জীবনেরডায়েরি২ পার্ট: ৫

0
2203

জীবনেরডায়েরি২

পার্ট: ৫

লেখিকা: সুলতানা তমা

রাতে বারান্দাতেই ওর কাধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পরছিলাম, সকালে রিয়ার ডাকে দুজনের ঘুম ভাঙ্গলো
রিয়া: রোমান্স করতে করতে বারান্দাতেই ঘুমিয়ে পরছিলা হিহিহি
আমি: এত্তো হিহিহি করছ কেন
রিয়া: তোদের রোমান্স দেখে
আমি: তোরে আমি….
রিয়া: কিচ্ছু করতে হবে না আন্টি উঠে পরেছেন ফ্রেশ হয়ে নাস্তা খেতে আস দুজন
শ্রাবন: তুমি যাও আমরা আসছি
রিয়া: ওকে

রিয়া যেতেই শ্রাবন আমাকে জরিয়ে ধরলো
–দেখেছ আমার কাধে এতো আরামে ঘুমাইছ যে আম্মু উঠার আগে তুমি উঠতে পারোনি হিহিহি
–তোমার কারনেই তো এমন হলো আবার হাসতেছ মা কি ভাববেন
–কিছুই না আম্মু বুঝে
–কচু বুঝে ফ্রেশ হয়ে ডাইনিং এ আস
–ওকে যাও আসছি

নাস্তা খেতে খেতে মা বললেন
মা: তমা তোমার তো অনেক কিছুই অজানা খেয়ে আমার রুমে এসো সব বলবো তোমাকে
আমি: ঠিক আছে

শ্রাবন, আমি, রিয়া আর মা সবাই মায়ের রুমে বসে আছি, মা বলতে শুরু করলেন
মা: তমা যেদিন তোমার আম্মু তোমার হাত পুরিয়ে দেয় তার আগের দিন উনি আমাদের বাসায় এসেছিলেন
আমি: অভাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম আম্মু কিভাবে বাসা চিনে আর আপনাদেরই বা কিভাবে চিনে
শ্রাবন: তোমার জন্মদিনের রাতে উনি ছাদে আমাদের দুজনকে দেখেছিলেন
আমি: তারপর
মা: উনি বাসায় এসে শ্রাবন কে হুমকি দেন তোমাকে যেন ভুলে যায়, আমি উনাকে সাফ জানিয়ে দেই তুমিই আমার বৌমা হবে উনি কিছু না বলে চলে যায়, পরেরদিন ফোনে জানিয়ে দেয় তোমার হাত পুরিয়ে দিছে শ্রাবন যদি তোমার সাথে যোগাযোগ রাখে তাহলে তোমাকে মেরে ফেলবে
শ্রাবন: তখন থেকেই আমি তোমার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেই তোমার কোনো ক্ষতি হলে আমি বাঁচতে পারবো না তাই
আমি: আমাকে তখন এসব বলনি কেন
শ্রাবন: তোমার আম্মু বলছিল তোমাকে এসব জানালে উনি তোমাকে মেরে ফেলবে
মা: আমরা এসব বিশ্বাস করিনি কারন সৎ মা হলেও তো মা, মেয়েকে কিভাবে মেরে ফেলবে তাই শ্রাবন তোমাকে আবার ফোন দেয়, আর তার দুদিন পরই তোমাকে বিষ খাওয়ায় তোমার আম্মু
আমি: (কথাটা শুনে অভাক হলাম না আমি তো আগেই বুঝতে পারছিলাম এইটা আম্মুর কাজ)
শ্রাবন: চুপ হয়ে আছ কেন
আমি: এমনি
মা: তুমি হাসপাতালে ছিলে কিন্তু আমরা মা ছেলে তোমাকে এক নজর দেখতে পারিনি তোমার আম্মু বলেছিল আবার যদি তোমার সাথে শ্রাবন যোগাযোগ করে তাহলে তোমাকে জানে মেরে ফেলবে
শ্রাবন: সেই ভয়ে আমি তোমাকে ফোন দেইনি সিম চেঞ্জ করে ফেলি তুমি বেঁচে আছ এইটুকুতেই শান্তি খুঁজে নেই আর কিছু করার ছিল না আমার
আমি: আম্মু এমন করলো কেন কিছু বলেছে
শ্রাবন: হ্যা আমি নাকি তোমার যোগ্য না আমার কাছে তোমাকে বিয়ে দিলে উনার কোনো লাভ হবে না
মা: তারপর তোমার আম্মু এসে জানায় তোমার নাকি অনেক বড় জায়গা থেকে বিয়ের প্রস্তাব এসেছে কাজেই শ্রাবন যেন তোমাকে ভুলে যায়
শ্রাবন: আমি চেয়েছিলাম বিয়ের আগে তোমাকে সবকিছু লুকিয়ে জানাব কিন্তু তার আগেই তোমার আম্মু গুন্ডা ভাড়া করে আমাকে মারে আমার অবস্থা খুব খারাপ ছিল তাই আম্মু আমাকে নিয়ে কক্সবাজার চলে যান
মা: আমার ছেলেটা কে তুমি ভুল বুঝো না ওর কোনো দোষ নেই ও এই জায়গা ছেড়ে যেতে চায়নি আমি জোর করে নিয়ে যাই ওই তো আমার বেঁচে থাকার একমাত্র সম্বল তাই ভয় পেয়ে যাই ওর যদি কিছু হয়ে যায়
আমি: না মা এতে তো আপনাদের কোনো দোষ নেই
মা: তুমি যেমন ভালো ছিলে না শ্রাবনও তেমন ভালো ছিল না সবসময় তোমার কথা ভাবতো কেমন যেন ঘোরের মধ্যে থাকতো এভাবে কিছুদিন যেতেই ও অসুস্থ হয়ে পড়ে প্রায় ছয়মাস পর ও সুস্থ হয়
শ্রাবন: তোমার বিয়ে হয়ে গেছে জানতাম তাই তোমাকে পাবার আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম, তোমাকে ভুলে থাকার জন্য পুলিশে চাকরি নেই নিজেকে ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করি কিন্তু রিয়ার সাথে যোগাযোগ হবার পর ও যখন বললো তুমি আকাশ কে মেনে নাও নি ডিভোর্স নিয়েছ তখন আবার তোমাকে পাবার ইচ্ছা জাগে তারপর এখানে ছুটে আসি
রিয়া: তমা আমি সব জানতাম শ্রাবনের সাথে যেদিন কথা হয়েছিল ও সেদিন সব বলেছিল আমি তোকে জানাই নি কারন আমি চেয়েছিলাম শ্রাবনের মুখ থেকেই তুই এসব শুন
আমি: হুম কিন্তু আকাশের সাথে বিয়ে দিয়ে আম্মুর কি এমন লাভ হলো যে শ্রাবনের সাথে দিলে হত না
শ্রাবন: সেটাই তো ভাবার বিষয় এখন আগে তোমার আব্বুকে খুঁজে বের করতে হবে তাহলেই সব রহস্য বেরিয়ে আসবে
আমি: কিন্তু আব্বুকে পাবো কোথায়
মা: চিন্তা করো না মা একদিন ঠিক পেয়ে যাবা সবাই কে
আমি: হুম

রুমে এসে শুয়ে পরলাম ভালো লাগছে না আম্মু কেন এমন করলো সৎমা বলে কি এমন করবে, আর আম্মুর কি এমন লাভ হলো আকাশের সাথে বিয়ে দিয়ে, এসব ভাবছি তখনি ফোন ভেজে উঠলো আগের সেই নাম্বার
–হ্যালো
–কিরে তোর সৎ মায়ের ব্যাপারে সব জেনে গেছিস
–আপনি কে বলুন তো আমার সবকিছুর খুঁজ কেন রাখছেন
–সব বুঝবি আর হ্যা তোর শ্রাবনকে বলে দিস পুলিশের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে যেন নিজের প্রাণটা না হারায়
–মানে
–হাহাহাহা সব বুঝবি এখন বল তোর আব্বুর ঠিকানা ফেলি
–না প্লিজ ঠিকানাটা দিন
–গিয়ে দেখ হয়তো কোথাও মরে পরে আছে আর শেয়াল কুকুরে ছিড়ে ছিড়ে খাচ্ছে

ফোনটা রেখে দিল এসব শুনে প্রচন্ড রাগ উঠলো ফোন ফ্লোরে ছুড়ে মারলাম চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করলাম আমার আব্বু মরতে পারে না, চিৎকার শুনে সবাই দৌড়ে আসলো আমি কাঁদতে কাঁদতে অজ্ঞান হয়ে গেলাম…..

চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে