তবে ভালোবাসো কী পর্ব-০৮

0
596

#তবে_ভালোবাসো_কী
#Mehek_Enayya(লেখিকা)

#পর্ব ০৮

ফুরফুরে মনে ভার্সিটির ক্যাম্পাসে বসে আছে মাহানুর। কিছুক্ষন পর পর একা একাই হাসছে। পাশেই চেয়ারে তাজ্জব বনে বসে আছে তন্দ্রা, সিয়াম ও ইয়াসিন। সকাল থেকেই অদ্ভুত আচরণ করে যাচ্ছে মাহানুর। এই কিছুক্ষন একাই হাসছে, একা একাই কথা বলছে, আবার কিসের ভাবনায় মূর্তি হয়ে যাচ্ছে। তারা সবাই মাহানুরের এইরকম ব্যবহার দেখে বিস্ময়বিমূঢ়। তন্দ্রা মাহানুরকে ধাক্কা দিয়ে বলে,

-দোস্ত ঠিক আছিস তুই? নাকি পাবনায় নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে? (তন্দ্রা)

তন্দ্রার কথায় মাহানুর ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসে। স্বাভাবিক ভাবে বসে বলে,

-তোর জামাইরে পাবনায় নিয়ে যা বদমাইশ মহিলা। (মাহানুর)

-আজ সকাল থেকে আমরা জাস্ট তোকে দেখছি! মানে হয়েছেটা কী তোর? (সিয়াম)

-কিছু হয়নি। ক্ষুদা লেগেছে তো! কিছু খাবার অর্ডার দে। বেশি বেশি খেয়ে মোটা হতে হবে। (মাহানুর)

এবার মাহানুরের কথায় সবাই জানো আকাশ থেকে পড়লো। হতবিহুল দৃষ্টিতে মাহানুরের পানে তাকিয়ে রইলো। মাহানুর যখন বুঝতে পারে সে কী বলে ফেলেছে তখন মেকি হেসে নিজের ঠোঁট কামড়ে ধরে। ইনোসেন্ট ফেইস করে বলে,

-মানে আমি অনেক চিকন একটু স্বাস্থবান হতে হবে। (মাহানুর )

-তোর হাবভাব ভালো ঢেকাচ্ছে না দোস্ত!(ইয়াসিন)

-বাদ দে না, এখন শুন চল মার্কেট যাই। (মাহানুর)

তন্দ্রা একবার মাহানুরের দিকে তাকাচ্ছে তো আরেকবার সিয়ামের দিকে। ইয়াসিন ভোঁতা মুখে মাহানুরকে দেখছে। তন্দ্রা বিরক্তিকর কণ্ঠে বলে,

-কেনো? কিছু কিনবি? (তন্দ্রা )

-না মার্কেটের এসির নিচে কাঁথা বালিশ নিয়ে ঘুমামু! তুই যাবি? (মাহানুর)

-না ভাই, বল না মার্কেটে কী কিনতে যাবি? (তন্দ্রা )

-কাল গন্ডারের সাথে তাঁদের গ্রামে যাবো। গন্ডারের কাজিনের বিয়ে। এখন কিছু দরকারি জিনিস কেনা প্রয়োজন। (মাহানুর)

তিনজন একের ওপরের দিক কিছুক্ষন চাওয়া-চাওয়ি করল। একসাথে সুর টেনে বলে,

-ওওওওওওও এই কথা!

-হুম এখন যাবি নাকি সেটা বল? (মাহানুর)

-ঠিক আছে চল। (সিয়াম)

-তবে শর্ত আছে ট্রিট দেওয়া লাগবে। ফেমাস রেস্টুরেন্ট থেকে কাচ্চি?(তন্দ্রা)

-ভাই আজ আমি ফকির! ঐ খা*টাইস্সা তুই না বেশি টাকা এনেছিস? তুই ট্রিট দিবি। (মাহানুর)

-দোস্ত বেতন দিয়ে ফেলেছি। বর্তমান আমি দুনিয়ার সবচেয়ে বড় ফকির!(সিয়াম)

-হুর সালা! তুই সারাজীবনই ফকির থাকিস। নুর তুই দিবি ট্রিট নাহলে যামু না? (তন্দ্রা)

-আচ্ছা চল দিমু। (মাহানুর)

-দোস্ত তোরা যা আমি একটু গফকে নিয়ে ঘুরতে যামু। (ইয়াসিন)

মাহানুর বসা থেকে দাঁড়িয়ে যায়। জামা ঠিক করে ইয়াসিনকে বলে,

-কয়দিন আগে না ব্রেকআপ হইলো? (মাহানুর)

-এটা নতুন। অনেক পছন্দ হয়েছে আমার। ভেবেছি এটারে বিয়া কইরা ফালামু। (ইয়াসিন)

-হুম সবসময় নতুন রিলেশনে যাওয়ার পর তুই এটাই বলিস! (তন্দ্রা )

-আমি হাতে গোনা কয়টা মাত্র রিলেশনই তো করলাম!(ইয়াসিন )

ইয়াসিনের কথায় মাহানুর কোমরে হাত দিয়ে অগ্নি দৃষ্টিতে তার দিকে তাকায়। দাঁতে দাঁত চেপে বলে,

-মোট কয়টা রিলেশন করেছিস বল তো? (মাহানুর)

ইয়াসিন একটু লজ্জা পাওয়ার ভান করে বলে,

-মাত্র ২০ টা। (ইয়াসিন)

-সালা ২০ টা না বইলা বল এই ভার্সিটির সব মেয়ের সাথেই তোর সম্পর্ক ছিল! (মাহানুর)

-ঐ আর কী!(ইয়াসিন)

-চল তাহলে। আবার কখন বৃষ্টি শুরু হয়ে যায় কে জানে!(তন্দ্রা)

সিয়াম, তন্দ্রার সাথে বক বক করতে করতে মার্কেটের ভিতরে ঢুকে মাহানুর। প্রথমে তারা কসমেটিক্স এর শপে ঢুকে। মাহানুর কয়েক জোড়া কানের দুল দেখছে। চকচকে সাদা পাথরের। এখন এই পাঁচটাই মাহানুরের পছন্দ হয়। টেনশনে পরে যায় কোনটা রেখে কোনটা নিবে। বড় সাইজের একটি দুল গোল আয়নায় ট্রাই করে দেখছিল তখনই মাহানুর আয়নায় আরহামের ঘামাক্ত মুখশ্রী দেখতে পায়। মুহূর্তেই মাহানুরের শরীরে সর্বত্র শীতল হয়ে যায়। কল্পনা মনে করে মাহানুর পিছনে ফিরে তাকায় না। কিন্তু আয়নায় দেখলো আরহাম এগিয়ে আসছে তার দিকে। তৎক্ষণাৎ কানের দুল রেখে মাহানুর দ্রুত পিছনে ফিরে তাকায়। সত্যিই সাদা রঙের ঘামাক্ত একটি শার্ট পরে আরহাম আসছে।

আরহাম দূর থেকে হাতের ইশারা হাই জানায় মাহানুরকে। মাহানুর কোনো প্রতিক্রিয়া করল না। সে জানো নিজের অস্তিত্বের কথা ভুলেই গেলো! তন্দ্রা মাহানুরকে মৃদু ধাক্কা দিয়ে জিজ্ঞেস করে,

-দোস্ত এটাই তোর জামাই না? (তন্দ্রা )

মাহানুর মাথা নারায় তন্দ্রার কথায়। সিয়াম আরহামকে দেখে আস্তে আস্তে বলে,

-ভাই তোর জামাই কত হ্যান্ডসাম! আমার নিজেরেই হিংসা হচ্ছে তাকে নিয়ে!(সিয়াম)

তন্দ্রা সিয়ামের কথা শুনে হাসে। সিয়ামের কানের সামনে মুখ নিয়ে বলে,

-তুই যে থার্ড জে*ন্ডারের সেটা আমরা জানতাম আজ প্রমানও হয়ে গেলো!(তন্দ্রা)

আরহাম হাসি মুখে মাহানুরকে সালাম দেয়। মাহানুরও মৃদু কণ্ঠস্বরে সালামের উত্তর দেয়। আরহাম হাতের ঘড়ি ঠিক করতে করতে বলে,

-তোমাকে কয়েকবার ফোন দিয়েছিলাম ধরলে না কেনো?

-ফোন ব্যাগে ছিল।

-ওহ ওকে। উনাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিবে না? ওয়েট ওয়েট, উনি তো সেদিন ঝগড়ার সময় ছিল রাইট? (তন্দ্রারে দেখিয়ে বলে )

-হুম। ওরা আমার বেস্টফ্রেন্ড। সিয়াম আর তন্দ্রা। (মাহানুর)

আরহাম হাসি মুখে তাঁদের সাথে পরিচিত হয়ে নেয়। তন্দ্রা ভীষণ মুগ্ধ হয় আরহামের ব্যবহারে। সে ভেবেছিল, আর্মি মানুষ হয়তো অনেক এটিটিউড দেখাবে!

-তো কিছু কিনতে এসেছিলে? (আরহাম)

মাহানুর বিরক্ত হলো। সকাল থেকে কতবার যে এই একই প্রশ্ন সে শুনছে! মাহানুর মুখ শক্ত করে বলে,

-নাহ মার্কেটে এসেছি ঘুমাবো। ক্যান ইউ জয়েন আস? (মাহানুর)

তন্দ্রা বান্ধবীর কথা শুনে ফিক করে হেসে দেয়। সিয়াম চোখের ইশারা চুপ থাকতে বলে। আরহাম কিছু না বলে কানের দুল গুলো দেখতে থাকে। তার ভীষণ পছন্দ হয়। দোকানদারকে বলে সব গুলো প্যাক করে দিতে। তারপর তন্দ্রাকে জিজ্ঞেস করে,

-শালী সাহেবা আপনার কোনটা পছন্দ হয়? (আরহাম)

-না ভাইয়া আমি নিয়েছি। (তন্দ্রা)

-দুলাভাই কী গিফট করতে পারে না? (আরহাম)

-জি পারে। (তন্দ্রা)

-এখন জলদি বলো কোনটা ভালো লাগে?

তন্দ্রা কী বলবে ভেবে পেলো না। তাই আরহাম নিজে পছন্দ করেই তন্দ্রাকেও কানের দুল কিনে দেয়। তন্দ্রা সরমে নিবে না। পরে মাহানুর জোর করে তন্দ্রার ব্যাগে ঢুকিয়ে দিয়েছে।

কসমেটিক্স কেনা শেষ হলে অন্য শপের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পরে। মাহানুর হাঁটতে হাঁটতে বলে,

-মার্কেটে কী করছিলেন?

-কিছু কিনতে এসেছিলাম।

-আপুদের জন্য?

-শুধু আপুদের জন্য কেনো হবে? আমার ওয়াইফ আছে। তার জন্যও তো হতে পারে।

-ওওও হ্যাঁ!

আরহাম কিছু বললো না। রুক্ষ হেসে মাহানুরের পানে তাকায়। মাহানুর বাঁকা হেসে নিজের হাতের ঘড়িতে সময় দেখতে থাকে। মাহানুর একটু পিছিয়ে তন্দ্রা আর সিয়ামের কাছে আসে। তন্দ্রা আস্তে আস্তে বলে,

-দোস্ত আই এম জাস্ট ইমপ্রেস! তুই কত ভালো একটা জামাই পাইসোত!(তন্দ্রা)

-ভালো! শয়তানের নানা!(মাহানুর)

-তুইও তো শয়তানের নানী!(সিয়াম)

-একদম। (তন্দ্রা)

দুপুরে কোনোরকম রেস্টুরেন্টে খেয়ে বাসায় চলে আসে মাহানুর। শাওয়ার নিয়ে কিছুক্ষন শুয়ে থাকে। বিকেলে ছাদে যেয়ে একটু হাঁটাহাঁটি করে। টকটকে লাল গোলাপ ফুটেছে। মাহানুর গাছে পানিয়ে দিয়ে এক কিনারে দাঁড়িয়ে থাকে। আকাশটা একটু বেশিই সুন্দর দেখাচ্ছে। নীল আকাশে মৃদু রক্তিম বর্ণ ধারণ করছে। সাদা সাদা মেঘ বেশি একটা দেখা যাচ্ছে না। পাখিরা উড়ে উড়ে তাঁদের নীড়ে চলে যাচ্ছে। কিছুক্ষন পর পরই বাতাসে বড় বড় দানব আকৃতির গাছ গুলো নড়েচড়ে উঠছে। মন মুগ্ধকর পরিবেশ!

জুতোর ঠকঠক আওয়াজ করে ছাদে প্রবেশ করে ইফতি। সবসময়ের মতো একটা পেন্ট আর টি-শার্ট পরনে তার। একটু উঁচু হলেই টি-শার্টয়ের ফাঁক দিয়ে পেট দেখা যাবে। মাহানুরের আবার এইসব বিরক্ত লাগে। তার মতে স্টাইল করবে ভালো কথা। হেজাব পরে, বড় বড় গ্রাউন ফ্রক পরেও তো স্টাইল করা যায়। কালো রঙের বড় একটি ফ্রক, মাথায় চকচকে কালো একটি হেজাব তার ওপরে একটা সাদা পাথরের ক্রাউন, মুখে হালকা মেকআপ তাহলেই তো একদম সেই স্টাইল হয়ে যায়! পুতুলের মতো লাগবে!

ইফতি মাহানুরের পাশে দাঁড়িয়ে বলে,

-তুই আসলেই অনেক লাকি নুর!

-হঠাৎ এটা কেন মনে হলো?

-আরহামের মতো একজন হাসব্যান্ড পেয়েছিস আর কী লাগে জীবনে?

-তুইও পাবি।

ইফতি মুখ বাঁকিয়ে হাসি। কিছু বলে না। মাহানুরও চুপ হয়ে যায়। ইফতি যে মনে মনে হিংসায় জ্বলে পুড়ে যাচ্ছে এটা বুঝতে অসুবিধা হয় না মাহানুরের। মাহানুর নিজ থেকেই বলে,

-তোরা বাসায় কবে যাচ্ছিস?

-কাল বিকেলে।

-এতদিন পর আসলি এতো জলদি চলে যাবি? আরো কিছুদিন থাক।

-পরে আবার আসবো।

-হুম ইরাকেও নিয়ে আসিস।

সন্ধ্যার আজান দিয়ে দেয়। মাহানুর তার রুমের ভিতরে চলে যায়। নামাজ আদায় করে গম্ভীর হয়ে বিছানায় বসে থাকে। বাড়িটা কেমন নীরব আজকে! ওড়নাটা সুন্দর করে শরীরে জড়িয়ে রুম থেকে বেরিয়ে পরে। ড্রইংরুমে শুধু তার দুই চাচী বসে আছে। কী জানো একটা রেসিপি নিয়ে কথা চলছে দু’জনের মধ্যে। মাহানুর তাঁদের পাশে যেয়ে বসে পরে। গোমড়া মুখে বলে,

-কী করছো তোমরা? (মাহানুর)

-একটা রেসিপি দেখছি। তোর বেড়ানোর পর বাসায় আসলে বানাবো। (রামিশা)

-ওহ আচ্ছা। আর সবাই কোথায়? (মাহানুর)

-আসীন আর সায়রিন সায়রিনের বাবার বাসায় গিয়েছে। আয়াস ওর বন্ধুর বাসায়। সামি আবিরের টিচার এসেছে আর সাদী আর ফায়াজ ঘুমিয়ে আছে। (লুৎফা)

-ওরা দুইটায় এখনও ঘুমিয়ে আছে! (মাহানুর)

-হুম নয়াবজাদার বংশধর!(রামিশা)

-হাস্যকর! (মাহানুর)

-আরহাম কাল কখন নিতে আসবে? (লুৎফা )

-সকাল দশটায় আসবে। (মাহানুর)

-ঠিক আছে। (লুৎফা)

-সুন্দর একটা খুশবো আসছে না? (মাহানুর )

-হুমমম। বড় ভাবি গরুর মাংসের কালাভুনা করছে তোর জন্য। (লুৎফা )

-ইয়াম্মি। আমি দেখে আসছি। (মহানুর)

__________________🖤

সকাল দশটার দিকে সম্পূর্ণ তৈরি হয়ে ড্রইংরুমে বসে আছে মাহানুর। তাকে ঘিরে চারপাশে দাঁড়িয়ে অথবা বসে আছে সকলেই। হাজেরা মনে করে করে মাহানুরের প্রয়োজনীয় জিনিস এনে ব্যাগে ভরে দিচ্ছে। মেহরাব খান ভাষণ দিচ্ছে। সেখানে যেয়ে কী করবে কী করবে না এইরকম নানান কথা বলছে। আয়াস বারে বারে বলছে সেখানের ছবি তুলে পাঠাতে। মাহানুর মাথায় হাত দিয়ে বিরক্তিকর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।

-আম্মা ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করিও। আর কোনো পুকুরের সামনে যাবে না একদম। (হামযা খান)

-হুম বুঝেছি। (মাহানুর)

-মা আরহাম বাবার সাথে সাথেই থাকবি দূরে কোথাও যাবি না বুঝলি? (মেহরাব খান)

-হুম। (মাহানুর)

-আপু গ্রামের নাম জানো কী? (সাদী)

-খুলনা। (মাহানুর)

-পৌঁছেই আমাদের ভিডিও কল দিবি ওকে? (আয়াস)

-হুমমম। (মাহানুর)

-আমি মাথা ব্যাথা, জ্বর, বমি, গেস্টিকের ঔষধ এই ছোট ব্যাগে ভরে দিলাম। (হাজেরা)

মাহানুর এবার আর সহ্য করতে না পেরে চিৎকার করে বলে,

-আরেহ ভাই আমি মাত্র তিনদিনের জন্য যাচ্ছি আবার এসে পরব। এতো উত্তেজিত হয়েও না তোমরা সবাই। (মাহানুর)

মাহানুরের চিৎকারে সবাই চুপ হয়ে যায়। মাহানুর বড় একটি নিঃশাস নিয়ে সামনে তাকায়। সদর দরজা দিয়ে বাড়ির ভিতরে আসছে আরহাম। মাহানুর কিঞ্চিৎ চমকে যায় আরহামকে দেখে। এখন পর্যন্ত সে যে কয়বার আরহামকে দেখেছে তখনই আরহাম ফর্মাল ড্রেসাপে ছিল। কিন্তু আজ তার ব্যতিক্রম! ধবধবে সাদা রঙের পাঞ্জাবী পড়েছে আরহাম। হাতে কালো রঙের ঘড়ি। সবসময়ের মতো ছোট ছোট চুলগুলো সেট করা। মুখের চোয়াল শক্ত। পাঞ্জাবীটা একদম আঁটসাট হয়ে আছে আরহামের বলিষ্ঠ দেহে। মাহানুর নিজের নজর সরিয়ে ফেলে। বেশিক্ষন তাকিয়ে থাকলে সেই নজর লাগিয়ে দেবে নিজের জামাইর ওপর!

আরহাম সবাইকে সালাম দিয়ে আর বসে না। মাহানুরকে তাড়া দিয়ে উঠতে বলে। মাহানুর উঠে দাঁড়িয়ে সবার থেকে বিদায় নেয়। আরহাম মাহানুরের ব্যাগ নিয়ে গাড়িতে রেখে দেয়। পার্কিং এরিয়া পর্যন্ত মাহানুরের পুরো পরিবার তাকে এগিয়ে দিতে যায়। অজান্তেই হাজেরা খানের আঁখিজোড়া দিয়ে দু ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পরে। মাহানুর শেষ বারের মতো বড় মাকে জড়িয়ে ধরে গাড়ির ভিতরে বসে পরে। আরহাম গাড়ি স্টার্ট দেয়। কিছুক্ষনের মধ্যেই গাড়ি তাঁদের দৃষ্টির বাহিরে চলে যায়। উদাসীন মনে খান বাড়ির সকলে ভিতরে চলে যায়।

ঢাকার রাস্তা পেরিয়ে গাড়ি পদ্মা ব্রিজের ওপর দিয়ে চলছে। মাহানুর নেকাব খুলে গাড়ির জালানা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে আছে। কী বাতাস! বড় বড় বাস ছাড়িয়ে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে তারা। আরহাম গাড়ি চালাচ্ছে ঠিকই কিন্তু তার মন, মস্তিক, আঁখি সব কিছুই মাহানুরের ওপর। মাহানুর চিকন হলেও তার দুই গাল ফুলা ফুলা। যখন খিলখিল করে হাসে তখন আরো ফুলে যায়। আরহামের মনে কিছু নিষিদ্ধ বাসনা জাগে। মাহানুরের ঐ ফুলো ফুলো গাল ধরে জোরে চেপে দিতে। তারপর শব্দ করে সেই গালে নিজের রুক্ষ অধর ছুঁয়ে দিতে। মাথা চড়া দিয়ে উঠে নিষিদ্ধ স্পৃহা গুলো। আরহাম দ্রুত দৃষ্টি ও নিজেকে সংযোগ করে ফেলে। হ্যাঁ সে মাহানুরের প্রেমে পরে গিয়েছে। দুনিয়ায় এতো মেয়ে থাকতে শেষমেষ সে কিনা এইরকম জ*ল্লাদ একটি মেয়ের প্রেমের জালে ফেঁসে গেলো! কিছু তো একটা আছে এই মেয়ের মধ্যে! আরহাম বিড়বিড় করে বলে,

-এইরকম খচ্চর তুই ছিলি না আরহাম! নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখ।

মাহানুর অস্পষ্ট কিছু কথা শুনে আরহামের দিকে ফিরে তাকায়। কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে বলে,

-কিছু বললেন?

-নাহ।

-ওহহ! এই জায়গাটা ভীষণ সুন্দর। আমার মন মুগ্ধতায় ভরে গেলো।

-আমারও!

আবারও অস্পষ্ট স্বরে কথাটা বললো আরহাম। মাহানুর কিছু শুনলো না। সে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগলো তার শ্যাম বর্ণের সুদর্শন স্বামীকে। মানুষের আসল সৌন্দর্য নির্ভর করে তার ব্যক্তিত্বে, নাকি ধবধবে সাদা গায়ের রঙে। এই বাক্যটির আসল উদাহরণ হলো মেজর আরহাম চৌধুরী।

আরহাম লুকিংগ্লাসের মাহানুরকে পরোক্ষ করে বাঁকা হেসে বলে,

-এভাবে তাকিয়ে থেকো না প্রেমে পরে যাবে। পরে আমি কিন্তু সেটার দায়ভার দিতে পারবো না একদম!

>>>>চলবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে