তুমি অপরূপা পর্ব-৩২+৩৩+৩৪

0
509

#তুমি_অপরূপা(৩২)

ব্যতিব্যস্ত হয়ে অন্তরা আবারও জিজ্ঞেস করলো, “আপনি রূপাকে কিভাবে চেনেন বললেন না তো!”

রূপক এবার একটূ কৌশল প্রয়োগ করলো। হতভম্ব হয়ে বললো, “আপনাকে কেনো বলবো আমি? আপনি কে?”
অন্তরা হতবাক!
এই লোক বলে কি?
পাগল না-কি মাথা খারাপ!
নিজেই তাকে দেখে আনমনে রূপা বলে উঠলো এখন আবার বলছে সে রূপার কে হয়!
এই লোক নিজেই তো মনে হয় অসুস্থ!

ধীর গলায় বললো, “আমি রূপার বোন।আপনি আমার বোনকে কিভসবে চেনেন?”

রূপক অবিশ্বাসের সুরে বললো, “দেখেন,প্রথিবীতে একই চেহারার ৭ জন মানুষ আছে,তাই হতেই পারে আপনি ও রূপার মতো দেখতে কেউ।আপনার কাছে আমি কেনো রূপার কথা বলতে যাবো?আপনি প্রমাণ দিতে পারবেন আপনি রূপার বোন?”

অন্তরা বিস্মিত এবং বাকরুদ্ধ!
এই লোকটা কি বলছে?

রূপক বললো, “আচ্ছা, বলেন তো রূপারা কয় ভাই বোন?”

অন্তরা বললো, “চার বোন,অন্তরা,অনামিকা,অপরূপা,অনিতা।আর আমি অন্তরা।”

রূপক নিজেই জানে না রূপারা কয় বোন,তবুও এমন ভাব করলো যেনো সবজান্তা!

একটু পর রূপক বললো, “আচ্ছা, বেশ!এবার বলেন তো সালমা নামের কাউকে চেনেন আপনি? রূপার বোন হলে নিশ্চয় চিনবেন।”

অন্তরা এবার বিরক্ত হয়ে বললো, “কি বলছেন আপনি? আমার মা’কে আমি চিনবো না কেনো?সালমা তো আমার মা’য়ের নাম।”

রূপক যেনো শক খেলো এই কথা শুনে। রূপা তার ফুফুর মেয়ে!
মাথা কাজ করছে না রূপকের।এ ও সম্ভব!
গলা ধরে এলো রূপকের। তবুও শিওর হওয়ার জন্য বললো, “শেষ প্রশ্ন,আপনি রূপার বোন হলে নিশ্চয় জানবেন আপনার নানার বাড়ি কোথায়।আপনার মামা খালা কয়জন।এবার সঠিক উত্তর দিতে পারলে আমি মেনে নেবো আপনি রূপার বোন।”

অন্তরার ভীষণ বিরক্ত লাগলো। একে তো নিজের জীবনের অশান্তি তার উপর আবার এই লোকের প্রশ্ন।বিরক্ত হলেও অন্তরা জবাব দিলো।

“আমার মামা খালা কারো কথা কখনো মা বলেন নি।মায়ের বাবার বাড়ি ঢাকায় কোথাও।মা সবসময় তার বাবার বাড়ির প্রসঙ্গে চুপ হয়ে যেতেন শুধু জানি তার একজন ভাইয়ের ছেলে ছিলো। রূপক।মায়ের বড় আদরের ছিলো সে।
মাঝেমাঝে যখন মায়ের মন ভীষণ খারাপ থাকতো, তখন মা রূপক আব্বারে বলে কাঁদতেন। সবসময় বলতেন আমার রূপক আব্বার জন্যে শুধু মনটা পোড়ে,রূপক ছাড়া কারো কথা আমার মনে পড়ে না কোনো দিন।আর মনে পড়লেও অতটা কষ্ট লাগে না।সবাইকে ভুলতে পারছি আমার রূপকরে ছাড়া। না জানি আমার বাপজান এখন কার কাছে থাকে,মায়ের আদর তো পায় নাই,এখন কি মায়ের আদর পায় ছেলেটা! ”

রূপকের কি হলো রূপক জানে না। অন্তরা দেখলো এতো বড় একটা ছেলে মুখ ঢেকে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে শুরু করেছে।
অন্তরা হতবাক হয়ে ছেলেটার এই আকুল হয়ে করা কান্না দেখতে লাগলো। অন্তরা কিছুতেই বুঝতে পারছে না তার মায়ের কথা শুনে ছেলেটা কাঁদছে কেনো!

বাসের সবাই তাকিয়ে রইলো রূপকের দিকে। রূপক নিজেকে সামলে নিলো কিছুক্ষণের মধ্যে। তারপর চোখ মুছে অন্তরাকে বললো, “সরি। আসলে আমি নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারি নি। আপনি যে রূপার বোন আমি বিশ্বাস করছি।”

অন্তরা বললো, “আপনি আমার বোনকে চেনেন কিভাবে?আপনি কে?”

রূপক হেসে বললো, “আমি কে তা না হয় আপনার বাড়িতে গেলে জানবেন।আর রূপা আমাদের বাসায় ভাড়া থাকে ঢাকায় তাই চিনি।আমার বোনদের ফ্রেন্ড ও”

অন্তরা আবারও অবাক হলো। রূপা ঢাকায়?
তার ছোট্ট বোনটা এতো বড় হয়ে গেছে যে একা একা এখন ঢাকা থেকে পড়ে!
কতো দিন বাড়ির খবর নেয় নি,কিছুই জানে না তাই।আচ্ছা, অনামিকা কোথায় এখন?
ও পড়ে কোথায়?

হুট করে অন্তরার ভীষণ ভয় করতে লাগলো। কিভাবে আবারও বাড়ি যাবে সে!
সেই তো আবারও বাবা মায়ের কাছে ফিরে যেতে হচ্ছে।
ভেবেছিলো তাদের মুক্তি দিতে পেরেছে অথচ এখন বুঝতে পারলো সন্তানের দায় দায়িত্ব থেকে বাবা মা কখনো মুক্তি পায় না।
আর বাবা মা ছাড়া সন্তানের ও দ্বিতীয় কোনো জায়গা নেই যাওয়ার।

রূপকের কাছে সবটা স্বপ্নের মতো লাগছে।এতো কাছে রূপা ছিলো অথচ কেনো বুঝলো না রূপক যে রূপা তার ফুফুর মেয়ে!
কেমন আছে ফুফু?
বড় আদরের ফুফু তার।মায়ের থেকে পাওয়া অনাদর, তাচ্ছিল্য সব ফুফুর আদর পেয়ে ভুলতো।
তারপর ফুফু যখন হারিয়ে গেলো তারপর থেকে কারো আদর পায় নি রূপক।
এই যে এখনো বুকের ভেতর একখণ্ড শুকনো জমি নিয়ে বেঁচে আছে রূপক।কোনো দিন কেউ তাতে ভালোবেসে যত্ন করে ফুল ফোটাবে সেই আশায়।
অথচ সে জানে না,সে বুঝতে ও চায় না বুকের ভেতর জমে থাকা ব্যথারা আজ দখল করে নিয়েছে রূপকের পুরোটা। শুধু একটু ভালোবাসার স্পর্শ পেলেই তাসের ঘরের মতো সব বিলীন হয়ে যাবে।

দীর্ঘ যাত্রা শেষে রূপকেরা যখন রূপাদের বাড়িতে গিয়ে পৌছায়, ততক্ষণে রোদ পড়ে গেছে।
চারদিক কেমন নির্জন হয়ে আছে। অন্তরার একটু একটু ভয় করছে।
বাড়ির কাছাকাছি যেতে অন্তরা ওড়না দিয়ে মুখ ঢেকে নিলো।তারপর রূপককে বললো, “আপনাকে একটা কথা বলার ছিলো। ”

রূপক জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো।

অন্তরা একটা বড় করে নিশ্বাস ফেলে বললো, “বেশ কয়েকমাস আগে আমি একজনকে ভালোবেসে তার হাত ধরে বাড়ি ছেড়ে চলে যাই।আর তার কয়েক মাস পর জানতে পারি আমি তার সেকেন্ড ওয়াইফ।তার ফার্স্ট ওয়াইফ অন্য এক জনের সাথে পালিয়ে যায়,তার একটা ছেলে আছে প্রথম পক্ষের।সেই ছেলের একটা মায়ের অভাব দেখে সে আমার সাথে ভালোবাসার খেলা খেলে।আমি ছেলেকে মেনেই তার সংসার করি।তাছাড়া আমার উপায় ও ছিলো না।আমরা যেহেতু চার বোন,আমার ডিভোর্সি ফুফু,ফুফাতো বোন,দাদী,বাবা,মা মিলিয়ে অনেক বড় সংসার। প্রতিদিন ৯ জন মানুষের ৩ বেলা খাবার খেতে হলে হিসেব করে দেখেন,দিন ২৭ জন মানুষের খাবার ব্যবস্থা, আমাদের চার বোন এবং আমার ফুফাতো বোনের লেখাপড়ার ব্যবস্থা সবই আমার বাবাকে একা করতে হতো। আপনি হয়তো বুঝবেন না আমাদের বাস্তবতা কেমন ছিলো। আমি বাবার বড় মেয়ে যেহেতু প্রতিক্ষণ আত্মগ্লানিতে ভুগতাম বাবার জন্য কিছু করতে পারি না বলে।

সেই আত্মগ্লানি থেকেই অনেকটা পালিয়ে গেলাম,ভেবেছিলাম বাবার মাথার উপর থেকে আমার একজনের চাপ তো কমবে।
অথচ দেখুন আমার ভাগ্য!
যার কাছে গিয়েছিলাম তার প্রথম স্ত্রী ফিরে আসার পর সে আবার তাকে মেনে নেয়।আমি হয়ে যাই চক্ষুশূল। তাই আবারও বাবা মায়ের কাছে ফিরে যেতে হচ্ছে। আপনি তো আমাদের বাড়িতেই যাবেন,হয়তো অনেক সিনক্রিয়েট হবে। গ্রামের মানুষ তো আমরা,আশেপাশের সব মানুষ এসে জড়ো হবে দেখবেন।আমাকে জোকার মনে হবে সবার কাছে। নানান মানুষ নানান মন্তব্য করবে।সেসব দেখে চমকে যাবেন তাই আগেই বললাম। ”

রূপক সব শুনে কিছুক্ষণ ভেবে বললো, “আচ্ছা বুঝলাম।একটা অনুরোধ করি?”

অন্তরা জিজ্ঞেস করলো, “কি?”

“আপনি বাড়িতে গিয়ে কোনো কথা বলবেন না।যা বলার আমি বলবো, আপনি শুধু হ্যাঁ তে হ্যাঁ আর না তে না মিলাবেন।”
অন্তরা বুঝতে পারলো না রূপক কি বলবে।

রূপকের বুকটা ব্যথায় ছেয়ে গেলো। রাজকন্যার জীবন ছেড়ে ভালোবেসে ফুফু সব ছেড়ে চলে এসেছিলো। অথচ তার মেয়েদের নিয়ে এতো অভাব অনটনে ছিলেন তবুও বাবার বাড়ির সাহায্য নেন নি তিনি!
রূপক বুঝতে পারলো রূপার এতো আত্মসম্মান, ব্যক্তিত্ব কোথা থেকে এসেছে।
মায়ের মতো হয়েছে মেয়েটা।

অন্তরা রূপককে নিয়ে বাড়ি ফিরলো যখন তখন অনিতা উঠান ঝাড়ু দিচ্ছিলো। আহারে,তার আদরের ছোট্ট বোন!

অন্তরা ছুটে গিয়ে বোনকে জড়িয়ে ধরলো। অনিতা প্রথমে অবাক হয়ে গেলো তারপর অন্তরাকে চিনতে পেরে চিৎকার করে কেঁদে উঠলো।

অন্তরার দাদী,ফুফু,ফুফাতো বোন সবাই চলে এলো। এসে সবাই মিলে চিৎকার চেচামেচি এমনভাবে করতে লাগলো যে আশেপাশের সব মানুষ ছুটে এলো।মুহুর্তে ছড়িয়ে গেলো অন্তরা ফিরে এসেছে এই খবর।

রূপক চুপ করে দাঁড়িয়ে দেখতে লাগলো সবটা।একেকজনের একেক কথা, একেক মন্তব্য সব শুনে রূপক বুঝতে পারলো অন্তরা কার সাথে পালিয়েছে সেটাই কেউ জানে না।
অবাক হয়ে রূপক সবার কথা শুনতে লাগলো। সবসময় ভাবতো গ্রামের মানুষ সহজ সরল, অথচ এখন রূপকের মনে হচ্ছে গ্রামের মানুষের মতো জঘন্য মানসিকতা শহরের মানুষের হয় না।
নয়তো এরা কিভাবে মুহুর্তের মধ্যে এরকম একটা জটলা তৈরি করে তারপর অন্তরার সামনে দাঁড়িয়ে অন্তরাকে নিয়ে বাজে কথা বলতে পারে!
সব ছাপিয়ে রূপক এদিক ওদিক চারদিকে একজনকে খুঁজতেছিলো।
অথচ তাকেই দেখতে পেলো না।

সিরাজ হায়দারের দোকানে ও খবর চলে এলো অন্তরা একটা ছেলের সাথে বাড়িতে এসেছে।
একটা চিনচিনে ব্যথা সিরাজ হায়দার অনুভব করতে লাগলেন।
দ্রুত দোকান বন্ধ করে বাড়ির দিকে ছুটলেন তিনি।কেননা তিনি জানেন এখন সারা এলাকার মানুষ বাড়িতে এসে মেয়েকে কথা শুনিয়ে যাবে।সন্তান যতই অপরাধ করুক,অন্য লোকে সন্তানকে কটু কথা বলবে এটা কোনো বাবা মা সহ্য করতে পারে না।

তানিয়া অফিস থেকে ফিরে দেখে রত্না পান্না দুজনেই মুখ শুকনো করে বসে আছে। রূপক কে দেখা যাচ্ছে না কোথাও।
এরকম তো হয় না।একটু কটাক্ষ করে জিজ্ঞেস করলেন, “তোমাদের দাদা কোথায়?”

পান্না বললো, “ফুফুর কাছে গেছে দাদা।”

তানিয়ার মুখ শুকিয়ে গেলো শুনে।জিজ্ঞেস করলো, “ফুফুর কাছে মানে?”

রত্না বললো, “দাদার ফুফুর সন্ধান পেয়েছে। ”

হঠাৎ করেই তানিয়ার মুখমন্ডলে ভয় ফুটে উঠলো। দ্রুত পায়ে রুমে গিয়ে তানিয়া রেখাকে কল দিলো।
সমুদ্রের মা রেখা তখন ছেলেকে কড়াভাবে জিজ্ঞেস করছিলো তার এরকম ছন্নছাড়া হয়ে যাওয়ার কারণ কি।

তানিয়া কল করে বললো, “রূপক সালমার খোঁজ পেয়ে গেছে। তার কাছে গেছে রূপক।”

আৎকে উঠে রেখা বললো, “কি বলছো ভাবী,এবার কি হবে?”

তানিয়া জবাব দিতে পারলো না।ভয়ে তার মুখ শুকিয়ে গেছে। রেখার মুখমণ্ডল কেমন রক্তশূণ্য হয়ে গেলো মুহূর্তে। সমুদ্র মা’য়ের এরকম অবস্থা দেখে উঠে দাঁড়িয়ে মা’কে জড়িয়ে ধরলো। রেখা কোনো কথা বলতে পারলো না।গলা শুকিয়ে মরুভূমি হয়ে গেছে তার।

চলবে….

রাজিয়া রহমান

#তুমি_অপরূপা (৩৩)
একজন একজন করে পুরো এলাকার মানুষ জড়ো হলো উঠানে। অনিতা ভয়ে কাঁপছে। তার ভীষণ ভয় করছে।এতো মানুষ তাদের উঠানে, মানুষ নানারকম কথা বলছে তার বড় আপাকে নিয়ে। অনিতা অনেক কিছু বুঝে না।
তেমনই এটাও বুঝে না মানুষের এতো মাথা ব্যথা কেনো?
সে তো কোনো দিন দেখে নি তার মা’কে কারো বাড়ি গিয়ে এসব কথা বলতে কাউকে নিয়ে?

সিরাজ হায়দার বাড়ির সামনে এসে চমকে গেলেন।এতো লোক জড়ো হয়েছে। মেয়েটাকে মানুষ অপদস্থ করছে না তো!
ভীড় ঠেলে ভেতরে যেতেই দেখলেন অন্তরা ভীত হরিণ ছানার মতো ভয়ে,লজ্জায় একটুখানি হয়ে আছে।পাশে একটা ছেলে দাঁড়িয়ে, বেশ ভদ্র ঘরের ছেলে মনে হচ্ছে দেখে।
মেয়ের ভয়ার্ত চেহারার দিকে তাকিয়ে বাবার বুক ভেঙে গেলো যেনো।সবকিছু উপেক্ষা করে সিরাজ হায়দার এগিয়ে গিয়ে মেয়েকে জড়িয়ে ধরলেন।

বাবা মেয়ের মিলন দৃশ্য দেখে রূপকের ভীষণ ভালো লাগলো। এই কিছুক্ষণের মধ্যে রূপক মোটামুটি সবটা জেনে গেলো।
গলা খাঁকারি দিয়ে রূপক বললো, “অনেকক্ষণ ধরে অনেকের অনেক কথা শুনেছি। আমাকে নিয়ে, অন্তরাকে নিয়ে অনেকেই অনেক কিছু বলেছেন।এবার আমি বলছি,আপনারা শুনবেন।”

সবাই চুপ হয়ে গেলো রূপকের কথা শুনে। অবাক ও হলো কিছুটা। এরকম একটা কাজ করে ছেলেটা আবার কথা বলছে সবার মাঝে!
এতো বড় সাহস!

রূপক বললো, “আমি রূপক।আর এই যে অন্তরা,ও এতো দিন আমাদের বাসায় ছিলো। আমাকে হয়তো আপনারা জানেন না বা চেনেন না।অন্তরার মা সালমা,আমার একমাত্র ফুফু।আমি ওনার ভাইপো।
আপনারা সবাই এতো ন্যারো মাইন্ডের কেনো?একটা মেয়ে বাড়িতে নেই বলে সবাই ধরে নিলেন সে কোনো ছেলের সাথে পালিয়ে গেলো?
আপনারা কেউ কি তাকে কোনো ছেলের সাথে কথা বলতে দেখেছেন বা যার সাথে পালিয়েছে তাকে দেখেছেন?

কেউ-ই দেখেন নি।তাহলে না জেনে কিভাবে এসব কথা বলছেন?

আপনারা নিশ্চয় জানেন ফুফার অবস্থার কথা। এজন্যই মূলত অন্তরাকে ঢাকায় নিয়ে গিয়েছি আমরা। আর তার কিছু দিন পর রূপাকে ও নিয়ে গিয়েছি।
ওরা দুই বোন এক সাথেই ছিলো। আপনারা কে বিশ্বাস করলেন অথবা কে বিশ্বাস করলেন না তা নিয়ে আসলে আমার বা আমাদের কোনো মাথা ব্যথা নেই।কেননা ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানোর মতো সময় আমাদের নেই।আপনাদের হাতে অফুরন্ত সময় আছে,চায়ের দোকানে বসে আপনারা এসব নিয়ে গসিপ করেন যত খুশি তত,কিন্তু মনে রাখবেন তাতে সত্য বদলে যাবে না।আপনাদের কথা সত্যি হয় তাহলে প্লিজ প্রমাণ দিয়েন।অন্তত কার সাথে পালিয়েছে তার নামটা বলেন কেউ।”

যেহেতু কেউ জানে না সেহেতু কেউ বলতে পারলো না অন্তরা কার সাথে পালিয়েছে। কিন্তু রূপকের কথা বিশ্বাস ও করতে পারছে না আবার ফেলতে ও পারছে না।
যদি কারো সাথে অন্তরা পালিয়ে যেতো তবে অবশ্যই সেই ছেলের কথা কেউ না কেউ জানতো গ্রামের।
অথচ একটা মানুষ ও তাকে দেখলো না!

আবার যদি না পালিয়ে থাকে তবে অন্তরার মা এরকম অসুস্থ হয়ে গেলো কেনো?

সে কথা বলতেই রূপক হেসে বললো, “সবাই তো জানেনই ফুফা ফুফুর বিয়েটা কিভাবে হয়েছিল।তাই অন্তরার আমাদের বাসায় যাওয়া ফুফু মানতে পারে নি, তারপর আবার অনামিকা চলে যাওয়ায় ফুফু একেবারে ভেঙে পড়েন।আল্লাহ অসুখ ও দিয়েছেন আবার তার জন্য চিকিৎসা ও দিয়েছেন। ”

অন্তরার ফুফু সুরভী বললো, “ছেলেভুলানো কথা এগুলো না?আমরা সবাই কি দুধের বাইচ্চা যে যা বুঝাইবা তা বুঝমু?যদি সত্যি তা হইতো তাইলে আমরা কি শুনতাম না না-কি? ”

সিরাজ হায়দার বললেন, “তোরা?হু!
তোদের আসল রূপ তো সেদিনই দেখছি যেদিন থাইকা আমার বউ অসুস্থ হইছে।যতদিন আমার বউ কাম কইরা খাওয়াইতে পারছে তোরা একলগে খাইছস,যেই বুঝলি সালমা কাজ করতে পারবো না তোরা নিজেরা আলাদা রান্দন শুরু করলি তোগো কাছে আমি আমার ঘরের কথা কইতে যামু?এজন্যই কই নাই।তোগো শুননের মতো কিছু নাই।”

রূপক মুচকি হাসলো। এতক্ষণে সিরাজ হায়দার ব্যাপারটা বুঝতে পেরে নিজেও রূপকের কথা তাল মেলাচ্ছেন দেখে রূপকের খুব ভালো লাগলো।

সুরভি হুংকার দিয়ে বললো, “নিজের মাইয়ারা নষ্টামি করবো, আর তাগোর কগে থাইকা আমার মাইয়া নষ্ট হইতো?আমার মাইয়ারে আমি চোক্কে চোক্কে রাখি।”

রূপক হেসে বললো, “ফুফু,বাতির নিচটা সবসময় অন্ধকার হয় জানেন তো?
এই যে এত বড় বড় কথা বলছেন,আপনি ২৪ ঘন্টা মেয়ের সাথে থেকেও মেয়ের খবর জানেন না।অথচ এই যে দেখেন,আমি এই বাড়িতে পা দেওয়ার পর থেকে দেখছি আপনার মেয়ে আর ওই যে বারান্দার সাথে দাঁড়িয়ে থাকা কালো টিশার্ট পরা ওই ভাইটা দুইজনেই সেই শুরু থেকে ইশারা ঈঙ্গিতে কথা বলছে ”

মিতা চমকে উঠলো, সেই সাথে চমকে উঠলো সুজন ও।সুজন আর মিতা একে অন্যকে ভালোবাসে।৫ মাসের সম্পর্ক দুজনের। কেউ-ই জানে না। অথচ এই ছেলেটা এসেই বুঝে গেলো!
সুজন পালিয়ে যেতে চাইলো কিন্তু এতো মানুষের মধ্যে পালাতে পারলো না।কয়েকজন মিলে ধরে ফেললো তাকে।
মুহুর্তে ঘটনা বদলে গেলো। এতক্ষণ যারা অন্তরা আর রূপককে নিয়ে কথা বলছিল তারাই এবার সুজন আর মিতাকে নিয়ে পড়লো। আস্তে আস্তে অন্তরাদের উঠান থেকে ভীড় কমতে লাগলো।।

যাকে দেখার জন্য এতো দূর এসেছে অবশেষে তার দেখা পেলো রূপক।ঘরে গিয়ে দেখলো সালমা কেমন জড়সড় হয়ে বসে আছে। রূপক ছুটে গিয়ে ফুফুকে জড়িয়ে ধরলো। ছেলে মানুষ না-কি কাঁদে না।অথচ অন্তরা দেখলো তার মা’কে বুকে চেপে ধরে ছেলেটা কেমন ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে।

অন্তরার কাছে সব এখনো অস্পষ্ট লাগছে।এই ছেলেটা তার মামাতো ভাই?
এই ছেলেটা না থাকলে এলাকার মানুষ সবাই অন্তরাকে আজ ছিড়ে খেতো। তাদের বাক্যবাণে জর্জরিত করে ফেলতো।
সিরাজ হায়দার মেয়ের সাথে রাগলেন না।কেনো জানি মেয়েকে দেখেই সব রাগ পানি হয়ে গেলো।
তার বড় মেয়ে,তার বড় আদরের মেয়ে ছিলো অন্তরা।সেই মেয়ের চোখের দিকে তাকিয়ে তিনি বুঝেছেন মেয়েটা ভালো নেই।

মেয়েটা না হয় একটা ভুল করেছে,এখন তিনি বকাবকি করলে তো তা পালটে যাবে না।
নিশ্চয় কিছু হয়েছে তার স্বামীর সাথে, তাই বাবার বাড়ি চলে এসেছে। তিনি ও যদি রাগারাগি করেন তবে মেয়ে কোথায় যাবে!

সব ভেবে সিরাজ হায়দার মেয়ের হাত ধরে বললো, “কেনো করলি এরকম?আমাকে একবার জানাতে পারতি অন্তত। ”

অন্তরা বাবার দুই পা (চেপে ধরে বললো, “আমার অনেক বড় ভুল হয়েছে আব্বা।আমি জেনেশুনেই এই ভুলটা করেছি। আব্বা,আমার ভূলের কোনো ক্ষমা হয় না আমি জানি,ক্ষমা না করলেও আমারে আপনি দূরে সরাই দিয়েন না।আমার এই দুনিয়ায় আর কেউ নাই আপনারা ছাড়া। ”

সালমা রূপককে শক্ত করে ধরে রেখেছে। রূপক সিরাজ হায়দারের কাছে এসে বললো, “ফুফা,আমি ফুফুরে ঢাকায় নিয়ে যেতে চাই।ফুফুর চিকিৎসা দরকার। একটু যত্ন আর চিকিৎসা পেলেই ফুফু অল্পদিনের মধ্যে সেরে যাবে।”
সিরাজ হায়দার চুপ থেকে বললেন, “ঠিক আছে, তাই হবে।তবে আমার স্ত্রীর চিকিৎসার সব খরচ আমি দিমু।আমার বিলের ধানি জমিটা বিক্রি কইরা দিমু।”

রূপক মুচকি হেসে বললো, “বেশ তাই হবে।”

অন্তরা গিয়ে মায়ের পাশে বসলো। এতক্ষণে সবকিছুই জেনেছে সবাই।অন্তরা গিয়ে মা বলে ডাকতেই সালমা উদগ্রীব হয়ে বললো, “কে,কে?আমার অন্তু?”

অন্তরা চোখের পানি ছেড়ে বললো, “হ গো মা,আমি তোমার অন্তরা।তোমার অন্তর পুরোটা। ”

সালমা শক্ত করে মেয়ের হাত চেপে ধরলেন। যেনো ছেড়ে দিলেই হারিয়ে যাবে সে।রূপক মুগ্ধ হয়ে দেখছে ফুফুকে।

অন্তরা বললো, “আপনি আমাকে বললেন না কেনো আপনি আমার মামাতো ভাই? ”

রূপক হেসে বললো, “তাহলে তো আর সারপ্রাইজড হতেন না।”

অন্তরা মুগ্ধ হলো রূপকের ব্যবহারে। রূপক এমনভাবে ব্যবহার করছে যেনো সবাই তার অনেক দিনের চেনা।কোনো কৃত্রিমতা নেই তার মধ্যে। মা যেমন তার ভাইয়ের ছেলেকে ভুলেন নি তেমনই রূপক ভাই ও মা’কে ভুলেন নি।

চলবে……

#তুমি_অপরূপা (৩৪)

রূপা বসে আছে পার্কের একটা বেঞ্চে।রূপার সাথে বেঞ্চের এক কোণে সমুদ্র বসেছে।সমুদ্রের মধ্যে বেশ উগ্রতা লক্ষণীয়। রূপা হতবাক সমুদ্রর দিকে তাকিয়ে।

প্রথম বার যখন সমুদ্রকে গ্রামে দেখেছিলো তখন সমুদ্র ছিলো অন্য রকম অথচ দিন দিন কেমন হয়ে উঠছে সমুদ্র!
একটা মানুষ কতটা ভায়োলেন্ট হলে মাঝরাতে রাস্তায় দাঁড়িয়ে চিৎকার করে বলতে পারে আমি তোমাকে ভালোবাসি কপালকুণ্ডলা।
অথবা কলেজের সামনে, বাসার সামনে ব্যানারে লিখে রাখতো না ” তুমি আমার কপালকুণ্ডলা হইও,আমি সহস্রবার, সহস্র জনমে তোমার প্রেম তপসা করে কাটাবো। ”

সারাক্ষণ রূপার পিছন পিছন ঘুরঘুর করাটাই তার এখন প্রধান কাজ।
সমুদ্রকে এই মুহুর্তে ভীষণ শান্ত মনে হচ্ছে। দেখে বুঝার উপায় নেই এই লোকটা কি পরিমাণ জ্বালাতন করতে পারে রূপাকে!

৩ দিন ধরে রূপক বাসায় নেই,রূপা খেয়াল করে দেখলো রূপক নেই দেখেই মনে হয় সমুদ্র এরকম সাহস পেয়েছে।
বাড়ি থেকে বাবার কল পেয়েছে রূপা,রূপক যে গ্রামে হাজির হয়েছে সবই শুনেছে। রূপকের প্রতি সম্মান এবং শ্রদ্ধা দুটোই বেড়ে গেলো রূপার।

রূপা শান্ত স্বরে জিজ্ঞেস করলো, “কি সমস্যা আপনার? কি চান আপনি? ”

সমুদ্র তার চেয়ে বেশি শান্ত স্বরে বললো, “আমি চাই তুমি খুশি থাকো। তোমার মুখের হাসিটা দেখতে চাই বারবার, হাজারবার। ”

রূপা দাঁত দিয়ে নখ কামড়ে বললো , “আমার সম্পর্কে জানেন কিছু?
আমি কে চেনেন আমাকে?”

সমুদ্র হেসে বললো, “তুমি আমার কপালকুন্ডলা।”

রূপা মুচকি হাসলো। আবার বললো, “আচ্ছা, রূপকদার সাথে আপনার কি নিয়ে ঝামেলা হয়েছিলো?আমি শুনেছি আপনারা একেবারে জানের দোস্ত ছিলেন,এখন কেনো একে অপরের ছায়া ও মাড়ান না।”

সমুদ্রের হাস্যোজ্জ্বল মুখটা নিমিষেই কালো হয়ে গেলো। মনমরা হয়ে বললো, “ওসব কথা এখন থাক। আমার এসব বলতে ভালো লাগে না। ”

রূপা আগ্রহী হয়ে বললো, “আমার যে জানার ভীষণ ইচ্ছে। ”

সমুদ্র মাথা নিচু করে বললো, “রূপকের সাথে আমার মায়ের একটা বিষয় নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়।যদিও আমি জানি যাকে নিয়ে কথা কাটাকাটি হয় তিনি রূপকের জন্য ভীষণ স্পেশাল, রূপকের সবচেয়ে দুর্বল জায়গা। আন্টি যখন ওর থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় তখন তিনিই ছিলেন রূপকের জন্য একমাত্র আশ্রয়স্থল। রূপকের ছোট বেলাটা আমার বা অন্যদের মতো আনন্দের ছিলো না।
তাই ও ওর ফুফুর ব্যাপারে ভীষণ সেনসেটিভ।
ওনাকে নিয়েই রূপক আমার মায়ের সাথে উগ্র ব্যবহার করে যেটা আমি মেনে নিতে পারি নি। আসলে, বাবা মায়ের সাথে বন্ধুর মিসবিহেভটা মেনে নেওয়া যায় না।তাও আমার সামনে দাঁড়িয়ে রূপক যখন আমার মায়ের সাথে বেয়াদবি করলো আমি সহ্য করতে পারতাম না।আমার মায়ের আমি ছাড়া আর কেউ নেই রূপা।আমার যেহেতু আর কোনো ভাই বোন হবে না বলে দিয়েছিলো ডাক্তার তারপর থেকে আমিই আমার মায়ের সম্বল। মা আমাকে ভীষণ আদরে বড় করেছেন, এখনো মা আমাকে ছোট বাচ্চার মতো শাসন করেন।আমার মা আমার কাছে আমার আদর্শ, আমার জীবন। মা’কে কেউ চোখ রাঙিয়ে কথা বলবে তা আমার জন্য সহ্য করার মতো না।

আসলে কি থেকে হয়ে গেলো, আমার ও মাথা গরম হয়ে গেলো তাই সেই মুহুর্তে। রূপক আমার আত্মার বন্ধু ছিলো। অথচ সেই মুহুর্তে আমিও ওর সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে ফেললাম।

তারপর যখন চাইলাম সব মিটমাট করতে তখন অনেক দেরি হয়ে গেলো। রূপক ততদিনে আমার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। ”

রূপা বললো, “আমি ও শুনেছি সবটা আগেই।এবার একটা কথা শুনেন,আমরা চার বোন। আমার বাবা মায়ের বিয়েটা ছিলো ভালোবাসার। সসবার অমতে বাবা মা পালিয়ে বিয়ে করেন।আমার বড় আপা ও একই কাজ করেন।তার পর মেজো আপাও তা করেন।
নিজর করা কাজ,বড় মেয়ে,মেজো মেয়ের একই কাজ করা,সমাজে লজ্জা পাওয়া,অনুশোচনা সব মিলিয়ে আমার মা এসব মেনে নিতে পারেন নি।মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি।এখনো অসুস্থ উনি।

তাই আমার পক্ষে কখনো সম্ভব না কাউকে ভালোবাসা। আমি দেখেছি আমার মায়ের মনের কষ্ট, আমার বোনেরা চলে যাওয়ার পর মা’য়ের ভেঙে পড়া।তারপর আমি বাবাকে কথা দিয়েছি কখনো আমি এই কাজটা করবো না। দুই মেয়েকে দিয়ে বাবা মা লজ্জা পেয়েছে আমাকে দিয়ে যাতে না পায়।

আর সবচেয়ে বড় কথা, আপনার সাথে আমার কখনোই কিছু হওয়া সম্ভব নয়।কেনো জানেন?
প্রথমত বাবা মায়ের পছন্দেই আমি বিয়ে করবো।আর সবচেয়ে বড় কথা, রূপকদা আমার মামাতো ভাই। রূপকদার যেই ফুফুকে নিয়ে আপনাদের মধ্যে ঝামেলা হলো, আমি তারই মেয়ে।আমার মায়ের নাম সালমা।

এবার নিশ্চয় বুঝতে পেরেছেন আপনার বাবা মা ও কখনো চাইবে না আপনি আমাকে বিয়ে করেন?

আশা করছি এরপর থেকে আমার আশেপাশে আর দেখবো না।তা না হলে আমি কলেজ+বাসা চেঞ্জ করতে বাধ্য হব।”

সমুদ্র হতভম্ব হয়ে গেলো শুনে।কি বলছে এসব রূপা!
রূপা সালমা ফুফুর মেয়ে!
সেই সালমা ফুফু যাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না!
সমুদ্রের তালগোল পাকিয়ে গেলো।

রূপা চলে গেলো সোজা হেটে।আগামীকাল মা’কে ঢাকায় আনা হবে।রূপার উত্তেজনার সীমা নেই।অবশেষে সবাই সবার সন্ধান পেলো।মা খুঁজে পেলো তার বাবার বাড়ি আর তার পরিবার খুঁজে পেলো তাকে।

রূপা বাসায় ঢুকতেই মাহি বিরক্ত হয়ে মুখ বাঁকালো।মনে মনে বললো, “এই মেয়েটা কি পাথর না-কি! একটা ছেলে এরকম পাগলামি করছে অথচ সে কেমন নির্বিকার। আমার জন্য এরকম যদি কেউ করতো তবে আমি অনেক আগেই তার হয়ে যেতাম।”

রূপার সাথে ইদানীং মাহি কথা বলে না। খোঁচা দিয়ে ও কিছু বলে না,সবাই জানে এখন রূপা যে রূপকের ফুফাতো বোন। সন্ধ্যায় রত্না পান্না এলো রূপার কাছে।দুজনেই এসে টানাহেঁচড়া শুরু করলো রূপাকে নিয়ে তাদের বাসায় নিয়ে যাওয়ার জন্য।
রূপা রাজি হচ্ছে না শুধু।রত্নার মা তানিয়াকে রূপার কেমন কেমন যেনো লাগে।কেমন করে তিনি তাকায় রূপার দিকে রূপার সহ্য হয় না সেসব।

কিছুক্ষণ টানাটানি করে দু’জনেই চলে গেলো। রূপা কিছুক্ষণ শুয়ে ছিলো।এরই মধ্যে সে ঘুমিয়ে গেলো। রূপার ঘুম ভাঙলো বেশ কিছুক্ষণ পর। নিপা এসে ডেকে বললো, রূপক ডাকছে তাকে।

ঘুম থেকে উঠে রূপা প্রথমে চমকে গেলো রূপকের কথা শুনে। পরমুহুর্তে মনে হলো যে রূপক তো তার মামাতো ভাই এখন।
রূপা উঠে গেলো। গিয়ে দেখে রূপক ডাইনিং রুমে চেয়ারে বসে আছে। দুই চোখ লাল টকটকে হয়ে আছে তার।
রূপা যেতেই রূপক বললো, “রত্না পান্না কোথায় রূপা?”

রূপা ঠোঁট উল্টে বললো, “আমি তো জানি না।সন্ধ্যায় তো বাসায় ছিলো। ”

রূপক একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে বললো, “আমাকে এক গ্লাস ঠান্ডা পানি দাও তো ফ্রিজ থেকে।”

রূপা গিয়ে পানি আনলো।পানি রূপককে দিতে গিয়ে রূপা চমকে গেলো ভয়াবহভাবে।
রূপকের সারা শরীর ভীষণ গরম হয়ে আছে। ভীষণ জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে গা। অথচ কেমন নির্বিকার সে।
রূপা বুঝতে পারলো না কি করবে।এদিকে এরা কেউ-ই নেই বাসায়।

রূপক চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে রইলো। পায়ে তার অসম্ভব ব্যথা, সারা শরীর অসম্ভব ব্যথা। সেদিন অসুস্থ শরীর নিয়ে ফুফুকে খুঁজতে বের হয়ে গেছিলো। তারপর আর নিজের যত্ন নেয়ার সময় হয়ে উঠে নি।গতকাল রাত থেকে ভীষণ জ্বর,দুপুরে ফুফুকে হাসপাতালে ভর্তি করেছে।
তারপর বাসায় এসেছে প্রচন্ড জ্বর নিয়ে।

রূপা ফ্রিজ খুলে লেবু সিদ্ধ করে রূপককে এনে দিলো, মালটা কেটে দিলো।
রূপক কিছুই খেলো না।শান্ত স্বরে বললো, “তুমি চলে যাও রূপা।”

রূপা চেয়ার টেনে বসে বললো, “আন্টি কোথায়?”

রূপক হেসে বললো, “আমাকে তো বলে যায় নি রূপা।”

“রাতে আপনি একা থাকবেন?কোনো অসুবিধা হলে কি করবেন?”

“আমায় নিয়ে ভেব না রূপা,এরকম পরিস্থিতিতে আমি আগেও পড়েছি।আমার জন্য কখনো কেউ ভাবে নি, কেউ আমাকে ভেবে দুফোঁটা চোখের জল ফেলে নি।এই দুনিয়ায় আমার অনেক প্রিয় মানুষ আছে রূপা কিন্তু জানো,আমি কারো প্রিয় না।কোনো দিন আমাকে কেউ প্রিয় বলে ডাকে নি।আমাকে ভেবে উদ্বিগ্ন হয় নি। ”

রূপা সাহস করে বললো, “আপনার আর আন্টির মধ্যে কিসের এতো সমস্যা? ”

রূপক কিছু বললো না। চুপ করে রইলো। রূপা আবারও জিজ্ঞেস করতেই বললো, “ফুফুর চিকিৎসা শুরু হয়ে গেছে, ফুফুর থেকেই না হয় শুনে নিও।”

রূপা আর কথা না বাড়িয়ে নিজের রুমে চলে এলো।

সমুদ্র উত্তেজিত হয়ে বাসায় গিয়ে বললো, “মা জানো,রূপকের ফুফুকে পাওয়া গিয়েছে। ”

রেখা বিরক্ত হয়ে বললেন,”তাতে তোমার এতো উত্তেজনার কিছু নেই সমুদ্র।”

সমুদ্র হেসে বললো, “আরে মা শুনো না।আমি একজনকে ভালোবাসি।আমি ঠিক করেছি কয়েকদিনের মধ্যে তার বাবার কাছে তোমাকে প্রস্তাব নিয়ে পাঠাবো।
জানো সে কে?”

রেখা সরু চোখে তাকালো।সমুদ্র হেসে বললো, “সালমা ফুফুর মেয়ে মা।আমি তাকেই বিয়ে করবো। ও আমার সাথে সম্পর্কে যেতে রাজি হচ্ছে না তাই সোজা বিয়ে করে ফেলবো ভাবছি।”

রেখার বুকের ভেতর কেঁপে উঠলো ছেলের কথা শুনে। সমুদ্র হাসতে লাগলো অসংলগ্ন ভাবে।রেখা যেনো সমুদ্রের মধ্যে কবিরকে খুঁজে পেলেন।
এই ভাবেই একদিন এসে কবির সালমার কথা জানিয়েছিলো।
আজ আবারও সমুদ্র ও একই কাজ করছে।
তিনি কিছুতেই এই ব্যাপারে সম্মতি দিবেন না।কবির যদি জানতে পারে তাহলে কে জানে কি হবে।তাছাড়া সালমাকে যেভাবেই বাড়ির বউ হতে দিতে চান নি তিনি,সালমার মেয়েকে ও তিনি দিবেন না।কিছুতেই না।
দরকার হলে তিনি অনেক কিছু করবেন।

চলবে…….

রাজিয়া রহমান।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে