চন্দ্ররঙা প্রেম পর্ব-২৩

0
1642

#চন্দ্ররঙা_প্রেম
#পর্বঃ২৩
#আর্শিয়া_সেহের

একে একে চারদিন পার হয়ে গেছে। তাহমিনা বেগমের আত্মার শান্তি কামনা করে রেজাউল সাহেব ছোট একটা মিলাদ দিয়ে দিয়েছেন। সে চান না তার ছেলেমেয়েদের উপর আর কোনো অশুভ ছায়া পড়ুক। তাহমিনা বেগমের ব্যবহৃত সবকিছু তার রুমে রেখে রুমটা অস্থায়ী কালের জন্য তালাবন্ধ করে দিয়েছে রুশান। সে শোক কাটিয়ে উঠেছে মোটামুটি। এমন পাপীদের জন্য কষ্ট পাওয়াও পাপ।

রুমেলের অসুস্থতা তেমনই আছে। মাঝে মাঝেই উন্মাদ হয়ে উঠছে সে। মেঘা খুব দক্ষ হাতে সামলাচ্ছে রুমেলকে। বেশি ভায়োলেন্ট হয়ে গেলে ঘুমের ইনজেকশন পুশ করে দেয় ।
মেঘার রুমেলকে সামলানোর ধরন,তার ধৈর্য্য মুগ্ধ করছে সবাইকে। সবার বিশ্বাস,মেঘাই রুমেলকে সুস্থ করে তুলতে পারবে।

মেহেদীরও ছুটি শেষ হয়ে আসছে। শান্তর স্কুল, শিরীনের কলেজ, ইমতিয়াজ আহমেদের অফিস সামলানো সবকিছুতেই সমস্যা দেখা দিচ্ছে। তাই তারা দ্রুত চট্টগ্রাম ফিরতে চান। রেজাউল সাহেব ঘরোয়া ভাবে সেদিন রাতেই মেঘা আর রুমেলের বিয়ের ব্যবস্থা করলেন।

হঠাৎ এভাবে বিয়ের জন্য রুমেল প্রস্তুত ছিলো না। তার অসুস্থতা জানার পরও সবাই মেঘার সাথে তার বিয়ে দিচ্ছে এটা মানতে পারছিলো না সে। তাছাড়া তার মনে হচ্ছিলো মেঘা তাকে করুনা করে বিয়ে করছে।
রুমেল রুমঝুম আর রুশানকে ডেকে পাঠালো। রুমঝুম দুই হাতে মেহেদী ভর্তি করে ভাইয়ের কাছে আসলো। রুশান রুমঝুমের হাত দেখে ভেঙচি কেটে বললো,
-“ঢং দেখে বাঁচি না। এমন সাজ সাজতেছে,মনে হয় যেন ওরই বিয়ে হচ্ছে।”
-“বাঁচতে বললো কে তোকে? মরে যাহ,হুহ।”

রুমেল ধমক দিয়ে দু’জন কে থামালো। রুশান আর রুমঝুম ঝগড়া থামিয়ে ভাইয়ের কথায় কান দিলো।
রুমেল সিরিয়াস ভঙ্গিতে বসে আছে। একটু সময় নিয়ে ভাই-বোনের দিকে তাকিয়ে বললো,
-“আমি এই বিয়ে করবো না। তোরা বাবাকে বোঝা। আমি এখন বিয়ে করার অবস্থায় নেই।”

রুশান আর রুমঝুম দু’জনেই ভাইয়ের কথায় ঘাবড়ে গেলো। আজ রাতে বিয়ে আর এখন তাদের ভাই কি বলছে এসব?
রুশান কিছুটা রেগে বললো,
-“মেঘাপু স্বেচ্ছায় তোমাকে বিয়ে করতে চেয়েছে ভাইয়া। তোমার অবস্থা তো সে জানে । জেনে শুনেই….”

-“আমি জানি মেঘা নিজেই আমাকে বিয়ে করতে চেয়েছে। কিন্তু ওর হয়তো আমাকে দেখে,আমার অতীত শুনে ,আমার বর্তমান অবস্থা দেখে আমার প্রতি মায়া লেগেছে।হয়তো করুনা করে বিয়ে করতে চাইছে আমাকে ।”
রুশানের কথার মাঝেই রুমেল বললো।

রুমেলের কথায় রুশান ক্ষেপে উঠলো। মেঘার প্রতি রুশানের আলাদা একটা ভালোবাসা তৈরি হয়েছে। রুমঝুমের মতো মেঘাও এখন তার নিজের বোনের মতোই। নিঃস্বার্থভাবে কতটা খেয়াল রাখে সবার। আর এই মেয়েকে নিয়ে এরকম মন্তব্য ভাইয়ার।

রুশান কিছু বলতে যাবে তার আগেই রুমঝুম চোখের ইশারায় থামালো তাকে। দরজার দিকে ইশারা করে বেরিয়ে যেতে বললো রুম থেকে। রুশান ইশারা বুঝতে না পেরে দাঁড়িয়ে রইলো। রুমঝুম গলা ঝেড়ে বললো,
-“আচ্ছা,আমি বলছি সবাইকে যে তুমি বিয়ে করতে চাও না। রুশান আয়।”

রুশান ভ্রু কুঁচকে বোনের দিকে তাকালো। রুমঝুম কি করতে চাইছে এটা তার বোধগম্য হলো না। রুশানকে হাবলার মতো তাকিয়ে থাকতে দেখে রুমঝুম ওর হাত টেনে বাইরে নিয়ে গেলো। যাওয়ার সময় দাড়াম করে দরজা লাগিয়ে গেলো।

রুমেল সেদিকে একবার তাকিয়ে মাথা নিচু করে বসে রইলো বিছানায়। তার ভাই বোন দুটো কি জানে, সে কত কষ্টে বিয়ে না করার কথাটা বলেছে? সে নিজেও ভালোবেসে ফেলেছে মেঘাকে । কিন্তু তার মতো একটা ছেলে কি দিতে পারবে ওই মেয়েটাকে?
সে তো ঠিকমতো পরিবারই চেনে না তাহলে মেয়েটাকে কিভাবে একটা পরিবার দিবে? তাছাড়া তার যোগ্যতাই বা কি? রুমেল দুহাতে মাথা চেপে ধরলো এসব ভাবতে ভাবতে।

দরজার খটখট আওয়াজ রুমেলের কানে এলো। হয়তো রেজাউল সাহেব এসেছেন। বিয়ের জন্য রুমেলকে বোঝাতে। অবশ্য বোঝাবেন নাই বা কেন? এমন ছেলের জন্য আর তো মেয়ে পাবেন না।
রুমেল মাথা নিচু করেই বললো,
-“বাবা,আমি মেঘাকে বিয়ে করতে চাই না। এ ব্যাপারে আর কোনো কথা বলো না দয়া করে।”

-“কেন বিয়ে করতে চান না আমায়?”
মেঘার কন্ঠে চমকে তাকালো রুমেল। বাসন্তী রঙের একটা শাড়ি পড়ে দাঁড়িয়ে আছে মেঘা। দু’হাতে মেহেদী দেওয়া। কানে ,গলায় গাঁদা আর গোলাপের সেট। রুমেলের গায়েও বাসন্তী রঙের একটা পাঞ্জাবি। একটু পরেই তাদের হলুদ সন্ধ্যা।
মেঘাকে হঠাৎ করেই এখন একটু বেশি সুন্দর লাগছে। কেন লাগছে রুমেল জানেনা। জানার চেষ্টাও করলো না। চোখ সরিয়ে নিলো মেঘার দিক থেকে।

মেঘা আরেকটু এগিয়ে এসে বললো,
-“বললেন না তো,কেন বিয়ে করতে চান না আমায়?”

-“আমি তোমার যোগ্য নই, মেঘা। এরকম একটা ছেলেকে বিয়ে করে তোমার সুন্দর ভবিষ্যৎটা নষ্ট করো না।”

মেঘা বেশ শক্ত কন্ঠে বললো,
-“আমার ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবতে হবে না। কেন বিয়ে করতে চান না সেটা বলুন।”

রুমেল পেছন দিকে ফিরে মেঘাকে দেখলো। মেয়েটার চোখে অসহায়ত্বের ছাপ অথচ কি দৃঢ় কন্ঠ। চোখ আসলেই মিথ্যা বলতে পারে না। রুমেল মেঘার চোখে তাকিয়েই বললো,
-“আমি কারো করুনার পাত্র হত…”

আর কিছু বলার আগেই মেঘা দৌড়ে এসে ঝাপ্টে ধরলো রুমেলকে। শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো,
-“আমি আপনাকে ভালোবাসি। ভালোবাসি, ভালোবাসি, ভালোবাসি। এখানে করুনার কোনো স্থান নেই। দয়া করে আমাকে দূরে সরিয়ে দিবেন না । বড্ড বেশি ভালোবেসে ফেলেছি আপনাকে।”

রুমেলের চোখে অশ্রু ভীর করেছে। এমন ভালোবাসা পায়ে ঠেলে দিবে কিভাবে ও? সারাজীবন ভালোবাসা না পাওয়া ছেলেটা হঠাৎ এতো ভালোবাসার সাক্ষাৎ পেয়ে কেঁদে উঠলো। নিজেও শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো মেঘাকে।
দরজার বাইরে থেকে এই দৃশ্য দেখছিলো রুমঝুম আর রুশান। দু’জন কাউকে কিছু না বলে সরাসরি মেঘাকে নিয়ে চলে এসেছিলো এখানে। মেঘাকে ভেতরে পাঠিয়ে দুজন বাইরে দাঁড়িয়ে উঁকি মেরে দেখছিলো দুজনের কান্ড।

দু’জনকে একসাথে দেখে রুমঝুম আর রুশান চৌদ্দ পাটি দাঁত বের করে হেঁসে হাত মিলালো। আবার রুমেলের রুমে উঁকি মারতে যাবে তার আগেই কেউ একজন একহাতে রুমঝুমের কোমড় পেঁচিয়ে ধরে, অন্য হাতে রুমঝুমের মুখ চেপে ধরে দরজার পাশ থেকে সরিয়ে আনলো। রুশান রুমঝুমের হালকা গোঙানির আওয়াজ শুনে পাশে তাকিয়ে দেখলো শান রুমঝুমকে মুখ চেপে ধরে উঁচু করে রেখে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে। রুশান শুকনো ঢোক গিললো শানকে দেখে।

শান ভেতরে একনজর উঁকি মারলো। রুমেল আর মেঘার অবস্থা দেখে রুমঝুম আর রুশানের দিকে চোখ ছোট করে তাকিয়ে ফিসফিস করে বললো,
-“এইসব দেখতেছো দুইজনে? লজ্জাশরমের মাথা খাইছো? চলো এখান থেকে।”
শান রুমঝুমের মুখ ছেড়ে দিলো। একহাতে রুমঝুমকে ঝুলিয়ে অন্য হাতে রুশানকে ধরে টানতে টানতে নিয়ে গেলো রুমেলের রুমের সামনে থেকে।
কি বিচ্ছু দুইটা। বড় ভাইয়ের কেমিস্ট্রি দেখে লুকিয়ে লুকিয়ে।

মেঘা রুমেলকে ছেড়ে অন্য দিকে তাকালো।এখন তার লজ্জা লাগছে ভীষণ।। রুমঝুম কেন‌ লজ্জা পাচ্ছিলো সেদিন এখন তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে নিজেও। মেঘা মাথা নিচু করে তাকাতেই আঁতকে উঠলো। তার সুন্দর মেহেদী মাখা হাত দুটোর এ কি অবস্থা? পুরো হাতে লেপ্টে গেছে মেহেদী।

মেঘা কাঁদো কাঁদো হয়ে পেছন দিকে তাকালো। রুমেলের পুরো পাঞ্জাবীতে মেহেদী মাখামাখি হয়ে গেছে। মেঘা ফিক করে হেঁসে দিলো রুমেলের পাঞ্জাবি দেখে। রুমেল মেঘার হাঁসির কারন না বুঝে পাঞ্জাবির দিকে তাকালো। পাঞ্জাবির সামনে পিছনে মেহেদি মেখে পাঞ্জাবির কালারই চেন্জ হয়ে গেছে।
এই পাঞ্জাবি পরে এখন‌ মানুষের মধ্যে যাবে কিভাবে? রুমেল হতাশ দৃষ্টি মেলে মেঘার দিকে তাকালো। মেঘা তখনো হেঁসে চলেছে। মেঘার হাঁসিতে রুমেলের মনটা হালকা থেকে আরো হালকা হচ্ছে। তার সমস্ত কষ্ট ভুলিয়ে দিতেই যেন মেয়েটার আগমন। রুমেল মন্ত্রমুগ্ধের মতো চেয়ে রইলো মেঘার হাঁসিমাখা মুখের দিকে।

-“রুমেল?”
প্রান্তর ডাকে রুমেলের ঘোর ভাঙলো। মেঘাও হাঁসি থামালো। দু’জনেই দরজার দিকে তাকিয়ে দেখলো প্রান্ত একটা প্যাকেট হাতে দাঁড়িয়ে আছে।
প্রান্ত মাথা চুলকাতে চুলকাতে ভেতরে এসে বললো,
-“তোমার পাঞ্জাবিতে নাকি মেহেদী মাখামাখি হয়ে গেছে? তাই শান‌ এটা পাঠালো।”
মেঘা মাথা নিচু করে এক সাইড দিয়ে বেরিয়ে গেলো। এখানে থাকলে লজ্জায় পড়তে পারে।

রুমেল মেঘার যাওয়ার দিকে একবার তাকিয়ে প্রান্তকে বললো,
-“এই সময়ে পাঞ্জাবি কোথায় পেলে?”
-“শানের কাছে এক্সট্রা ছিলো এই পাঞ্জাবিটা।”
-“ওহ । কিন্তু আমার পাঞ্জাবিতে মেহেদি লেগেছে এটা শান কিভাবে জানলো?”
প্রান্ত ভাবুক ভঙ্গিতে বললো,
-“এটা তো‌ জানিনা। রুমঝুমকে উঁচু করে দোলাতে দোলাতে ছাদের দিকে নিয়ে গেলো আর আমাকে বললো তোমাকে এটা দিতে।”

রুমেল হেঁসে বললো,
-“দাও। ধন্যবাদ তোমাকে। আমার এটার খুব দরকার ছিলো।”
প্রান্ত হেঁসে পাঞ্জাবিটা দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।

প্রান্ত দোতলা থেকে নামার সময় দেখলো শিরীন ড্রয়িং রুমের সোফায় বসে একদৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে। আশেপাশের কোনো কিছুতেই নজর নেই তার। প্রান্ত পান্জাবির পকেটে হাত ঢুকিয়ে এদিকসেদিক তাকাতে তাকাতে শিরীনের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।
হালকা নিচু হয়ে বললো,
-“দেখার অনেক সময় বাকি। একদিনেই সব দেখে নিবা নাকি?”

শিরীন হকচকিয়ে আশেপাশে তাকালো। প্রান্ত তার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে সে খেয়ালই করেনি। তার খেয়াল হতে হতে প্রান্ত মেইন ডোর ক্রস করে বেরিয়ে গেছে।
প্রান্তর বলা কথাটা নিজ মনে কয়েকবার আওড়ালো শিরীন। বেশ খানিকটা সময় লাগলো কথাটার অর্থ বুঝতে। যখন বুঝলো তখন খুশিতে লাফিয়ে উঠলো। তার বহু প্রতীক্ষিত ভালোবাসার নাগাল‌ পাবে ভেবেই খুশির জোয়ার বয়ে গেলো তার মনে।

-“আম্মুউউউ, আব্বুউউ,আপুউউ, প্রান্ত ভাইয়াআআ, তিহান ভাইয়াআআ, মেঘা আপুউউ, আন্টিইই, ভাবির আব্বুউউ তোমরা সবাই কোথায়?? তাড়াতাড়ি আসো।”

শান্তর চিল্লানিতে সবাই একে একে ড্রয়িং রুমে এলো। শাফিয়া আক্তার খুন্তি হাতে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এসে বললেন,
-“কি হইছে? চেঁচাচ্ছিস কেন?”
শান্ত সিঁড়ি বেয়ে নেমে হাঁপাচ্ছে। কিছুক্ষণ শ্বাস নিয়ে বললো,
-“তাড়াতাড়ি ছাদে চলো। ভাইয়া ভাবিকে তুলে নিয়ে ছাদে গেছে। মনে হয় ছাদ থেকে ফেলে দিবে।”

শাফিয়া আক্তার মুখ বেঁকিয়ে আবার রান্নাঘরে ঢুকে পড়লেন। বাকিরাও শান্তর দিকে বিরক্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে চলে‌ গেলো। শিরীন যেতে যেতে বললো,
-“তোর মাথা ফেলবে ছাদ থেকে।”

সবাই চলে যাওয়ায় হতাশ হলো শান্ত। সে বুঝতে পারলো‌ কেউ তার ভাবিকে বাঁচাতে যাবে না। তাই নিজেই তার ভাবিকে বাঁচানোর জন্য আবার ছাদের দিকে দৌড় দিলো।
বহু কষ্টে ছাদে উঠে দেখলো রুমঝুম পিলারে হেলান দিয়ে বসে আছে। তার কোলে মাথা রেখে শান শুয়ে আছে। শান্ত কোমড়ে হাত দিয়ে এগিয়ে এলো তাদের দিকে। বেচারা ঠিকমতো নিঃশ্বাসও নিতে পারছে না। শান আড়চোখে শান্তর দিকে তাকিয়ে বললো,
-“কি হয়েছে? হাপাচ্ছিস কেন?”

শান্ত এগিয়ে এসে ফ্লোরে ধপ করে বসে পড়লো। তারপর পেছন ঘুরে শানের পাশাপাশি রুমঝুমের কোলে মাথা রাখলো।
আকাশের দিকে তাকিয়ে গম্ভীর গলায় বললো,
-“তুমি না ভাবিকে ফেলে দেওয়ার জন্য এনেছিলে? ফেলোনি‌ কেনো?”

রুমঝুম ঠোঁট বাঁকিয়ে শান্তর দিকে তাকালো। বলে কি এই ছেলে? শান ঠোঁট কামড়ে হাঁসি আটকে বললো,
-“তা ফেলে দেইনি দেখে কি কষ্ট পাইছিস?”
-“কষ্ট পাইনি কিন্তু বাঁচানোর সুযোগও তো পেলাম না।”

শান হাহা করে হেসে উঠলো। শান্ত মাথাটা অন্য দিকে ঘুরিয়ে মুখ ফুলালো। রুমঝুম হালকা হেঁসে দু’জনের মাথায় হাত বুলাতে লাগলো।
এদের বয়সের ব্যবধান অনেক তবুও কতটা খুনসুটি ওদের মধ্যে। দেখলেই প্রান জুড়িয়ে যায়। রুমঝুম আকাশের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বললো,’এরা যেন সারাজীবন এভাবেই একসাথে কাটাতে পারে। কোনো বাধা যেন না আসে ভাই-ভাই বন্ধনের মাঝে।’

রাত আটটার মধ্যে বিয়ে হয়ে গেলো রুমেল আর মেঘার। অল্প কিছু লোক এসেছে বিয়েতে তবুও জাঁকজমক ভাব বাড়িতে। সকলেই প্রান ভরে দোয়া করেছে রুমেল-মেঘাকে। মেঘার মুখে একটা মিষ্টি হাঁসি লেগে আছে।
রুমঝুম মেঘার দিকে এগিয়ে এলো। মেঘার হাত দুটো নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বললো,
-“আমার ভাইটার দায়িত্ব আজ থেকে তোর মেঘা। বাকি দশ জনের মতো আমার ভাই তোর দায়িত্ব নিতে পারবে না এখনি। আপাতত তুই তার দায়িত্ব নে। একসময় আমার ভাই তোকে সবটা সুদে-আসলে ফিরিয়ে দিবে দেখিস।”
রুমঝুমের কথার বিপরীতে মেঘা মুচকি হাসলো শুধু।

রুমেলের অসুস্থতার কথা মাথায় রেখে রাত এগারোটার মধ্যেই সবকিছু শেষ করে রুমেল আর মেঘাকে বাসর ঘরে রেখে বাকিরা চলে এলো।‌ মাহেরা খাতুন একবার অশ্রুসিক্ত চোখে মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। দোয়া করলেন তার মেয়ের সুখের জন্য।

সবাই চলে যাওয়ার পর রুমেল আর মেঘা দু’জনই ফ্রেশ হয়ে কাপড় বদলে ফেললো। একসাথে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়ে নিলো। রুমেল জায়নামাজ গুছিয়ে রাখতে রাখতে বললো,
-“ঘুমুবে এখন? খারাপ লাগছে বেশি?”
মেঘা আড়চোখে তাকালো রুমেলের দিকে। স্নিগ্ধতায় ঘেরা এই যুবকটি তার স্বামী।
মেঘা মুচকি হেসে বললো,
-“না। একটু পরে ঘুমাবো। চলুন একটু বেলকনিতে বসি।”
.
রুমেলের বুকে হেলে বসে আছে মেঘা। আকাশে অর্ধচন্দ্র বিরাজমান।রুমেলের হাত মেঘার চুলের ভাঁজে ভাঁজে ঘুরছে। দু’জনেই চুপচাপ নিরবতা উপভোগ করছে।

রুমেল হঠাৎই হাঁসফাঁস শুরু করলো। মেঘা রুমেলের কোলেই ঘুমিয়ে পড়েছিলো।রুমেলের হাঁসফাঁসে ধরফরিয়ে উঠে বসলো সে। রুমেলের দিকে তাকিয়ে বললো,
-“কি হয়েছে? কষ্ট হচ্ছে আপনার?”
-“পানি খাবো।”
মেঘা রুমেলকে উঠিয়ে রুমে নিয়ে এলো। রুমেলকে বিছানায় বসিয়ে জগ থেকে পানি এনে রুমেলের মুখের সামনে ধরলো। রুমেল রক্তচক্ষু মেলে মেঘার দিকে তাকিয়ে গ্লাস ছুড়ে ফেলে দিলো। মেঘা কেঁপে উঠলো। রুমেল উত্তেজিত হয়ে পড়েছে।এদিক ওদিক তাকিয়ে বিরবির করছে। চুল টানছে নিজের।

মেঙা দৌড়ে গিয়ে ঘুমের ইনজেকশন রেডি করলো। ডান হাতে ইনজেকশন নিয়ে ধীরে ধীরে রুমেলের কাছে এসে দাঁড়ালো। বিছানায় বসা রুমেলকে সর্বশক্তি দিয়ে জড়িয়ে ধরে ইনজেকশন পুশ করে দিলো। ততক্ষণে রুমেল মেঘার পিঠ,হাত আর ঘাড়ে ইচ্ছা মতো খামচে দিয়েছে। মেঘা অস্ফুট আর্তনাদ করে সরে এলো। রুমেল আরো বেশি ভায়োলেন্ট হয়ে পড়লো‌ কিন্তু ইনজেকশনের প্রভাবে বেশিক্ষণ জেগে থাকতে পারলো না। ধীরে ধীরে লুটিয়ে পড়লো বিছানায়। মেঘা দু’পা পিছিয়ে মেঝেতে বসে পড়লো। সিরিঞ্জটা বেলকনির দিকে ছুড়ে মারলো।

মেঘার কষ্ট হলো ভীষণ। বুক ফেটে কান্নারা উপচে পড়তে চাইলো। যে রাতে মেয়েরা স্বামীকে একান্ত ভাবে কাছে চায় সে রাতে সে স্বামীর থেকে আঘাত পেলো। ক্ষতস্থানগুলো চেপে ধরে মেঘা ডুকরে কেঁদে উঠলো। এই নিয়তিকে সে নিজেই আমন্ত্রণ জানিয়েছে। তাকে ভেঙে পড়লে চলবে না। নিজের সবটুকু চেষ্টা দিয়ে সে রুমেলকে পরিপূর্ণ সুস্থ করবে। করবেই।

চলবে….

(ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে