তুমি চাইলে যেতে পারো পর্ব-২১+২২

0
876

গল্প:- #তুমি চাইলে যেতে পারো (পর্ব:-২১+২২)
লিখা:- AL Mohammad Sourav

সিমি রহমান আমার মেয়ে নয় এতক্ষণ যা বলেছে ওনারা সব মিথ্যা বলেছে সত্যি বলতে আমি সিমিকে টাকার বিনিয়মে বিক্রি করে দিয়েছি আল স্যারের কাছে। জহির সাহেব মাইক্রফোন হাতে নিয়ে প্রথমেই সিমির মাকে কিভাবে বিয়ে করে সবটা সবার কাছে বলে আর সিমি শেলি ওনার কেমন মেয়ে সেইটাও বলে দেয়। জহির সাহেবের কথা শুনে সবাই কানাঘুষা করতে আরম্ভ করেছে এর মাঝে আল রেগে জহির সাহেবের দিকে যাচ্ছে তখনি ওনি বলে হ্যা এইটাই সত্যি কিন্তু তারপরেও সিমি আমাকে নিজের বাবা বলে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে এতে করে আমার লজ্জা হওয়া উচিৎ। তখনি সবাই একদম নিরব হয়ে গেছে আল থমকে গেছে তখনি ওনি আবার বলে আজ আমি আপনাদের সবার সামনে বলি সিমি রহমান আর শেলি রহমান ওরা আমার মেয়ে। আমি ওদের বাবা যদি কোনো সময় তোদের কোনো রকম সমস্যা হয় তাহলে সোজা চলে আসবি এই বাবার কাছে। জহির সাহেবের কথা শুনে সিমির চোখে অশ্রু জমে গেছে আল তাকিয়ে দেখে সিমির চোখ বেয়ে গড়িয়ে পানি পড়ছে এক পা দুই পা করে সিমির সামনে যাচ্ছে আর জহির সাহেব বলছে। আমি তোদের মাথার উপরে সবসময় বৃষ্টির দিনে ছাতা আর প্রচন্ড রৌদে গাছ হয়ে ছায়া দিবো। আজ থেকে তোদের সব সুখে দুঃখে আমাকে পাশে পাবি। মারে তোরা আমাকে ক্ষমা করে দিস আমি সত্যি তোদের বাবা হওয়ার যোগ্য নয় সবসময় আমি তোদের অবহেলা করে গিয়েছি। সবসময় তোদের সাথে অন্যায় করেছি মা সিমি তোর সাথে অনেক বড় অন্যায় করেছি তুই এই অদমকে ক্ষমা করে দিস মা। জহির সাহেবের কথা শুনে সবাই একদম নিরব হয়ে গেছে সিমির চোখে অশ্রু জমে আছে তখন ওনি আবার বলে। বাবা আল সেদিন আমি আমার মেয়ের সাথে অন্যায় করেছি আমার মেয়েটা সত্যি অনেক ভালো তোমার বিশ্বাসের অর্মযাদা কখনো করবে না সিমি ঠিক ওর মায়ের মত হয়ছে নিজের কষ্ট গুলি বুকের মাঝে রেখে অন্যকে সুখে রাখার চেষ্টা করে। আজ আমি সবার সামনে তোদের দুই বোনকে মেয়ে হিসাবে মেনে নিচ্ছি আমি আজ থেকে তোদের বাবা এই কথা বলে ওনি কান্না করে দিয়েছে। সিমি আর শেলি দুজনে দৌড়ে স্টেজের উপরে গেছে ওরা দুজনে জড়িয়ে ধরেছে জহির সাহেবে ওদের দিকে দুই হাত জোঁড় করে ক্ষমা চাচ্ছে তখনি শেলি বলে।
শেলি:- বাবা তুমি আমাদের বাবা আমরা তো কখনো তোমাকে অন্য কিছু ভাবিনি।
সিমি:- হ্যা বাবা তুমি আমাদের বাবা তুমি যা করেছো আমাদের ভালোর জন্যই করেছো। তোমার সেইদিনের সিদ্ধান্তের জন্য আজ আমরা সবাই ভালো আছি। সিমির মা এসেছে সাথে আলের পরিবারের সবাই। আজ সবাই অনেক খুশি হয়েছে অনুষ্টানে আসা সকল মেহমানরা ওদের দেখে খুশি হয়েছে শুধু মাত্র দুই জন ব্যাক্তি ছাড়া সেই দুজন হলো আলের ভাবি আর ওর বড় বোন ঝিনুক। আল একদম সিমির পাশে গিয়ে দাড়িয়েছে সিমি নিজের অজান্তে আলকে জড়িয়ে ধরেছে সিমির এমন কান্ডে আল কিছুটা অবাক হয়েছে কিছুকক্ষণের মধ্যে সিমি নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়েছে আর কিছুটা লজ্জা পেয়েছে। আস্তে আস্তে অনুষ্টান শেষ হয়ে গেছে সবাই সবার মত করে চলে গেছে। সিমির বাবা, মা, বোন, বোন জামাই এনারও চলে গেছে। সবাই অনেক খুশি আজ সবকিছু ঝামেলা শেষ হয়েছে।
মালা:- যাক এবার যদি আমাদের কিছুটা শান্তি মিলে। আর ভাইয়া এবার কিন্তু আর ভাবির সাথে কোনো রকম ঝগড়া করবি না।
দাদী:- মালা ঠিক বলেছে আমার নাত বৌয়ের সাথে কোনো রকম ঝগড়া করার দরকার নেই বলে দিলাম। আল বুঝতে পারছে সবাই এখন সিমির পক্ষ নিয়ে কথা বলবে তখনি আল সুন্দর করে এখান থেকে উঠে চলে গেছে।
মালা:- দেখলে দাদী তোমার নাতী কত চালাক দেখছে সবাই ভাবির হয়ে কথা বলবে অমনি এখান থেকে উঠে চলে গেছে।
দাদী:- আল লজ্জা পেয়েছে যার ফলে উঠে চলে গেছে। তবে সিমি তোমাকে একটা কথা বলি আল একটু রাগি তবে সে তোমাকে খুব ভালোবাসে তা তুমি বুঝতে পারছো নিশ্চয়? সিমি কিছু বলতে যাবে তখনি ঝিনুক বলে।
ঝিনুক:- রাত অনেক হয়ছে এখন এখানে বসে গল্প গুজুর না করে যার যার রুমে গিয়ে ঘুমান এতে করে সবার জন্য ভালো হবে।
বাবা:- হ্যা ঠিকই বলেছিস ঝিনুক রাত প্রায় তিনটা বাজে। যাও যার যার ঘরে চলে যাও। সবাই সবার মত করে উঠে চলে যাচ্ছে তখনি ঝিনুক সিমির একদম কাছে এসে বলে।
ঝিনুক:- সিমি তুমি ভেবোনা সবাই তোমাকে মেনে নিয়েছে বলে তুমি যা খুশি তা করবে আমি জানি তোমার আর সাহানার উদ্দেশ্য সেইম। আমি থাকতে কখনো তুমি তোমার উদ্দেশ্য সফল হতে পারবে না বলে দিলাম। এই বলেই ঝিনুক চলে গেছে সিমি কিছু বলার আগেই। সিমি মনটা খারাপ করে রুমে এসে দেখে আনো আল দুজনে ঘুমিয়ে আছে। সিমি ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এসে শুয়ে পড়ছে আলের দিকে চোখ পড়তেই সিমির সেই ছাদের কথা গুলি মনে পড়ে গেছে। আর মনে মনে ভাবছে আর যেনো কোনো রকম সমস্যা না হয় সবকিছু যেনো ঠিকঠাক ভাবে হয়। আমি তো যেনে গেছি ওনি আমাকে ভালোবাসে তাহলে আমি কেনো ওনার সাথে ঝগড়া করবো এসব চিন্তা করতে করতে সিমিও ঘুমিয়ে গেছে।

সকালে আজ বাড়ির সবাই দেরি করে ঘুম থেকে উঠেছে। আজ সকালে বাড়িতে কেউ নাস্তা খায়নি একদম দুপুরবেলা লাঞ্চের জন্য সবাই তৈরি হয়ে নেমেছে। সবাই খাবার টেবিলে বসে আছে তখনি আলের বাবা বলে।
বাবা:- আল আমি বলিকি তুই আর সিমি কিছুদিনের জন্য কোথাও থেকে ঘুরে আয়। তোদের বিয়ের পর থেকে একের পর এক ঝামেলে হয়ে আসছে। এখন যেহেতু তেমন কোনো ঝামেলা নেই তাহলে এই সুযোগে কোথাও থেকে ঘুরে আয়।
মা:- হ্যা আল তোর বাবার প্রস্তাবটা মন্দ নয়। তোরা আপাদত দেশে কোথাও গিয়ে দুজনে ঘুরে আয়।
আল:- আমার হাতে এখন সময় নেই আর তাছাড়া সবে মাত্র এত ঝামেলা শেষ হয়েছে। এখন আরেকটা কম্পানির সাথে চুক্তি করেছি ওনাদের এক মাসের মধ্যে মাল ডেলিবারী দিতে হবে আমি এখন কোথাও যেতে পারবো না।
আরিফ:- আমরা আছি তো কোনো সমস্যা হবে না তুই চাইলে যেতে পারিস। (এখন পর্যন্ত সিমির সাথে কোনো রকম সম্পর্ক তৈরি হয়নি আর এনারা আসছে হানিমুনে পাঠাতে দরকার নেই হানিমুনের এর থেকে বাড়িতে আছি বেশ ভালো আছি মনে মনে কথা গুলি ভাবছে তখনি আরিফ বলে) কিরে চুপচাপ হয়ে গেলি কেনো? কোথায় যাবি বলো আমি সবকিছু ম্যানেজ করে দিচ্ছি।
আল:- বলেছি তো এখন আমি কোথাও যাবো না বলেই উঠে চলে গেছে তখন দাদী বলে।
দাদী:- আল যেহেতু এখন যাবে না তাহলে ওকে জোঁড়াজুড়ি করার কোনো দরকার নেই। আরও কিছুটা দিন যাক সিমির আর ওর মধ্যে সম্পর্কটা একটু শক্ত মুজবুত হোক তখন ওরা নিজেরা বলবে কোথাও থেকে বেরিয়ে আসি। তখনি ভাবি বলে উঠে।
ভাবি:- আলকে দেখে মনে হয়না সিমিকে নিয়ে সে কোথাও যাবে।
ঝিনুক:- ভাবি তুমি আমার মনের কথাটা বলেছো আমি বললে কেউ বিশ্বাস করবে না এবার তুমি বলেছো যদি কেউ বিশ্বাস করে। তখনি সিমি বলে।
সিমি:- আমিও বলতেছি ওনার কম্পানির অর্ডারটা শেষ হলেই আমাকে নিয়ে নিজেই হানিমুনে যাবার জন্য পাগল হবে। তখন আপনারা দুজনে দেখে নিয়েন এই বলে সিমি উঠে চলে গেছে তখনি দাদী বলে।
দাদী:- বড় বৌ আর ঝিনুক তোরা ইদানিং খুব বেশি কথা বলিস। তোদের জন্য আবার সবার মন খারাপ হয়ে গেছে।
ঝিনুক:- দাদী তুমি সবসময় আমাকে ছোট করে কথা বলো। তোমরা যতই মনে করো আল সিমিকে ভালোবাসে সত্যি বলতে আল সাহানাকেই ভালোবাসে যার কারণে আজ অব্দি সিমিকে আল তেমন ভাবে বৌ হিসাবে মেনে নেয়নি।
ভাবি:- আমার কাছেও তাই মনে হয় আল এখনো সাহানার প্রতি দূর্বল আছে। সিমির প্রতি আলের তেমন কোনো আগ্রোহ আমার চোখে পড়েনি।
দাদী:- তোমাদের চোখে কাঠের চশমা পড়া তাই তোমরা কিছু দেখতে পাওনা। আল সাহানার চাইতেও বেশী সিমিকে ভালোবাসে সেইটা অল্প কিছুদিনের মধ্যে প্রমাণ পেয়ে যাবে এই বলে ওনি উঠে চলে গেছে আর এক এক করে সবাই চলে গেছে।

সিমি রুমে এসে দেখে আল কাপড় পড়ে রেডি হচ্ছে তখনি সিমি বলে
সিমি:- আপনি কি কোথাও বেরুবেন? আল কিছু বলছে না তখন সিমি আবার বলে আমি আপনাকে কিছু জিজ্ঞেস করেছি। আপনি কি কোথাও বের হচ্ছেন? এবার আল কিছুটা রাগান্বিত মুড নিয়ে বলে।
আল:- হ্যা বেরুবো আর আজকে তোমাকে একটা কথা বলি। আমাকে কখনো প্রশ্ন করা চলবে না। আমার ইচ্ছে হলে আমি তোমার কাছে বলবো আর ইচ্ছে না হলে বলবো না।
সিমি:- বাব্বাহ মুহুর্তে মুড চেইঞ্জ হয়ে যায় কি করে? আজকে আমিও বলি এখন থেকে আপনি যেখানেই যাবেন আমাকে বলে যাবেন যদি না বলে কোথাও যান তাহলে আপনার খবর আছে বলে দিলাম। আল সিমির কথা না শুনেই চলে গেছে তবে তাড়াহুরা করে যাবার ফলে আল আজ তার ড্রয়ারে চাবিটা ভুলে ফেলে গেছে। সিমি মন খারাপ করে বসে আছে তখনি ওর চোখ পড়ছে আলের ড্রয়ারের চাবির উপরে। সিমি চাবিটা হাতে নিয়ে তাড়াহুরা করে নিচে গেছে কিন্তু কোনো লাভ হয়নি আল গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে গেছে সিমি মন খারাপ করে রুমে চলে এসেছে। চাবিটা রাখতে যাবে তখনি মনে সয়তান চেপে বসেছে একবার ড্রয়ার খুলে দেখবো এটাতে কি রাখছে নাহ মনে হয় ওনার দরকারি জিনিস পত্র হবে কিন্তু তাও খুলে দেখি বলেই ড্রয়ার খুলে দেখে একটা মাত্র মোবাইল আর সিমি মোবাইলটা দেখেই চিনে ফেলছে এইটা সিমির নিজের মোবাইল। সিমি মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখছে সবকিছু ঠিক আছে সিমটাও আছে মোবাইলটা চালো করেছে সবকিছু আছে কোনো একটা ছবিও ডিলেট হয়নি নাম্বার গুলি সব ঠিকঠাক আছে সিমির মনে হাজারো প্রশ্ন তৈরি হচ্ছে আরে আমার মোবাইলটা ওনি নিজের কাছে রেখেছে আর আমি মনে করেছি কেউ চুরি করছে? কিন্তু আমার মোবাইলটা ওনি কেনো লুকিয়ে রেখেছে? আজ আসুক এর উত্তর ওনাকে দিতে হবে বলে মোবাইলটা জায়গা মত রেখে চাবিটা ঠিক জায়গা রেখে আনোর সাথে গল্প করছে।
আনো:- মামুনি একটা কথা বলবে?
সিমি:- হ্যা বলো?
মামুনি:- তুমি বাবাইকে খুব ভয় পাও তাইনা?
সিমি:- কে বলছে তোমাকে?
আনো:- আমি নিজেই দেখে বাবাই যখন তোমার দিকে যায় তখন তুমি পিছনে চলে যাও কেনো? তুমি সবসময় সামনের দিকে যাবে তাহলে বাবাই ভয় পেয়ে পিছনে চলে যাবে।
সিমি:- ওরে আমার দুষ্টুরে বলেই আনোকে জড়িয়ে ধরে চুমুটুমু খেয়েছে। আনোর সাথে সিমি আরও কিছু দুষ্টমি করে নিচে গেছে তখনি ভাবি বলে।
ভাবি:- মা আমি কি এই বাড়ির বৌ নাকী কাজের মেয়ে?
মা:- হঠাৎ এমন কথা বলছো কেনো?
ভাবি:- কেনো বলছি আপনি বুঝতে পারেন নাই আমি সবসময় কাজ করি আর সিমি কোনো কাজ করে না। এতদিন না হয় করেনি কারণ সবাই ওকে বৌ হিসাবে মেনে নেয়নি এখন তো সবাই মেনে নিয়েছে তাহলে এখন কেনো আমি সব কাজ একা একা করবো?
মা:- ও এই কথা ঠিক আছে এখন থেকে সিমিকেও বলে দিবো যাতে করে সংসারের কাজে হাত লাগাই তখনি সিমি বলে।
সিমি:- মা আমি আজ থেকে সংসারের কাজে হাত দিবো আমি সব কথা শুনেছি আমি রাতের রান্নার সময় লতার সাথে থাকবো।
দাদী:- বড় বৌ এবার হয়ছে তো? ভাবি কিছু বলেনি চুপ করে চলে গেছে সিমি আনোকে আলের মায়ের কাছে দিয়ে রান্নাঘরে গেছে। লতার সাথে কথা বলে রাতের খাবার রেডি করেছে তবে আগের বারের রান্নার কথা মনে রেখে সবকিছু ঠাক ঠাক ভাবে রান্না করেছে আর লতাকে বলে গেছে রান্নার প্রতি নজর রাখতে। সিমি রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে বসেছে তখনি আল রুমে প্রবেশ করেই আগে ড্রয়ারের চাবিটা হাতে নিয়ে সঙ্গে সঙ্গে ড্রয়ার খুলেছে তখনি সিমি বলে।
সিমি:- ড্রয়ারে আমার মোবাইলটা খুব ভালো করেই রাখা আছে। সিমির কথা শুনে আল কিছুটা চমকে গেছে আর তখনি বলে।
আল:- তুমি ড্রয়ার খুলেছো কেনো তুমি জানো না কারও ব্যাক্তিগত জিনিসে অনুমতি ছাড়া স্পর্শ করা ঠিক না।
সিমি:- অন্যের ব্যক্তিগত জিনিসে হাত মানা তাহলে আপনি অন্য কারো ব্যাক্তিগত মোবাইল চুরি করে নিজের ড্রয়ারে রেখেছেন? এবার আল কিছুটা চুপ করে আছে তখন সিমি বলে কি হলো উত্তর দিন?
আল:- এটা তোমার মোবাইল না এটা আমার মোবাইল তখনি সিমি আলের হাত থেকে মোবাইলটা নিয়ে চালো করে মোবাইলে থাকা সিমির সবকিছু দেখাচ্ছে।
সিমি:- কি এই গুলা কি মিথ্যা? কেনো আপনি আমার মোবাইলটা নিজের কাছে নিয়ে রাখছেন?
আল:- দরকার ছিলো তার কারণে রাখছি যাতে করে তুমি কারো সাথে কোনো রকম যোগাযোগ না করতে পারতে আর যার ফলে আজ আমার প্ল্যানে আমি সফল পেয়েছি। এখন নাও তোমার মোবাইল তুমি রেখে দাও।
সিমি:- আপনি এমন কেনো?
আল:- আমি এমনি কিছু কাজ বুদ্ধি খাটিয়ে করতে হয়। তখন যদি মোবাইলটা এমন ভাবে লুকিয়ে না রাখতাম তাহলে তুমি কবেই চলে যেতে আর আমার কাজ আমি কম্পিলিট করতে পারতাম না।
সিমি:- তাই বলে এমন ভাবে মানুষের সবকিছু বন্ধি করে তারপর নিজের কাজ হাছিল করতে হবে? ভালোবাসা দিয়ে তো কাজ কম্পিলিট করা যায়।
আল:- দুনিয়ার সব মানুষ তোমার মত বোকা নয় যে সবকিছুতে ভালোবাসা টেনে আনবে। দেখো আমি ইচ্ছে করে আজ চাবিটা রেখে গেছিলাম তুমি সেই চাবিটা দিয়ে কি করো? তুমি ঠিক সেই কাজটা করেছো যেইটা আমি অপছন্দ করি। তুমি আমার এই পরীক্ষাতে একদম শূন্য পেয়েছো সামনে কখনো তোমার কাছে আমার ব্যাক্তিগত কোনো জিনিস রাখা যাবে না বলেই আল ওয়াশরুমে চলে গেছে সিমি রেগে মেগে আগুন হয়ে বলে।
সিমি:- নিজে যে আমার মোবাইলটা লুকিয়ে রেখেছে সেইটার কোনো দোষ নেই আর এখন আমার সব দোষ দিয়ে নিজে চলে গেছে। ঠিক আছে এইটার প্রতিশোধ নিবো বলেই ও নিচে গেছে সবাই খাবার টেবিলে বসে আছে।
মা:- সিমি আল কোথায়?
সিমি:- ওনি আসতেছে। তখন সবাই খাবারের দিকে মনোযোগী হয়েছে তখন আল এসে খাবার খেতে বসেছে।
মা:- আজ কিন্তু সিমি রান্না করেছে তখন সবাই ভয়ে ভয়ে তরকারী নিচ্ছে প্রথম তরকারীটা খুব ভালো হয়েছে সবাই অনেক প্রশংসা করেছে এরপরের তরকারীটা নিতেই সবাই কেমন করে উঠছে।
বাবা:- সিমি তুমি আজকেও মরিচ বেশি দিয়েছো?
সিমি:- বাবা আমি তো সবকিছু ঠিকঠাক ভাবে দেখেছি তখন তো এত ঝাল ছিলো না।
মা:- তোমাকে রান্না করতে বলাটা আমার কি অপরাধ হয়ছে?
ভাবি:- সিমি ইচ্ছে করে এমন করেছে যাতে করে রান্নাঘরে না যেতে হয়।
ঝিনুক:- হ্যা ভাবি ঠিক বলেছো সিমি ইচ্ছে করে এমনটা করেছে।
সিমি:- লতা তুই বল রান্না তুই বল রান্নার মাঝে কি মরিচ বেশি দিয়েছি?
লতা:- আপনি নিজেই রান্না করেছেন আমি কি করে বলবো?
মা:- সিমি তুমি রান্না করতে পারবে না এটা বললে হতো এমন ভাবে আমাদের সবাইকে কষ্ট না দিলে পারতে। সিমি কান্না করতে করতে দৌড়ে চলে গেছে তখন ঝিনুক ভাবির দিকে তাকিয়ে একটা সুন্দর হাসি দিয়েছে। আল ওদের দুজনের হাসিটা আর চাওয়াতে বুঝতে পারছে এরা দুজনে মিলে আজকেও আগের বারের মত সমস্যা করেছে। আল কিছু না বলে উঠে ঘরে গিয়ে দেখে সিমি কান্না করছে তখন আল সিমির মাথায় হাত রেখে বলে।
আল:- সিমি চোখের পানিটা মুছে নাও এরপর থেকে যখন কোনো কাজ করবে সেটা খুব সাবধানে করবে। তুমি রান্না ঠিকঠাক করলেও সেইটা ঠিকঠাক হতে দিবে না। আরও কিছু কথা বলেছে আল সিমি উঠে বসেছে তখন ওর চোখের পানি মুছে দিয়েছে। সত্যি বলতে তোমাকে হাসলে বেশি সুন্দর দেখায়।
সিমি:- কিন্তু আমি লতাকে বলেছিলাম তরকারিতে নজর রাখতে তারপরেও তখনি সিমিকে থামিয়ে দিয়ে বলে।
আল:- যেটা হয়ে গেছে সেইটা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলো। ওদের উদ্দেশ্য ছিলো তোমাকে সবার সামনে খারাপ বানাবে সেইটা ওরা সফল হয়েছে এখন তুমি ঐটা ভুলে যাও এখন তোমাকেও সর্তক থাকতে হবে যাতে করে সামনে আর কখনো ওরা সফল হতে না পারে। তুমি এমন ভাবে কাজ করবে যাতে করা ওরা তোমাকে আরও হিংসা করতে থাকে আর তুমি সবার চোখে ঘরের লক্ষী হয়ে থাকতে পারো। এখন চোখের পানি মুছে নাও আর ফ্রেশ হয়ে ঘুমিয়ে পড়ো। সিমি মনে মনে বলে মাঝে মাঝে ভাবি আপনি আমাকে খুব ঘৃণা করেন আবার মাঝে মাঝে এমন এমন কাজ করেন যেইটা আমাকে বাধ্য করে আপনাকে ভালোবাসতে। আচ্ছা আমরা কি কখনো দুজন দুজনকে ভালোবাসতে পারি না? তখনি আল বলে কি হলো কোথায় হারিয়ে গেলে।
সিমি:- হ্যা যাচ্ছি বলে চলে গেছে আল তার মোবাইলটা হাতে নিয়ে ফেসবুকিং করছে সিমি এসে দেখে আল মিঠি মিঠি হাসছে সিমি আলের হাসি মাখা মুখটা দেখে অবাক হয়ে যাচ্ছে ওনি হাসলেই সবচেয়ে বেশি সুন্দর লাগে এসব ভাবছে তখন ওনি মোবাইলটা রেখে শুয়ে পড়েছে সিমিও অন্য পাশে শুয়ে পড়েছে।

আজ খুব সকালে সিমি ঘুম থেকে উঠেছে আর বাড়ির সব নাস্তা সে একা তৈরি করেছে। আজ সবাই ঘুমিয়ে আছে আর সিমি সব কাজ করে লতাকে বলেছে যাতে করে কেউ কিছু জানতে না পারে।
লতা:- ভাবি আমাকে ক্ষমা করে দিন। রাতে ঝিনুক আপা আর বড় ভাবি মিলে আমাকে এখান থেকে সরিয়ে ওরা তরকারিতে মরিচের গুড়া দিয়েছে।
সিমি:- বুঝতে পারছি যাক এবার ওদের হাতে নাতে ধরবো দেখিস। তবে এখন তুই কিছু বলিস না আমি যে এসব করেছি লতা হ্যা বলেছে তখন সিমি রুমে এসে দেখে আটটা বাজতে এখনো দশ মিনিট বাকী আর ঠিক আটটা বাজে আল ঘুম থেকে উঠবে। এই সুযোগে সিমি আগেই ফ্রেশ হতে চলে গেছে। সিমি ফ্রেশ হচ্ছে এর কিছুকক্ষণ পর আল উঠে ওয়াশরুমে যাবে তখনি চেয়ে দেখে ওয়াশরুম বন্ধ।
আল:- ভিতরে কে? তখনি ভিতর থেকে বলে আমি ভূতনী বেশি ডিসট্রাব করলে ঘার মটকাবো বাহিরে এসে। এই তুমি আজ এত সকাল সকাল ওয়াশরুমে কি করো? আর কোনো সারা শব্দ নেই আল বিরক্ত হয়ে বসে আছে কিছুকক্ষণ পর সিমি বেরিয়ে এসেছে তখনি আল বলে তুমি এই সময়ে গোসল করেছো কেনো? তখনি সিমি তার চুল গুলি ঝাড়া দিয়েছে আর সেই চুলের পানি আলের নাকে মুখে এসেছে আল রেগে গেছে তখন সিমি আবার এমন ভাবে করছে। আল বুঝতে পারছে ইচ্ছে করে এমনটা করছে তখন কোনো কথা না বলে ওয়াশরুমে চলে গেছে সিমি মুচকি হেসে বলে।
সিমি:- আমি তো বুঝে গেছি আপনার দূর্বল জায়গা কোনটা আজ থেকে সেইটা কাজে লাগাবো বলে হালকা সাজুগুজু করছে আল খুব দ্রুত আজ ফ্রেশ হয়ে এসেছে কারণ ওর আজ অনেক বড় একটা মিটিং আছে। সিমির দিকে একবার নজর গেছে তখন চেয়ে দেখে সিমি খুব সুন্দর করে সেজেছে মনে হচ্ছে কোথাও যাবে তবে আলের খুব ইচ্ছে করছে সিমিকে একবার পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে ঘারে কাছে ছোট করে হাজার খানেক কিস করতে। কিন্তু করতে সাহোস পাচ্ছে না কারণ সিমিকে এমন ভাবে ধরে ছিলো বিনিময়ে থাপ্পড় খেতে হয়ছে সব চিন্তা ছেড়ে আল নিজেই বলে।
আল:- সিমি আমি বের হচ্ছি আমার ফিরতে দেরি হবে।
আলের কথা শুনে সিমি বসা থেকে উঠে এসে আলকে বলে।
সিমি:- আমাকে বলছেন?
আল:- তুমি ছাড়া তো এই ঘরে সিমি নামের কেউ নেই!
সিমি:- তাই তো তা মসায় আমি আজকে একটু বাড়িতে যাবো মা ফোন করছে বলছে যেতে আপনাকেও সাথে নিয়ে যেতে বলছে।
আল:- আমার কাছে এত সময় নেই। আমি অফিসে পৌছে গাড়ি পাঠিয়ে দিবো তুমি রহিস মিয়াকে বলো ও তোমাকে নিয়ে যাবে বলেই আল বেরিয়ে গেছে। সিমিও আলের পিছু যেতে ছিলো তখনি মনে পড়ছে ওরনা রুমে ফেলে গেছে। সিমি দৌড়ে ওরনা নিয়ে দ্রুত নিচে গেছে আর এর মাঝে আল গাড়ি নিয়ে চলে গেছে। সিমি মন খারাপ করে চলে আসতেছে তখনি ঝিনুক বলে
ঝিনুক:- আল রেগে বেরিয়ে গেছে তাইনা?
সিমি:- আপু আপনি সবসময় দুইলাইন বেশি বুঝেন আপনি যতটা আমাদের সংসার নিয়ে চিন্তা ভাবনা করেন তার এক বিন্দু যদি নিজের সংসার নিয়ে চিন্তা ভাবনা করতেন তাহলে আজ আপনাকে এই বাড়িতে পড়ে থাকতে হতো না। তখনি ঝিনুক কান্না করে বলে উঠে।
ঝিনুক:- দেখছো মা তোমার ছেলের বৌ কত বড় কথাটা বলেছে? সিমি পেছনে তাকিয়ে দেখে আলের মা দাঁড়িয়ে আছে। তখন ঝিনুক কান্না করে আরও বলে। আলের জন্য আমার জীবনটা শেষ হয়ে গেছে এখনো আমার শ্বশুর বাড়িতে মেনে নেয়নি শুধু মাত্র আলের জন্য। আমি তো আমার স্বামীর সাথে ভাড়া বাসায় থাকতে চেয়েছি কিন্তু বড় ভাই গিয়ে নিয়ে এসেছে আর এখন তোমার ছোট ছেলের বৌ আমাকে খুটা দিয়ে বসেছে।
মা:- সিমি তুমি ঝিনুককে এই কথা কেনো বলেছো? তোমাকে আমরা সবাই খুব ভালো বলি আর তুমি কি না আমার মেয়েকে এমন বাজে কথা বলতে পারলে?
সিমি:- মা আমি তো শুধু এই কথাটা বলেছি কিন্তু ওনি যে আমাকে সবসময় ছোট করে কথা বলে তার কি কোনো দোষ নেই?
মা:- ঝিনুক এই বাড়ির মেয়ে আর তুমি হলে বৌ যা বলবে চিন্তা ভাবনা করে বলবে। তোমাকে এই কথা বলার অধীকার কে দিয়েছে? আমার মেয়ে আমি নিজেই ওকে এই বাড়িতে রাখতেছি তারও তো কারণ তুমি জানো তাও কেনো এমন কথা বলেছো? সিমি মাথা নিচু করে আছে তখনি বড় ভাবি বলে।
ভাবি:- আজ অব্দি আমি তো কোনো সময় ঝিনুক আর মালাকে খারাপ কিছু বলিনি দুই দিন হয়েছে এসেছো আর এর মাঝেই এসব কথাবার্তা বলতে আরম্ভ করেছো। এতেই বুঝা যায় ঘরের লক্ষী তুমি না আমি?
ঝিনুক:- আজ আল বাড়িতে আসুক হয় তুমি থাকবে না হয় আমি এই বলে ঝিনুক কান্না করতে করতে চলে গেছে ভাবি ঝিনুকের পিছু পিছু গেছে।
মা:- তোমার সুখে থাকতে একদম ভালো লাগে না তুমি কেনো শুধু শুধু ঝিনুককে এই কথা বলতে গেলে? সিমি চুপচাপ আছে ওনি আরও কিছু বলে চলে গেছে। সিমি মন খারাপ করে ঘরে চলে এসেছে আজ সারাটা দিন সিমির মন খুব খারাপ গেছে রাত দশটার দিকে আল বাড়িতে এসেছে। বাড়ির সবাই নিচে বসে আছে তখনি আলকে ঝিনুক সকালের ঘটনা বলে তবে কিছুটা বানিয়ে আর বাড়িয়ে বলেছে সবটা শুনে আল সোফায় বসে লতাকে বলে।
লতা:- তোর ভাবিকে গিয়ে বল নিচে আসতে। ঝিনুক ভাবি ওরা দুজনে খুব খুশি মতে মতে হাসতেছে। লতা গেছে সিমিকে ডেক আনতে তখনি আলের দাদী বলে।
দাদী:- আল সিমির সাথ রাগারাগি না করে ওকে সুন্দর ভাবে বলবা ঝিনুকের কাছে ক্ষমা চাইতে তাহলে হবে।
মা:- হ্যা আল মা যা বলেছে তা করলে হবে আর ঝিনুক তোকেও বলি সিমি ক্ষমা চাইলেই তো হবে?
ঝিনুক:- কিন্তু আমাকে এতটা অপমান করার পরে শুধু ক্ষমা চাইবে? থাক আমি নিজেই চলে যাবো ক্ষমা চাওয়ার দরকার নেই। এর মাঝে সিমি নিচে সবার সামনে এসেছে তবে সিমিকে দেখে মনে হচ্ছে অনেকটা ভয়ে আছে তখনি আল সিমিকে জিজ্ঞেস করে ঝিনুক যা যা বলেছে সববকিছু সিমি বলেছে কিনা সিমি চুপচাপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে তখনি আল বলে।
আল:- সিমি এমন ভাবে নিরব হয়ে থাকলে সমস্যা বাড়বে তোমাকে যা বলেছি তার উত্তর দাও?
সিমি:- আমি শুধু বলেছি আপা আপনি আমাদের সংসার নিয়ে যতটা চিন্তা ভাবনা করেন ততটা চিন্তা ভাবনা যদি নিজের সংসার নিয়ে করতেন তাহলে এই বাড়িতে পড়ে থাকতে হতো না। আল কিছু বলবে তার আগেই ওর বাবা বলে।
বাবা:- আমার মেয়ে আমার বাড়িতে পড়ে আছে এতে তোমার সমস্যা কোথায়? তুমি কেনো এই কথা বলেছো? তুমি এখুনি ঝিনুকের কাছে ক্ষমা চাইবে যাও। সিমি আলের দিকে তাকিয়ে আছে আল মাথাটা নিচু করে রাখছে সিমি এক পা দুই পা করে ঝিনুকের দিকে এগিয়ে গেছে তখনি ঝিনুক তার পা গুলি দেখিয়ে দিয়ে বলে।
ঝিনুক:- সিমি তুমি যদি আমার পা ধরে ক্ষমা চাও তাহলে আমি ক্ষমা করতে পারি তানা হলে ক্ষমা করবো না বলে পা গুলি বসা থেকে এগিয়ে দিয়েছে ঠিক তখনি উঠে গিয়ে সিমির হাতটা ধরে বলে।
আল:- ক্ষমা চাইতে হবে না তোমার তুমি চলো আমার সাথে যা বলেছো ঠিক বলেছো বলেই সিমির হাতটা ধরে আল টেনে সিঁড়ি দিয়ে উপরে নিয়ে যাচ্ছে আর সবাই বসা থেকে দাঁড়িয়ে অবাক হয়ে চেয়ে আছে ওদের দুজের দিকে।

চলবে…

গল্প:- #তুমি_চাইলে_যেতে_পারো (পর্ব:-২২)
লিখা:- AL Mohammad Sourav

তোমার ছেলের বৌ তোমার ছেলেকে তাবিজ করেছে আমি নিশ্চিৎ তানা হলে সবার সামনে সিমি আমার পা ছুঁয়ে ক্ষমা চাইতে রাজি হয়েছে কিন্তু তোমার ছেলে সিমিকে ক্ষমা চাইতে দেয়নি বরং নিজে জোঁড় করে টেনে নিয়ে গেছে আর বলে গেছে যা বলেছে একদম ঠিক বলেছে। বাবা আমি এই বাড়িতে আর থাকবো না আমি আজকেই চলে যাবো বলে ঝিনুক রাগ করে চলে যাচ্ছে তখনি আরিফ বলে।
আরিফ:- ঝিনুক তুই যাবি কেনো এখানে তোকে একা অপমান করেনি আল বাড়ির সবাইকে অপমান করেছে। এখন রাত হয়ে গেছে সকালে আলের সাথে আমরা সবাই কথা বলবো কেনো আল সিমিকে এমন ভাবে নিয়ে গেছে।
বাবা:- হ্যা ঝিনুক সকালে আলের সাথে আমরা কথা বলবো আর তাছাড়া এখনও তোর শ্বশুর বাড়িতে সম্পর্ক ঠিক হয়নি ফিরুজ যতই বলুক তোকে নিয়ে আলাদা থাকবে এটা আমরা দিতে পারি না। ফিরুজের মা তোদের বাসায় এর আগে গিয়ে কি বাজে ব্যবহার করে এসেছে আমি চাইনা নতুন করে আবার কোনো রকম ঝামেলা হোক।
ঝিনুক:- ঠিক আছে তোমরা যেহেতু এত করে বলছো সেহেতু আমি কিছু বললাম না। সকালে অবশ্যই আলকে জিজ্ঞেস করবে কেনো সে এমনটা করেছে।
বাবা:- হ্যা আমি নিজে জিজ্ঞেস করবো। আচ্ছা সবাই যার যার ঘরে যাও। সবাই সবার ঘরে চলে গেছে আর আল সিমিকে ঘরে এনে বলে।
আল:- সিমি তুমি আপুকে এই কথা বলতে গেলে? তুমি কি নিজে থেকে বলেছো নাকী আপু তোমাকে কিছু বলেছে?
সিমি:- সকালে আপনি আমাকে সাথে না নিয়ে বেরিয়ে গেছেন। আমি মন খারাপ করে চলে আসতেছি তখনি ওনি বলে আপনি নাকি আমার সাথে রাগারাগি করে বেরিয়ে গেছেন তখনি আমি সেইটা বলি।
আল:- বুঝতে পারছি আচ্ছা শুনো তুমি এখন থেকে কোনো কাজ করলে আমাকে জিজ্ঞেস করে তারপর বাড়ির কাজে হাত দিবে। আমি কি বলেছি তুমি বুঝতে পারছো তো?
সিমি:- হ্যা বুঝতে পারছি। তখন আল ফ্রেশ হতে চলে গেছে সিমি মন খারাপ করেই বসে আছে আল কিছুকক্ষণ পর বেরিয়েছে সিমির মন খারাপ দেখে বলে।
আল:- আজ তোমাদের বাড়িতে গেছিলে?
সিমি:- আমাকে কেউ নিয়ে গেছে যে আমি যাবো?
আল:- ঠিক আছে আগামীকাল সকালে আমি অফিসে যাবার সময় তোমাকে নামিয়ে দিবো আর সন্ধায় তোমাকে নিয়ে আসবো এবার অন্তঃত একটু হাসো!
সিমি:- আচ্ছা আপনার আগের স্ত্রী সাহানা যদি মন খারাপ করতো তাহলে কি এমন ভাবে মন ভালো করতো? সিমি কথাটা বলার সাথে সাথে আলের চেহারাটা কেমন মলিন হয়ে গেছে টাওয়ালটা রেখে সোজা বারান্দায় চলে গেছে সিমি বুঝতে পারছে আল রেগে গেছে তখন ওর পিছু পিছু গেছে।
আল:- সিমি প্লিজ একটু একা থাকতে দাও প্লিজ।
সিমি:- সরি আমি বুঝতে পারিনি তখনি আল রেগে গিয়ে সিমিকে দেওয়ালের সাথে ধাক্কা দিয়ে রেখে বলে।
আল:- তোমাকে যা করতে আর বলতে বারণ করি তুমি ঠিক সেইটা বেশি করো আর বেশি বলো। তোমার এই কথাটা আমার যে কত কষ্ট হচ্ছে সেইটা তুমি বুঝতে পারছো অন্তঃত এইটা আর বলবে না। সিমি খুব কষ্টে নিজেকে সামলিয়ে রাখছে ওর গলাতে এতটা জোঁড়ে চেপে রাখছে মনে হচ্ছে নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাবে তখনি আল ছেড়ে দিয়েছে আর সিমি কাঁশতে আরম্ভ করেছে। সিমির কাঁশি থামছে না তখন আল নিজেই তাড়াহুরা করে রুমে গিয়ে পানি নিয়ে এসেছে। সিমি নাও পানি খাও সিমি গ্লাসটা হাতে নিয়েছে আল চেয়ে আছে তখনি সিমি গ্লাসটা ফেলে দিয়ে সোজা রুমে চলে এসেছে। আল সিমির পিছু পিছু এসে জোঁড় করে ওকে পানি খায়িয়ে দিয়ে বলে। এখন তোমার যতটা কষ্ট হয়ছে ঠিক তাঁর চাইতে বেশি কষ্ট হয়ছে আমার যখন তুমি আমাকে সাহানার কথা জিজ্ঞেস করেছো?
সিমি:- যে চলে গেছে তাঁর জন্য কষ্ট পাওয়ার কি আছে?
আল:- ওর জন্য আমি কোনো কষ্ট পায়না কিন্তু তুমি নিজেকে ওর সাথে তুলনা দিলে কেনো? আমি তোমাকে তোমার করে সুখে রাখতে চাই আগে কার সাথে কেমন ভাবে কি করেছে সেইটা কেনো তুমি বলবে? আচ্ছা আমি তোমার অতীত সম্পর্কে আজ পর্যন্ত জিজ্ঞেস করেছি? সাহানা আমার সাথে কি কি করেছে সবকিছু তোমাকে খুলে বলেছি তাও কেনো তুমি ওর কথা টেনে আনবে?
সিমি:- সরি আমার ভুল হয়ে গেছে আর কখনো এমনটা বলবো না। আল আর কিছুই বলেনি সোজা শুয়ে পড়েছে সিমিও শুয়ে পড়ছে তবে আজ আনো আলের দাদীর সাথে ঘুমিয়ে আছে যার কারণে মাজে কিছু নেই। সিমি আলের দিকে তাকিয়ে আছে আর মনে মনে ভাবছে কবে এই দুরুত্ব দূর হবে তখনি আল বলে উঠে।
আল:- দুরুত্ব দূর হবে না বরং বারবে এক ইঞ্চি যদি আমার দিকে আসো তাহলে কিন্তু খবর আছে।
সিমি:- এই আপনি আমার মনের কথাটা শুনলেন কি করে?
আল:- মানুষ মনে মনে বললে কিছুই বুঝা যায়না কিন্তু তুমি যে জোঁড়ে জোঁড়ে বলেছো এটাকে যে মনে মনে বলা হয় যানা ছিলো না। তখন সিমি নিজে নিজে বলে সত্যি আমি বোকা কবে যে চালাক হবো এসব ভাবতেছে তখন আল ঘুরে অন্য দিকে চলে গেছে সিমি এবার কিছুটা রাগ করে সে ও অন্যদিক মুখ করে শুয়েছে।

প্রতিদিনের মত আজকের সকালটা হয়নি আজ একটু অন্যরকম হয়ছে আল চোখ খুলে দেখে তার বুকের উপর একটা পা আর ঠিক নাকের সামনে একটা পা পড়ে আছে। আল নিজের চোখ গুলি ঢলতে ঢলতে বুঝার চেষ্টা করছে পা গুলি কার তখনি মনে পড়ছে এই গুলা সিমির পা তখনি চোখ খুলে দেখছে ওর মাথাটা কোথায় আছে যখন মাথাটা দেখেছে নিজের অজান্তে হেসে দিয়েছে কারণ মাথাটা তার বালিশে আছে আর পা গুলি বটে আলের উপরে এনে দিয়েছে। সিমিকে ডাক দিতেছে কিন্তু ওর কোনো সারা শব্দ নেই আল ওর পায়ে সুড়সুড়ি দিতে লাগলো তখনি সিমি ঠাস করে এক লা`থি মেড়ে বসে আর সেই লা`থি খেয়ে আল সোজা খাটের উপর থেকে পড়ে যায়। আল রেগে মেগে আগুন হয়ে ওয়াশুরুম থেকে এক জগ পানি এনে সিমির উপরে ঢেলে দেয় আর তখনি সিমি লাফ মেরে ঘুম থেকে উঠে বসেছে তখন চেয়ে দেখে আল জগ ভর্তি পানি সবটা সিমির উপরে দিতেছে তখনি সিমি বলে।
সিমি:- এই আপনি পানি দিয়েছেন কেনো?
আল:- তুমি আমাকে লা`থি মারছো কেনো?
সিমি:- মিথ্যা বলেন কেনো? আমি কখন আপনাকে লা`থি মারছি? আল বুঝাচ্ছে কি ভাবে সিমি লা`থি দিয়ে খাট থেকে ফেলে দিছে কিন্তু সিমিও বুঝাচ্ছে যে সে লা`থি দেয়নি ওদের এক কথা দুই কথা বলতে বলতে দুজনে হাপিয়ে উঠছে তখন সিমি বলে।
সিমি:- আপনি শুধু শুধু আমার এত সুন্দর স্বপ্নটা নষ্ট করে দিলেন আমি কথ সুন্দর স্বপ্ন দেখছিলাম।
আল:- এখন থেকে তুমি আলাদা করে শুইবে আমি বুঝতে পারছি তুমি ঘুমালে কোনো হদিস থাকে না।
সিমি:- আলাদা ঘুমাবো মানে?
আল:- মানেটা রাতে বু্ঝাবো এমনিতেই অনেক দেরী হয়ে গেছে অফিসে যেতে হবে বলে আল ওয়াশরুমে গেছে সিমি বিছানার চাদর উঠিয়ে নিয়েছে। আল খুব দ্রুত ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে বলে সিমি তুমি না আজ তোমাদের বাড়িতে যাবে?
সিমি:- হ্যা কিন্তু নিয়ে যাবে কে?
আল:- তুমি রেডি হও আমি নিয়ে যাবো তখনি সিমি দৌড়ে ওয়াশরুমে গেছে। আল অল্প কিছুকক্ষণের মধ্যে রেডি হয়েছে তখনি লতা আনোকে নিয়ে এসেছে।
আনো:- বাবাই বলে আলকে জড়িয়ে ধরেছে আল আনোকে কোলে নিয়ে আদর করে দিয়েছে।
আল:- মামুনি তুমি আজ বড়আম্মার সাথে ছিলে?
আনো:- হ্যা বাবা! বড় আম্মা আমাকে অনেক সুন্দর সুন্দর গল্প শুনিয়েছে। এর মাঝে সিমিও ফ্রেশ হয়ে এসেছে ওদের কাছে এসেছে। আনোকে আলের কোলের উপরে রেখে সিমি আদর করতেছে আল সিমির ভিজা চুলের দিকে নজর গেছে চুলের পানি টপ টপ করে পড়ছে আর মনে হচ্ছে শীতের সকালে কুয়াঁশা ঝড়ে পড়ছে। সিমি আলের একদম কাছে ওর শরীর গন্ধটা আলকে পাগল করে দিচ্ছে আল নিজেকে অনেক কষ্টে কন্ট্রোল করে বলে।
আল:- সিমি তুমি আনোর সাথে পড়ে দুষ্টমি করো এখন তাঁড়াতাড়ি রেডি হও আমার অফিসের দেরি হয়ে যাচ্ছে।
সিমি:- রেডি হচ্ছি তো তখনি লতা এসে বলে।
লতা:- ভাই ভাবি আপনাদের দুজনকে নিচে খালু ডাকছে।
আল:- তুই যা আমরা আসতেছি আর শুন নে আনোকে সাথে নিয়ে যা লতা আনোকে সাথে করে নিচে নিয়ে গেছে আল বসে মোবাইলে কথা বলছে সিমি রেডি হচ্ছে। আজ সিমি শাড়ি পড়েছে তখনি আলের নজর পড়েছে সিমির কমোড়ে থাকা জন্ম দাগটার দিকে আল প্রথমে মনে করছে এটা কোনো ময়লা তাই সিমিকে ইশারা করে বলছে তোমার পিঠের ঠিক কমোড়ের দিকে একটু কালি লেগে আছে। সিমি বুঝতে পারছে আল তার জন্ম দাগটার কথা বলছে তাও বলে।
সিমি:- আমাকে বোকা বানাতে চাচ্ছেন আমি ভালো করে জানি ঐখানে কোনো কালি নেই তখনি আল সিমির কাছে গিয়ে ঐখানে হাত দিয়ে ডলা দিয়েছে তখনি সিমি বলে কি করছেন আপনি?
আল:- কালি লেগে আছে সেইটা মুছে দিচ্ছি।
সিমি:- কোথায় কালি দেখি আপনার হাতটা বলে সিমি আলের হাতটা ধরে দেখে কোনো কালি নেই। আল তো লজ্জা মুখ লাল হয়ে গেছে তখনি সিমি বলে আমার সাথে মিথ্যা বলে আমাকে স্পর্শ করতে হবে কেনো? আমি জানি আপনি ইচ্ছে করেই এমনটা করেছেন?
আল:- সত্যি বলছি তোমার এখানে কালি লেগে আছে তখন সিমি মুচকি হসে বলে।
সিমি:- আমার কমোড়ে হাত দিতে ইচ্ছে হয়ছে দেন আমি তো বারণ করিনি তবে কালি লেগে আছে এইটা বলে হাত দিলে খবর আছে বলে দিলাম।
আল:- আমার কোনো ইচ্ছে নেই তোমার কমোড়ে স্পর্শ করার একটু কালি লেগে ছিলো তাই ধরেছি।
সিমি:- তাহলে কালি কোথায়? তখন আল বুঝতে প্রছে এটা সিমির কোনো জন্ম দাগ হবে আর কোনো কথা না বাড়িয়ে সোজা ঘর থেকে বেরিয়ে নিচে যাচ্ছে আর সিমি মনে মনে অনেক খুশি হয়েছে যাক বোকা বানাতে পারছি ওনি সবসময় আমাকে বোকা বানায় আজ আমি বানাতে পারছি সত্যি খুব ভালো লাগছে এসব ভাবতে ভাবতে সিমিও নিচে যাচ্ছে আর ঐদিকে আল নিচে যাবার পড়েই ওর বাবা গতকাল রাতের ঘটনা নিয়ে আলকে প্রশ্ন করে তখন আল ওদের সবাইকে বলছে।
আল:- গতকালের সামান্য একটা কথা নিয়ে তোমরা এখনো পড়ে আছো? সিমির জায়গা থেকে সিমি ঠিক বলছে আপুর বুঝা উচিৎ যে আমি সিমিকে ভালোবাসি তাও কেনো সিমির পিছু লেগে থাকবে?
বাবা:- আমরা সবাই চাই তুই সিমিকে নিয়ে সুখে থাক তাই বলে তোর আপুকে কেউ অপমান করবে তুই তার বিনিময়ে কিছুই বলবি না।
আল:- সিমি কিন্তু ক্ষমা চাইতে ছিলো কিন্তু আপু কি করেছে নিজের পা বাড়িয়ে দিয়ে বলে পা ধরে ক্ষমা চাইলে ক্ষমা করবে। তখন ব্যাপারটা আমার কাছে খারাপ লাগছে। সামান্য এই কথার জন্য সিমি কারো পায়ে ধরে ক্ষমা চাইবে কেনো?
বাবা:- তোর কাছে সামন্য মনে হয়ছে? তখনি দাদী বলে।
দাদী:- জশিম তুই ও দেখছি সবার মত হয়ে গেছিস সিমির কথাটা এতটা দোষের কি? বিয়ের পড়ে মেয়েরা বাপের বাড়ি থাকলে আরও কত রকম কথা শুনতে হয়। ঝিনুক চাইলে ওর শ্বশুর বাড়িতে যেতে পারে কিন্তু যায়না কারণ সেখানে অনেক কাজ করতে হবে।
ঝিনুক:- দাদী তুমি সবসময় আলে পক্ষ নিয়ে কথা বলো আজ অব্দি আমার পক্ষ নিয়ে কোনো কথা বলোনি।
দাদী:- ঝিনুক অনেক হয়ছে এবার ফিরুজের সাথে কথা বল আর তোর শ্বাশুড়ি যা বলে তা শুনে সংসার করো। সবার ভাগ্যে ভালো শ্বাশুড়ি মিলে না তোর জামাই ভালো এইটা তোর শুকরিয়া আদায় করতে হবে। দাদীর কথা শুনে সবাই চুপচাপ হয়ে গেছে এর মাঝে সিমি সেজেগুজে নিচে এসেছে তখন দাদী বলে। সামান্য ছোট একটা বিষয় নিয়ে এত তেনা না পেচিয়ে সবার সাথে মিলে মিশে থাকার চেষ্টা করা ভালো। সিমি আর আল আগে পড়ে দুজন দুজনকে ভালোবাসবে মাঝে থেকে কেনো তুই দোষী হতে যাবি? লতা খাবার লাগা আমার ক্ষিদা লাগছে বলে ওনি গিয়ে খাবার টেবিলে বসেছে আর এক এক করে সবাই গিয়ে বসেছে শুধু আল সিমি আর ঝিনুক ছাড়া।
আল:- আপু সবসময় মানুষকে ছোট করার চেষ্টা করিস না তখন নিজেই ছোট হয়ে যাবে সিমি এসো আমরা আজকে বাহিরে নাস্তা করবো।
সিমি:- হ্যা চলেন আর দাদী মা আনোকে একটু দেখে রাখিয়েন বলে দুজনে বেরিয়ে গেছে। ঝিনুক কান্না করে চলে গেছে বাড়ির সবার মন খারাপ তখন আরিফ বলে।
আরিফ:- দাদী ঝিনুককে এমন ভাবে কথা গুলি বলাটা ঠিক হয়নি?
দাদী:- বয়সটা আমার তোর থেকে বেশি এমন কিছু বলা দরকার আজ তোর বাবা মা আছে বলে ঝিনুক এমন করছে যখন ওরা থাকবে না তখন ঝিনুকের কি হবে? আমি যা বলেছি সব চিন্তা ভাবনা করেই বলেছি আর তাছাড়া সিমি আলকে খুব ভালোবাসে আল যেহেতু সিমিকে ভালোবাসতে আরম্ভ করেছে তাহলে আমরা কেনো ওদের আলাদা করতে যাবো? দাদীর কথা শুনে সবাই চুপচাপ হয়ে গেছে তখন সবাই নাস্তা মুখে দিয়েছে সবাই এক সাথে বলে উঠছে আজকে নাস্তাটা খুব ভালো হয়েছে কে বানিয়েছে নাস্তা?
লতা:- ছোট ভাবি খুব সকালে উঠে নাস্তা বানিয়ে গেছে।
মা:- সিমি নাস্তা বানিয়েছে?
লতা:- হ্যা গতকাল আর আজকে দুই দিন ধরে খুব সকালে উঠে নাস্তা বানিয়ে চলে যায় আর আমাকে বলেছে যাতে কাওকে না বলি।
দাদী:- এবার প্রমাণ হয়েছে তো সিমি কত ভালো মনের মানুষ? সবাই চুপ হয়ে গেছে এদিকে আল সিমিকে নিয়ে একটা রেস্টুরেন্টে গেছে সিমি আজ ভিষণ খুশি।
আল:- সিমি কি খাবে?
সিমি:- আপনি যা খাবেন তা অর্ডার করেন। আল তাঁর পছন্দ মত অর্ডার করেছে সিমি আলের দিকে তাকিয়ে আছে আল বার বার সিমির দিকে তাকাচ্ছে আজ সিমি দুজনে খাবার শেষ করে বিল দিয়ে বাহিরে এসে সিমিকে দাঁড় করিয়ে দিয়ে আল গাড়িটা আনতে গেছে। সিমি দাঁড়িয়ে আছে তখনি সাহানার সাথে দেখা। সাহানা সিমিকে দেখে দাঁড়িয়ে বলে।
সাহানা:- আরে সিমি যে তা তোমার বর কোথায়? সবকিছু ঠিকঠাক মত পারে তো নাকী শুধু শুধু তখনি সিমি বলে।
সিমি:- দেখুন মিস ভদ্রতা বজায় রেখে কথা বলুন আপনার মত সবাইকে এক মনে করবেন না?
সাহানা:- ভদ্রতা বজায় রেখে কথা বলছি শুধু শুধু নিজের যৌবনকাল নষ্ট করছো আমি তোমাকে বলি ওর কাছে না থেকে নিজের পছন্দ মত কাওকে খুঁজে নাও। টাকা পয়সা দিয়ে কি হবে তখনি সিমি ঠাসস করে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দেয় সাহানাকে।
সিমি:- আর যদি আজে বাজে একটা কথা বলিস তাহলে তোর দাত গুলি সব ফেলে দিবোবো বাজে মেয়ে কোথাকার।
সাহানা:- আমার গাঁয়ে হাত তবেরে বলে থাপ্পড় দিতে ছিলো তখন সিমি নিজেই ওর হাতটা ধরে বলে।
সিমি:- সবাইকে নিজের মত দূর্বল ভাবলে হবে না আমি জানি তুই কি কি করেছিস? বিয়ের আগেই নিজের সবকিছু দিয়েছিস আবার বিয়ের পর স্বামী রেখে অন্য ছেলের সাথে আকাম কুকাম করেছিস। আল এখুনি আসবে তার আগেই তুই চলে যা তানা হলে কিন্তু আমি ওনাকে সব বলে দিবো।
সাহানা:- আমি এর প্রতিশোধ নিবো বলে সাহানা চলে গেছে। তখনি আল গাড়িটা নিয়ে এসেছে তবে সিমি একদম স্বাবাভিক ভাবে আছে আলকে কিছু বুঝতে দেয়নি ঘন্টা খানেকের মধ্যে সিমির বাসার সামনে এসেছে।
আল:- সিমি তুমি কি আজ থাকবে নাকী চলে যাবে?
সিমি:- আনো বাড়িতে আছে আমি ঘন্টা খানেক থেকে চলে যাবো।
আল:- তাহলে আমি অফিসে গিয়ে গাড়িটা পাঠিয়ে দিবো তুমি গাড়ি করে চলে যেয়ো এই বলে আল চলে গেছে সিমি বাড়িতে গিয়ে ওর মাকে জড়িয়ে ধরেছে। ওর মা অনেক খুশি হয়েছে দুই ঘন্টা গল্প করেছে মায়ের সাথে বসে ওর বাবাও ছিলো বাড়িতে তবে আল সিমির বাবাকে আবার ব্যবসা করার জন্য টাকা দিয়েছে ওনি এখন আগের থেকে খুব ভালো ব্যবসা করছে। রহিছ মিয়া গাড়ি নিয়ে এসেছে সিমি গাড়ি করে বাড়িতে এসেছে। আনোকে ওর দাদীর কাছ থেকে সাথে নিয়ে রুমে গেছে। তবে সিমির মনে সাহানার প্রতিটা কথা বার বার মনে পড়ছে। নাহ এসব ওনাকে বলা যাবে না পড়ে ওনি আবার কষ্ট পাবে এর থেকে ভালো হবে সাহানাকে তার উপযুক্ত জবাব দিতে হবে বলে একটা প্ল্যান করে।

আজকের দিনটা এমন ভাবে গেছে রাতে রান্নাঘরে গিয়ে নিজের মত করে সিমি সব রান্না করে সবকিছু গুচিয়ে রুমে এসে ফ্রেশ হতে গেছে। আনো ইদানিং আলের দাদীর কাছে বেশি রাখে আলের দাদী যাতে করে সিমি আর আলের মধ্য খুব দ্রুত ভালোবাসে তৈরি হয়। রাত নয়টার দিকে আল বাড়িতে এসেছে সবার সাথে বসে কিছুটা গল্প করে রুমে গিয়ে দেখে সিমি সাজগুজ করছে। আল কিছু না বলে ওয়াশরুমে গেছে কিছুকক্ষণ পর ফ্রেশ হয়ে বের হয়েছে সিমি একদম সেজে গুজে আছে আল সিমির থেকে চোখ সরাতে পারছে না বার বার আর চোখে সিমিকে দেখছে খুব ইচ্ছে করছে সিমিকে জড়িয়ে ধরতে কিন্তু ঐ একটা কথা মনে পড়ে যায় সিমির থাপ্পড়টার কথা। সিমিও বুঝতে পারছে আল বার বার সিমিকে দেখছে তাই ইচ্ছে করে আলের চার পাশ ঘুরঘুর করছে তখনি আল বলে সিমি এমন করছো কেনো?
সিমি:- আমার মনে রং লাগছে তাই এমন করছি। আর আর কোনো কথা বলেনি সোজা নিচে চলে এসেছে সিমিও পিছু পিছু এসেছে। সবাই খাবার টেবিলে বসেছে লতা সবাইকে খাবার এনে দিয়েছে যখনি আল খাবার মুখে দিয়েছে তখনি বুঝতে পারছে আজকেও তরকারীতে ঝাল বেশি দিয়েছে। আল সব তরকারীর ভাটি ওর কাছে রাখছে তখন সবাই অবাক হয়ে চেয়ে আছে।
বাবা:- আল কি হলো তরকারীর ভাটি দে।
মা:- হ্যা আল এদিকে দে। আল কোনো কথা বলছে না সিমি বুঝতে পারছে কোনো গন্ডগোল হয়েছে তখন আল বলে।
আল:- আজ রান্না কে করছে? তখনি ঝিনুক আর ভাবি দুজনে এক সাথে বলে তোমার আদরের বৌ। কেনো আজও কি ঝাল বেশি দিয়েছে? এদিকে আলের অবস্থা একদম সূচনীয় চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে। সিমি দ্রুত রান্নাঘরে গিয়ে তার মোবাইলটা হাতে নেই। এদিকে সবাই সিমিকে নানান রকম কথাবার্তা বলছে তখনি সিমি এসে বলে।
সিমি:- দেখুন আমার কোনো দোষ নেই আমি ঠিকঠাক রান্না করার পড়ে যদি কেউ গিয়ে ইচ্ছে করে আমাকে দোষী বানাবার জন্য তরকারিতে মরিচের গুড়া দিয়ে দেয় তাহলে আমার কি দোষ?
বাবা:- মানে তুমি কি বলছো? তখনি সিমি মোবাইলটা এগিয়ে দিয়ে বলে।
সিমি:- বাবা দেখুন ঝিনুক আপা আর বড় ভাবি দুজনে মিলে রান্না করা তরকারিতে মরিচের গুড়া দিচ্ছে। (সিমি আজ রান্না শেষ করে মোবাইলে ক্যামেরা অন করে ভিডিও রেকর্ড চালো করে তরকারীর গুলার একটু উপরে সুন্দর করে মোবাইলটা রেখে চলে যায় আর সবকিছু রের্কড হয়ে যায়) এক এক করে সবাই ওদের দুজনের কর্মকান্ড দেখছে তখনি সবাই ঝিনুক আর ভাবি অনেক রকম কথা শুনাতে লাগলো।
ভাবি:- এসব কিছু আমি করিনি সব করিয়েছে ঝিনুক আমি বারণ করেছি তখনি ঝিনুক বলে।
ঝিনুক:- ভাবি তুমি আমার নামে সব দোষ দিচ্ছো কেনো? তুমি তো আমাকে প্রথম থেকে সিমির বিরুদ্ধে এসব কাজ করতে বলেছো। দুজনে দুজনের দোষ দিচ্ছে তখনি আরিফ রেগে গিয়ে ওর বৌকে কশিয়ে একটা থাপ্পড় দিয়ে বলে।
আরিফ:- ঝিনুক বলবে তুমি ওর কথা শুনে অন্য একটা মেয়ের নামে এতটা বদনাম তৈরি করতে একটু নিজের ভিবেকে বাদে নাই? তখনি বাবা সবাইকে শান্ত হতে বললেন বাবা কিছু কথা বলে এরপর সিদ্ধান্ত নেই ঝিনুককে ফিরুজের সাথে আলাদা বাড়িতে রাখবে। ঝিনুক এসব শুনে উঠে চলে যায় আর ভাবি কান্না করতে করতে চলে যায়। আজ সবাই ফল খেয়ে যার যার রুমে চলে যায়। আনোকে নিয়ে সিমি উপরে যাচ্ছে তখনি মা বলে।
মা:- সিমি আনোকে আমার কাছে দাও আজ থেকে আনো রাতে আমার সাথে থাকবে তুমি আলকে বলো। দাদু আমার সাথে আসো বলে আনোকে নিয়ে গেছে। সিমি রুমে এসেছে দেখে আল এখনো ঝালে কেমন ফুঁফাচ্ছে সিমি রুমে ঢুকতেই আল বলে।
আল:- আনো কোথায়?
সিমি:- মা বলেছে এখন থেকে রাতে আনো মায়ের সাথে থাকবে।
আল:- কেনো তুমি যদি আনোকে রাখতে না পারো তাহলে আমাকে বলো আমি নিজে আমার মেয়েকে রাখবো।
সিমি:- আমি কি বলেছি যে আমি পারবোনা মা নিজেই আমার থেকে জোড় করে নিয়ে গেছে ঠিক আছে আমি গিয়ে নিয়ে আসতেছি।
আল:- থাক এখন যেহেতু নিয়ে গেছে সেহেতু আনতে হবে না আগামীকাল থেকে আনোকে আমাদের রুমে নিয়ে আসবে বলে আল শুয়ে পড়েছে সিমিও মন খারাপ করে শুয়ে পড়েছে।

সকালে উঠে সিমি আজ আগে আগেই রান্না করে এসে ফ্রেশ হয়েছে। আল ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হতে যাবে তখনি সিমির সাথে ধাক্কা লেগেছে সিমি পড়ে যাচ্ছে আল ওকে ধরেছে।
আল:- এই তুমি এত সকাল সকার রোজ রোজ গোসল করো কেনো?
সিমি:- মানে?
আল:- তোমাকে তো আমি কিছুই করি না তাহলে রোজ রোজ গোসল করার কি দরকার? তখনি সিমি রেগে যায় আর আলকে ধাক্কা দিয়ে খাটের উপরে ফেলে দিয়ে ওর বুকের উপরে বসে বলে।
সিমি:- এই আপনাকে কি আমি বারণ করেছি আমাকে কিছু করতে? আপনার বিয়ে করা বৌ আমি যখন যা করতে মন চাইবে তাই করবেন? ইচ্ছে করলে জড়িয়ে ধরবেন, ইচ্ছে করলে কোলে নিবেন, ইচ্ছে হলে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে ঘারে চুমু খাবেন, ইচ্ছে হলে রাতে জড়িয়ে ধরে যাপ্টি মেড়ে শুয়ে থাকবেন, আমি কি কখনো বারণ করেছি আমাকে এইটা করবেন না! ঐটা করবেন না! আমি আপনার বৌ আমার সাথেই তো করবেন! সিমির কথা শুনে আল থ হয়ে আছে কি বলছে মেয়েটি তখনি আল বলে।
আল:- সিমি তুমি ঠিক আছো তো তখনি সিমি বলে হ্যা আমি ঠিক আছি বলেই সিমি তার ঠোঁট আলের ঠোঁটে গুজে দিয়েছ। তখনি আনো রুমে ঢুকে বলে।
আনো:- মামুনি বাবাই কি হয়ছে তুমি বাবাই বুকের উপরে বসে আছো কেনো? আনোর কথা শুনে সাথে সাথে দুজনে দুই দিকে আল সোজা দৌড়ে ওয়াশরুমে আর সিমি তার শাড়ির আচল ঠিক করা নিয়ে ব্যাস্ত।

চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে