তুমি নামক অক্সিজেন পর্ব-০৮

0
1428

#তুমি_নামক_অক্সিজেন
#পর্ব_৮
Tahrim Muntahana

নাশিনকে ডাক দিয়ে মেয়েগুলো আমতা আমতা করছে বুঝতে পারছে না কি দিয়ে শুরু করবে। নাশিন এইবার বিরক্ত হয়ে গেল

জি বলুন -নাশিন

কি করে যে বলি আসলে আসলে -আদিবা

মেয়ে গুলোর আমতা আমতা দেখে আনহা আর থাকতে পারলো না নাশিনের পাশ ঘেসে লেপটে দাঁড়ালো। নাশিন চমকে তাকিয়ে আছে আনহার দিকে কি করতে চাইছে বুঝতে পারছে না। হঠাৎ অভিমানি মেয়েটা সবকিছু ভুলে তার কাছে এটি ভাবতেই মনের মধ্যে শিহরন বয়ে গেল। নাশিনের দিকে কটমট চোখে তাকিয়ে মেয়েগুলোকে বলল

আপু কি বলবেন আমাকে বলুন। আসলে কি হয়েছে কি উনি না খুব লাজুক। মানে আমি বাদে সব মেয়েকেই এলার্জি মনে করে -আনহা

আপনি কে হন আপু -সুমনা

নাশিন তো হতভম্ব হয়ে চেয়ে আছে কি বলে এই মেয়ে সে বলে লাজুক। মেয়েটির কথা শুনে আনহার রাগ উঠে গেল। তবুও জোরপূর্বক হেসে বলল

আপনার বুজা উচিত ছিলো আপু যখন আমি বলেছি আমি বাদে সব মেয়েতে উনার এলার্জি আছে। তারমানে তার কোনো স্পেশাল মানুষ মানে হৃদয়ের গহীনে যে মানুষটা থাকে সে। এখন ফটাফটা বলুন তো কি জিজ্ঞেস করতে ডেকেছেন

আসলে হৃদান চৌধুরী সম্পর্কে -দিয়া

ওহ এই কথা আচ্ছা বলছি শুধু হৃদান চৌধুরী কেন ওখানের সবার কথায় বলব চলুন বসি -আনহা

নাশিন তো এতক্ষন ঘোরের মধ্যে ছিলো। যখন হেচকা টানে কেউ চেয়ারে বসায় তখন ঘোর কাটে। স্বাভাবিক হয়ে বসে। এই মেয়েকে তার হাড়ে হাড়ে চেনা। অনেক দিন পর আবার আগের ফর্মে ফিরে এসেছে তো তাই একটু অবাক লেগেছিলো। নাশিন ভালো করেই বুঝেছে কিছু বললেই এই মেয়ে এখন তার ইজ্জত সব মাটিতে মিশিয়ে দিবে।

এখন আপু বলো একে একে কি কি জানতে চাও -আনহা

হৃদান চৌধুরীর কোনো রিলেশন আছে -আদিবা

আমি বলি প্রথম থেকে। আমি কনের ছোট বোন মানে হৃদান চৌধুরীর ছোট বোন তাই সব জানি। রিলেশন নেই মানে ওই যে দেখছো কেমন করে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে। হৃদিতা চৌধুরীকে তো চিনো। সবাই চিনে তোমরা চিনবে না কেন।যাই হোক ওই হৃদিতা চৌধুরী নামক মেয়েটি না আমার ভাই মানে হৃদান চৌধুরীর অক্সিজেন। তোমরা জানো তাইনা যে অক্সিজেন ছাড়া নিশ্বাস নেওয়া যায় তাহলে বুঝো। কিন্তু এটা বলতে পারি যে রিলেশন নেই কিন্তু ভাইয়া প্রচন্ড ভালোবাসে -আনহা

তাহলে একটা চান্স নেওয়ায় যায় বলো -আদিবা

সাবধান একবার যেটা বলছো থাক দ্বিতীয় বার এইকথা উচ্চারণ করো না হৃদু আপু না তোমাদের একটাকেও বাঁচিয়ে রাখবে না তার হৃদরাজের দিকে চোখ দিলে। হৃদপরী যেমন হৃদরাজের অক্সিজেন তেমনি হৃদরাজ ও হৃদপরীর অক্সিজেন। তাই হৃদান চৌধুরী থেকে দূরে থাকো। আর আমার সাথে যেটা দেখছো ক্যাবলাকান্ত এইটা হলো ওয়ান এন অনলি মাই ম্যান। ওইযে দেখছো রোহানী আপু ওইযে পিয়াস ভাইয়ায় অক্সিজেন। ওইযে রাহি আপুকে দেখছো সোহান ভাইয়ার অক্সিজেন। কিন্তু বেচারী দুজন শুধু ঝগড়াই করে যাচ্ছে মনের কথা বলছে না। পরশ চৌধুরীকে তো চিনো রাইসা আপুর ফিয়ন্সে। রাইসা আপু তো পরশ ভাইয়ার কাছে একটা মেয়েকেও ঘেসতে দেয় না।শেষ হলো সাগর ভাইয়া আধির আর সাহিল ভাইয়া। সাহিল আর আধির ভাইয়া তোমাদের ছোট হবে আর সাগর ভাইয়াও মনে হয়না সিঙ্গেল আছে। সো এখানে কোনো চান্স নেই। বিয়ে বাড়ি ইনজয় করো আপুরা। আর হ্যাঁ ছেলেদেরকেও একটু বলে দিও ওরা কিন্তু মুটেও সাধাসিধে না। আসি আপুরা -আনহা

আনহার কথা ওরা হ্যাবলার মতো শুধু শুনলই কিছু বলল না। কথার মধ্যে থ্রেট দিয়েছে স্পষ্ট বুঝেছে। আনহা একটু যাওয়ার পর দেখলো নাশিন এখনো তার দিকে তাকিয়ে বসেই আছে।

নাশু বেইবি তুমি আসবে না আমি আসবো -আনহা

আনহার কথায় নাশিনের কাশি উঠে গেছে। তাড়াতাড়ি উঠে চলে গেল আনহাও হাসতে হাসতে চলল। আহ মনটা খুব ফ্রেশ লাগছে। মনে মনে হৃদিতাকে খুব ধন্যবাদ দিলো। হৃদিতা যদি না বুঝাতো তাহলে কষ্টের মধ্যেই থাকতো।

ফ্লাসব্যাক

সকলেই যখন আনন্দে রেড়ি হচ্ছিল আনহা তখন মনমরা হয়ে বসে ছিলো। তা দেখে হৃদিতা আনহাকে অন্য ঘরে নিয়ে গিয়ে ভালো করে বুঝায়।

শুন আনহু নিজের মানুষ টাকে সব সময় নিজের কাছে ধরে রাখতে হয়। আগে কি হয়েছে সবটা ভুলে যা। আর আগে নাশিন ভাইয়া তোর সাথে যা করছে তা হয়তো ঠিক হয়নি তোকে ভালো করে বুঝানো উচিত ছিলো কিন্তু আবার ঠিক ও বলা যায় কারণ তোর সামনে পুরো ভবিষ্যত পড়ে আছে আর তুই সেদিকে খেয়াল না করে শুধু ভাইয়াকে নিয়ে পড়ে থাকতি। সব সময় কিভাবে ভাইয়াকে জ্বালাবি সেটা ভাবতি। ভাইয়া তোকে পড়াশুনায় কনস্রেনটেট করানোর জন্য তোকে ভাইয়ার সামনে না যাওয়ার জন্য বলেছিলো। তুই ভাইয়ার সাথে অমানান বলেছিলো। সেটা তোর ভালোর জন্য। তুই তখন আবেগ এত প্রশ্রয় দিতি যার কারণে তোকে বুঝালেও তুই বুঝতি না। ভাইয়া তোকে খুব ভালোবাসে আনহু। তাই এখন যা করবি ভালোটাই করবি। পড়াশুনার পাশাপাশি প্রেম করবি কেউ বাঁধা দিবে না।

আমি আর ওই লোকটাকে ভালোবাসি না
হৃদিআপু

তাই আচ্ছা তাহলে আমার ভাইটাকে তাড়াতাড়ি বিয়ে করিয়ে ফেলি তোর জন্য কেন অপেক্ষা করবে

আমার জন্য তোমার ভাইয়া অপেক্ষা করছে

তা না হলে কি রাইসার জন্য তো পরশ ভাইয়া অপেক্ষা করছিলো যে রাইসা ভালোবাসার কথা বললে বিয়ে করে ফেলবে কিন্তু রাইসা ভয়ের জন্য বলছিলোই না শেষ মেষ প্লেন করে বলালাম এখন নাশিন ভাইয়া আনহু পিচ্চির প্রেমে মজে বুড়ো হয়ে যাচ্ছে। তা পিচ্চি যেহেতু ভালোবাসেই না তো কি করার অরনি সোহা আপুর মধ্যে কাউকে ভাবি বানাবো

তোমার ভাইকে খুন করে ফেলবো বলে দিলাম। এই আনহা চৌধুরীর সাথেই তোমার ভাইয়ার থাকতে হবে ওই নাশিনকে তো পরে দেখে নিবো

হ্যাঁ দেখবি তো ভালো করে দেখা লাগবে। আরে বিয়েতে কত মেয়ে আসবে বুঝতে পারছিস ব্যাপার টা

ওহ হো আমার তো মনেই নাই যাই আমি তাড়াতাড়ি রেড়ি হয়ে যায় কোনো শাকচুন্নি কেই পিছে দেখলে খবর খারাপ করে দিবো

আনহা বলেই চলে গেল আর হৃদিতা হাসতে হাসতে শেষ যাক বাবা প্লেন কাজে দিয়েছে।

বর্তমানে হিয়ার সাজ কমপ্লিট হলে নিচে আসছে ডেং ডেং করে হেটে। গিয়েই হৃদানের সামনে দাড়ালো। যে করেই হোক ইমপ্রেস করাতেই হবে। হৃদানের বিরক্তিতে কপাল কুচকালো।

হৃদান বেব দেখো তো আমাকে কেমন লাগছে

আয়নাই দেখিস নি কেমন লাগছে। আমাকে কি আয়না মনে হয় তোর

এমন ভাবে বলছ কেন হৃদান বেবী দেখ আমাকে একটু বলো আমাকে সবার থেকে বেশী সুন্দর লাগছে না

এইসব কি পড়েছিস হ্যাঁ এটা কি বিদেশ পেয়েছিস। দেখ তো অরনী সোহা পিয়ানিকে ওরা তো এব্রুড থেকে এসেছে কিন্তু ওদের পোষাক দেখছিস সবার সাথে মিলিয়ে কি সুন্দর শালীনতা বজায় রেখে শাড়ি পড়েছে আর তুই মনে হচ্ছে এটা বাংলাদেশ না। আর কখন থেকে দেখি হৃদান হৃদান করছিস। এই তোর কত বছরের বড় আমি হ্যাঁ একটা ঠাটিয়ে চড় দিবো। ভাইয়া বলে ডাকবি। এর পরে যদি নাম ধরে ডাকতে শুনছি সত্যি থাপ্পড় খাবি। যাতো সর মেজাজটাই খারাপ করে দিলো

হৃদান বিরক্তি নিয়ে চলে গেল ওইখান থেকে হিয়া রাগে অপমানে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে দাড়িয়ে আছে। হৃদিতা সহ বাকি সবাই হাসছে মুখ টিপে। হৃদিতার তো হৃদানকে চুমু দিতে ইচ্ছে করছে। হৃদিতা একটু জোরেই হেসে দিলো তা দেখে মনে হলো আগুনে ঘি দেওয়ার পর যেমন জ্বলে উঠে তেমনি হিয়াই রেগে ধপাধপ পা ফেলে চলে গেল। সামনে থেকে রিয়া আসছে ওইদিক দিয়ে ওর সাথে এতক্ষন আনহা ছিলো। হৃদিতার পাশেই বসা ছিলো রিয়া কিন্তু একটা দরকারে রুমে গিয়েছিলো। হৃদিতা যেতে চেয়েছিলো কিন্তু আনহা গেল রিয়ার সাথে। আনহা নাশিন কে লক্ষ্য করতে গিয়ে রিয়ার হাতটা আলগা করে ধরেছে পাশেই হিয়া যাচ্ছিল রিয়ার সাথে ধাক্কা লেগে পড়ে গেল অবশ্যই রিয়াও পড়ে যেত যদি আনহা না ধরতো। হৃদিতা দৌড়ে গিয়ে রিয়াকে জড়িয়ে ধরল খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলো। এই মেয়েটা এক বছর ধরে তো কম কষ্ট সহ্য করল না। তাই সবাই আগলে রাখে।

ওই স্টুপিড় চোখে দেখো না ইডিয়েট। আর ওহ হো তুমি তো আসলেই চোখে দেখো অন্ধ খাঁটি বাংলায় যাকে বলে কানা না না কানি। তুমি কোন সাহসে ধাক্কা দিলে আমাকে। কানি কোথাকার

রিয়ার চোখ থেকে টপটপ করে পানি পড়ছে। ওর সাথে কেউ কখনো এইভাবে কথা বলতো না তার অসুস্থতা নিয়ে। যথেষ্ট দূর্বল রিয়া। হৃদিতার তো ধপ করে আগুন জ্বলে উঠল মাথায়। সবাই লক্ষ্য করছে ব্যহাপারটা। দূর থেকে এসব একজন দাড়িয়ে দেখছে। আর রাগে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে রেখেছে। চোখ দিয়ে মনে হচ্ছে আগুন বের হবে। এখানে বাড়ির বড়রা কেউ নেই। যখন হলুদ ছোয়াবে তখন আসবে। এই সুযোগে হিয়া ভেবেছিলো অপমান করবে ওদেরকে। ওত সহজ নাকি। হৃদিতা গিয়েই ঠাসস করে চড় বসিয়ে দিলো। উপস্থিত সবাই হতভম্ব হয়ে গেছে। হিয়া রেগে হৃদিতার দিকে তাকাতেই লাল চোখের দিকে আর তাকাতে পারলো না ভয় পেয়ে গেছে। শুধু কানে আলোর একটা কথায় বাজছে ও কিন্তু ওতটা সাধাসিধে না যতটা দেখছিস। হিয়া ভেবেছিলো ওকে এমনি মিথ্যে বলেছে কিন্তু সত্যিই যে হবে ভাবেনি।

সেদিন আমার সাথে যা করেছ আমি কিছু বলেনি বলে আমাকে অবলা ভেব না। আমি নিজে কতটা ডেঞ্জারাস সেটা একবার দেখানো শুরু করলে তুমি কেন তোমার হোল ফ্যামিলিটাই ফিনিস হয়ে যাবে। তাই আমার রিয়ু কি আমার কাছের মানুষদের থেকে দূরে থাকো। এতেই তোমার ভালো হবে -হৃদিতা

বলেই হনহন করে বেরিয়ে গেল রিয়াকে নিয়ে। হিয়াও রেগে রুমে চলে গেল। রোহানি রাইসা রাহি সব ঠিক করার জন্য নাচ গানের আয়োজন করল। বিয়েতে কোনো ঝামেলা না হলেই হয়। হিয়া রুমে গিয়ে ফোন দিল একজনকে

কখন রওনা হবি

এই তো আপু আধঘন্টা লাগবে। কিল সকালে পৌঁছে যাবো

আচ্ছা আয় তারপরেই খেলা শুরু

হ্যাঁ বেশী বার বেড়েছে বাস্কেটবল খেলবে ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়ন হবে হা আমার জায়গা কেউ নিতে পারবে না। অনেক প্লেন করে চ্যাম্পিয়ন হয়েছি

হ্যাঁ বেশী বাড়লে আগের টার মতো ছেঁটে দিবো

হুমম আগে আসি আমি তারপরেই খেলা শুরু

আচ্ছা বাই কাল দেখা হচ্ছে

হলুদে আর কোনো ঝামেলা হয়নি। সবাই সব কাজ করে রেখেছে আগে থেকেই। তাই বিকেলের দিক দিয়ে রেস্ট নিয়ে সন্ধ্যায় মেহেন্দির আয়োজন করা হয়েছে। সবাই মেহেন্দির জন্য রেড়ি হয়ে নিলো। আজকে বর সহ বরের বন্ধু কাজিনরা আসবে সবাই। কালকে কিছু সমস্যার কারণে কমজন এসেছিলো। মেয়েরা সবাই লেহেঙ্গা পড়েছে ছেলেরা পাঞ্জাবী। আলোকে গোল মাঝখানের সোফায় বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। বরের বাড়ি লোকজন আসলেই শুরু হবে। পার্লারের লোকজন ও চলে এসেছে। দশমিনিট পর বরের বাড়ি লোকজন চলে আসল। হৃদানকে কোথাও দেখা যাচ্ছে না। হৃদিতা এদিক ওদিক খুঁজছে। আলোর হবু বর নিয়ন সবার সাথে কুশল বিনিময় করে আলোর পাশে বসল। আলো একটু তাকিয়ে লাজুক হেসে মাথা নিচু করে নিলো। কারণ নিয়ন আলোর দিকে অপলক চেয়ে আছে। হালকা সাজে কতটা অপরুপা লাগছে। মন চাচ্ছে এখনি বিয়ে করে ফেলি। কাল পযর্ন্ত তর সইছে না। নিজের ভাবনার উপর নিজেই মুচকি হাসলো। আসে পাশের সবাই মিটিমিটি হাসছে। নিয়ন সর্বপ্রথম মেহেদী পড়িয়ে দিলো আলোর হাতে। তারপর পার্লারের মেয়েটা দেওয়া শুরু করল। পিয়াস তো আগেই কাজ সেরে ফেলছে। রাইসা আর আনহা সেই কখন থেকে দুই ভাইকে খুঁজছে পাত্তায় পাচ্ছে না। হঠাৎ দেখতে পেলো গেইট দিয়ে দুইভাই ডুকছে তা দেখে ওরাও বসে পড়ল সোফায়। ঘরে আসতেই হাতে মেহেদী ধরিয়ে দিয়েছে পরশ খুশি মনে করলেও নাশিন আনহার ব্যবহার টা ঠিক হজম করতে পারছে না। এখন কিছু বললেই আনহা রেগে যাবে এই রিস্ক নেওয়া যাবে না। গোলামেলা করে দিয়ে যাচ্ছে যা পারে। রাহি সোহানকে খুব জ্বালাচ্ছে। সোহান উপরে উপরে কঠিন থাকলেও মনে মনে খুব হাসছে। দুপুরের ঘটনায় রিয়া জেদ ধরে বসে আছে বাইরে যাবে না। তাই কেউ আর জোর করেনি। হৃদিতাও যেতে না চাইলে রিয়া ইমোশনাল কথা বলে পাঠিয়ে দিয়েছে। হৃদিতা খুঁজতে খুঁজতে শেষমেষ হৃদানের ঘরে চলে গেল। গিয়ে দেখল হৃদান উপড় হয়ে ঘুমে বিভোর। দেখেই রাগ হলো হৃদিতার। কখন থেকে খুঁজে খুঁজে হয়রান আর সে পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছে। তাই মাথায় দুষ্ট বুদ্ধি খেলল। এগিয়ে গেল বিছানার দিকে। ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে কিছু সময়ের জন্য শয়তানি বুদ্ধিটা সাইডে রাখলো। ইশশ কি সুন্দর করে ঘুমাচ্ছে হৃদরাজ। মন ভরে দেখেনিল। মনে হচ্ছে এইভাবেই সারাজীবন দেখে যেতে পারতো।

ইশশ এত সুন্দর করে ঘুমাও কেন তুমি হৃদরাজ। টুক করে চুমু দিতে ইচ্ছে করছে একটা। না যদি জেগে যাও তখন কি একটা অবস্থা হবে। এত সুন্দর হতে কে বলেছিলো তোমাকে সব শাকচুন্নিরা শুধু চেয়ে থাকে। মনে হয় শাকচুন্নি গুলোকে শেওলা গাছে উল্টো করে ঝুলিয়ে রাখি। তারপর হাবাগোবা বিটকেল ভূতের সাথে বিয়ে দিয়ে দিবো। আমি আর তুমি সেই বিয়ের চিফ গেস্ট থাকবো। কি মজা হবে। এই যা আমি কি ভাবছি এসব। তুই পাগল হয়ে গেছিস হৃদিতা। না না পাগলি। আরে কি বলিস হৃদিতা তুই কেন পাগলি হবি তোর হৃদরাজ এত সুন্দর প্রেমে তো পড়তেই ইচ্ছে করে তাতে তোর কি। প্রেম পড়বি তাতে কার শালার কি। আমার হৃদরাজ তো আমারি। হুমমম কাউকে দিবো না

হৃদিতা হৃদানের ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে এসব বলছে আর মুচকি মুচকি হাসছে। ও এটা বুঝতে পারছে না সে যাকে নিয়ে এসব বলছে সে সব কথা শুনছে। হৃদান অনেক আগেই উঠে গেছে। মাথায় হালকা ব্যাথা করছে বলে চোখ বন্ধ করে শুয়ে ছিলো। ঘরে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে যেই না উঠতে যাবে ওমনি ওর মনে হলো এটি ওর হৃদপরী। তার জন্য চোখ বন্ধ করে ছিলো। সত্যি সত্যি হৃদিতা ছিলো আর এসব কথা শুনে হৃদানের এত হাসি পাচ্ছে কি বলবে।

থাক একটু পর এসে ঘুম থেকে তুলবনি। এত সুন্দর করে ঘুমাচ্ছে ঘুমটা ভাঙতে ইচ্ছে করছে না।

এটা বলেই যেই না হৃদিতা উঠে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়াবে হৃদান খপ করে হাতটা ধরে টান মেরে বিছানায় ফেলে দেয়। আকস্মিক এমন হওয়ায় হৃদিতার এখনো বোধগম্য হচ্ছে না কি থেকে কি হয়ে গেল। চোখ বড় বড় করে হৃদানের দিকে একবার তাকাচ্ছে আরেকবার নিজের দিকে তাকাচ্ছে। হৃদান হৃদিতার আচরণ দেখে নিঃশব্দে হাসল।

চুমু দিতে ইচ্ছে করছে তো দাও না কে না করেছে হৃদপরী

হৃদানের কথা শুনে হৃদিতা বুঝে গেছে যে এতক্ষন যা যা বলেছে সব শুনেছে তাই লজ্জায় নিচের দিকে তাকিয়ে রইল। তা দেখে হৃদান মুচকি হেসে তার হৃদপরীকে দেখায় মনোযোগ দিলো। লজ্জায় গাল লাল হয়ে কিরকম ফোলা ফোলা হয়েছে। ইশশ কি দেখতে লাগছে। হঠাৎ হৃদান টপ করে গালে কিস করে বসল। হৃদিতা বিস্ময়ে মুখ হা করে চেয়ে আছে। হৃদানের দুষ্ট হাসি দেখে হৃদিতা আর থাকতে পারলো না হৃদান কে ঠেলে দিয়ে বিছানা থেকে উঠেই এক দৌড়ে বাইরে চলে এসেছে। হৃদান এইবার জোরেই হেসে দিলো। কত্তদিন পর এইভাবে হাসল সে। কত্তদিন পর তার হৃদপরীকে কত কাছে থেকে ছুঁয়ে দেখলো ভাবতেই মনে একরাশ আনন্দ এসে ভর করল। খুশি মনে ফ্রেশ হয়ে রেড়ি হয়ে নিচে গেল।
হৃদিতা নিচে গিয়ে একটু আগের ঘটনা গুলো মনে করে মুচকি মুচকি হাসছে। অন্যদিকে একজন মুগ্ধ হয়ে হৃদিতার দিকে তাকিয়ে আছে। নিয়নের বন্ধু আহির। এখানে আসার পরই আহিরের চোখ হৃদিতার উপর পড়ে। প্রথম দেখায় আসম্ভব ভালো লেগে যায়। এতক্ষন ধরে হৃদিতাকেই খুঁজছিলো যেই না কথা বলতে যাবে ওমনি বোনের কথা শুনে থেমে যায়।

চলবে…?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে