তি আমো পর্ব-০৭

0
1258

#তি_আমো❤
#পর্ব_৭
Writer: Sidratul muntaz

🍂
আমি নাক ফুলিয়ে ঠোটের রাগ নিয়ে উচ্চারণ করলাম,

আমার লাফিং গ্যাস হওয়ার কোনো ইচ্ছা নেই।তবে আপনি আজকে আমার সাথে যেটা করেছেন, সেটা একদমই ঠিক হয়নি।

আর তুমি আমার সাথে যেটা করছো? সেটা কি ঠিক?

আমি কি করছি?

ঈশান খপ করে আমার ডান হাতটা নিজের হাতে নিলেন।উনার বুকের বামপাশে আমার হাতের তালু মিশিয়ে মৃদু স্বরে বললেন,

দেখো না তারিন, অনুভব করতে পারো? ভেতরটায় কেমন উথাল পাথাল চলছে। এই অশান্ত মনটার যে তোমাকে বড্ড প্রয়োজন। তোমাকে ছাড়া চলবেই না। যখন অবাধ্য মনটা তার ব্যথার তীব্র আকার ধারণ করে, একটিবার চোখের তৃষ্ণা মিটিয়ে তোমাকে দেখার ইচ্ছা ব্যক্ত করে, আমি যে স্থির থাকতে পারি না। ভীষণ যন্ত্রণা হয়। কিভাবে বোঝাবো তোমায়? তুমি তো বড়ই অবুঝ। এতোটা অবুঝ হয়ো না প্লিজ। এতোটা অবুঝ হতে নেই। একটু তো দয়া করো এই ছোট্ট মনের উপর। তোমার অবহেলা যে তার সহ্য হয়না!

আমি খুব দ্রুত নিজের হাত সরিয়ে নিলাম। মুখ দিয়ে কথা বের করতে পারছি না। কণ্ঠ আটকে আসছে। তবুও জড়ানো গলায় শব্দ বের করলাম,

দ দেখুন, আপনি আমার সাথে এভাবে কথা বলবেন না। আমার একদম ভালো লাগে না।

সত্যিই ভালো লাগে না? নাকি তোমার মনেও আমার মতো উথাল পাথাল শুরু হয়।

ঈশানের কথা শুনে মনে হল, যেন ভিতরটা কেউ খঞ্জর দিয়ে খুচিয়ে দিচ্ছে। আমি চেহারা স্বাভাবিক রাখার যথাসাধ্য চেষ্টা করলাম। বললাম,

মোটেও না। আমি আপনার মতো আবেগচন্দ্র নই। আবেগের ঢালি সাজিয়ে বসিনি, যে আমার মনে উথাল পাথাল শুরু হবে। বরং আপনার কথা শুনে আমার গায়ে জ্বলুনি হচ্ছে।

উনি বাকা ঠোটে হাসলেন। আর বললেন,

তুমি তো আবেগচন্দ্রিমা। আমার আবেগচন্দ্রিমা। প্রমাণ চাও? তাহলে দেখো!

ঈশান আমার চোখের কোণ স্পর্শ করলেন। এক ফোটা জল গড়িয়ে পরল মুহুর্তেই। আমি সরে গেলাম। উল্টো দিকে ঘুরে জলদি করে লাল টুকটুকে চোখ দুটো মুছে নিলাম। কিভাবে, কখন চোখের কোণ ভিজে উঠেছে, সেই খেয়াল নিজেরও হয়নি। উনি আমার কাধ স্পর্শ করলেন। নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিলেন আমাকে। পরম আদর নিয়ে আমার গাল চেপে ধরে কপালে চুমু দিলেন। আমি সেই পরশ অনুভব করলাম। পরম তৃপ্তি নিয়েই অনুভব করলাম।মাথা তুলে ঈশানের দিকে তাকাতেই দেখলাম উনার টলমল দুটো চোখ। আমি অবাক হলাম। অবাক হয়েই তাকিয়ে রইলাম। নিজের চোখ জোড়াও টলমল করছে। চিন্তা করলাম, সত্যিই কি এতোটা ভালোবাসেন উনি আমায়? আমি যে কল্পনাও করতে পারিনি এমন ভালোবাসা। আমার ঘোর লাগানো ভাবনায় ব্যঘাত ঘটিয়ে ঈশান শব্দ করলেন,

একটা রিকয়েস্ট রাখবে তারিন?

আমি আবেগের বেড়াজাল থেকে বেরিয়ে আসলাম। আবার আগের রুপ ধারণ করে শক্তমুখে ভ্রু কুচকে বললাম,

কি রিকয়েস্ট?

তখনের মতো আরেকবার ওইভাবে তাকাবে প্লিজ! বিরাট চান্স মিস করেছি।

মানে?

তোমার নেশায় মাতাল লুকটা কিন্তু ভীষণ কিউট ছিল। তখন মম না থাকলে কাছে এসে গাল টিপে দিতাম। এবার যে আফসোস হচ্ছে। এসো তোমাকে আরও একবার ওভার ডোজ দিয়ে আফসোসটা মিটিয়ে নেই।

আমি রাগে ঠোট সংকুচিত করলাম। হাত মুষ্টি করে উনার পেট বরাবর আঘাত করলাম। উনি খানিক সরে গিয়ে পেট চেপে ধরলেন। বললেন,

আউচ!

আমি দ্রুতপায়ে হেটে চলে এলাম। নিচে নেমে এসেছি। আর ঈশানের সামনেই যাব না। এই কথা মাথায় রেখেই দক্ষিণ দিকের কিচেন সাইটে গেলাম। নিহা আর মোহনা আন্টির কথার শব্দ ভেসে আসছে। সাফিন ভাইয়াও উপস্থিত। বিরাট ভোজের আয়োজন চলছে। বুফেট লাঞ্চ। ডাইনিং রুমের দেয়াল ঘেষে প্রকান্ড মাপের খাদ্যমঞ্চ জুরে সাজানো হয়েছে খাবার, বৈচিত্রময় পদের খাবার। সবাই খাবার সম্পর্কেই আলাপ করছে। আমি সামান্য গলা ঝাড়া শব্দ করে নিজের উপস্থিতির আভাস দিলাম। সবার নজর আমার দিকে স্থির হল। আন্টি বললেন,

তারিন, এতো দেরি কেনো? কোথায় ছিলে?

আমি একটু ইতস্তত কণ্ঠে উচ্চারণ করলাম,

আন্টি আমি, আমি বেসিন খুজছিলাম। হাত মুখ ধোয়ার জন্য।

বেসিন তো ওইযে! তুমি হাত মুখ ধুয়ে প্লেট নিয়ে নাও।

আমি মাথা দুলালাম। নিহা আর সাফিন ভাইয়া নিজেদের মধ্যে তর্কে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। আমি সাফিন ভাইয়ার পেছন দিকটায় বেসিনের গোল উপত্যকা ধরে দাড়ালাম। পানিতে হাত ভিজিয়ে নিচ্ছি। সাফিন ভাইয়া নিহার সাথে তর্করত অবস্থাতেই আমার দিকে ঘুরলেন। বললেন,

তারু! দেখো নিহা চিংড়ী নিচ্ছে। নিষেধ করো ওকে।
নিহা প্লেট হাতে দৌড়ে গিয়ে টেবিলে বসল। ক্রীড়নশীল হয়ে বলল,

আমি চিংড়ী মিস করতে চাইনা।

সাফিন ভাইয়াও দৌড়ে গেলেন। কপালে বিরক্তি আর রাগ দুইয়ের ভাজ একসঙ্গে এটে নিহার প্লেট থেকে চিংড়ি কেড়ে নিলেন। নিহা বিবশ হয়ে তাকালো। মেয়েটার অসহায় মুখ দেখে মায়া লাগছে। কিন্তু সাফিন ভাইয়া কোনোভাবেই ওকে চিংড়ি খেতে দিবে না। আমি মুচকি হাসলাম। আচ্ছা যে জিনিসটা ভালোবেসে মানুষ খেতে চায় , সেটা যদি পরবর্তীতে তার ক্ষতির কারণ হয়ে দাড়ায় তাহলে কি সেই ভালোবাসা পরিত্যাগ করা উচিৎ? নাকি গ্রহণ করে মনকে পরিতৃপ্তি দেওয়া উচিৎ। ভবিষ্যতের ক্ষতিটা না হয় ভালোবাসার জন্য হজম করে নিলাম। ক্ষতি কি? চিংড়ী খেয়ে যদি নিহার ভালো লাগে, তাহলে চর্মরোগের অত্যাচার টা সহ্য করার ক্ষমতা তার থাকা উচিৎ। আমি টিস্যুপেপারে হাত মুছে প্লেট নিয়ে দাড়ালাম। খাদ্যমঞ্চ থেকে খাবার তুলছি। এতো পদ গুনে শেষ করা যাবে না। আমার প্লেটেও জায়গা হবে না, আর পেটে তো আরো না। ঈশান আমার পাশে এসে দাড়ালেন। উনাকে দেখে আমি প্লেট হাতেই সরে গেলাম। উনি মুচকি হাসি দিয়ে নিজের প্লেটে খাবার সাজাতে মনোযোগ দিলেন। আমি পেছনে তাকিয়ে দেখলাম। সাফিন ভাইয়া নিহা আর আন্টি নিজেদের মধ্যে আলাপে ব্যস্ত। এদিকে তাকাচ্ছেন না। ঈশান আমাকে ডাকলেন। বললেন,

হোয়াইট সস খাবে? লাফিং গ্যাসের মতো মিষ্টি।

আমি দাতে দাত চিপে বললাম,

আরেকবার লাফিং গ্যাস শব্দটা আমার সামনে উচ্চারণ করলে আমি আপনার গলা চেপে ধরব।

উনি উৎসাহ দেখিয়ে বললেন,

সত্যি তো?

আমি ভ্রু কুচকে তাকিয়ে থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিলাম। ক্ষিপ্রগতিতে নিহার পাশে গিয়ে বসলাম। তার কয়েক মিনিট পর ঈশান এসে আন্টির পাশে বসলেন। তাই দেখে নিহা বলল,

ঈশান ভাইয়া কি ডায়েটিং এ আছেন?

ঈশান বিস্মিত গলায় বললেন,

না তো! ডায়েটিং আমার দ্বারা সম্ভব না।

কেনো?

কারণ মিষ্টি জিনিস দেখলে কন্ট্রোল করতে পারি না।

আমি বিষম খেলাম। জোরে জোরে কাশছি। আন্টি অবাক চোখে তাকালেন। পানির গ্লাস এগিয়ে দিলেন। নিহা ফিক করে হেসে দিয়ে বলল,

আসলে ঈশান ভাইয়া, আপনি প্লেটে শুধু সালাদের আইটেম নিয়ে বসেছেন। তাই জিজ্ঞেস করলাম।

ঈশান বললেন, ও এই ব্যপার? আসলে একটু স্বাস্থ্য সচেতনতা মেনে চলি আর কি।

সাফিন ভাইয়া বললেন, হুম। তুই তো খুব হেলথ কনসার্ন। তাই তোর অবগতির জন্য জানিয়ে রাখছি, অতি মিষ্টি জিনিস কিন্তু হেলথের জন্য খারাপ।

নিহা খাওয়া বন্ধ করে মাথায় হাত ঠেকিয়ে হেসে দিল। ঈশান অপ্রস্তুত হয়ে তাকালো।আমি কি করবো বুঝতে পারছি না। লভ লেটার টা কি তবে সাফিন ভাইয়ার কাছেও চালান হয়েছে? এইজন্য এভাবে বললেন? খেতে বসেও শান্তি নেই ধুর! আন্টি আমার অবস্থা খেয়াল করে বললেন,

তারিন! কি নিয়ে এতো চিন্তা করছো? কোনো বিষয়ে আপসেট?

নিহা আমার পিঠে হাত বুলিয়ে বলল, আন্টি আমি জানি ও কি নিয়ে চিন্তা করছে।

আন্টি বললেন, কি নিয়ে?

পার্টির ওই মুখোশধারী ছেলেটাকে নিয়ে।

নিহার কথায় সাফিন ভাইয়া ভ্রু নাচিয়ে তাকালেন। আর আমি কটমট চোখে তাকালাম। আন্টি ভ্রু কুচকে বললেন,

ওই ছেলেকে নিয়ে এতো চিন্তা কিসের?

নিহা বলল, আছে আন্টি আছে। ছেলেটা যে এখনো ওর পিছু ছাড়েনি।

আন্টি অবাক হয়ে তাকালেন। বললেন,

কি? এখনো পিছু ছাড়েনি? কি ফালতু ছেলে। আসলে পার্টিতে একটা গণপিটুনি খেলে শিক্ষা হয়ে যেত। আমার সামনে পরলে তো আমি এই কাটাচামচ দিয়ে চোখ তুলে দিতাম।

ঈশান শব্দ করে উঠল। আকস্মিকভাবে কাটাচামচের খোচায় ঠোট কেটে ফেলেছেন উনি। সবাই উঠে দাড়ালাম। আন্টি কথা বলা বন্ধ করে ঈশানের দিকে দৃষ্টি দিলেন।
🍂

চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে