চন্দ্ররঙা প্রেম পর্ব-১০

0
1705

#চন্দ্ররঙা_প্রেম
#পর্ব-১০
#আর্শিয়া_সেহের

-“শুভ জন্মদিন,আপু। অনেক অনেক শুভকামনা রইলো তোমার জন্য।”
-“ধন্যবাদ,ভাই।এই শোন…”
রুমঝুম আর কিছু বলার আগেই রুশান কল কেটে দিলো। গত পরশু কথা শেষ হওয়ার পর রুশান আর কল করেনি রুমঝুমকে। রুমঝুম কল করলেও রিসিভ করে না। হঠাৎ কি হলো ছেলেটার?
রুমঝুম ভাবলো হয়তো রুশানকে ছাড়া প্রথম জন্মদিন অন্য কোথাও কাটাচ্ছে এজন্যই ওর মন খারাপ।

বাম হাতে জানালার গ্রিল চেপে ধরে বাইরে তাকিয়ে আছে রুশান। বিড়বিড় করে বলছে,
-“আমি কোন মুখে তোমার সাথে কথা বলবো রে আপু। আমার মা তোমার সব কেড়ে নিয়েছে। মায়ের করা কাজে আমি নিজেই আজ ভীষণভাবে লজ্জিত, অনুতপ্ত। তোমার জীবনে আর কারো কালো ছায়া না পড়ুক সেই কামনাই করবো দূর থেকে।”

….

-“হ্যাপি বার্থডে,মাই ডিয়ার ফেরেন্ড ।”
পাশের রুম থেকে মেঘার করা এসএমএস দেখে রুমঝুম আওয়াজ করে হেঁসে দিলো। উত্তরে লিখলো,
-“ধন্যবাদ,মাই বিয়ার ফেরেন্ড।”
রিপ্লাই পাঠিয়ে রুমঝুম একা একা হাসতে লাগলো।
মেঘা এমন রিপ্লাই দেখে মুখ ফুলিয়ে বসে আছে। তাকে ভাল্লুক বললো? ছিঃ। দেখে নিবে সে এই মেয়েকে।

সময়টা রাত বারোটা বেজে তেরো মিনিট। শান বাদে সবাই এই তেরো মিনিটেই রুমঝুমকে উইশ করে ফেলেছে।তবে রুমঝুম যার উইশের আশায় চাতক পাখির মতো বসে আছে সে কোনো টেক্সট করলো না। কষ্টে রুমঝুমের চোখে পানি চলে এলো।
আচ্ছা তার কি রুমঝুমকে উইশ‌ করার কথা ছিলো? কি সম্পর্ক তার সাথে রুমঝুমের? সে উইশ করেনি বলে এতো খারাপ কেন লাগছে?
রুমঝুম উত্তর পেলো না। কাঁদতে কাঁদতে ফ্লোরেই ঘুমিয়ে পড়লো। তীব্র অভিমান ঝাপ্টে ধরেছে তাকে।

সকাল সাড়ে আটটার দিকে রুমঝুম আর মেঘা ভার্সিটির উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লো। বের হওয়ার সময় মেহেদী ইশারায় মেঘাকে বুঝালো রুমঝুমকে দেরি করে বাসায় আনার জন্য। মেঘাও ইশারায় ‘ওকে’ বুঝিয়ে বের হলো বাসা থেকে।

রুমঝুমের মন খারাপ ভাবটা মেঘার চোখ এড়ালো না। সে জানে রুমঝুম কেন মন খারাপ করে আছে। প্লানটা এমনই ছিলো। আজকের দিনটা আর রুমঝুমকে জ্বালাতে ইচ্ছে করলো না মেঘার। এমনিতেও বেচারির মন খারাপ । তাই চুপচাপ ভার্সিটি গেলো দুজন।

ডিপজল স্যারের ক্লাস শেষে রুমঝুমকে নিয়ে বেরিয়ে এলো মেঘা। রুমঝুম বাইরে এসে দেখলো সিন্থিয়া,প্রান্ত,তিহান আর বিথী দাঁড়িয়ে আছে। এতোজনের মাঝে চোখ যাকে খোঁজে তাকেই পায় না। শানকে কোথাও না দেখে রুমঝুমের মন খারাপ দ্বিগুণ হয়ে গেলো। প্রচন্ড কান্না পেলো তার কিন্তু কাঁদলো না। এত্তো গুলো মানুষের সামনে কেঁদে লজ্জায় পড়তে চায় না সে।

সিন্থিয়া এগিয়ে এসে রুমঝুমকে জড়িয়ে ধরলো। স্নেহমাখা কন্ঠে বললো,
-“মেনি মেনি হ্যাপি রিটার্নস অফ দা ডে ,ঝুম। হ্যাপি বার্থডে।”
ঝুম মিষ্টি হেঁসে ধন্যবাদ জানালো।
প্রান্ত বললো,
-“তোমরা দুজন কি আর কোনো ক্লাস করবে ?”
মেঘা ঝটপট করে বললো,
-“নাহ। আজ আর ক্লাস করবো না। আজকে ঝুমকে নিয়ে ঘুরবো।”
-“বাহ্, বেশ তো। চলো আমরাও তোমাদের সাথে জয়েন হই।”
প্রান্তের কথায় মেঘা হেঁসে বললো,
-“অবশ্যই। কেন নয়?”

সবার এতো হাঁসি তামাশার মধ্যেও রুমঝুমের মন খুবই খারাপ।তার খুব ইচ্ছে করলো আকাশ ভেঙে আসা বৃষ্টির মতো ঝরঝর করে কাঁদতে। সিন্থিয়া রুমঝুমকে খেয়াল করলো। সবাইকে একমিনিট দাঁড়াতে বলে সাইডে গিয়ে শানকে কল করলো। তিনবারের সময় শান ফোন রিসিভ করলো।

-“হ্যাঁ,সিন্থু বল।”
-“মেয়েটা প্রচন্ড মন খারাপ করে আছে শান। আজকের দিনটাও ওকে এভাবে কষ্ট দিচ্ছিস কেন বল তো?”
-” উফফ সিন্থু তুই বুঝিস না। কোন সারপ্রাইজ দেওয়ার আগে এমন একটু করা উচিৎ। তাহলে বড়সড় ঝাটকা খাবে বুঝলি?”
-“এ্যাঁহহ, থাম তো তুই।আর কতোক্ষণ লাগবে তাই বল?”
শান হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে সময়ে চোখ বুলিয়ে বললো,
-“এখন দশটা বাজে। ওকে নিয়ে একটার দিকে আসবি। তারপর কি করতে হবে জানিস তো।”
-“আল্লাহ । এখনো তিন ঘন্টা শান।”
-“একটু ম্যানেজ করে নে, প্লিজ।”
সিন্থিয়াকে আর কিছু বলতে না দিয়ে শান কল কেটে দিলো। সিন্থিয়া একটা গাড় নিঃশ্বাস ফেলে এগিয়ে গেলো বাকিদের কাছে।

তিন ঘন্টায় আশেপাশে অনেক জায়গাতেই ঘোরাঘুরি করলো ছয়জন মিলে। ঘোরাঘুরির ফাঁকে সিন্থিয়া মেঘাকে সবার অগোচরে জিজ্ঞাসা করলো,
-“তোমাদের বাড়িতে কোনো সারপ্রাইজ প্লান করেছো ঝুমের জন্য?”
-“হ্যাঁ, ভাইয়া বললো সন্ধ্যার পর ছোটখাটো একটা পার্টি করবে।”
-“তোমার ভাইয়া তো ভার্সিটিতে। তো কিভাবে করবে সবকিছু?”
-“ভাইয়া তিনটার মধ্যে বাসায় ফিরবে বললো।”
সিন্থিয়া ছোট্ট করে বললো,
-“ওহ।”

মনে মনে বললো,
‘তারমানে আমাকে আড়াইটার মধ্যে ভার্সিটিতে যেতে হবে। কোনোভাবেই আজকে মিস করা যাবে না। মেহেদীকে আজ ভালোবাসার কথা বলেই ছাড়বো।’
সিন্থিয়া এগুলো ভেবে লজ্জায় লাল নীল হয়ে যাচ্ছিলো।

বারোটা বেজে পঞ্চান্ন মিনিটে শান সিন্থিয়ার ফোনে একটা এসএমএস পাঠালো। সিন্থিয়া সেটা দেখে সবার উদ্দেশ্যে বললো,
-“গাইস,আমার খুবই ক্ষুধা লাগছে। তোমাদের ও নিশ্চয়ই ক্ষুধা লেগেছে। চলো সবাই খেয়ে আসি।”
সবাই সম্মতি প্রকাশ করলো।রুমঝুম চুপচাপ সবার তালে তাল মিলাচ্ছে। কোনো কথা বলছে না সে।

সবাই মিলে যখন রেস্টুরেন্টে পৌঁছালো তখন এক টা বেজে সতেরো মিনিট। রেস্টুরেন্টে ঢুকে সবাই একটা টেবিলে বসে পরলো। রুমঝুম পুরো রেস্টুরেন্টে চোখ বুলিয়ে দেখলো তারা ছাড়া আর কেউ নেই। সিন্থিয়া রুমঝুমকে ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে আসতে বললো। রুমঝুম অবাক হয়ে বললো,
-“আমি একা ফ্রেশ হবো? তোমরা হবে না?”
-“হবো তো,আগে তুমি হও তারপর।”
রুমঝুম মাথা হেলিয়ে চুপচাপ ওয়াশ রুমে ঢুকে পরলো। ওয়াশ রুমে ঢুকে খানিকটা অবাক হলো সে। কারন সেখানে একটা ডিপ পিংক কালারের গাউন রাখা সাথে ম্যাচিং জুয়েলারি। কানের দুলের নিচে গোলাপি রঙের একটা চিরকুট চাপা দিয়ে রাখা। কৌতুহলী রুমঝুম সেদিকে এগিয়ে গিয়ে চিরকুটে উঁকি মারলো।

একদম নিচে ডান দিকে তার নাম লেখা। সাথে সাথেই চোখ দুটো বড় বড় হয়ে গেলো রুমঝুমের। একটানে চিরকুটটা বের করলো দুলের নিচ থেকে। তেলাপোকার ঠ্যাং এর মতো সুন্দর অক্ষরে লেখা-
-” দশ মিনিটের মধ্যে ড্রেসটা পড়ে সেকেন্ড ফ্লোরে চলে এসো , চন্দ্রকন্যা। দেরি হয় না যেন‌।”
তারপর একদম নিচে ছোট্ট করে লেখা ‘ফর রুমঝুম’।

রুমঝুম চিরকুট সেখানে রেখে তাড়াহুড়ো করে বাইরে বের হতে গিয়ে দেখলো দরজা লক করা।সে দরজায় টোকা দিয়ে বললো,
-“ওপাশে কেউ আছেন? দরজা খুলুন।”
রুমঝুমের টোকা দেওয়ার সাথে সাথেই কথা বললো মেঘা।
-“ড্রেসটা পরেছিস?”
রুমঝুম গমগমে কন্ঠে বললো,
-” ওটা না পরা অবধি দরজা খোলা হবে না।”
-“কিন্তু ওটা কে রেখেছে?”
-“সব জানতে পারবি আগে ওটা পরে বাইরে আয়।”

উপায় না পেয়ে রুমঝুম ড্রেসটা পরে নিলো। ড্রেস, জুয়েলারি পরে দরজার কাছে এসে বললো,
-“পরেছি। এবার খোল। ”
সঙ্গে সঙ্গে মেঘা দরজা খুলে দিলো। রুমঝুম কিছু বলতে যাবে তার আগেই মেঘা ওর চোখ বেঁধে দিলো। রুমঝুম কপট রাগ নিয়ে বললো,
-“কি হচ্ছে এগুলো? চোখ বাধলি কেন?”
-“সময় হলে দেখতে পাবি। এখন কথা কম বল।”

রুমঝুমকে ধরে নিয়ে দ্বিতীয় তলায় গেলো মেঘা। রুমঝুমকে দাঁড় করিয়ে রেখে বললো,
-“আমি না বলা অবধি বাঁধন খুলবি না। চুপচাপ দাঁড়া।”
বেশ খানিকক্ষণ অতিবাহিত হলেও কেউ রুমঝুমের কাছে এলো না। রুমঝুম চোখ বাঁধা অবস্থায় মেঘাকে ডাকতে শুরু করলো। সিন্থিয়ার নাম ধরেও ডাকলো বেশ কয়েকবার। কারো সাড়াশব্দ না পেয়ে যেই না নিজেই চোখের বাঁধন খুলতে গেলো তখনই হুট করে তার চোখের বাঁধন খুলে দিলো মেঘা।

রুমঝুম বিষ্ময়ে হতবাক। চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি ঝরছে তার। সামনেই হাঁটু গেড়ে একগুচ্ছ কদম হাতে বসে আছে শান। মুখে নজরকাড়া সেই হাসি।শান তার চন্দ্রকন্যার চোখে চোখ রেখে বললো,
-” ভালোবাসবে আমায়? ভালোবাসতে দেবে তোমায়? বানাবে তোমার মনোরাজ্যের রাজা? যেখানে শুধু আমার কর্তৃত্ব থাকবে। ”

রুমঝুম কি বলবে খুঁজে পেলো না। হুড়মুড়িয়ে গিয়ে ঝাপিয়ে পড়লো শানের বুকে। শান টাল সামলাতে না পেরে পেছনে হেলে পড়লো। রুমঝুমের সেদিকে খেয়াল নেই। সে শানের বুকে মুখ ডুবিয়ে রাজ্যের অভিযোগ জুড়ে দিলো। শান মুচকি হেঁসে শুনছে প্রিয়তমার অভিযোগ। রুমঝুম কাঁদতে কাঁদতে হেঁচকি তুলে ফেলেছে। শান রুমঝুমকে বুক থেকে তুলে চোখ দুটো মুছিয়ে দিলো। রুমঝুম তখন বুঝতে পারলো এতক্ষণ সে কি করেছে। লজ্জায় আর মুখ তুলে তাকাতে পারলো না রুমঝুম। শান দেখছে রুমঝুমের লজ্জামাখা মুখ। চোখের পাপড়ি গুলো কাঁপছে। পাতলা ঠোঁটজোড়া মাঝে মাঝে দাঁত দিয়ে চেপে ধরছে। শান ঠোঁট টিপে হাঁসতে শুরু করলো। বাকিরা পাশে দাঁড়িয়ে দেখছে দুজনের প্রেমময় প্রহর।

রুমঝুম ধীরে ধীরে শানের দিকে তাকিয়ে দেখলো সে ঠোঁট টিপে হাসছে। রুমঝুম মুখ ঘুরিয়ে উঠে পড়লো সেখান থেকে। শান আলতো করে রুমঝুমের হাত ধরলো। রুমঝুম থেমে গেলো সেখানেই। শান হাত ছেড়ে রুমঝুমের পা ধরলো। কেঁপে উঠলো রুমঝুম। কাঁপা কন্ঠে বললো,
-“পা ধরছেন কেন? পা ছাড়ুন।”
শান চোখ পাকিয়ে রুমঝুমের দিকে তাকিয়ে বললো,
-“বেশি‌ কথা বলবে না। চুপ করে দাঁড়াও।”
শান বুকপকেট থেকে বের করলো রুমঝুমের হারিয়ে যাওয়া সেই নুপুরটা। অতি যত্নে সেটা রুমঝুমের পায়ে পরিয়ে দিলো। রুমঝুমের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে ফিসফিস করে বললো,
-“আমার হৃদশেকল বেঁধে দিলাম তোমার পায়ে।”

নুপুরটা পেয়ে রুমঝুম এতোই খুশি হলো যে স্থান ভুলে দ্বিতীয় বারের মতো শানকে জড়িয়ে ধরলো। রিনরিনে কন্ঠে বললো,
-“আপনার বাঁধা শেকল পরে আমার সারাজীবন কাটিয়ে দিতে পারবো।”
শান রুমঝুমকে বুকে জড়িয়ে ধরেই মুচকি হাসলো। আরো শক্ত করে আলিঙ্গন করলো তার চন্দ্রকন্যাকে।

হাঁসি খুশিতে কখন যে সময় পেরিয়ে গেলো কেউ টেরও পেলো না। দুইটা বেজে পনেরো মিনিটের সময় টনক নড়লো সিন্থিয়ার। সে ব্যাস্ত ভঙ্গিতে বললো,
-“আমার আর্জেন্ট একটা কাজ আছে। তোরা থাক। কাল দেখা হবে।”
বলেই হনহন করে বেরিয়ে গেলো রেস্টুরেন্ট থেকে। বাকিরা বোকা চোখে তাকিয়ে তার চলে যাওয়া দেখলো। প্রান্ত বিথীর দিকে তাকিয়ে বললো,
-“এর আবার দরকারি কি কাজ পড়লো?
-“আমি কি জানি? আছে হয়তো‌ কোনো কাজ।”
-“হ্যাঁ, থাকতেই পারে কাজ। আচ্ছা বাদ দে।”

মেহেদীর ফ্রি হতে হতে তিনটার কাছাকাছি বেজে গেলো। ডিপার্টমেন্ট থেকে বেরিয়ে সোজা গেটের দিকে হাঁটতে শুরু করলো সে। যাওয়ার পথে কি কি কিনতে হবে সেটা নিয়ে মনে মনে হিসাব কষা শুরু করলো। রুমঝুমের জন্য তার মায়ের দেওয়া নুপুরের মতো অবিকল একটা নুপুরের অর্ডার করেছিলো সেদিন। যাওয়ার পথে সেটা নিয়ে যাবে।

মেহেদী আশেপাশে আনমনে হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ থমকে দাড়ালো। চোখ আটকে গেলো আকাশী রঙের একটা আকাশপরীতে। পরীটা একদম তার মনের মতো সেজেছে। আকাশী রঙের শাড়ি, আকাশী-সাদা মিশানো রেশমি চুড়ি, বাতাসে দোদুল্যমান কোমর ছাড়ানো চুল আর চোখে গাঢ় করে দেওয়া কাজল। মেহেদী পলক ফেলতেও ভুলে গেলো। এক মূহুর্তের জন্য সে সিন্থিয়ার মধ্যে রুমঝুমকে দেখতে পেল। সাথে সাথেই চোখ নামিয়ে ফেললো মেহেদী।
ছিঃ!এভাবে ভ্যাবলার মতো একটা মেয়ের দিকে তাকিয়ে ছিলো ও?
তার ভালোবাসা শুধুই রুমঝুম, অন্য কারো দিকে তাকানো তার জন্য ঘোর অন্যায়।
তবে মেয়েটাকে দেখতে বেশ সুন্দর লাগছে। তার পছন্দের সাথে মেয়েটার সাজগোজ মিলে যাওয়া কি কাকতালীয় কোনো ব্যাপার? হতেই পারে।

মেহেদী এসব ভাবনা ঝেড়ে ফেলে সামনে অগ্রসর হওয়ার জন্য উদ্যত হতেই সামনে এসে দাঁড়ালো সিন্থিয়া। মেহেদীর ভাষায় আকাশপরী।
সিন্থিয়া মেহেদীর দিকে তাকালো না। নিচের দিকে তাকিয়ে এক হাত দিয়ে অন্য হাত মুচড়াতে লাগলো। মেহেদী চুপচাপ সিন্থিয়ার কাজকর্ম খেয়াল করছিলো।সিন্থিয়ার জোড়া ভ্রু যেটা মেহেদীর খুব পছন্দ। না চাইতেও মেহেদীর চোখ বারবার সিন্থিয়াকে পরখ করছে।
মেহেদী কিছুক্ষণ ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে থেকে বললো,
-“কিছু বলবে?”
সিন্থিয়া মেহেদীর কন্ঠে হালকা কেঁপে উঠলো। বুক ভরে শ্বাস টেনে নিয়ে বললো,
-“জ্.. জ্বি ,বলবো।”
-“তাহলে বলো । চুপ করে আছো কেন?”

সিন্থিয়া এদিক ওদিক তাকিয়ে তার ব্যাগ থেকে একটা রঙিন কাগজ বের করে চটপট মেহেদীর হাতে গুঁজে দিলো।
এক নিঃশ্বাসে বললো,
-“আমি আপনাকে ভালোবাসি। ভীষণ ভালোবাসি।”
কথাটা বলেই সিন্থিয়া দৌঁড় দিলো। একটু দূরে গিয়ে পেছনে তাকালো আবার। সেখান থেকেই চেঁচিয়ে বলে উঠলো,
-“দয়া করে চিঠিটা পড়বেন। ভালোবাসলেও পড়বেন ,না বাসলেও পড়বেন।”
বলে আবারও ছুট লাগালো । মেহেদী হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলো সেদিকে। শাড়িতে বেঁধে বারবার পরে যেতে গিয়েও নিজেকে সামলে নিচ্ছে মেয়েটা। আচ্ছা মেয়েটা খামোখা দৌঁড়াচ্ছে কেন?

সিন্থিয়া চোখের আড়াল হতেই মেহেদী সম্বিত ফিরে পেলো। চিঠিটা ফেলতে গিয়েও ফেললো না। চিঠিতে মেয়েটা কি লিখেছে সেটা পড়ার কৌতুহল জাগলো। তবে এখন পড়ার উপযুক্ত সময় না ভেবে চিঠিটা পকেটে পুরে রাখলো।
পুনরায় হাঁটা শুরু করলো মেহেদী। হাঁটতে হাঁটতে নিচের দিকে তাকিয়ে বিরবির করে বললো,
-“যার ভালোবাসা পাওয়ার জন্য এতো আকুলতা, সে ভাইয়া ভাইয়া করে দুনিয়া উল্টায় ফেলে আর বাকিরা আসে ছাইয়া বানাতে। কি কপাল রে তোর মেহেদী !”

চলবে……..

(ভুল-ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে