তুমি নামক সপ্তর্ষি মন্ডলের প্রেমে পর্ব – ১

0
2344

#তুমি নামক সপ্তর্ষি মন্ডলের প্রেমে💖
#মিফতা তিমু
#সূচনা পর্ব

বাড়ি ভর্তি লোকের সামনে গালে হাত দিয়ে দাড়িয়ে আছি। গাল ফুলিয়ে টনটন করছে। গালে পাঁচ আঙ্গুলের দাগ পড়ে গেছে।আমাকে যে থাপ্পড় মেরেছে সে যে এত মানুষের সামনে আমার সাথে এমন করতে পারে তা আমার জানা ছিলো না।

স্ক্রিনে আমার আর তাহরিম স্যারের হাস্যজ্জ্বল ছবি ভেসে উঠতেই আমার গালে স্বজোরে একটা চর পড়লো।আমি গালে হাত দিয়ে সামনে দাড়িয়ে থাকা মানুষটার দিকে তাকিয়ে আছি।ঘরে উপস্থিত সকলের সাথে সাথে তাহরীম স্যারও অবাক হয়েছেন সেই সাথে চমকে উঠেছেন তাহসান ভাইও ( তাহরীম স্যারের ভাই )।

আমার সামনে থাকা মানুষটি আর কেউ নয় বরং আমারই হবু বর অর্ণব যার সঙ্গে আর কয়েক ঘন্টা পরে আমার বিয়ে হওয়ার কথা ছিল। অর্ণব হঠাৎ সকাল বেলা হাজির হওয়াতে আমরা সকলেই অবাক হয়েছিলাম কারণ উনার আরেকটু পরে বরযাত্রীর সঙ্গে আসার কথা।কিন্তু এখন বুঝতে পারছি উনার এখানে আসার মূল কারণ কি।

আমি উনার এরকম ব্যবহারে অবাক হচ্ছি কারণ যেই মানুষটা আমায় দিনে চল্লিশ বার ভালোবাসি বলতো সেই মানুষটা এই কয়টা মিথ্যে ছবির উপর বিশ্বাস করে আমায় সবার সামনে চর মারতে পারে সেটা আমার বিশ্বাসই হচ্ছে না।উনি বড্ড রগচটা মানুষ সেটা আমি জানি।উনি অল্পতেই রেগে গিয়ে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন সেটাও জানি কারণ উনি ফিরোজা বেগমের ( সৎ মা) বান্ধবীর ছেলে আর আমার মেডিক্যাল কলেজের প্রফেসর।তবে তাই বলে যে উনি এরকম করবেন সেটা সপ্নেও ভাবতে পারিনি।

অর্ণবের আমাকে থাপ্পড় মারার কথাটা পুরো বাড়ীতে মিনিটের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে এটা নিয়ে মাথা ব্যাথা নেই যে আমার হবু বর আমায় মেরেছে,বরং তাদের চিন্তার বিষয় যে কেন আমার হবু বর আমায় মেরেছে।পুরো বাড়িতে ব্যপারটা ছড়িয়ে পড়ায় আত্মীয় স্বজনদের কানাঘুষা শুনে ফিরোজা বেগম ছুটে এলেন।

বসার ঘরে এসে আমায় গালে হাত দিয়ে দাড়িয়ে থাকতে দেখে ফিরোজা বেগমের আর বুঝতে দেরি হলো না যে কি হয়েছে।উনি আমার পাশে এসে দাড়িয়ে এক পলক আমায় দেখে অর্ণব কে বললেন,
ফিরোজা: কি হয়েছে বাবা অর্ণব? আসান কিছু করেছে? শুনলাম তুমি ওকে মেরেছ?

অর্ণব এতক্ষণ আমায় মেরে পুরো ঘরময় পায়চারি করছিলেন কিন্তু ফিরোজা বেগমের কথা শুনে ফিরোজা বেগমের দিকে এগিয়ে গিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
অর্ণব: আসলে আন্টিম্মু রক্ত কথা বলে।যেই মহিলা তার স্বামী সন্তান কে ফেলে দশ বছর আগে পরপুরুষের কাছে চলে যেতে পারে চরিত্রহীনের মত তার মেয়ে আর কত টুকুই বা ভালো হতে পারে। চরিত্রহীনের মেয়ে তো চরিত্রহীনই হবে। যা হওয়ার তাই হয়েছে।তোমার সৎ মেয়ে আসান আমার সঙ্গে বিয়ে ঠিক হয়ে যাওয়ার পরও পরপুরুষের সঙ্গে সম্পর্ক রেখেছে।

আসলে এই ধরনের মেয়েদের একটা ছেলে তে হয়না।ওদের দুই তিনজন লাগে তাইতো আমার পাশাপাশি ডক্টর তাহরিমকেও রেখেছে।কি নেই আমার মাঝে যা ডক্টর তাহরিমের মধ্যে আছে? উনার টাকা পয়সা বেশি যেটা আমার বিপুল পরিমাণে নেই।

এতক্ষণ অর্ণবের মারা থাপ্পড় সম্মানে লাগলেও এবার আমার মাকে নিয়ে বলা তার বাজে কথাগুলো মনে লাগলো।মানুষটার প্রতি মন থেকে তীব্র ধিক্কার এলো।ঘৃণায় গা টা রী রী করে উঠলো আর নাক মুখ কুচকে উঠলো।

ওর কথা শুনে ফিরোজা বেগম কিছু বলবেন তার আগেই উনার চোখ পড়ল প্রজেক্টরের স্ক্রিনের দিকে।সাথে সাথে উনার মুখের কারুকার্য বদলে গেল।উনার চোখে থাকা এতক্ষণের বিস্ময় ভাব উড়ে গিয়ে জড়ো হলো তীব্র পরিমাণ ক্রোধ।ফিরোজা বেগম আমার দিকে তেড়ে এসে আমার চুলের মুঠি চেপে ধরে বললেন,
ফিরোজা: তোর জন্য কি আমি ইহজীবনেও শান্তি পাবনা? যেদিন থেকে তোর বাবা আমায় বিয়ে করে এনেছে সেদিন থেকে আমার জীবনটা জ্বালিয়ে খেলি। ভেবেছিলাম তোর বাবার অনুপস্থিতিতে তোকে বিয়ে দিয়ে আপদ বিদায় করবো এখন তো সেই সুযোগও রাখলি না।এই অপয়া তুই মরতে পারিস না গলায় দড়ি দিয়ে।তোর জায়গায় আমি হলে এতক্ষণে এত অপমান সহ্য করতে না পেরে গলায় দড়ি দিতাম।

শুধু ফিরোজা বেগম বললে তো হয়েই যেত কারণ এই কথা গুলো উনার মুখ থেকে শুনা এক্সপেকটেড ছিল কিন্তু উনার সাথে সাথে পাশের বাসার আন্টিরাও যোগ দিলেন,
আণ্টি: তোমায় ভালো ভেবে ছিলাম কিন্তু তুমিও এখন আর পাঁচটা মেয়েদের মত বের হলে।তোমার মত চরিত্রহীন মেয়ে থাকলে আমাদের পাড়ার বদনাম হবে।তোমায় কিছুতেই এখানে থাকতে দিবনা। পাড়ার বদনাম বাঁচাতে হলে যেই ছেলের সঙ্গে ফষ্টিনষ্টি করেছ তাকে বিয়ে করে বিদায় হও নাহলে তোমায় তোমার বাবা মা সমেত ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করবো।

আন্টির কথা শুনতেই চমকে উঠলাম। ভয়ার্ত দৃষ্টিতে উনার দিকে তাকালাম। অ্যান্টি কে আমার এখন ফিল্ম দুনিয়ার ভিলেনের থেকে কোনো অংশে কম মনে হচ্ছে না।আমার এখন ভয় লাগছে যদি সবাই মিলে সত্যি সত্যি বাবা কে অপদস্ত করে বের করে দেয় তাহলে তো বাবা আর এই এলাকায় সসম্মানে থাকতে পারবে না। বাবা আমায় যতই অপছন্দ করুক না কেন দিন শেষে তো সে আমার বাবা।আমি চাইনা আমার জন্য কেউ অসম্মান কিংবা বিপদে পড়ুক।

এতক্ষণ সবার কথায় কিছু না বললেও এবার আর তাহরীম চুপ করে থাকতে পারলোনা। ব্যাপারটা বাড়াবাড়ি পর্যায় চলে গেছে।এখন কথা না বললে ব্যপারটা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে সেটা হয়তো কেউই জানেনা।

তাহরীম: আপনারা ঘটনার সত্যতা যাচাই না করে শুধুমাত্র কিছু ছবি আর একজন মানুষের জবানের ভিত্তিতে সবটা বিশ্বাস করে নিচ্ছেন কেন?আর বিয়ে কি কোনো ছেলেখেলা নাকি? আপনারা বললেই বিয়ে হয়ে গেলো তাইনা? কি পেয়েছেন টা কি? আপনারা আমাদের জোর করে বিয়ে দিবেন আর আমরা সেটা মেনেও নিবো তাইনা? পাত্র পাত্রী রাজি নয় তাহলে বিয়ে কি করে হবে?

‘ আমি রাজি… বিয়েতে আমার কোনো আপত্তি নেই ‘ বললাম আমি।

আমার কথা শুনে বড়বড় চোখে আমার দিকে তাকালেন তাহরীম স্যার।আমার দিকে তাকিয়ে বড় গলায় বললেন,
তাহরীম: তুমি ভয় কেন পাচ্ছো আসান? এদের কথায় তুমি কেন বিয়েতে রাজি হচ্ছো?না তুমি আমায় ভালোবাসো আর না আমি তোমায় ভালোবাসি তাহলে বিয়েতে কেন রাজি হচ্ছো?তুমি এই মিথ্যে ছবিগুলোর জন্য কেন ভয় পাচ্ছো?

আমি স্যারের কথা শুনে কিছুক্ষণ তার দিকে তাকিয়ে থাকলাম তারপর বললাম,
আসান:আমি কারোর ভয়ে রাজি হচ্ছি না প্রফেসর সাহেব।আমি সম্পূর্ণ নিজের ইচ্ছাতে রাজি হয়েছি আপনাকে বিয়ে করতে ।
তাহরীম: আমি ভালো করে জানি আসান তুমি নিজের ইচ্ছায় রাজি হওনি।ওদের ভয়ে রাজি হচ্ছো।ওদের ভয় পেও না আসান।আমি আছি তো।আমি তোমার পাশে আছি।
আসান: আমি ভয় পেয়ে রাজি হইনি প্রফেসর সাহেব।আমি স্বইচ্ছায় আপনাকে বিয়ে করতে চাই কারণ আমি আপনাকে ভালোবাসি।

ব্যাস তাহরীম স্যার আমার কথা শুনে আর কিছু বলার অবকাশ পেলেন না বরং উনি তাহসান ভাইয়ের দিকে কঠিন দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন।উনার মৌনতা কে সকলে সম্মতি ধরে নিয়ে বিয়ের কার্যক্রম শুরু করলো।কাজী আর ইমাম কে ডেকে আনা হলো।দুপুর দুটোর বদলে সকাল দশটায় কাজী ডেকে আনায় কাজী সাহেব অবাক হলেন।

প্রথমে ইমাম হুজুর বিয়ে পড়ালেন।আমি কবুল বলার পর যখন তাহরীম স্যার কে কবুল বলতে বলা হলো তখন উনি একবার ঘাড় ঘুরিয়ে তাহসান ভাইয়ের দিকে তাকালেন।তাহসান ভাই তাহরীম স্যারের দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকালেন।অতঃপর একে একে আমরা দুজনই তিনবার কবুল বলে বিয়ে সম্পন্ন করলেন।

এবার পালা রেজিস্ট্রির। স্যার রেজিষ্ট্রি করতেই কাজী আমার দিকে পেন আর কাগজ এগিয়ে দিলেন।আমি কলম হাতে নিয়ে হাতটা রেজিষ্ট্রি পেপারের উপর রাখলাম।আমার হাত অসম্ভব পরিমাণে কাপছে আর ভয় ভয় করছে।

ভাবছি বিয়ের পরবর্তী জীবন আমার কেমন হবে। স্যারকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে উনি নিজের ইচ্ছায় বিয়েটা করছেন না বরং আমার রাগ দেখিয়ে কিংবা উপায় না পেয়ে করছেন।হয়তো বিয়ের পর আমার জীবনটা উনি দুর্বিষহ করে তুলবেন।

আমার সাইন করতে দেরি হচ্ছে দেখে এবার অর্ণব আমায় তাড়া দিলেন,
অর্ণব: কি আসান যার সঙ্গে তোমার এত মধুর সম্পর্ক,যাকে তুমি ভালোবাসো, যাকে কবুল বলে স্বামী হিসেবে মেনে নিলে তার সঙ্গে একটা ম্যারেজ রেজিষ্ট্রি পেপার সাইন করতে ভয় পাচ্ছো? সো স্যাড…

অর্ণব এর কথা শেষ করবার আগে আমি তড়িৎ গতিতে খসখস আওয়াজ করে সাইন করে দিলাম। সাইন করে অর্ণবের দিকে তাকালাম।উনি এক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।উনার চোখে খুব কাছের কাউকে পাওয়ার আকুতি দেখতে পাচ্ছি ।উনি এখনও শান্ত ভঙ্গিতে বসে আছেন আমার আর তাহরীম স্যারের মুখোমুখি হয়ে।উনার মত রগচটা মানুষ যে এভাবে শান্ত ভঙ্গিতে বসে থাকবে সেটা ধারণারও অতীত।সম্পর্কে তাহরীম স্যার আর অর্ণব এককালীন বন্ধু যেটা আমি কলেজে অ্যাডমিশন নেওয়ার আগে ছিল তবে আমি অ্যাডমিশন নিতেই হঠাৎ উনাদের বন্ধুত্বে চির ধরলো আর এত বছরের বন্ধুত্ত্ব ভেঙে গেলো।

রেজিষ্ট্রি হতেই তাহসান ভাই এক অদ্ভুত কান্ড করে বসলেন।এরকম একটা সিরিয়াস মোমেন্ট এ যে উনি এরকম আবদার করবেন সেটা একেবারেই ধারণার বাইরে।উনার সাথে সাথে বাকিরাও অদ্ভুত ভাবে সায় দিল।এই গম্ভীর পরিবেশে উনি বললেন ‘ বিয়ের মতো একটা শুভকাজ সম্পন্ন হওয়াতে মিষ্টি না হলে কি হয়, মিঠাই তো বানতা হ্যা। ‘ উনার বলার সাথে সাথেই ফ্রিজ খুলে একজন প্রতিবেশী মিষ্টি হাজির করল।

আমি শুধু অবাক হয়ে বসে বসে সকলের মিষ্টি খাওয়া দেখছি। যারা একটু আগে আমাকে বের করে দিবে বলে চেঁচামেচি করছিল তারাই এখন আমার বিয়ে উপলক্ষে মিষ্টি খাচ্ছে। জগৎ সংসার বড়ই বিচিত্র। যা দেখা যায় তা হয়না আর যা দেখা যায়না তাই হয়।

অবশেষে বিদায়ের সময় ঘনিয়ে এলো। এজ এক্সপেকটেড ফিরোজা বেগম কান্না করলেন না বরং আমায় শাসিয়ে দিলেন যেন বাবা ফিরে আসার পরও যেন এই বাড়ির চৌকাঠ না মারাই।আমার মুখও উনি দেখতে চাননা।এতক্ষণ ব্যপারটা চুপচাপ দেখলেও উনার এই কথা ডাক্তার সাহেব থুক্কু তাহরীম স্যারের কানে যেতেই উনি আমার পাশে এসে দাড়ালেন আর আমার বাম হাতের কব্জি উনার ডান হাত দিয়ে ধরে ফিরোজা বেগমের দিকে তাকিয়ে শক্ত গলায় বললেন,
তাহরীম: তাহরীম মেহমাদ এতটাও অক্ষম নয় যে নিজের স্ত্রীর ভরণ পোষণ এর জন্য স্ত্রীকে বাপের বাড়ি পাঠাবে। আসান আপনার বাড়ির চৌকাঠও মারাবেনা এটা তাহরীম মেহমাদের ওয়াদা রইলো বলেই স্যার আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে এলেন।আমাদের পিছন পিছন তাহসান ভাইও এলেন।

গাড়ির কাছে আসতেই তাহসান ভাই দরজা খুলে দিলেন গাড়ির আর আমায় ইসারা করলেন ভিতরে ঢুকতে।আমি ভিতরে ঢুকে পাশের সিটে বসে অপেক্ষা করতে লাগলাম ডাক্তার সাহেবের বসার জন্য।কিন্তু আমাকে আর তাহসান ভাই কে অবাক করে দিয়ে উনি গিয়ে ড্রাইভিং সিটে বসে পড়লেন। অগত্যা তাহসান ভাই আমার দিকে অসহায় দৃষ্টি নিক্ষেপ করে উনার পাশে গিয়ে বসলেন।বিনা বাক্য ব্যয়ে ডাক্তার সাহেব থুক্কু তাহরীম স্যার গাড়ি স্টার্ট দিলেন।

আমি গাড়ির জানালাটা খুলে দিলাম খানিকটা ।এখন অনেকটা ভালো লাগছে।পুরো গায়ে ভারী শাড়ি জড়ানো তাই অসহ্য লাগছিল। জানালা দিয়ে খুব সুন্দর গা ঠান্ডা করা বাতাস আসছে যাতে আমার মনটা আপনিতেই ভালো হয়ে গেলো।জানালার দিকে আরেকটু এগিয়ে গিয়ে প্রকৃতি অনুভব করতে লাগলাম।এই মনোমুগ্ধকর পরিবেশে আমার নিজের পরবর্তী জীবনের কথা ভাবতেই ইচ্ছা করছে না।ইচ্ছা করছে শুধু সময় টা কে এখানেই থমকে দিতে।সেটা যদি পারতাম তাহলে তো ভালো হতো।

প্রকৃতি দেখতে দেখতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়লাম সেটা বুঝতেই পারলাম। হঠাৎ মনে হলো আমার ঘুমের মাঝে কেউ আমায় শূন্যে উঠিয়ে নিয়েছে।নিজেকে বাতাসে ভাসমান অবস্থায় অনুভব করতেই ঝট করে চোখে খুললাম। চোঁখ খুলতেই যা দেখলাম তারপর মনে হলো আমার চোখে অন্ধ হয়ে গেছে নাহলে ডাক্তার সাহেব আমায় কোলে নিবেন তাও আবার ওনার সজ্ঞানে সেটা তো একেবারেই অসম্ভব।

কিন্তু ব্যপারটা ফিল্মেটিক হলেও এটাই সত্যি। ডাক্তার সাহেব আমায় কোলে নিয়ে নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে বড় একটা এপার্টমেন্ট এর গ্রাউন্ড ফ্লোরের লিফটের সামনে এসে দাড়ালেন আর তাহসান ভাই কে ইসারা করলেন।তাহসান ভাই তাহরীম স্যারের ইসারা দেখে লিফটের বোতাম চাপলেন কিন্তু লিফট নিচে এলোনা।লিফট সেই পাঁচ তলায় আটকে আছে। পরে তাহসান ভাই গার্ড কে ডেকে জিজ্ঞেস করে জানতে পারলেন যে লিফট নষ্ট,কাল ঠিক করা হবে।

এবার ভাইয়া তাহরীম স্যারের দিকে তাকিয়ে বললেন,
তাহসান: ভাই তোর বউ লেংড়া নয়,ওকে নামিয়ে দে। ও পায়ে হেঁটে সিড়ি দিয়ে উঠতে পারবে।আমাদের ফ্লাট চার তলায় আর এতটা উপরে তুই ওকে নিয়ে উঠতে পারবি না।

তাহসান ভাইয়ার কথা শুনে আমার কান গরম হয়ে গেল।আমি ডাক্তার সাহেবের কোল থেকে নামার জন্য উশখুশ করতে লাগলাম।আমি বেশি নড়াচড়া করছি দেখে ডাক্তার সাহেব আমার দিকে কঠিন দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন আর তাতেই আমি চুপসে উনার সঙ্গে সিটিয়ে গেলাম।উনি কোনোকিছু না বলেই আমায় নিয়ে সিড়ি দিয়ে উঠতে লাগলেন আর আমি উনার গলা জড়িয়ে ধরলাম।তাহসান ভাইয়াও আমাদের পিছু নিলেন।

উনি আমায় নিয়ে সিড়ি দিয়ে উঠছেন।মনে হচ্ছে উনি শাহরুখ আর আমি দীপিকা।একেবারে শাহরুখের সেই চেন্নাই এক্সপ্রেস মুভির সিন। ছিঃ ছিঃ এসব আমি কি ভাবছি।এই খারুস ডাক্তার সাহেব কখনোই SRK হতে পারে না।SRK তো রোমান্স কিং আর এই খারুস ডাক্তার সাহেব তো গোমড়া মুখো বনমানব। বনমানব বলার আসল কারণ হলো উনার এই বিশালাকার দেহী হাতের চাপে আমার কোমর তো ব্যাথা হয়ে যাচ্ছে।

উনার দিকে বেসরমের মত তাকিয়ে থাকতে থাকতে কখন যে শশুর বাড়ির সামনে এসে পড়েছি বুঝতে পারিনি।আমার সম্বিত ফিরলো তাহসান ভাইয়ার কথায়।তাহসান ভাই ঠোঁটে দুষ্টু হাসি ঝুলিয়ে টিটকারী মেরে বললেন,
তাহসান: কি গো আসান বর কে দেখার জন্য তো জীবন পরে আছে,এখন তো আমাদের দেখো।তোমার শশুর শাশুড়ি, ভাসুর জা সকলেই অপেক্ষায় আছে কখন তুমি তাদের দিকে তাকাবে। বর কে নাহয় ঘরে গিয়ে দেখো।পুরো রাত তো পরেই আছে।

ভাইয়ার কথায় বিশেষ পাত্তা দেই না কারণ এতক্ষণে বুঝা হয়ে গেছে উনি মানুষটা বেশি সুবিধার নয়,এক নাম্বার লাজ শরমহীন মানুষ।আমি সামনের দিকে তাকিয়ে দেখি মধ্য বয়স্ক দুই মহিলা আর পুরুষ এবং তাদের সাথে হয়তো মাস চারেক গর্ভবতীর এক মেয়েও দাড়িয়ে আছে কারণ মেয়েটার পেট খানিকটা ফুলে আছে যা এই বিষয়ে অজ্ঞ নাহলে কেউ বুঝতে পারবে না।। মধ্য বয়স্ক দুজন কে দেখে ধারণা করে নিলাম তারা আমার শশুর শাশুড়ি হবেন আর সেই প্রেগনেন্ট মেয়েটা হয়ত আমার জা।

তাহসান: মা ওমাগো তোমার ছোটো ছেলে অবশেষে বিয়ে করেছে গো।এখন আর সে দেবদাসের বেশে ঘুরে বেড়াবে না আর নিজেকে পিওর সিঙ্গেলও বলতে পারবে না।তোমার ছোটো ছেলেও অবশেষে বিবাহিতদের খাতায় নাম লিখিয়েছে।

ভাইয়ার কথা কানে আসতেই চোখ মুখ খিচে বন্ধ করে নিলাম কারণ এখন হয়তো টিভি সিরিয়ালের ভিলেন শাশুড়িদের মত আমার শাশুড়ি মাও বলবেন ‘ না এটা হতে পারেনা।মানিনা এই বিয়ে আমি।এই মেয়ে আমার ছেলের বউ হতে পারে না, কিছুতেই না। ‘

কিন্তু কিছুক্ষণ বাদে আমায় অবাক করে দিয়ে আমার শাশুড়ি মা বললেন,
মা: বিয়ে যখন করেছে তখন তো আর বাইরে দার করিয়ে রাখা যায় না।রিমা তুমি ওদের বরণ করে ঘরে আনো আর তাহরীমের বউ কে তাহরীমের ঘরে দিয়ে এসো…বলে উনি আর এক মিনিটও ওখানে দাড়ালেন না। সোজা নিজের ঘরে চলে গেলেন।

শাশুড়ি মায়ের চলে যাওয়াতে শশুর বাবা আমার দিকে তাকিয়ে অপ্রস্তুত হেসে বললেন,
বাবা: ও কিছু না।তুমি কিছু মনে করো না।আসলে হুট করে তাহরীম বিয়ে করেছে যেটা তাহসানের মায়ের জানা ছিলনা তাই শকটা মেনে নিতে পারেনি।একটু সময় দাও সেও স্বাভাবিক হয়ে আসবে,তুমি শুধু একটু মানিয়ে নাও।

শশুর বাবার কথায় আলতো হেসে সায় দিলাম।অতঃপর আমায় বরণ করে ঘরে তুললেন রিমা ভাবী।এতকিছু ঘটে গেলো তবুও এতক্ষণে টু শব্দটিও করলেন না ডাক্তার সাহেব।উনি স্থানুর মত দাড়িয়ে আছেন।উনার এরকম হাবভাব আমার ঠিক ঠেকছে না।আমায় উনার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে রিমা ভাবী দুষ্টু হেসে বললেন,
রিমা: কি গো দেবর বউয়ের দেখি তর সইছে না?আমি যাই তাড়াতাড়ি ঘরে দিয়ে আসি।

ভাবীর কথায় তাহসান ভাই হাসতে লাগলেন যেন ভাবী কোনো জোকস বলেছে।এদের হাসাহাসি দেখে আমি উনাদের দিকে তাকালাম। জামাই বউ দুটোই লজ্জা শরমহীন।আমি আর কথা না বাড়িয়ে মাথা নিচু করে রাখলাম।

তাহসান ইসারায় রিমা কে বললো আর যেন বেচারি কে লজ্জা না দেয়।অগত্যা আসান কে নিয়ে তাহরীমের ঘরে চলে এলো আর ওর শাড়ী বদলে দিয়ে ওকে বাইরে নিয়ে এলো।এরপর সারাদিন কেটে গেলো আর এর মাঝে আসান আর তাহরীমের কোনো কথা হলোনা।

তারপর রাতে রিমা তাহরীমের ঘরে আসান কে বধূ বেশে ভালো করে বসিয়ে দিয়ে এলো। আর সাথে বাসর রাতের বিভিন্ন টিপস তো আছেই।রিমার টিপস শুনে আসান বেচারি ঘাবড়ে গেছে।

~ চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে