জ্যামিতিক ভালোবাসা পর্ব-০১

0
2076

#জ্যামিতিক_ভালোবাসা -১ম পর্ব

আপু এই আপু তাড়াতাড়ি জামা ঠিক কর সোহান ভাইয়া আসতেছে রুমে।

ইকরা:- ডিস্ট্রার্ব করিস না দেখতে পাচ্ছিস না জ্যামিতি করছি।

মিলু:- রাখো তোমার জ্যামিতি ভাইয়া রুমে ঢুকলো বলে।

ইকরা:- উফ যাতো দরজা লাগিয়ে দিয়ে আয়। আমি উঠতে পারবো না।

— দু’জনের কথা শেষ হতে না হতেই সোহান সোজা রুমে ঢুকে পরলো। রুমে ঢুকেই সোজা বিছানায় শুয়ে কিরে কি করছিস তোরা দু’জন?

ইকরা:- ওড়না ঠিক করতে করতে জ্যামিতি করছি, একটু দেখিয়ে দাওতো। কোন ভাবেই মাথায় ঢুকে না।

সোহান:- এই তুই কি ছোট মানুষ আজ বিয়ে দিলে কাল সংসার করতে হবে এখনো জ্যামিতি নিয়ে পরে আছিস।

ইকরা:- কি করবো বলো ছাত্রীকে বুঝাতে হবে কিন্তু আমি পারছি না। মিলু কি বুঝায় তাও বুঝি না।

সোহান:- আচ্ছা তোর টিউশনি কেন করতে হবে?
তোর বাবার কি কম আছে নাকি?

ইকরা:- দেখো বাবার কম আছে না বেশী আছে তা তুমি ভালো করেই জানো। কিন্তু কথা তা না অবসর টাইম পার করার জন্যই আমি টিউশনি করাই বুঝলে যদি ইচ্ছে হয় তাহলে বলো নয়তো যাও আমার রুম থেকে।

সোহান:- এই মিলু তোর বোনকে বলে দে এটা আমার চাচার টাকায় করা রুম, আমার বাপ দাদার তৈরী বাড়ি। আমার যখন যেখানে মন চায় সেখানে বসবো, সেই রুমে যাবো, যদি কারো খারাপ লাগে তাহলে সে উঠে চলে যাক।

মিলু:- উফ তোমরা থামবে? কি শুরু করলা দু’জন? আর আপু তোমার মাথায় এই সাধারণ জিনিসটা কেন ঢুকে না? কতবার বুঝিয়ে দিলাম নি পারলে করো না। ভাইয়াতো ঠিকই বলছে তোমার টিউশনি করানোর কোন দরকার নেই।

ইকরা:- মিলু তুই এখনি আমার চোখের সামনে থেকে যা নয়তো তোর মাথার সব চুল ছিড়ে ফেলবো।

মিলু:- রুম থেকে বের হতে হতে ভাইয়া ঠিকই বলে সত্যিই তোমার মাথা মোটা।

— ইকরা চিৎকার করে মিলু। মিলু মুখ বেংচি কেটে দৌঁড়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলো। সোহান দু’বোনের কাণ্ড দেখে হাসতে হাসতে শেষ।

ইকরা:- ফাজিল কোথাকার তোমার জন্য সবাই এখন আমাকে মাথা মোটা বলে বলেই কোল বালিশ দিয়ে সোহানকে মারতে শুরু করলো।

সোহান:- এইকি করছিস ব্যথা পাচ্ছি। ছেড়ে দে বলছি,

ইকরা:- আর কখনো বলবে আমাকে মাথা মোটা?

সোহান:- যা সত্যি তাই বলি মাথা মোটাকে মাথা মোটা বলবো না তো কি বলবো, বলেই লাফিয়ে খাটের উপর থেকে নিচে নেমে দাঁড়ায় সোহান।

— এই ভাবেই প্রতিদিন যায় ওদের দু’জনের চৌধুরী বাড়িতে এটা একটা নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। দু’জন যখনি একত্রে হবে মারামারি আর দুষ্টমিতে সবাইকে মাতিয়ে রাখবে। সেই ছোট বেলা থেকেই দু’জনের সম্পর্ক এমনি করে এগিয়ে চলছে। ওদের ঝগড়ার কোন বিচার নেই, সেই ছোট বেলা থেকেই আফসার আর আমির দুই ভাই ওদের দুষ্টমি দেখতে দেখতেই বয়স বাড়িয়ে ফেলেছে। সকালে নাস্তার টেবিলে, সন্ধ্যায় চায়ের আড্ডা সব খানেই চলে ওদের দুষ্টমি। অনার্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী হবার পরেও জ্যামিতিতে বেশ কাচা ইকরা। সেই সাথে বাচ্চামি স্বভাবতো রয়েছেই। মাস্টার্স কম্পিলিট করে বেকার বসে ঘরে দিন কাটাচ্ছে সোহান। ইকরার সাথে দুষ্টমি না করলে যেন দিনটাই মাটি হয়ে যায় সোহানের।

ইকরা:- হাঁপাতে হাঁপাতে আর একবার যদি আমাকে তুমি মাথামোটা বলছো তবে তোমার মাথার সব চুল ছিড়ে ফেলবো।

সোহান:- হাসতে হাসতে মুখ বেংচি কেটে মাথা মোটা বলে রুম থেকে দৌঁড়ে বের হবার সময় দরজার সাথে ধাক্কা লেগে পরে গেলো

ইকরা:- ঠিক হয়েছে ভালো হয়েছে উচিৎ শিক্ষা হইছে, বলেই হা হা করে হাসা শুরু করলো ইকরা।

— সোহান ইকরার দিকে ঘুরতেই দেখতে পেলো সোহানের কপাল বেয়ে টপটপ করে রক্ত ঝড়ছে, ইকরা হাসি থামিয়ে চিৎকার করে বলে উঠলো আল্লাহ রক্ত বের হচ্ছে বলেই লাভ দিয়ে খাট থেকে নেমে পরলো। ফাস্ট এইড বক্স নিয়ে দৌড়ে সোহানের কাছে যেয়ে বসে কপালে স্যাভলন লাগিয়ে দিতে দিতে ভালো হয়েছে না খুব?

সোহান:- তোর জন্যইতো হয়েছে।

ইকরা:- ওহ নিজে ব্যথা পাবে আর আমার দোষ দিবে। এতো বড় ছেলে একেতো কোন চাকরি করো না, তার উপর সারা দিন আমাকে জ্বালাতন করো।।

সোহান:- আমি তোকে জ্বালাতন করি না তুই আমাকে জ্বালাতন করিস?

ইকরা:- আমি তোমার ঘরে যেয়ে মনে হয় জ্বালাতন করে আসছি?

সোহান:- তো কি হয়েছে যেখানে সেখানে যখন তখন জ্বালাতন করিস।

ইকরা:- দেখবোনি বিয়ের পর তোমার বউ কতটা ভালো হয়, আমার চেয়ে ভালো জীবনেও হবে না।

সোহান:- ইকরার কান টেনে ধরে এই এখানে বিয়ের কথা আসলো কই থেকে? তোর বিয়ে করার ইচ্ছে হয়েছে সেটা বল করিয়ে দিবো আমি এখুনি যেয়ে চাচা আর চাচীকে বলছি।

ইকরা:- উফ ছাড়ো ব্যথা পাচ্ছি, আর আমার বিয়ের বয়স হয়নি বুঝলে। তোমার মততো পাড়ার এ মেয়ে সে মেয়ের পিছু পিছু ঘুরি না।

সোহান:- এই তোকে কে বললোরে আমি পাড়ার মেয়েদের পিছু পিছু ঘুরি।

ইকরা:- যেই বলুক কথাটা মিথ্যা না।

সোহান:- অবশ্যই মিথ্যা হাজার বার মিথ্যা আমি কোন মেয়ের পিছু নেই ও না ঘুরিও না।

ইকরা:- ওহ তাই বুঝি?

সোহান:- হ্যা তাই।

ইকরা:- পট্টি বাঁধতে বাঁধতে জেরিনদের বাড়ির নিচে তাহলে প্রতিদিন কি করো?

সোহান:- ইয়ে না মানে রাহুল জেরিনকে পছন্দ করে তাই ওখানে যাওয়া হয়। আর কোন কিছু না।

ইকরা:- আর ফাহিমাদের বাড়ির পেছনের মাঠে প্রতিদিন কি করো শুনি?

সোহান:- মাঠে মানুষ কি করে শুনি? খেলাধুলো করে, সে জন্যই মাঠে যাই। আচ্ছা তোর বান্ধবিরা বিচার দেয় নাকি?

ইকরা:- তারা কেন বিচার দিবো? আমার কি চোখ নাই?

সোহান:- ওহ তাই বুঝি তাহলে তুই কেন ওদের বাড়িতে যাস?

ইকরা:- আমি কেন যাই মানে? আমার বান্ধবিদের বাড়ি আমার যখন ইচ্ছে তখন যেতে পারি। আমার জন্য কি কোন মানা আছে নাকি?

সোহান:- আমার জন্যও না রাস্তায় যাওয়া মানা আছে না মাঠে যাওয়া মানা আছে তাতে তোর আর তোর বান্ধবিদের কি?

ইকরা:- আমাদের কারোই কিছু না এখন তুমি যাওতো আমার রুম থেকে।

সোহান:- যাচ্ছি আর সবাই যখন বাহিরে জানতে চাইবে কি করে কপাল ফাটলো তখন আমি তোর নাম বলবো মনে রাখিস।

ইকরা:- মানে? আমি বরং ব্যান্ডেজ করে দিলাম ধন্যবাদ দিবে তা না উল্টো আমার নামে অপবাদ দিবে বলছে যাও না যেয়ে শুধু বলো তখন মজা বুঝাবো।

— সোহান ইকরার রুম থেকে বের হয়ে সোজা ডাইনিং টেবিলে যেয়ে বসলো। এমন সময় ইকরার মা এসে একি এমনটা কি করে হলো ইস কতখানি ফেটে গেছে কি করে ফাটলো?

সোহান:- উফ চাচি সামান্যই ফেটেছে দরজার সাথে ধাক্কা লেগে।

মিলু:- আম্মু আমার মনে হয় ইকরা আপু মেরে ফাঁটিয়েছে, দেখছো না আবার কত সুন্দর করে ব্যান্ডেজ ও করে তিছেজ।

সোহান:- একটা থাপ্পর দিবো ফাজিল মেয়ে কোথাকার বললাম ধাক্কা লেগে ফেটেছে আর ওকিনা কূটনামি শুরু করছে।

চাচী:- ইকরা এই ইকরা,

— মায়ের ডাক শুনে তাড়াতাড়ি নিজের রুম থেকে বের হয়ে ডাইনিং এসে হাজির হলো ইকরা। পুরো বাড়িতে ইকরা একমাত্র ওর মাকেই ভয় পায়। সামনে এসে কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে মায়ের দিকে তাকিয়ে কি হলো ডাকছো কেন আমারে?

চাচী:- সোহানের কপাল ফাটলো কি করে?

ইকরা:- সোহানের দিকে তাকিয়ে দরজার সাথে ধাক্কা খেয়ে পরে ফেটেছে।

সোহান:- দেখছো আমি বলছিলাম না এবার আমার কথা বিশ্বাস হলো?

— সোহানের কথায় ইকরা ভয় পেয়ে গেলো, ও মনে করেছে সোহান নিশ্চই বানিয়ে কিছু বলেছে ওর নামে। তাই অগ্নী দৃষ্টিতে সোহানের দিকে তাকালো ইকরা। ইকরার চাহনী দেখে মিটি মিটি হাসছে সোহান। এমন সময় সোহানের মা এসে কি হয়েছে এখানে?

চাচী:- দেখো বুবু তোমার ছেলের অবস্থা।

মা:- ঠিক হয়েছে সারা দিন শুধু বাড়িতে বসে বসে মেয়েটাকে জ্বালাতন করে।

চাচী:- বুবু তুমি এসব কি বলো শুনি বাড়িতে ছেলেটা না থাকলে পুরো বাড়ি শূন্য শূন্য লাগে।

— ইকরার মা বরাবরই সোহানের পক্ষে সোহান যতই অন্যায় করুক আর এদিকে সোহানের মা বরাবরই ইকরার পক্ষে এতে ইকরার দোষ যাই হোক না কেন।

মা:- হয়েছে তোর আর ওর পক্ষ নিয়ে কথা বলতে হবে না। ওযে কত বড় বদমাইস আমি জানি।

চাচী:- আচ্ছা বুবু চলোতো সবার জন্য নাস্তা নিয়ে আসি। ইকরার দিকে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে যদি আর একবার ওর সাথে ঝগড়া করছিস তাহলে বুঝবি তোর খাওন দাওন সব বন্ধ বাড়িতে।

— দু’জন চলে যেতেই ইকরা অগ্নী দৃষ্টি করে সোহানের দিকে তাকিয়ে তুমি আমার নামে নিশ্চই মিথ্যা কথা বলছো তা না হলে মা কখনোই এমনটা করতো না।

সোহান:- আমি তোর মত না যে মিথ্যা কথা লাগাবো।

ইকরা:- কি আমি মিথ্যা কথা লাগাই?

— এভাবেই শুরু হলো আবারও দু’জনের তুমুল ঝগড়া, মিলু দু’হাতে কান চেঁপে ধরে রেখেও যখন অসহ্য হয়ে গেলো, তখন চিৎকার করে বললো তোমরা দু’জন চুপ করবা। ইকরার দিকে বড় বড় চোখ করে বলে উঠলো সত্যিই তুমি মাথা মোটা।

ইকরা:- রেগে যেয়ে যেই মিলুকে থাপ্পর মারতে যাবে অমনি কেউ ইকরার হাত চেঁপে ধরে।

চলবে…

©শাহরিয়ার

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে