তুমি রবে ৯

0
2004
তুমি রবে ৯ . . – “কী হয়েছে বলো তো সোম? এত সকালে তোমার এই অগ্নিমূর্তি দেখে মনে হচ্ছে বাসায় ঝামেলা করে এসেছো। সব ঠিক আছে তো?” মমিনের কথার জবাবে সোম তখন বলল, – “বলছি আঙ্কেল। দাদু আসুক আর মাহিও আসুক।” – “মাহির ব্যাপারে কিছু?” – “হ্যাঁ।” সোমের জবাব প্রদানের পরই আলহাজ আসলো বসার ঘরে। সোম তাকে দেখে উঠে দাঁড়িয়ে সালাম জানাল। আলহাজ সালামের উত্তর দিয়ে বলল, – “আরে বসো ভাই, আমি কোনো ভিআইপি নই যে খাড়া হয়ে সালাম দিতে হবে আমাকে দেখে। এখন বলো তো কী হয়েছে?” – “দাদু মাহিকে ডাকুন একবার। ওরও থাকা প্রয়োজন এখানে।” আলহাজ চিন্তিত মুখ করে বলল, – “মনে হচ্ছে সিরিয়াস কিছু।” মমিন তখন বলল, – “আমারও তাই মনে হচ্ছে আব্বা। না হলে তো সোম এত সকাল সকাল জরুরি তলব করতো না।” – “আচ্ছা মাহিকে ডাকো।” মমিন উচ্চকণ্ঠে ডেকে উঠল মাহিকে। – “মাহি? ঘুম থেকে উঠলে এদিকে আয় তো মা একটু। সোম এসেছে।” মাহি ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে তোয়ালেতে মুখ মুছছিল আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে। পরনে তার প্যালাজ্জো আর টি শার্ট। সোমের কথা শুনে সে পরনের জামা কাপড় পাল্টে সেলোয়ার কামিজ পরে বসার ঘরে এলো। সোমের দিকে চোখ পড়তে খুব ক্রোধ চোখে তাকাল সে মাহির দিকে। মাহির মনে হলো কাল তার নিতে আসার কথা ছিল ওকে। কিন্তু এসে পায়নি বলেই হয়তো রেগে আছে। কিন্তু এত সকালে আসার কারণখানা সে ধরতে পারল না। হয়তো এ বিষয়েই কথা বলতে এসেছে। মাহি মুখটা মলিন করে দাদুর পাশে এসে বসলো। মুমু এসে ওদের চা নাস্তা দিয়ে সোমকে জিজ্ঞেস করল, – “সোম নাস্তাতে কী খাবে বলো?” সোম হেসে বলল, – “বরাবরই যেটা খাই, আপনার হাতের পরোটা।” – “আচ্ছা ঠিক আছে।” মুমু যেতেই সোম প্রসঙ্গ তুলল। – “দাদু কাল মাহি বাসায় কখন ফিরেছিল? আপনি কি জানেন?” – “কাল তো আমি আটটার মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। শরীরটা খুব খারাপ ছিল কাল। তাই জানি না কখন এসেছিল। হয়তো সন্ধ্যার পরই চলে এসেছিল। ও তো আর বাহিরে ঘোরাফেরা করার মেয়ে নয়।” মমিন তখন বলল, – “না আব্বা, কাল মাহি রাত দশটাতে বাসায় ফিরেছে।” আলহাজ বিস্ময় চোখে তাকাল মাহির দিকে। মাহির মুখটা ভয়ে তখন আমচুর। মমিন আবার বলল, – “ওর অফিসের বস এসে ওকে নামিয়ে দিয়ে গেছে। আর ওকে নামিয়ে দেওয়ার পরই বাসার ল্যান্ডফোনে কল আসে ওনার থেকে। বলল চেষ্টা করেছিল খুব দ্রুত পৌঁছে দেওয়ার। কিন্তু সে কথা রাখতে পারেনি বলে ক্ষমা চেয়েছে। বৃষ্টিতে রাস্তাঘাট আটকে আর জ্যামে পড়ার কারণে দেরি হয়ে গিয়েছিল। আমিও কিছু বললাম না, কারণ বাহিরে রাস্তাঘাটের অবস্থা সত্যিই খুব খারাপ। দশ মিনিটের রাস্তাও এখন পৌঁছাতে আধা ঘন্টার বেশি লেগে যায়।” আলহাজের কথা বলার পূর্বে সোম বলে উঠল, – “আমি ওকে বাসায় দেরি করে ফেরার জন্য মূলত কিছু বলছি না। কিন্তু ও ওই অফিসে জয়েন করেছে কতদিন? এক সপ্তাহই নাই ধরলাম। এর মাঝে ও অফিসের বস, স্টাফ তাদের সঙ্গে এনজয় করতে চলে যায় কোথায় না কোথায়। যাওয়ার আগে কি সে বাসায় পারমিশন নিয়েছে নাকি আমায় কিছু বলেছে? আমার কথা বলছি এ কারণেই, ওর ছুটির পর ওকে আমার নিয়ে আসার কথা ছিল। আমি গিয়ে পনেরো মিনিট দাঁড়িয়ে থাকি সেখানে। অথচ তার কোনো খবর নেই। কাল আমি ওকে অফিসে নামিয়ে দেওয়ার পর লক্ষ্য করলাম ওর স্যার তার হাত ধরে কথা বলে কথার ফাঁকে ফাঁকে, আবার দুপুরের লাঞ্চও সে মাহিকে নিয়ে করে। হাসি ছাড়া সে মাহির সঙ্গে কথাই বলতে পারে না।” সোমের কথা শেষ হলে মাহি বলল, – “এটা ভুল বললে সোম ভাই। সে কথার ফাঁকে আমার হাত কখনোই ধরে না। আর তুমি যার কথা বলছো সে আর আমি সেম এজ। যার জন্য সে আমার সঙ্গে বন্ধুর মতোই মিশে।” আলহাজ এবার বলল, – “মাহি তুই চুপ কর। সোম তুমি আর কী বলতে চাও বলো।” – “মাহির কথামতো সেই ছেলে তার সঙ্গে ফ্রেন্ডলি আচরণ করে। কিন্তু আমি একজন ছেলে, আমি জানি ছেলেদের মন মানসিকতা কেমন। মেয়েদেরকে এখনকার ছেলেরা কী নজরে দেখে তা তো আমি জানি। কারণ আমি তো সমাজে চলা ফেরা করি। ছেলেদের প্রথম ট্রিক থাকে আগে বন্ধুত্ব করা। তারপর সে তার মূল ট্রিকস প্রয়োগ করে।” মাহির দিকে তাকিয়ে সোম বলল, – “আর তুই যে বললি সে তোর সঙ্গে ফ্রেন্ডদের মতো মিশে। তুই কি তার বাহ্যিক আচরণ সম্পর্কে পুরোটা জানিস? কাল আমি সারাদিন ওই ছেলের সবকিছু খবর নিয়েছি। পাক্কা মেয়ে খেলোয়াড় সে। সামনে গুরুজন তাও বলতে বাধ্য হচ্ছি, প্রতিদিন সে কত মেয়েদের সাথে ওঠা বসা করে জানিস? কোনো খবর নিয়েছিস? আমি নিয়েছি। সে তোর স্যার হয়েও তোর সঙ্গে কেন বন্ধুর মতো মিশে তা তো তুই বুঝবি না। কারণ তুই তো আজীবনের বোকা।” আলহাজ বলল, – “বাসায় দেরি করে ফেরা নিয়ে আমি কিছু বলব না। কাল দুপুরে আমার কাছে যে ফোনটা আসে সেটা ছিল ওর বসের ছোট ভাইয়ের ফোন। সে আমাকে মিথ্যা বলল অফিসের কোন মিটিং এর জন্য ওর আজ ফিরতে দেরি হবে। কাজ সংক্রান্ত বিষয়, আমি বিশ্বাস করে নিলাম। এরপর যখন সন্ধ্যা হয়ে গেল তখন আমি সেই নম্বরে কল করলাম। তখন রিসিভ করল ওর বস। সে আমাকে সত্যিটাই বলল। তার ভাই একটু দুষ্টু ধরনের সেটাই বলল আর কী। আর তার মিথ্যা বলার জন্য সে নিজেই মাফ চাইল। একজন অফিসের বসের এত ভালো ম্যানার আমি কখনো দেখিনি। আর সেদিন সে যদি মাহিকে নিজ দায়িত্বে বাসায় না দিয়ে যেত তো মাহির অবস্থা আরও খারাপ হতে পারতো। এসব দিক ভেবে আমি বেশ ভরসা করেই ছিলাম যে ছেলেটা অল্প বয়সী হলেও সে খুব অনেস্ট। তাই বেশি টেনশন করিনি। এ ছাড়াও তাকে ভরসা করার আরও কিছু কারণ আছে। সে খুব ছোট থাকতেই আমি তাকে চিনি। কিন্তু তার ছোট ভাইয়ের মিথ্যা বলাটা আমি মেনে নিতে পারছিলাম না। ভেবেছিলাম মাহি বাসায় ফিরলে এ বিষয়ে কথা বলব ওর সাথে। এখন সোম তুমি যার কথা বলছো সে ওর বসের ছোট ভাই। তার এই মিথ্যা আর তোমার বলা কথা শুনে আমার এখন সত্যিই তার প্রতি খুব রাগ হচ্ছে।”
এবার মাহিকে আলহাজ বলল, – “তুমি কি মানুষ চিনবে না কখনো? মানুষের সঙ্গে প্রথম আলাপেই তুমি যে তাকে বিশ্বাস করে ফেলো এটা আমিও জানি। আর সোম যা বলল তার সম্পর্কে, এতে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে তোমার থেকেও সে সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করবে।” – “আমি তার সেই সুযোগ নেওয়ার পূর্বেই তাকে শিক্ষা দিয়েছি দাদু।” মাহি বিস্ময়ের চোখে তাকাল সোমের দিকে। সোম তার দিকে চেয়ে বলল, – “কাল সে মেয়ে বন্ধু নিয়ে মজা করে রাতে ফিরছিল বাসায়। আমি তার উপর আমার লোক রেখে নজরদারি করিয়েছি সারাদিন। তারাই বলল সন্ধ্যা থেকে সে মেয়েদের নিয়েই মজায় ব্যস্ত। তার বাসায় ফেরাকালীন আমি তাকে উত্তম মধ্যম করেছি আর থ্রেটও করেছি যেন মাহির আশেপাশে আর না ঘোরে। আমি জানি, এই কাজটা আপনারা সমর্থন করবেন না। কারণ সে আজ মাহির থেকে সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করলেও অলমোস্ট সে অন্য মেয়েদের থেকে নিচ্ছে আর ভবীষ্যতেও নেবে। যার জন্যই তার এই শিক্ষাটা দেওয়া আমি জরুরি বলে মনে করেছি।” মাহি চেঁচিয়ে বলল, – “তুমি কি এটা ঠিক করেছো?” সোম ক্রোধ চোখে তাকাল মাহির দিকে। মমিন বলল, – “সোম তুমি এটা বেশিই করেছো। এখন তো এটা বহুদূর পর্যন্ত যাবে।” – “যাবে না আঙ্কেল। আমি আমার চেহারা তার সামনে এক্সপ্রেস করিনি।” আলহাজ অসন্তুষ্টির ভাবে বলল, – “না সোম, তুই এই কাজটা ঠিক করোনি। সে আমার বন্ধুর নাতি। কোনোভাবে যদি জানে আমার চেনাজানা নিজেদের লোক এই কাজটা করেছে তবে কী হবে তার আমার সম্পর্কটা?” – “আমি মাথা ঠিক রাখতে পারিনি দাদু। আর ভাববেন না, কোনোভাবে জানতে পারবে না যে আমি আপনাদের চেনা জানা।” – “অনেক বড় ভুল করে ফেললে তুমি। এ নিয়ে অবশ্যই আমার কাছে ফোন আসবে আবরার এর থেকে। কী বলব আমি ওকে?” – “ওর অফিস যাওয়াটা কি খুবই দরকার দাদু?” মাহি এমনিতেই সোমের কার্যে ওর প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে আছে। তার উপর তার এই প্রশ্ন শুনে ওর ইচ্ছে করছে সোমকে চড় মেরে বাসা থেকে বের করে দিতে। আলহাজ বলল, – “দ্যাখো সোম, আমি জীবনের বেশিরভাগ সময়টা রাজনীতি করেছি নিজেকে সৎ রেখে। যার জন্য এই পুরোনো বাড়িটা আজ অবধি মেরামতও করতে পারিনি। কারণ ইনকামের পিছে না ছুটে ছুটেছি রাজনীতির পিছে। যার জন্য আমার মেয়েকে স্বাধীনভাবে বাহিরে চলা ফেরা করতে পারেনি তেমন। একটা আতংক থাকত কে কখন শত্রুতা করে ওদের ক্ষতি করে দেয়। এই ভয়ে ওদের সবসময় বাসাতেই বন্দি করে রাখার মতো রাখতাম। আর মেয়েদের জীবন তো আজীবনই পরাধীন জীবন। আজ বাবার দায়িত্বে তো কাল স্বামীর দায়িত্বে। তাদের আদেশ নিষেধ মেনেই ওদের আজীবন পার করতে হয়। আর এ যুগের সাথে চলতে গেলে একজন মেয়েকে বাহিরের পরিবেশ, সমাজ, সমাজের হালচাল এসব জানা জরুরি ওদের জন্য। এসব না জানলে কখন কোথায় কীভাবে ফেঁসে যাবে তার তো ঠিক নেই। আমি আমার নাতি-নাতনিদের পড়ালেখার প্রতি যেমন জোর দিয়েছি তেমন তাদের নিজের যোগ্যতার পরিচয় দেওয়ার ক্ষেত্রেও জোর দিই। কারণ নিজের ছেলে মেয়ের বেলাতে করতে পারিনি বলে। এই যে ওর বড় ফুপির জামাইটা না বলে না কয়ে বিদেশ চলে গেছে। আজ এতগুলো বছর হয়ে গেল এখন অবধি ফিরেনি আর ফিরবেও না। ফিরলেই বা কী? জীবনের চার ভাগের তিনভাগ সে একাই কাটিয়ে দিলো। আজ যদি মমতা শিক্ষিত হতো তো একটা ভালো চাকরি করেও সে ছেলে মেয়েগুলোকেও শিক্ষিত করতে পারত। শ্বশুড় যা খাইয়েছে পড়িয়েছে তাই খেয়ে পড়েই দিন পার করতে হয়েছে। এখন অবশ্য সে সুখে আছে, ছেলেরা কামায় রোজগার করে বলে। কিন্তু যখন এই সুখের প্রয়োজন ছিল তখন সে পায়নি। তাই এই সুখের মূল্য তার কাছে নেই। আল্লাহ না করুক, তোমাদের বিয়েটা হলে তারপর যদি তোমার কিছু একটা হয়ে যায় তখন কী হবে বলো তো ওর? কারণ এখানে তো তোমার বাবাও বেঁচে নেই। এখানে তোমার মায়ের কথাই ভাবো, কত সংগ্রাম করে তোমার মা তোমাদের দু ভাই-বোনকে বড় করেছে। শিক্ষিত হলে অবশ্যই সে ভালো চাকরি করতে পারত। তাহলে তোমাকে ছাত্র বয়স থেকে আর ব্যবসায়ের পথে নামতে হতো না। চলার পথে এমন আরও বহু খারাপের মুখোমুখি হবে ওরা। এ থেকেই তো ওরা শিক্ষা নেবে, নিজেদের ভুল শুধরে নেবে, মানুষ চিনবে। রাগ করে ঘরে আটকিয়ে রাখলে তো কোনো ফায়দা হবে না, বরং ওদেরই অন্ধ করে রাখা হবে এই সমাজ সম্পর্কে। হ্যাঁ, আল্লাহ যদি তোমাদের চারহাত এক করে তো ইসলামি বিধি নিষেধ মান্য করে তুমি ওকে নিজের মতো করে চলা ফেরা করাতে পারো। আমি জানি তুমি মাহির প্রতি কতখানি কেয়ারফুলি। কিন্তু বিয়ের আগেও যদি ওকে খাঁচার বন্দি পাখি করে রাখি তাহলে তো সে একদিন পাথর হয়ে যাবে তার পাখা মেলতে না পেরে। গান গাইতে ভুলে যাবে। কারণ সেই মনই তার থাকবে না। এমন কারো সঙ্গে কি সারাজীবন নিজের সুখ দুঃখ ভাগ করতে পারবে?” সোম মুখটা নিচু করে জবাব দিলো, – “জি বুঝেছি দাদু।” – “তবে আমি তোমার কাজটা খুব অন্যায় বলেই মনে করছি সোম। জানি না কীভাবে ফেস করব আবরারকে।” সোম মাহির দিকে তাকিয়ে খেয়াল করল রাগে মাহির মুখটা থমথমে হয়ে আছে। মাহি বসা ছেড়ে উঠে দাঁড়াতে আলহাজ বলল, – “তোকে চাকরি করার পারমিশন দিয়েছি কারণ তোকে বিশ্বাস করি। কিন্তু নিজের বোকামির ফলে সুন্দর জীবনটা নষ্ট করে বসিস না।” মাহি মাথা নিচু করে রইল শুধু। কোনো জবাব দিলো না। মমিন তাকে বলল, – “অফিসের টাইম তো পার হয়ে গেছে প্রায়। তাহলে আজ আর অফিস যেতে হবে না। বাসাতেই থাক।” মমিন আর আলহাজ তাদের কথা শেষ করে যে যার রুমে চলে গেল। সোম উঠে এসে মাহির কাছে এসে দাঁড়াল। – “আমার পাশে এসে বস, কথা বলব।” মাহি তিরিক্ষি মেজাজে বলল, – “কী বলবে বলো, বসতে পারব না।” সোম মাহির হাতটা ধরে ঠাস করে ওকে সোফায় বসিয়ে দিলো। তারপর ওর পাশে বসে বলল, – “আমি তোকে নিয়ে কতটা পজেসিভ সেটা তুই জানিস?” – “আমার কী মনে হয় জানো! তুমি আমাকেই বিশ্বাস করতে পারো না। আর এই যে পজেসিভনেসের কথা বলছো, এটা তোমার কোনো পজেসিভনেস নয়। তুমি আসলে চাও আমি তোমার খেয়াল খুশিমতো চলাফেরা করি। তাও শুধু তোমার সঙ্গে।” – “তো এটাকে তোর কি মনে হয়? পজেসিভনেস মনে হয় না?” মাহি নীরব থাকল। সোম আবার কিছু বলতে যাবে তখন নীলা এসে বলল, – “এই যে দুজন, গল্প পরে হবে। খেতে আসো। আর আমার ননদটাকে কি বকা হচ্ছে সোম ভাই?” – “না ভাবী, আমার বকার অধিকার আছে নাকি?” এই বলে সোম খাওয়ার রুমে চলে গেল। অফিসে এসে সোজা চোখ গেল আগে মাহির ডেস্কে। তার ডেস্ক ফাঁকা দেখে কপাল কুচকে গেল আশফির। সোজা নিজের কেবিনে গিয়ে চেয়ারে বসে থাকল চুপচাপ দশ মিনিট। তারপর কেবিন থেকে বেরিয়ে আবার দেখল মাহির ডেস্কটা। আনোয়ারকে জিজ্ঞেস করল, – “কোনো এমপ্লয়ি ফোন করেছিল ছুটি সংক্রান্ত?” আনোয়ার দাঁড়িয়ে বলল, – “জি স্যার। নুসরাত মাহি নামে একজন এমপ্লয়ি দশ মিনিট আগে ফোন করেছিল। ব্যক্তিগত সমস্যাজনিত কারণে আজ সে আসতে পারেনি।” আশফি তার কথা শুনে চলে এলো কেবিনে। মেজাজ একদম হাই হয়ে গেল তার। মাহি আজ না আসার কারণটা সে একটু অন্যভাবেই ভেবে নিলো। বেলা এগারোটার সময় মাহি দিয়ার বাসায় এলো। হঠাৎ মাহিকে দেখে দিয়া বলল, – “কিরে তুই অফিস যাসনি আজ?” মাহি সোফায় বসে পড়ে বলল, – “না।” মনটা খুব খারাপ মনে হলো মাহির। দিয়া তার মন ভার দেখে বলল, – “কী হয়েছে কোনো সমস্যা?” – “আমাকে একটা হেল্প করতে হবে তোকে।” – “কী হেল্প?” – “তোদের প্রতিবেশী মানে আমার বস আশফির স্যারের ফ্লাটে যেতে হবে আমার সঙ্গে তোকে।” – “দিশানকে দেখতে এসেছিস না? বেচারার অবস্থা দেখে সত্যিই খুব মায়া হচ্ছিল কাল। কেউ কাউকে এভাবে মারতে পারে কী করে আমি বুঝি না।” – “তুই জানলি কী করে? তুই গিয়েছিলি?” – “আমিই তো দেখতে পেয়ে ওকে ওর ফ্লাটে পৌঁছে দিয়ে এসেছিলাম রাতে।” দিয়া সবটাই খুলে বলল মাহিকে। মাহি বলল, – “এই কাজটা কে করেছে জানিস?” – “কে? তুই চিনিস তাকে?” – “সোম করেছে। ও ভেবেছে দিশান আমার সঙ্গে ফ্লার্ট করতে চায়।” – “ছিঃ এত জঘন্য একটা কাজ কীভাবে করতে পারল ও? আমি তোর এই সোমকে সত্যি বুঝি না। ও মূলত কেমন টাইপের বল তো?” – “দুটো কারণবশত আমি আজ অফিস যাইনি। তার মধ্যে এই একটা কারণ। কী করে ফেস হতাম আশফির? সোমের নামও আমার এখন সহ্য হচ্ছে না। তুই যেতে পারবি কি না সেটা বল।” – “আরে পারব না কেন? কালকের পর আর দেখতে যাওয়া হয়নি। মা থাকলে তো কতবার দেখতে যেত খাবার-দাবার সঙ্গে নিয়ে!” – “ভালো কথা বলেছিস। আমি তো কিছুই আনিনি। এভাবে অসুস্থ রোগীকে খালি হাতে দেখতে যাওয়া য়ায়? কী করব বল তো?” – “রান্না করে নিয়ে যাব? মা থাকলে তো তাই-ই করতো।” – “মন্দ হয় না। একটু পর তো দুপুরের খাবার খাওয়ার সময় হয়ে যাবে। তাহলে রান্না করে দুপুরেই যাই ওদের ফ্লাটে। খারাপ হবে নাকি?” – “আরে না না, ভালোই হবে এতে। ওদের তো দেখলাম কোনো কাজের লোকও নেই। নিজেরাই হয়তো রান্না করে খায়।” – “তাহলে আর দেরি করে লাভ নেই, ওঠ।” লাঞ্চ টাইমে আশফি আজ অফিস থেকে বেরিয়ে এলো। রেস্টুরেন্ট থেকে কিছু খাবার কিনে বাসার উদ্দেশে রওনা হলো। দিশানকে একা রেখে কিছুদিন আর ফুল টাইম অফিসে থাকা যাবে না। কারণ দেখাশোনা করার মতো কেউ নেই বাসাতে। বাসার লোককেও তো খবর দিতে পারবে না। তাই সবকিছু তাকেই করতে হবে। বাসায় পৌঁছে দরজার সামনে দাড়িয়ে খাবারটা এক হাতে রেখে কলিংবেল চাপতে গেল সে। কিন্তু দিশানের আবার উঠে এসে দরজা খুলতে কষ্ট হয়ে যাবে। তাই চাবি দিয়ে দরজা খুলে ভেতরে আসলো। রুমের দিকে যাওয়ার সময় কিচেনে টুংটাং আওয়াজের শব্দ কানে এলো তার। ক্ষুদার চোটে হয়তো ভাইটা তার রান্না করতে ঢুকেছে। খাবারটা খাওয়ার টেবিলে রেখে আর গায়ের স্যুট সোফার ওপর রেখে এসে কিচেনে ঢুকে চমকে সে ওখানেই দাঁড়িয়ে গেল। তার কিচেনে একজন রমণী দাঁড়িয়ে কাজ করছে। যার পরনে বেবি পিংক কালারের সেলোয়ার কামিজ, চুলটা হাতখোপা করা আর ওড়নাটা কোমরে বাঁধা। তার পেছনভাগ দেখেই আশফির মন জানান দিলো এ তার গতকাল রাতের তন্দ্রাবতী। মাহিকে গিন্নির মতো করে কাজ করতে দেখে হঠাৎ করে তার ওষ্ঠে স্মিত হাসি ফুটে উঠল। এগিয়ে এসে সে দাঁড়াল তার পিছে। কিন্তু মাহি তার কাজে এত বেশি মনোযোগী যে কেউ তার পিছে এসে দাঁড়িয়েছে তা সে টেরই পেল না। আশফি তাকে পেছন থেকে জিজ্ঞেস করে উঠল, – “আপনি এখানে?” মাহি চকিত হয়ে ঘুরে দাঁড়াল তার দিকে। আর তখন আচমকা তার হাতের তরকারির ছোট বোল থেকে তরকারি ছুটে লাগল আশফির গায়ে। মাহি তার এহেন কান্ডে ‘ইশ’ বলে লজ্জিত মুখ করে রইল। তরকারিটা খুব গরম ছিল। তাপ সহ্য করতে না পেরে আশফি দ্রুত শার্টটা খুলে ফেলল। বুকের ওপরে বেশখানিক জায়গা জুড়ে লাল হয়ে গেছে তার। মাহি দ্রুত মগে পানি ভরে ব্যতিব্যস্ত হয়ে জায়গাটাতে পানি লাগাতে শুরু করল। তার হাতটা যখন আশফির বুকে পানি লাগাতে ব্যস্ত তখন আশফি তার ওষ্ঠে মৃদু হাসি টেনে মাহিকে দেখতে ব্যস্ত। হঠাৎ মাহির হাতটা ধরে বলল, – “হয়েছে, এত বেশি লাগেনি। জ্বালা কমাতে গিয়ে তো পুরো শরীরটাই ভিজিয়ে দিলেন।” এটুকু বলে আশফি মুচকি হাসতে থাকল। মাহি তার বোকামি দেখে লজ্জায় চোখদুটো বন্ধ করে ফেলল। ……………………………… (চলবে) – Israt Jahan Sobrin

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে