ছোঁয়ার শিহরণ ২য় খন্ড পর্ব-০৬

0
1792

#ছোঁয়ার_শিহরণ_২য়_খন্ড
#ফাতিমা_আক্তার_অদ্রি

পর্ব-০৬

‘আম্মু! আমার চশমাটা কোথায় দেখেছ?’ অতল তার রুমের সব জায়গায় চশমা খুঁজে না পেয়ে তার মাকে প্রশ্ন করল।

‘আমি কি তোর চশমার পাহারাদার?’ পাল্টা প্রশ্ন করলেন মেহেরুন নাহার রান্না ঘরে সমুচা ভাজতে ভাজতে।

তানিয়া তার ভাইয়ের রুমে ঢুকে বলল,’তোমার চশমা চোখ বের করে তোমার দিকেই তাকিয়ে আছে। আর চিৎকার করে বলছে,’ অন্ধ মানব এই দিকে একটু আসেন আমি যে আপনাকে পথ প্রদর্শন করার জন্য উদগ্রীব হয়ে আপনার ল্যাপটপের উপর অধীর আগ্রহে বসে আছি।’ এটুকু বলেই তানিয়া খিল খিল করে হাসতে লাগল।

অতল রাগান্বিত চোখে তাকিয়ে আছে তানিয়ার দিকে। সরু চোখে তার দিকে তাকিয়ে বলল,’চশমা ছাড়া কি আমি দেখতে পাই না ভেবেছিস?’

তানিয়া ল্যাপটপের উপর থেকে অতলের চশমাটা নিয়ে অতলের চোখে পরিয়ে দিতে দিতে বলল,’অবশ্যই দেখতে পাও। তবে কেন যে খুঁজে পাও না সেটাই আমি বুঝতে পারি না!’

অতল এবার একটু ভাব নিয়ে বলল,’কে বলল খুঁজে পাই না? আমি তো তোর কাজ করার দক্ষতা কেমন তা জানার জন্য খুঁজে না পাবার ভান করছিলাম ।’

‘হেহ্! বললেই হলো?’ তানিয়া মুখ ভেংচিয়ে বলল, ‘তুমি খুঁজে পাওনা। সেটা আমি খুব ভালো করেই জানি।’

‘তুই কীভাবে জানিস?’ অতল তার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র গুছাতে গুছাতে বলল, ‘আমি তো চশমা ছাড়া সব দেখি । তাছাড়া আমি কি বৃদ্ধ যে দেখতে পাই না?’

তানিয়া কপট রাগ দেখিয়ে বলল, ‘ভাইয়া তুমি কিন্তু খুব মিথ্যে কথা বলছ ইদানিং!’ একটু থেমে আবার বলল, ‘ আমার সাহায্য ছাড়া তুমি কিছুই করতে পারো না।’

‘হেহ্! আমার তোর মতো টমেটো সসের সাহায্য নিতে হবে কেন? আমি নিজের কাজ নিজেই বেশ ভালো করতে পারি।’ অতল ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে শার্ট ইন করতে করতে বলল।

‘টমেটো সস! ভাইয়া এসব কি? আমার কি সুন্দর একটা নাম আছে। তুমি সেটা বাদ দিয়ে টমেটো সস কেন বলো?’ তানিয়া প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকিয়ে অতলের পেছনে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করল।

‘কারণ টমেটো সস আমার খুব প্রিয় । আর তুইও আমার প্রিয় । তাই ডাকি।’ অতল তানিয়ার কান মলে দিয়ে বলল।

তারপর অতল তার রুম থেকে বেরিয়ে ডাইনিংয়ে বসল। তানিয়াও পিছু পিছু এসে বসল। অতলের মা গরম গরম সমুচা ভেজে এনে রাখলেন তাদের সামনে। অতল সমুচা দেখেই তানিয়াকে বলল, ‘এই টমেটো সস! যা ফ্রিজ থেকে সত্যিকারের সস নিয়ে আয়।’

‘ভাইয়া আবার! আম্মু দেখ না আমাকে আবার টমেটো সস বলে ডাকছে।’ তানিয়া এক হাত কোমড়ে রেখে অপর হাত নেড়ে নেড়ে তার মাকে বিচার দিল।

মেহেরুন নাহার বললেন, ‘ তোদের ভাই বোনের ব্যাপারে আমি একদম নাক গলাব না। একটু বাদেই দুজনের গলায় গলায় ভাব হয়ে যাবে। মাঝখানে আমাকে শত্রু বানানোর পাঁয়তারা চালাস। তাই তোদের ব্যাপার তোরা সামলা।’

তানিয়া মায়ের কথা শুনে বলল, ‘দাঁড়াও আমি আব্বুকে বিচার দেব। আব্বু তখন তোমার কান মলে দিবে। একদম ঠিক হবে তখন। আম্মু তো সব সময় তোমার সাইডেই থাকে। আমি বিচার দিলেই খালি বলে তোদের ভাই-বোনের ব্যাপারে নাক গলাব না।’

অতল একটা সমুচা হাতে নিয়ে খেতে খেতে বলল, ‘আম্মু টমেটো সসকে বিদেয় করার সময় হয়েছে। এবার কিন্তু ভালো থেকে একটা পাত্র দেখতেই হবে।’

‘ভাইয়া!’ তানিয়া ন্যাকা কান্না জুড়ে দিয়ে বলল, ‘ ভালো হচ্ছে না কিন্তু ভাইয়া। আমি আগে বিদেয় হব না। আগে বড়ো ভাইয়ার বউ দেখব তারপর তোমার বউ দেখব। অবশেষে আমার বিয়ে। এর আগে কোনোভাবেই না।’ খানিক থেমেই অতলকে বলার কোনো সুযোগ না দিয়ে তানিয়া বলল, ‘এত ছোটো একটা মেয়েকে বিয়ে দিতে চাইছ। লজ্জা করে না তোমার?’

অতলকে এক মুহুর্তের জন্য বড্ড বিমর্ষ দেখাল। যেন অতীতের কোনোকিছু তাকে ভেতর থেকে খানিকটা নাড়া দিল কিছুসময়ের জন্য! তারপর মুহুর্তেই নিজেকে সামলে নিয়ে বলল, ‘ এহ্! পিচ্চি মেয়ে আর তুই? তোকে এবার সত্যিই সত্যিই বিদায় করতে হবে।’

‘আমি তোমার ছয় বছরের ছোট। তাহলে পিচ্চি না?’

‘আমার কাছে তো তুই সব সময়ই পিচ্চি। কিন্তু বিয়ে তো দিতে হবে। তাই না?’

‘ভাইয়া এখন এসব বিয়ে বিষয়ে কোনো কথা না। আগে বড়ো ভাইয়া আর তোমার বিয়ে তারপর তোমরা সবাই মিলে আমার জন্য পাত্র দেখবে। বলে দিলাম কিন্তু!’

‘আচ্ছা ঠিক আছে আমার টমেটো সস।’

‘আবার?’ তানিয়া কোমড়ে দু’হাত রেখে চোখ বড়ো বড়ো করে অতলের দিকে তাকিয়ে বলল।

‘ওরে বাপরে! আমি তো ভয় পেয়ে গেছি রে। আচ্ছা আর ডাকব না।’ অতল ভয় পাবার ভান করে বলল।

আশরাফ হোসেন গলা খাঁকারি দিতে দিতে ডাইনিং এ এসে বসলেন। বাবাকে দেখেই অতল আর তানিয়া একদম চুপসে গেল। একেবারে ভদ্র, শিষ্ট আর বিনয়ী হয়ে গেল যেন মুহূর্তেই।

মেহেরুন নানার তাই দেখে বললেন, ‘বাবার সামনে কেউ ভাজা মাছটাও উল্টে খেতে জানে না আর আমার সামনে এক একটা দস্যি রূপে অবতার হয়। কপাল আমার!’

কথাটা বলেই তিনি আশরাফ হোসেনকে সমুচা খেতে দিলেন। আর একটা কাপে গরম চা ঢেলে স্বামীর দিকে এগিয়ে দিলেন। আশরাফ হোসেন সমুচা দেখেই গমগমে গলায় বললেন, ‘এই সকালে সমুচা বানালে কেন, আতিকের আম্মা? আলু পরোটা বানাতে । কতোদিন আলু পরোটা খাওয়া হচ্ছে না আমার।’

অতল আর তানিয়া মুখ চাওয়া চাওয়ি করল। কিন্তু কিছুই বলল না। বাবাকে সবাই ভয় পায়। সব কথা , হাসি-ঠাট্টা সব বাবার অগোচরে করা হয়।

মেহেরুন নাহার বললেন, ‘আচ্ছা অন্য একদিন নাহয় বানাব। আজ সমুচা, টোস্ট, আর পাউরুটি দিয়েই নাশতা সেরে নিন।’

একথা বলে তিনি সাথে সাথেই রান্নাঘরে চলে গেলেন । ঠিক তখনই অতলের সেলফোনে একটা কল এলো। আশরাফ হোসেন গম্ভীর গলায় বললেন, ‘তোমাকে না কতবার বলেছি খাওয়ার সময় মোবাইল অফ রাখতে।’

‘স্যরি আব্বু ।’ অতল তড়িঘড়ি করে বলল।

‘কী এক স্যরি শব্দ শিখেছ! কথায় কথায় এই ‘স্যরি’ শব্দটাই ঝাড়তে থাক।’ আশরাফ হোসেন বিরক্ত মিশ্রিত কণ্ঠে বললেন।

মোবাইলের রিং বেজেই চলেছে। অতল মোবাইল হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে থতমত খেয়ে আবার বলল, ‘স্যরি আব্বু।’ ভ্যাবাচ্যাকা মুখ করে আবার বলল, ‘দুঃখিত আব্বু ।’

আশরাফ হোসেন গুরুগম্ভীর কণ্ঠে বললেন, ‘এভাবে দাঁড়িয়ে না থেকে কলটা রিসিভ করো।’

অতল মোবাইল হাতে নিজের রুমে চলে গেল। কিন্তু কলটা শেষমেশ কেটেই গেল। আয়মান কল করেছে। এত সকালে কেন কল করেছে অতল তা ভেবে পেল না। কিন্তু কল ব্যাক করার প্রয়োজনও সে অনুভব করল না। মোবাইলটা নিজের টেবিলের উপর রেখে আবার ডাইনিং টেবিলে গিয়ে বসল। তার বাবা আবার ও গম্ভীর কণ্ঠে বললেন, ‘ এবার কি বিসিএস হবে?’

অতল থতমত খেয়ে গেল। একটু সময়ের জন্য সে ভাবনায় পড়ে গেল। বিসিএস যে কী পরিমাণ সময়সাপেক্ষ ব্যাপার তা তার বাবা খুব ভালো করেই জানে তারপরেও কেন যে তিনি এই একই কথা বারবার জিজ্ঞেস করেন অতল তা বুঝতে পারে না।

‘কী হলো? তোমাকে কিছু জিজ্ঞেস করেছি তো না-কি?’

অতল ভাবনার জগৎ থেকে তৎক্ষনাত বেরিয়ে এলো। বলল, ‘আব্বু সামনেই একটা বিসিএসের ভাইভা দিব। আর একটা তো প্রিলি দিয়েছি । রেজাল্ট পেন্ডিং।’

‘ভালো, বেশ ভালো। তা আর কোনোখানে কি ট্রাই করছ?’

‘নাহ্, আব্বু। আর কোথাও ট্রাই করতে তো আপনি নিষেধ করেছেন।’

‘আহ্! তুমি সকাল সকাল কি চাকরি বাকরি নিয়ে পড়লে ভলো তো। ছেলেটাকে ঠিকমতো নাশতা তো করতে দাও। সারাদিন পড়াশুনা নিয়ে থাকে ছেলেটা।’ মেহেরুন নাহার রান্নাঘর থেকে পায়েশের বাটি হাতে নিয়ে বেরিয়ে আসতে আসতে বললেন।

অতল নাশতা শেষ করেই প্রয়োজনীয় বইপত্র নিয়ে বেরিয়ে গেল। পড়াশুনা নিয়ে বেশ ভালোই ব্যস্ত সময় কাটছে তার। ভাইভার ডেট তো দিয়েই দিয়েছে। এবার ভালোই ভালোই পার করতে পারলেই হয়। তাহলেই সহকারি কমিশনার হিসেবে কর্মজীবনের যাত্রা শুরু করতে পারবে।

_______________________

নওশীন হক একবার রাদিদের কাছে জানতেও চাইলেন যে নীরা কি নিয়ে ট্রিট চাইছে। রাদিদ তখন বেশ কষ্টে ফুফুকে কোনোরকমে ম্যানেজ করল। এখন আবার শুরু করেছে এই বিচ্ছুটা! এখন যদি এসব কোনোরকমে আফরিন বিচ্ছুর কানে যায় তবে মহা ক্যাঁচালের মধ্যে পড়বে সে। তাই তার কপালে পড়েছে চিন্তার ভাজ। ভ্রু জোড়া আপনা আপনি কুঞ্চিত হয়ে গেল। যেন এক গভীর চিন্তার সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছে সে!

‘কি হলো, রাদিদ ভাইয়া? ট্রিট দেবে না?’ নীরার প্রশ্ন, করুণ কণ্ঠে।

রাদিদ কী যেন ভাবল! তারপর বলল, ‘অবশ্যই দেব। তবে একটা শর্ত আছে।’

নীরা তৎক্ষনাত সোফা থেকে উঠে রাদিদের সামনাসামনি দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করল, ‘সামান্য ট্রিট দিতেও শর্ত জুড়ে দিলে?’ নীরার কণ্ঠে রাজ্যের বিস্ময়। বিস্ময় কাটিয়ে সে হাত নেড়ে বলল, ‘আচ্ছা, বলো কী শর্ত?’

‘বহ্নি যদি আমাকে ভালোবাসে বলে নিজের মুখে স্বীকার করে তবে তোকে বিশাল ট্রিট দেব। একেবারে যা চাইবি তাই দেব। এর বিন্দুমাত্র হেরফের হবে না। ঠিক আছে?’ রাদিদ দুর্বোধ্য হাসি ঠোঁটের কোণে ঝুলিয়ে বলল।

নীরা এবার ধপাস করে শব্দ করে বসে পড়ল সোফার উপর। ডান হাতটা কাপালের উপর রেখে হতাশ গলায় বলল, ‘হায়রে! কিপ্টে মানব! এ তো ট্রিট দেওয়া আর না দেওয়ার সমান।’

‘সমান কেন হবে? তুই তো বেশ খুশি হয়েছিস। আর খুশির কারণেই তো ট্রিট চাইছিলি। তো যেই কারণে খুশি হচ্ছিলি সেটা তো আগে ঘটুক ।’ এবার রাদিদ নীরার সামনে এসে দাঁড়াল। নিজের হাতটা বাড়িয়ে দিয়ে বাম চোখের ভ্রু উঁচিয়ে বলল, ‘ডান?’

নীরা কিছুক্ষণ চুপ থাকল। তারপর হুট করেই বলল,’ওকে, ডান।’

রাদিদের ঠোঁটে দুর্বোধ্য হাসির চিহ্নটা লেগেই রইল। যেন সে মহাখুশি নীরাকে শর্তে রাজী করাতে পেরে।

আফরিন রুমে ঢুকে ওদেরকে এভাবে দেখে বলল,’ কী রে ! এসব কি হচ্ছে? কিসের শর্তে কথা বলছিস ?’

রাদিদ ইশারায় নীরাকে জানাতে নিষেধ করল। নীরা তা দেখে বলল, ‘রাদিদ ভাইয়াকে বলেছি যাতে তাদের বাসায় নিয়ে যায় আমাকে । তুমি কি যাবে, আপু?’

‘ওপস্, নো।’ আফরিন রুমের অন্যপাশের সোফাতে বসতে বসতে বলল, ‘আমি ওখানে গেলে আমার দম বন্ধ হয়ে আসবে। আমি যেতে পারব না। তোর ইচ্ছে হলে তুই যা। আমাকে যেতে বলিস না।’

আফরিনের কথা শুনে রাদিদের হাসি হাসি মুখের উপর মুহূর্তেই এক অন্ধকার ছায়া পড়ল। বড়োই বিমর্ষ দেখাল তার মুখখানা। নীরা বোধহয় কিছুটা আঁচ করতে পেরেছিল। বলল, ‘তোমার দম বন্ধ হয়! আর আমার তো মনে হয় আমি ওখানে প্রাণ ভরে শ্বাস নিতে পারছি। আমি তো অবশ্যই যাব।’

আফরিন ততক্ষণে মুখে ফেসপ্যাক লাগিয়ে ফেলেছে। চোখে দু’টুকরো শশা দিয়ে চোখ দুটো ঢেকে আরাম করে সোফাতেই শুয়ে পড়ল। আলতো করে ঠোঁট নেড়ে বলল, ‘এই নীরা! আম্মু ডাকলে বলিস, আমি এখন নাশতা করব না । একেবারে ডিনার করব।’

নীরা আফরিনের কথার প্রত্যুত্তরে কিছুই বলল না। সে রাদিদের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘কী! রাদিদ ভাইয়া! আমাকে সাথে করে নিয়ে যাবে তো ?’

রাদিদ মলিন হেসে বলল, ‘তুই যেতে চাইলে অবশ্যই নিয়ে যাব।’ হঠাৎ কিছু একটা মনে পড়ার ভঙ্গিতে রাদিদ পুনরায় বলল, ‘জানিস, মা তোর কথা সব সময় জানতে চায়। তুই গেলে বাসার সবাই খুশি হবে। পিউ তো তোর জন্য একেবারে পাগল।’

কাছের কোনো মসজিদ থেকে আজানের সুমধুর ধ্বনি ভেসে আসছে বাতাসে ভর করে। কী সুন্দর ও পবিত্র অনুভূতি! মনে হয় যেন সেই ধ্বনি হৃদয়ের কলুষিত অংশটুকুও পবিত্র করে দিচ্ছে। তবে সেই অনুভূতি অনুভব করার জন্য মনোযোগ আবশ্যক।

নীরা সেই সময়টাতে রাদিদকে কিছু একটা বলতে চাইছিল। রাদিদ নীরাকে ইশারায় থামতে বলল। আজানের সময় দুনিয়াবী কথাবার্তা না বলে মনোযোগ সহকারে আযান শুনা উচিত। অথচ আজান দিলেই যেন কথা বেড়ে যায়! চুপচাপ থাকা মানুষটিও যেন সেই মুহূর্তে কথা বলতে উদগ্রীব হয়ে পড়ে!

নওশীন হক নামাজ শেষ করে সন্ধ্যার নাশতার জন্য দুই মেয়ে আর রাদিদকে ডাকতে ডাকতে বিরক্ত হয়ে শেষমেশ নিজেই এলেন ড্রয়িংরুমে । এসেই দেখলেন একজন রূপচর্চায় ব্যস্ত। আর অন্যজন স্ট্যচু অব লিবার্টি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। খুব বিরক্ত হলেন তিনি। নীরাকে ধমকে বললেন, ‘কী রে! নামায পড়বি না? আজান তো সেই কবে দিয়েছে!

রাদিদকে দেখলেন না তিনি। বোধহয় নামাজ পড়তে মসজিদে গিয়েছে। তারপরেও নীরাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘রাদিদ কি মসজিদে গেছে?’

নীরা মাথা উপর নিচ করে সম্মতি জানিয়ে ছোট্ট করে বলল, ‘হুম।’

নওশীন হক তাড়া দিয়ে বললেন, ‘যাও, গিয়ে নামাজ পড়।’

নীরা ভাল মেয়ের মতো নামাজ পড়তে চলে গেল। তারপর তিনি আফরিনকে ধমকে বললেন, ‘এই যে নবাবজাদী! খালি রূপচর্চা করলেই কি হবে? যাও এবার নামাজটা পড়ে নাও।’

আফরিন নড়ছেও না। সে তার মতো আয়েশি ভঙ্গিতে শুয়ে আছে। নওশীন হক কাঁধ ধরে ধাক্কা দিতেই আফরিন বিরক্তির সুরে বলে উঠল, ‘উফ্ মা! বিরক্ত করো না এখন। আমি একেবারে ডিনার করার জন্য উঠব। এর আগে না।’

নওশীন হক মেয়ের উত্তর শুনে আহত হলেন। কিন্তু মেয়েটাকে কোনোভাবেই তিনি ঠিক করতে পারছেন না। নীরা কথা শুনলেও আফরিনকে দিয়ে তিনি কখনোই কথা শুনাতে পারেন না। রান্নাঘরের কাজেও নীরা তাকে যথাসাধ্য সাহায্য করে কিন্তু আফরিন কোনোভাবেই না। বড়ো মেয়েটা বাবার লাই পেয়ে পেয়ে একেবারে মাথায় উঠেছে। তিনি ভেবে পান না এই মেয়েকে নিয়ে কী করবেন তিনি! অথচ তার স্বামী কতটা নির্বিকার এখনও । যেন তাদের মেয়ে দুটো এখনও পিচ্চি। আদর আহ্লাদের ঘাটতি হলেই যেন খুব বড়ো কোনো ক্ষতি হয়ে যাবে! তিনি জানেন আফরিনকে ডেকে আর কোনো লাভ নেই। এটা তো নিত্যদিনের চিত্র! এই চিত্রটা কবে যে বদলাবে তা তিনি জানেন না বা আদৌ বদলাবে কি না তাও তিনি জানেন না। সময়ের হাতেই সবটা ছেড়ে দিলেন।

যখন মানুষের হাতে আর কিচ্ছু থাকে না তখন সে সময়ের হাতে ছেড়ে দেয় সমস্তটা। সময়ের স্রোতে ভেসে যদি কোনো এক তীরে ভিড়তে পারে তবেই রক্ষে! আর যদি কোনো তীর পাওয়া না যায় তবে চিরকাল ভাসমান হয়ে থাকতে হবে। যার কোনো কূলই থাকবে না। কূলহীন জীবনের আদৌ কোনো মূল্য আছে কি না নওশীন হক তা ভেবে পান না।

_________________________

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে