তুমি আমার পর্ব-০৫

0
1027

#তুমি আমার (পর্ব ০৫)
#মেঘা আফরোজ

·
·
·
সন্ধার পর রেহান নিজের রুমে বসে ল্যাপটপে কাজ করছিলো তখনি ওর ফোনের রিংটন বেজে উঠলো,তানভির কল করেছে ফোনটা রিসিভ করে
– হ্যা তানভির বল।
– রেহান কোথায় আছিস তুই?
– বাসায় আছি। কেনো?
– এক্ষুনি ……….. রেস্টুরেন্টের সামনে চলে আয়।
– কেনো বলবি তো?
– আসলেই দেখতো পাবি তাড়াতাড়ি চলে আয়।
তানভির ফোনটা কেটে দিলো রেহান দেরি না করে জলদি বেড়িয়ে পড়লো। ১০ মিনিটের মধ্য তানভিরের বলা রেস্টুরেন্টের সামনে আসলো। তানভির বাইরেই দাড়িয়ে ছিলো,রেহানকে দেখে এগিয়ে আসলো
– কিরে হঠাৎ এভাবে আসতে বললি যে কোনো প্রবলেম হয়েছে কি?
– ভেতরে চল নিজের চোখেই দেখতে পাবি।
তানভির রেহানকে রেস্টুরেন্টের ভেতরে নিয়ে গেলো একপাশে দাড়িয়ে রেহানকে ইশারা করলো সামনে তাকাতে। রেহান সামনে তাকালো সামনের দৃশ্যটি দেখে রেহান নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না,দুপা পিছিয়ে গেলো রেহান,চোখ ছলছল করে উঠলো।

রেস্টুরেন্টে রুহি ছিলো,একটি ছেলের সাথে খুব কাছাকাছি বসে ছিলো রুহি ছেলেটি ওর হাত ধরে রেখেছিলো। রেহান যখন দেখেছে ছেলেটি তখন রুহির হাতে একটি রিং পড়িয়ে দিয়ে ওকে একহাতে জড়িয়ে ধরেছিলো।

রেহান এইমুহূর্তে কি করবে ভেবে পাচ্ছে না,তানভির রেহানকে নিয়ে একটু দুরে এসে দাড়ালো ওর কাধে হাত রেখে বললো
– এখন তো বুঝতে পারছিস কেনো রুহির থেকে দুরে থাকতে বলতাম তোকে,আসলে ওই মেয়ে এমনি টাকার লোভে তোর সাথে প্রেমের অভিনয় করছে রুহি ওসব ভালোবাসা নামক কথাগুলো বলে শুধু তোকে হাতে রাখার জন্য।ও আমার এক কাজিনের বোন হয় ওর থেকেই আমি জানতে পেরে তোকে বলতাম কিন্তু তুই তো আমার কথায় কোনো পাত্তাই দিস নি।
রেহান আস্তে করে বললো
– তানভির আমার মনে হচ্ছে কোথাও ভুল হচ্ছে শুধু মাত্র টাকার জন্য কেউ ভালোবাসার মতো পবিত্র সম্পর্ক নিয়ে খেলা করতে পারে!!
তানভির অবাক হয়ে তাকিয়ে বললো
– তুই নিজের চোখে দেখেও বলছিস ভুল হচ্ছে! আচ্ছা তুই একটা কাজ কর রুহিকে কল দে জিগ্যেস কর ও কোথায় আছে কি করছে।
রেহান তানভিরের কথামত কল দিলো রুহিকে প্রথম বার রিং হয়ে কেটে গেলো আবারো কল দিলো রেহান তিনবার রিং হওয়ার পর রিসিভ হলো। রেহান শান্ত ভাবেই বললো
– রুহি কি করছো?ফোন ধরতে দেরি হলো যে।
রুহি অপ্রস্তুত কন্ঠে বললো
– ফোনটা রুমে ছিলো আমি মায়ের রুমে ছিলাম।
রেহান রুহির বলা কথা শুনে তানভিরের দিকে তাকালো তানভির ওকে ইশারায় বললো ফোন কাটতে।
– আচ্ছা রুহি পরে কল দিচ্ছি আমি। বলেই কেটে দিলো।
রেহান ফোনটা কেটে কোনো কথা না বলে চুপচাপ দাড়িয়ে রইলো। তানভির বললো
– এবার বুঝলি তো রুহি তোকে কিভাবে নিজের বসে রাখছিলো। রুহি এখানে অথচ তোকে বললো ও মায়ের রুমে ছিলো।
রেহান তানভিরের হাত ধরে বললো
– তানভির রুহি এটা করতে পারলো! কেনো ঠকালো ও আমাকে সেটা বলতে হবে ওকে।
– কি করতে চাইছিস তুই?
– ওর সামনে যাবো চল। রেহান তানভিরকে নিয়ে রুহির সামনে গিয়ে দাড়ালো।
.
🌿
.
রুহি রেহানকে দেখে চমকে উঠলো বসা থেকে দাড়িয়ে ভয়ে ঢোক গিলে বললো
– র রেহান ত ততুমি!!
রেহানের চোখ অসম্ভব লাল হয়ে আছে হাতের মুঠো শক্ত করে বললো
– হ্যা আমি। কি আমাকে এখানে দেখে খুব অবাক হচ্ছো ,এটাই বুঝি তোমার বাড়ি আর মায়ের রুমে ছিলে একটু আগে তাইনা?
– আ আসলে হয়েছে কি রেহান আমি…….
রেহান রুহিকে আর কিছু না বলতে না জোরে চড় বসিয়ে দিলো ওর গালে,রুহি তাল সামলাতে না পেরে নিচে পড়ে গেলো।
রেস্টুরেন্টের সবার চোখ তখন ওদের দিকে রুহির সাথে থাকা ছেলেটিও অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে,রেহান নিজেকে শান্ত করতে না পেরে রুহিকে তুলে আবারো চড় মারলো ওর গালে। রুহি ছলছল চোখে রেহানকে বললো
– রেহান ততুমি আমাকে মারলে!!
– হ্যা মারলাম। অনেক বিশ্বাস করেছিলাম আমি তোকে তানভির সব সময় আমাকে বলে গিয়েছে তোর থেকে দুরে থাকতে আমি শুনিনি অন্ধ হয়ে গিয়েছিলাম তোর মিথ্যা ভালোবাসার মায়াজালে। কেনো ঠকালি তুই আমাকে বল? তোর ফোন ঘন্টার পর ঘন্টা ওয়েটিং পেতাম লাস্ট কয়েকমাস ঠিক করে সময় দিস নি আমাকে তারপরেও কিছু বলতাম না তোকে।
রেহান একটু থেমে আবার বললো
এখন বুঝতে পারছি তুই এ ভালোবাসার নাটক কেনো করছিলি,দিনের পর দিন এটা সেটা বলে টাকা নিতে পারছিলি আমার থেকে এ সুযোগ তো তুই হাতছাড়া করতে চাইছিলি না তারজন্যই আমাকে ঠকাচ্ছিলি তুই!

রুহি কাঁদতে কাঁদতে রেহানের হাত চেপে ধরলো
– রেহান আমাকে তুমি ভুল বুঝছো একবার আমার সব কথা শোনো প্লিজ। রেহান আমি তোমাকে ভালো……
– ব্যাস রুহি অনেক হয়েছে আর কিছু শুনতে চাইনা আমি। নেক্সট টাইম আমার সাথে আর কোনো যোগাযোগ করার চেষ্টা করবে না। রেহান নিজের হাত ছাড়িয়ে বেড়িয়ে গেলো রেস্টুরেন্ট থেকে। তানভির রেহানের এমন রাগ আগে কখনো দেখেনি অবাক হয়ে দেখছিলো ওকে,তানভির ও রেহানের পেছনে বেড়িয়ে গেলো।
.
🌿
.
তানভির দ্রুত বেড়িয়ে এসে রেহানের সামনে এসে দাড়ালো,রেহানকে শান্তনা দিতে বললো
– রেহান তুই মন খারাপ করিস না। এমনটা হওয়ার ছিলো তাই হয়েছে। তুই….
তানভিরকে থামিয়ে রেহান বললো
– তানভির আমার রুহির জন্য খারাপ লাগছে না,খারাপ লাগছে এই ভেবে যে কেউ শুধুমাত্র টাকার জন্য এমন অভিনয় করতে পারে!!
তানভির অবাক চোখে রেহানের দিকে তাকিয়ে বললো
– রুহির জন্য তোর একটুও খারাপ লাগছে না!!তুই তো ওকে বললি আর কোনো যোগাযোগ যেনো না করে এতে কষ্ট হচ্ছে না তোর?

রেহান তানভিরের কথায় থমকে গেলো মনে মনে ভাবলো…সত্যিই তো আমি তো রুহিকে বললাম আর যোগাযোগ না করতে কই তার জন্য তো আমার একটুও খারাপ লাগছে না! এমনকি ওর প্রতি যে ভালোলাগা ভালোবাসার অনুভূতি কাজ করতো সেটার জন্যও খারাপ লাগছে না আমার!

– কিরে রেহান কিছু বলছিস না যে?
– তানভির দেড় বছরের সম্পর্ক রুহির সাথে আমার কিন্তু কেনো জানি না ওর প্রতি কেনো টান অনুভব করতে পারছি না আমি। কেনো বলতে পারিস?
– হুম কারন তুই রুহিকে মন থেকে ভালোবাসতে পারিস নি কখনো। তুই ভাবতিস রুহিকে ভালোবাসিস আসলে সত্যিটা হলো তোর মন রুহিকে ভালোবাসেনি কখনো। যা ছিলো সবটাই ভালো লাগা।
– তাহলে আজ রুহিকে অন্য ছেলের সাথে দেখে কেনো রেগে গেলাম আমি?
– তোর রেগে যাওয়ার বিশেষ কারন হলো রুহির প্রতি তুই কিছুটা হলেও দুর্বল ছিলি আর সেই দুর্বলতা থেকে তোর রাগ হচ্ছে।

রেহান কিছুক্ষণ একদৃষ্টিতে তানভিরের দিকে তাকিয়ে থেকে ওকে জড়িয়ে ধরে বললো
– তুই আজ আমার চোখ খুলে দিয়েছিস তানভির,তুই শুধু আমার বন্ধু নয় আমার ভাইয়ের মত কাজ করেছিস তুই। রেহানের চোখ থেকে দুফোটা পানি গড়িয়ে পড়লো।
তানভির ওকে ছাড়িয়ে হেসে বললো
– রেহান সেই ছোট থেকে এ পর্যন্ত তোর সাথে আছি কখনো চাইনি তোর খারাপ হোক আজও চাই না। তুই নিশ্চই আমার ফোন পেয়ে চলে এসেছিস বাড়িতে বলে আসিস নি তাইনা?
– না বলিনি।
– আচ্ছা তুই এখন বাড়িতে যা আন্টি চিন্তা করছে হয়তো। আর শোন নিজেকে নতুন ভাবে গড়ে তোল রুহি নামে কেউ যে ছিলো তোর জীবনে পারলে ভুলে যাস।
রেহান ছোট করে হুম বলে তানভিরকে বললো
– চল তোকে নামিয়ে দিয়ে আমি বাড়িতে যাবো।
তানভির না করলো না রেহানের সাথে গেলো। রেহান ওকে বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে চলে যেতে নিলে তানভির ডাকলো
– রেহান শোন।
– হুম বল।
– মেঘা কিন্তু খুব ভালো মেয়ে বয়সে ছোট হলেও আমার মনে হয় ও তোর জন্য পারফেক্ট।
রেহান তানভিরের কথায় কিছু বললো না। একটু চুপ থেকে মৃদু হেসে বাই বলে চলে আসলো।
·
·
·
চলবে………………..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে