তুমিময় প্রাপ্তি পর্ব-২+৩

0
222

#তুমিময়_প্রাপ্তি🍁
#পর্ব_২
#মেহরিন_রিম
“পনেরো বছরের বড় একজন লোকের সঙ্গে যখন বাবা জোড় করে আমার বিয়ে দিয়েছিল, সেদিন অনেক কষ্ট পেয়েছিলাম। তবে তার চেয়ে অনেক বেশি কষ্ট হয়েছিল যেদিন সেই মানুষটা বাড়িতে সতীন নিয়ে আসে। তখন আমি ছয় মাসের গর্ভবতী। বাঁচার ইচ্ছে না থাকলেও সন্তানের কথা ভেবে আমি বেঁচে ছিলাম। আমার আদি, যেদিন তুই জন্মেছিলি,তোর মুখের দিকে তাকানোর পর আমার সব কষ্ট দূর হয়ে গিয়েছিল। বেঁচে থাকার নতুন উদ্দেশ্য খুজে পেয়েছিলাম আমি। ভেবেছিলাম,আমার আর কাউকে দরকার নেই। তোকে নিয়েই আমি বাঁকি জীবনটা পার করে দিতে পারবো। কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস,আমি চেয়েও তোর সঙ্গে থাকতে পারছিনা বাবা। বুঝতে পারছি, আমার হাতে আর বেশিদিন সময় নেই। তোর বাবা তোকে খুব ভালোবাসে আদি,আমি জানি উনি তোর খেয়াল রাখবে। তুই হয়তো বড় হয়ে লেখাটা পড়বি। একটা কথা মনে রাখিস,মা সবসময় তোর সাথে আছে।”

চোখ বন্ধ করে নিলো আদৃত, এই লেখা সে আগেও বহুবার পড়েছে। হাতে থাকা ডায়েরীটা খুব যত্নসহকারে ড্রয়ারে রেখে দিলো আদৃত। ডায়েরীর লেখাগুলো পড়লেই মনে হয় মা তার সামনে বসে কথাগুলো বলছে।

রুমের দিকে তাকালো আদৃত, সায়ান সোফায় বসে গেইমস খেলছে। এই ফ্লাটে যদিও আদৃত একাই থাকে, সায়ান মাঝেমধ্যে তাকে কম্পানি দিতে চলে আসে এখানে।
আদৃত আবারো আকাশের দিকে তাকালো। গান করাটা মূলত তার মায়ের জন্যই। তার মায়ের ইচ্ছে ছিলো আদৃত গান করবে, তার ইচ্ছে পূরন হলেও নিজের চোখে দেখার সৌভাগ্য হয়নি। গান বাজনা ছাড়াও আদৃত বাবার বিজনেস এর দেখাশোনা করে। লোকটার উপর তার অনেক রাগ । যদিও শাহাদাত সাহেব তার নিজের কাজের শাস্তিও পেয়েছেন। দ্বিতীয় বউ বিয়ের কয়েকবছর পর ই তাকে ছেড়ে চলে যায়, আদৃত ও আর তার সঙ্গে থাকতে চায়নি। কলেজ এ উঠেই ঢাকাতে চলে আসে সে। নিজের কাজের জন্য শাহাদাত সাহেব প্রতিনিয়ত অনুশোচনায় ভোগেন,তবে আদৃত তার সঙ্গে প্রয়োজন ব্যাতীত খুব একটা কথাও বলতে চায়না। মায়ের চলে যাওয়ার পিছনে যদিও তার বাবার হাত নেই, তবুও আদৃত এর কাছে তার বাবাকে দোষি ই মনে হয়।
বিজনেস এর কাজ সামলালেও সোশাল মিডিয়ায় এবং মানুষের কাছে সে সিঙ্গার হিসেবেই বেশি পপুলার। মেয়েরা তো একবার ওকে দেখার ড্রিম নিয়ে বসে আছে।

_আদি…জলদি আয় এদিকে
সায়ান এর কথায় ধ্যান ভাঙলো আদৃত এর। ভ্রু কুঁচকে রুমের দিকে অগ্রসর হলো সে।

____
দশ মিনিট যাবৎ দাঁত দিয়ে নখ কামড়াতে কামড়াতে ঘরের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে পায়চারী করে চলেছে ইশা। ফাইজা গালে হাত দিয়ে তার কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ করছে। অবশেষে আর ধৈর্য ধরতে না পেরে নিরবতা ভাঙলো ফাইজা। বিরক্তির সুরে বলল,
_তুই কি সারারাত যাবৎ চিন্তাই করে যাবি?

ইশা নখ কামড়ানো বাদ দিয়ে এক লাফে খাটে উঠে বলল,
_একটু আইডিয়া দাওনা আপু, কিভাবে প্রপোজ করবো?

_এখন আইডিয়া দাও আপু তাইনা। একটু আগে না বললি, তুমি শুধু দেখো আমি কি করি ব্লা ব্লা..

ইশা দাঁত কেলিয়ে হেসে ফাইজার গাল টেনে দিয়ে বলল,
_আমার কথা এতো মনে রাখার কি দরকার বলতো? আমার সোনা আপু, একটু তো টিপস দাও..

ফাইজা ইশার হাত সরিয়ে দিয়ে তার মাথায় গাট্টা মেরে বলল,
_সবচেয়ে বেস্ট আইডিয়া, মাথা থেকে ঐ নিরবের ভূত নামিয়ে ফেল।

ইশা মুখ ফুলিয়ে বলল,
_কেন নামাবো শুনি! ভালোবাসা কি ভুল নাকি?

ফাইজা ইশার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,
_ভুল নারে পাগলি। তোর এই বয়স আমি অনেক আগেই পার করে এসেছি, তুই যেটা কে ভালোবাসা ভাবছিস সেটা আসলে মোহ ছাড়া আর কিছুই না।

ইশা কপাল ভাজ করে বুকে হাত গুজে রাগী গলায় বলল,
_হ্যা হ্যা তুমিতো তাই বলবে। নিজে কখনো কাউকে ভালোবাসো নি তো তাই এমন কথা বলছো।

চুপ করে রইলো ফাইজা,ঠোঁটের কোণে লেগে থাকা হাসিটা নিমিষেই মিলিয়ে গেলো। প্রসঙ্গ বদলাতে জিভ দিয়ে ঠোট ভিজিয়ে বলল,
_এসব কথা থাক। তবে তোর কিন্তু লোকটাকে সরি বলা উচিৎ ছিল,শুধু শুধুই তাকে কথা শোনালি।

_রাখো তো তোমার সরি, ভেবেছিলাম ওনার সঙ্গে সেলফি তুলে একটু ভাব নিবো। তা আর হলো কই, জানো কয়েকটা মেয়েকে দেখেই দৌড়ে পালালো। আই মিন বাইকে করে চলে গেলো।

_এতগুলো কথা শোনানোর পড়ে আবার তুই সেলফি ও তুলতে চেয়েছিলি? লাইক সিরিয়াসলি!

_ডোন্ট ওরি..নেক্সট টাইম দেখা হলে সরি ও বলে দেবো,আর সেলফি ও তুলে নেবো।

_হাহ,সেই স্বপ্ন নিয়েই ঘুমোও তুমি। মানুষ ওনার সাথে একবার দেখা করার জন্য কত কিছু করে। সেখানে উনি তো তোর সাথে এসে দেখা করবে তাইনা!

ইশা হামি দিয়ে বিছানা থেকে নেমে উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
_কথায় লজিক আছে। কিন্তু আমার এখন প্রচুর ঘুম পেয়েছে, গুড নাইট।

কথাটা বলেই নিজের ঘরে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো ইশা। ইশার কান্ড দেখে ফাইজা মুচকি হাসলো। এইতো ফুল এনার্জি নিয়ে কথা বলছিল,আবার হঠাৎ করেই তার ঘুম পেয়ে গেল। ফাইজা মনে মনেই বলল,
_মেয়েটা আসলেই পাগল।

___
_কলেজে গিয়েছিলি নাকি আজ?

সায়ান এর প্রশ্ন শুনে খানিকটা অবাক হলো আদৃত। ভ্রু কুচকে উত্তর দিলো,
_কই না তো। কেন বল তো?

সায়ান ফোনের দিকে চোখ রেখে বললো,
_না আসলে আমাদের কলেজ এর মেয়ের সঙ্গে তোর ছবি দেখলাম তো তাই।

_আমাদের কলেজের মেয়ে মানে? দেখ যা বলবি ক্লিয়ারলি বল।

সায়ান এবার ফোনটা আদৃত এর দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,
_তোর পাশের মেয়েটার গলায় থাকা আইডি কার্ড টা দেখ।

আদৃত ফোনটা হাতে নিতেই দেখতে পেলো মোহনার সঙ্গে আজকে তোলা ছবিটা। সে ছবিটা পোস্ট দিয়ে আদৃত কে ট্যাগ করে ক্যাপশন এ লিখেছে, “উইথ মাই ক্রাশ”
মোহনা সিভিল ড্রেস এ থাকলেও গলায় আইডি কার্ড ছিল। আদৃত সায়ান এর কথা অনুযায়ী আইডি কার্ডটা জুম করতেই বুঝতে পারলো এটা তাদেরই কলেজের আইডি কার্ড, ইন্টারে এই কলেজেই পরেছিল তারা। আদৃত আরেকটু খেয়াল করে দেখতে পেলো এটা ক্লাস টেন এর আইডি কার্ড। আদৃত ফোনটা সায়ান এর দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,
_রাস্তায় তুলেছিল পিক। আর মেয়েটা কলেজের নয় স্কুল এর।

সায়ান ফোনটা হাতে নিয়ে আবারো গেইমস খেলায় মনোযোগ দিও। আদৃত বেড এ শুয়ে ফোনটা হাতে নিতেই তার সামনেও একই ছবি এলো। আদৃত সেটা স্ক্রোল করে নিচে যেতেই হঠাৎ তার তখনকার ঘটনা মনে পড়লো। মনে মনে ভাবলো,
_এই মেয়েটা ক্লাস টেন এ পড়ে মানে ওর বান্ধবী টাও টেন এ পড়ে। কি যেনো নাম,হুম ইশা। এইটুকু পিচ্চি মেয়ের এত তেজ! আমাকে কিনা পুলিশের ভয় দেখায়? উম হু, একে তো এত সহজে ছেড়ে দিলে চলবে না। কিন্তু ঐ মেয়েও কি একই সাথে পড়ে? কথা শুনে তো তাই মনে হলো।

আদৃতের হঠাৎ কিছু একটা মাথায় আসতেই সে উঠে বসে সায়ানকে বলে,
_এই শোন, তোর কোন কাজিন যেন এবার ক্লাস টেন এ পড়ে?

_হ্যা পড়ে,তো?

_ওকে ফোন করে জিজ্ঞেস কর, ইশা নামের কোনো মেয়ে ওদের সাথে পড়ে কিনা।

সায়ান বড়বড় চোখে আদৃতের মাথা থেকে পা পর্যন্ত একবার দেখে নিলো। তারপর অবাক হয়ে বলল,
_কেন বল তো? তুই আবার মেয়ের খোঁজ করছিস কেন?

_আরে…তোকে যা বললাম সেটা কর।

সায়ান এবার ওর কাজিন কে ফোন করে জিজ্ঞেস করলো। তারপর কলটা কেটে বলল,
_হ্যা পড়ে, কিন্তু ইশা নামের তো কত মেয়েই হতে পারে।

_বাট আই থিংক,আমি যার কথা বলেছি এটা সেই হবে।

আদৃত কিছুক্ষন চুপ থেকে বাঁকা হেসে বলল,
_কাল একবার কলেজে যেতে হবে বুঝলি।

কথাটা বলেই মনে মনে বলল,
_মিস ইশা, আদৃত মেহরাজ কে অপমান করার ফল তো তুমি পাবেই। তোমার কত তেজ এবার আমিও দেখবো।

#চলবে

#তুমিময়_প্রাপ্তি🍁
#পর্ব_৩
#মেহরিন_রিম
_প্রেম জেগেছে আমার মনে বলছি আমি তাই, তোমায় আমি ভালোবাসি তোমায় আমি চাইইই…
আয়নার সামনে লজ্জা পাওয়ার ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে নখ কামড়াতে কামড়াতে প্রপোজ করার প্রাকটিস করছে ইশা। এবার লজ্জা পাওয়া বাদ দিয়ে ইমোশনাল লুক নিয়ে আয়নার সামনে হাটু গেড়ে বসে ড্রেসিং টেবিলে থাকা লোসন এর বোতলটা সামনে ধরে বলল,
_এই হৃদয়ে কলম দিয়ে লিখেছি এক চিঠি,
সেই চিঠিটি বলছে আজ,আমি তোমায় ভালোবাসি।..

এবার উঠে দাঁড়িয়ে কিছুটা ভাব নিয়ে বলল,
_আমি তোমাকে আমার জীবনে প্রবেশ করার প্রস্তাব দিচ্ছি। তুমি কি তা সাদরে গ্রহণ করবে?

না এটাও পছন্দ হলো না ইশার। মুখ ফুলিয়ে খাটে বসে একা একাই বলল,
_ধুর,একটাও ভালো হচ্ছে না। এভাবে প্রপোজ করলে তো তোর প্রেম শুরু হওয়ার আগেই শেষ হয়ে যাবে ইশা। কিন্তু আমি করবো টা কি!

কিছুক্ষন ভেবে উৎসাহিত হয়ে তুড়ি বাজিয়ে বলল,
_আইডিয়া, চিঠি লিখলেই তো হয়। তাহলে আমার মুখেও বলতে হবে না,আবার প্রপোজ ও করা হয়ে যাবে। বাহ বাহ, কি বুদ্ধি আমার। আই এম প্রাউড অফ মি ইশা..

কথাটা বলেই টেবিল থেকে নিজের সবচেয়ে পছন্দের ডায়েরী টা নিয়ে এলো ইশা। তারপর গুগল থেকে সার্চ করে একটা লাইন লিখতেই তার খুশি গায়েব হয়ে যায়। পৃষ্ঠা টা উঁচু করে চোখের সামনে ধরে বলে,
_আমিতো ভুলেই গিয়েছিলাম,আমার যে এত সুন্দর হাতের লেখা। এই বিশ্বসেরা হাতের লেখা দেখে তো নিরব ভাইয়া কিছু না পড়েই রিজেক্ট করে দেবে। না না, চিঠির আইডিয়া বাদ।

শেষপর্যন্ত নিজের একটাও প্ল্যান পছন্দ না হওয়ায় বিছানার উপর মনমরা হয়ে বসে পড়ে ইশা। নিরব তার থেকে প্রায় ৩ বছরের বড়,এবার ইন্টার সেকেন্ড ইয়ার এ পড়ে সে। একই কলেজে পড়ে তাড়া, সিনিয়র এর সাথে এমনিতে বেশ সখ্যতা রয়েছে ইশার। একই কলেজে পড়ায় ইশা অনেক আগে থেকেই চেনে নিরব কে। আর সেই থেকেই নিজের মনে নিরবকে নিয়ে এক অনুভূতি সৃষ্টি হয়েছে তার। যদিও ফাইজা বলে এগুলো মোহ,কদিন পড়েই কেটে যাবে। তবে ইশা তা মানতে নারায,তার মতে এটা একদম সত্যিকারের ভালোবাসা। ইশার ভাষায় “টুরু লাভ”।

ইশা ভীষণ মিশুক হওয়ায় সকলের মতো নিরবও তার সাথে বেশ ভালো ব্যবহার করে,তবে তার মাঝে বাড়তি কিছুই নেই। এতদিন কিছু না বললেও এখন ইশা উতলা হয়ে উঠেছে নিরব কে প্রপোজ করার জন্য, কিন্তু কিভাবে বলবে সেটাই বুঝতে পারছে না। সিরিয়াস মোমেন্ট এ হেসে ফেলার স্বভাব তার আগে থেকেই আছে, যদি প্রপোজ করতে গিয়ে হেসে ফেলে তাহলে কি হবে? এসব ভেবে বাড়বার এগোতে গিয়েও পারছে না ইশা।

_শেষ হলো আপনার প্রাকটিস?
ঘরে ঢুকতে ঢুকতে প্রশ্নটা করলো ফাইজা। ইশা এক নজর ফাইজার দিকে তাকিয়ে বলল,
_কেউ তো আর আমাকে হেল্প করবে না,তাহলে জিজ্ঞেস করার কি প্রয়োজন?

ফাইজা মুচকি হেসে বলল,
_আচ্ছা এখন আমার দোষ তাইনা? কাল যে চ্যালেঞ্জ করলি,তার কি হবে?

ইশা ফাইজার সামনে দাঁড়িয়ে আমতা আমতা করে বলল,
_হ্যা হ্যা মনে আছে। বলেছি যখন তা আমি করেই ছাড়বো। আজ না হোক কাল,কাল না হলে পরশু..

ফাইজা দুদিকে মাথা নাড়িয়ে বলল,
_করিয়েন আম্মা, কিন্তু বর্তমানে ঘড়ির দিকে তাকালে ভালো হতো। স্কুলে কি যাওয়ার ইচ্ছে আছে নাকি আমি চলে যাবো?

ইশা একনজর ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলল,
_আয়হায়, এত দেড়ি হয়ে গেছে। জাস্ট দশ মিনিট ওয়েট করো,আমি পনেরো মিনিট এ রেডি হয়ে আসছি।

কথাটা বলেই নিজের ড্রেস নিয়ে ওয়াশরুম এ চলে গেলো ইশা। ফাইজা পিছন থেকে চেঁচিয়ে বলল,
_টাইম নেই ইশা,জলদি আসিস।

_হুম হুম…

____
_বুঝলাম তুই মেয়েটাকে শাস্তি দেওয়ার প্ল্যান করছিস। কিন্তু কি শাস্তি দিবি তুই ওকে? পিচ্চি একটা মেয়ে,একটু ভুল ই নাহয় করেছে।

ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে নিজের চুল সেট করছে আদৃত। সায়ান এর কথা শুনে একবার তার দিকে তাকিয়ে হাতে ঘড়ি পড়তে পড়তে বলে,
_জানিনা..

_জানিস না মানে? দেখ আদি শুধু শুধুই ঝামেলা করিস না, ছেড়ে দে ওকে।

_এত দরদ দেখাতে হবেনা,নাহয় তোর কপালেও দুঃখ আছে।

সায়ান আর কিছু না বলে সোফায় বসে তার ফোনটা হাতে নিলো। হঠাৎ তার চোখেমুখে খুশির আভা ফুটে উঠলো। উচ্চস্বরে বলল,
_আদিইইই…

আদৃত বিরক্তিসূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
_এমন মেয়েদের মতো চেঁচাচ্ছিস কেন?

_আরে মেরে ভাই, ব্যাপারটাই তো এমন।

_কি এমন ব্যাপার শুনি..

_পূর্ণ ফিরে আসছে।

আদৃত সামান্য হেসে বলল,
_হুয়াট? সিরিয়াসলি!

_ও নিজেই তো মেসেজ করেছে ” আই এম কামিং”

_আমিতো ভেবেছিলাম ও ওখানেই সেটেল হয়ে যায় কিনা। কোথায় কোথায় যে থাকে তাই তো জানা যায় না।

সায়ান উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
_কেন থাকে সেটাও তো জানিস তুই।

দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো আদৃত। অত:পর খাটের উপর থেকে নিজের জ্যাকেটটা তুলে গায়ে জড়িয়ে নিলো সে। নিজের টেবিল থেকে নিজের সানগ্লাস টা পড়ে চাবি ঘোড়াতে ঘোড়াতে বেড়িয়ে গেলো। সায়ান ও গেইট লক করে লিফট এ উঠে পরলো।

____
স্কুল ছুটি হয়েছে কিছুক্ষন আগে। একঘণ্টা পর ব্যাচ থাকায় ইশা,মোহনা আর বাড়িতে ফেরে না। একঘণ্টা স্কুলেই থেকে গল্প করে,তারপর ব্যাচ শেষ করে একেবারে বাড়িতে যায়। ইশা,মোহনা মর্নিং শিফট এ পড়ায় তাদের ছুটি হওয়ার পর ই ডে শিফট এ কলেজ এর ক্লাস শুরু হয়। তাই এই সময়টাতে সিনিয়রদের সাথেও আড্ডা দিতে পারে।

তবে আজকে নিরব কে না দেখতে পেয়ে ইশা হাটতে হাটতে বলল,
_নিরব ভাইয়া কোথায় বল তো? আজ দেখলাম না একবারো।

মোহনা চিপস খেতে খেতে বললো,
_জুথি আপু বলছিল আজকে নাকি নিরব ভাইয়া আসবেনা কলেজে।

_কেন?

_কোনো একটা ইম্পরট্যান্ট কাজে যাবে শুনলাম।

_ওহ..

_পানি দে না দোস্ত।

ইশা নিজের ব্যাগ থেকে বোতল টা বের করে দেখলো একটুও পানি নেই তাতে। মোহনার দিকে বোতলটা এগিয়ে দিয়ে বলল,
_ফিল্টার থেকে নিয়ে আয় পানি যাহ।

_আচ্ছা তুই দাঁড়া আমি আসছি।
কথাটা বলেই মোহনা পানি আনতে চলে গেলো। ইশা সেখানেই দাঁড়িয়ে ফোন ঘাটতে শুরু করলো।

____
কলেজ এর সামনে বাইক পার্ক করে নেমে দাঁড়ায় সায়ান আর আদৃত। আদৃত আশেপাশে তাকিয়ে বুঝতে পারলো ওর দিকে অনেকেই তাকিয়ে আছে,হেলমেট টা এখনো খোলেনি সে। আদৃত বুঝতে পারলো এখানে হেলমেট খুললে তার আর ভিতরে যাওয়া সম্ভব নাও হতে পারে। তাই বাইক থেকে চাবিটা খুলে হেলমেট পড়েই সে ভিতরে যেতে লাগলো।
লাকটাও হয়তো আদৃতের পক্ষেই ছিলো। গেইট দিয়ে ঢুকতেই নজর পড়ে ইশার দিকে, তার সম্পূর্ন খেয়াল ফোনের দিকে। গতকাল সিভিল ড্রেস এ যতটা পিচ্চি লাগছিল আজ স্কুল ড্রেস এ তার চেয়েও বেশি ছোট মনে হচ্ছে ইশাকে। আদৃত হেলমেট এর ভিতরেই বাঁকা হেসে পা বাড়ায় সেদিকে।

ইশা ফোনের দিকে তাকিয়ে কিছুটা সামনে এগোতে যাবে তখন ই আদৃত তার সামনে এসে দাঁড়ায়। ইশা সামনের দিকে তাকিয়ে কিছু না বলে পাশ থেকে যেতে নিলে আদৃত আবারো তার সামনে চলে আসে। ইশা এবার ভ্রু কুচকে তার দিকে তাকায়,তবে হেলমেট পড়া থাকায় চিনতে পারে না। ইশা এবারো কিছু না বলে পাশ থেকে যেতে নিলে আদৃত হাত বাড়িয়ে দিয়ে তার পথ আটকে দেয়।

মেজাজ টা বিগড়ে যায় ইশার। রেগে গিয়ে আদৃতের সামনে এসে কোমড়ে হাত দিয়ে বলে,
_কী সমস্যা ভাই? বারবার পথ আটকাচ্ছেন কেন আমার? আমি কিন্তু…

_পুলিশ ডাকবে? ডাকো…

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে