তি আমো পর্ব-০৭ ( অতিরিক্ত অংশ)

0
1233

#তি_আমো❤
#পর্ব_৭(অতিরিক্ত অংশ)
Writer: Sidratul muntaz

🍂
পড়ার টেবিলে বসে বাংলা সাহিত্য পড়ছি। “বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ”। কবিতাটা অপরুপ সুন্দর। যত পড়ি শুধু পড়তেই ইচ্ছে হয়। যেন কাহিনির মধ্যে হারিয়ে যাই। মেঘনাদের উচ্চারিত প্রতিটা শব্দ নিয়ে চিন্তা করতে ভালো লাগে। তবে বিভীষণের করা কাজটা ঠিক না বেঠিক সেটা নিয়ে এখনো আমার মনে বেশ বিভ্রান্তি আছে। তার থেকেও বেশি বিভ্রান্তি এখন আমার কবিতাটা পড়তে গিয়ে হচ্ছে। বারবার ঈশানের ঠোট কাটার দৃশ্যটা চোখে ভাসছে। পড়ায় একনিষ্ঠ হতে পারছি না। মা আমাকে পেছন থেকে ডাক দিলেন। ডাক দিয়ে বললেন,

তারিন তুই কি পড়ছিস?

আমি পেছনে না তাকিয়েই জবাব দিলাম,

হ্যা পড়ছি তো মা। কেনো? কোনো কাজ আছে?

না। একটা কথা জিজ্ঞেস করতাম।

আমি মায়ের দিকে ঘুরে তাকালাম৷ তাকিয়ে বললাম,

কি কথা মা?

তোর কোচিং এর ম্যাথ স্যারকে একদিন বাসায় দাওয়াত করবো ভাবছি।

ম্যাথ স্যার? আমাদের কোচিং এ তো কোনো ম্যাথ স্যার নেই? ম্যাডাম আছে।

মা ভ্রু কুচকে তাকাতেই জিভ কাটলাম আমি। ধুর, মিথ্যে কথা বলে কখনো শান্তি পাওয়া যায়না। সত্যিটা মুখ ফসকে বেরিয়ে আসবেই। যেমন এখন আমার হল। তবুও আমতা আমতা করে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করলাম। বললাম,

আসলে ম্যাডাম আগে ছিল। স্যার নতুন এসেছে। কিন্তু উনাকে হঠাৎ দাওয়াত দিতে যাবে কেনো?

মা হেসে বললেন,

একই এলাকায় থাকে। শিক্ষক মানুষ। সম্পর্ক ভালো রাখা উচিত। আর তোকেও তো পৌছে দিল সেদিন। কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্য হলেও একদিন বাসায় ডেকে খাওয়ানো উচিৎ।

আমি মাথায় হাত ঠেকালাম। মাকে বললাম,

দেখো মা। এসবের দরকার নেই।

মা ধমক দিয়ে বললেন, তুই বেশি বুঝিস না? তুই তো সম্মানও দিতে জানিস না মানুষকে। স্যারের সাথে তোমার কথা বলার ধরণ তো দেখলাম কাল। কি ভাববে মানুষ? ভাববে মা- বাবা আদব কায়দা শেখায়নি।

আমি মুখ কুচক মায়ের ধমক হজম করলাম। ঠোট বাকা করে অভিমানের সাথে উচ্চারণ করলাম,

ঠিকাছে তোমার যা ইচ্ছা তাই করো। আমি কিছু বলবো না।

কিছু বলতেও হবে না। তুই শুধু স্যারের বাসার ঠিকানা দে আমাকে।

হয়ে গেলো তো ঝামেলা? এইটারই ভয় পাচ্ছিলাম। এবার কি বলি? আমি ধৈর্য ধরে মনে কথা সাজাচ্ছি। মিথ্যে কথা। এরই মধ্যে মা আবার বললেন,

কিরে বল? বাসা চিনিস তো? না চিনলেও সমস্যা নেই।এই গলির পরের গলি না? আমি খোজ নিয়ে বের করে ফেলবো। তুই স্যারের নামটা বল।

এইবার তো আমার হার্ট ওভার স্পিডে বিট করছে। মা খোজ নিতে গেলেই তো ধরা পড়ে যাবো। তাই সাত পাচ না ভেবে বলে উঠলাম,

চিনি তো। আমি স্যারের বাসা চিনি। মাঝে মাঝে নোটস এর জন্য যেতে হয়। কিন্তু স্যার বাসায় একা থাকে। তুমি যখন তখন গেলে স্যারকে পাবে না।

একা থাকে? কেনো? ছেলের মা বাবা নেই?

হ্যা আছে। থাকবে না কেনো। উনারা মফস্বলে থাকে। স্যার একা শহরে এসেছে পড়ালেখার জন্য। এবার বুঝেছো?

ও! মফস্বলের ছেলে? একদম বোঝা যায় না দেখলে। কথাবার্তা খুব সাবলীল। সুন্দর। আর দেখতেও তো বেশ।আচ্ছা তারিন? ছেলে কি ফ্ল্যাট বাসায় থাকে।

হ্যা, কেনো?

একা মানুষ, ফ্ল্যাট বাসা নিয়ে থাকার দরকার কি? আমাদের ছাদের ঘরটা তো খালি পড়ে আছে। জিজ্ঞেস করিস তো ভাড়া নিবে নাকি?

কি উল্টা পাল্টা কথা বলো মা? উনি নিজের বাসা ছেড়ে আমাদের চিলেকোঠার মতো ভাঙা ঘরে থাকতে যাবে কেনো? আজিব! মানে কুছ ভি?

বলেই জোরে শ্বাস নিলাম আমি।

ভাঙা ঘরে থাকবে কেনো? তারিফ তো ঘরটা মেরামতের কথা ভাবছে। আর দেয়াল গুলো রং করানো হলে একদম নতুন হয়ে যাবে ঘর। তারপর তো ভাড়া দেওয়াই যায়। আর তোর স্যারের কাছে ভাড়া দিলে তো লাভ আছে। তুই বাসাতেই ম্যাথ পড়তে পারবি। আমরা উনাকে কম টাকা দিয়ে রাখতে পারবো। তার বদলে ঘর ভাড়া নিবো না। কাটাকাটি হয়ে যাবে।

আমি কলমটা চেপে ধরে মায়ের বকবকানি শুনছি। কিছু বলতেও পারছি না। কি বলা উচিৎ জানা নেই আমার। আমি কিছু বলার সুযোগও পেলাম না। বুড়িটা পর্দা সরিয়ে ভেতরে ঢুকল। মুখটা পানের রসে টইটম্বুর হয়ে আছে। এমতাবস্থায় বুড়ি উচ্চারণ করল,

ঘর ভাড়া দেওনের দরকার কি? তোমার মাইয়ার লগে মাষ্টরের বিয়া করায় দিলেই তো হয়। তাইলে মাষ্টরের বেতনও দেওন লাগবো না। ফিরি পড়াইবো। আর পোলার যদি নিজের ভিতর আইত্তোসম্মান থাকে, তয় ঘর ভাড়াও পুরাডাই দিবো। এইডাই লাভ বেশি।

বুড়ির কথা শুনে কান আমার খসে পড়তে চাইছে। কি শুনলাম এটা? কুচুটে বুড়ির মাথায় সব কুচক্রীমার্কা বুদ্ধি। শখ কত বুড়ির! এখন মা আবার বুড়ির নাচে ঢোলের বাড়ি না দিলেই হল। আমি মায়ের দিকে তাকালাম। মা বিভ্রান্তি নিয়ে বললেন,

এটা আবার কেমন কথা বললেন মা। তা কি হয় নাকি?

কে হইবো না কে? পোলা শিক্ষিত। দেখতে শুনতেও তো ভালাই। চান্দের লাহান মুখ। এমন ভালা পোলা কি সহজে পাওন যায়? আমি ভুল কি কইলাম।

তবুও মা। ছেলেমেয়ের পছন্দ অপছন্দের ব্যাপার আছে না?

পোলা মাইয়ার পছন্দ? তোমার মাইয়ার তো নাক সিটকাইন্না রোগ আছে। হের পছন্দ আমি গুরুত্ত দেইনা। পোলায় তোমার মাইয়ারে পছন্দ করে কিনা হেইডা হইলো কথা। পোলাডারে বাসায় ডাকো। আলাপ সালাপ কইরা কথা আগাও। না পারলে আমারে কইও। আমি ব্যবস্তা করুম।

আমি রাগে বাংলা বইটা নিয়ে টেবিল ছেড়ে উঠে দাড়ালাম। ক্ষিপ্রগতিতে বড় বড় কদম ফেলে রুম থেকে বাহিরে চলে আসলাম। উঠানের উপর এসে বসেছি। তাও যদি বুড়ির আজাইরা পেচাল থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। ভয় লাগছে এখন মাকে নিয়ে। মা এবার কি করবে কে জানে? শেষমেষ ঈশানের সামনে মান সম্মান খোয়াতে হবে না তো?
🍂

চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে