তুমি হলেই চলবে পর্ব-০১

0
2424

#তুমি_হলেই_চলবে
#part_1
writer: #Mahira_Megha

আরুহী বেহায়ার মতো তাকিয়ে আছে ওর চাচাতো ভাই আরিয়ানের দিকে। অন্য দিকে কোনো খেয়াল নেই ওর।
আরিয়ান আরুহীর চাহনি দেখে রাগে খিটমিট করছে বাট কিছু বলতে পারছে না ও। নিজের রাগকে কন্ট্রোল করতে হাত মুঠো বন্দি করে দু তিন বার জোড়ে নিশ্বাস নিলো আরিয়ান। তারপর আরহান আর নিলিমার সাথে কথা বলতে শুরু করলো। নিলিমা আর আরহানের কথার উত্তর দিচ্ছে মাত্র।

আরিয়ানকে দেখছে আর বারবার ব্লাসিং করছে আরুহী।
সাদা টিশার্টের ওপর কালো ডেনিম জ্যাকেট।কালো জিন্স আর কালো ওয়াচ। যদিও কালো রং টা খুব বেশি পছন্দ না আরুহীর বাট আরিয়ানের গায়ে দেখেই ব্লাক লাভার হতে মন চাচ্ছে ওর। আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে আছে প্রায় 5 মিনিট হলো এখনো তাকিয়েই আছে।

নিলিমা আরুহীর সামনে চুটকি বাজিয়ে ” কি রে আরু কই হারিয়ে গেলি? ”

নিলিমার কথা কানে আসতেই বিরক্ত মাখা মুখ নিয়ে বললো ” উহহ আম্মু দেখছি আমি। দেখতে দেও তো। ”
– কি দেখছিস?
-আরিয়ান ভাইয়াকে দেখছি। কি সুন্দর না ভাইয়া!

আরহানঃ হ্যাঁ আমাদের আরিয়ান অনেক সুন্দর। এখন বাড়ি চল মা। বাড়ি গিয়ে দেখিস তোর ভাইয়াকে।

আরিয়ান দীর্ঘ 10 বছর পর দেশে ফিরলো। আর এয়ারপোর্টে আরিয়ানকে দেখেই আরুহী ফিদা।

আরিয়ান আরুহীর দিকে একবার ও তাকালো না। যদিও আরুহী আরিয়ানকেই দেখে যাচ্ছে।

আরুহী নিজের মনে মনে বলছে” আরিয়ান আমার আরিয়ান একবার তাকাও প্লিজ আমার দিকে। ধুর তাকাচ্ছেই না তো। আমিই নির্লজ্জের মতো দেখছি বারবার। ধুর নির্লজ্জের মতো কি আমি তো নির্লজ্জই। এটা সবাই জানে। বাট আরিয়ান ভাইয়া মনে হয় খুব বেশি লজ্জা পায় তাই তো একবার ও তাকাচ্ছে না। ”

মনে মনে আকাশ কুসুম চিন্তা করতে করতে বাড়ি পৌছালো আরুহী। গাড়ি থেকে সবাই নেমে গেছে শুধু আরুহী আরিয়ানে যাওয়ার পানে চেয়ে আছে। আরিয়ান চোখের আড়াল হতে এক লাফে গাড়ি থেকে নেমে দৌড় দিলো আরিয়ানের পিছু।

আরিয়ানের মা রিহানা ছেলেকে এতদিন পর দেখে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু দিলো।
অার্শঃ হে ভাইয়া বলেই আরিয়ানকে জড়িয়ে ধরলো।
অার্শকে দেখে আরুহী আরিয়ানের কাছে এসে ভাইয়া তুমি তো আমার সাথে কথায় বললে না।

আরিয়ানঃ আম্মু আই ফিল ভেরি টায়ার্ড। নাউ আই টেক সাম রেস্ট বলেই ওপরে চলে গেলো নিজের রুমে।

আরুহী মুখ ভার করে সোফায় বসে রইলো। অার্শ আরুহীর কাছে এসে ওকে রাগানোর জন্য ওর মতো করে বলে উঠলো” ভাইয়া তুমি তো আমার সাথে কথায় বললে না। ”

আরুহী ওর দিকে তাকিয়ে আর্শ তোকে আমি বলেই আর্শের পিছু ছুট লাগালো।

( নিলিমা আর আরহানের একমাত্র মেয়ে আরুহী। আরহানের বড় ভাই আবরার আর বড় ভাবি রিহানার দুই ছেলে বড় ছেলে আরিয়ান ছোট ছেলে আর্শ। আর্শ আর আরুহী 4 মাসের ছোট বড়। আর্শ আরুহীর চেয়ে 4 মাসের বড়। দুজনই এবার ইন্টার 1st ইয়ার ভর্তি হবে। ওদের জয়েন ফ্যামিলি।)

আরিয়ান সবার জন্য গিফ্ট নিয়ে এসেছে। সবাইকে সবার গিফ্ট দিলো শুধু আরুহী ছাড়া।
আরুহী সব গুলো দাত বের করে হেসে ” আমার গিফ্ট কোথায়?”

আরিয়ান বিরক্ত মাখা মুখে “সরি আমি তোমার জন্য কিছু নিয়ে আসিনি।

আরুহীঃ তাতে কি হয়েছে তুমি আমায় গিফ্ট এখান থেকে কিনে দিবা।

আরিয়ান কিছু বললো না।

সবাই রুম থেকে বেরিয়ে এলো নিলিমা আরুহীর হাত ধরে ওকে রুম থেকে বাহিরে নিয়ে এলো।

আরুহী আপন মনে আরিয়ানকে গালি দিতে লাগলো ” সালা শয়তান,কুত্তা, চামচিকে, এ্যাটিটিউড যেনো মাথা থেকে পা অব্দি। আমাকে ইগনোর করা এই আরুহীকে। পাড়ার বড় ভাইয়েরা আমায় ভয় পায় আর এই ছোকরা কিনা আমাকে ইগনোর করে। ”

বিকেলে পাড়ার ছেলেগুলো আরুহীকে ডাকছে আরুহী ওদের ক্রিকেট টিমের লিডার। আরুহী হাতে একটা ব্যাট নিয়ে বেরিয়ে গেলো।

খেলতে খেলতে সন্ধ্যা হয়ে গেছে। বাড়ি ফিরে গোসল করে একটা জিন্স আর টিশার্ট পরে ড্রয়িংরুমে এসে টিভি দেখছে।
আরুহী চিৎকার করে আম্মু ও আম্মু আমায় চিপস দিয়ে যাও।
নিলিমা চিপস দিয়ে গেলো আরুহী আর্শ খাচ্ছে আর কার্টুন দেখছে।
আর্শঃ দেখ রুহি আমার ওয়াচটা সুন্দর না?
আরুহী অবাক হয়ে কোথায় পেলি তুই।

-ভুলে গেলি ভাইয়া দিছে তো।
ভ্রু কুচকে ভাইয়া মানে কোন ভাইয়া?
আর্শ আরুহীর মাথায় টোকা দিয়ে আরিয়ান ভাইয়া ডাফার।
আরিয়ানের কথা মনেই ছিলো না আরুহীর, মনে পরতেই “আরিয়ান “বলেই চোখ বড় বড় করে হাসছে।
আর্শঃ তোর আবার কি হলো।
আর্শের কথার কোনো উত্তর না দিয়ে সিড়ি বেয়ে উপরে আরিয়ানের রুমে গেলো। আরিয়ান বিছানায় বসে ল্যাপটপে কি যেনো করছে।
আরুহী ওর দিকে তাকিয়ে “মাই ক্রাশ বয় “।আরুহী আরিয়ানের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। আরিয়ানের চোখ ওর দিকে পরতেই আরিয়ানের স্নিগ্ধ মুখ রাগে লাল হয়ে গেলো।
ল্যাপটপ রেখে আরুহীর সামনে দাড়িয়ে রাগি ভাবেই বললো” কি চাই তোমার, এখানে কি করছো?”
আরুহী বেহায়ার মতো তাকিয়ে দাত বের করে হেসে ” তোমায় দেখতে এলাম। ”

আরিয়ান আর নিজের রাগ কন্ট্রোল করতে পারলো না দেওয়ালে একটা ঘুসি মেরে ” আমার মুখে কি অদ্ভুত কিছু লাগিয়ে রেখেছি? এভাবে বেহায়ার মতো তাকিয়ে আছো কেনো?সেমল্যাস গার্ল।”

-তুমি আমার সাথে এভাবে কেনো কথা বলো?কোমরে হাত দিয়ে বললো আরুহী।
-লিসেন আমি তোমার ওই মুখটাও দেখতে চাই না। ফার্দার আমার সামনে যেনো না দেখি। আরিয়ানের ফর্সা মুখ রক্তিম বর্ন ধারন করেছে।
আরুহী একটু ভয় পেয়ে গেলো আরিয়ানের চেহারা দেখে একটা শুকনো ঢোক গিলে “কেনো? আমার মুখে কি কালি লাগিয়ে রেখেছি নাকি। গোমরা মুখো ছেলে একটা। “বলেই দৌড় দিলো।

আর্শের সাথে ধাক্কা লেগে পড়ে গেলো আরুহী।
আর্শ ওকে ঘোর লাগানো চোখে দেখছে। হাত দিয়ে আরুহীর চুল কানের পিঠে গুজে দিয়ে তাকিয়ে দেখছে আরুহীকে।
আরুহীঃ কি দেখছিস এভাবে?
আর্শঃ তোর এই শাঁকচুন্নির মতো চেহারা। উঠ রুহি তুই এতো ভারি কেনো খেয়ে খেয়ে ড্রাম হয়ে যাচ্ছিস।

আরুহী ওঠে আমি মোটা? তোর না চোখে সমস্যা আছে যা ডাক্তার দেখা।
বলেই হেটে নিজের রুমে গিয়ে হাতে একটা বাস্কেটবল নিয়ে “এত রাগ কেনো ওই আরিয়ানের। আমি ও আর ক্রাশ খাওয়ার লোক পেলাম না। ওই গোমরা মুখোর ওপর ই ক্রাশ খেতে হলো।”

রাতে সবাই ডিনার করছে।
আরুহী আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে আছে।আরিয়ান রাগি ফেস বানিয়ে খাচ্ছে।
রিহানাঃ আরিয়ান তুই বরং কালকে আরুহীকে নিয়ে শপিং এ যাস।
আরিয়ানঃ আম্মু আই এম বিজি। আমি টাকা দিচ্ছি আর্শের সাথে যেতে বলো।
আবরার মুখটা গম্ভীর করে ” এতো বছর বিদেশে থেকে ও তো দেখছি কিছু শেখো নি। সেই আগের মতোই আছো। তুমি সবার জন্য গিফ্ট এনেছো শুধু আরুহীর জন্য নিয়ে আসো নি। কাল তুমি আর্শ আর আরু মাকে নিকে শপিং এ যাবে।

আরিয়ান আর কথা না বাড়িয়ে ” ওকে ডেড।

সবাই মিলে শপিং এ গেলো।
আরিয়ানঃ জামা চয়েস করো (রাগি মুখে কথাটা বললো।)
আরুহী অবাক হয়ে “এখান থেকে কে কাপড় কিনবে?”
আরিয়ান রাগটা দ্বিগুন করে ” মেয়েদের জামা নিশ্চয় আমি বা আর্শ কিনবো না তোমার জামা চুস করো। আর লিসেন আমার হাতে টাইম নেই সো তারাতারি করো। ”

আরুহীঃ রাগ টা নিজের পকেটে রেখে চলো এখান থেকে আমি এসব মেয়েদের কাপড় পড়ি না।

আর্শঃ ভাইয়া রুহি সব সময় আমার ড্রেসের মতো ওর জন্য কেনে। ও মেয়েদের ড্রেস লাইক করে না। তুমি জেন্স সাইটে চলো রুহি ওখান থেকেই কিনবে।

আরিয়ান গটগট করে হেটে চলে গেলো। আরুহী আর আর্শকে কাপড় চয়েস করতে বলে নিজে পায়ের ওপর পা তুলে বসে ফোন ঘাটছে।

কয়েকদিন পর

বিকেলে আরুহী পাড়ার সব ছেলেদের সাথে ক্রিকেট খেলছে তখনি সামনে দিয়ে একটা আইসক্রিম ওয়ালাকে যেতে দেখে। খেলা মাঝ পথে থামিয়ে দিয়ে আইসক্রিম ওয়ালার কাছে গিয়ে আইসক্রিম নিয়ে খাচ্ছে। সবাই ওকে খেলার জন্য ডাকলেও ওর কোনো হেলদোল নেই আপন মনে আইসক্রিম খেতে ব্যাস্ত ও।
আর্শঃ তোর কি ম্যাচের চেয়ে আইসক্রিম খাওয়ায় বড় হলো। ফ্রিজ ভর্তি আইসক্রিম আছে বাড়ি গিয়ে মন ভরে খাস। এখন ব্যাটিং কর।

আরুহী আর্শের কাধে হাত দিয়ে “আমার তো দুইটাই ভালোবাসা একটা আইসক্রিম আর একটা ডোরেমন। তাই আমায় ডিস্টার্ব না করে যা এখান থেকে। আমায় আমার ভালোবাসার সাথে থাকতে দে।”

আর্শ কিছু না বলে চলে গেলো কারন আরুহী যা বলে তাই করে। আর আর্শ কখনোই ওর বিরক্তির কারন হতে চায় না।

ভালোবাসা শব্দটা মনে পড়তেই আইসক্রিম খাওয়া বন্ধ করে আরিয়ানের কথা ভাবছে ” আরিয়ান, হ্যাঁ ও আমার ভালোবাসা। আমি এতদিন ক্রাশ কেনো বলছিলাম পাগলের মতো। আমি ভালোবাসি আরিয়ান ভাইয়াকে। ধুর কিসের ভাইয়া আরিয়ান ও আমার জন্য শুধুই আরিয়ান, ভাইয়া হবে আর্শের।

কথাটা বলে পাগলের মতো হাসতে লাগলো আরুহী। দুরে দাড়িয়ে আরুহীর হাসি দেখছে আর্শ।
আরুহীকে দেখে মনে মনে ভাবতে লাগলো ” সত্যি রুহিটা না একদম পাগল। কেউ করে এমন? বাট ওর এই হাসি টা সবচেয়ে দামি। আমার দেখা সবচেয়ে সুন্দর হাসি।

আরিয়ানঃ পাড়ার ছেলেদের সাথে ছেলেদের কাপড় পড়ে ক্রিকেট খেলছে। বেহায়া মেয়ে একটা। এই মেয়েকে সারাদিন চোখের সামনে দেখতে হবে আমার। কথাটা অনেকটায় রাগ নিয়ে বললো আরিয়ান।

চলবে…………

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে