তাসের ঘর পর্ব-০২

0
750

#তাসের ঘর
ঐশিতা সেন
পর্বঃ ০২

রিপন বাসায় এসে দেখে দোলা সোফায় বসে ঝিমাচ্ছে।দীপ খেলছে আর ঘরের সব এলোমেলো করছে।তা দেখে রিপন রেগে গেল।দোলার চুলে ধরে দাঁড় করাল।আচমকা কেউ চুলে টান দেওয়ায় দোলা ঘাবড়ে গেল।ব্যথায় কুঁকিয়ে উঠে দাঁড়াল।
রিপনঃ নবাবের বেটি এখানে বসে ঝিমাচ্ছিস কেন?তোর ছেলে যে ঘর এলোমেলো করছে দেখতে পাচ্ছিস না?এখন কেউ যদি বাসায় আসে তাহলে আমার মান-সম্মান থাকবে?তোর মান-সম্মান নেই বলে কি আমারও নেই?তুই তো মান-সম্মান সব খুইয়ে এখানেই পরে আছিস।কেন রে চলে যেতে পারিস না আমার জীবন থেকে?আপদ একটা আমার চোখের সামনে থেকে সর।তাড়াতাড়ি খাবার দে আমি অফিসে যাবো।তোর জন্য তো আর লেট করে যাবো না?
পরে হনহনিয়ে নিজের রুমে চলে গেল।
দোলাঃ হ্যাঁ আমি গেলেই তো তোমার সুবিধা অন্যের বউকে ঘরে তুলতে পারবে।(মনে মনে)
দোলা টেবিলে খাবার দিতে দিতে রিপন তৈরি হয়ে চলে আসল।খাবার মুখে নিতেই টের পেল তরকারিতে লবণ কম।তাই উঠে দাঁড়িয়ে দোলার গালে ঠাসস্ করে একটা চড় বসিয়ে দেয়।
রিপনঃ বেকামা মেয়েমানুষ একটা কাজও ঠিক করে করতে পারিস না?বসে বসে শুধু গিলতেই পারিস?বলি রান্নাটাও কি ঠিক করে করতে পারিস না?লবণ কম কেন?
দোলাঃ আমার শরীরটা খারাপ ছিল তাই লবণ একটু কম হয়ে গেছে।(মাথা নত করে)
রিপন দোলাকে ভয়ংকর গালি দিয়ে বলেঃ শরীর খারাপ না ছাই।সব কাজ না করার বাহানা।সারাদিন তো ঘরেই শুয়ে বসে কাটাস আর একবেলা ভালো করে খেতেও দিতে পারিস না?আমি সারাদিন খেটে খেটে মরি আর তুই বসে বসে গিল।গিলার সময় তো শরীর খারাপ থাকে না শুধু কাজের বেলাই থাকে?
এবার দোলার রাগ হলো।জ্বরের কারণ এমনিতেই মেজাজ খিটখিটে আর উপর রিপনের ব্যবহার।সহ্য করতে না পেরেঃ সে সারাদিন কোন কাজে ব্যস্ত থাকো ভালো করেই জানি।আমি তোমার স্ত্রী রিপন।তুমি নিজেও জানো আমি অসুস্থ।তাও সকাল থেকে খেটে মরছি।তুমি তো একটু হেল্প ও করতে পারো।অন্য কিছু নাই বা করলে রান্নার সময় ছেলেটাকে তো একটু দেখতে পারতে।ছেলেটা কি আমার একার।তোমারই তো রক্ত।কিন্তু তুমি তো সব আমার উপর চাপিয়ে দেও।এতকিছু করেও সবসময় তোমার কটুক্তি শুনতে হয়।কেন কর আমার সাথে এমন?
রিপন আরো রেগে গেল।দোলার চুলে ধরেঃ তুই আমার মুখে মুখে তর্ক করছিস?এতো সাহস কে দিলো তোকে?আমি তোকে হেল্প করব?আমাকে তোর চাকর পেয়েছিস?
দোলাঃ তাহলে আমি কি তোমার চাকর?
রিপনঃ হ্যাঁ তুই আমার চাকর।তোকে আমি বউ করে আনি নি ঘরের কাজের লোক করে এনেছি।নিজের লিমিটে থাক।
দোলাঃ ছিঃ ছিঃ রিপন নিজের স্ত্রীকে কাজের লোক বলতে লজ্জা করে না?আমি তোমার বউ কাজের লোক নই আর না তো রাত্রী তোমার বউ।রাত্রীকে ঘরের মালকিন আর আমাকে কাজের লোক করে রাখো কোন সাহসে?লজ্জা করে না অন্যের স্ত্রীর সাথে..
বাকিটা বলার আগে রিপন দোলার গালে আরেকটা চড় বসিয়ে দিল।দোলাকে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে কোমরের বেল্ট খুলে সর্বশক্তি দিয়ে মারতে লাগল।
রিপনঃ হ্যাঁ রাত্রী ঘরের মালকিন আর তুই চাকরানী।তোকে এখানে থাকতে হলে রাত্রীর চাকর হয়ে থাকতে হবে।যদি ভালো না লাগে তাহলে এখানে পরে আছিস কেন?তোর ছেলেকে নিয়ে বেরিয়ে যেতে পারিস না?তোকে তো আমি বউ মানি না কেন পরে আছিস?
বলে আরো মারতে লাগল।
রিপনঃ নির্লজ্জ মেয়েমানুষ।আমার ঘাড়ের উপর পড়ে আছিস।আমার খেয়ে আমার পরে আবার আমার বিরুদ্ধেই কথা বলিস?একটা রাত্রী কেন হাজারটা রাত্রীকে এনে ঘরে তুলব।কি করবি তুই বল?জানিস তো আমি রাত্রীকে ভালোবাসি তা জানা সত্ত্বেও কেন পড়ে আছিস?শান্তিতে থাকতে দে আমাকে আর আমার রাত্রীকে।
মারের চোটে দোলা চিল্লিয়ে উঠলে রিপন একটা ওড়না এনে দোলার মুখে বেঁধে বেঘোরে মারতে থাকতে।দীপ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মায়ের উপর অত্যাচার হতে দেখছে আর কাঁদছে।ক্লান্ত হয়ে রিপন দোলাকে এভাবে ফেলেই চলে যায়।দোলা সহ্য করতে না পেরে জ্ঞান হারায়।রিপন চলে গেলে দীপ দোলাকে ডাকতে লাগে।
দীপঃ মা উথো।মায়া ও মা উথো না।(কেঁদে কেঁদে)
🍁
এদিকে রাত্রী বাসায় গিয়ে দেখে ওর স্বামী অনিক রান্না সেরে ঘর গোছাচ্ছে।মেয়ে অত্রি অনিকের গলা জড়িয়েঃ বাভি কি করো?
অনিকঃ কিছু না মা।এইতো ঘরটা একটু গোছাচ্ছিলাম।
অত্রিঃ কিন্তু তুমি কেন গোছাচ্ছ বাভি এসব তো মেয়েদের কাজ।মামনি কেন গোছায় না?আমি তো দেখেছি দোলা আন্টি ঘরের সব কাজ করেন রিপন আংকেল তো কিছুই করেন না।তাহলে আমাদের ঘরের কাজ তুমি কেন করো?
অত্রির কথা শুনে রাত্রী রেগে গেল।অত্রির দিকে তেড়ে কিছু বলতে যাবে তার আগেই
অনিকঃ ছিঃ মা এমন বলে না।কাজ তো কাজই।একটা ছেলেদের একটা মেয়েদের না।সবকাজ সমান।সবকাজ ছেলেমেয়ে মিলে করতে হয়।আর তোমার মামনি তো অসুস্থ তাই আমি হেল্প করছিলাম।তুমিও দুষ্টু করবে না কেমন?
অত্রিঃ আচ্ছা।
অনিকঃ এইত্তো গুড গার্ল।
রাত্রীঃ অত্রি আমাকে তোমার দোলা আন্টির সাথে তুলনা করবে না।ও কিই বা কাজ করে।সারাদিন খায় আর ঘুমায়।অধিকাংশ কাজ তো ওর মাই করে দেন।ওর তো ভাগ্য ভালো ওর বাপের বাড়ির লোক আশেপাশেই থাকেন।যখন ইচ্ছা চলে আসেন।যেমন ভাগ্য করে মা-বাবা পেয়েছে তেমন স্বামী।বিসিএস ক্যাডার স্বামী।সারাজীবন রানীর হালে থাকবে।
অনিকঃ আহ রাত্রী এভাবে বলছ কেন?দোলার মা কি সব করে দেন নাকি?উনার নিজেরও তো একটা সংসার আছে।
রাত্রীঃ এই তুমি একদম ওর হয়ে কথা বলবে না।যত্তসব আহ্লাদ(মুখ বাকিয়ে)
অনিকঃ আচ্ছা আচ্ছা বলব না।তুমি একটু খাবার বেড়ে দেবে।যদি তোমার কষ্ট নাহয়।আসলে দেরি হয়ে যাচ্ছে।গা ধুয়ে আসছি কেমন?
রাত্রীঃ (জোর করে মুখে হাসি টেনে)এটুকু আর কি কাজ।তুমি ফ্রেস হয়ে এসো আমি খাবার দিচ্ছি।অত্রি যাও তুমিও হাত পা ধুয়ে এসো।উপরে খেলতে গিয়ে ময়লা লাগিয়েছ।
অনিকঃ মামনি আমার সাথে চল আমি তোমাকে ফ্রেস করিয়ে রেডি করে দিচ্ছি স্কুলেও তো যেতে হবে নাকি?রাত্রী আজ আমি বরং ওকে স্কুলে পৌঁছে দেব।তোমার তো শরীর খারাপ।
রাত্রীঃ না না আমি ঠিক আছি।ছাদে গিয়ে খোলা হাওয়ায় ছিলাম তো এখন ভালো লাগছে।অত্রিকে আমি স্কুলে দিয়ে আসব।তোমার দেরি হবে।
অনিকঃ শিওর পারবে তো।
রাত্রীঃ হ্যাঁ হ্যাঁ পারব।
অনিকঃ এইত্তো আমার লক্ষ্মী বউ আমার জন্য কত্তো ভাবে।
রাত্রী হাসল।অনিকে অত্রিকে নিয়ে চলে গেলেঃ উফ যত্তসব ন্যাকামি।(মুখ ঝামটা মেরে)
🍁
রাত্রি মেয়েকে স্কুলে দিয়ে স্কুলের পিছনের রাস্তায় দাঁড়িয়ে কারো জন্য অপেক্ষা করছে।৫মিনিট পর কেউ রাত্রীর সামনে বাইক থামাল।লোকটিকে দেখে রাত্রী মুখ ঝামটা দিয়েঃ এতো দেরি হলো কেন?আমি কখন থেকে ওয়েট করছি।
তখন লোকটি..
(চলবে)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে