তুমি চাইলে যেতে পারো পর্ব-১১+১২

0
734

গল্প:-#তুমি চাইলে যেতে পারো পর্ব:-(১১+১২)
লিখা:- AL Mohammad Sourav

তুমি কার উপর প্রতিশোধ নিবার কথা বলছো?
আমার ছেলে কি এমন করেছে যার কারণে তুমি ওর উপর প্রতিশোধ নিবে বলছো? আলকে আমরা সবাই যতটা খারাপ মনে করি সত্যি বলতে এতটা খারাপ নয়। কি হলো কিছু বলছো না কেনো? সিমিকে একের পর এক প্রশ্ন করে যাচ্ছে আর সিমি চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে তখনি আলের মা আবার বলে। তোমার সাথে আল যা করেছে সেটা অন্যায় করেছে তা আমি মানি কিন্তু তুমি যদি তাঁর জন্য আলের সাথে কোনো রকম বেঈমানি করার চেষ্টা করো তাহলে এর পরিনাম কিন্তু ভালো হবে না বলে দিলাম তখনি সিমি বলে।
সিমি:- মা আপনি ভুল বুঝতেছেন আসলে আমি পড়ে গেছি সেইটা আপনার ছেলে দেখেছে তাও আমাকে ধরেনি তাঁর জন্য রাগ করে আমি বলে এইটার জন্য আমিও প্রতিশোধ নিবো। তখনি ওনি মুচকি হেসে বলে।
মা:- ও তাই বলো আর আমি মনে করেছি অন্য কিছু। এই আলটা যে কবে একটু বুঝবে আল্লাহ ভালো জানে। তখন ওনি সিমির একদম কাছে এসে বলে। মা তুমি যে পড়ে গেছো তা তোমার কোথাও লাগেনি তো?
সিমি:- নাহ তেমন কোথাও লাগেনি।
মা:- একটু সাবধানে হাটবে আর শাড়ি পড়তে সমস্যা হলে শাড়ি পড়েছো কেনো? আলকে বলতে তোমাকে লেহেঙা এনে দিতে।
সিমি:- আমার শাড়ি পড়তে কোনো সমস্যা হয়না। আচ্ছা মা আসেন নিচে যাই মনে হয় হুলুদের অনুষ্টান শুরু হয়ে গেছে।
মা:- তুমি যাও আমি আসতেছি।
সিমি:- ঠিক আছে। সিমি নিচে গিয়ে দেখে অনেক মেহমান এসেছে। সিমি নিচে নামতেই আলের ভাবি এসে সিমিকে নিয়ে সবার মাঝে নিয়ে গিয়ে বলতে থাকে।
ভাবি:- আজ মালার গায়ের হুলুদের অনুষ্টানের সাথে আরেকটা সুসংবাদ আপনাদের সবাইকে দিতে চাই। তখন আল সহ বাড়ীর সবাই ওর ভাবির দিকে তাকিয়েছে তখনি ওনি বলতে আরম্ভ করেছে। সেই সুসংবাদটা হচ্ছে আল ইসলাম দ্বীতীয় বিয়ে করেছে আর এই হচ্ছে আলের স্ত্রী সিমি ইসলাম। সবাই সিমির দিকে তাকিয়ে আছে সিমি বার বার আলের দিকে তাকাচ্ছে আর রাগে কটমট করছে। আলকে দেখে মনে হচ্ছে খুব রেগে গেছে। তখনি ঝিনুকের শ্বশুর বলে উঠে।
আল যে মেয়েটাকে বিয়ে করেছে তাঁর প্রমাণ কি? আর তাছাড়া মেয়েটির বাপের নাম কি! আর কি তাঁর বংশপরিচয়? শুনেছি বিয়ের পর একদিনও নাকী মেয়েটিকে দেখতে তাঁর বাপের বাড়ী থেকে কেউ আসেনি? আমার তো মনে হচ্ছে রাস্থা থেকে তোলে নিয়ে এসেছে রাস্থার কোনো মেয়ে হবে? কথা গুলি শুনে আল রেগে মেগে আগুন হয়ে গেছে। নিজের রাগ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছে। সিমি আলের দিকে তাকিয়ে আছে সিমির চোখ বেয়ে অশ্রু পড়ছে তখনি ভাবি বলে।
ভাবি:- আল এবার তো সিমির পরিচয়টা দিবে? নাকী সত্যি সত্যি সিমির কোনো বংশপরিচয় নেই? তখনি আলের দাদী ধমকের সরে বলে উঠে।
দাদী:- বড় নাত বৌ তোমাকে এত কথা বলার সাহোস দিয়েছে কে? আজ এই বাড়ীতে মালার গায়ের হুলুদের অনুষ্টান। আজ যা কথা হবে সব মালাকে নিয়ে কথা হবে। আল বিয়ে করেছে সেটা আমরা সবাই জানি আর সিমিকে দেখে মনে হয়না ও কোনো রাস্থার মেয়ে ওর কোনো বংশপরিচয় নেই। মালার বিয়েটা হয়ে গেলে আমরা আলের বিয়ে উপলক্ষে একটা ছোট খাটো অনুষ্টান করবো আর সেদিন সবার সামনে সিমির বংশপরিচয় আর ওর পরিবারের সবাইকে নিয়ে আসবো। প্লিজ আপনারা সবাই এখন মালার গায়ের হুলুদের অনুষ্টানকে ইনজয় করুন।
বাবা:- হ্যা আমিও মায়ের সাথে একমত আমরা আগামী মাসের ১২ তারিখে আলের বিয়ে উপলক্ষে একটা পার্টি থ্রু করছি আর সেই পার্টিতে আপনাদের সবাইকে অগ্রিম নিমন্ত্রণ করা হলো। সেদিন আমরা আমাদের ছেলের বৌয়ের পরিবারের সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিবো। আল সবকিছু শুনছে কোনোকিছুই বলছে না শুধু মাত্র মালার বিয়েটা হয়ে যাক তারপর যা বলার সে বলবে। সবাই সবার মত করে অনুষ্টান ইনজয় করতেছে। আল তাঁর বন্ধুদের সাথে কথা বলতেছে আর সিমি মালার সাথে বসে আছে।
মালা:- বড় ভাবি জীবনে মানুষ হলো না। ওনার বাপের বাড়ীতে কি এমন আছে সেটা তো আমরা জানি? ভাবি তুমি এসব কথায় কোনো মন খারাপ করো না।
সিমি:- নাহ আমি কিছু মনে করিনি তখনি লতা এসে আনোকে সিমির কাছে দিয়েছে।
আনো:- মামুনি বাবাই কোথায়?
সিমি:- ঐ তো তোমার বাবাই (আলকে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে)।
আনো:- বাবাই কাছে যাবো।
সিমি:- ঠিক আছে যাও।
আনো:- তুমি নিয়ে চলো। আমি অনেকক্ষণ ধরে খেলা করেছি। আমার পা ব্যথা করছে তুমি কোলে করে নিয়ে চলো।
সিমি:- ঠিক আছে চলো। আনোকে কোলে নিয়ে আলের কাছে গেছে। আল তার বন্ধুদের সাথে হানি ঠাট্টা করছে তখনি সিমি ডাক দিয়ে বলে। আনো আপনার কাছে আসবে বলে কান্না করছে। আল পিছনে ফিরে দেখে সিমি আনোকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
আল:- মামুনি তুমি বাবাই কাছে আসবে? তখনি আনো মাথাটা নাড়িয়ে না করে দেয় আর আল সিমির দিকে হালকা রাগি ভাব নিয়ে তাকিয়ে থাকে।
সিমি:- মামুনি তুমি তো বলেছো বাবাই কাছে যাবে তাহলে এখন না করছো কেনো?
আনো:- আমি দুজনের কাছেই থাকবো। তোমরা দুজনে আমাকে এক সাথে রাখো। আমাকে নামিয়ে দাও আমি তোমাদের দুজনের হাত ধরে রাখবো। আল এবার আরও রাগি চোখে তাকিয়েছে তখন সিমি বলে।
সিমি:- আমার দিকে এমন ভাবে তাকালে কোনো লাভ হবে না। আপনি বরং আনো যা বলেছে সেইটা করেন বলে আনোকে নিচে নামিয়ে দিয়েছে আর আনো এক হাতে সিমিকে আর অন্য হাতে আলকে ধরেছে। আনো একবার এদিকে যাচ্ছে তো আরেকবার সেদিকে যাচ্ছে ওর সাথে সাথে আল আর সিমি দুজনে ঘুরচ্ছে।
আল:- মামুনি কি হয়ছে তোমার এমন করছো কেনো?
আনো:- আমার কাছে তো ভালো লাগছে তাই এমন করছি।
সিমি:- তুমি না বলেছো তোমার পায়ে ব্যথা করছে?
আনো:- কখন বলেছি এই কথা! মামুনি তুমি আজকাল মিথ্যা কথা বলতে আরম্ভ করেছো আমার সাথে। তুমি কিন্তু প্রমিস করেছো কখনো আমার সাথে মিথ্যা বলবে না।
সিমি:- আমি মিথ্যা বলতেছি? তখনি আল বলে।
আল:- ও ছোট বাচ্চা যা বলে সত্যি বলে সব কিছু তুমি করেছো। আমি বুঝতে পারছি কেনো তুমি আনোকে এখানে নিয়ে এসেছো।
সিমি:- হ্যা আপনি তো সব বুঝতে পারেন। তখনি সিমি ওদের দুই হাত ধরে লাফ দিয়েছে আর সিমি গিয়ে আলের মাথায় গুতো খেয়েছে। আল সিমির দিকে কটমট করে তাকিয়ে আছে আর সিমি আনোর দিকে তাকিয়েছে আনো জোঁড়ে হাঁসি দিয়েছে। তখনি সিমি আনোকে কোলে নিয়ে বলে। অনেক হয়ছে তোমার দুষ্টমি এবার আসো আমার সাথে বলেই চলে গেছে। আর আল তাঁর বন্ধুদের সাথে আবার আড্ডা দিতে আরম্ভ করেছে।

আস্তে আস্তে অনুষ্টান শেষ পর্যায়ে চলে এসেছে এক এক করে বাড়ীর সব মেহমান চলে গেছে। মালা আজ অনেক খুশি আবিরকে ফোন করে মালা তাঁর মনের সব সুখের কথা বলছে।
মালা:- আবির আজ আমার মধ্যে যা সুখ হচ্ছে সব তোমার জন্য। ধন্যবাদ তোমাকে আমার জীবনটাকে এতটা রঙ্গীন করার জন্য।
আবির:- শুধু আমাকে ধন্যবাদ দিলে হবে! আরেক জন আছে যার জন্য আমরা দুজনে এক হতে পারতেছি আল ভাইয়ার স্ত্রী ওনাকে ধন্যবাদ দাও বেশি করে।
মালা:- হ্যা তুমি আমার মনের কথাটা বলেছো। তবে আজ না বড় ভাবি একটা খুব খারাপ কাজ করেছে।
আবির:- কি খারাপ কাজ করেছে?
মালা:- ছোট ভাবিকে সবার সামনে নিয়ে আল ভাইয়ার বৌ বলে পরিচয় করিয়ে দিছে আর তখন তো ঝিনুক আপার শ্বশুর নানান কথা বলতে শুরু করেছে। তবে দাদী বলেছে আল ভাইয়ার বিয়ে উপলক্ষে সামনের মাসে ১২ তারিখে একটা পার্টি থ্রু করবে আর সেখানে ভাবির পরিবারের সবাইকে এনে পরিচয় করিয়ে দিবে।
আবির:- সেইটা ভালো হবে। তবে আল ভাইয়ার বৌটা কিন্তু অনেক ভালো তাইনা?
মালা:- হ্যা আমারও মনে হচ্ছে ওনি সাহানা ভাবির থেকে হাজার গুণ ভালো হবে। মালা আর আবির তাদের প্রেম আলাপ করছে আর ঐদিকে আল আর সিমি দুজনে দুজনের সাথে ঝগড়া করছে।

আল:- তুমি আজ ইচ্ছে করে বড় ভাবির সাথে হাত মিলিয়ে এই কাজটা করেছো তাইনা? যাতে করে আমি তোমার পরিচয়টা সবার সামনে দেয়?
সিমি:- ছিঃ আপনি এমনটা ভাবলেন কি করে?
আল:- আমাকে ছিঃ না বলে তুমি তোমাকে ছিঃ বলো। লজ্জা করেনি ভাবির সাথে মিলে এমন কাজ করতে? বিনিময়ে কি হলো বরং তুমি নিজেই সবার সামনে অপমানিত হলে।
সিমি:- আমি অপমানিত হয়েছি এতে করে আপনি এখন অনেক খুশি তাইনা? আমাকে সবাই কত রকম কথাবার্তা বলছে এসব শুনতে আপনার কাছে অনেক ভালো লাগে তাইনা? আল চুপচাপ বসে আছে আর সিমি বলতেছে একের পর এক আল সব নিরবে শুনছে তখনি সিমি বলে। সত্যি বলতে আপনি কারও ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্যই না আপনি শুধু মানুষের ঘৃণা পাওয়ার যোগ্য। আপনি মানুষের স্বপ্ন গুলোকে ধ্বংস করে দিতে পারেন কোনো দিন কারও স্বপ্ন পুরুন করে দিতে পারেন না। তখনি আল রেগে উঠে বলে।
আল:- হ্যা আমি সবকিছু ধ্বংস করে দিতে পারি আর তার জন্য তোমার জীবনটাকে ধ্বংস করে দিবো। তুমি কি ভাবছো আমি তোমাকে বিয়ে করেছি তোমার সাথে সংসার করার জন্য? তোমার ভালোবাসা পাওয়ার জন্য মুটেও না? আমি আমার স্বার্থে তোমাকে ব্যবহার করছি যেদিন স্বার্থ শেষ হয়ে যাবে সেদিন তোমাকে ছুঁড়ে ফেলে দিবো আমার জীবন থেকে।
সিমি:- আপনি আমাকে কি ছুঁড়ে ফেলে দিবেন আমি নিজেই আপনাকে ছুঁড়ে ফেলে দিবো আমার জীবন থেকে। মালার বিয়েটা শেষ হলেই আমি আপনার জীবন থেকে বহুদূরে চলে যাবো আপনি আমাকে জীবনেও খুঁজে পাবেন না।
আল:- তোমার মত মেয়েদের আমি খুব ভালো করে চিনি। তুমি কি ভাবছো আমি তোমাকে খুঁজে বের করবো? কখনো না আমি বরং নিজেই তোমাকে তোমার গন্ত্রব্যস্থানে ছেড়ে আসবো। তুমি কোথায় যেতে চাও সেটা আমি জানি সেখানে তোমাকে দিয়ে আসবো।
সিমি:- আমি কোথায় যেতে চাই? সেই জায়গাটার নামটা বলে দিন কি হলো বলেন আমি কোথায় যেতে চাই?
আল:- তুমি এই মুহুর্তে আমার সামনে থেকে যাও। আমি তোমার সাথে কোনো কথা বলতে চাইনা দাঁড়িয়ে আছো কেনো যাও তুমি। সিমি রাগ করে ঘর থেকে বেরিয়ে গেছে আল রাগ দেখিয়ে নিজেই জোঁড়ে দেওয়ালে গুশি দিয়ে বারান্দায় চলে যায়। দুজনে দুই দিকে চলে গেছে আনো খাটের উপরে ঘুমিয়ে আছে। রাত তিনটা বাজতেছে এখনো সিমি ঘরে আসেনি আল মনে মনে চিন্তা করছে সিমি গেলো কোথায়? নাহ একবার নিচে গিয়ে দেখি সিমি নিচে আছে কিনা! যেই কথা সেই কাজ আল নিচে গিয়ে দেখে সিমি নিচে কোথাও নেই? সিমি তো নিচে কোথাও নেই আর দরজাটা ভেতর থেকে বন্ধ তাহলে গেলো কোথায়? তখনি মনে পড়ছে দিনের বেলায় ডেকোরেটার লোকেরা ছাদে গেছিলো তাহলে কি সিমি ছাদের দরজা খুলা দেখে ছাদের উপরে গেছে? আর দেরী না করে সাথে সাথে দৌড়ে ছাদের দিকে গেছে। গিয়ে দেখে ছাদের দরজাটা খুলা আল তাঁড়াতাড়ি করে ছাদের উপরে গিয়ে দেখে সিমি ব্যাঞ্চে শুয়ে আছে আল পাশে গিয়ে বসেছে। সিমি ঘুমে মগ্ন হয়ে আছে আল সিমির মাথাটা ওর হাটুর উপরে রেখেছে সিমি একটু নড়েচড়ে ঠিক করে শুয়েছে। রাত সারে তিনটার দিকে বৃষ্টি পড়তেছে এখন সিমিকে ডাক দিতে ছিলো তখনি মনে হলো থাক আবার ঝগড়া শুরু করে দিবে এর চাইতে ভালো ওকে কোলে নিয়ে রুমে যাই। আজ প্রথম বারের মত সিমিকে আল কোলে নিয়েছে সিমির হাত গুলি দুই দিকে নিচে পড়ে আছে। আল সিমিকে কোলে করে ঘরে এনে আনোর এক পাশে শুয়ে দিয়েছে। আজ সিমিকে আল বার বার তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে। এর আগে কখনো এমন ভাবে তাকায়নি তবে কেনো যেনো মনে হচ্ছে সিমিকে আল কিছুটা ভালোবাসে কিন্তু আল চাইনা সিমির জীবনটা নষ্ট হয়ে যাক। সিমিকে আল মুক্ত করে দিবে তারও অবশ্য কারণ আছে তবে সেইটা আস্তে আস্তে জানতে পারবেন। আল সিমিকে শুয়ে দিয়ে আনোর অন্য পাশে সে নিজে শুয়ে পড়েছে।

সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখে সিমি খাটের উপরে আনোর সাথে ঘুমিয়ে আছে আর অন্য পাশে আল ঘুমাচ্ছে তখনি সিমি মনে মনে বলে। আমি তো ছাদের উপরে ছিলাম তাহলে রুমে এলাম কি করে? এর মাঝে আল কিছুটা নড়াচরা করে ঘুম থেকে উঠেছে তখনি সিমি বলে।
সিমি:- আমাকে কোলে করে রুমের ভেতরে আপনি এনেছেন?
আল:- আমার এত এনার্জি নেই তোমাকে কোলে করে রুমে নিয়ে আসবো। আমার কাছে এত সময় নেই তোমাকে খুঁজে বের করে ছাদের ব্যাঞ্চের উপর থেকে গিয়ে কোলে করে নিয়ে আসবো? তখনি সিমি বলে।
সিমি:- আমি যে ছাদের উপরে ব্যাঞ্চের উপরে শুয়ে ছিলাম সেইটা আপনি জানলেন কি করে? তখনি আল চুপচাপ হয়ে গেছে আর মনে মনে বলে। দূর ছাদের কথা কেনো বলতে গেলাম তখনি সিমি বলে। আপনি আমাকে ছাদের উপর থেকে কোলে করে আনছেন? আমার অনুমতি ছাড়া আপনি আমাকে স্পর্শ করেছেন কেনো?
আল:- তো আমি কি করতাম? রাতে বৃষ্টি হচ্ছিলো আর তুমি ঘুমিয়ে ছিলে তাঁর জন্য তোমাকে না ডেকে কোলে করে নিয়ে এসেছি। এর জন্য যদি আমি কোনো ভুল করি তাহলে দুই হাত জোঁড় করে ক্ষমা চাচ্ছি বলেই দুইটা হাত এক সাথে করে সিমিকে দেখিয়েছে। আর তখনি সিমি দেখতে পায় আলের ডান হাতের আঙ্গুল গুলিতে র*ক্ত জমে আছে। তখনি সিমি আলের হাতটা ধরে বলে।
সিমি:- এই কি আপনার হাতের এমন অবস্থা হলো কি করে?
আল:- ঐটা তেমন কিছু না বলেই আল হাতটা নিয়ে যেতে ছিলো তখনি সিমি শক্ত করে ধরে রাখছে।
সিমি:- আমাকে দেখতে দেন। সিমি তাকিয়ে দেখে হাতের আঙ্গুল গুলিতে র*ক্ত জমে আছে। আপনি বসুন আমি ডেটল আর বেন্ডিজের সরঞ্জাম নিয়ে আসতেছি বলেই সিমি নিচে গিয়ে লতাকে বলে মেডিসিন বক্সটা দিতে। লতা সিমিকে মেডিসিন বক্সটা দিয়েছে। সিমি সেইটা নিয়ে ঘরে এসে দেখে আল ওয়াশুরুমে যাচ্ছে তখনি সিমি আলর হাত ধরে টেনে খাটের উপরে বসিয়ে দিয়ে বলে। এখান থেকে এক পা নড়াচরা করার চেষ্টা করলে আমি নিজেকে শে*ষ করে দিবো আপনি আমাকে স্পর্শ করার কারণে।
আল:- ঠিক আছে নড়াচরা করবো না তবে আর কখনো নিজে থেকে তোমাকে স্পর্শ করবো না এই আমার মাথা ছুঁয়ে কসম খেলাম।
সিমি:- আমাকে আর স্পর্শ করার সুযোগ আপনি পাবেন না। আমি মালার বিয়েটা হয়ে গেলেই চলে যাবো। আল চুপ করে বসে আছে আর সিমি আলের হাতটা বেন্ডিজ করে দিয়েছে। হাতটা দেখে মনে হচ্ছে জিদ করে কোনো কিছুর উপর গুশি দিয়েছেন। তবে নিজের উপর কষ্ট না দিয়ে সেইটা বের করে দিন কারও উপরে তাহলে নিজে শান্তি পাবেন অন্যরাও শান্তি পাবে। রোজ রোজ কষ্ট পাওয়ার চাইতে এক সাথে অনেকটা কষ্ট সহ্য করে নিলে ভালো। তিলে যন্ত্রনা মানুষকে শেষ করে দেয় আর এক সাথে যন্ত্রনা মানুষকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে সাহায্য করে যে আমি একবার যন্ত্রনা পেয়েছি আর নতুন করে কোনো যন্ত্রনা পেতে চাইনা।
আল:- তোমার ভাষণ শেষ হয়ছে আমি ফ্রেশ হবো। আজ মালার বিয়ে বাড়ীতে অনেক কাজ করতে হবে।
সিমি:- হ্যা আমার ভাষণ আর কাজ দুইটা শেষ তবে ফ্রেশ হবার সময় হাতটা পানিতে ভিজতে দিবেন না। কথাটা বলে সিমি চলে গেছে আর আল ওয়াশরুমে গেছে। আজ মালার বিয়ে বাড়ীর সবাই অনেক খুশি। দেখতে দেখতে মালার বিয়ের কার্জক্রম সুন্দর ভাবে শেষ হয়ছে কোনো রকম ঝামেলা ছাড়াই। আল আর সিমি আজ তেমন কোনো ঝগড়া করেনি আনোর সাথে সিমি আজ সারাটা দিন ছিলো। দেখতে দেখতে মালার বিয়ের পাঁচদিন শেষ আজ ঝিনুকের জামাই এসে ঝিনুককে নিয়ে গেছে। বাড়ীতে এখন সবাই অনেক সুখে আছে। আল ঘরে ঢুকে দেখে সিমি বসে আছে খাটের উপরে তখনি আল বলে।
আল:- সিমি তুমি তোমার যাবতীয় জিনিস পত্র গুচিয়ে নাও আগামীকাল আমি তোমাকে তোমার জায়গা মত ছেড়ে আসবো।
সিমি:- আপনাকে কষ্ট করে আমাকে কোনো জায়গাতে ছাড়ার জন্য যেতে হবে না আমি নিজেই যেতে পারবো।
আল:- তুমি বললে তো হবে না আমি তাকে কথা দিয়েছি আমি নিজে গিয়ে তাঁর কাছে তোমাকে দিয়ে আসবো। আর কোনো কথা শুনতে চাইনা বলেই আল ঘর থেকে বেড়িয়ে গেছে আর সিমি মনে মনে ভাবছে ওনি কার কাছে আমাকে নিয়ে যাবে? তখনি হঠাত করে মনে পড়ে সিমির তাহলে কি ওনি এতদিন ধরে এইটার জন্য আমার সাথে এমনটা করছে? নাহ এইটা ওনি জানবে কি করে? ওনাকে কে বলবে এসব এসব ভাবতে ভাবতে সিমি মাথার চুল টেনে ধরে বলে নাহ ওনাকে জিজ্ঞেস করতে হবে বলে সিমি আলকে খুঁজতে গেছে।

চলবে…

গল্প:-#তুমি_চাইলে_যেতে_পারো (পর্ব:-১২)
লিখা:- AL Mohammad Sourav

তোমার সবকিছু গুচিয়ে রেখো আগামীকাল তোমাকে তোমার জায়গা মত স্থানে দিয়ে আসবো। তুমি যার জন্য এতদিন আমার সাথে এমনটা করেছো তাঁর কাছে তোমাকে দিয়ে আসবো কথাটা বলেই আল ইসলাম বেরিয়ে গেছে। আমাকে ওনি কার কাছে দিয়ে আসবে? আর আমি কার জন্য এমন কিছু করেছি? ওনি তো সবসময় আমার সাথে খারাপ আচরণ করেছে তখনি সিমির হঠাৎ করে মনে পড়েছে তবে কি ওনি আমার অতীত সম্পর্কে সবকিছু যেনে গেছে? নাহ নাহ তা কি করে হয় ওনি আমার সম্পর্কে এত কিছু জানবে কি করে? ওনি যদি আমার সম্পর্কে কিছু না জানে তাহলে ওনি আমাকে এই কথা কেনো বলবে? দূর কিছুই ভালো লাগছে না এর থেকে ভালো ওনাকেই জিজ্ঞেস করি তাহলে সবকিছু জানা যাবে বলেই সিমিও আলকে খুঁজতে বেরিয়েছে তখনি দেখে আল ছাদের দিকে যাচ্ছে সিমিও আলের পিছু পিছু ছাদে গিয়ে দেখে আল ছাদের ব্যাঞ্চের উপরে বসে আছে হাত দুইটা এক সাথে করে কপালে লাগিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে তখনি সিমি গিয়ে পাশে বসেছে আর আল বলে।
আল:- তুমি এখানে এসেছো কেনো?
সিমি:- আমার কিছু কথা জানার আছে আমি সেই কথা গুলি যতক্ষণ না জানতে পারছি ততক্ষণ আমার শান্তি লাগবে না। আল চুপ করে আছে তখন সিমি নিজেই বলতে আরম্ভ করেছে। আচ্ছা আপনি আমাকে কার কাছে নিয়ে যাবেন? আমি কার জন্য আপনার সাথে এমন করি? আর তাছাড়া আপনি আমার সম্পর্কে এতকিছু জানতে পারলেন কি করে?
আল:- সব কথার উত্তর আমার কাছে নেই তবে এইটুকু বলতে পারি তোমার সাথে আমি যা করেছি সেইটা আসলে আমার স্বার্থের জন্য করেছি। এখন আমার স্বার্থ শেষ তাই তোমার কোনো মূল্য নেই আমার কাছে। তাই আমি তোমাকে তোমার স্থানে পৌছে দিবো।
সিমি:- আমি কিন্তু আমার কোনো উত্তর এখনো পায়নি।
আল:- বলেছি না আমার কাছে কোনো উত্তর নেই। আমি তোমাকে কোনো কিছুই বলবো না আর তাছাড়া তুমি যা চেয়েছো তা তো আগামীকাল পাচ্ছো তাহলে এখন এত প্রশ্ন করছো কেনো?
সিমি:- আমি চলে গেলে আনোর কি হবে? কি বলবেন আনোকে আর তখন যদি আপনার প্রথম স্ত্রী আবার আদালতে যায় তখন কি হবে একবার চিন্তা করে দেখছেন?
আল:- এত সবকিছু তোমার চিন্তা করতে হবে না। সাহানার সাথে আমি একটা চুক্তি করে নিয়েছি। সাহানা আর কখনো আনোকে নিজের সন্তান হিসাবে চাইবে না। আর আনোকে একটা বডিং স্কুলে দিয়ে দিবো সেখানে থেকে বড় হবে। প্রতি সাপ্তাহ একদিন আমি ওকে দেখতে যাবো আর সেইদিন সবটা সময় ওর সাথে কাটাবো। কিছুদিন গেলে তখন সবকিছু মানিয়ে নিবে।
সিমি:- তাঁর মানে আপনার স্বার্থ শেষ হয়ে গেছে তাই এখন আমাকে ছুঁড়ে ফেলে দিতেছেন?
আল:- তুমি যেমন মনে করতে পারো। রাত অনেক হয়ছে রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ো। আগামীকাল খুব সকালে তোমাকে নিয়ে বেরুবো। আনো ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় তোমাকে এই বাড়ি থেকে চলে যেতে হবে। এমনিতেই আনো তোমাকে একটু বেশী ভালোবেসে ফেলেছে।
সিমি:- কিন্তু একটা কথা আমাকে বলেন আপনি আমার অতীত সম্পর্কে কি করে জানতে পারলেন? কে বলেছে আপনাকে এসব কথাবার্তা?
আল:- এসব কিছুর উত্তর আমি তোমাকে দিতে চাচ্ছি না। রাত অনেক হয়ছে আমি ঘুমাবো। আর তাছাড়া এত রাতে ছাদের উপরে থাকাটা ঠিক না চলো রুমে যাই।
সিমি:- আপরি যান আমি আসতেছি।
আল:- ঠিক আছে যাচ্ছি আর হ্যা তাঁড়াতাড়ি চলে এসো কিন্তু। খুব সকালে তোমাকে নিয়ে বেরুবো বলে আল যাচ্ছে তখনি সিমি বসা থেকে দাঁড়িয়ে বলে।
সিমি:- আচ্ছা আমি যদি চলে যাই তাহলে আমার কথা আপনার মনে পড়বে না? তখন আল মুচকি হেসে বলে।
আল:- তোমার কথা মনে পড়ার তো কোনো কারণ দেখছি না। আর তাছাড়া তোমার সাথে আমার এমন কোনো মূহুর্ত তৈরি হয়নি যে সেই মূহুর্ত গুলি ভেবে তোমার কথা মনে পড়বে। আর তোমার সাথে আমার তেমন একটা সময় কাটানো হয়নি যে সেই সময় গুলি মনে পড়বে। সত্যি বলতে তোমার কথা কখনো মনে পড়বে না বলেই আল চলে এসেছে। সিমি বসে বসে ভাবছে সত্যিই তো আমার সাথে তো ওনার তেমন কোনো স্মৃতি তৈরি হয়নি যেইটা হঠাৎ করে আমার কথা মনে করিয়ে দিবে এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে চোখের কোণে কিছুটা অশ্রু জমা পড়েছে সেইটা মুছে রুমে এসে দেখে আনোকে জড়িয়ে ধরে আল শুয়ে আছে। সিমি ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এসে শুয়ে পড়েছে। রাত শেষ হলেই সকালে এই বাড়ীটা ছেড়ে সিমি চলে যাবে। আনোর জন্য খুব মাঁয়া হচ্ছে ছোট্ট মেয়েটি খুব অল্প সময়ে অনেক আঘাত পেয়েছে আবার একটা আঘাত পাবে কিন্তু আমি নিরুউপায় এসব চিন্তা করতে করত সিমিও ঘুমিয়ে গেছে।

খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে ঘরটাকে সুন্দর করে গুচিয়ে দিয়েছে। নিজের সব জিনিস পত্র গুচিয়ে একটা ব্যাগে রেখে দিয়েছে। আল ঘুম থেকে উঠে দেখে সিমি একদম রেডি হয়ে আছে। আল কিছু না বলেই ওয়াশরুমে চলে গেছে। এদিকে সিমি শুধু মাত্র পড়নের কাপড়টা ছাড়া বাকী সব আলমারিতে রেখে দিয়েছে। আল ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে হাতের ঘড়িটার দিকে তাকিয়ে বলে।

আল:- সিমি তোমার ব্যাগ নাও আমরা এখুনি বেরুবো।
সিমি:- আমি আসার সময় কিছু আনিনি? তাহলে যাবার সময় কেনো নিয়ে যাবো? আমি খালি হাতে এসেছি আর যাবো খালি হাতে।
আল:- ঠিক আছে সেটা তোমার ইচ্ছে বলেই বেরিয়েছে। সিমি শুধু তিনটা ছবি নিয়েছে একটা ছবি মালার বিয়ের সময় আলের পরিবারের সবার সাথে সিমিও ছিলো। আর দুইটা ছবি হলো আনো সিমির আর আলের দুইটা হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে। আরেকটা ছবি আনোকে কোলে নিয়ে সিমি আলের দিকে তাকিয়ে আছে আর আলও সিমির দিকে তাকিয়ে আছে তখনকার সময় ছবি গুলি তোলা হয়ছে। এই তিনটা ছবি সিমি হাতে নিয়ে বেরিয়ে নিচে এসে দেখে আল লতাকে বলছে লতা আনো রুমে একা আছে তুই রুমে যা।
লতা:- এত সকালে ভাবিকে নিয়ে কোথায় যাচ্ছেন?
আল:- লতা তুই ইদানিং বড্ড বেশী কথা বলিস। তোকে যেইটা বলেছি তুই সেইটা কর। আর বাড়ীতে আমাদের কথা জিজ্ঞেস করলে বলবি আমরা একটু বেরিয়েছি আসতে দেরি হবে। লতা মাথা নাড়িয়ে হাঁ সূচক বলেছে তখনি আল বেরিয়ে গেছে। তখনি সিমি লতার হাতটা ধরে বলে।
সিমি:- লতা আনোকে একটু দেখে রেখো কেমন? লতা এবারও হ্যা বলেছে। সিমিও আলের পিছু পিছু বেরিয়েছে। আল গাড়ীটা নিয়ে এসেছে সিমি দাঁড়িয়ে বাড়ীটাকে খুব ভালো করে দেখছে। সিমির চোখে অশ্রু টলমল করছে যেকোনো সময় বৃষ্টিতে রূপান্তরিত হতে পারে তখনি আল সিমিকে ডাক দিয়ে বলে।
আল:- সিমি তাঁড়াতাড়ি এসো এমনিতেই আমাদের দেরি হয়ে গেছে। সিমি হালকা ঘুরে চোখের পানি গুলি মুছে গাড়ীতে গিয়ে বসেছে। তবে আজকে আলের পাশে বসেছে। মাত্র তিন মাস আগে সিমি এই বাড়ীতে বউ হয়ে এসেছিলো আর আজকেই এই বাড়ীটা ছেড়ে চলে যেতে হচ্ছে। এই বাড়ীর প্রতিটা মানুষের জন্য খুব মাঁয়া হচ্ছে তবে সবচেয়ে বেশী মাঁয়া হচ্ছে আনোর জন্য। এসব মনে মনে ভাবছে তখনি আল বলে। আমি জানি তুমি কি ভাবছো তবে আমি অনেক চেষ্টা করেছি। তুমি কোনো চিন্তা করোনা আমি অল্প কিছু দিনের মধ্যে তোমাকে তখনি সিমি কিছুটা নড়েচড়ে বসেছে। সিমি হয়তো ভাবছে আল বলবে সিমিকে সে ফিরিয়ে নিবে কিন্তু এসব সবকিছু বাদ দিয়ে বলে। উকিলের সাথে সব কথা হয়ে গেছে অল্প কিছুদিনের মধ্যে ডির্ভোসের কাগজ তৈরি করে দিবে। আমি সাইন করে পাঠিয়ে দিবো তুমি সাইন করে উকিলকে দিয়ে দিলে উকিল বাকী সবকাজ করে নিবে। তখনি সিমির বুকের মধ্যে কেমন একটা ব্যাথা অনুভব করে তাও নিজেকে ঠিক রেখে বলে।
সিমি:- তা আবার বিয়ে করবেন কাকে? আমার মতন কাওকে নাকী পরিবারের পছন্দের কাওকে? আমিও আজ থেকে আপনার অতীত হয়ে যাচ্ছি তাইনা? আল কিছুটা ভেবে চিন্তে বলে।
আল:- এবার আর নিজের মত করে বিয়ে করবো না। এবার বাবা মা দাদীর পছন্দ মতে বিয়ে করবো। নিজের মত করে বিয়ে করে দেখছি তাতে তো কোনো লাভ হয়নি বরং আরও কষ্ট পেয়েছি আর পরিবারের সবাইকে অনেক মানুষের কাছে অপমানিত করেছি।
সিমি:- হ্যা সেইটাই ভালো হবে। আনোও তাঁর নতুন মা খুঁজে পাবে সাথে আপনিও ভালোবাসার মানুষ পাবেন। যে আপনাকে অনেকটা সুখে রাখবে আপনি কোনো কিছু বলার আগেই সে বুঝে ফেলবে তাইনা?
আল:- আমাকে ভালোবাসতে হবে না শুধু আনোকে একটু আদর স্নেহ আর মাঁয়া মমতা দিলেই আমি ওকে রানী করে রাখবো। ওকে এতটা ভালোবাসবো যাতে করে সে সবার কাছে বলতে পারে ওর স্বামী পৃথিবীতে সবচেয়ে ভালো স্বামী। যাতে করে আমার সাথে ঘটে যাওয়া সকল কলঙ্ক মুছে যায়।
সিমি:- আচ্ছা একটা কথা জিজ্ঞেস করবো? প্লিজ এই শেষ বারের মত আর তো কখনো দেখা হবে না আর কোনো কথাও জিজ্ঞেস করা হবে না।
আল:- ঠিক আছে জিজ্ঞেস করো। তখন সিমি কিছুটা চুপচাপ থেকে বলে।
সিমি:- নাহ থাক কিছু জিজ্ঞেস করার নেই বলে বাহিরের দিকে তাকিয়ে চোখের মধ্যে জমে থাকা অশ্রুর ফুঁটা মুছে নিয়েছে। আল বুঝতে পারছে সিমি কান্না করছে কিন্তু তাও কিছু বলেনি দুজনে চুপচাপ হয়ে আছে। ঘন্টা খানেক পড়ে গাড়ীটা একটা রেস্টুরেন্টের সামনে থামছে।
আল:- সিমি তুমি গাড়ী থেকে নামো আমি গাড়ীটা পার্কিং করে আসতেছি। সিমি গাড়ী থেকে নেমে দাঁড়িয়েছে। আল গাড়ীটা পার্কিং করে এসে সিমিকে সাথে নিয়ে ভেতরে ঢুকে একদম কর্ণারে একটা টেবিলের সামনেগিয়ে দেখে একটা সুন্দর হ্যান্ডসাম ছেলে বসে আছে। ছেলেটাকে দেখে সিমি অবাক হয়ে গেছে। তখনি আল ছেলেটাকে বলে মিষ্টার শাওন এই নেন আপনার আমানত। তখনি সিমি আলের দিকে তাকিয়ে আছে তখনি শাওন বসা থেকে দাঁড়িয়ে বলে।
শাওন:- সত্যি আল সাহেব আপনার তুলোনা হয়না। আপনি যেমন ভাবে কথা দিয়েছেন ঠিক সেই ভাবে কথা রেখেছেন। আমি আপনার কাছে চিরকৃতজ্ঞ থাকবো।
আল:- কৃতজ্ঞ তো থাকবো আমি আপনাদের দুজনের কাছে। বিষেশ করে সিমির কাছে বেশী কৃতজ্ঞ থাকিবো। ওর জন্য আজ আমি আমার সবকিছু পেয়েছি। আমার কলিজার টুকরা আমার রাজকন্যা আনোকে পেয়েছি এতেই আমি অনেক খুশি। সিমি আলের দিকে তাকিয়ে আছে তখনি আল বলে। সিমি নাও তোমার ভালোবাসার মানুষ যে তোমাকে নিজের থেকে বেশী ভালোবাসে। সত্যি বলতে তোমার জন্য শাওন এতদম পার্ফেক্ট। সিমি একদম বাকরোধ হয়ে গেছে। মনে হচ্ছে সিমি কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলছে আল আমার আর শাওনের সম্পর্কে জানলো কি করে? আর এতদিন পর শাওন আমাকে খুঁজে পেলো কি করে? তখনি সিমি আলকে বলে।
সিমি:- দেখুন আপনার সাথে আমার কিছু কথা আছে।
আল:- আমার সাথে তোমার আর কোনো কথা নেই। আজ থেকে যা কথা বলবে তুমি সব তোমার ভালোবাসার মানুষের সাথেই কথা বলবে। তখনি একটা ছোট শপিং ব্যাগ সিমির হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে। এই ব্যাগে পাঁচ লক্ষ টাকা আছে তোমার দেনমহোর হিসাবে তুমি আমার কাছে পাওনা আমি তোমার দেনমহোর দিয়ে দিলাম আর খুব তাঁড়াতাড়ি ডির্ভোস কাগজটা পাঠিয়ে দিবো। যত দ্রুত সম্ভব আমি তোমাকে ডির্ভোস দিয়ে দিবো তখন তুমি একদম মুক্ত হয়ে যাবে আর শাওনকে বিয়ে করতে পারবে।
সিমি:- আমার কথাটা তো শুনবেন?
আল:- আর কোনো কথা শুনার নেই। আর মিষ্টার শাওন এই নেন ভাই আপনার আমানত বলে সিমির হাতটা শাওনের হাতের উপরে রেখে কথাটা বলেছে।আল বেরিয়ে যেতেছিলো তখনি একটু দাঁড়িয়ে পিছন ফিরে সিমিকে ডাক দিয়ে বলে সিমি আমি তোমার সাথে খুব বেশী অন্যায় করেছি যদি পারো তাহলে ক্ষমা করে দিও এই কথাটা বলেই আল রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে যেতেছে আর সিমি তাকিয়ে আছে আলের যাওয়ার দিকে। দেখতে দেখতে আল রেস্টুরেন্ট থেকে একদম বেরিয়ে গেছে তখনি শাওন সিমিকে বলে।
শাওন:- সিমি তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও প্লিজ। আমি আর জীবনেও তোমাকে ছেড়ে কোথাও যাবো না এই তোমার গাঁ ছুঁয়ে কসম খাচ্ছি।
সিমি:- শাওন তুমি আমাকে আগে একটা কথা বলো তোমার সাথে ওনার দেখা হয়েছে কি করে?
শাওন:- তোমার মামাত ভাই রনি তোমার বড় আপুর বিয়ের দিন তোমাকে দেখে। তুমি রনিকে দেখে দৌড়ে পালিয়ে যাও। রনি সবকিছু আমাকে বলেছে আর রনি বলেছে তুমি নাকী একটা বিবাহিত ছেলেকে বিয়ে করেছো শুধু মাত্র টাকার জন্য। আমি এসব বিশ্বাস করিনি সত্যি সিমি আমি একদম বিশ্বাস করিনি। আমি বুঝতে পারছি তোমার বাবা তোমাকে জোঁড় করে বিয়েটা করতে বাধ্য করে। আমি ১৫দিন আগে তোমার শ্বশুর বাড়ীর ঠিকানা পায় তারপর আমি আল সাহেবের ঠিকানা নেই ওনার সাথে দেখা করি আর আমাদের দুজনের ব্যাপারে সবকিছু খুলে বলি। তারপর এক কথা দুই কথা হবার তখন জানতে পারি ওনি কেনো তোমাকে বিয়ে করেছে। আমার সব কথা শুনে ওনি আমাকে আশ্বাস দেয় তোমাকে আমার কাছে ফিরিয়ে দিবে। আজ ওনি ওনার কথাটা রেখেছে তোমাকে আমার কাছে ফিরিয়ে দিয়েছে সত্যি ওনি অনেক ভালো মনের মানুষ।
সিমি:- হ্যা অনেক ভালো মনের মানুষ।( তখন মনে মনে বলে সেইটা আমি ছাড়া সবার সাথেই ভালো মনের মানুষ হিসাবে নিজেকে প্রমাণ করে।)
শাওন:- সিমি তুমি বসো আর বলো কি খাবে?
সিমি:- শাওন আমার কিছু খেতে ভালো লাগছে না আমি বাড়িতে যাবো। অনেকদিন ধরে মায়ের কোলে মাথা রেখে ঘুমানো হয়না আজ বড্ড বেশী ইচ্ছে করছে।
শাওন:- তুমি তোমার বাড়ীতে যাবে কেনো? আমি বাবা মায়ের সাথে কথা বলেছি ওনারা বলেছে তোমাকে সোজা ওনাদের কাছে নিয়ে যেতে। চলো আমি তোমাকে আমাদের বাড়ীতে নিয়ে যাবো।
সিমি:- নাহ শাওন তা হয় না। এখনও আইন অনুযায়ে আমি অন্যজনের স্ত্রী যতদিন না আমাদের লিগাল ডির্ভোসের কাগজ হাতে আসছে ততদিন আমি আমাদের বাড়িতে থাকবো।
শাওন:- সিমি তুমি কি এখনও আমার উপর রাগ করে আছো? আমি বাবা মাকে বলেছি তোমাকে সাথে নিয়ে যাবো প্লিজ আমার সাথে চলো বলেই শাওন সিমির দুইটা হাত শক্ত করে চেপে ধরেছে। রেস্টুরেন্ট সব মানুষ তাকিয়ে আছে তখনি সিমি বলে ঠিক আছে আমি যাবো তখনি শাওন অনেক খুশি হয়েছে।

ঐদিকে আল গাড়ীতে উঠে নিজের মত করে গাড়ীটা চালাচ্ছে। সিমির কথা খুব মনে পড়ছে কিন্তু কি করার সিমি তো আমাকে ভালোবাসে না আর এইটা কি করে সম্ভব হবে! আমি একজন বিবাহিত ছেলে আমার একটা বাচ্চা আছে আমাকে ভালোবাসার কোনো প্রশ্ন আসে না! আর সিমি অবিবাহিত মেয়ে শাওন ওকে প্রচন্ড ভালোবাসে আর সবচেয়ে বড় কথা সিমিও শাওনকে খুব ভালোবাসে। এখুনি ভালো হয়ছে সিমি শাওনকে ভালোবাসে আর শাওন সিমিকে ভালোবাসে ওদের এক করে দিয়েছি এইটাই আমার অনেক বড় পাওনা। এসব ভাবতে ভাবতে অফিসে এসেছে আজ কাজে একদম মন বসতেছে না অনেক কষ্ট আজকের দিনটা পার করেছি রাতে বাড়ীতে ফিরতেই দেখি বাড়ীর সবাই এক সাথে বসে কথা বলছে। আলকে দেখেই বাবা বলে উঠে।
বাবা:- আল তুই একা বৌমা কোথায়? আল চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে তখনি ওর মা বলে।
মা:- আল আজ তুই চুপচাপ চলে যেতে পারবি না। তোকে বলতে হবে বৌমা কোথায়? (তখনি আলের বড় ভাই আরিফ বাড়িতে এসেছে আর দাদী বলে)
দাদী:- হঠাৎ করে একটা মেয়েকে বিয়ে করে এনে বলেছিস এইটা তোর বৌ আমরা সবাই মেনে নিলাম। আর আজ সকালে সবাইকে ঘুমের মধ্যে রেখে ওকে নিয়ে বেরিয়ে গেছিস! রাতে বাড়িতে একা ফিরে এসেছিস? কি তাঁর পরিচয় আর কোথায় রেখে আসছিস সিমিকে? তখনি আলের বড় ভাই আরিফ বলে।
আরিফ:- আমি সিমির পরিচয়টা দিতেছি তোমরা সবাই শুনো। সিমি হচ্ছে আমাদের অফিসের জহির সাহেবের তখনি আল ওর ভাইকে বারণ করে বলতে কিন্তু ওর ভাই কোনো বারণ না শুনে সবকিছু বলতে থাকে সিমির সম্পর্কে আর ওর পরিবারের সবাই খুব আগ্রোহ সহ শুনছে কথা গুলি।

চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে