তুমিই_আমার_প্রথম_এবং_শেষ_ভালোবাসা পর্ব_৭

0
1794

তুমিই_আমার_প্রথম_এবং_শেষ_ভালোবাসা পর্ব_৭
মেঘ_বালিকা
.
.
মনটা খুব খারাপ..তাসিন তখন যা নয় তাই বলে আমাকে অপমান করেছে..ওর থেকে এমনটা আমি মোটেও এক্সপেক্ট করিনি..আমার ফোনটাও ভেঙ্গে দিয়েছে…কোনো কিছু না শুনেই আমাকে এত্তোগুলা কথা শুনিয়ে গেলো..ওর মাথাটা একটুতেই গরম হয়ে যায় এটাই সমস্যা…সেই যে আমার উপর রাগ করে বাইরে গিয়েছে এখনও আসার নাম নেই তার..চিন্তা হচ্ছে খুব কই গেলো ও..রাত ১১টা বেজে গেছে এতোক্ষন তো ও বাইরে থাকে না…যতোই রাগ থাকুক ওর উপর কিন্তু সবার আগে ও আমার স্বামী…আর স্বামী যখন এতো রাত অব্দি বাইরে থাকে তখন যেকোনো স্ত্রীরই চিন্তা হওয়ার কথা..ফোনও তো করতে পারছি না…একরাশ চিন্তা নিয়েই নিচে নেমে এলাম..বাবা-মা এতোক্ষন জেগে ছিলো একটু আগে তাদের জোর করে ঘুমুতে পাঠিয়েছি..তাদের এই বয়সে এতো চিন্তা করা উচিত না..তাই তাদের বুঝিয়ে সুঝিয়ে পাঠিয়ে দিয়েছি…
দরজার সামনে দাড়িয়ে পায়চারি করছি এক মুহুর্ত স্থির হয়ে বসে থাকতে পারছি না আমি…শেষমেশ কোনো উপায় না পেয়ে রহিমা খালাকে ডেকে তুললাম সেও শুয়ে পরেছিলো..সারাদিন কাজ করে এখন একটু বিশ্রাম নিবে তাও হলো না আমার জন্যে..তার কাছ থেকে ফোনটা ধার চেয়ে তাসিনকে ফোন দিলাম..কিন্তু ওর ফোন অফ..এইবার আমার চিন্তা দ্বিগুন বেরে গেলো..কি করবো কিছুই বুঝতে পারছি না… চিন্তায় আমার মাথা ফেটে যাচ্ছে..না চাইতেই নানা রকম খারাপ চিন্তা আমার মাথায় চলে আসছে…এভাবেই সারা রাত আমার নির্ঘুমে কেটে যায়..সারারাত ওকে হাজার বার ফোন দিয়েছি আর প্রত্যেক বারই নিরাশ হয়েছি…
অবশেষে সকালে তাসিন বাসায় ফিরে..ওর চেহারা কেমন ফ্যাকাসে লাগছে চোখগুলো ফোলা ফোলা চুলগুলোও এলোমেলো..ওকে দেখে যেনো নিজের প্রাণ ফিরে পেলাম…কিন্তু ওর চেহারার এই হাল দেখে চুপসে গেলাম..বুকের ভিতরটা মোচর দিয়ে উঠলো আমার…তাড়াতাড়ি ওর কাছে গিয়ে বললাম,,,
-সারারাত কই ছিলে তুমি?কতোটা টেনশনে ছিলাম আমি শুধু আমি না বাসার সবাই তার কোনো ধারনা আছে তোমার!কী এমন কাজে ব্যস্ত ছিলে যে একটা বার ফোন করার প্রয়োজন মনে করোনি তুমি..তার উপর ফোনটাও বন্ধ করে রেখে দিয়েছিলে..সারারাত আমার তোমার চিন্তায় কী অবস্থা হয়েছিলো জানো তুমি?????(এক নিশ্বাঃসে সব গরগর করে বলে দিলাম)
কিন্তু এর প্রতিউত্তরে তাসিন শুধু একটু মুচকি হাসলো তারপর আমাকে পাশ কাটিয়ে উপরে চলে গেলো..আমি যে এতোকিছু জিজ্ঞেস করলাম তার উত্তর দেয়ার প্রয়োজনটুকু মনে করলো না..আমি শুধু ওর যাওয়ার দিকে হা করে তাকিয়ে রইলাম..
.“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
শাওয়ার নিয়ে বের হয়ে শাড়ি পরছিলাম কিন্তু কিছুতেই শাড়ির কুচি ঠিক করতে পারছি না..আজকে যেন শাড়িটাও আমার অবাধ্য হয়ে গেছে এমনি সময় তো এমনটা হয়না তবে আজ কেনো হচ্ছে..শেষমেশ অনেকক্ষন চেষ্টা করে কুচি টা ঠিক করতে পারলাম তারপর যেই কুচি টা শাড়িতে গুজতে যাব আর ওমনি তাসিন কোথা থেকে হুট করে এসে টুপ করে আমার কুচিটা ধরে এলোমেলো করে আবার বাইরে চলে গেলো…আমি পুরাই বোকা বনে গেলাম ওর কাজে..ওর কাজ কর্মে আমি দিন দিন অবাকের শীর্ষে পৌছে যাচ্ছি..কিন্তু আজকে আমি আমার রাগ কিছুতেই কন্ট্রল করতে পারছি না..রাগে আমার নিজের না ওর মাথার চুল ছিড়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে..এতো কষ্ট করে আমি কুচিটা ঠিক করলাম..আর ও এসে তা একনিমিসে লন্ড-ভন্ড করে দিয়ে চলে গেলো…
.
আজকে সবার জন্যে নুডুলস বানাচ্ছি..এই জিনিসটাই একটু রান্না করতে পারি আমি..এর আগে বাসায়ও কয়েকবার রান্না করেছি সবাই ভালো বলেছে…তাসিনকেও একবার রান্না করে খাইয়েছিলাম যখন ওর সাথে রিলেশন ছিলো..ওসেদিন খুব খুশি হয়েছিলো আর অনেক প্রশংসাও করেছিলো..আজকে সে সব কথা মনে পরে যাচ্ছে…সেদিন খেয়ে খুশি হলেও আজকে আর সেই সুযোগ আমি রাখবো না..রাগটা এখনও মাথায় ভর করে আছে ওকে উচিত শিক্ষা না দেওয়া পর্যন্ত আমার শান্তি হবেনা…
.
রান্না শেষ করে সবার জন্যে বাটিতে করে বেরে নিয়ে গেলাম…বাবা-মা খেয়ে আমার অনেক প্রশংসা করলেন..তাসিন এখনও নুডুলসটা মুখে তুলেনি সে তার ফোনে মুখ গুজে আছে..তাকে এভাবে না খেয়ে ফোন টিপতে দেখে বাবা কিছুটা বিরক্ত হয়ে বলে উঠলেন,,,
-কী ব্যাপার তাসিন তুমি খাচ্ছো না কেনো?বৌমা কতো কষ্ট করে আমাদের জন্যে নুডুলস রান্না করে এনেছে আর তুমি সেটা না খেয়ে ফোনে মুখ গুজে আছো..এখনি ফোনটা রাখো বলছি..ফোন নিয়ে বসে থাকার অনেক সময় পাবে এখন খাও আর বলো কেমন হয়েছে..বৌমা কতো আগ্রহ নিয়ে দাড়িয়ে আছে দেখতে পারছো না!!!
তারপর তাসিন বাবার কথায় একরাশ বিরক্ত মাখা মুখ নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে ফোনটা রেখে নুডুলস এর বাটিটা নিয়ে খাওয়া শুরু করলো..
খাওয়ার কিছুক্ষন পর লক্ষ্য করলাম ওর চোখ মুখ কেমন লাল টমেটোর মতো হয়ে যাচ্ছে…ও খাওয়া ছেড়ে কিছুক্ষন বসে রইলো ওকে বসে থাকতে দেখে বাবা বললেন,,
-কী ব্যাপার খাচ্ছো না কেনো?খেতে ভালো হয়নি??
-না বাবা ভালো হয়েছে অনেক মজা হয়েছে(জোরপূর্বক হেসে)
-তাহলে বসে আছো কেনো খাও..
-হ্যা খাচ্ছি তো এই যে খাচ্ছি…
তারপর গপগপ করে পুরোটা খেয়ে হনহন করে উপরে চলে গেলো কাউকে কিছু না বলেই..
এদিকে আমি অনেক কষ্টে হাসি আটকে রেখেছি..ওর ফেসটা যাস্ট দেখার মতো ছিলো..তখন রান্নাঘরে সবারটা বারার পরে তাসিনের বাটিতে আমি ইচ্ছা করে অনেকটা মরিচের গুড়ো মিশিয়ে দিয়েছিলাম..আর এই ঝাল খাওয়ার ফলেই তাসিনের মুখটা লাল টমেটো হয়ে গিয়েছিলো…
.
উপরে এসে তাসিন ঝালে পাগলের মতো করছে..এতো ঝাল খেয়ে তার অবস্থা কাহিল..নিচে বাবার কারনে কিছু বলতে পারেনি..পুরোটা খেতে হয়েছে তাকে..এখন সে বুঝতেছে কতো নুডুলস-এ কতো ঝাল..রুমে পানিও নেই তাই পানিও খেতে পারছে না কি করবে কিছুই বুঝতেছে না..আর সহ্য করতে না পেরে নিজের চুল শক্ত করে চেপে ধরে মাথা নিচু করে বসে পরলো..
হঠাৎ তার সামনে একটা পানির বোতল দেখতে পেলো তারপর আর কিছু না ভেবেই পানির বোতল টা নিয়ে ঢকঢক করে পুরোটা পানি খেয়ে ফেললো..এবার যেন সে কিছুটা শান্তি পেলো..
.
তাসিনকে এভাবে ঝালে ছটফট করতে দেখে আমার খুব খারাপ লাগছিলো তাই পানির বোতলটা নিয়ে আসি…
বেচারা পানি খেয়ে আমার দিকে রাগি দৃষ্টিতে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে চলে গেলো..আমি তো ভেবেছিলাম আবার কিছু একটা করবে কিন্তু না সে তেমন কিছুই করলো না..যাক ভালোই হয়েছে বেঁচে গেছি আমি…
.
ভার্সিটি থেকে মাত্র ক্লাস শেষ করে বের হয়েছি এমন সময় আমার সামনে রিয়াদ এসে দাড়ালো..এই কচুটা অনেকদিন ধরে আমার পিছে ঘুরঘুর করে চলেছে..কোনোভাবেই পিছ ছাড়াতে পারছি না..কিন্তু এখন এইটা কি চায় আমার কাছে এভাবে পথই বা কেনো আটকালো..ফারিয়াকেও দেখতে পাচ্ছি না..কই আছে কে জানে..ও থাকলে ভালো হতো..
তারপর রিয়াদ বলে উঠলো,,,
-তনু আমার তোমার সাথে কিছু কথা আছে..
-কিন্তু আমার তো নাই..এখন সামনে থেকে সরুন(বিরক্ত নিয়ে)
-প্লিজ তনু আমি বেশিক্ষন টাইম নিবো না যাস্ট কিছু কথা বলবো প্লিজ…
-কি বলবেন বলুন?
-এখানে না চলো একটা রেস্টুরেন্ট-এ বসি..প্লিজ না করো না…প্লিজ!!
এমন ভাবে অনুরোধ করলো যে আমি না করতে পারলাম না রাজি হয়ে গেলাম…
ভার্সিটির পাশের একটা রেস্টুরেন্টে গিয়ে দুজন মুখোমুখি বসে আছি..দুজনই চুপ কোনো কথা বলছি না..তারপর রিয়াদই বলে উঠলো,,
-তনু আমি তোমাকে খুব ভালোবাসতাম কিন্তু তুমি আমার ভালোবাসা বুঝলে না বিয়ে করে ফেললে..তোমার বিয়ের কথা শুনে আমি প্রথমে বিশ্বাস করিনি পরে জানতে পারি সত্যিই তোমার বিয়ে হয়ে গেছে..বিশ্বাস করো খুব কষ্ট পেয়েছিলাম এই কথা শুনে..দুদিন ঘরবন্দিও ছিলাম আমি..তারপর নিজেকে সামলে নিয়েছি..নিয়তি যা ছিলো তাই হয়েছে.. তুমি আমার ছিলে না তাই তুমি আজ অন্য কারো..যাই হোক তোমার হয়তো এসব শুনে বিরক্ত লাগছে তাই আর কিছু বলতে চাচ্ছি না…যার জন্যে এখানে আসা সেটাই বলি আসলে আমি এখান থেকে চলে যাচ্ছি..অস্ট্রেলিয়া..তাই শেষ বারের মতো তোমার সাথে দেখা করতে আসলাম..
আমি রিয়াদের কথা শুনে কি বলবো বুঝতে পারছি না..আজ ওর জন্যে আমার সত্যিই খারাপ লাগছে..রিয়াদ আবার বলে উঠলো,,,
-চুপ করে আছো কেনো তনু!কিছু তো বলো!!আচ্ছা বাদ দাও বলো কী খাবে?
-আমি কিছু খাবো না…
-প্লিজ তনু আমাকে বন্ধু ভেবে আজকের দিন অন্তত কিছু অর্ডার করো..আমার ভালো লাগবে চলে যাওয়ার আগে একটুকু ইচ্ছা অন্তত রাখো…
আমি পরে গেলাম মহা বিপদে..কী জ্বালায় পরলাম ইশশ এখন যদি কেউ আমাকে এর হাত থেকে বাঁচিয়ে নিয়ে যেতো…
রিয়াদের জোরাজুরিতে শেষমেশ কফি অর্ডার করলাম…তারপর কফিতে যেই মুখ দিবো তখনই কেউ একজন ঝড়ের গতিতে এসে আমার হাত শক্ত করে চেপে ধরে আবার ঝড়ের গতিতে আমাকে নিয়ে চলে গেলো..ব্যাপার টা এতোটাই দ্রুত হয়েছে যে,না পারলাম আমি বুঝতে আর না রিয়াদ..সে এখনও হা করেই বসে আছে..ঠিক কি হলো তা বোঝার চেষ্টা করছে হয়তো…
.
.
.
চলবে…..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে