ডুমুরের ফুল ২৪.

0
1847

ডুমুরের ফুল ২৪.

ব্যস্ত শহরের মুক্ত বাতাসে নিশ্বাস নেয়ার মাঝে শান্তি নেই। এই সন্ধ্যা নামাতেও কোনো সৌন্দর্য খুঁজে পাচ্ছেনা জাদিদ। সন্ধ্যা নামার সৌন্দর্য থাকে নীরবতার মাঝে। চারপাশে পাখির কিচিরমিচির শব্দ ছাড়া আর কোনো শব্দই থাকবেনা। আর এখানে ট্রাকের, বাসের, মোটর সাইকেলের হর্ণ, মানুষের চিল্লাচিল্লি সব মিলিয়ে এক অসহ্যকর সন্ধ্যা। হেমলতা হলে হয়তোবা অসহ্যকর সন্ধ্যাকে সুন্দর করে তুলতো।
মোবাইলের রিংটোন বেজে উঠাতে জাদিদের চিন্তায় ছেদ পড়লো। বাবার কন্ট্যাক্ট নাম্বার দেখে কিছুটা খুশিও হলো জাদিদ। বাবার সাথেও অনেক সময় হয়ে গেছে কথা হয়না৷ ভাবতে ভাবতেই জাদিদ ফোন রিসিভ করলো৷
ইমরান মোল্লা ফোন রিসিভ হওয়ার সাথে সাথেই জাদিদকে জিজ্ঞেস করলেন
– বাবা, কেমন আছো?
– ভালো, তুমি?
– আছি আরকি! ফোন দেয়াটা বেশি দেরি করে দেয়া হয়ে গেলো। আসলে বাবা বিয়ে থেকে নিজেকে বাঁচাতে গিয়ে তোমার কথা ভুলেই গেছিলাম।
– ইট’স ওকে বাবা। এখন কোথায় তুমি?
– বাসায় আছি কিন্তু তোর দাদী রাগ করে চলে গেছে।
– কোথায় গেছে?
– এখনো ঠিক জানিনা। খোঁজ নিতে হবে।
– তাড়াতাড়ি খোঁজ নিয়ে দেখো।
– তাড়াতাড়ি করার কিছুই নেই। সে আছে কোথাও নিরাপদে।
– বিয়েটা ভেঙে গেছে?
– তা তো ভেঙেছেই। কাজের বুয়া ঠিকমতো রান্নাবান্না করে দিয়ে যায়?
– গতকাল খাবার দিয়ে গেছিলো কিন্তু আজকে সারাদিন আসেনি।
– রান্নাবান্না সহ, ধোয়া মোছার কাজ সব ওনার উপর দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। শুনো আমি মোবাইল নাম্বার দিচ্ছি ওনার। এখনি ফোন দিবা। ফোন দিয়ে কড়া কয়েকটা কথা বলবা। এদের সাথে যত নরম হবা এরা ততই মাথায় উঠে বসবে। এদের সাথে কড়া মেজাজে কথা বলতে হয়। বুঝতে পারছো?
– জি বাবা। আমি নাম্বার ম্যাসেজ করছি এখনই ফোন করবা।

ম্যাসেজ করে ইমরান মোল্লা নাম্বার ঠিকই পাঠালেন কিন্তু জাদিদ আর ফোন দিলোনা। তার রাত নামা দেখতে হবে মন দিয়ে, খুব মন দিয়ে।
হেমলতার হাতে পেয়ারার বাটি দিয়ে লাইলী বানু বললেন
– অতো উদাসীনতা কীসের শুনি?
পেয়ারার একটা টুকরায় কামড় দিলো হেমলতা। আপাতত প্রশ্নের উত্তর দেয়ার ইচ্ছা নেই। লাইলী বানুকে তার খুব একটা পছন্দ না। সব বিষয়ে তার নাক গলাতেই হবে।
লাইলী বানু হেমলতার হাতে খোঁচা দিয়ে বললেন
– কিলো মাতারী উত্তর দিবি না?
– এখন এখান থেকে যেতে পারেন। আমার কথা বলতে ভালো লাগছেনা।
লাইলী বানু চলে গেলেন। হেমলতা প্লেটে থাকা সব কয়টা টুকরা খেয়ে বিছানায় উপর হয়ে শুয়ে রইলো। এছাড়া তার কোনো কাজ নেই। ভার্সিটি কোচিং করা হবেনা যেহেতু সেহেতু এখন আর পড়াশোনা করার নামই আসেনা।

শাম্মী নুডুলস রান্না করে তার ছোটো ভাইকে দিয়ে নিজের জন্য বাটিতে নিলো। রুমে এসে ল্যাপটপে নাটক চালিয়ে দিয়ে নুডুলস খেতে শুরু করলো। আজকে নুডুলসে লবণ বেশি দেয়া হয়ে গেছে। গতকাল এতোই কম ছিলো যে এক্সট্রা লবণ নিয়ে খেতে হয়েছিল।
টনেটো সস হলে লবণটা কম লাগতো। নাটক স্টপ রেখে রান্নাঘরে সসের বোতল আনতে গেলো শাম্মী।
তার মা নাসিমা ফিসফিস করে মোবাইলে কথা বলছেন৷ এর অর্থ খুব গোপনীয় কোনো কথা বলছেন। আর সেটা অবশ্যই তার বিয়ের ব্যাপারে। কেবল এইচএসসি দিয়েছে সে আর তার মা এখনই বিয়ে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। ঢাকায় থেকে যদি অজ পাড়াগাঁয়ের মতো বিহেভ করে তখন যে কেউই বিরক্ত হবে।

জাদিদ বারান্দা ছেড়ে ডাইনিং রুমে এসে বসলো। নিজেকে ব্যস্ত রাখতে হবে। ফ্রিজ থেকে খাবার বের করলো। এখনো অনেক খাবার আছে। আগামীকাল কিছু একটা বানিয়ে খেয়ে নিতে পারবে সে। ইউটিউব তো আছেই। তবে কাপড় ধোয়া, থালাবাসন মাজা, ফ্লোর মুছা এসব কাজ সে করতে পারবে কিন্তু পড়াশোনা কে করবে? আর পড়তে না পারলে তো…..
জাদিদ দ্রুত কাজের বুয়াকে ফোন দিলো।
ফোন রিসিভ হলো। জাদিদ যতোটা সম্ভব কণ্ঠে গাম্ভীর্য এনে বললো
– আপনি আজকে আসেননি কেনো?
– আপনি ক্যাডা?
– আমি জাদিদ বলছি।
– ইচ্ছা হয়নাই তাই আসিনি।
– তাহলে আগামীকাল থেকে আর আসতে হবেনা। আপনাকে চাকরি থেকে আউট করা হলো।
– হ হ করেন আউট। গরীবের পেটে আপনারা তো খালি পারেন লাথি মারতে।
– কাজে আসবেন না আবার খোঁচা দেয়া কথা বলবেন এটা তো হবেনা।
– কাল থেইক্কা আসুম, হাচা কইতাছি।
– যদি না আসেন তাহলে আর কোনোদিনও আসা লাগবেনা।
জাদিদ ফোন কেটে দিয়ে ফ্রিজের খাবার গরম করতে গেলো। সারাদিন সে খাবার একবার গরম করছে আবার ফ্রিজে রাখছে। খাবারের স্বাদ থেকে শুরু করে চেহারাও চেঞ্জ হয়ে গেছে।
রাত ১০ টা ৫ মিনিটে জাদিদ মিম্মাকে ফোন দিলো। মিম্মা জাদিদের নাম্বার দেখে অবাক হয়ে ভাবতে লাগলো, আবার ওদের মধ্যে ঝামেলা হয়েছে নাকি?
– হঠাৎ আমাকে ফোন।
– হেমলতাকে ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করো তো আমাকে ফোন দিচ্ছে না কেনো?
– তুমিই তো ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করতে পারো।
– ওর নানীর নাম্বারে ফোন দিলে ঝামেলা হবার সম্ভাবনা ৯০%। আমি ঝামেলা করতে চাচ্ছিনা।
– ফোন দিয়ে কী বলবো?
– আমাকে ফোন দেয়ার কথা।
– আর কিছু?
– এটুকু হলেই চলবে।
– তুমি এমন কেনো?
– কেমন?
– এইযে ফোন দিয়ে সরাসরি প্রয়োজনের কথা বললে। একবারও ভালো আছি কিনা জিজ্ঞেস করলেনা।
– আমি অনেক টেনশনে আছি তাই এসব কুশলাদি বিনিময়ের কথা মাথায় নেই।
– হেমলতার মোবাইল ওর কাছে নেই। তাই হয়তোবা পারছেনা ফোন দিতে সেটা নিয়ে চিন্তার কী আছে?
– সেই সকালে কথা হয়েছে আর কথা হয়নি। বুঝতে পারছো?
– না।
– তাহলে রাখো। আর হেমলতাকে এখনই ফোন দিবা।
মিম্মা মনে মনে বললো, প্রেমের প্রথম দিকে এমনই হয় রে বাছা। আস্তে আস্তে এই উতলা ভাবটা কেটে গিয়ে ডোন্ট কেয়ার ভাব চলে আসে।
ফোন না দিলে বা রিসিভ না করে আলাদা একটা শান্তি ফিল করবা তখন।

চলবে…..

© Maria Kabir

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে