চাঁদের_আলোয়_জোছনা_ভাঙ্গে পর্ব ৩৮

0
2091

চাঁদের_আলোয়_জোছনা_ভাঙ্গে পর্ব ৩৮
লেখা আশিকা জামান

ডক্টর মৌমিতা দেব চশমার ফাঁক গলে অনন্যাকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষন করছেন। তার চেনা প্রানবন্ত উচ্ছল চেহারার মেয়েটিকে আজ বড় বিষন্ন লাগছে। হয়তো তার প্রিয় ছাত্রীটি আজ কনফিউজড হয়ে আছে! তাতে কি তাকে না হয় আরো একটু কনফিউশানে রাখা যাক। উনি মৃদু কেশে গলাটা পরিষ্কার করে হঠাৎ গম্ভীর গলায় বলে উঠলেন,
” অনন্যা, আমি তোমাকে নিয়ে যে-রকমটা আশা করেছিলাম সে-রকমটা আর হলো কই! যদিও তুমি রেজাল্ট ভালো করেছো। ইনফ্যাক্ট তুমি আর নিনিত দুজনেই ভালো করেছো। যৌথভাবে প্রথম হয়েছো। কিন্তু খবরটা শুনে তো আমার খুব খারাপ লাগছে। কি ভাবে তোমাকে বলি! ”
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

▶ লেখকদের জন্য পুরষ্কার-৪০০৳ থেকে ৫০০৳ মূল্যের একটি বই
▶ পাঠকদের জন্য পুরস্কার -২০০৳ থেকে ৩০০৳ মূল্যের একটি বই
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক:
https://www.facebook.com/groups/golpopoka/


অনন্য হঠাৎ চঞ্চল হয়ে উঠলো। মনে মনে সিদ্ধান্তে এসে গেলো যা হচ্ছে ভালোর জন্যই হচ্ছে। সেই সাথে তার আটকে যাওয়া নিঃশ্বাস পুনরুদ্ধার করতে পেরে কেমন যেন এক অন্যরকম স্বস্তি ফিরে পেলো। উফ্ শেষমেশ তার অঙ্কনকে ছেড়ে যেতে হচ্ছে না। এটাই দিনশেষে বড় প্রাপ্তি। ম্যাম নির্ঘাত দুঃখী দুঃখী মুখ করে এখন এটাই বলবেন। পরক্ষণেই ম্যামের জন্য খারাপ লাগছে। ম্যাম হয়তো অনেক আশা করেছিলেন। সেই দ্বিতীয় বর্ষ থেকে ম্যাম এর সাথে একসাথে ল্যাবে ঘন্টার পর ঘন্টা কাজ করেছে। প্রেজেন্টেশন, কনফারেন্স স্পিচ, পোস্টার ওয়ার্কস এগুলোতে তার অনেক সময় আর শ্রম দুটোই ব্যয় হয়েছে। সবসময় চেষ্টা করেছে নিজের অনার্সের রিসার্চ প্রোজেক্ট থেকে যেন ভাল একটি জার্নালে পেপার পাবলিশ করা যায়। ইনশাআল্লাহ সফলও হয়েছে। পাবলিকেশন না থাকলেও পিএইচডি এডমিশন পাওয়া যায় তবে কোন ভাল বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে অন্তত ১ টি পিয়ার রিভিউড পেপার থাকাটা জরুরী।
এতদিনের এত শ্রম, লক্ষ্য, স্বপ্ন সব সব একনিমিষেই অনন্যার কাছে অর্থহীন মনে হলো। এতোদিনের তিল তিল করে গড়ে তোলা স্বপ্নে ভুলেও অঙ্কনের বিচরণ ছিল না কিন্তু আজ সেই স্বপ্নগুলো বদলে কেমন অঙ্কন অঙ্কন রব চারপাশে মুখরিত হয়ে উঠলো। গুনীজনরা এজন্যেই হয়তো মানুষের মনকে রহস্যময় হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।

” অনন্যা! তোমাকে একটু অন্যমনস্ক দেখাচ্ছে। তুমি আমার কথা বুঝতে পারছো! আচ্ছা তুমি কি এখনি আপসেট হয়ে গেছো। আমার কথা শোনার জন্য যে অনন্যা ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকতে পারতো সেই অনন্যার মাঝে আজ কি না কনসেন্ট্রেশন এর অভাব!”
” সরি, ম্যাম। এক্সট্রেমলি সরি স্যাম।”
” ইট’স ওকে! আমার কিছু বলার নেই। ইউ মে গো নাউ!”
অনন্যা নির্বিকারভাবে উঠে দাঁড়ায়।
ডক্টর মৌমিতা দেব বুঝতে পারেন হয়তো অনন্যার কিছু একটা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে অনন্যার চেহারাটায় এমন সহজাত সরলতা রয়েছে যে কোন কিছুই চেপে রাখতে পারে না। কোন ত্রুটি হলেই তা চেহারায় ভেসে উঠে।
অনন্যা তখন দরজার কাছাকাছি। উনি পেছন থেকে ডেকে উঠেন।
” অনন্যা, তুমি মনে হয় কিছু ফেলে যাচ্ছো!”

অনন্যা বিস্মিত হয়ে পেছনে ফিরে। উনি হাস্যোজ্জ্বল মুখে তার হাতে একটা খাম ধরিয়ে দেয়। ইউনাইটেড স্টেট অব আমেরিকার স্ট্যাম্প! সে হত-বিহবল হয়ে তাকিয়ে রয়। তাতে মৃদু হেসে ডক্টর বললেন,
” খামটা, খুলবে না! ”
” হ্যাঁ, নিশ্চয়ই।” শান্ত গলায় কথাটা বলল অনন্যা। এরপরের কিছুক্ষণ অনন্যা কিছু বলতে পারলো না। কেবল দু’চোখ ঝাপসা হয়ে এলো।
” ‘ইউনিভার্সিটি অব উইসকনসিন-মিলাওয়কিতে তুমি সামনের ফল সেশনে সরাসরি পি এইচ ডি করতে যাচ্ছ। ফুল ফ্রি স্টুডেন্টশিপ উইথ এইড।” উনি আরেকটু এগিয়ে এসে অনন্যার কাছাকাছি এসে দাঁড়ান।
” দেখো মেয়ের কান্ড! এখনো চোখের জল ফেলছে।” উনি অনন্যাকে জড়িয়ে ধরেন।
” ঠিক এই দিনটা দেখার জন্যই এতদিন অপেক্ষা করে ছিলে। তাই আজকে কোন কান্না নয়।
তুমি বুঝতে পারছো ডক্টর স্টাভিন অলড্রিন যে কিনা রেডিয়েশন এবং পলিমার রসায়ণ এর উপর গবেষণার অগ্রদূত তিনি তোমাকে তার এসিস্টেন্ট হিসেবে চাইছেন। বুঝতে পারছো ঠিক কতবড় একটা সুযোগ এটা!”

এরপর অনন্যা সত্যিই আর কাঁদেনি। তবে এই সুযোগটা তার মনে বিন্দুমাত্র প্রভাব ফেলতে পারলো না। এতবড় সূবর্ন সুযোগটা সে হেলায় ফেলায় অঙ্কনের পায়ের তলায় ফেলতে দৃড়প্রতিজ্ঞ থাকল।

*******************

ক্যান্টিনের এক কোণে বিষন্ন মুখে বসে আছে ছয়জন। অনন্যা, নিনিত, দীশা, নেহা, তানভীর আর সাইমন। আপাতদৃষ্টিতে সবার বিষন্নতার কারণ একই মনে হলেও আসলে প্রকৃতির নিয়ম অনুযায়ী বিষন্নতা গুলোও বড্ড একান্ত নিজের৷ আর যাই হোক এই বিষন্নতার কোন ভাগ হতে পারে না।
” আমি যদি আগে জানতাম, তোরা এইখানে রুপবান পালা শুরু করবি, ট্রাস্ট মি আমি কোন না কোন সিনেমার ডিরেক্টর, প্রডিউসারকে ঠিক ধরে বেধে নিয়াসতাম। তোরা যে একটিং শুরু করছিস না বিশ্বাস কর আমার দমবন্ধ লাগছে। অনেক হইছে আল্লাহ এবার খ্যান্ত দে!”
বিষন্নতা ছাপিয়ে নিনিতের প্রাণউচ্ছ্বল কথাটা যেন আড্ডায় প্রাণ ফিরিয়ে দিলো।
দীশা খলবিল করে উঠে বলে,
” তোর কি মনে হয় আমরা একটিং করতেছি। সিরয়াস মুহুর্তে তুই বরাবরের মত এইরকম ব্যাবহারই করস। বুঝতে পারছিস তুই! হয়তো এটাই আমাদের শেষ দেখা। এরপর একেকজন একেক যায়গায় থাকব। অনন্যা, সাইমন তো বিদেশ চলে যাচ্ছে। আমার সত্যিই খারাপ লাগছে খুব।”

অনন্যা নড়েচড়ে উঠে। ঠিক এই মুহুর্তে কি বলা উচিৎ বুঝে উঠতে পারছে না।
হঠাৎ তানভীর বলল,
” এক কাজ করলে কেমন হয়, চল শেষমেশ বন্ধুরা মিলে কোথাও ঘুরে আসে। আসলে দেখিস এরপর নিজেদের কর্মক্ষেত্রে এতটাই বিজি হয়ে পড়ব যে আর সময়ই হবে না।”
কথাটা সবার মনে ধরে। অনন্যা চট করে বলে উঠে,
” চল নেপাল যাই!”
কথাটা শোনামাত্র সকলে ভ্রুকুঁচকে অনন্যার দিকে তাকায়। কতক্ষণ ইতস্তত করে অনন্যা ফ্যাকাসে মুখে তাকায়।
” আমি কি ভুল কিছু বলেছি। তোরা এভাবে তাকাচ্ছিস কেন?”

নেহা কানের পিছের চুল পেচাতে পেচাতে বলে,
” আমরা কি হানিমুনে যাচ্ছি! তোর কথা শুনে মনে হচ্ছে তুই তোর বরের সাথে হানিমুনে যাওয়ার প্ল্যান করছিস। তুই পারিস ও রে বটে, এক ধাক্কায় নেপাল।”

তানভীর ঢোক গিলে বলে,
” নেপাল, বিশ্বাস কর আমার ঠ্যালা গাড়ী আমারে মাইরা কুচিকুচি করব। আরেকটু কাছাকাছি কোথাও যাওয়া যায় না।”

” তোর লজ্জা করেনা বউকে ঠ্যালা গাড়ী বলতে!
তুই বরং তোদের বাসার পিছনে পঁচা ডোবায় তিব ডুব দিয়ে আয়। তোর কোথাও যাওয়া লাগবে নারে ভাই।” অনন্যা দাঁত কটমট করে তাকায়।

” মানে কি! ট্যুরে যাওয়ার প্ল্যানটা আমার মাথা থেকেই বাইরাইছে আর এহন আমারেই বাদ ! ভাল তোর মধ্যে না মিনিমাম কৃতজ্ঞতা বোধটুকুও নাই।”

” না, নাই। তুই নেপাল যাবি, না যাবি না কোনটা আগে বল! আর সবাইকে বলছি, নেপাল গেলে আমি আছি নইলে নাই। কথা ক্লিয়ার।”
সবাই বিস্ময়ে হতবাক। সাইমুন মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলল,
” নেপাল কি! ওইখানেই কেন যাওয়া লাগব বুঝলাম না। এমন করতেছিস কেন?”

” আমি নেপাল যাব ব্যাস!”

” তুই নেপাল তোর বরের সাথেই যাইস বইন। তাও অমন জেদ করিস না।” নিনিত ঠোঁট বাকিয়ে উঠে।
অনন্যা উঠে পড়ে। তাই দেখে সবাই হতবাক। তানভীর জোর করে ওকে বসায়। এরপর অনন্যার দিকে তাকায়। মৃদু সুরে বলে,
” তোর কি হয়েছেরে অনন্যা? এমন করতেছিস কেন? তোকে কেমন জানি লাগতেছেরে!”
“কেমন লাগতেছে! বউ বউ লাগতেছে! নতুন বউ লাগতেছে বল। লুকাই লুকাই বিয়ে করে ফেলছি, এটা জিজ্ঞেস কর।” অনন্যা হঠাৎ গমগম করে উঠে।
বিস্ময়ে নিনিতের চোখ মুখ কোটর থেকে বের হয়ে চায়। এমনতর ধাক্কা খেয়ে সাইমুন বলল,
” দুই লাইন বেশি বুঝতেছিস কেন? তানভীর মোটেও সেরকম কিছু বলে নি।”

” ঠাকুর ঘরে কে রে, আমি কলা খাইনি। ব্যাপারটা এমন হয়ে গেলো না।” দীশা ফোঁড়ন কেটে বলে।

” আমি নেপাল যেতে পারি যদি আমার ঠ্যালা গাড়ীরে তোরা এলাউ করিস।” তানভীর অনন্যার দিকে তাকিয়ে বলল।

” হ্যাঁ নিতেই পারিস। ইচ্ছে হলে সবাই সবার গার্লফ্রেন্ড, বয়ফ্রেন্ড সাথে নিতে পারিস। নো প্রবলেম!”
অনন্যা চোখেমুখে তখন হাসির ঝিলিক। কেবল দীশা বলল,
” আমরা যদি সবাই ল্যাজ নিয়াই ঘুরতে যাই তাহলে তোর কি হবে! তুই তো বোর ফিল করবি। তাহলে এই ট্যুরের লাভ কি?”

উত্তরে অনন্যা মিষ্টি করে হাসল। এটুকু বুঝে গেছে বন্ধুরা কনভেন্স।
অঙ্কন আমি তোমার কাছে আসতেছি……
অনন্যা মনে মনে রোমাঞ্চিত হয়ে উঠল।
চলবে….

এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/


একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে