তুমি আমার ভালোবাসা পর্ব-১৬

0
1825

#তুমি_আমার_ভালোবাসা
#পর্ব_১৬
#লেখিকা_Munni_Akter_Priya
.
.
প্রিয়া যথাসম্ভব চেষ্টা করে নিজেকে সামলানোর। কিন্তু সেটা কিছুতেই পারছেনা। বরাবরের মত এবারও প্রিয়ার ছলছল করা চোখ ফাহাদের দৃষ্টি এড়িয়ে যেতে পারেনি। ফাহাদ চুপ করে প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে দেখে ফুলও থেমে যায়। ফাহাদ জিজ্ঞেস করে,
“কি হয়েছে প্রিয়া?”
“কিছুনা।”
“মিথ্যা বলছো কেন? তোমার চোখে পানি কেন তাহলে?”
“কই?”
“আমার কাছে লুকিয়ে লাভ নেই। বলো কি হয়েছে?”
“আসলে আপনার আর ফুলের খুনসুটি দেখে আমার ভাইয়ার কথা মনে পড়ে গেলো। আপনি তো জানেনই বাড়িতে প্রবলেম হওয়ার পর থেকে ভাইয়ার সাথে তেমন করে আর কথা বলিনা। তাই আগের কথা মনে পড়ে খারাপ লাগছে।”
প্রিয়া সম্পূর্ণ কথাটাই মিথ্যা বললো। কারণ সত্যিটা যে একদমই প্রিয়ার গলা দিয়ে বের হবেনা। ফাহাদ কিছু না বলে এখনো তাকিয়ে আছে। ফাহাদ স্পষ্ট বুঝতে পারছে যে, প্রিয়ার চোখমুখ মিথ্যা বলছে আর কিছু একটা লুকাচ্ছে। এদিকে প্রিয়াও আর বসে থাকতে পারছেনা। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এখান থেকে যেতে হবে। আচমকা প্রিয়া ফাহাদের হাত ধরে বলে,
“প্লিজ আমাকে বাসায় দিয়ে আসেন প্লিজ।”
“মানে কি? মা তোমাকে না খেয়ে যেতে দিবেনা।”
“প্লিজ!”
কান্নায় প্রিয়ার গলা দিয়ে কথা বের হচ্ছেনা। খুব হার্ট হয়েছে প্রিয়া। ফাহাদ আর কিছু বললো না। কাউকে কিছু না বলেই প্রিয়াকে বাসায় রেখে আসলো।

প্রিয়াকে বাসায় রেখে আসার পথে গুড়িগুড়ি বৃষ্টি শুরু হয়। বাসায় আসার পরই ঝুম বৃষ্টি শুরু হয়ে যায়। সবাই দুপুরের খাবার খেতে বসেছে। ফাহাদের মা রেগে বললো,
“ফাহাদ, তুই কোন আক্কেলে মেয়েটাকে এভাবে বাসায় দিয়ে আসলি? আমাকে কিছু জানালিও না।”
“মা ওর মন খারাপ ছিল। তাই কিছু বলিনি।”
ফাহাদের বাবা বললো,
“আরেকদিন বাড়িতে এনো।”
“হুম।”
সবাই যে যার মত খাওয়া শুরু করলো। ফাহাদের মা ভীষণ রেগে আছে নিজের স্বামী আর ছেলের ওপর। ফাহাদ ভাবছে প্রিয়ার কথা। হুট করেই কি হলো মেয়েটার! মেয়েদের হুটহাট মুইড সুইং এর একটা বিষয় আছে যেটা ফাহাদ জানে। কিন্তু প্রিয়াকে দেখে তো তেমন মনে হলো না। খেতে খেতে ফাহাদের বাবা বললেন,
“তা ফাহাদ বিজনেসের তো আলহামদুলিল্লাহ্‌ অনেক উন্নতি করে ফেলেছো। এবার বাড়িতে একটা বউ আনো।”
ফাহাদ মুচকি হেসে বললো,
“হুম আব্বু এবার আর বিয়েতে না করবো না।”
“তাহলে মেয়ে দেখা শুরু করি?”
“না আব্বু। আমার পছন্দ করা মেয়ে আছে।”
“কে সে? প্রিয়া?”
ফাহাদ মাথা চুলকে বললো,
“হুম! ভেবেছিলাম আজ পরিচয় করিয়ে দিবো। কিন্তু….”
পুরো কথা বলার আগে তিনি বললেন,
“যা হয়েছে ভালোই হয়েছে।”
“বুঝলাম না আব্বু।”
“না বুঝার মত তো কিছু বলিনি ফাহাদ। দেখো, তুমি এখন বাচ্চা নও। ভালোমন্দ বোঝবার মতন যথেষ্ট জ্ঞানবুদ্ধি আছে তোমার। আমি আশা রাখবো, তোমার চয়েসটাও সেরকমই হবে।”
“আব্বু তুমি প্রিয়াকে চিনো না তো তাই এমন বলছো। প্রিয়া অনেক ভালো একটা মেয়ে। ওর মত মেয়ে অনেক কম আছে।”
“আমি প্রিয়াকে খারাপ বলিনি ফাহাদ। শুধু মেয়ে দেখলেই তো আর হবেনা। মেয়ের ব্যাকগ্রাউন্ড, ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড, আমাদের ফ্যামিলির সাথে ওদের ফ্যামিলির স্ট্যাটাস ম্যাচ করে কিনা সেটাও তো দেখতে হবে। তাছাড়া তোমার মায়ের কাছে শুনলাম মেয়েটা তোমার অফিসের ওয়ার্কার। আর একজন ওয়ার্কারের ফ্যামিলি স্ট্যাটাস কেমন সেটা অবশ্যই তুমি জানো। তাই বলছি, আর আগানোর দরকার নেই। যতদূর এগিয়েছো বাদ দাও। অন্য কোনো মেয়ে দেখো। প্রয়োজনে আমি তোমায় হেল্প করবো।”
“এনাফ আব্বু! এতক্ষণে আমি ক্লিয়ার হলাম প্রিয়া কেন এমন হুট করেই চলে গেলো। সত্যিই আব্বু তোমার মানসিকতা দেখে আমি অবাক হচ্ছি। আমি আরও অবাক হচ্ছি যে, আমি এতদিন গর্ব করে বলতাম আমার আব্বু আমার আইডল। কিন্তু তোমার মানসিকতা এত্ত নিচু সেটা আমি জানতাম না।”
“ফাহাদ!!!”
“একদম চেঁচাবে না আমার ওপর। সত্যিটা মুখের ওপর বলার মত সৎ সাহস আমার আছে।”
“তুমি আমায় ভুল বুঝছো ফাহাদ। একবার নিজেই বিষয়টা নিয়ে ঠান্ডা মাথায় ভেবে দেখো।”
“একবার কেন? আমি হাজার বার ভেবেছি। কিন্তু তোমার মানসিকতায় যা এসেছে, আমার মানসিকতায় তা আসেনি। আমার মন বারবার এটাই বলেছে আমি প্রিয়াকে ভালোবাসি। আর একটা জিনিস আমি বুঝিনা, তুমি কি জন্মগতভাবেই এত সম্পত্তির মালিক ছিলে? আচ্ছা তোমার কথা বাদই দিলাম। আমার কথাই বলি। আমি কি জন্মগতভাবেই বড়লোক? তোমার টাকায় ফুটানি করলেই আমি বড়লোক হয়ে গেলাম? সেজন্য কি আমি পরিশ্রম করিনি? যখন তোমার এত এত সম্পত্তি ছিল না তখন তো তুমি এসব স্ট্যাটাস নিয়ে ভাবোনি। তাহলে আজ কেন? আজ কেন ধনী-গরীব বিষয়টা আসছে? তুমিই তো আমায় বলতে, গরীবদের যেন কখনো অবহেলা না করি, তাদের সাথে কোনো অন্যায় না করি। সবাইকে সমান চোখে দেখি। তাহলে আজ তোমার সেই শিক্ষা কোথায় গেলো? ছেলের বউ হলে এত সমস্যা চোখে পড়ে? বিয়ের পর কি আমরা ওর বাড়িতে গিয়ে শুয়ে-বসে থাকবো? থাকবো না তো। তাহলে কেন ওর বাড়ি নিয়ে, ফ্যামিলি স্ট্যাটাস নিয়ে টানাটানি করছো? আর বাকি রইলো সমাজ, আত্মীয়-স্বজন? কোনো একটা বিজনেসে লস খেয়ে বা সব সম্পত্তি হারিয়ে বিছানায় পড়ে দেখো তো সমাজ তোমাকে বিপদ থেকে তুলতে আসে নাকি। আত্মীয়-স্বজন কয়দিন দেখবে তোমাকে? একদিন? দুইদিন? সর্বোচ্চ একমাস? ব্যাস এরপর তারা উধাও। তাহলে এসব কারণকে কেন এত প্রায়োরিটি দিতে হবে? শোনো বাবা, এরপরও তুমি কি করবে না করবে আমি জানিনা। আমি ক্লিয়ার বলে দিচ্ছি, আমি প্রিয়াকে ভালোবাসি। আর যাই হয়ে যাক আমি প্রিয়াকেই বিয়ে করবো।”

কথাগুলো বলেই ফাহাদ বৃষ্টির মধ্যে গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে।
.
.
ছাদে বৃষ্টির মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে প্রিয়া। আগে একটা সময় ছিল যখনই বৃষ্টি হতো প্রিয়া ছুটে যেত বৃষ্টিতে। বৃষ্টিতে ভিজতো আনন্দে। বৃষ্টির প্রতিটা ফোঁটা প্রিয়াকে ডাকতো ভেজার জন্য। আর প্রিয়াও মরিয়া হয়ে পড়তো ভেজার জন্য। মায়ের কড়া নজর এড়িয়েও যে কত বৃষ্টিতে ভিজেছে তার কোনো ইয়াত্তা নেই। এমনও সময় গিয়েছে প্রিয়াকে ঘরে তালা দিয়েও রাখা হয়েছে। কিন্তু হাড় মানেনি তখনও প্রিয়া। জানালা খুলে দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতো। বৃষ্টিকে উপেক্ষা করার ক্ষমতা যেন প্রিয়ার ছিলই না। লাস্ট বৃষ্টিতে ভেজা শুরু করে চোখের পানি লুকানোর জন্য। এরপর আর তেমন ভেজা হয়নি। আজ অনেক অনেক দিন পর এভাবে বৃষ্টিতে ভিজছে প্রিয়া।ভাগ্যিস চোখের পানির কোনো রং নেই। বৃষ্টির সাথে সাথে চোখের প্রতিটা ফোঁটা পানি ধুয়ে যাচ্ছে। প্রিয়া এটাই ভেবে পাচ্ছেনা যে, প্রিয়া কেন কষ্ট পাচ্ছে। ফাহাদের বাবা তো ভু্ল কিছু বলেনি। ঠিকই বলেছে। তাহলে কেন কষ্ট হচ্ছে প্রিয়ার। এমনও তো নয় যে প্রিয়া ফাহাদকে ভালোবাসে। ভালোবাসে! নাকি বাসেনা! নাহ্ আর ভাবতে পারছেনা প্রিয়া। এবার শব্দ করে কাঁদতে কাঁদতে ফ্লোরেই বসে পড়ে। পেছন থেকে সবটা দেখছে ফাহাদ। আস্তে আস্তে করে এগিয়ে যায় প্রিয়ার কাছে। সামনে গিয়ে প্রিয়ার দিকে এক হাত বাড়িয়ে দেয়। প্রিয়া সামনে মাথা তুলে তাকাতেই চমকে যায়। উঠে দাঁড়িয়ে বলে,
“আপনি?”
“অন্য কাউকে আশা করেছিলে?”
“আপনি এখানে কি করছেন?”
“নিজের চোখে দেখতে আসলাম।”
“কি?”
“তোমাকে। ভালোবাসো অথচ বলো না।”
“আমি কাউকে ভালোবাসিনা। ভালোবাসা আমার জন্য না।”
ফাহাদ প্রিয়ার কোমড়ে ধরে কাছে টেনে বলে,
“কিন্তু তুমি যে আমার ভালোবাসা।”
প্রিয়া ধাক্কা দিয়ে ফাহাদকে সরিয়ে দেয়।
“একদম আমার কাছে আসবেন না। ভালোবাসিনা আমি। চলে যান আপনি এখান থেকে।”
“কেন এভাবে দূরে সরিয়ে দিচ্ছো? আমার বাবার জন্য? তুমি বাবার কথাগুলোই শুনলে আমার ভালোবাসা দেখলে না? এতগুলা মাস যে পাগলের মত ভালোবেসেছি সেটা চোখে পড়েনি তোমার?”
“আমি আপনার কোনো কথাই শুনতে চাই না। চলে যান আপনি এখান থেকে।এইসব ভালোবাসা আবেগ। আজ আছে, কাল নেই। একটা সময় ঠিকই বাবার কথাগুলোকে প্রায়োরিটি দিবেন। তখন বলবেন, আসলেই ভুল করেছি ভালোবেসে।”
ফাহাদ একবার এদিক-সেদিক তাকালো। প্রিয়ার হাত ধরে বললো,
“চলো।”
“কোথায়?”
“আমার সাথে।”
“আমি যাবো না কোথাও।”
“আমিও একা কোথাও যাচ্ছি না।”
ফাহাদ প্রিয়ার হাত ধরে টানতে টানতে গাড়ির কাছে নিয়ে যায়।

গাড়ি থামায় একটা খোলামেলা জায়গায়। এখানেও বেশকিছু কাপল দেখা যাচ্ছে। কোনো কাপল এক ছাতায় হাত ধরে হাঁটছে। কেউ কেউ ছাউনির নিচে দাঁড়িয়ে আছে। কেউ টং দোকানে বসে চায়ে চুমুক দিচ্ছে। কোনো কোনো কাপল আবার শখে ভিজছেও। সবার সামনে খোলা জায়গায় দাঁড় করালো প্রিয়াকে। প্রিয়া উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। কি করতে চলেছে ফাহাদ। ফাহাদ এবার প্রিয়ার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে। সবার দৃষ্টি এবার জোগান দিলো। কয়েকজন কিছুটা কাছেও এগিয়ে আসে। রাস্তায় ফুল বিক্রি করা পথশিশুগুলা বড় বড় কচু পাতায় মাথা ঢেকে ওদের কিছুটা সামনে আসে। প্রিয়া আশেপাশে তাকিয়ে বেশ বিরক্ত হয়। সবাই কিভাবে দেখছে! আস্তে আস্তে আরো অনেক মানুষ জড়ো হয়ে যায়। ফাহাদ জোড়ে জোড়ে বলা শুরু করে,
“আমি আমার বাবার কথার ধার করিনা। আমি তোমায় ভালোবাসি। সারাটা জীবন আমি তোমার সাথে কাটাবো। তাই আমি কাকে আমার জীবনসঙ্গী করবো সেটার ডিসিশন শুধু আমিই নিবো। সিদ্ধান্ত তো আমি সেদিনই নিয়ে নিয়েছি, যেদিন তোমায় বৃষ্টির মধ্যে দেখি। তোমার স্নিগ্ধ ভেজা চোখমুখ তখনই আমার মনটা উইল করে নিয়েছে। আমি তখনও ভাবিনি এর পরিণতি কি হতে পারে। আমি এখনও ভাববো না এর পরিণতি কি হবে।আমি শুধু ভাববো কি করে তোমাকে আমার করবো। কি করে তোমার ঐ দুটি হাত সারাজীবন আমার হাতের মুঠোয় রাখবো। তুমি যদি একটা বার বিশ্বাস করে তোমার হাত দুটি আমার হাতে দিতে পারো তাহলে কথা দিচ্ছি এই বৃষ্টিকে সাক্ষী রেখে, এই এতগুলো মানুষকে সাক্ষী রেখে সব বাঁধা-বিপত্তি পেড়িয়ে শুধু তোমাকেই ভালোবাসবো। জীবনের শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত তোমার হাত দুটি শক্ত করে ধরে রাখবো। বাসবে আমায় একটু ভালো?”
ফাহাদের কথা শেষ হতেই একটা ছেলে একগুচ্ছ কদম ফাহাদের দিকে ছুঁড়ে দেয়,
“ব্রো!”
ফাহাদ মুচকি হেসে ফুলগুলো ধরে। ফুলগুলোতে চুমু খেয়ে প্রিয়ার দিকে এগিয়ে দেয়।
“কে কি বলে, বলবে সব ভুলে দাও না হাতটা বাড়িয়ে। বিশ্বাস করো ভালোবাসার বিনিময়ে কখনোই কষ্ট দিবো না। ভালোবাসবে একটু? বিয়ে করবে আমায়?”
প্রিয়া চুপ! ফাহাদ আবারও বললো,
“উইল ইউ ম্যারি মি প্রিয়া?”
প্রিয়া মুখে হাত দিয়ে কাঁদছে। সবাই এবার জোরে জোরে চেঁচিয়ে বলছে,
“হ্যাঁ বলো, হ্যাঁ বলে দাও।”
চারপাশ থেকে একই ধ্বনি ভেসে আসছে। প্রিয়া কান্নার জন্য উত্তর দিতে পারছেনা। ফাহাদের হাত থেকে ফুলগুলো নেয়। ফাহাদ উঠে দাঁড়াতেই প্রিয়া ফাহাদের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে। শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ফাহাদকে। কাঁদতে কাঁদতেই বলে,
“ভালোবাসি ফাহাদ ভালোবাসি।”
চারপাশ থেকে এবার সবার করতালি ভেসে আসে। ফাহাদ প্রিয়ার চোখের পানি মুছতে মুছতে বললো,
“আজই শেষ। এই চোখে আর কোনোদিন পানি দেখতে চাইনা। এই চোখে শুধু আমার জন্য ভালোবাসা দেখতে চাই।”
প্রিয়া তখনও কাঁদছে। ফাহাদ হালকা ধমক দিয়ে বললো,
“কাঁদতে বারণ করলাম না?”
“কান্না পেলে আমি কি করবো?”
ফাহাদ মুচকি হাসলো। কপালে আলতো করে ঠোঁট ছুঁইয়ে বললো,
“ভালোবাসি।”
চারপাশে সবাইকে দেখে প্রিয়া খুব লজ্জা পায়। ফাহাদের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়। ফাহাদ বিষয়টা বুঝতে পেরে বললো,
“লজ্জাবতী!”

যে ছেলেটা কদম ফুল এগিয়ে দিয়েছিলো সে ওদের দিকে এগিয়ে এসে বললো,
“হেয় ব্রো, ফ্রি হলে একটু কথা বলতাম?”
প্রিয়া তো লজ্জায় মাথা তুলেই তাকাতে পারছেনা। ফাহাদ বললো,
“হ্যাঁ শিওর।”
“আমায় চিনেছেন তো?”
“তুমিই একটু আগে ফুল দিলে না?”
“হ্যাঁ ব্রো। গার্লফ্রেন্ডের জন্য এনেছিলাম। কিন্তু আপনাদের দেখে মনে হলো ফুলগুলো আপনাদের কাছেই শোভা পাবে। আসলে ভাই এমন প্রপোজ খুব কমই দেখেছি। সচারচর ভালোবাসার জন্য প্রস্তাব দিতে দেখা যায়। কিন্তু আপনি বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছেন তাও এত মানুষের সামনে। জিনিসটা আমায় খুব মুগ্ধ করেছে।”
ছেলেটার গফ পিঠে একটা কিল দিয়ে বললো,
“তুমি তো আমায় বিয়ের প্রস্তাব দিলে না।”
“বিয়ের প্রস্তাব দিবো না। বিয়ে করে নিয়ে আসবো।”
ফাহাদ হেসে বললো,
“যাকে ভালোবাসি তাকে এভাবে আর ভালোবাসতে ইচ্ছে করেনা। বউ করেই ভালোবাসবো। কত কষ্ট দিয়েছে জানোনা। সব সুদে-আসলে শোধ তুলবো।”
“কিভাবে?”
“ওটা সিক্রেট! বলা যাবেনা।”
বলেই হো হো করে হাসলো ফাহাদ। সাথে ঐ ছেলেটাও। এদিকে ছেলেটার গফ আর প্রিয়া লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলে। ফাহাদ বুঝতে পেরে কথা অন্যদিকে ঘুরিয়ে বললো,
“আমি ফাহাদ। আর ও আমার হবু বউ প্রিয়া।”
“আমি নিহান। আর ইনি আমার গার্লফ্রেন্ড থুক্কু হবু বউ রেসী।”
“তোমাদের সাথে পরিচয় হয়ে খুব ভালো লাগলো। বৃষ্টি না থাকলে বসে কফি খেতাম। কিন্তু প্রিয়াকে আর বেশিক্ষণ ভেজানো যাবেনা। ঠান্ডা লেগে গেলে তো সমস্যা বুঝোনা! আমি তো এখন ওর সাথে থাকি না যে সেবা করবো।”
নিহান হেসে বললো,
“এটা আমার নাম্বার।”
ফাহাদ নিজের নাম্বারটাও দিয়ে বললো,
“একদিন সময় করে আমরা অবশ্যই কফি খাবো একসাথে ওকে? আর আমাদের বিয়েতে কার্ডও পাঠিয়ে দিবো।”
“খুশি হলাম ভাই।”
“ধন্যবাদ তোমাদের। আজ আসি। আল্লাহ্ হাফেজ।”
“আল্লাহ্ হাফেজ।”
ফাহাদ আর প্রিয়া হাঁটা ধরলো। দুজনের মাঝে সামান্য দূরত্ব। ফাহাদ প্রিয়ার হাতের আঙ্গুলের ফাঁকে নিজের হাতের আঙ্গুল ঠুকিয়ে শক্ত করে হাত ধরে হাতের পিঠে একটা চুমু খায়। প্রিয়া মুচকি হেসে ফাহাদের দিকে তাকিয়ে আবার চোখ সরিয়ে নেয়….

চলবে….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে