চাঁদের_আলোয়_জোছনা_ভাঙ্গে পর্ব ৩৯

0
2094

চাঁদের_আলোয়_জোছনা_ভাঙ্গে পর্ব ৩৯
লেখা আশিকা জামান

সবাই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিমানে যাবে। সবাই বলতে অনন্যা এবারও তার নিজের সিদ্ধান্ত সবার উপর চাপিয়েছে। দীশা আর নিনিত অনেক লাফাইছে বাই রোডে যাওয়ার জন্য। ওরা খুব এডভেঞ্চার প্রিয়। তাছাড়া গাড়িতে গেলে অনেক কিছুই দেখা হয়ে যাবে। অবশ্য এর জন্য প্রথমে ভারতের ট্রানজিট ভিসা নিতে হবে। ওদের এইসব যুক্তিকে অনন্যা এক বাক্যে নাকচ করে দিয়েছে। শেষে বিমানে যাওয়ার সিদ্ধান্তই নেয়া হয়।

এর জন্য পূর্বে কোন ভিসা নিতে হয় না। এয়ারপোর্ট পৌছে অনএরাইভ্যাল ভিসা। বাংলাদেশীদের জন্য বছরে একবার নেপালের ভিসা ফি ফ্রি। ওরা আগেরদিন ঢাকার মালিবাগের এয়ার বর্ন সার্ভিসেস লিমিটেড থেকে বিমানের টিকেট কেটে নেয়। সাতটি পাসপোর্ট নিয়ে ট্রাভেল এজেন্সির কাছ থেকে বাংলাদেশ এয়ার লাইন্সের টিকেট নেয়। ট্রাভেল এজেন্সীর মাহমুদুল ভাইয়া দীশার কাজিন ওদের সবার পাসপোর্টে এন্ড্রোসমেন্ট করিয়ে দেয়।
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/



পরেরদিন সকাল নয়টায় সবাই অনন্যার বাসায় এসে মিলিত হয়। আয়েশা আন্টি মুখ ভার করে মেয়েকে বিদায় দেয়। সত্যি বলতে, এই নেপাল ট্যুর নিয়ে মেয়ের সাথে একচোট হয়ে গেছে। মেয়েও নাছোড়বান্দা, সাথে তালে তাল দিয়েছে ভাই আর বাবা। উনি আর একা একা কি করবেন তাই মুখে কুলুপ এঁটেছেন।

সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ সবাই এয়ারপোর্টে পৌছে যায়। অনীহার ন্যাকাষষ্ঠী ব্যাবহার বরাবরের মতোই অসহ্যকর। তবে অনন্যার জন্য কেউ মুখে কিছু বলছে না। অন্তত আটদিন এই বোকা বোকা ডায়লগওয়ালীকে সহ্য করা ছাড়া অন্য উপায় নেই। মেয়েদের গুজুরগুজুর ফুসুরফুসুর শুনে একসময় সাইমন বিরক্ত হয়ে বলে,
” তানভীর সারাজীবন সহ্য করতে পারলে এই আটদিনে তোরা কেউ মরে যাবি না।”

সবাই মুখ বাঁকালে, অনীহা হঠাৎ গলা চড়িয়ে উঠে,
” তোমরা আমাকে নিয়ে কিছু বলছো তাই না! এরকম করলে কিন্তু আমি এক্ষুনি চলে যাব।”

নিনিত মুখ ফসকে বলে ফেলে,
” যাও না! কে ধরে রেখেছে?”

” তার মানে তুমি আমাকে যেতে বলছো? তানভীর! দেখেছো আমাকে যেতে বলছে। আমি কিন্তু এক্ষুণি তোমাকে নিয়ে সোজা বাসায় চলে যাব। আমি আসতেই চাইনি তুমিই তেল দিয়ে এনেছো। আর এখন দেখেছো।”

তানভীর বিড়বিড় করে উঠে,
” কে যে কাকে তেল দিয়েছে আল্লাহ মালুম!”

” কি বললে! কিছুতো বলেছো? কি বললে?”অনীহা খলবল করে উঠে।

” হ্যাঁ বলেছি তো! তোমাকে নয় নিনিতকে তুই সবসময় উল্টাপাল্টা বকিস কেন! একটু বুঝেশুনে কথা বলতে পারিস না।”

নিনিত তখন ঘাড়ত্যাড়া করে তানভীরের দিকে এগিয়ে আসে। তাই দেখে অনন্যা ঝাঝিঁয়ে উঠে,
” তোরা কি এখানে দাঁড়িয়ে ঝগড়া করবি না সামনে যাবি! প্লেন মিস হয়ে যাক তোরা ঝগড়াই কর। সামনে আগা সবাই আর একটা কথাও কেউ বলবে না।”

এ যাত্রায় পরিস্থিতি আপাতত স্বাভাবিক। এরপর একে একে সবাই বোর্ডিং কার্ড নিয়ে ইমিগ্রেশন শেষ করে বিমানের অপেক্ষা করতে থাকে। অনন্যা বোর্ডিং কার্ড নেয়ার সময় বলে যেন তার সিটটি বিমানের ডান পাশে জানালার সাথে দেয়। তাহলে নেপালে নামার সময় বিমান থেকেই এভারেস্ট দেখতে পাবে। বিমানে বসে এভারেস্ট দেখার কথাটা অবশ্য অঙ্কনের মুখ থেকেই শুনেছিলো। অঙ্কন সাথে না থাকলেও পুরোটা সময় জুড়ে কেবল তাকেই ভাবতে ভাবতে সময় ঠিক কখন কেটে যাবে সে টের ও পাবে না।
একদম কাটায় কাটায় বেলা ১ টায় বিমান উড্ডয়ন করলো।
শুরুতেই সবার সিটবেল্ট বেঁধে নিতে হলো। বিমান বালা অভিনয় করে কিভাবে ইমাজের্ন্সি এক্সিট এবং অক্সিজেনের অভাব পড়লে কি করতে হবে তা দেখিয়ে দিলো। পাইলট জানালেন,
” কিছুক্ষনের মধ্যেই আমরা ৩৩ হাজার ফুট উপরে উঠে যাবো। বিমান পুরোপুরি প্রস্তুত। এবার একশন।”
অনন্যা জানালা দিয়ে তাকায় পায়ের তলায় তখন মেঘের সমুদ্র। এই দৃশ্য মনে দাগ কাটার মতন। ঠিক তখন ওকে ধরিয়ে দেওয়া হলো অবতরন কার্ড আর ভিসা ফরম। নিজেরটা লিখতে লিখতে হয়রান! এরমধ্যে দীশা আর নিনিত ওদের টাও অনন্যার হাতে ধরিয়ে দিলো। এ ভারী জ্বালা হল! কই আকাশে ভেসে বেড়ানোর অনুভূতি নিবে আর এখন কি না এইসব ফর্মালিটিস করতে হচ্ছে!
এরপর সবাই যার যার নাস্তা নিলো। কাটায় কাটায় দুইটা দশ এ বিমান ল্যান্ড করল।
ইমিগ্রেশন শেষে এয়ারপোর্ট থেকে বেরিয়ে প্রচুর ট্যাক্সি এবং হোটেলের লোকজন দাড়িয়ে থাকতে দেখা গেল। ওরা ট্যাক্সিতে উঠে পড়ে গন্তব্য থামেল।হোটেলের নাম ট্রাভেলার্স হোমস। বাংলাদেশী টাকা আর নেপালি রুপির মূল্য প্রায় কাছাকাছি। বরং টাকার দাম কিছু বেশি। ৭৮ টাকা দিয়ে পাওয়া যায় ১ ডলার। আর ৯৮ নেপালি রুপি দিয়ে পাওয়া যায় ১ ডলার।
হোটেলে গিয়ে বাজলো বিপত্তি। অনন্যা কিছুতেই রুম শেয়ার করতে চাইল না। চাইলো না মানে চাইলো চাইলোই না। ওর এই অস্বাভাবিক আচরণের কারণ হিসেবে বলল,

“কারো সাথে রুম শেয়ার করলে
আমার ঘুম আসে না। আনইজি লাগে। প্লিজ তোরা তিনজন এক রুমে থাক। আমাকে জোর করিস না।”

নিনিত চোখ কপালে তুলে বলে,
” তুই তো কিছুদিন আগেও আমার সাথে ঘুমিয়েছিস। ইনফ্যাক্ট আমরা বহুবার রুম শেয়ার করেছি। এই আনইজি ফানইজি কবে থেকে শুরু হলো। ফাজলামো করিস না তো!”
” আজকে থেকে লাগছে। আমি একাই থাকব। কথা ক্লিয়ার!”
এরপর কেউ আর ওকে কিছু বলে নি।

সবাই যার যার রুম বুঝে নিলো। অনীহা যেতে যেতে বলে,
” তানভীর আবহাওয়া তো স্বাভাবিক! সবাই কি ভয় লাগিয়ে দিয়েছিলো, হিমালয়ের দেশ তাই খুব ঠান্ডা হবে। শুধু শুধু অত ভারি জামা কাপড় নিয়ে আসলাম।”
” সমস্যা নাই।। লাগেজ তো তোমাকে টানতে হচ্ছে না। চাইলে তোমার সেই ভারী ওভারকোটে টাও আনতে পারতে। ওটাতে তোমাকে একদম ডলের মতন লাগে!”
কথার সুক্ষ্ম খোঁচা অনীহা বুঝতে পারল না উপরন্তু গদগদ হয়ে বলল,
” যাহ্! কি যে বলো না!”

অনন্যা ফ্রেস হয়ে এসে বাসায় কথা বলে নেয়। এরমধ্যে অঙ্কনকে ফোন করে কিন্তু রিসিভ হয়না। হয়তো ব্যাস্ত!
সবাই মিলে দুপুরের লাঞ্চ করে সিদ্ধান্ত নেয় একটু রেস্ট নিয়ে সন্ধ্যে নাগাদ সবাই থামেল শহর ঘুরতে বেরোবে।

তখন সন্ধ্যা ছুঁই ছুঁই। অনন্যা ঘুমে ঢুলুঢুলু! ফোন বেজে কেটে গেছে। আবার রিং হচ্ছে।
ঘুম ঘুম চোখে রিসিভ করে। তখনো পুরো ঘুম কাটেনি। হয়তো অনেক দিনের স্বস্তিময় ঘুম!
” অনন্যা! শুনতে পাচ্ছো! হ্যালো কথা বলো? রিসিভ করে কথা বলছো না কেন!”
” হ্যাঁ, হ্যালো!!” ঘুম জড়ানো কন্ঠ।
” তুমি এমন অবেলায় পরে পরে ঘুমুচ্ছো? কি হয়েছে শরীর খারাপ।”
” উঁহু! মন খারাপ। তোমার কাছে যেতে ইচ্ছে করছে।”
অঙ্কন কিছুক্ষণ নিশ্চুপ থাকল। তারপর বলল,
” মাত্রই শুটিং থেকে ফিরলাম। তুমি ফোন করেছিলে ব্যাস্ত ছিলাম।”
” আমি, জানি।”
” তুমি তোমার রুম নম্বরটা বলো তো!”
” কেন, নম্বর দিয়ে কি করবে তুমি?” অঙ্কন হেসে বলে।
” তোমাকে দেখব। অনেকদিন দেখি না।”
” মাত্র সাতদিন।”
” আমার কাছে সাত যুগ।”
” ওরে বাবা! যাক তাহলে আমার কথা মনে পড়ে।”
” কেন মনে না পড়লে খুশি হতে। আচ্ছা শোন হাংকি পাংকি না করে রুম নাম্বারটা বলো, তোমার কাছে যাব!”
” তুমি কি খেয়ে ঘুমাইছো সত্যি করে বলোতো! নেশা কি বেশী চড়ে গেছে! আমি নেপাল বুঝছো নিজের বাসায় না যে তুমি ঘুম ভেঙ্গেই আমারে দেখতে পাবা!”

” ওকে! বলতে হবে না। আমি জানি রুম নম্বর ৩১৬ তুমি সেদিন বলেছিলে। মিঃ একদিনের জামাই আমার ব্রেণ খুব শার্প। আচ্ছা এবার দরজা খুলেন।”
অঙ্কন চমকে উঠে। সত্যিই যদি দরজা খুলেই অনন্যাকে দেখতে পেতো! খুব ইচ্ছে করছে। ছুটে যেতে ইচ্ছে করছে। চোখের কোণ চিকচিক করে উঠে। মেয়েটা এমন কেন, সবসময় তার ইমোশন নিয়ে খেলতেই হবে! সে কি বুঝেও বুঝে না এতে অঙ্কন চৌধুরীর কষ্ট হয়, খুব কষ্ট হয়।

অঙ্কন বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ায়। সমস্ত শক্তি দিয়ে উঠে দাঁড়ায়। ক্লান্তিতে অবশ হওয়া শরীর যেন নতুন উদ্যমে জেগে উঠে।
দরজায় দু’টো টোকা পড়ে। জানে অনন্যা নেই! অসম্ভব থাকতেই পারে না! তবুও সে দরজা খুলে কাঙ্ক্ষিত মুখটা খুঁজবে। হয়তো বৃথাই খুঁজবে!!
চলবে…

এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

▶ লেখকদের জন্য পুরষ্কার-৪০০৳ থেকে ৫০০৳ মূল্যের একটি বই
▶ পাঠকদের জন্য পুরস্কার -২০০৳ থেকে ৩০০৳ মূল্যের একটি বই
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক:
https://www.facebook.com/groups/golpopoka/

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে