভালোবাসি…( গাড়ির উপর চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছেন শুভ্র হাতটা রক্তে লাল)
মেঘের খামে আজ তোমার নামে উড়ো চিঠি পাঠিয়ে দিলাম
পড়ে নিও,,তুমি মিলিয়ে নিও খুব যতনে তা লিখেছিলাম।।( এটুকু গাইতেই রোহুন ভাইয়া আর সাব্বির ভাইয়া আমাদের দুজনের হাতে দুটো পার্সেল ধরিয়ে দিলেন। যার উপরে লেখা, ” ফ্রম সাহেল “)
মেঘের খামে আজ তোমার নামে উড়ো চিঠি পাঠিয়ে দিলাম
পড়ে নিও,,তুমি মিলিয়ে নিও খুব যতনে তা লিখেছিলাম।।
ওওওও চাই পেতে আরো মন পেয়েও এতো কাছে( সাদা রুমালে চোখ বাঁধা অবস্থায় আমি আর আমার ঠিক সামনে হাতদুটো চেপে ধরে দাঁড়িয়ে থাকা শুভ্র! ছবিটা দেখেই শুভ্রর দিকে রাগী চোখে তাকালাম । উনি হালকা কেশে ঝটপট অন্যদিকে চোখ ঘুরালেন)
বলতে যেয়ে মনে হয় বলতে তবু দেয় না হৃদয়
কতোটা তোমায় ভালোবাসি…( উনাদের বাগানের ধারে আমার চুল টেনে ধরে দাঁড়িয়ে আছেন শুভ্র, আর আমার মুখ কালো)
মন অল্পতে প্রিয় গল্পতো কল্পনায় স্বপ্ন আঁকে
ভুলক্রুটি আবেগী খুনসুটি সারাক্ষণ তোমায় ছুঁয়ে রাখে
মন অল্পতে প্রিয় গল্পতো কল্পনায় স্বপ্ন আঁকে
ভুলক্রুটি আবেগী খুনসুটি সারাক্ষণ তোমায় ছুঁয়ে রাখে….
গান শেষ হতেই চারদিকে তালির বহর ছুটলো। সাহেল ভাইয়া হেসে দিয়ে বলে উঠলেন,
— এগুলো হঠাৎ তোলা কিছু ছবি। হাতে ক্যামেরা থাকায় বাজে একটা অভ্যাস তৈরি হয়েছে। তবে থেংক গড তুলেছিলাম। আজ কেমন অসাধারণভাবে কাজে লেগে গেলো দেখো। এনিওয়ে এবার বাই বলার সময় চলে এসেছে। সবসময় হাসি খুশি থাক এই দোয়ায় করি। (আমার দিকে তাকিয়ে) সানশাইন? মুখের হাসিটা কখনও হারাতে দিও না প্লিজ! আল্লাহ হাফেজ।
কথাটা বলেই স্ক্রিনকালো করে উদাও হয়ে গেলেন উনি। সাথে সাথেই মন খারাপ হয়ে গেলো শুভ্রর। মন খারাপ ভাবটা খুব খারাপ একটা অসুখ। কারো মন খারাপ দেখলে সেই ভাবটা মুহূর্তেই অন্যের শরীরে এসে ভর করে। কি অদ্ভুত! জমকালো রিসেপশন একসময় শেষ হলো। ভার্সিটির স্যাররাও এসেছিলেন বলে অনেকটাই অস্বস্তিতে পড়তে হয়েছিলো আমায়। তবে সব ছাড়িয়ে চিত্রা আর শিশির স্যারের জোড়পূর্বক নাচটা বেশ ইঞ্জয় করেছি আমি। রাতে রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে বিছানায় পা তোলে বসলাম। উদ্দেশ্য সাহেল ভাইয়ার গিফ্টটা খোলা। র্যাম্পিং পেপারটা খুলতেই হাতে এলো একটা চিঠি তার সাথে একটা আলব্যাম আর একটা চমৎকার সুন্দর শাড়ি। চিঠিটা মেলে ধরতেই ভেসে উঠলো সেই পরিচিত গুটি গুটি অক্ষরের লেখা,
❤ হেই সানশাইন?
কেমন আছো বলো তো? এই শুভ্র তোমায় জ্বালায় না তো? একদম পাগলাটে টাইপ ছেলে ও। ওর যা চায় তা ওর চায়ই চায়। একটু পাগল হলেও এই পাগল ছেলেটা কিন্তু ভীষণ ভালোবাসে তোমায়। একটু সামলে নিও ওকে। তুমি অনেক লাকি যে ওকে পেয়েছো। ওর মতো ছেলে এখন হয় না বললেই চলে। একটা ছেলে তার প্রেয়সীকে যতটা ভালোবাসতে পারে ও তোমাকে হয়তো তার থেকেও বেশি ভালোবাসে সানশাইন। ওর কাছে তুমি যেমন নিশ্চিন্ত, ওর কাছে তুমি আছো বলে আমিও নিশ্চিন্ত। এনিওয়ে কনগ্রাচুলেশন। তোমাদের কি গিফ্ট দেওয়া যায় ভাবতে ভাবতে চুল পেকে গেছে আমার। দেওয়ার মতো তো কিছুই নেই আমার। আমার খুশিটুকুও অনেক আগে তোমাদেরকেই দিয়ে দিয়েছি। এবার তাহলে কি দিই? তারপর তোমাদের তোলা ছবিগুলোর কথা মনে পড়লো। তারসাথে মনে পড়লো শাড়িটার কথা। তোমাকে প্রথম শাড়িতে দেখার পর ওটা তোমার জন্যই কিনেছিলাম। আমার জীবনের প্রথম নিজে পছন্দ করে কেনা শাড়ি। যদিও শাড়ি সম্পর্কে কোনো ধারনা নেই আমার তবু আমার মনে হয় এই শাড়িটা তোমার মতোই একটা বেস্ট চয়েজ ছিলো আমার। তোমার নামে কেনা শাড়ি অন্যকাউকে দিতে পারবো না তাই তোমাকেই দিলাম। এবার তোমার পালা….এর থেকেও চমৎকার একটা শাড়ি কিনে রিটার্ন গিফ্ট করবে আমায়। আমার জীবনসঙ্গীকেও বেস্টটাই দিতে চাই আমি। কিন্তু আমার বেস্টটা তো তোমার কাছে। তাই বলছি কি? তোমার বেস্টটা এবার আমায় দিও প্লিজ। শুভ কামনা সবসময়। ভালো থেকো আর সবসময় হাসিটাকে আঁকড়ে রেখো।
সাহেল❤
চিঠিটা পড়ে কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে রইলাম আমি। “সাহেল” নামক মানুষটিকে অনেকসময় ভিনগ্রহের কোন প্রাণী মনে হয় আমার। কিভাবে পারেন উনি?
হঠাৎ করেই শ্বাসকষ্ট জনিত কারণে ঘুম ভেঙে গেলো আমার। মনে হচ্ছিলো ভারি কিছু দিয়ে কেউ একজন শ্বাসরুদ্ধ করে মেরে ফেলতে চাইছে আমায়। চোখদুটো খুলে ব্যাপারটা বুঝতে পেরেই অবাক হলাম আমি। শুভ্র শরীরের সম্পূর্ণ ভর দিয়ে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে আছেন আমায়। আমি অনেক চেষ্টা করেও নড়তে না পেরে হালকা গলায় ডাকলাম,
— শুনুন? শুনুন না? ছাড়ুন আমায়।
উনি হালকা নড়েচড়ে আরো একটু জোড়ে চেপে ধরে বলে উঠলেন, “উঁহু!”
— উঁহু! কিসের উঁহু? সরুন, দম বন্ধ হয়ে আসছে আমার….
#চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে