চাঁদের_আলোয়_জোছনা_ভাঙ্গে পর্ব ৩৫

0
2121

চাঁদের_আলোয়_জোছনা_ভাঙ্গে পর্ব ৩৫
লেখা আশিকা জামান

বিস্ময়ে অনন্যার মুখটা হাঁ হয়ে যায়। মনে হচ্ছে এই মুহুর্তে একটা হার্টবিট মিস করে গেল।
” মানে, কি সব উল্টাপাল্টা বলছ?” কোনরকম ভাবে কাঁপতে কাঁপতে সে বলে।

“তুমি অমন কাঁপছো কেন? অনন্যার কম্পমান শরীর টাকে অঙ্কন শক্ত করে জাপটে ধরে। অনন্যা তখন ভাষাশূন্য,নির্বাক! অঙ্কনের উষ্ণ আলিঙ্গনেও কাঁপাকাঁপি বন্ধ হয় নি। চোখ জোড়া বুজেও স্বস্তি পায় না। দিশোহারা অমানিশার ঘোর কাটে না। তাই দেখে অঙ্কন ফিসফিসিয়ে বলে, ” আর একটু অপেক্ষা কর তোমার কাঁপাকাঁপি চিরদিনের মতো বন্ধ করে দিব।”
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/



অনন্যার কান দিয়ে যেন গরম ভাপ বের হয়। চোখ মুখ শক্ত করে সে অঙ্কনকে ধাক্কা দেয়। যারপরনাই অঙ্কন হতভম্ব তবে বিচলিত নয়। ধপাস করে বিছানায় বসে নখ খুটতে থাকে ওডেন পোর্সেলিন এর মেঝেতে।

মৃদু হেসে অঙ্কন আবার অনন্যার কোমড় জড়িয়ে
ধরে বসে। ” কি হল, অমন থমথমে মুখ করে বসে পড়লে কেন? আমার হাতে বেশি সময় নেই। যাও যাও রেডি হও তোমাকে সাজাতে বিউটিশিয়ান এসে পড়বে। কুইক!”

অনন্যা তিল পরিমাণও নড়ল না। থমথমে মুখেই বলল, ” আমাদের বিয়েটা কি এরকম হওয়ার কথা ছিল? এভাবে চোরের মতো বিয়ে আমি কেন করব! এইসব কি ফাজলামো হচ্ছে অঙ্কন,
আমি বাড়ি যাব। প্লিজ আমাকে যেতে দাও।” অঙ্কনের হাত ঝাড়া মেরে অনন্যা কিঞ্চিৎ সরে বসে।

অঙ্কন নিভলো। তবে একটু পরেই নিজেকে সামলে নিয়ে স্বাভাবিক গলায় পূর্বের রেশ ধরে বলে,
” এতদিন বিয়ে বিয়ে করে তুমি আমার মাথা খেয়েছ। আর আজ আমি যখন দু’পা এগিয়ে গেলাম তখন তুমি পিছিয়ে যাচ্ছ। কেন অনন্যা? তুমি আমাকে বিশ্বাস করো না।”

অনন্যা উঠে দাঁড়ায়। নিচু গলায় স্বর ফোঁটে।
” প্রশ্নটা বিশ্বাস অবিশ্বাসের নয়! আমি আমার বাবা মাকে না জানিয়ে কেন বিয়ে করব? তাছাড়া কাল সকালে আমার কি পরিচয় হবে? আমি তো নিজেকে তোমার স্ত্রী হিসেবে দাবি করতে পারব না। যে পরিচয় সবার সামনে দিতে পারব না সেই পরিচয়ের বোঝা সবার অলক্ষ্যে আমি বয়ে বেড়াতে পারব না অঙ্কন! ”

” তুমি ভেবে বলছো তো! যদি আজ তুমি আমার না হও, তাহলে চিরদিনের মতো আলাদা হওয়ার পথটা কিন্তু খোলা আছে।” অঙ্কন চোখ মুখ শক্ত করে কথাটা বলল।

অনন্যা দাঁড়ানো অবস্থা থেকে মেঝেতে বসে পড়ে। দু’চোখের নিচে তখন সাত সাগরের কান্না। জীবনে প্রথমবারের মতো সে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে । এতবড় জটিল অবস্থায় সে জীবনেও পরে নি। আদৌ কি এই দিশোহারা অবস্থা থেকে কেউ তাকে মুক্তি দিবে?

বিছানার এক কোণে অঙ্কন থমথমে মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে। হয়তো অনন্যার মুখভঙ্গি বুঝার চেষ্টা করছে। তবে একটা সুক্ষ্ম কষ্টে বুকের ভেতরটা এফোঁড ওফোঁড় হয়ে যাচ্ছে। যা কেবল এক আল্লাহ আর সেই জানে!

অনন্যা নিজের সর্বস্ব শক্তি দিয়ে উঠে দাঁড়ায়। বাঁ হাতে চোখ মুছতে মুছতে বলে।
” সবাইকে কষ্ট দিয়ে আমি এভাবে বিয়ে করতে পারব না। আমি বাড়ি যাব। প্লিজ বাধাঁ দিও না।”

অঙ্কন ঠিক এই ভয়টাই পাচ্ছিলো তবে ঠিক সময়ে পরিস্থিতি নিজের অনুকূলে আনার নিঞ্জা টেকনিক তার জানা! খপ করে অনন্যার হাত টেনে ধরে সে। অধৈর্য্য গলায় বলে উঠে,
” আমি বলেছি আজ আমাদের বিয়ে! তো আজকে আমরা বিয়ে করছি। দ্যাট’স,ফাইনাল। আর আমি তোমার কাছে কোন অনুমতি চেয়েছি! চাইনি! এই ব্যাপারে তোমার অনুমতি নিষ্প্রয়োজন। যা বলছি তা ভালো ভালোই শোন না হলে খুব খারাপ হবে।”

অনন্যা স্তম্ভিত চিত্তে চেনা মানুষটার অচেনা রুপের দিকে আরও একবার তাকায়। কেবল মনে হচ্ছে সে একটা বেশ বড়রকমের ধোঁয়াশার ধুম্রজালে আটকে যাচ্ছে । এখান থেকে বের হওয়া তার পক্ষে সম্ভব নয়। নিজের বিশ্বাস, ভলোবাসা, নির্ভরতা সব কেমন হাওয়াই মিঠাই এর মত শূন্যে বিলীন হয়ে যাচ্ছে । কি করবে সে, এখন!
” আর কি খারাপ হওয়ার আছে অঙ্কন?”

অনন্যার অসহায় মুখপানে বেশিক্ষণ তাকানো যাচ্ছে না। নিজের কঠোরতার খোলস ভেদ করে অসহায়ত্ব ঠিকরে বের হতে চাচ্ছে। কিন্তু অঙ্কন যে তা হতে দেবে না।
” অনন্যা, আমার চোখের দিকে তাকাও। আমার দিকে তাকিয়ে কথা বলো।”
অনন্যার দুই চিবুক শক্ত হাতে ধরে নিজের দিকে ঘোরাতে ঘোরাতে অঙ্কন আবার বলে,
” তুমি যদি আজ আমার কথা না রাখ তারমানে এটাই দাঁড়াবে তুমি আমাকে বিশ্বাস করোনা। যেখানে বিশ্বাস নেই সেখানে ভালোবাসার দাবি করাটা হাস্যকর নয়!”

” তুমি কি আমার ভালোবাসার পরীক্ষা নিতে চাইছো অঙ্কন!” গলাটা বড্ড শান্ত।

” পরীক্ষা ভাবলে পরীক্ষা!
আর একটা কথা, আজ যদি তুমি আমার কথা না শোন তবে চিরজীবনের জন্য আমাকে হারাবে। আমার মুখ এজন্মেও তুমি দেখবে না। কথাটা মাথায় রেখ। যাও এবার তুমি মুক্ত। চলে যাও তোমাকে বিয়ে করতে হবে না।তোমার যা ইচ্ছে তাই করতে পার আমি কোন ইন্টারফেয়ার করব না।”
অনন্যার হাত ছেড়ে দিয়ে সে দূরে সরে দাঁড়ায়।

অনন্যা মেঝের দিকে শীতল দৃষ্টিতে তাকায়। কান্না ভেজা গলায় বলে,
” ঠিক আছে পরীক্ষা নিচ্ছো তো নাও! যদি এভাবেই নিজেকে প্রমাণ করতে হয় তবে তাই করব। শুধু একটা কথা বলব, তুমি মোটেও ঠিক কাজ করছ না৷ এভাবে আমাকে বাধ্য করে তুমি ঠিক করলে না।”

অনন্যার বিতৃষ্ণায় ভরা কথাগুলো শুনে আশ্চর্যজনকভাবে অঙ্কন খুশি হয়ে গেল। অনন্যাকে জড়িয়ে ধরতে চায়। নিজের খুশি প্রকাশ করতে চায়। কিন্তু অনন্যা বাধাঁ দেয়। নিজেকে দূরে সরিয়ে নেয়। তাতেও সে দমে যাবার পাত্র নয়। নিজের খুশি অব্যাহত রাখতে সে জানে। ফিঁচেল হাসি ধরে রেখে সে বলল, ” এখন সরিয়ে দিচ্ছো তো দাও! তোমার রাইট আছে। দিতেই পার, নো প্রবলেম। বাট আর কিছুক্ষণ পর আমি তোমার বর হচ্ছি তখন আমার টাইম সুদে-আসলে সব উসুল করে নেওয়ার। সুন্দরী, মেন্টালি প্রিপেয়ার হও। একটু মুড টুড ঠিক করো।”

অনন্যার কোন ভাবান্তর হলো না। বরং রাগে অভিমানে বিছানার এককোনায় বসে ফুঁসতে থাকে। অন্যসময় হলে হয়তো লজ্জা পেতো! এই লজ্জামাখা মুখটাই অঙ্কন দেখতে চেয়েছিল।।কিন্তু তার পরম আরাধ্য প্রেয়সীর লজ্জামাখা মুখ দর্শন হলো না। তাতে কি উচ্ছ্বাস বিন্দুমাত্র কমলো না। বরং পাশে এসে আবার বললো,
” তুমি ওয়াশরুমে যাও ফ্রেস হও। নিতু মানে তোমাকে সাজগোজ করতে যে হেল্প করবে সে এতক্ষণে এসে গেছে। প্লিজ দেরি করো না। যাও।”

” তোমাকে কে বলল আমি সাজবো?” অনন্যা প্রশ্নবিদ্ধ চোখে তাকায়।

” কেন তুমি সাজতে চাও না!”

” না।” অনন্যার কাটাকাটা জবাব।

” দেখ লুকিয়ে হোক চাই লোক জানিয়ে হোক বিয়ে তো বিয়েই! তাছাড়া সব মেয়েরাই তো বউ সাজতে চায়। এখন আমার উপর রাগ করে সাজতে চাচ্ছো না ঠিকই, পরে কিন্তু আফসোস করবে।”

” আফসোস!” অনন্যার স্বগতোক্তির স্বরে বলল।
” আমাকে চোরের মতো বিয়ে করতে হচ্ছে এর থেকে আফসোসের আর কি হতে পারে, অঙ্কন!”

অঙ্কন আহত চাতক পাখির মত তাকায়। সুর সুর করে দরজা পর্যন্ত এগিয়ে যায়। ফের পেছনে তাকায়, ” চাইলে সাজ না চাইলে এভাবেই থাক আমার আপত্তি নেই। তবে যেটাই কর তাড়াতাড়ি করো কারণ কাজিসাহেব এই আসলো বলে।”

*******************

১২ টার ঘন্টা বেজে থেমে গেছে। অনন্যার অপেক্ষায় বসে আছে বর বেশে অঙ্কন। যাই হোক তার ভাষ্যমতে বিয়ে তো বিয়েই! একটা পাঞ্জাবি না পরলে কি চলে! নিজেকে কেমন লাগছে লজ্জায় বর সাহেব কাউকে জিজ্ঞেস ও করতে পারছে না। তবে জিহাদ কানে কানে বারবার বলছে,
” বস, যা লাগতেছে না! আপনি ম্যাডামরে দেইখা অজ্ঞান হওয়ার আগেই উনি সেন্সলেস হইব আ’ম ড্যাম শিউর!”

অঙ্কন চোখ কপালে তুলে বলল,
” মানে কি? আমার বাসর রাত মাটি হোক তাই তো! বসে বসে এইগুলাই তো ভাববা আর কি কাজ তোমার!”

জিহাদ চুপসে গেল। থমথমে গলায় বলল,
” সরি স্যার! তবে আমি আজকে বহুত কাজ করছি এই বিয়ের প্ল্যান থেকে শুরু করে পুরো দায়িত্ব আমি একা হাতে সামলিয়েছি। আপনি শেষের কথাটা উইথড্র করেন প্লিজ!”

” কত্তবড় মিথ্যা কথা জিহাদ ভাই! আমি কি করছি তাইলে! আপনি তো আমার উপর অর্ডার দিয়াই খালাস। সব আমাকে নিজে দাঁড়িয়ে থেকে করতে হইছে। ” পাশের সোফা থেকে নাসির খলবিলিয়ে উঠে।

” তোমারা দুজনেই অনেক কাজ করছ। আমি তোমাদের উপর কৃতজ্ঞ। এরজন্য সারপ্রাইজ গিফট তোমরা পাচ্ছো। তো সবাই একটু চুপ করো।”

” কনে কে নিয়াসেন। এত দেরি হচ্ছে কেন?”
কাজি সাহেব হঠাৎ অধৈর্য গলায় গেয়ে উঠলেন।

তার কিঞ্চিৎ পরেই নিতু নতুন বউকে সঙ্গে করে হাজির।
” অঙ্কন ভাই, আপনার বউ তো কিচ্ছু সাজাতে দিল না। একটুও মেক আপ নিলো না।”

অঙ্কন চোখ তুলে অনন্যার দিকে তাকায়। তার লাল টুকটুকে বউটা লাল শাড়ি মুড়িয়ে মাথায় ঘোমটা টেনে নিচের দিকে চোখ বুজে আছে। লজ্জায় চোখ নামিয়ে রেখেছে নাকি অভিমানে তা নিয়ে ভাবার ফুরসৎ অঙ্কনের নেই। তার লাল টুকটুকে বউ টা এমনিতেই সুন্দর সাজার দরকার নেই। শাড়ি আর গয়না যে পড়েছে এটাই অনেক! এতেই চোখ ফেরানো দায়।

গা ঘেঁষে বসে আছে দুইজন। কাজি সাহেব বিয়ে পড়াচ্ছেন। অনন্যা গোমড়া মুখে বসে আছে। একটুও হাসি নেই। বরের দিকে তাকিয়েও দেখছে না। তাতে কি বরের তো সমস্যা নেই। সে বেহায়ার মতো তাকিয়েই আছে। জিহাদ আর নাসির কয়েকবার চোখ টিপে ইশারা করলেও কোন কাজ হয়নি। “আজকে তার বেহায়া হওয়ার দিন” নিতু নাসিরের কানে কানে বলছিল। পরক্ষণেই দুজনেই হেসে উঠছিল।
কাবিননামায় সই করার সময় অনন্যা প্রচুর কাঁদছিলো। ব্যাপারটা খুব দৃষ্টিকটু লাগছিল।
কবুল বলায় সময়ও অনেক সময় লাগিয়েছিল কাজি সাহেব প্রায় অধৈর্য্য হয়ে উঠেছিল। তবে বরের মুখের হাসি ছিলো সর্বকালের স্মরণীয়।

এভাবে প্রায় রাত ১ টা নাগাদ হাসি কান্নায় তাদের বিবাহ সম্পন্ন হলো!

চলবে….

যারা যারা গল্পটা পড়ছেন সবাই একটু সাড়া দিবেন কেমন! ??

এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

▶ লেখকদের জন্য পুরষ্কার-৪০০৳ থেকে ৫০০৳ মূল্যের একটি বই
▶ পাঠকদের জন্য পুরস্কার -২০০৳ থেকে ৩০০৳ মূল্যের একটি বই
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক:
https://www.facebook.com/groups/golpopoka/

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে