তৈমাত্রিক পর্ব-২০+২১+২২

0
971

#তৈমাত্রিক
#লেখিকা; Tamanna Islam
#পর্বঃ ২০

🌹. . . .

তনু;; কেনো এমন করলি?

মেহরাম;;____________

তনু;; মেহরাম কিছু বলছি তোকে!

মেহরাম;;____________

তনু;; আরে তুই যা করেছিস সেটা আজ কাল নিজের মায়ের পেটের বোন পর্যন্ত করে না। একটা বার নিজের কথা ভাবলি না।

মেহরাম;; যদি নিজের কথাই ভাবার হতো তাহলে আর এই কাজ করতাম না।

তনু;; কিন্তু কেন? তুই, তুই আমাকে একটা বার শুধু একটা বার বলতি আমি সরে যেতাম। তনু নামে যে কোন ব্যাক্তি ছিলো তা পর্যন্ত জানতে দিতাম না।

মেহরাম;; কিভাবে বলতাম হ্যাঁ, কিভাবে বলবো আমি। সেইদিন রাতে মরতে গিয়েছিলি তুই। আর কেন মরতে গিয়েছিলি কারণ তুই শুনেছিলি যে আয়ুশ অন্য কাউকে ভালোবাসে। আর যখন তুই এটা জনতে পারতি যে আয়ুশ আর কাউকেই না বরং তোর-ই বোন এই আমাকে ভালোবসে তখন। তখন সামলাতে পারতি?

তনু;; কিন্তু আম…..

মেহরাম;; আমার পক্ষে সম্ভব না যে তোর চোখের সামনে আমি আর আয়ুশ মিলে যাবো আর কষ্ট হবে তোর।

তনু;; তাই তুই নিজে….

মেহরাম;; দেখ তনু আমি কখনোই চাই না যে কারো জন্য তোর আর আমার সম্পর্ক টা নষ্ট হোক, বিগড়ে যাক। যে কষ্ট টা তোর হতো সেটা আমি আমার ভাগে নিয়ে নিয়েছি।

তনু;; খুব না, মানে খুব মহান হয়ে গেছিস। আয়ুশকে আমার কাছে দিয়ে খুব উদারতার কাজ করে ফেলেছিস তাই না। খুব বড়ো মন তোর। সবাইকে হাসি খুশি রাখার তো তুই একাই ঠেকা নিয়ে রেখেছিস তাই না।

মেহরাম;; তনু এ…..

তনু;; আমি বুঝি নি, আমি সত্যি বুঝি নি যে আমার পিঠ পিছে এতো কিছু হয়েছে। অনেক দক্ষ ভাবে কাজ করিস তুই। টেরই পাওয়া যায় না।

মেহরাম;; আমি শুধু এটা চাইতাম যে তুই খুশি থাকিস।

তনু;; খুশি, এমন খুশির কি লাভ। এক মূহুর্তে আমার দিন দুনিয়া সব উলটে গেছে। আমি খুশি থাকি তুই এটা চাইতি আর তুই তোর কি, আয়ুশ ওই বেচারা টার কি দোষ ছিলো। তুই ওকে কেন এমন বলির পাঠা বানালি। ও আসলে কাকে চায় তা বুঝলি না।

মেহরাম;; তনু মানলাম ও ভালোবাসতো, কিন্তু এটা ভালবাসা আমি ভেবেছি হয়ে যাবে আবার অন্য কারো সাথে। ভুলে যাবে আমায় এক সময় আর তোকে মেনে নিবে। তোকে পেয়ে আমায় ভুলে যাবে, জীবনে এগিয়ে যাবে।

তনু;; জানিস আয়ুশ বিয়ের পর কখনো আমায় মুখ ফুটে বলে নি যে তনু ভালোবাসি। যা বলার বিয়ের আগেই সেইদিন ভার্সিটির মাঠেই প্রথম আর শেষবার বলেছিলো। আয়ুশ পর্যন্ত আমকে একটা বার কিছুই বলে নি। তবে আয়ুশ নিজের কর্তব্য থেকে কোনো দিন পিছ পা হয় নি। সবসময় ঠিক ছিলো। চাইলেই ও ভুল কিছু করতে পারতো কিন্তু না সে করে নি।

মেহরাম;; _______________

তনু;; ও কেন ভুল কিছু করে নি জানিস কারণ ওর নিজের সাথেই সেই প্রথম দিন থেকে ভুল হয়ে আসছে। মেহরু আমি জানি যে তুই আমাকে কত্তো ভালোবাসিস। সেইদিক থেকে ভাবলে তুই তোর বোনের জায়গায়, নিজের জায়গায় একদম ঠিক আছিস। কিন্তু এমন হয় না মেহরু। সবার জীবন এভাবে চলে না।

মেহরাম;; চলছে তো।

তনু;; একে চলা বলে না মেহরাম, ঝুলে থাকা বলে। একটা গাছকে পানি না দিলে তা মরে যায়। সংসারে ভালোবাসা না থাকলে সেটা ভেংে যায়। আমি অচল। না দিতে পারবো কোন দিন কাউকে বাবা হওয়ার সুখ আর না ই পাবো কারো ভালোবাসা।

মেহরাম;; তনু..

তনু;; আমার জন্য, তুই সব আমার জন্য করেছিস তাই না। জানিস এখন আমার নিজেকে কাটা মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে যে আমি কোন তৃতীয় ব্যাক্তি যা তোর আর আয়ুশের মাঝে চলে এসেছি। কেন বললি না আমায় তুই?

মেহরাম;; কি বলবো আমি তখন তোকে কিভাবে হ্যাপি করা যায় তা ভাববো নাকি স্বার্থপরের মতো আমি আর আয়ুশ কিভাবে এক হবো তার কথা ভাববো কোনটা বল। এমনিতেই এই “স্বার্থপর” উপাধি টা তো অনেক আগেই আমি পেয়েছি। আর নতুন করে কি দিবি। তোকে আর আয়ুশকে আমি মিলিয়ে দিয়েছি বলে আমি স্বার্থপর হয়ে গেলাম। আয়ুশের কথা ভাবলাম না। কেন হলাম কারণ শুধু নিজের বোনের কথা ভেবেছি তাই আর তখন যদি তোকে বাদ দিয়ে আমি আর আয়ুশ মিলে যেতাম তাহলে আমি আমার নজরে পরে যেতাম, তাহলেও স্বার্থপর হয়ে গেতাম। তাহলে কোন দিকে যাবো আমি কি করবো। (চিল্লিয়ে)

তনু;; আয়ুশ সেইদিন কেন ওভাবে এসে আমায় প্রোপজ করেছিলো? তুই বলেছিলি তাই না।

মেহরাম;; হ্যাঁ বলেছিলাম।

তনু;; আয়ুশ কেন বললো না আমায়। তুই না হয় পারিস নি। কিন্তু আয়ুশ!

মেহরাম;;_____________

তনু;; কেন বলে নি জানিস, তোকে ভালোবাসে তো তাই।

মেহরাম;; তনু একটু বোঝ প্লিজ…

তনু;; এতোদিন ধরে সব আমিই বুঝে এসেছি। কিন্তু উল্টো ভাবে।

মেহরাম;;_______________

তনু;; এই কষ্ট লাগে না তোর, রক্তে মাংসে গড়া মানুষ না তুই। এতো বড়ো একটা কাজ তুই কিভাবে করতে পারলি?!

মেহরাম;; _______________

তনু;; এখনো ভালোবাসিস আয়ুশকে তাই না?

মেহরাম;; _______________

তনু;; এখন চুপ করে কেন আছিস। বল, আয়ুশ সবসময় মন খারাপ করে থাকতো। কেমন এক উদাস ভাব। আয়ুশ সবকিছু জেদের বশে করেছে তাই না। আমাকে প্রোপজ করা তারপর বিয়ে এই সব কিছুই রাগের বশে তার জেদের বশে করেছে। জানিস নিজেকে এখন আর ওই বাড়ির মানুষ লাগছে না। মনে হচ্ছে আমি ওই বাড়ির কেউ না জাস্ট একজন আউটসাইডার, বাইরের কেউ। কাকে এতো দিন ভালোবেসে এসেছি আয়ুশকে। যে কখনো আমার ছিলোই না। আয়ুশ এটা করে দাও, ওটা করে দাও কত্তো কিছু। সব ভুল মনে হচ্ছে। আমি যাই করি না কেন আয়ুশের মনে তোর জন্য যেই জায়গা আছে সেটা কখনো এই তনুর নামে হবে না। আমার এক তরফা প্রেম তোদের দুই তরফা প্রেমের মাঝে বেড়াজাল হয়ে এসেছিলো। আমার দোষ, আমি আলাদা করেছি তোদের।

মেহরাম;; না তনু, প্লিজ এভাবে বলিস না। তুই কিছুই করিস নি। সব আমার জন্য হয়েছে আর আমি ইচ্ছে করেই করেছি।

তনু;; “” কেউ বা কিছু মানুষ কখনোই জানবে না যে তারা আমাদের মনের কোণে এক বিশাল জায়গা জুড়ে ছিলো “”।

মেহরাম;; জীবনে যে কোন দিন এমনও এক পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে কখনো ভাবি নি। আর আয়ু……

তনু;; খুব বাজে লাগছে জানিস। আয়ুশের জন্য। সাথে রাগ ও। আমার খুশি, আমার হ্যাপিনেস, আমার সব। কেন সব কেন করতে হবে আমার জন্য। আমি আসতাম না তোদের মাঝে। যতটুকু বাকি ছিলো….

মেহরাম;; তা আমি টেনে এনেছি তাই না!

তনু;; না তা বলবো না। আমি বোকা ছিলাম, গাধা ছিলাম তাই সেদিন মরতে যাচ্ছিলাম। এমন কিছু না করলে আজ তুই আয়ুশের হতি। আয়ুশ আর তুই হ্যাপি থাকতি। আর আমাকে এভাবে তিলে তিলে মরতে হতো না।

মেহরাম;;______________

তনু;; আয়ুশের কাছে তোর ছবি পাওয়া, তোর কথা শুনলেই হাইপার হয়ে যাওয়া, সোহেল ভাই আর তুই একসাথে বসে থাকলে সেখান থেকে চলে যাওয়া, আমি বুঝি নি কিছুই। বোকা ছিলাম। আয়ুশে এতো টাই মগ্ন ছিলাম যে বাকি কিছু চোখেই পরেনি। কিন্তু কি লাভ হলো কিচ্ছু না। এতো ভালোবেসে পেলাম কি কিছুই না। কারণ কি জানিস? কারণ তুই যেভাবে আয়ুশকে ভালোবাসিস পাগলের মতো আমি সেই ভাবে আয়ুশকে ভালোবাসতে পারি নি। কোথাও না কোথাও আমার ভালোবাসা তোর ভালোবাসার কাছে অতি নগন্য ছিলো তাই। শুনেছি যে যাকে ভালোবাসা যায় তার খুশির জন্য তার কাছ থেকে দূরেও সরে আসা যায়। তুই দূরে সরেছিস তাই না। কিন্তু এখানে কেউ খুশি না। আর এতে তোর কোন দোষ নেই সব ভাগ্য। আমার জীবন তো তখনই প্রায় শেষ হয়ে গেছিলো যেদিন আমি শুনি যে আমি কখনো মা হবো না। তুই হয়তো আমার ভালো করার জন্য এগুলো করেছিস কিন্তু ভালো থাকা টা আমার কপালেই নেই তাই সবকিছু থেকেও আমার কাছে আজ কিছুই নেই।

মেহরাম;; আমি কি করবো, জীবনে আমার কিছু আছে। আমার মতো অভাগা আছে কি কেউ। কি পেয়েছি আমি কিচ্ছু না। ছোট থেকেই সব হারিয়েই আসছি। কেউ যদি আমাকে জিজ্ঞেস করে যে বাবা ডাকের অর্থ কি আমি বলতে পারবো না। সবাই বলতো ভাই-বোন নেই। আমি বলতাম তুই আছিস। বড়ো হলাম বুঝতে শিখলাম। আয়ুশ আসলো জীবনে ভালোবাসা হয়ে আমি মেনে নিতে পারলাম না। জানিস একাকিত্ব আমায় কুড়ে কুড়ে খায়। বিয়ে হলো, ক্যান্সার নামক জিনিস এসে সব কেড়ে নিলো। তাও তখন যখন আমি প্রেগন্যান্ট। ঝড়ের গতিতে এসে আমার জীবন ওলট-পালট। আর এখন তুই কেন বুঝতে পারছিস যে যা হয়েছে তা হয়ে গেছে।

তনু;; কিছুই হয় নি।

মেহরাম;; তনু

তনু;; এখনো ভালোবাসিস আয়ুশকে তাই না, বল এখনও সেই আগের মতোই ভালোবাসিস তুই?

মেহরাম;; হ্যাঁ এখনো ভালোবাসি, তো? সরাতে পারি না ওকে, ভেবেছি তোদের সামনেই আর আসবো না কখনো। কিন্তু তা আর হয়নি। যার যার জীবনে নির্দিষ্ট একজনের জায়গা থাকে। তা তার নামে লিখা থাকে।ভুলি নি আমি আয়ুশকে ভুলতে পারবো না। কিন্তু এখন এইসবের কোন মানেই হয় না। আলাদা হয়ে গেছি আমরা।

তনু;; সবকিছুরই মানে হয়। আর আমিই এভাবে কিছুই থাকতে দেবো না।

মেহরাম;; তনু, তনু, আমার কথা টা শোন। তনু

মেহরাম তনুকে পেছন থেকে ডাকতে থাকলো কিন্তু তনু মেহরামের কথা না শুনে রুম থেকে বাইরে বের হয়ে পরে। মেহরামের এদিকে দম বন্ধ হয়ে আসছে। অনেক কেদেছে তনুও আর সেও। মেহরাম নিচেই বসে পরে কেদেয় দেয়। ওদিকে তনু ছাদের ওপরে চপে গেছে। রুমের ভেতরে থাকলে হয়তো এখন তনু মরেই যাবে। আর সহ্য করতে পারছে না এইসব কিছু। ছাদের এক কিণারে দাঁড়িয়ে আছে আর বারবার হাতের উল্টো পাশ দিয়ে চোখ মুছছে।


ওদিকে আয়ুশ একা রুমে বসে বসে হাতে একটা পেনসিল নিয়ে গোড়াচ্ছে। তখনই রুমে আয়ুশের বোন কণা আসে হাতে খাবারের ট্রে নিয়ে।

কণা;; ভাইয়া আসবো?

আয়ুশ;; আরে আয় আয় বলতে হবে নাকি আয়।

কণা;; কি করো?

আয়ুশ;; কিছুনা এমনি বসে ছিলাম।

কণা;; কিছু তো খাও নি, তাই রুমে খাবার নিয়ে এলাম।

আয়ুশ;; না রে খাবো না, খিদে নেই।

কণা;; কিছু খেয়ে নাও। রাতে না খেয়ে শুতে হয় না।

আয়ুশ;; বাব্বাহ, আচ্ছা খাবো নি। মা কোথায়?

কণা;; ঘুম।

আয়ুশ;; ওহহ, তা তুই জেগে আবার খাবার নিয়ে এসেছিস কেন। ঘুমিয়ে পরতি।

কণা;; না খাও তুমি।

আয়ুশ;; হুম।

কণা;; কি হয়েছে ভাইয়া?

আয়ুশ;; না কিছু না।

কণা;; ভাইয়া কিছু বলার ছিলো তোমাকে।

আয়ুশ;; হুম বল না।

কণা;; ভাবছিলাম যে অনেক দিন ধরেই কথা তোমাকে বলে দিবো কিন্তু সাহসই হয়ে উঠছিলো না।

আয়ুশ;; কণা আমি তোর ভাই। আমাকে বলতে তোর বাধছে। বোনু আমাকে বল।

কণা;; প্রথমে এটা বল যে তুমি ভালো আছো তো?

আয়ুশ;; আব..হ হ্যাঁ আছি তো। যার কাছে এত্তো বেশি মিষ্টি একটা বোন আছে সে কি করে ভালো না থাকে বল।

কণা;; ভাইয়া আমি সিরিয়াস। উলটা বুঝিয়ো না আমায়। আমি জানি সবকিছু। অনেক দিন, অনেক দিন ধরে বলবো কিন্তু সাহসই হয় না।

আয়ুশ;; কি বলছিস তুই?

কণা;; আমি মেহরাপু আর তোমার ব্যাপারে জানি সব।

আয়ুশ;; মানে?

কণা;; মানে এই যে রিসিপশনের দিন, বিয়ের পরেরদিন যখন তুমি আর মেহরাপু কথা বলছিলে তখন আমি সব শুনেছিলাম। আমি মা কে পাচ্ছিলাম না খুজতে খুজতে পুলের পাশে যাই আর তোমার কথা শুনি।

আয়ুশ;;_____________

কণা;; আচ্ছা যখন মেহরাপু কে এতো বেশি ভালোবাসো তখন কেন ছাড়লে। আবার ওর-ই বোন কে বিয়ে।

আয়ুশ;; কারণ মেহরাম যা করেছে সব তার বোনের জন্য। একজন বোন হিসেবে দেখলে মেহরাম ওর জায়গায় পারফেক্ট। আমি আগে বুঝি নি অযথা মেহরাম কে দোষ দিয়ে গেছি। কিন্তু এখন বুঝি।

কণা;; এখনো মেহরাপু কে অনেক ভালোবাসো?

আয়ুশ;; হাহা, তুই আমার বোন হোস। অন্যান্য ভাইদের মতো আমিও বলবো যে ভালোবাসিস না। দূরে থাক। এগুলো থেকে তোকে দূরে রাখবো আসলে না। জানিস আমার ভাই হিসেবে যতো টুকু কর্তব্য আমি সব করবো। কিন্তু আমি যতোই বারণ করি ভালোবাসা একদিন না একদিন আসবেই। এটা আপনা আপনি এসে পরে। মন কে কি আর কেউ আটকাতে পারবে। দেখবি এটা একদিন তোর কাছে অজান্তেই আসবে। আর যখন আসবে তখন যদি সত্যি ওকে ভালোবেসে থাকিস তখন বুঝবি যে কাউকে ভালোবাসলে তাকে ভুলা ঠিক কতো টা কঠিন হয়।

কণা;; আর মেহরাপু?

আয়ুশ;; হয়তো..!

কণা;; _________।

আয়ুশ;; আরে পাগলী তুই কাদছিস কেন?

কণা;; এমনি।

আয়ুশ;; আরে পাগল বোন আমার। (জড়িয়ে ধরে) কাদিস না আইসক্রিম কিনে দিবো নি।

কণা;; তুমি কিভাবে ঠিক আছো?

আয়ুশ;; থাকতে হয়।

কণা;; __________

আয়ুশ;; অনেক দিন খাইয়ে দিস না। আজ খাইয়ে দিবি আমায়?

আয়ুশের কথায় যেন কণার কান্না আরো বেশি বেড়ে গেলো। তার মধ্যে আয়ুশ আবার কাতুকুতু দিলে কণা কান্নার মাঝেই হেসে দেয়। তারপর কণা খাইয়ে দেয়। আয়ুশও একটু খাইয়ে দেয়। বেশ কিছুক্ষণ কথা বলে কণা রুম থেকে এসে পরে। আয়ুশ তো নিশাচর, ঘুমায়ই না। তাই সে আবার আগের মতো বসে থাকলো। তবে এবার নিজের সামনে মেহরামের ছবি নিয়ে বসলো। আর ওদিকে মেহরাম নিচে এখনো বসেই আছে। তনু ছাদে ছিলো সারারাত। কখন যে রাত গড়িয়ে সকাল হয়ে গেছে তা কারো খেয়ালই নেই। একদম ভোরের সময় এটা। আযানের শব্দ কানে এলে তনুর হুস আসে। তার কিছু সময় পর তনু ছাদ থেকে নেমে এসে রুমে চলে যায়। রুমে গিয়েই দেখে মেহরাম এখনো বসে আছে।

তনু;; এখনো এভাবে বসে আছিস কেন, পেটে চাপ পরবে। তোর যা হবার হোক বেবির কিছু যাতে না হয়। উঠ।

তনু গিয়ে মেহরাম কে টেনে তুলে। মেহরাম কে বিছানাতে বসিয়ে দিয়ে পানি খাওয়ায়। এভাবেই বেশ সকাল হয়ে যায়। সবাই উঠে পরেছে। তবে তনু কিছু না খেয়েই, কোন রকমে বের হয়ে পরে। একবার রুমে এসে মেহরামকে দেখে তারপর কোন কথা না বলেই রুম থেকে বের হয়ে যায়।

মেহরাম;; কোথায় যাচ্ছিস?

তনু;; আয়ুশের অফিসে।

মেহরাম;; কিন্তু সেখানে কেন? তনু, তনু।

তনু সোজা বাড়ি থেকে বের হয়ে পরে। এদিকে মেহরাম চিন্তায় শেষ যে তনু কি করতে কি না করে বসে আবার।





🌻চলবে~~

#তৈমাত্রিক
#লেখিকা; Tamanna Islam
#পর্বঃ ২১

💙 . . . .

তনু মেহরামের ডাক না শুনেই ঘর থেকে বাইরে বের হয়ে পরে। বাড়িতে বলে যায় বাসায় যাওয়ার কথা কিন্তু আসলে তনু তার বাবার বাড়ি থেকে বের হয়ে সোজা চলে যায় আয়ুশের অফিসে। আয়ুশের অফিসে গিয়ে রিসিপশনের কাছে যায়। কেবিন নং জেনে তারপর দ্রুত পায়ে যেতে থাকে। তনুর মাঝে বিচলতা এতো টাই কাজ করছে যে সে নক না করেই কেবিনের দরজা খুলে দেয়। দেখে আয়ুশ বসে আছে তার সামনে আরো দুজন ভদ্র লোক বসে আছেন আর তারা কথা বলছে। আয়ুশ তাকিয়ে দেখে তনু। তনু এর আগে কখনোই আয়ুশের অফিসে আসে নি, শুধু এড্রেস টা জানতো। আয়ুশ এই সময় তনু কে দেখে বেশ অবাক। সে সবাইকে বাইরে জেতে বললো তারাও বাইরে বেরিয়ে পরে। তাদের যেতেই তনু কেবিনে প্রবেশ করে।

আয়ুশ;; তনু তুমি এই সময়ে?

তনু;; তো কি হয়েছে?

আয়ুশ;; না মানে বাড়ি যাও নি?

তনু;; তোমার সাথে অনেক বেশি দরকারি কিছু কথা ছিলো।

আয়ুশ;; হ্যাঁ তা তো বাড়ি তে গিয়েও বলতে পারতে এভাবে অফিসে।

তনু;; না এসে উপায় ছিলো না। বাড়িতে কখন তুমি যাবে কখন আমি বলবো সেই ধৈর্য টুকু এখন আর আমার মাঝে বাকি নেই।

আয়ুশ;; মানে কি হয়েছে?

আয়ুশের বলা শেষ হতেই তনু এক প্রকার দৌড়ে গিয়ে আয়ুশকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। আয়ুশ তনুর হঠাৎ এমন করাতে অবাক হয়। কিছু বলতে যাবে তখনই তনু মাথা তুলে তার দিকে তাকায়। তনুর চোখে পানি গুলো চিকচিক করছে। আয়ুশ তো আরো অবাক যে তনুর হুট করে কি হলো। তনু আবার আয়ুশকে জড়িয়ে ধরে, কিছুক্ষণ বাদে আয়ুশকে ছেড়ে দাঁড়িয়ে আয়ুশের কপালে আলতো করে চুমু একে দেয়।

আয়ুশ;; তনু কি হয়েছে কি বলবে তো?

তনু;; অনেক কিছুই হয়েছে যা না হলেই ভালো হতো।

আয়ুশ;; মানে, তনু ঠিক আছো তুমি?

তনু;; না। এতোদিন আমি ঠিক ছিলাম কিন্তু তোমরা না।

আয়ুশ;; কি সব বলছো?

তনু;; মেহরাম আর তুমি একে ওপরকে ভালোবাসতে (চিল্লিয়ে)

তনুর চিল্লানো যেন কেবিনের চারিদিকে বাজতে থাকলো এক প্রকার। আয়ুশের তো মাথা পুরো খালি হয়ে গেছে তনুর কথা শুনে। তার মাথায় শুধু একটা কথাই ঘুরছে তনু এই সব কি করে জনলো।

তনু;; অবাক লাগছে না যে আমি কি করে এইসব জনলাম। জেনে গেছি।

আয়ুশ;; মেহ….

তনু;; না, কেউ আমায় কিছুই বলে নি। মেহরাম ও না। হয়তো ভাগ্য ও এটা চাইতো যে আমি জেনে যাই। তাই জেনে গেছি।

আয়ুশ;; তনু আমি….

তনু;; যাকে ভালোবাসা যায় তাকে হয়তো ছাড়া যায় কিন্তু ভোলা কখনই সম্ভব না, কখনোই না।

আয়ুশ;; ____________

তনু;; রাগ মানুষ কে শেষ করে দেয় আয়ুশ। তুমি আমার সাথে যা ই করেছো সব রাগ আর জেদ ছাড়া কিছুই ছিলো না। রাগের বশে ডিসিশন নেওয়াই ভুল। দেখো না আমার জীবনে ভালোবাসা বলে কিছু ছিলোই না। আর নেই ও। তুমি রাগ আর জেদের বশে আমার সাথে এসব করেছো, কিন্তু রাগ আর জেদ টা করলে কার সাথে মেহরামের সাথেই।

আয়ুশ;; তনু আমার কাছে আর কোন উপায় ছিলো না।

তনু;; ছিলো, একটা বার যদি আমাকে সব বলে দিতে তাহলে….

আয়ুশ;; তাহলে কি তনু, মেহরাম এত্তো কিছু করেছে তোমার জন্য আর আমি তোমাকেই সব বলে দিতাম।

তনু;; বললে হয়তো আজ তোমরা খুশি থাকতে।

আয়ুশ;; কিন্তু ভেংে তুমি পরতে।

তনু;; গুটিয়ে নিতাম।

আয়ুশ;; সেটা মেহরাম চাইতো না, তোমাকে সত্য টা বলে যদি শুধু নিজের কথা ভেবে সে আমার হয়ে যেতে তাহলে, তাহলে কোথাও না কোথাও সে নিজের কাছে ছোট হয়ে যেত।

তনু;; আমি সব কিছুর মূল।

আয়ুশ;; নিজেকে দোষে লাভ নেই। এখানে যা হয়েছে যেমন হয়েছে সব ভাগ্য। ভাগ্যে লিখা না থাকলে আমরা যতোই চাই কিছুই হতো না।

তনু;; প্লিজ এবার থামো সেই কখন থেকে ভাগ্য ভাগ্য ভাগ্য লাগিয়ে রেখেছো। ভাগ্যে ছিলো, ভাগ্যে ছিলো আয়ুশ ভাগ্যে থাকলেই সেটা আপনা আপনি চলে আসে না। সেটা করার জন্য মানুষ কেও কিছু না কিছু করতে হয়।

আয়ুশ;; ________________

তনু;; আয়ুশ আমি তোমাকে ভালোবাসি আর তুমি মাহরামকে। মেহরাম ও তোমাকে। কিন্তু তার সাথে যা হয়েছে বা হচ্ছে একটা অন্ধকারে ফেসে গেছে সে। মুখ ফুটে বলতে পারে না। তোমরা দুইজন দুইজনকে ভালোবাসো তার মাঝে আমি কেন?!

আয়ুশ;; ________________

তনু;; এক তরফা প্রেমের কখনো কোন ভবিষ্যৎ হয় না আয়ুশ যেমন টা আমার নেই। মন কি চাইছে জানো এখান থেকে দূরে চলে যেতে পারলে, শুধু দূরে অনেক দূরে যেতে পারলে। কারণ কাটা হয়ে তোমাদের দুইজনের মাঝে আর ঝুলতে পারছি না আমি। আমার বাধছে।

আয়ুশ;; ________________

তনু;; এভাবে চুপ করে থেকো না আয়ুশ, রাগ লাগছে আমার।

আয়ুশ;; কি বলবো আমি, আমার বলার না তখন কিছু ছিলো আর না-ই এখন কিছু আছে।

তনু;; কেন এমন করছো যখন দুজনেই দুজনকে এত্তো পরিমাণে ভালোবাসো।

আয়ুশ;; __________________

তনু;; তোমরা অবশ্যই স্বার্থপর, কিন্তু আমার ক্ষেত্রে। নিজেদের সাথে এমন অন্যায় কিভাবে করতে পারলে তোমরা। আরে নিজের ভালো তো পাগলেও বুঝে।

তনু এবার ধপ করে একটা চেয়ারে বসে পররে কেদেই দিলো। আয়ুশ এখন তনু কে কি বলে বুঝাবে তা তার জানা নেই।

তনু;; তুমি আমাদের বিয়ের প্রথম রাতে বলেছিলে “নিজেকে শক্ত ভাবে তৈরি করো”। এইদিনের জন্যই বলেছিলে তাই না। যে যখন আমি সত্যি টা জানতে পারবো হয়তো ঠিক থাকতে পারবো না। হয়তো মেহরাম ভয় পেতো যে যেদিন আমার সামনে সত্যি টা আসবে তখন আমার ওপর দিয়ে কি যাবে। আর আজ সব জেনে গেছি।

আয়ুশ;; তনু…

তনু;; তুমি কেন বুঝো না যে জেদের বশে কিছুই হয় না। আজ হয়তো তুমি এইসব কিছুই রাগে করলে কিন্তু কাল, কাল তোমাকে আফসোস করতেই হবে। বারবার করতে হবে।

আয়ুশ;; করছি আমি। আগেও আর এখনো করছি। কি বলতে চাইছো আমি দূরে চলে যেতাম। মেহরাম আমাকে তোমাকে মেনে নিতে বলেছিলো তখন যদি আমি মেনে না নিয়ে সরেই আসতাম তখন লাভ টা কি হতো। মেহরাম যে এতো কিছু করলো তা কোথায় যেত। সেই তো সরেই আসতাম। তখন না ই হতে পারতাম মেহরামের আর না ই তোমার।

তনু;; তুমি আমার হয়েছো?

আয়ুশ;; _____________

তনু;; এখন চুপ কেন হলে, বলো তুমি আমার আদৌ কখনো ছিলে বা আছো?!

আয়ুশ;; তনু

তনু;; তুমি এখনো ভালোবাসো মেহরু কে আমি জানি। তুমি কখনোই ওর জায়গাতে আমাকে বসাতে পারবে না। কেউ কারো জায়গা কোনোদিন নিতে পারে না। বরং এটা আমার ব্যার্থতা যে আমি তোমার মনে কখনো জায়গা করে নিতে পারিনি।

আয়ুশ;; ভালোবাসা সবার জন্য আসে না তনু।

তনু;; হ্যাঁ আর তাই তো তুমি যেমন মেহরামের জায়গা আমাকে দিতে পারো নি ঠিক তেমনই আমিও তোমার জায়গা অন্য কাউকে দিতে পারবো না।

আয়ুশ পেছন ঘুড়ে তনুর আড়ালে নিজের চোখের পানি টুকু মুছে নেয়।

তনু;; আয়ুশ!

আয়ুশ;; হুম

তনু উঠে গিয়ে আয়ুশের সামনে দাঁড়িয়ে পরে।

তনু;; ভালোবাসাকে ছাড়তে নেই, ধরে বাচতে শেখো। সে তোমার ছিলো আর থাকবেই।

আয়ুশ;; এম……

তনু;; আয়ুশ..!

আয়ুশ;; হুম

তনু;; “”এই তনু তোমাকে অনেক ভালোবাসে””।

আয়ুশ;; _______________

তনু;; আর তার থেকেও হাজার গুণে বেশি মেহরাম বাসে।

আয়ুশ;; তনু…

তনু আর কিছু না বলেই টেবিলের ওপর থেকে নিজের ব্যাগ টা নিয়ে সোজা বাইরে চলে আসে। তারপর অফিসে থেকে বাইরে বের হয়ে পরে। এদিকে আয়ুশের ভেতর টা যেন জ্বলে যাচ্ছে। ভয় হতো তার যে যদি কখনো তনু সব জেনে যায় তাহলে কি হবে। কিন্তু বলে না যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধে হয়। যেটার ভয় ছিলো আজ তাই হলো। আয়ুশ চায় নি কোন ভাবে কাউকে হার্ট করতে, আয়ুশ এটাও জানে যে তনু তাকে অনেক ভালোবাসে। কিন্তু সে নিরুপায় তার মনে মেহরাম ছাড়া কেউই নেই। আর ভাবতে পারছে না সে, মাথা চেপে ধরে টেবিলে বসে পরে। মনে হচ্ছে নিজের অজান্তেই এক গভীর খাদে পরে গেছে সে যেখান থেকে আর চাইলেও উঠে আসতে পারছে না। আর তনু রিকশা করে বাড়ি ফিরছে আর চোখের পানি ফেলছে।


আকাশ;; মেহরাপু টুকিইইইইইইই..!

মেহরাম;; হ্যাঁ, হ্যাঁ আকাশ আয় ভেতরে আয়।

আকাশ নাচতে নাচতে মেহরামের কাছে চলে গেলো।

মেহরাম;; কিরে!

আকাশ;; কিছু না তো।

মেহরাম;; হাতে কি?

আকাশ;; ওহহ হ্যাঁ এটা তেতুলের আচার। তোমার জন্যই আনা। নাও নাও শুরু করো।

মেহরাম;; মনে হচ্ছে বেবি আমার পেটে না তোর পেটে আছে। কারণ আমার কথা বলে মায়ের কাছ থেকে তুই-ই বেশি আচার খাস।

আকাশ;; আহা বুঝো না কেন আমি আমার কথা বললে আচার তো দিবেই না উল্টো এটা ওটার বাহানা বলে আমায় বের করে দিবে।

মেহরাম;; তবে রে দাড়া তোর ভান্ডা ফুটো করছি। ওওওওও মায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়া..

আকাশ;; এই না না না, আপু না বইন না। বইলো না প্লিজ লাগে। যা বলবা তাই করবো তাও প্লিজ বইলো না।

মেহরাম;; যা বলমু তাই করবি?

আকাশ;; হ্যাঁ সত্যি।

মেহরাম;; তাহলে বাড়ির পেছনে যে আমের গাছ আছে সেখান থেকে আম পেড়ে দিবি বল।

আকাশ;; ওহহ এটা কোন ব্যাপার নাকি। কিন্তু দাড়াও ওইটা তো বাগানের আম গাছ। সেখানে তো মালি থাকে সারাদিনই। কিভাবে যাবো।

মেহরাম;; কেন স্কুলে যাবার আগে যখন প্রতিদিন চুরি করতি সেভাবেই পেড়ে দিবি।

আকাশ;; 😬😬..

মেহরাম;; তা না হলে, মায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়া।

আকাশ;; আচ্ছা দিমু তো না করছি নাকি।

মেহরাম;; আচ্ছা তুই আমাকে কাচা আম দিবি আর আমি তোকে এক বক্স আচার যা।

আকাশ;; মনে থাকে যেন।

মেহরাম;; হ হ থাকবো।

আকাশ আর মেহরাম বসে বসে আচার খাওয়া শেষ করলো। তারপর আকাশ চলে গেলো বাইরে। তবে এখন আবার মেহরামকে তনুর চিন্তায় ধরলো। মেয়েটা এই যে গেলো আর আসার কোন নাম গন্ধ নেই। মেহরাম তার ফোন হাতে নিয়ে যেই না তনু কে ফোন দিবে তখনই আয়ুশের ফোন আসে তার ফোনে। কিছুক্ষণ ফোন বেজে গেলে মেহরাম তা রিসিভ করে…

মেহরাম;; হ্য হ্যালো

আয়ুশ;; মেহরু..!

মেহরাম;; _____________

আয়ুশ;; তনু এসেছিলো আমার কাছে।

মেহরাম;; আমি জানতাম ও তোমার কাছেই আসবে। এখন কোথায়?

আয়ুশ;; বাড়ি চলে গেছে।

মেহরাম;; তোমার সাথে কিছু হয়েছে?

আয়ুশ;; তেমন কিছুই না কিন্তু নিজের ভেতরে চাপা কথা গুলো বলছিলো।

মেহরাম;; _______________

আয়ুশ;; কি করো?

মেহরাম;; কিছু না।

আয়ুশ;; তনু কি করে জানলো এইসব?

মেহরাম;; আমি যখন হস্পিটালে তখন তনু বাড়ি গিয়েছিলো, আর ড্রয়ারের ওপর আমার ডায়েরি পায়।

আয়ুশ;; হুম।

মেহরাম;; আমি রাখি।

আয়ুশ;; হ্যাঁ।

আয়ুশ ফোন কেটে দেয়। তিন দিকে তিন জন মানুষ পুরো শেষ হয়ে যাচ্ছে। আয়ুশ অফিসের জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকলো, মেহরামের মাথায় আয়ুশ আর তনু দুজনের চিন্তাই ঘুরঘুর করছে আরেক হাত পেটের ওপরে দিয়ে আছে, আর তনু বাড়ি এসে কাউকে কিছু না বলে সোজা নিজের ঘরে চলে যায়। কণা টুকটাক কাজ করছিলো হঠাৎ তনুকে এভাবে আসতে দেখে কিছুটা কপাল কুচকায়। তনু নিজের রুমে গিয়ে ঠাস করে দরজা লাগিয়ে দেয়। কণা তনুর ঘরের দিকে তাকিয়ে থেকে আবার নিজের কাজে মনোযোগ দেয়।

এভাবেই সময় যেতে থাকে। মেহরাম আর বসে থাকতে পারছে না। এবার সারা বাড়ি তে পায়চারি করছে আর সবার সাথে কথা বলছে। তখনই বাইরে মেঘ ডাকতে থাকে। এখন মাঝে মাঝে ঝড় উঠে, কোন সময় মানে না। রাত বাজছে অরায় ১১ টা আয়ুশের এখনো বাড়ি ফেরার নাম নেয়। চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে আছে। আর বাইরের বৃষ্টি দেখছে। তনু তার বাড়িতে, কণা এসে কতোক্ষণ তার পাশে ছিলো। কিন্তু কণা বুঝলো যে হয়তো কোন কারণে তনুর মন ভীষণ খারাপ। একটু একা থাকতে দেওয়া টাই ভালো। তাই সে উঠে চলে আসে। মেহরাম এখনো তার বাড়ি যায় নি। তার বাবার বাড়িতেই আছে। কুসুম বেগম বিকেলের দিকে এসে সবার সাথে দেখা করে গেছে। মেহরাম এখন তার রুমের জানালার গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে। তখনই দরজাতে কারো টোকা পরে। মেহরাম কপাল কুচকায় এতো রাতে কে। সে ভেবেছে যে সবাই হয়তো ঘুম। মেহরাম দরজা খুলেই দেখেই আতিয়া অর্থাৎ তার চাচি। হাতে খাবারের ট্রে রয়েছে। মেহরাম তাকে দেখে মুচকি হাসে সাথে কপাল কুচকায়। আতিয়া ইশারাতে মেহরামকে সামনে থেকে সরতে বললে মেহরাম সরে দাঁড়ায়। আর উনি ভেতরে এসে বসে পরেন।





🧡চলবে~~

#তৈমাত্রিক
#লেখিকা; Tamanna Islam
#পর্বঃ ২২

🧚‍♀️ . . . .

আতিয়া মেহরাম কে ইশারাতে সামনে থেকে সরতে বললে মেহরাম সরে দাঁড়ায়। আর আর উনি ভেতরে এসে বসে পরেন।

আতিয়া;; এদিকে আয়।

মেহরাম;; তুমি এতো রাতে..!

আতিয়া;; তুই যে সারারাত ঘুমাতে পারিস না তা আমি জানি। আর রাতেও তো আজ খেলি না। ভাবি কে বলতে চাইছিলাম যে কিছু খাবা নিয়ে যেন তোর রুমে যায়। কিন্তু গিয়ে দেখি ভাবি ঘুম। তাই আমিই এলাম।

মেহরাম;; আরে চাচি আমার খিদে নেই, এতো রাতে শুধু শুধু খবার নিয়ে আসতে গেলে কষ্ট করে। ঘুমিয়ে পরতে।

আতিয়া;; হয়েছে, এদিকে আয়। খাইয়ে দেই।

মেহরাম বিছানার এক কোণায় বসলে তার চাচি তাকে খাইয়ে দিতে থাকে।

মেহরাম;; এটা তুমি রেধেছো তাই না?!

আতিয়া;; হুম কেমম হয়েছে?

মেহরাম;; অনেক বেশি ভালো।

আতিয়া;; হুম।

মেহরাম;; তুমি খেয়েছো?

আতিয়া;; হ্যাঁ আমি, ভাবি, তোর চাচ্চু বাবা সবাই এক সাথেই খেয়ে নিয়েছি।

মেহরাম;; ওহহ…

আতিয়া;; তোর সাথে কিছু কথা ছিলো রে মা!

মেহরাম;; হ্যাঁ হ্যাঁ বলো না।

আতিয়া;; আগে খেয়ে নে।

আতিয়া মেহরাম কে সব গুলো খাবারই জোর করে খাইয়ে দিলো।

আতিয়া;; খুব তো বলছিলি যে খিদে নেই, খাবার গুলো কার পেটে গেলো?!

মেহরাম;; হিহিহি।

আতিয়া;; পানি খা।

মেহরাম;; আচ্ছা কি না বলবে বলো।

আতিয়া;; তনুর সাথে তোর কি কোন কথা হয়েছে?

মেহরাম;; হ্যাঁ হয়েছে তো।

আতিয়া;; আর আয়ুশ?

আয়ুশের কথা শুনেই মেহরাম কিছুটা অবাক হয়ে তার চাচির দিকে তাকায়।

আতিয়া;; দেখ মেহরু ভাগ্য কে দোষে লাভ নেই। কারণ ভাগ্যে যা লিখা থাকে তাই হয়।

মেহরাম;; তুমি কি বলছো?

আতিয়া;; কাল আমি তোদের ঘরেই আসার জন্য এসেছিলাম। কিন্তু এসেই শুনি তুই আর তনু চিল্লাচ্ছিস।আমি সব শুনেছি মেহরাম।

তার চাচির কথা শুনে মেহরামের হাত কাপাকাপি শুরু হয়ে গেছে।

আতিয়া;; এখন বুঝতে পারছি তুই কেন সহজে বাড়ি আসতে চাইতি না। আর তনুদের বাড়ি তো মোটেও না। বিয়ে শেষ হতে না হতেই দ্রুত ঢাকা চলে যাওয়া।

মেহরাম;; চাচি..!

আতিয়া;; তুই একটা বার বলতি আমাদের, এমন তো না যে আমরা কেউই মেনে নিতাম না। সবটা বুঝিয়ে বললেই পারতি।

মেহরাম;; তনুর কি হতো?

আতিয়া;; কাদতো, হয়তো কষ্ট হতো। বুঝাতাম সামলে নিতাম। ঠিক হয়ে যেতো।

মেহরাম;; তুমি বলছো ও কাদতো আর তোমরা সবাই সামলে নিতে। চাচি কি বলছো। যার জন্যই আমার এতো কিছু করা তাকে বলছো তোমরা মিলে বুঝাতে। চাচি সব কিছু এতো সোজা না যতোটা তুমি ভাবছো।

আতিয়া;; এখন তো জানাজানি হলোই তাই না।

মেহরাম;; সে আজ হোক দশ বছর পর হোক সবাই জানতোই।

আতিয়া;; কিন্তু কষ্ট তো এখনো তুই ই পাচ্ছিস তাই না। আর হয়তো আয়ুশ ছেলেটাও।

মেহরাম;; চাচি বাদ দাও।

আতিয়া;; আগে তুই আর আয়ুশ জানতি কিন্তু তবুও কেউ খুশি ছিলি না। এখন তনু সহ জানে এখন কেউ খুশি থাকবে না।

মেহরাম;;_______________

আতিয়া;; মা রে আমি যখন এই পরিবারে বউ হয়ে আসি তখন কেমন জানি লাগতো জানিস। আস্তে আস্তে তোর মায়ের সাথে এত্তো ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠলো যে কি আর বলি। হয়তো এত্তো আপন বাপের বাড়ির ও কেউ ছিলো না। ভাবির পেটে তুই এলি তার কিছু মাস পর তনু এলো। আমার দুই টা মেয়ে। আমার কাছে তুই আর তনু একই। এখানে যদি আয়ুশের সাথে তনুর বদলে তোর বিয়ে হতো তাহলেও আমি এই একই ভাবে খুশি থাকতাম। কিন্তু একটা কথা মনে রাখবি সবসময়, ভালোবাসা কখনো না ভুলা যায় আর না ই কখনো মন থেকে সরে। এটাকে ধরে রাখতে শিখ। কারণ এটা যখন নিজের চোখের সামনে অন্যের হয়ে যায় না তখন তা মরণ যন্ত্রণা থেকে কোন দিক দিয়ে কম হয় না। (মেহরামের গালে হাত রেখে)

মেহরাম;; ___________________

আতিয়া;; জানি ঘুমাবি না। তাই আর বলবো না, তুই তো আবার লিখিস। আমি জানি। হয়তো বসে লিখালিখি কর নয়তো……..। যা ইচ্ছে। আমি যাই।

মেহরাম;; আচ্ছা।

আতিয়া মেহরামের রুম থেকে চলে আসে। মেহরাম দরজা টা আটকিয়ে দেয়। শ্বাস নিচ্ছে জোরে জোরে। বাম পাশে মাথা ঘুড়াতেই তার আর তনুর একটা ছবি চোখে পরে। ছবি টা অনেক আগের তোলা। মেহরাম দাঁড়িয়ে আছে আর এক পাশ দিয়ে তনু তাকে জড়িয়ে ধরে আছে। দুজনেরই মুখেই যেন হাসির শেষ নেই। মেহরাম সেদিকে ধীর পায়ে এগিয়ে গিয়ে ছবি টা হাতে তুলে নেয়। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে আলতো হাতে ছুইয়ে দেয়। ভীষণ কান্না পাচ্ছে তার। মেহরাম তনুর দিকে তাকিয়ে আছে। এই হাসি টা সে খুব মিস করে। যা এখন আর নেই। মেহরাম ছবি টা বুকে জড়িয়ে ধরে কেদেই দেয়।


এভাবেই কেটে গেলো মাঝ খানে কয়েকটা দিন। তনু এখন আয়ুশের সাথে ঘুমায় না। রাতে যখন সবাই ঘুমিয়ে পরে তখন তনু লুকিয়ে অন্য ঘরে চলে যায়। আবার ভোর সকালে উঠে নিজের রুমে এসে পরে। আয়ুশ কিছুই বলে না, কারণ বলে লাভ নেই। এখন আর কিছুই লুকিয়েও লাভ নেই। ব্যাপার টা ঠিক এই রকম হয়েছে যে আয়ুশের সাথে তনু এখন আর চোখে চোখে রেখেও কথা বলতে পারে না। কোথাও না কোথাও বাধে তার। এখন রাতের সময়। তনু অন্য ঘরে হয়তো ঘুমাচ্ছে। আর আয়ুশ কাজ করছে। সারা ঘরে কোন সাড়াশব্দ নেই, একদম পিনপতন নীরবতা। বিছানার পাশে টেবিলে থাকা ছোট ল্যাম্প লাইট টা জ্বলছে। তা থেকে জ্বলজ্বল করে হলুদ আলো সারা ঘরে ছড়িয়ে পরেছে। আর আয়ুশ ল্যাপটপে মগ্ন। ল্যাপটপের কিবোর্ডে টুক টাক শব্দ যেন চারিদিকে বাজছে। বেশ দ্রুত ভাবে টাইপ করার ফলে এমন সাউন্ড হচ্ছে। চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা পরে এক নয়নে সেদিকে তাকিয়ে আছে। কিন্তু হঠাৎ করেই ল্যাপটপ টা বন্ধ করে দেয়। বন্ধ করেই চশমা টা খুলে ডান হাত দিয়ে চোখ দুটো চেপে ধরে। ভালো লাগছে না মোটেও। বিছানা থেকে উঠে এসে বারান্দায় জানালার পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। বাইরে একদম ঘুটঘুটে আঁধার। সবাই হয়তো এই আঁধার আলোয় ঘুমে বেঘোর। কিন্তু তার চোখে ঘুমের ছিটেফোঁটাও নেই। আয়ুশ কি যেন মনে করে সোজা তার মায়ের ঘরে চলে গেলো। আজ তার বাবা বাসায় নেই। ঢাকার বাইরে গিয়েছেন কাজে। আয়ুশ তার মায়ের রুমের কাছে গিয়ে আস্তে করে দরজা টা খুলে দিলো। দরজার চাপা শব্দ টা যেন একটু জোরেই শোনা গেলো এই নীরবতার মাঝে। আয়ুশ দরজার ফাক দিয়ে একটু মাথা বের করে রুমে উকি দেয়। দেখে তার মা বসে বসে পান খাচ্ছে। লায়লা খাতুন বেশ বুঝে যে এটা আয়ুশ ছাড়া আর কেউ না। লায়লা খাতুন মুচকি হেসে ফেলে।

লায়লা খাতুন;; আয় আয় ভেতরে আয়। সেই লুকিয়ে লুকিয়ে আমার ঘরের ভেতরে উকি দেওয়ার স্বভাব টা ছোট থেকে আর গেলো না তোর।

এবার আয়ুশ দরজা সম্পূর্ণ মেলে দাঁড়ায়।

আয়ুশ;; না, যায় নি আর যাবেও না।

লায়লা;; বড়ো হবি কবে বাবা?

আয়ুশ;; কি যে বলো না মা, এত্তো বড়ো হয়েছি চাকরি করছি তবুও বলছো বড়ো কবে হবো? (তার মায়ের কোলে মাথা দিয়ে)

লায়লা;; ছেলে মেয়েরা যতোই বড়ো বুড়ো হয়ে যাক না কেন মায়ের কাছে সেই আগের মতো ছোটই থাকে।

আয়ুশ;; মা..

লায়লা;; হুম।

আয়ুশ;; আমি না তোমাকে অনেক ভালোবাসি।

লায়লা;; হাহাহা, হলো কি তোর?

আয়ুশ;; কিছু না।

লায়লা;; খিদে পেয়েছে?

আয়ুশ;; না।

লায়লা;; পান খাবি?

আয়ুশ;; কিহ 😅😅

লায়লা;; হাহাহা, না এমনি বললাম আর কি। আগে মনে আছে আমার কাছ থেকে পান খাওয়ার জন্য তুই কতো কি না করতি কিন্তু আমি খেতে দিতাম না।

আয়ুশ;; হ্যাঁ তার জন্য আমাকে চোর সাজতে হয়েছে আর আমি পান চুরিও করেছি।

লায়লা;; মার তো আর কম খাস নি।

আয়ুশ;; হুমম।

লায়লা;; আয়ুশ..!

আয়ুশ;; মা আমি ভালো নেই ( চোখের কোণে পানি জমেছে)

লায়লা;; তোর এই অসুখের নাম কি “মেহরাম”?!

আয়ুশ;; আমি অবাক হবো না এখন কারণ যার জানার জানুক।

লায়লা;; কণা সব বলেছে আমায়। আর অনেক আগে থেকেই আমার কেমন সব ঘোলাটে লাগছিলো। কিন্তু ভেবেছি যদি আমার ধারণা টা ভুল হয় তাহলে, কিন্তু কণার আমকে বুঝিয়ে বলার পর যেন সব ক্লিয়াল হয়ে গেলো। আয়ুশ আমি জানি তোর পছন্দ খারাপ না। তুই বড়ো হয়েছিস বুঝিস। কখনো খারাপ কোন কাজ আমার ছেলে করবে না। তুই আমাকে বলতি ব্যাপার টা।

আয়ুশ;; না মা তখন তেমন সিচুয়েশন ছিলো না।

লায়লা;; মেহরাম অনেক বেশি ভালো। সত্য বলতে ওর মতো মেয়ে আমি খুব কম দেখেছি। মেয়েটার ওপর দিয়ে কতো কি না গেলো। তাও আবার এই সময়ে কিন্তু সে ঠিক আছে। মেহরামকে আমার আগে থেকেই অনেক পছন্দের। মেয়েটার মধ্যে এক আলাদা মায়া কাজ করে। কিন্তু তনু যে খারাপ তা কিন্তু না। আমি ভাবছি ওই মেয়েটার ওপর এখন কি যাচ্ছে।

আয়ুশ;; মা..

লায়লা;; তুই মেহরামকে ভালোবাসিস আর তনু তোকে। কেমন এক ত্রিকোণ।

আয়ুশ;; যাতে আমি কখনো ফাসতে চাই নি কিন্তু ফেসে গেছি,, অজান্তেই।

লায়লা;; এখনো ভালোবাসিস মেহরামকে তাই না?

আয়ুশ;; অনেক বেশি। ওর জন্য আমার মনে যা ছিলো বা আছে তা কখনো অন্য কারো জন্য হবে না। আমি চেয়েও পাই না।

আয়ুশ তার মা কে এক হাতে জড়িয়ে ধরে থাকলো। এখনো কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে আছে। তবে মাথা নিচু করা। লায়লা খাতুন মুচকি হেসে আয়ুশের মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। নিজের কোলে পানির বিন্দুর মতো অনুভব হতেই তিনি বুঝে গেলেন যে আয়ুশ কাদছে। আয়ুশ এমনই। এতো রাতে যখন সে নিজের মায়ের রুমে এসেছিলো তখনই লায়লা খাতুনের সন্দেহ হচ্ছিলো যে কিছু একটা হয়েছে। ছোট থেকেই কিছু হলে আয়ুশ সবার আগে তার মায়ের কাছে যায়। এভাবেই জড়িয়ে ধরে কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে থাকে। এতেই যেন আয়ুশের শান্তি। আসলে মায়েরা হয়-ই এমন। যা কিছুই হোক দুনিয়া উলটে যাক মায়ের কাছে কিছুসময় বসলে সব নিমিষেই উধাও। শান্তি আর শান্তি।

ওদিকে তনু ভালো নেই। ঢুকরে কাদছে। মন চাইছে এখান থেকে বের হয়ে যাক। কেন এলো মেহরাম আর আয়ুশের মাঝে এই কথা টাই তার মাথায় বারি খাচ্ছে। নিজেকে কেমন নগন্য লাগছে।




❣️চলবে~~

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে