জীবনেরডায়েরি২ পার্ট: ৪

0
2288

জীবনেরডায়েরি২

পার্ট: ৪

লেখিকা: সুলতানা তমা

সকালে পিয়াস আমাদের ডেকে তুললো ওর ফ্লাইট নয়টায়, রিয়া তাড়াতাড়ি উঠে নাস্তা বানালো, নাস্তা খেতে খেতে রিয়া বললো
রিয়া: তমা তোর যাওয়ার দরকার নেই আমি ওকে এয়ারপোর্ট এগিয়ে দিয়ে আসব
আমি: আমাকে এতিমখানায় যেতে হবে
রিয়া: এই শরীর নিয়ে
পিয়াস: দুজনেই চলো আমাকে এগিয়ে দিয়ে তমাকে ডক্টর দেখিয়ে আসবা ওর তো জ্বর অনেক বেড়েছে
রিয়া: ঠিক আছে

রেডি হয়ে তিনজন বেড়িয়ে পরলাম এয়ারপোর্ট এর উদ্দেশ্যে, গাড়িতে বসে আছি তখন শ্রাবন ফোন দিল
–হ্যালো
–জ্বর কমেছে
–একটু
–মিথ্যে বল কেন রিয়া যে বললো কমেনি ডক্টর এর কাছে নিয়ে যাচ্ছে
–(রিয়ার দিকে রাগি চোখে থাকালাম ও হাসছে)
–চুপ হয়ে আছ কেন
–এমনি কমে যাবে আর ডক্টর এর কাছে যাচ্ছি তো
–আমার ট্রান্সফার হয়েছে তোমরা আগে যেখানে থাকতে ওই এলাকায় আগামীকাল আসছি
–তাহলে তো ওইদিকে বাসা ভাড়া নিতে হবে
–যেতে একটু কষ্ট হবে সমস্যা নেই আকাশদের উপরের ফ্লাটই ভাড়া নিবো
–ঠিক আছে
–বাসায় পৌঁছে ফোন দিও এখন রাখি
–আচ্ছা

পিয়াস কে এয়ারপোর্ট দিয়ে রিয়া আর আমি ডক্টর এর কাছে আসলাম, ডক্টর দেখিয়ে এতিমখানা ঘুরে তারপর বাসায় আসলাম

সন্ধ্যায় রিয়া রান্না বসালো আমি শুয়ে আছি তখন সেই নাম্বার থেকে আবার ফোন আসলো
–হ্যালো
–খুব ভালো আছিস তাই না
–আপনি কে বলুন তো
–তোর বাবা কে জিজ্ঞেস কর
–আব্বুকে আমি পাবো কোথায়
–আমি জানি তোর বাবার ঠিকানা
–কোথায় বলুন
–এতো সহজে বলছি না বাপ মেয়ে আলাদা থাক আর কিছু দিন
–প্লিজ ঠিকানাটা দিন আপনি জমি চান তো আমি দিয়ে দিবো
–জমি তো আমি নিবোই বলেই ফোনটা কেটে দিল

বার বার ফোন দিলাম কিন্তু মোবাইল বন্ধ, আব্বুর ঠিকানা আমার খুব প্রয়োজন জায়গার বিনিময়ে যদি ঠিকানা দিত তাও আমি জায়গা দিয়ে দিতাম কিন্তু এই লোক তো ফোন বন্ধ করে ফেলছে এখন কি করবো

রাতে শ্রাবনকে অচেনা নাম্বারের কথা সব জানালাম ও আগামীকাল এসে দেখবে বললো, এসব নিয়ে আর না ভেবে ঘুমিয়ে পরলাম

সকালে উঠে রিয়ার সাথে কিছু কাজ করলাম কারন আজ শ্রাবন আর মা আসবে

সারাদিন টুকটাক কাজ করে দুপুরে খেয়ে রিয়া আর আমি বারান্দায় গিয়ে বসলাম, একটু পর কলিংবেল বেজে উঠলো দুজনেই গেলাম, দরজা খুলে দেখি মা আর শ্রাবন, মা কে সালাম করতেই উনি আমাকে জরিয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করলেন
–আমাকে মাফ করে দিও মা আমার জন্য তোমার জীবনটা এমন হলো
–আপনার কি দোষ
–আমি ভয় না পেয়ে তোমাকে সব বলে দিলেই হত
–কি বলে দিলে হত
–বলবো মা এখন তোমাকে সব কথা বলবো
–আচ্ছা পরে শুনবো সব কথা এখন ফ্রেশ হয়ে রেস্ট নিন
–আচ্ছা

মা কে একটা রুমে দিয়ে আমার রুমে আসলাম, রুমে এসে দেখি শ্রাবন আমার রুমে বসে আছে ভাবখানা এমন যে আজ থেকে উনি এই রুমেই থাকবেন, ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম
–এই তুমি আমার রুমে কেন
–তোমার রুম মানেই তো আমার রুম
–মানে
–আচ্ছা তুমিই বলো বউ এর রুম রেখে অন্য রুমে আমি থাকবো কেন
–এখনো বউ হই নাই বের হউ আমার রুম থেকে
–খুব শীঘ্রই বউ হয়ে যাবা
–আব্বুকে ফিরে না পাওয়া পর্যন্ত আমি বিয়ে করছি না
–শশুড় কে ছাড়া আমিও বিয়ে করবো না
–তোমার রুমে যাও
–যাবো তো আমার বউ এর কাছে একটু থাকতে দাও
–এই একদম কাছে আসবা না
–হুহ বললেই হলো দুইটা বছর দূরে থাকছি আর পারবো না
–দুই বছর কি আমার জন্য দূরে থাকছ নিজের ইচ্ছাতেই তো দূরে চলে গেছিলা
–নিজের ইচ্ছায় যাইনি আমি পরিস্থিতির স্বীকার ছিলাম
–কি রকম
–পরে বলবো এখন একটু রোমান্স করতে দাও

ওর চোখের দিকে থাকালাম কেমন যেন এক মাথাল করা চাহনি, চোখে মুখে দুষ্টুমির চাপ, ও আমার দিকে আস্তে আস্তে এগুতে শুরু করলো আর আমি পিছাতে শুরু করলাম, পিছাতে পিছাতে দেয়ালে গিয়ে আটকে গেলাম, আমি দেয়ালে আটকে গেছি দেখে ওর মুখে দুষ্টু হাসি, আমার কাছে এসেই কপালে একটা মায়া দিয়ে দিল
–দেখ বিয়ের আগে এসব রোমান্স কিন্তু ঠিক না
–তাহলে চলো এখনি বিয়ে করে ফেলি
–বললাম তো আব্বুকে খুঁজে না পাওয়া পর্যন্ত বিয়ে করবো না
–এখানে আমার একটি কাজ আছে কাজটা শেষ করেই শশুড় আব্বুকে খুঁজতে শুরু করে দিব
–কি কাজ
–এক লোক নাকি নারী পাচার করে তাও বউকে সাথে নিয়ে ওদের কেই ধরতে হবে
–আরো কতো কি দুনিয়ায় দেখতে হবে
–জ্বী
–রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও
–আমার তো রোমান্স করা হলো না
–যাইবা তুমি
–যাচ্ছি যাচ্ছি
রাগি চোখে থাকাতেই দৌড়ে চলে গেলো ফাজিল একটা

রাতে সবাই একসাথে খেয়ে নিলাম মা আর রিয়া ওদের রুমে গেলো আর ফাজিলটা আমার পিছু পিছু আমার রুমে আসলো, রুমে এসে বলতেছে চলো বারান্দায় গিয়ে বসি
–এই তোমার মতলব কি
–বারান্দায় বসে কফি খেতে খেতে আমার মিষ্টি বউ এর চুলের ঘ্রান নিবো
–আহারে কি রোমান্স
–এই বাসায় ছাদ থাকলে ভালো হত
–কেন
–ছাদের স্মৃতি গুলো কি ভুলে গেছ
–ভুলার মতো স্মৃতি নাকি ওগুলো
–এজন্যই বলছিলাম ছাদ থাকলে ভালো হত আরো কিছু স্মৃতি জমানো যেত, অবশ্য নতুন যে বাসা নিবো ওই বাসায় ছাদ আছে
–আমি ঘুমাবো তুমি এখন যাও
–যাবো না বারান্দায় চলো
–না
–যাবা না
–না
–ওকে
বলেই আমাকে কোলে তুলে নিল বারান্দায় চেয়ারে নিয়ে বসিয়ে নিজেও বসলো
–চুপ করে বসে থাক আমি রোমান্স করবো
–মানে

আর কিছু না বলেই আস্তে আস্তে আমার কাছে আসতে শুরু করলো, ঘাড় থেকে চুলগুলো সরিয়ে ঘাড়ে মুখ গুঁজে দিলো, আমি চোখ বন্ধ করে ওর গরম নিঃশ্বাস অনুভব করছি তখনি কানের মধ্যে এক কামড় বসিয়ে দিল আমি জোরে চিৎকার দিয়ে উঠলাম…..

চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে