তুমি আমার পর্ব-০৪

0
1029

#তুমি আমার (পর্ব ০৪)
#মেঘা আফরোজ
·
·
·
কেটে গেলো কয়েকটি দিন,এর মধ্য মেঘার সম্পর্কে রেহান সব কিছুই জেনে নিয়েছে এবং আড়াল থেকে মেঘাকে গভীর ভাবে পর্যবেক্ষণ করেছে রেহান। তবে এসব যে ও কেনো করছে তা আজও অজানা রেহানের কাছে।
একদিন বিকেলে রেহান বাইক নিয়ে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলো হঠাৎ চোখ পড়লো রাস্তার পাশে একটা ছেলে দুহাতে পা চেপে ধরে বসে আছে রেহান বাইক সাইড করে রেখে এগিয়ে গেলো ছেলেটির কাছে। হাটু গেরে বসে ছেলেটিকে বললো
– কি হয়েছে তোমার এভাবে বসে আছো কেনো?
ছেলেটি রেহানের দিকে তাকিয়ে করুন স্বরে বললো
– ভাঙা কাঁচের সাথে লেগে আমার পায়ের আঙ্গুল অনেক খানি কেটে গিয়েছে,আমি হাটতে পারছি না ব্যাথা করছে।
রেহান ছেলেটির হাত সরিয়ে দেখলো প্রচুর রক্ত পড়ছে তাড়াতাড়ি পকেট থেকে রুমাল বের করে ওর পা বেধে দিয়ে বললো
– চলো তোমাকে হসপিটালে নিয়ে যাই এভাবে থাকলে প্রবলেম হবে।
– ভাইয়া আপনাকে কষ্ট করতে হবে না সামনেই আমাদের বাড়ি আপনার ফোনটা একটু দিন আমি আপুকে কল দিয়ে বলি আসতে।
– আমার কোনো কষ্ট হবে না দেখি আমার হাত ধরে আস্তে করে ওঠো।
ছেলেটি আর কথা বাড়ালো না রেহানের সাথে হসপিটালে গেলো। ডাক্তার কাটা জায়গাতে ভালোভাবে পরিষ্কার করে ব্যান্ডেজ করে দিলো,সাথে কিছু ওষুধ ও লিখে দিলো।
রেহান বাইরে এসে ফার্মেসি থেকে ওষুধগুলো কিনে ছেলেটিকে দিয়ে বললো
– নাও এগুলো তোমার ওষুধ ঠিক মতো খাবে।
– না ভাইয়া আমি নিবো না আপু বলেছে অন্যের টাকায় কেনা কিছু না নিতে।
রেহান হেসে বললো
– আচ্ছা টাকাটা না হয় পরে দিয়ে দিয়ো। তোমার নামটা কি সেটাই তো জানা হলো না এখনো?
– আমার নাম তন্ময়।
রেহানের ওর নাম শুনে মেঘার কথা মনে পড়ে গেলো,মেঘার ভাইয়ের নাম ও তো তন্ময়। রেহান তন্ময়কে বললো
– চলো তোমাকে বাড়িতে পৌছে দেই।
– ভাইয়া আমি রিক্সায় চলে যেতে পারবো এমনিতে আপনি অনেক সময় নষ্ট করেছেন আমার পেছনে।
– কোনো সময় নষ্ট হয়নি চলো পৌছে দিয়ে আসবো তোমাকে।
আসলে রেহান এমনিতেই তন্ময়কে পৌছে দিতে চেয়েছিলো তবে যখন ওর নাম শুনলো আর ওর মুখে বারবার আপু ডাকটি শুনে রেহানের কৌতুহল জাগলো যে এটাই মেঘার ভাই নাকি।
.
🌿
.
তন্ময়কে নিয়ে রেহান একটি বাড়ির সামনে এসে দাড়ালো
– ভাইয়া এটাই আমাদের বাড়ি।
রেহান তাকালো বাড়িটির দিকে,বাড়িতে খুব একটা বড় নয় আবার ছোট ও নয় চারপাশে দেয়াল আর ওপরে টিনশিটের বাড়িটি।
রেহান তন্ময়কে নিয়ে বাড়িটিতে ঢুকলো,দরজার সামনে গিয়ে দাড়িয়ে নক করলো দরজায়।
মেঘা রান্নাঘরে ছিলো তখন,শব্দ পেয়ে ওড়নাটা মাথায় দিয়ে এসে দরজাটা খুলে দিলো।

মেঘা দরজা খুলতেই চোখ পড়লো রেহানের দিকে রেহান ও একধ্যানে চেয়ে আছে মেঘার দিকে। মেঘা চোখ সরিয়ে নিয়ে তন্ময়ের দিকে তাকালো খেয়াল করলো রেহান ওকে ধরে আছে,মেঘা তন্ময়কে বললো
– কি হয়েছে ভাই তোর চেহারাটা এমন দেখাচ্ছে কেনো?
– আপু আমার পা কেটো গিয়েছে,এই ভাইয়াটা আমাকে অনেক সাহায্য করেছে।
মেঘা চিন্তিত হয়ে তন্ময়ের পায়ের দিকে তাকিয়ে বললো
– কিভাবে কাটলো! তোকে কতবার বলেছি সাবধানে চলাফেরা করবি। দেখি আয় ভেতরে আয়।
মেঘা তন্ময়কে ধরে ভেতরে নিয়ে আসছিলো,তন্ময় বললো
– আপু ভাইয়াটাকে ভেতরে আসতে বলো।
মেঘা একটু লজ্জিত বোধ করলো ঘুরে তাকিয়ে রেহানকে বললো
– ভাইয়া ভেতরে আসুন।
রেহান মেঘার দিকেই তাকিয়ে ছিলো মেঘার কথায় কিছুটা নরে উঠে হাসি মুখে বললো
– নাহ আজ আসি আমি অন্য কখনো আসবো।
তন্ময় বলে উঠলো
– ভাইয়া প্লিজ আসুন না ভেতরে আপু খুব ভালো চা করে এক কাপ চা খেয়ে যাবেন।
রেহান কিছু একটা ভেবে মুচকি হেসে বললো
– ঠিকআছে চা খাবো তবে আজ না,আসি আমি নিজের খেয়াল রেখো কেমন।
রেহান মেঘার দিকে তাকিয়ে চলে গেলো।
তন্ময় সোফায় বসে বললো
– জানো আপু ভাইয়াটা না খুব ভালো আমাকে কতটা হেল্প করলো।
.
🌿
.
পরের দিন মেঘা কলেজে এসে রেহানকে খুজতে লাগলো। তানিশা মেঘাকে বললো
– এই মেঘা কাকে খুজছিস তুই?
– ফাইনাল ইয়ারের ওই ভাইয়াটাকে খুজছি,কি যেনো নাম? ও হ্যা মনে পড়েছে রেহান ভাইয়াকে খুজছি।

মেঘা কোনো ছেলেকে খুজছে এ কথা শুনে তানিশা অনু দুজনের মুখ হা হয়ে গেলো। অনু অবাক হয়ে বললো
– রেহান ভাইয়াকে কেনো খুজছিস তুই?
মেঘা মজা করে বললো
– কেনো আবার,তুই তো উনাকে লাইক করিস তাই দেখা করে বলবো তোকে যেনো নিজের গলায় ঝুলিয়ে নেয়।
অনু কোমড়ে হাত রেখে মুখ ফুলিয়ে বললো
– মেঘা একদম মজা করবি না বলে দিচ্ছি।
অনুর ফেস দেখে মেঘা তানিশা হেসে উঠলো। তানিশা হাসি থামিয়ে মেঘাকে বললো
– আসল ব্যাপারটা কি সেটা তো বল?
– কাল তন্ময়ের পা কেটে গিয়েছিলো রাস্তা থেকে তারপর রেহান ভাইয়া ওকে হসপিটালে নিয়ে ডাক্তার দেখিয়ে ওষুধ কিনে দিয়েছিলো ওই টাকা টা ভেরত দেবো।
অনু লাফিয়ে উঠে বললো
– দেখেছিস রেহান ভাইয়া কত্তো ভালো।
তানিশা অনুকে থামিয়ে বললো
– যা তোর রেহান ভাইয়ার সামনে গিয়ে এমন ভাবে লাফা আমাদের সামনে একদম লাফাবিনা।
.
🌿
.
রেহানকে না পেয়ে ওরা ক্লাসে চলে গেলো। কলেজ ছুটির পর মেঘা তানিশা অনু গেটের দিকেই আসছিলো। রেহান তখন গেটের পাশে বাইকের ওপর বসে আড্ডা দিচ্ছিলো। মেঘারা সেদিকেই এগিয়ে গেলো। রেহান মেঘাকে আসতে দেখে বাইক থেকে নেমে দাড়ালো,ওরা কাছে আসতেই হেসে বললো
– আরে মেঘা কেমন আছো,তন্ময়ের পায়ের ব্যাথাটা কি কমেছে?
– ভালো আছি ভাইয়া। আর হুম তন্ময়ের পায়ের ব্যাথা একটু কমেছে।
মেঘা ব্যাগ থেকে টাকা বের করে রেহানের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললো
– ভাইয়া টাকাটা নিন।
রেহান ভ্রু কুঁচকে তাকালো মেঘার দিকে
– কিসের টাকা?
– কাল তন্ময়ের ওষুধ কিনে দিয়েছিলেন সেই টাকা।
– আমি চেয়েছি তোমার কাছে?
– চাইতে হবে কেনো,আপনি টাকাটা দিয়েছেন এখন আমি ফেরত দিচ্ছি।
রেহান একটু হাসলো তারপর বললো
– টাকাটা তোমার কাছেই রাখো।
– না ভাইয়া নিন টাকাটা। না হলে আমার খারাপ লাগবে।
– ঠিকআছে একটা কাজ করো টাকাটা দিয়ে আজও কোনো অসহায় শুিশুকে খাবার কিনে দিয়ো।
মেঘা অবাক হয়ে তাকালো রেহানের দিকে। রেহান হেসে চলে গেলো সেখান থেকে।
তানভির রেহানের পেছনে দৌড়ে এসে বললো
– রেহান ব্যাপার কি বলতো,তুই ওই মেয়েটিকে কিছুদিন যাবৎ ফলো করছিস ওকে দেখলে তুই কেমন যেনো অন্য মনষ্ক হয়ে যাস কারনটা কি বলবি?
– এর কারন আমি নিজেও জানি নারে।
– আমি তোর চোখে একটা কারন দেখেছি। বলবো?
– হুম বল।
– মেয়েটি তোর মনে একটু একটু করে জায়গা করে নিচ্ছে যা তুই অনুভব করতে পারছিস না। আমার মন বলছে এটাই কারন।
– তানভির কি বলছিস তুই! তুই তো জানিস আমি রুহিকে……
রেহানকে থামিয়ে তন্ময় বললো
– যদি আমার ধারণা ভুল না হয় তাহলে বলতে পারি মেঘা নামের মেয়েটি তোর মনে যতটা দাগ কেটেছে এ কদিনে,রুহি দের বছরেও তা পরেনি। তুই ঠান্ডা মাথায় কথাটা একবার ভেবে দেখিস।

তানভির চলে গেলো সেখান থেকে,রেহান তানভিরের বলা কথাটা ভাবছে….আসলেই কি তাই মেঘা একটু একটু করে আমার মনে জায়গা করে নিচ্ছে!!! তাহলে রুহি,ওকে কি আমি ভালোবাসি? নাকি রুহি শুধুই ছিলো আমার ভালোলাগা মোহ?
·
·
·
চলবে………………..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে