তৃণকান্তা পর্ব-০৩

0
1342

তৃণকান্তা
পর্ব : ৩
– নিশি রাত্রি

একেবারে জুম্মার নামায শেষ করেই বাসায় ফিরেছে তূর্য। আজ শুক্রবার। শুক্রবার মানেই উৎসব আয়োজন। মা নানান আয়োজনে ব্যস্ত। কতো রকমের খাবার যে তৈরী করবে তার শেষ নেই। বাবা হাকিম সাহেব অবসর মানুষ। আগে শহরের পাক্কা দর্জি ছিলো হাকিম। হাকিম টেইলার্স বললেই স্থানীয় পিচ্চি গুলোও একনামে চিনে। বয়সের সাথে সাথে হাড়গুড়েও কিছুটা ঝং ধরতে শুরু করেছে। ইদানিং পায়ে ব্যাথা হয়। খুব বেশি সময় বসে থাকতে পারেন না। তাই দুইছেলের চেঁচামেচিতে দোকান ছেড়ে বাসায় এসেছেন হাকিম।কর্মচারীরা কাজ চালাচ্ছে।তারপরও মালিক ছাড়া কতোটুকুই বা চলে। সারাদিন আড্ডায় ব্যস্ত। তারপরও সকালের কিছুটা সময় তিনি দোকানে বসে বাকি সারাদিন বাসায় থাকেন। বিকেলটা এলাকায় ঘুরে বেড়ায়। গলির মাথায় চা দোকানে বসে আড্ডা দেয়।এভাবেই কাটছে সময়। দুই ছেলের উপর তার সংসার। বড় ছেলে তুহিন বছর চারেকের মতো কানাডাতে আছে। মায়ের ইচ্ছে ছিলো দুই ছেলে তার বউদের নিয়ে খুব সুখের সংসার গড়বে।কিন্তু ছেলের খুব ইচ্ছে, সে কানাডা যাবে।বছর কয়েক কাটিয়ে এসে দেশেই কিছু করবে।তাই ছেলের ইচ্ছেকেই প্রাধান্য দিলো। তুহিনের জন্য
মেয়েও পছন্দ করা হয়ে গেছে।সামনের মাসে এলেই বিয়ের সানাই বাজাবে তার মা। দুই ছেলের সাথে তার বন্ধুত্ত্বের সম্পর্কটা বেশ গভীরে। অবশ্য তূর্যদের ফ্যামিলিটাই ফ্রেন্ডলি। হাসিখুশিতে মেতে থাকে সারাক্ষণ। নামায পড়ে এসে বাবা মায়ের সাথে খাবার খেয়ে মাত্রই রুমে এলো তূর্য।আলমারিটা খুলতেই মাইশার একটা ছবি চোখে পড়লো।জলপাই কালারের জামার সাথে গোলাপি পাজামা আর ওড়না।মাথায় ঘাসের তৈরি কিছু গহনা। কি মিষ্টি হাসি তার মুখে। হাসিটা যেনো কিছুতেই নিমজ্জিত হতে চাইছেনা। তূর্যের চোখের সামনে ভেসে উঠলো ওদের প্রথম দেখার দিনটা।

চৈত্র মাস।মাথার উপর উত্তপ্ত সূর্য। আকাশের দিকে চোখ তুলে তাকানো ভারী দায়। এই দুপুরে কেউ বাসা থেকে বেরোয়? কিন্তু না তার মায়ের এক্ষুণি ডিম আনা চাই।এক্ষুণি বলতে এক্ষুণি। এতো করে বললো, ‘মা একঘন্টা পরে যাই? ‘ না একঘন্টা পরে হলে তার চলবে না। অগত্যা মায়ের সাথে না পেরে সাধের ঘুম ছেড়ে উঠে এলো তূর্য।

মাত্রই টিউশনি শেষ করে বের হলো মাইশা।বান্ধবিদের দেখে খুব শখ করে এই টিউশনিটা নিয়েছিলো।কিন্তু এই মেয়েতো মেয়েনা যেনো আস্ত একটা পঞ্চাশ বছরের বুড়ি। কথা শুনলেই রাগ বেড়ে যায়। এতো পাকা বাচ্চা হয়? প্রতিদিনই মনেহয়, আজকেই শেষ। আর আসবেনা পড়াতে। কিন্তু সময়টা হয়ে এলে নিজে নিজেই আবার চলে আসে পড়াতে। কিন্তু কপাল খারাপ হলে যা হয়। সিড়ি বেয়ে নামতে গিয়েই বেখেয়ালি ডান পায়ের স্যান্ডেলটা ছিড়ে যায়। মাইশা রেগে একা একাই বললো,
– ধুর বাবা এক্ষুণি ছিড়তে হলো স্যান্ডেলটা? এখানেতো রিক্সাও পাওয়া যায়না।আমি কিভাবে যাবো? তারওপর যা রোদ। এই পিচঢালা রাস্তায় হাঁটা বেশ দূর্বিষহ। গেইট পেরিয়ে রাস্তার দিক তাকাতেই চোখ মুখ মলিন হয়ে এলো মাইশার। নিস্তব্ধ দুপুর। একটা রিক্সাও নেই। পা রেখে লাফিয়ে উঠলো মাইশা। রাস্তার পথ এতো গরম হয়ে আছে যে একটা ডিম ভেঙ্গে পড়লেই বুঝি অমলেট হয়ে যাবে। খালি পায়ে এই পথ কিভাবে যাবে? সাইড ধরে হেঁটে কিছুটা সামনে যেতেই একটা ছেলের উপর নজর বন্দী হলো।ব্লু টিশার্টের সাথে সাদা শর্টস। বাইক নিয়ে বের হচ্ছে। বোধহয় সামনের দিকেই যাবে। মাইশা দ্রুত পায়ে এগিয়ে বাইকটার কাছে গেলো।
বাইক স্টার্ট দিতেই একটা মেয়েলি কণ্ঠ ভেসে এলো তূর্যের কানে।
– এই যে মামা শুনছেন ?
তূর্য পাশ ফিরে তাকাতেই দেখলো, একটা আঠারো থেকে বিশ বছর বয়সী মেয়ে।
ভ্রু কুঁচকে ডানেবায়ে তাকালো তূর্য। এই ভর দুপুরে একটা পাগলও বোধহয় বাসা থেকে বেরোয় না। একটা কাক পর্যন্ত দেখা যাচ্ছেনা। চারোদিক জনশূন্য। মেয়েটার দিক তাকিয়ে তূর্য বললো,
– আমাকে বলছেন?
– এখানে আপাততো আপনাকে ছাড়া আর কাউকে দেখছি না মামা।
মেয়েটির কথা শুনে তূর্য একবার নিজের দিকে তাকালো।তাকে ঠিক কোন এঙ্গেলে মামা মনেহয় সেটাই বুঝার ব্যার্থ চেষ্টা।
তখনি মেয়েটি আবার বললো,
– আমাকে একটু হেল্প করবেন প্লিজ? প্লিজ না করবেন না।
– কি হেল্প ?
– আমাকে একটু লিফট দিবেন?
– সরি। আমি মেয়েদের লিফট দিই না।
মায়ের উপরের রাগটা থেকেই বোধহয় সরাসরি না করে দিলো মেয়েটাকে। তূর্য বাইক নিয়ে চলে যেতে লাগলো। লুকিংগ্লাসে তাকাতেই দেখলো, মেয়েটার পায়ে জুতো নেই।উত্তপ্ত রাস্তায় পা দিয়েও আবার সাইডে চলে যাচ্ছে। কেমন যেনো একটা খারাপ লাগা অনুভব হলো তার। বাইকটা ঘুরিয়ে আবারো মেয়েটার কাছে চলে এলো তূর্য।তারপর বললো,
– উঠুন।
– নো থ্যাংকস।
বলে সোজা সামনের দিকে হাটা ধরলো মাইশা। মনেমনে বললো, তোকে আমি দেখে নিবো। মুড তোর কোথায় যায় আমিও দেখবো। ভাব দেখলে বাঁচি না।
মেয়েটা চলে যাওয়ার পর তূর্য কি মনেকরে যেনো পায়ের জুতোটা খুলে খালি রাস্তায় পা টা ফেললো।এতোটাই উত্তপ্ত ছিলো যে একমিনিটের মতোও সেখানে পা টা রাখতে পারেনি। অজানা অধিকারে মেয়েটার জন্য খুব মন খারাপ হলো। মনের কৌতুহলী অনুভব কেনো যেনো তাকেই ভাবায়। খবর নিয়ে জানতে পারলো পাশের বিল্ডিংয়ের এক ভাড়াটিয়ার মেয়েকে পড়ায়। পাশের এলাকায় থাকে।বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আমিন সাহেবের মেয়ে। মাঝখানে কেটে গেলো আরো অনেকগুলো দিন।চলার পথে আরো কয়েকবার দেখা হয়েছে তূর্য মেয়েটার দিক চোখ তুলে তাকালেও মেয়েটা তাকে দেখেও না দেখার ভাব করে চলে গেছে।

প্রায় একমাস পর।
আশা হঠাৎ করেই ওয়াশরুমে পা পিছলে পড়ে যায়। তূর্য তখন তার পোষা পাখিকে খাবার খাওয়াচ্ছিলো।শব্দ শুনে ছুটে যায় রান্নাঘরে। সেখানে না পেয়ে ছুটে যায় ওয়াশরুমে।
ওয়াশরুমের দরজা খোলা ছিলো বলেই শব্দটা তূর্যের কানে পৌঁছায়। ওয়াশরুমে ঢুকতেই দেখলো তার মা সেন্সলেস হয়ে পড়ে আছে। পুরোটা শরীর কেমন ভয়ে কাঁপতে লাগলো। বাবাও বাসায় নেই।কিছুক্ষণ আগেই বেরিয়েছে। ব্লিডিং হচ্ছে প্রচুর। মাথায় মায়ের আচঁলটা চেপে ধরেই মাকে কোলে তুলে বেরিয়ে এলো তূর্য। তখনো দুপুর। আশেপাশে রিক্সা নেই। মাইশার টিউশনি মাত্রই শেষ হয়েছে। একজন যাত্রী নামিয়ে দিয়ে রিক্সা যেতে নিলে ওটায় ওঠে পরে মাইশা।কিছুদুর এগিয়ে যেতেই দেখলো একজন লোক একটা মহিলাকে কোলে করে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে।ছেলেটার সাদা টিশার্টে রক্ত লেগে আছে। তা দেখে মাইশা রিক্সা ড্রাইভারকে বললো,
– চাচা ওদিকে যান তো।
সামনে এগিয়ে যেতেই দেখলো সেদিনের ছেলেটা।কিন্ত মহিলাটার অনেক চোট লেগেছে। মাইশাকে কিছু বলার আগেই মাইশা বললো,
– এটায় উঠে আসুন।
বলে মাইশা নিজে উপরের সিটে উঠে তার হাটুতে মহিলার মাথাটা রেখে ভালোভাবে লক্ষ্য করলো আঘাতটা কোথায় লেগেছে। তূর্য ড্রাইভারকে বললো,
চাচা পপুলার হসপিটালে চলো। তাড়াতাড়ি।
প্রচুর ব্লিডিং হচ্ছে। আচঁলের এক অংশ দিয়ে বেশ শক্ত ভাবেই বেঁধে দিলো মাথাটা।

তূর্য বার বার মা মা বলে গালে হাত রেখে ডাকছে। কিন্তু না কোনো সাসপেন্স পাওয়া যাচ্ছেনা। এমন অসহায় অবস্থা দেখে খুব কষ্ট হলো মাইশার। পালস চেক করতেই দেখলো খুব স্লোলি চলছে। যেভাবে ব্লিডিং হচ্ছে মাইশা নিশ্চিত ব্লাড লাগবে।
ছেলেটার দিক তাকিয়ে বললো,
– আপনার মায়ের ব্লাড গ্রুপ কি?
– বি পজিটিভ।
মোবাইল বের করেই বৃষ্টিকে কল করলো। রিসিভ করতেই,
– ছোটপু ইমার্জেন্সি বি পজিটিভ ব্লাড লাগবে। পপুলার হসপিটালে চলে আয়।ইমিডিয়েটলি।
ওরা হসপিটালে আসতেই দেখলো বৃষ্টি সব ব্যবস্থা করে রেখেছে।আসার পরপরই রোগীকে ইমার্জেন্সি কেভিনে নিয়ে যাওয়া হলো। ছেলেটাকে এমন ভেঙ্গে পড়তে দেখে বৃষ্টি নিজেই হসপিটালের কার্তেসী পালন করলো। ডক্তর জানালো,
মাথাটা অনেকখানি কেটে গেছে।যার জন্য এতো ব্লিডিং। তবে প্যাসেন্ট অনেক দূর্বল। তেমন ভয়ের কিছু নাই।কিছুদিন রেস্ট নিলেই ঠিক হয়ে যাবে। ডাক্তারের কথা শুনে স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেললো তূর্য। মেয়েটার দিকে তাকিয়ে বললো,
– থ্যাংকস বলে আপনাকে ছোট করবোনা।
আম সরি। একচুয়ালি মা ঘুম থেকে টেনে তুলে পাঠিয়েছিলো তাই মুদ বোম ছিলো।
– ইটস ওকে। আমি মাইশা।আর ও আমার আপু বৃষ্টি।
– হ্যালো। আমি তূর্য।
– টেনশনের কিছু নেই বিকেলেই রিলিজ করে দিবে তবে কেয়ারফুল।
– ওকে।থ্যাংকস।

সুস্থ হতে প্রায় একমাসের মতো সময় লেগেছিলো তূর্যের মায়ের। মাঝেমধ্যেই তূর্যদের বাসায় গিয়ে তূর্যের মায়ের সাথে আড্ডা দিতো মাইশা।সেখান থেকেই ওই পরিবারের সাথে বেশ একটা সম্পর্ক হয়ে যায়। সবাই তাকে খুব পছন্দ করে। মাইশার প্রচন্ড চঞ্চলতা আশার বেশ পছন্দ। তূর্যের মায়ের ডানহাত বলতে গেলে মাইশা।ভালো একটা কিছু রান্না করলেই কল করে বলে,
মাইশু চলে আয় বাসায়।সারপ্রাইজ আছে।
ব্যাস হয়ে গেলো।ঠিক ঘন্টাখানেক পর একগাদা আইস্ক্রিম নিয়ে হাজির। আশা এবং মাইশা দুজনেই আইস্ক্রিমের ভক্ত। এভাবেই চলছে সময়। প্রায় সময়ই তূর্য মাইশাকে লিফট দিচ্ছে। চলতে চলতে কখন যে দুজনের মধ্যে বন্ধুত্ব গেলো কেউ বুঝতেই পারলো না।

হুমায়ন আহমেদ স্যার বলেছিলেন,
একজন ছেলে আর একজন মেয়ে কখনোই বন্ধু হয়ে থাকতে পারবেনা। একটা সময় দুজন দুজনের প্রেমে পড়বেই। এটাই বাস্তব।
তাদের দুজনের মধ্যেও ঠিক তেমনই হলো।
মাইশা আর তূর্যের মধ্যে এক নাম না জানা অধিকার বোধ চলে এসেছে। কখনো মাইশা শাষন করছে তূর্যকে কখনোবা তূর্য শাষন করছে মাইশাকে। কিন্তু কি এই অধিকারের নাম? মাইশা সেটা আঁচ করতে না পারলেও বয়সের বড় তূর্য ঠিকই বুঝতে পেরেছে। ওদের মধ্যে ভালোবাসা হয়ে গেছে।ভালোলাগাটা কখন যে ভালোবাসায় পরিণত হয়ে গেছে কেউ বুঝতেই পারেনি। পড়ালেখা কমপ্লিট করে তূর্য একটা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে জয়েন করে। একটা যান্ত্রিকতা যেনো ভর করলো তাকে।সকাল আটটায় ঘুম থেকে উঠে নাস্তা খেয়ে অফিস যাও। ফিরে আসো রাত আটটায়। সারাদিনের পরিশ্রমের পর রাতে বাসায় ফিরে বিছানায় গা হেলিয়ে দিতেই ঘুম এসে জমাট বাঁধে চোখে। এভাবেই চলছিলো সময়। একদিন ছুটির দিনে মাইশাকে নিয়ে ঘুরতে বের হয়।কিন্তু ওই চটপটে মাইশা সেদিন কেমন চুপচাপ। শুধু হু হা উত্তর দিচ্ছে। এমন চুপচাপ দেখে তূর্য বললো,
– কি হয়েছে?কোনো সমস্যা?
– না।
– তাহলে এমন চুপচাপ কেনো?
– এমনিই।
– এমনিই তো হতে পারেনা।
তূর্যের চোখে চোখ তুলে তাকালো মাইশা।
– তূর্য তোমার ব্যস্ত নগরে আমার ঠাঁই নেই। তুমি এতোটাই ব্যস যে, আমি এতো এতো টেক্সট করেও একটা রিপ্লাই পাইনি।
– মাইশা আমি ব্যস্ত সেটা তুমিও জানো।
– হুম।
তারপর আবার চুপ মেরে গেলো মাইশা। চাপা অভিমানটা আঁচ করতে এতোটুকুও সময় লাগেনি তূর্যের। নদীতীরের তুখার বাতাস মাইশার মুক্ত চুলগুলোকে এলোমেলো করে দিচ্ছে।দুজনেই চুপচাপ।
– তুমি থাকো আমি যাচ্ছি।আমার একটু কাজ আছে।
বলে উঠে যেতে নিলে হাত টেনে একদম পাশে নিয়ে আসে তূর্য। তূর্যের চোখে তাকালে,
– বসো।
মাইশা চুপ করে পাশে বসে রইলো।
– মাইশা! কি সমস্যা বলো আমাকে। না বললে বুঝবো কিভাবে?
– কিছুনা বললাম তো। আমি বাসায় যাচ্ছি।
উঠে চলে গেলো মাইশা। একবারের জন্যও পিছু ফিরে তাকালো না।
মোবাইলের রিংটোন শুনে স্মৃতিচারণ থেকে ফিরে আসে তূর্য। জিপি অফিস থেকে কল। মাইশার নাম্বারে কল দিলেও রিসিভ করেনি মাইশা।

ড্রইংরুমে বসে আছে মেঘা, বৃষ্টি আর তাদের মা রাহেলা। ভিতর থেকে রাগটা যেনো আগুন হয়ে বেরিয়ে আসতে চাইছে। রাহেলার চেঁচামেচি শুনেই রুম থেকে বেরিয়ে এলেন আমিন। তিনি আসতেই যেনো রাগটা মাথাচাড়া দিয়ে উঠলো। চেঁচিয়ে বললো,
– বেশি লায় দিয়ে দিয়ে এই অবস্থা করছো তুমি।যখন যা চাইছে দিছো আর এই জন্যই এমন সময়ের মুখোমুখি।
– আমি বুঝতে পারছিনা তুমি এখানে মাইশাকে কেনো দোষ দিচ্ছো? এখানে ওর দোষটা কোথায়? ছেলের বাবা ব্যস্ত তাই আসতে পারছেনা সেখানে মাইশার কি দোষ?
– অসুস্থ না ছাই।খবর নিয়ে দেখো মেয়ের আলতু ফালতু আচরণের জন্যই আসেনাই।অসুস্থ তো শুধু বাহানা।
মাকে এমন রাগে গিজগজ করতে দেখে মেঘা বললো,
– মা এখানে এতো হাইপার হওয়ার কি আছে? আর তুমি সবসময় মাইশার পেছনে লেগে থাকো কেনো? আমি এতো করে তোমাকে বুঝাচ্ছি তারপরও? এখানে ওর কি দোষ আছে?
পাশ থেকে বৃষ্টি বললো,
– মা তুমি যে ওর সাথে এমন রেগে কথা বলে ও কতোটা কষ্ট পায় জানো?
– হ্যাঁ। আহ্লাদে আটখানা। যেমন মা তেমন তার মাইয়া। বাঁইচা থাকতেও আমারে জ্বালাইছে। মইরা গিয়াও আমার কপালে জ্বালা দিয়া গেছে। ননদ যে সংসারের দিয়াশলাই ওর মা দিয়াই বুঝছি।

গোসল করে এসে মেঘা আর বৃষ্টি কাউকেই খুঁজে পেলোনা। ক্ষিদেটা কেমন যেনো হারিয়ে গেছে।এতোটা বেজে গেছে কিন্তু ক্ষিদা অনুভব হচ্ছেনা। বিছানায় গা এলিতে দিতেই ঘুম এসে ভর করলো দু চোখে। হারিয়ে গেলো ঘুমের দেশে। বসার ঘর থেকে চেঁচামেচি ভেসে আসতেই ঘুম ভেঙে গেলো মাইশা। চিৎকার যে তার মা একাই করছে তা নয়।বড়াপু আর ছোটপু আর বাবার গলাও শুনা যাচ্ছে। ঘুম ঘুম চোখে উঠে বসতেই পেটে কেমন ক্ষুদা ক্ষুদা অনুভব হলো। কিন্তু চেঁচামেচিটা এতোটাই জোড়ে ছিলো যে সেখানে আর বসে থাকতে সক্ষম হলোনা মাইশা। পা বাড়িয়ে ড্রইংরুমের কাছে আসতেই মায়ের কথা শুনে থমকে দাঁড়ালো মাইশা।
চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে