তুমি ছিলে বলেই ২ পর্ব-০২

0
164

#তুমি_ছিলে_বলেই২
#পর্বঃ২
#দিশা_মনি

দীপ্র সবদিক আজ একা হাতে সামলাচ্ছে। তার ছোট বোনের এনগেজমেন্ট বলে কথা তার তো দায়িত্ব অনেক বেশি। এরইমধ্যে তার নজর গেলো নিপুণের দিকে। লাল পেড়ে একটা খুব সুন্দর শাড়ি পড়ে দীপ্রর সামনে দাঁড়ালো নিপুণ। অতঃপর মৃদু হেসে বললো,
“আমাকে কেমন লাগছে ভাইয়া?”

“খারাপ লাগছে না।”

নিপুণের মনটা খারাপ হয়ে গেল। সে আরো ভালো কোন কথা শুনতে চাইছিল। এরইমধ্যে দিশাও সেখানে এলো। নিপুণকে দেখে বললো,
“বাহ, নিপুণ। শাড়িতে তো তোকে খুব সুন্দরী লাগছে।”

নিপুণ এবার খুশি হয়ে গেলো। দিশা এরপর দীপ্রকে বললো,
“ভাইয়া আমার একটা উপকার করতে পারবি?”

“কি উপকার?”

“আমি একটু উপরে যাচ্ছি। বেশিক্ষণ টাইম লাগবে না। মাত্র দশ মিনিট৷ তুমি এদিকটা একটু সামলে নিও।”

“উপরে কি কাজ তোর?”

“তেমন কিছু না। আসলে একটু ওয়াশরুমে যাব।”

“আচ্ছা, ঠিক আছে। যা।”

দীপ্রর থেকে অনুমতি পেয়ে দিশা চলে এলো উপরে। এসেই নিজের ফোন বের করল। ফোনের উপরে এখনো সোহাগ নামটা জ্বলজ্বল করছে। দিশা বিরক্ত হয়ে বললো,
“এই ছেলেটা আমায় একটুও শান্তি দেবে না। ধুর।”

বলেই ফোনটা রিসিভ করল। বিপরীত দিক থেকে সোহাগ উত্তেজিত গলায় বলল,
“এসব আমি কি শুনছি দিশা? আজ নাকি তোমার এনগেজমেন্ট?”

“একদম ঠিক শুনেছ তুমি। আজ সত্যিই আমার এনগেজমেন্ট।”

“তুমি আমার সাথে কিভাবে এটা করতে পারলে? আমি ভালোবাসি তোমাকে?”

“ভালোবাসা মাই ফুট। তুমি কি করে ভাবলে তোমার মতো একটা মিডেল ক্লাস ছেলেকে আমি বিয়ে করবো? তুমি কোন দিক দিয়ে আমার যোগ্য?”

“বাহ, কি সুন্দর কথা বললে। মিডেল ক্লাস ছেলের সাথে প্রেম করা যায় কিন্তু তাকে বিয়ে করা যায়না!”

“এই শোনো, আমার এত ফালতু কথা বলার টাইম নেই। তুমি কিভাবে ভেবে নিয়েছিলে যে আমি তোমায় বিয়ে করব? তুমি কোন দিক দিয়ে আমার যোগ্য? আমার হবু বর কে জানো? অনুপম খান, খান গ্রুপ অব ইন্ড্রাস্টিজ এর মালিক। যেমন বড়লোক তেমনই সুন্দর। তুমি তার নখের যোগ্য নও।”

বলেই ফোন রেখে দিলো দিশা। এদিকে সোহাগ ফোন আছাড় দিয়ে বলল,
“আজ আমার ভাগ্যটাই খারাপ। একে তো আজ প্রথমবারের মতো বাইক রেসে হেরে গেলাম এখন আবার আমার গার্লফ্রেন্ডও আমায় চিট করল। আমি ছাড়ব না দিশাকে। এর শেষ দেখে ছাড়ব।”


মুখোমুখি দাঁড়িয়ে অনুপম ও দিশা। সবাই অপেক্ষা করে আছে সেই মাহেন্দেক্ষণের। অবশেষে সেই সময় এসে উপস্থিতও হলো। অনুপম এনগেজমেন্ট রিং পড়িয়ে দিলো দিশার হাতে। দিশাও হাসিমুখে সবটা দেখলো। সেও একটা ডায়মন্ড রিং পড়িয়ে দিলো অনুপমকে।

সবাই হাততালি দিয়ে এই অনুষ্ঠানটা উপভোগ করতে লাগল। এরইমধ্যে নিপুণ তাকালো দীপ্রর দিকে। অনুপমের স্থলে দীপ্রকে এবং দিশার স্থলে নিজেকে কল্পনা করে সে ভাবতে লাগল। কল্পনা ভাঙতেই নিজেই নিজেকে গালি দিয়ে বলল,
“দূর, এসব কি ভাবছি আমি! দীপ্র ভাইয়া যদি আমার ভাবনা জানতে পারে তাহলে তো আমায় খু**নই করে ফেলবে। যা রাগী লোকটা!”

এরমধ্যে দীপ্রও তাকালো নিপুণের দিকে। নিপুণকে আপাদমস্তক ভালো করে দেখে নিলো। স্মিত হেসে মনে মনে বললো,
“আজ সত্যিই তোকে অনেক সুন্দর লাগছে নিপুণ।”

✨✨
স্নেহা এসে উপস্থিত হলো তার খালা শেফালি বেগমের বাড়িতে। শেফালি বেগম এত রাতে স্নেহার বাড়িতে ফেরা নিয়ে চেচামেচি করতে লাগলেন। তিনি বলতে লাগলেন,
“তোকে আর মানুষ করতে পারলাম না রে স্নেহা! একেই তো সারাদিন এমন পুরুষের বেশভূষা নিয়ে থাকিস যেটা আমার একদম পছন্দ নয় তার উপর রাত ১০ টায় বাসায় ফিরলি। এসব কি হচ্ছেটা কি? তোর মা বেঁচে থাকলে তোর এই অধঃপতন দেখে খুব কষ্ট পেত। একটা মেয়ের জন্য এত রাতে বাইরে থাকা কতটা বিপজ্জনক হতে পারে সেটা তুই জানিস না?”

স্নেহা কোন রিয়্যাক্ট না করে স্বাভাবিক কন্ঠে বলল,
“তুমি তো জানো খালামনি আমি আর পাঁচটা মেয়ের মতো নই। আমি নিজেকে সবসময় স্ট্রং ভাবি এবং সেভাবেই নিজেকে গড়ে তুলেছি। তোমার বা মার মতো নরম নয়। তোমাদের এত কোমলতার জন্যই তো তোমাদের আজ এই দশা।”

শেফালি বেগম আর কিছু বলার মতো খুঁজে পেলেন না। কি বলবেন তিনি? স্নেহার মনে যেই ধারণা তৈরি হয়েছে সেটা তো পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতির জন্যই হয়েছে। শেফালি বেগম নিজের অতীতের কথা ভাবেন। তিনি এবং তার বড় বোন শিউলি দুজনেই নরম স্বভাবের ছিলেন। আর দুজনেই জীবনে ঠকে গেছেন বাজেভাবে। শেফালি বেগম যেই লোকটাকে সবকিছু উজার করে ভালোবেসেছিলেন। যাকে নিজের স্বামীর আসনে বসিয়েছিলেন তিনিই তার সন্তান না হওয়ার কারণে তাকে ছেড়ে অন্য মেয়েকে বিয়ে করে নেন। তালাক দেন শেফালি বেগমকে। অন্যদিকে তার বড় বোন…

অতীতের ভাবনা থেকে বেরিয়ে এলো শেফালি বেগম। স্নেহা ততক্ষণে নিজের রুমে চলে গেছে। শেফালি বেগম একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলেন,
“সব কিছু কেমন জেনো এলোমেলো হয়ে গেছে। আপু তো চেয়েছিল তার মেয়ে শক্ত হোক কিন্তু কখনোই চায়নি এভাবে বখে যাক। কিভাবে এই মেয়েকে আমি আবার ঠিক পথে ফেরাবো? হে আল্লাহ, তুমি আমাকে পথ দেখাও। আমি যদি ওকে ঠিক পথে ফেরাতে না পারি তাহলে ওর জীবনে এমন একজন মানুষকে পাঠাও যে ওকে ঠিক পথে ফেরাবে। ওর মাথায় সবসময় যে প্রতিশোধের নেশা ঘুরছে সেই নেশা থেকে ওকে বের করবে।”

✨✨
স্নেহা নিজের রুমে এসে কাউকে একটা ফোন করে। ফোনটা রিসিভ হতেই সে বলে,
“চৌধুরী বাড়ির আজকের আপডেট কি?”

বিপরীত দিক থেকে কেউ বলে ওঠে,
“আজ তো চৌধুরী বাড়িতে চাঁদের হাট বসেছে। আতিফ চৌধুরী ও দিলারা চৌধুরীর মেয়ে দিশা চৌধুরীর এনগেজমেন্ট আজ। তাও রাজশাহী শহরের অন্যতম ধনী ব্যবসায়ী অনুপম খানের সাথে।”

“তোমাকে যে ঐ দিশা চৌধুরী সম্পর্কে খোঁজ নিতে বলেছিলাম তা তুমি কি খোঁজ নিয়েছ?”

“হুম, নিয়েছি।”

“বলো কি জানতে পারলে ঐ মেয়েটার ব্যাপারে।”

“ও একটা ছেলের সাথে প্রেম করত। ছেলেটা ঢাকার তবে এখানে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করত। সেখান থেকেই ওদের পরিচয় ও প্রেম।”

“তার মানে ঐ ছেলেটাকে ধোকা দিয়েছে?”

“হ্যাঁ, আসলে ছেলেটা মধ্যবিত্ত পরিবারের তো তাই।”

স্নেহা বিদ্রুপাত্মক হেসে বললো,
“এমন তো হবেই। রক্ত তো কথা বলবেই। রক্তের দোষ না।”

“সেটাই।”

“আচ্ছা, তুমি কি দিশার প্রেমিকের সব বায়োডাটা সংগ্রহ করেছ?”

“হুম। সব আমার কাছে আছে।”

“গুড জব। আমাকে ওর সব বায়োডাটা পাঠিয়ে দাও। ঢাকাতেই যখন আছে তখন আমি খুঁজে নেব।”

ব্যক্তিটি স্নেহাকে সব বায়োডাটা পাঠিয়ে দিলো। সব দেখে স্নেহা মৃদু হেসে বললো,
“সত্যিই পৃথিবীটা গোল। তাহলে আপনার সাথে আমার আবার দেখা হচ্ছে মিস্টার সোহাগ ইসলাম। তৈরি থাকুন। শত্রুর শত্রু তো বন্ধুই হয়। এবার আমরা দুইজন মিলে আমাদের এক ও অদ্বিতীয় শত্রুর বিরুদ্ধে প্রথম কিস্তিমাত করব। চৌধুরীরা তোমরা এখন যত আনন্দ করার করে নাও। খুব শীঘ্রই আমি রাজশাহীতে যাচ্ছি। আমি রাজশাহীতে গেলে তোমাদের সব আনন্দ বের করে দেব। এমন হাল করে রেখে দেব যে তোমরা হাসতে ভুলে যাবে। নিজেদের বংশ, গৌরব,টাকা পয়সা নিয়ে খুব অহংকার না তোমাদের? তোমাদের এই অহংকার ধুলোয় না মেশাতে পারলে আমিও শিউলির মেয়ে স্নেহা না।”

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে