ডেভিল বর পর্ব – ১৭

0
2628

ডেভিল বর
পর্ব – ১৭
শিফা_আফরিন
.
.
?
রেহান – সব সময় তোমার রাগের কাছে হার মানতে হবে আমার?
কি ভাবো কি নিজেকে? ভালোই ভালোই বলছি এখানে ঘুমাউ নয়তো তোমার কপালে দুঃখ আছে আঁচল।

আঁচল রেহানের ধমক শুনে চুপ করে যায়।

আঁচল – ( হ্যা এখন তো আমার সাথেই রাগ দেখাবেন। এখন তো আপনার ঐ হিয়া টিয়া আছে না!! এখন আমাকে আর সহ্যই করতে পারবেন না… মনে মনে)

আঁচল কিছু না বলে পাশ ফিরে শুতে নিলেই রেহান আঁচল কে নিজের দিক ঘুরিয়ে নেয়।
আঁচল কিছু বলতে যাবে তার আগেই রেহান আঁচলের গলায় গভীর ভাবে চুমু দেয়। আঁচল কেঁপে উঠে।
রেহান আঁচলে মুখের দিকে তাকিয়ে দেখে আঁচল চোখ বন্ধ করে আছে।আঁচলের ঠোঁট জোড়া কাঁপছে।

রেহান মুচকি হেসে আঁচলের ঠোঁটে চুমু দিয়ে আঁচল কে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়ে।

সকালে..

রেহানের আগেই আঁচলের ঘুম ভাঙ্গে।আঁচল নিজেকে রেহানের বুকে দেখে মুচকি হেসে রেহানের দিকে ঝুঁকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।

রেহানের গোলাপি রং এর ঠোঁট দু’টো দেখে আচমকা আঁচলের হাত টা রেহানের ঠোঁটে চলে যায়।
আঁচল আঙুল দিয়ে রেহানের ঠোঁটে স্লাইভ করছে।

হটাৎ রেহান খপ করে আঁচলের হাত টা ধরে ফেলে।
আঁচলের আত্মা যেনো কেঁপে উঠে রেহানের এমন কান্ডে।

রেহান – আমাকে আদর করতে ইচ্ছে করছিলো তাই না। (মুচকি হেসে)

আঁচল – ক কই! না তো। আপনাকে কেনো আদর করতে যাবো আজিব!

রেহান – হুম। তা তো দেখতেই পেলাম। বাই দ্যা ওয়ে তুমি চাইলে কিন্তু লিপকিস করতেই পারো।

রেহানের কথা শুনে আঁচলের চোখ বড়বড় হয়ে যায়।

আঁচল – আমি আপনাকে লিপকিস করবো?? অসম্ভব।

রেহান – এই অসম্ভব টাই সম্ভব হতো যদি আমি তোমার হাত টা না ধরে ফেলতাম। (চোখ মেরে)

আঁচল – একদম বাজে কথা বলবেন না। আপনার ঠোঁটে মশা বসেছিলো তাই ঐ টাকে সরাচ্ছিলাম। ভেবেছিলাম আপনি ঘুমিয়ে আছেন তাই। কে জানে আপনি এতোটা অসভ্য। ঘুমের ভান করে পড়ে থাকেন।

রেহান – মশা বসলে বুঝি স্লাইভ করে কেউ। আর যদি ঘুমের ভান না ধরতাম তাহলে কি জানতে পারতাম আমার রাগি বউ টা আমার প্রেমে পড়ে হাবুডুবু খাচ্ছে। (মুচকি হেসে)

আঁচল – আপনার প্রেমে কে পড়েছে শুনি? আপনার প্রেমে পড়ার আগে পুকুরে পড়ে যাবো তাও আপনার মতো ডেভিল অসভ্যর প্রেমে পড়বো না.. নেভার।

রেহান – পড়বে কি পড়ে তো গেছোই বেইবি। এবার শুধু টেনে তোলার পালা।

আঁচল – ওফ… আপনার সাথে কথা বলাটাই পাগলের কাজ। — বলেই উঠে যেতে নিলে রেহান ধরে ফেলে।
আঁচল রেগে কিছু বলতে যাবে তার আগেই রেহান আঁচলকে টান দিয়ে বুকে ফেলে দেয়।

আঁচলের চুল গুলো রেহানের মুখে ছড়িয়ে পড়ে।

রেহান – আহহ… কি মনমাতানো ঘ্রান। আমি তো আহত হয়ে যাবো সোনা।

আঁচল – আহত নিহত যা ইচ্ছে হোন না মানা করলো কে?
আমায় যেতে দিন দয়া করে।

রেহান – এ বাবা!! আমি নিহত হলে তোমাকে জ্বালাবে কে বলো তো!!

আঁচল – বিরক্তিকর!! বলেই উঠে চলে যায়।
রেহান মুচকি হাসে।

আঁচল ফ্রেশ হয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে এসে চুলের মুছছে।

রেহান শুয়ে আঁচলকে দেখে মুচকি হাসছে।

আঁচল – কি হলো? এভাবে ৩৬ খানা দাঁত বের করে রেখেছেন কেনো? মানুষ কে দেখানে চান আপনার দাঁত গুলো চকচকে! তা যান না বাহিরে গিয়ে দেখান। যত্তসব।

আঁচলের কথায় রেহানের কোনো রিএকশন নেই। সে আঁচলকে দেখা নিয়েই ব্যাস্ত।
কেননা আঁচল কালো রং এর তাঁতের শাড়ি পড়েছে যার মধে নীল রং এর পাড়।

আঁচলের ফর্সা শরীরে শাড়িটা যেনো অপরূপ ভাবে মানিয়েছে।
হটাৎ রেহান খেয়াল করে আঁচলের পেটের কিছুটা অংশ দেখা যাচ্ছে। রেহানের যেনো কেমন একটা ঘোর লেগে যাচ্ছে।

আঁচল রেহানের দিকে তাকিয়ে দেখে রেহান খুব মনযোগ দিয়ে আঁচলকে দেখে যাচ্ছে।
আঁচল তারাতারি করে শাড়ি ঠিক করে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।

রেহান মুচকি হেসে উঠে ওয়াশরুমে চলে যায়।

আঁচল নিচে নামতেই দেখে হিয়া টিভি দেখছে। আঁচল কে দেখে একখানা মিষ্টি হাসি উপহার দেয়।
এতে আঁচলের রাগের পরিমাণ খানাও অনেক বেড়ে যায়। যা আঁচল এই মূহুর্তে প্রকাশ করতে পারছেনা।

হিয়া – আপুই…

আঁচল – কিছু বলবি? (বিরক্ত হয়ে)

হিয়া – ভাইয়া কোথায় আপুই? কখন থেকে ওয়েট করছি ভাইয়ার জন্যে।

হিয়ার কথা শুনে আঁচলের রাগ আরও বেড়ে যায়।

আঁচল – ভাইয়াকে কি দরকার শুনি। (দাঁতে দাঁত চেপে)

হিয়া – না ইয়ে মানে….

আঁচল – এই মেয়ে কি মানে মানে করছিস বল তো? আর রেহান তোর জিজু হয়। ওর সাথে কিশের এতো আড্ডা তোর?

হিয়া – আপুই রেগে যাচ্ছো কেনো? এমনিই ভাইয়ার সাথে আড্ডা দিই। আসলে ভাইয়া অনেক মিশুক তো!! আর আমিও তো অনেক মিশুক তাই আরকি।।

আঁচল – তাই না? এতোই যখন মিল তো নিজে গিয়ে খুজ না। আমাকে কেনো জিগ্যেস করছিস। যত্তসব — বলেই রেগে রান্না ঘরে চলে যায়।

হিয়া এখনো দাড়িয়ে মুখ টিপে হাসছে।

আঁচল রান্না ঘরে গিয়ে দেখে আঁচলের মা রান্না করছে।

আঁচলের মা – কিরে তুই রেগে আছিস কেনো?

আঁচল – এমনি। খেতে দাও জলদি।

আঁচলের মা – হ্যা আনছি। রেহান উঠেছে?

আঁচল – আমি জানিনা।

আঁচলের মা – শুনো মেয়ের কথা!! তুই না জানলে কে জানবে শুনি?

আঁচল – কেনো? হিয়া জানবে!!

আঁচলের মা বুঝতে পারে আঁচলের রেগে থাকার কারন টা কি!
(নিশ্চয় ঐ হিয়া টা আবার আমার মেয়েটাকে কিছু বলেছে… মনে মনে)

আঁচলের মা – এ মা এই সব কি বলিস। তোর বর তুই জানবি না হিয়া জানবে?

আঁচল – জানবে বলেই তো বললাম। এতো কথা বলো না তো। খেতে দাও আমায়।

আঁচলের মা – আচ্ছা ঠিক আছে বাবা। যা গিয়ে বস তুই আমি খাবার রেডি করে আনছি।

আঁচল রান্না ঘর থেকে বেরিয়ে গেলে হিয়া আসে।

হিয়া – আন্টি কি করছো গো?

আঁচলের মা – চুপ বজ্জাত মাইয়া। আমার মেয়েটার পিছন এভাবে লেগে আছিস কেনো বলতো? ও কতো কষ্ট পাচ্ছে জানিস?

হিয়া – আমি কি করবো বলো? ভাইয়াই তো বললো। আর তুমি জানো এতে তোমার মেয়েরই লাভ হবে। আপুই নিশ্চয় ভাইয়াকে বলে দিবে ও ভাইয়াকে ভালোবাসে। তখন ভাইয়া আর আপুই আরও ভালো থাকবে তোমি দেখো।

আঁচলের মা – তাই জেনো হয়।

এদিকে আঁচল রেগে খাবার টেবিলে বসে আছে।
হিয়া ও এসে বসে।

হিয়া – আপুই চলো না আজ কোথাও ঘুরতে যাই।

আঁচল – তুই যা। আমাকে বলছিস কেনো? (রেগে)

হিয়া – আরেহ! আমি একা যাবো নাকি? তোমাকে আর ভাইয়াকেও নিয়ে যাবো।

আঁচল – ওও তাই বল! তোর ইচ্ছে হয়ছে তোর আদরের ভাইয়াকে নিয়ে ঘুরতে যাবি। তা যা না বরন করলো কে!

— হ্যা যাবেই তো!

হটাৎ কারো কন্ঠ শুনতে পেয়ে আঁচল আর হিয়া দু’জনই পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখে রেহান দু’হাত পকেটে গুঁজে মুচকি হেসে দাড়িয়ে আছে।

হিয়া – এইতো ভাইয়া চলে এসেছে। ভাইয়া চলুন না কোথাও বেরিয়ে আসি। আমার না এ বাসায় বসে থাকতে একদম বোরিং লাগছে।

আঁচল – কেনো রে? এতো দিন তোর বোরিং লাগে নি? আজ কেনো এ কথা বলছিস? ফাজিল মেয়ে।

রেহান – আহ! আঁচল। চুপ করো। ওকে ধমকাচ্ছো কেনো?
শুনে শালিকা তোমার যখন যেতে মন চাইছে তো বিকেলে আমরা বের হবো কেমন?

হিয়া – ইয়েএএ!!! ভাইয়া এত্তো গুলো থ্যাংকস্

রেহান – আঁচল তুমিও চাইলে আমাদের সাথে যেতে পারো।

আঁচল – মা!! আমার খাবার দিয়ে যাও তারাতারি।

রেহান – আঁচল আমি তোমায় কিছু বলছি।

আঁচল – আমার এতো বাজে কথা শুনার টাইম নেই।

রেহান – ওকে। হিয়া বিকেলে রেডি থেকো আমরা বেরুবো।

হিয়া – ওকে ভাইয়া।

আঁচল রেহানের কথার কোনো জবাব না দিয়ে খেয়ে উঠে যায়।

কিছুক্ষন পরই রিয়াদ আর আঁচলের বাবা আসে।

আঁচলের বাবা – আঁচল কোথায় রেহান?

রেহান – ও তো খেয়ে চলে গেলো।

রিয়াদ – কি বলো! ও সবার আগে খেয়ে চলে গেলো?

রেহান – মেবি পেটে কিছু ঢুকেছে! (হেসে)

আঁচলের বাবা আর রিয়াদ ও হেসে দেয়।

আঁচল বিছানায় বসে আছে। এমনি রেহান রুমে আসে।

রেহান আঁচলের ঘা ঘেঁষে বসতেই আঁচল রেগে রেহানের দিকে তাকায়।

রেহান – ওভাবে তাকিয়ে আছো যে!

আঁচল – বসার আর জায়গা পান না নাকি?

রেহান আঁচলে কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে পড়ে……

রেহান – উহুম…

আঁচল – কি হলো? শুয়েছেন কেনো? (বিরক্তি নিয়ে)

রেহান – ইচ্ছে করছে তাই।

আঁচল রেহানকে কিছু বলতে গিয়েও পারছে না।

রেহান – চলো না কোথাও ঘুরে আসি। ভালো লাগবে দেখো! (আঁচলের পেটে নাক ঘষে।)

আঁচল – আমি কোথাও যাবো না। দেখি সরুন!

রেহান আঁচলের পেটে চুমু দিয়ে আঁচলের কোমড় জড়িয়ে ধরে।

রেহান – ছাড়তে বললেই ছেড়ে দেয়ার মানুষ আমি নই সোনা।

চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে