জ্যামিতিক ভালোবাসা পর্ব-১২

0
888

#জ্যামিতিক_ভালোবাসা-১২তম পর্ব
©শাহরিয়ার

— নৌকা পাড়ে ভিড়তেই দু’জন নৌকা থেকে নেমে পড়লো।

মাঝি:- বেশী দেরী কইরেন না, সন্ধ্যা হয়ে এলো আর আকাশের অবস্থাও বেশী ভালো না। যে কোন সময় ঝড় বৃষ্টি শুরু হতে পারে।

সোহান:- আচ্ছা ঠিক আছে আমরা তাড়াতাড়িই চলে আসবো।

— সোহান ইকরার হাত ধরে হেঁটে চললো সামনের দিকে কাশফুল গুলো বাতাসে হেলছে ধুলছে। দেখতে অনেক সুন্দর লাগছে। শহরের বন্দী জীবনে শুধু টিভিতে আর সোস্যাল মিডিয়াতেই এতো সুন্দর জায়গা দেখতে পাওয়া যায়। আজ বাস্তবে এতো সুন্দর জায়গা দেখে ইকরার ইচ্ছেই করছিলো না এখান থেকে চলে যেতে। ইকরা ঘুরছে আর একটু একটু করে ফুল ছিড়ে উড়িয়ে দিচ্ছে। সোহান আনন্দের এই প্রতিটা মুহুর্ত নিজের ক্যামেরায় বন্দী করে নিচ্ছে। একটি মুহুর্তও হারিয়ে দিতে চাচ্ছে না সে।

সোহান:- কত সুন্দর তাই না?

ইকরা:- অনেক সুন্দর ইস আমাদের শহরটাও যদি এতো সুন্দর হতো, তাহলে কত সুন্দর লাগতো।

সোহান:- তাহলে এতো সুন্দর লাগতো না এই জায়গাটা। সব জায়গা একই রকম হলে তখন আর ঘুরতেও ইচ্ছে হতো না।

ইকরা:- হুম এটা ঠিক বলছো।

— দু’জন কথা বলতে বলতে একটা কাশফুলের পাপড়ি উড়ে যেয়ে ইকরার গালে পড়লো। সোহান এগিয়ে যেয়ে হাত বাড়িয়ে দিতেই ইকরা চোখ বন্ধ করে নিলো। গাল ছুঁয়ে দিয়ে পাপড়িটা হাতে নিয়ে, কত সুন্দর কমল।

ইকরা:- চোখ খুলে ফাজিল একটা।

সোহান:- আমি আবার কি করলাম?

ইকরা:- কি সব উল্টাপাল্টা কথা বলো।

সোহান:- কি তোকে আমি কিছু বলছি নাকি?

ইকরা:- তো কাকে বলছো?

সোহান:- আজবতো আমি পাপড়িটা ধরে বুঝলাম এটা কোমল তাই বললাম।

ইকরা:- বুঝি বুঝি,

সোহান:- ইকরার হাত চেঁপে ধরে টান দিয়ে বুকের সাথে মিলিয়ে কি বুঝিস?

ইকরা:- উফ ছেড়ে দাও।

সোহান:- উহু আজ আর ছাড়ছি না, নিঝুম নিরব এলাকা চিৎকার করলেও আজ আর কেউ আসবে না। চারিদিক থেকে কিছুই দেখা যায় না।

ইকরা:- সোহানের বুকে ঘুষি মারতে মারতে একদম উল্টা পাল্টা কথা বার্তা বলবে না বলে দিলাম।

সোহান:- ইকরার পিঠে জোরে চাঁপ দিয়ে বুকের সাথে আরও কিছুটা চেঁপে নিলো। দু’জন দু’জনের নিঃশ্বাসের শব্দ শুনতে পাচ্ছে।

— ইকরা লজ্জায় দু’চোখ বন্ধ করে নিলো, সোহানকে বাধা দেবার মত শক্তি যেন নিজের শরীরে বিন্দু পরিমাণ ও নাই। তবুও অস্পষ্ট ভাবে মুখ নাড়িয়ে বলে উঠলো এমনটা কইরো না। সোহানের কানে তা এসে পৌঁছালো। সোহান ইকরার কানের কাছে হাত নিয়ে চুলের ভিতর একটা কাশফুলের ডাল ভেঙে গেথে দিয়ে হালক করে ডাক দিলো ইকরা। ইকরা চোখ মেলে তাকাতেই দেখতে পেলো সোহান অনেকটা দূরে দাঁড়িয়ে ফোনে ছবি তুলছে। ইকরা হেসে দিলো, এমন সময় মাঝির ডাক শুনতে পেলো দূর থেকে সোহান ইকরাকে বললো চল সন্ধ্যা হয়ে এসেছে। দু’জন হাঁটতে হাঁটতে এগিয়ে চললো নৌকার দিকে। হাঁটতে হাঁটতে নৌকার কাছে এসে সোহান উঠে হাত বাড়িয়ে দিলো ইকরার দিকে। ইকরা সোহানের হাত চেঁপে ধরে নৌকা চড়ে বসলো। মাঝি নৌকা ছেড়ে দিলো, দু’জন নৌকায় বসে গল্প করছে আর একজন আরেক জনের দিকে পানি ছিটিয়ে দিচ্ছে। মাঝি তাকিয়ে দেখছে আর মুচকি মুচকি হাসছে। দেখতে দেখতো নৌকা চলে আসলো ঘাটে। দু’জন নৌকা থেকে নেমে বাড়ির পথে হাঁটা শুরু করলো। তখন সন্ধ্যা হয়ে এসেছে।

ইকরা:- খুব সুন্দর জায়গা সবাইকে নিয়ে বেড়াতে আসতে হবে বেলা থাকা অবস্থায়।

সোহান:- হ্যাঁ আসা যাবে আরও অনেক সুন্দর সুন্দর জায়গা আছে তুই ঘুরে শেষ করতে পারবি না।

ইকরা:- আমার ঘুরাঘুরি শেষ না হলে আমি এখান থেকে যাবোই না।

সোহান:- তাহলে কি তোকে রেখেই চলে যাবো।

ইকরা:- ইস বললেই হয়ে গেলো।

সোহান:- তাহলে কি করবো দিন রাত চব্বিশ ঘন্টা শুধু তোকে নিয়েই ঘুরবো।

ইকরা:- প্রয়োজন হলে তাই করবা।

সোহান:- খেয়ে দেয়েতো আর কোন কাজ নেই।

ইকরা:- তোমার কি এমন কাজই বা আছে? খাবা আর ঘুরবা এটাইতো তোমার কাজ।

সোহান:- কে বললো আমার কোন কাজ নেই? এই যে আমার এতো সুন্দর একটা ভালোবাসার মানুষ আছে তার দিকে তাকিয়ে আমি যুগের পর যুগ কাটিয়ে দিতে পারবো।

ইকরা:- ইস কি সব বলো না তুমি।

— দু’জন কথা বলতে বলতে বাড়ির ভিতর ঢুকে পড়লো। সকলে তখন বসার ঘরে বসে চা নাস্তা খাচ্ছে আর গল্প করছে। ওদের দেখেও ডাক দিলো। দু’জন বললো ফ্রেস হয়ে আসছি। অল্প সময়ের ভিতর ফ্রেস হয়ে দু’জন সবার সাথে যোগ দিলো। ফুপু আর জুহি দু’জন মিলে চা আর নাস্তা এনে দিলো ইকরা আর সোহানকে।

রাসেল:- তোকেতো খুব সুন্দর লাগছে শাড়িতে ইকরা।

ইকরা:- মাথা নিচু করে ধন্যবাদ ভাইয়া।

রাসেল:- তারপর দু’জন কোথায় কোথায় ঘুরলি।

ইকরা:- এইতো নদীর পাশ দিয়ে ঘুরে আসলাম। তোমার কি অবস্থা কতদিন ঢাকায় যাওনা তোমরা।

রাসেল:- এই টুকটাক ব্যবসা নিয়েই ব্যস্ততায় দিন কেটে যাচ্ছে তাই যাওয়া হচ্ছে না ঢাকার দিকে। সোহানের দিকে তাকিয়ে তোর কি অবস্থা ভাই।

সোহান:- এইতো চলছে ব্রো, কোন রকমে কেটে যাচ্ছে দিনকাল।

রাসেল:- হুম কিছুতো একটা করতে হবে। এভাবে লেখাপড়া শেষ করে বসে থাকলে মন মানুষিকতা নষ্ট হয়ে যায়।

সোহান:- হুম দেখি এখান থেকে যেয়ে কিছু একটা করা যায় কিনা।

— রাসেল কথা সোহানের সাথে বললেও সে তাকিয়ে আছে ইকরার দিকে। সোহান তা ভালো করেই খেয়াল করলো। ইকরা নাস্তা করায় ব্যস্ত থাকায় সেদিকে খেয়াল করলো না। এদিকে জুহি নাস্তার প্লেট হাতে নিয়ে সোহানের পাশে বসতে বসতে।

জুহি:- আমাদের সাথে নিলেওতো পারতে ভাইয়া আমরাও তোমাদের সাথে একটু ঘুরে আসতাম।

সোহান:- মুখে হাসি ফুটিয়ে তোরাতো সব সময়ই যাস, শহরেতো আর এতো সুন্দর নদী দেখতে পাওয়া যায় না, তাই আমরা দু’জন একটু ঘুরে দেখে আসলাম। তাছাড়া তোরাওতো জার্নি করে এসে রেস্ট নিচ্ছিলি তাই আর ডাক দেইনি। কাল সকলে মিলে ঘুরতে যাবো।

জুহি:- হ্যাঁ আমাদের এখানে অনেক সুন্দর সুন্দর ঘুরার জায়গা আছে। আমরা সকলে মিলে ঘুরতে পারি।

সোহান:- হ্যাঁ কেন নয়।

রাসেল:- হ্যাঁ ঘুরার জন্য আমাদের গ্রামটা একদম পারফেক্ট বলতে পারিস। ছোট ছোট বেশ কিছু পার্কও আছে। এছাড়া বন্য প্রাণী সংরক্ষণের জন্য একটা ইকো পার্কও তৈরী হয়েছে তোরাতো ঐখানে যাসনি এর আগে। চল কাল সকলে মিলে ঘুরতে যাওয়া যাবে। কি বলিস তোরা?

ইকরা:- খাবারের থেকে মুখ তুলে হুম খারাপ হবে না, ঘুরার জন্যইতো এসেছি।

বাবা:- অনেকক্ষণ চুপ থাকার পর তোরাই ঘুরতে যাস আমাদের আবার টানাটানি করিস না। এই বুড়ো বয়সে আমরা যেতে পারবো না।

রাসেল:- চেয়ার ছেড়ে উঠতে উঠতে কি যে বলো না মামা তুমি, তোমার কোথায় এতো বয়স হয়েছে? এখনো একদম ইয়ং দেখা যায় তোমাকে।

বাবা:- হাসতে হাসতে কি যে বলিস না। কোথায় যাচ্ছিস এখন?

রাসেল:- একটু বাহিরে যাবো মামা, বেশ কিছু দিন পর আমিও গ্রামে আসলাম যেয়ে সবার খোঁজ খবর নেই। সোহানের দিকে তাকিয়ে তুই কি যাবি?

সোহান:- না ভাইয়া তুমি যাও।

রাসেল:- ঠিক আছে বলে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।

— রাসেল বের হয়ে যাবার পর একে একে সকলে সেখান থেকে উঠতে শুরু করলো। জুহি, ইকরা আর মিলু্র সাথে ওদের রুমের দিকে রওনা হলো। সাথে সোহানও উঠে ওদের সাথে সাথেই হেঁটে নিজের রুমের দিকে যাচ্ছে। সোহান রুমে ঢুকার আগে জুহি বললো ভাইয়া এই ঘরে আসো সবাই মিলে গল্প করবো। কতদিন পর তোমাদের এক সাথে পেলাম। সোহান আর নিজের রুমে না ঢুকে ওদের সাথে ওদের রুমে ঢুকলো। ইকরা ঘরে ঢুকে দক্ষিনের জানালাটা খুলে দিতেই শীতল বাতাস এসে সবাইকে স্পর্শ করলো।

জুহি:- ইস কত বছর পর এই ঘর গুলোতে মানুষ থাকছে, তোমরা চলে গেলে আবার বাড়িটা ফাঁকা হয়ে যাবে ঘর গুলো সব শূন্য পরে রবে।

সোহান:- হাসতে হাসতে এক কাজ করতে হবে তোকে বিয়ে দিয়ে ঘর জামাই রেখে দিতে হবে। দু’জন মিলে প্রতিদিন একটার পর একটা ঘর চেঞ্জ করবি। তাহলেই আর কোন ঘর খালি থাকবে না। আর নয়তো রাসেল ভাইকে বলবি বিয়ে করে এমনটা করতে বুঝলি।

— সোহানের কথা শুনে জুহি অনেকটা লজ্জা পেলেও বাকিরা হেসে দিলো। জুহি বললো ভাইয়া তোমার মুখে কিছুই আটকায় না।

সোহান:- হাসতে হাসতে তোর বিয়ের বয়স হইছে আর আমি বললেই দোষ তাই না?

জুহি:- আমি কি বলছি নাকি তোমার দোষ? কিন্তু একটুতো মুখ সামলে রাখো, লজ্জাতো লাগে তাই না? আচ্ছা সব বাদ চলো গল্প শুনি তুমি নাকি খুব সুন্দর গল্প লেখো?

সোহান:- আমি গল্প লেখি তোকে কে বললো? নিশ্চই মিলু বলছে বলেই বড় বড় চোখ করে সোহান মিলুর দিকে তাকালো। মিলু তখন হাসতে শুরু করলো। সাথে জুহিও ইকরাও হাসতে শুরু করলো।

জুহি:- প্লিজ ভাইয়া প্লিজ বলোনা।

সোহান:- ভয় পেলে কিন্তু তখন আমাকে কিছু বলতে পারবি না।

জুহি:- আচ্ছা ঠিক আচ্ছে।

— সোহান বলতে শুরু করলো, গভীর রাত চারিদিকে অন্ধকার কোথাও কোন মানব নেই… গল্প বলতে বলতে হঠাৎ করেই কারেন্ট চলে গেলো অমনি সকলে এক সাথে চিৎকার করে উঠলো।

চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে