চাঁদের আলোয় জোছনা ভাঙ্গে পর্ব ৩৬

0
2211

চাঁদের আলোয় জোছনা ভাঙ্গে পর্ব ৩৬
লেখা আশিকা জামান

বিছানার দুই পাশে দুজন। মাঝে এক আলোকবর্ষ দ্বৈরথ! তবে এই দ্বৈরথ ঘুচানোর মত দুঃসাহস এখনো কেউ করে উঠতে পারছে না।

যতই হোক বাসর রাত বলে কথা। চারপাশ কেমন ভারী হয়ে উঠছে। কেবল নিঃশ্বাসের শব্দ ছাড়া অন্য কোণ শোনা গেল না।

এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/



অঙ্কন অনন্যার দিকে আড়চোখে তাকায়। এতক্ষণ সে ফুল দিয়ে সাজানো খাটের এক মাথা থেকে আরেকমাথায় চোখ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখছিল। আর প্রত্যেকবার দৃষ্টির পর একবার করে ঢোক গিলে নিয়েছে। উত্তেজনা, ভয়,শঙ্কা, আর সর্বোপরি দুশ্চিন্তায় গলার কাছের রগ একবার সঙ্কোচিত আরেকবার প্রসারিত হচ্ছে। এইমুহুর্তে অনন্যা মেঝের দিকে স্থির দৃষ্টি নিবদ্ধ করে আছে। একটিবারের জন্যেও চোখ তুলে তাকাচ্ছে না। অনন্যার দিক বিবেচনা করলে হয়তো এটাই স্বাভাবিক। তাই কিঞ্চিৎ অভিমান হলেও এতক্ষণ অঙ্কন তাকে ঘাটায় নি। কিন্তু এভাবে ঠিক আর কতক্ষণ নিজেকে দমিয়ে রাখতে হবে সে জানে না!
নিজের ঘর নিজের বিছানা! আর হ্যাঁ পাশে বসা বসা মানবীটিও নিজের একান্ত আপন! তাহলে কিসের দ্বিধা! কিসের এত দ্বন্ধ!
আচঁমকা হ্যাঁচকা টানে অনন্যা অঙ্কনের বুকে গিয়ে পড়ে। ভয়ে জুবুথুবু অনন্যা চোখ তুলে তাকিয়ে পরক্ষণেই চোখ নামিয়ে নেয়।
” কি হলো? চোখ নামিয়ে নিলে যে? তাকাও! ভালো করে দেখো! না হলে পরে খুব আফসোস হবে।”

অনন্যা অভিমানে ঠোঁট ফোলায়। তাতে অঙ্কন মোটেও বিচলিত নয়। আজকের এই সিদ্ধান্ত যে অনন্যার ভালোর জন্যই এটা একদিন ঠিক বুঝতে পারবে।

” বিয়ে বিয়ে করে তো অনেক লাফাইছো! আজকে কথা নাই ক্যান, হু! এরকম মুখ দেখতে আমার একটুও ভালো লাগছে না। কষ্ট হচ্ছে খুব।”
অঙ্কনের টি শার্টের বোতামে অনন্যার ঠান্ডা নিস্তেজ হাত বারবার ঘুরে বেড়াচ্ছে। অঙ্কন বাম হাতটা মুঠোয় ভরে নিয়ে খেলতে খেলতে আধ ভাঙ্গা গলায় বলল,
” তোমার শরীর, হাত এমন ঠান্ডা কেন? শীত করছে?”

গলায় আটকে থাকা কান্নার দলা সঙ্গোপনে লুকিয়ে সে বলল,
” নাহ্”
অঙ্কন আরেক হাত বিছানায় হাতড়াতে হাতড়াতে কি যেন খুঁজে। অনন্যা চকিত তাকায়। অঙ্কন একটা বক্স বের করে তার অনামিকার আঙ্গুল আলতো হাতে ধরে একটা আংটি পরিয়ে দেয়। প্লাটিনামের আংটি মাঝে বেশ মাঝারি সাইজের একটা পাথর। অনন্যা হাত সরিয়ে নেয় না। নির্বাক তাকিয়ে থাকে। অঙ্কন আবেগ জড়ানো কন্ঠে বলল,

” এই আংটিটার দিকে তাকাও! এই পাথরটার একটা বিশেষত্ব আছে। কাছে থেকে ধরো! তাকাও।”
অনন্যা আংটিটা চোখের সামনে ধরে। একসেকেন্ড পর পর আংটি থেকে আমি তোমাকে ভালোবাসি লেখা জ্বলজ্বল করে উঠে। এভাবে পরপর বিভিন্ন ভাষায় লেখাটি অনূদিত হয়। অনন্যা বিস্মিত নয়নে গুনে গুনে দেখে একশোটি ভাষায় ‘ আমি তোমাকে ভালোবাসি’ কথাটি বারবার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। অনন্যার ঠোঁটের কোণায় হাসির রেখা ফুটে উঠতে দেখে অঙ্কন হঠাৎ আদুরে গলায় বলে,
” এটা কখনো খুলবে না। আমি যখন থাকব না তখন এই আংটি টা বারবার তোমাকে ভালোবাসি বলবে আর প্রতিবার আমার কথা মনে পড়বে। বুঝবে আমিই তোমাকে ভালোবাসি বলছি।”

এতক্ষণ দমবন্ধকর অবস্থার রেশ কেটে গিয়ে অনন্যার মাঝে স্বাভাবিক নারী সত্তা সর্বোপরি প্রেমময়ী সত্তা ফুটে উঠছে। সলজ্জ চাহনীতে বারবার মূর্ছা যেতে ইচ্ছে করছিল। এত ভালোলাগা এক অন্যরকম উচ্ছ্বলতার সাথে আগে কখনও ধরা দেয় নি। নিজের সুখানুভূতি আর কিঞ্চিৎ দুশ্চিন্তার দোলাচালে দ্বিধাগ্রস্ত অনন্যা এখনও দ্বিধা কাটিয়ে উঠতে পারছে না। আবার দূরেও সরে যেতে পারছে না। এ এক ভয়াবহ জটিলতর অবাস্থা। পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর ব্যাক্তিত্বসম্পন্ন পুরুষ এখন তার হাতের মুঠোয়। তার ছোঁয়া থেকে কি করে নিজেকে সংবরণ করবে। চোখ তুলে আরও একবার তাকায়! তবে এই দৃষ্টি লজ্জার। একমাত্র সদ্য বিবাহিত স্ত্রীরাই এই অনুভূতির সাথে পরিচিত।

” এভাবে তাকালে তো তোমাকে ছাড়তেই ইচ্ছে করবে না। চোখ নামাও । নাহ্ বেশ বুঝতে পারছি দূরে থাকাটা এবার থেকে বেশ কষ্টসাধ্য ব্যাপার হয়ে যাবে।”
” তুমি যে কি সব বলো না। কি সব ভুলভাল বলছো!” অনন্য অঙ্কনের বুকে ঘুষি দিতে দিতে বলে।
” তুমিও তো মিথ্যে বলেছো আমাকে?”

অনন্যা অবাক হয়ে প্রশ্ন করে, ” কি?”

” এই যে, আমি বুঝতে পারছি তোমার বেশ শীত করছে। তুমি কাপঁছো, হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে তবু মুখে বলছো শীত করছে না। ”
অনন্যার চমকানো মুখটা দেখে অঙ্কন এবার ফিসফিস করে বলে, ” একটু উত্তাপ দেই। একটু দেই! একটু!!”
অঙ্কনের চোখ মুখ তখন অস্বাভাবিক রক্তিম!
সেদিকে তাকিয়ে অনন্যার শীরদাড়া বেয়ে যেন ঠান্ডা স্রোতের হাওয়া বয়ে গেল। তার কয়েক সেকেন্ডে পরেই আচঁমকা অঙ্কন তাকে জড়িয়ে ধরে। হাতের বাঁধন শক্ত থেকে শক্ততর হয়ে বুকের সাথে পিষে ফেলার উপক্রম হয়। অনন্যার নরম চুলে নাক ডুবিয়ে মাতাল করা ঘ্রাণে অঙ্কন বেশ কিছুক্ষণ বুঁদ হয়ে থাকলো।
ধাতস্থ হয়ে আবার ফিসফিস করে বলল,
” অনন্যা আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি। অনেক অনেক ভালোবাসি। তুমি আমাকে বিশ্বাস করোনা বলো!!”

বুকের উষ্ণ আদরে সোহাগি অনন্যার মৃদু সুরে বলল, “নিজের থেকেও বেশি।”
অনন্যার কপালে শক্ত করে চুমু খেয়ে অঙ্কন আবার বলে উঠে, ” ব্যাস এই বিশ্বাস ভরসা টুকুই আমার সাতাশ বছর জীবনের শ্রেষ্ঠ পাওয়া। আমি চেষ্টা করব যাতে জীবনের শেষ দিন অব্দি তোমার এই বিশ্বাস ভরসার মর্যাদা আমি রাখতে পারি। আমার আর কিছু চাওয়ার নাই। শুধু তোমাকে বলব তুমি আজ আমার কাছে আসতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা রেখোনা । তুমি যে ভয় আর দুশ্চিন্তায় এমন সিটিয়ে আছো সেই সব প্রতিকূলতা আমাদের ভালোবাসার কাছে নিন্তান্তই ঠুনকো। তুমি আমি ঠিক থাকলে কোন বাঁধা আমাদের ছুঁতেও পারবে না। কথা দাও তুমি আমার পাশে থাকবে। কখনও দূরে সরে যাবে না।”
সমস্ত ভয় দ্বিধা কাটিয়ে অনন্যা অঙ্কনের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে। কাঁদো কাঁদো গলায় বলে,

” তুমি আমার নিঃশ্বাস! নিঃশ্বাসকে ফেলে কেউ দূরে যেতে পারে না। যাবোনা কক্ষনো ও না।”

রাত বাড়ছে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে নিঃশ্বাসের উঠা-নামা। দুটি শরীর মন, প্রাণ উজাড় করে একজন আরেকজনের মাঝে ডুবতে প্রস্তুত। অঙ্কনের উন্মুক্ত বুকে নিজের তুলতুলে শরীরের সমস্ত ভার ছেড়ে দিয়ে অনন্যা পরম নিশ্চিন্তে চোখ বুজে থাকে৷ অঙ্কনের হাত তখনও শক্ত করে অনন্যাকে বেঁধে রেখেছে। মনে হয়না আজ ছাড়া পাওয়া যাবে।
হঠাৎ ফোনের রিং টোনে অনন্যার মাঝে ডুবে যাওয়া অঙ্কনের ঘোর কাটে। ধাতস্থ হয় দুজনেই। অনন্যা আঁচল ঠিক করে ফোন হাতে তুলে নেয়। এটা তারই ফোন। মাঝরাত, তিনটে বাজে। এইমুহুর্তে বাবা ফোন করেছে। অনন্যা স্তম্ভিত চিত্তে অঙ্কনের দিকে তাকায়। অঙ্কন ইশারায় সম্মতি জানায়। অভয় দেয়। অনন্যার বিচলিত মনটা কিঞ্চিৎ শান্ত হয়।

” অনন্যা, ঘুমিয়ে গেছিস! তুই ঠিক আছিস তো। তোকে ডিস্টার্ব করলাম কি?” মায়ের গলা শোনা যাচ্ছে। কাছেই বাবার খকখক করে কাশির শব্দ শুনা যাচ্ছে।
ফোন কানে রেখেই আয়েশা স্বামীর দিকে মনোযোগ দেয়। গজগজ করে বলতে থাকেন,
” আহা! আস্তে পানি খাও। গলায় আটকে যাবে তো।”

অনন্যা নিচুস্বরে বলে, ” নাহ্ ডিস্টার্ব করোনি। ঠিক আছি। বাবার কি হয়েছে।”

” কি আর হবে? মাঝরাত্তিরে চিৎকার করে ঘুম থেকে ধরফর করে উঠেছে।দুস্বপ্ন দেখেছেন তোকে নিয়ে। নিজেকে কিছুতেই সামলাতে পারছে না। দেখনা কেমন পাগল আমাকে ডেকে তুলে তোকে ফোন দেওয়ালো তো শান্তি পেলো!” উনি ফোন কানে নিয়েই স্বামীকে ডাকলেন,
” মেয়ে ফোন ধরেছে। নাও কথা বলো আর রাতদুপুরে পাগলামি বন্ধ করো।”

আহনাফ সাহেব যেন প্রাণ ফিরে পেলেন। তড়িৎ গতিতে ফোন কানে তুলে নেয়।
” হ্যালো অনন্যা! মা তুই ঠিক আছিস তো! তোর কিছু হয় নাই তো। ”

বাবার কন্ঠ শুনতে পেয়ে অনন্যার খুব কান্না পেলো। দাঁত দিয়ে ঠোঁট চেপে কান্না আটকাতে লাগলো,
” আমি ঠিক আছি বাবা! রাত অনেক হয়েছে তুমি ঘুমাও। তোমাকে দুশ্চিন্তা করতে বারণ করেছি না আমি। কেন এত দুশ্চিন্তা করো।”

” তুই বুঝবি না। যখন বাবা মা হবি তখন বুঝবি। প্রাণের একটা অংশ তুই। এভাবে হুটহাট বাড়ি ফিরিস না কেন? তুই জানিস না প্রত্যেকদিন তোর ঘুমন্ত মুখ না দেখে আমি স্বস্তির ঘুম ঘুমাতে পারি না। আর আজ যে ভয়ংকর স্বপ্ন দেখেছি আর ঘুম আসবে না রে মা। তুই কি ঘুমোচ্ছিলি?”

অনন্যা কেঁদে দেয়। কাঁদতে কাঁদতে বলে,
” বাবা, আমি সকালেই ফিরে আসব। তোমাকে ছেড়ে আর কখনো কোথাও যাব না, বাবা!”

” কাঁদছিস কেন? কি হয়েছে? বলনা কি হয়েছে?” আহনাফ চৌধুরী আৎকে উঠেন।

” কিছু হয়নি। তোমার কথা শুনে কান্না এসে গিয়েছিল। আমার ঘুম পেয়েছে আমি ঘুমাবো।”
অনন্যা ফোন কেটে দিয়ে উথালপাতাল কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। বাবাকে মিথ্যে বলার অনুশোচনায় ভেতর টা পুড়ে খাক হয়ে যায়। অঙ্কন নির্বাক তাকিয়ে থাকে। দুই হাত আজঁলা ভরে অনন্যার মুখ ধরে জল মুছাতে চায়। তাতে যেন কান্নার বেগ আরও বাড়ে। শক্ত কন্ঠে বলে উঠে,
” প্লিজ! আমি একটু একা থাকতে চাই। প্লিজ অঙ্কন!”
তাই অঙ্কন আর বাঁধা দেয় নি। কেঁদে কেঁটে নিজে নিজেই ধাতস্ত হবে। এটাই বরং ভালো।
চলবে….

গতপর্বে সবাই খুব সাড়া দিয়েছে আমি অভিভূত। আজকেও সবাইকে দেখতে চাই। হ্যাপি রিডিং ??

এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

▶ লেখকদের জন্য পুরষ্কার-৪০০৳ থেকে ৫০০৳ মূল্যের একটি বই
▶ পাঠকদের জন্য পুরস্কার -২০০৳ থেকে ৩০০৳ মূল্যের একটি বই
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক:
https://www.facebook.com/groups/golpopoka/

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে