গৃহযুদ্ধ পর্ব-১৫

0
1084

#গৃহযুদ্ধ পর্ব ১৫
#লেখকঃ হাসিবুল ইসলাম ফাহাদ
________________________________
” আমি ভাবতেও পারছিনা আমার বউ এর এমন কিছু ছবি এ ফোনে খুঁজে। যাই হোক আমি ওকে এ বিষয়ে কিছু বলবো না। শুধু ওকে না কাউকেই কিছু বলবোনা। ”
বেচারি যদি মেসেজটা পড়ে থাকে তবে কনফিউশান এ পড়ে যাবে, আমি নাকি সুপ্তি কার কাছে ও ধরা পরে গেছে!
মানুষের মনের ভেতরে এরকম প্রেসার সৃষ্টি করে রাখার চেয়ে বড় মাপের শাস্তি আর হয়না। তবে এর থেকেও ভয়ানক শাস্তি,অপেক্ষা করছে রেশমির জন্য,এবং অবশ্যই সেটা শারিরীক।

.—*———–
সিঁড়ি থেকে উপরে ওঠার সময়ে একটা মাঝবয়েসী ছেলের সাথে ধাক্কা খেলাম। ভুলটা আসলে আমার ই। মোবাইল টিপতে টিপতে উপরে উঠছিলাম, দেখিনি। সরি বলার সময়ে খেয়াল করলাম এ ছেলেটাকে পূর্বে কখনো এই বিল্ডিং এ দেখিনি। বেশ লম্বাচওড়া, ছ’ফুট হবে।চেহারার রঙ ফর্সা, ক্লিন শেভড, চুলগুলো সিল্কি, একটু লম্বা করে রাখা। বাম হাত দিয়ে লম্বা চুল পেছনে ঠেলে বেশ সুন্দর ভাবে বলো,
It’s ok bro…
” আপনাকে আগে তো কখনো দেখিনি এখানে!
ছেলেটি মুচকি হেসে বললো,
“আমি রবিন। আজ-ই এ বিল্ডিং এ উঠেছি। ফোর্থ ফ্লোরে। ”
ওহ, আচ্ছা, বলে পাশ কাটিয়ে চলে আসলাম।
মণিকা ভাবীকে সুন্দরভাবে একটা সরি বলা উচিৎ। আমার বাসায় আসা গেস্ট এর বদমায়েশির কারণে বেচারি মন ও শরীর দুটোতেই ব্যথা পেয়েছে।
কিন্তু আবার যখন মনে পড়লো,জানালার ওপাশে দাঁড়িয়ে থাকার কথা, লজ্জায় আর তার সামনে পড়ার সাহস করলাম না৷
সোজা বাসায় চলে গেলাম।
রেশমি অনেকটা চুপচাপ হয়ে গেছে। সুপ্তির সাথে তেমন বেশি কথা বলে না। আমাকেও একটু এড়িয়ে চলে। সুপ্তি প্রথম প্রথম বিষয়টি খেয়াল না করলেও পরে ঠিক ই ধরতে পারে। এসব ঝামেলায় আমার অনলাইনে সময় দেয়া হচ্ছে না। সুপ্তির ও অফিস নেই।
হাতের টাকা পয়সাও শেষের দিকে।রেশমি বিষয়টা বুঝতে পেরে সুপ্তির টেবিলের উপরে পঞ্চাশটি এক হাজার টাকার নোটের একটা বান্ডেল রেখে দেয়।
সুপ্তি কিংবা আমি দুজনের কেউ ই সে বান্ডেল ছুঁয়েও দেখিনি। রেশমির বোধ হয় বিষয়টা আরো বেশি খারাপ লাগে। সে পুরোপুরিভাবে নিজেকে একা করে নেয় এবং আমাদের থেকে দূরে থাকতে শুরু করে।ইদানীং রেশমির মোবাইল ও পরে থাকে সোফা কিংবা বিছানার উপরে। রেশমি বিষন্ন মনে ছাদে কিংবা বারান্দায় পায়চারী করে।
রেশমির বিষয়টাকে স্বাভাবিক করার জন্য সুপ্তি সিদ্ধান্ত নেয়, রেশমির সাথে খোলাখুলি ভাবে সাময়িক সব বিষয় নিয়ে আলোচনা করবে।
.

হঠাৎ কলিংবেল বেজে ওঠে। খুলে দেখি ফুলী এসেছে। ওর কাছে শুনলাম আমাকে জরুরী তলব করেছে মণিকা ভাবি। হয়ত বাসা ছেড়ে দিতে বলবে।মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিয়ে তার বাসার উদ্দেশ্যে পা বাড়ালাম।
ফুলীর সাথেই গিয়ে মনীকা ভাবীর বাসায় ঢুকলাম।
দেখলাম তিনি নেই। গেস্টরুমের সোফার উপরে বসে মণিকা ভাবীর অপেক্ষা করলাম কিছুক্ষন।
নিশ্চয়ই তিনি আমার জন্য চা বানাতে ব্যস্ত! তার হাতের চা মানেই অভাবনীয় স্বাদে কিছুক্ষন ডুবে থাকা।
চোখ বুজে চায়ের কল্পনায় ডুবে গেলাম।
মণিকা ভাবী কখন পাশে এসে দাঁড়ালেন, খেয়াল করিনি।
খুক খুক করে কাশি দেয়াতে চোখ মেলে তাকিয়ে দেখি,ভাবী দাঁড়িয়ে আছেন।
তার হাতে চায়ের কাপ?
কোথায়?
তার হাতে চায়ের কাপের বদলে কিছু কাগজপত্র।
মনে মনে খুব দুঃখ পেলাম। মণিকা ভাবী তো এমন না!
তিনি আমার হাতে কাগজগুলো ধরিয়ে দিয়ে বললেন, বাসার দু মাসের বিদ্যুৎ বিল বাকি
আছে। একটু গিয়ে পরিশোধ করে আসবে?
কি আর করবো! না তো বলতে পারিনা। বললাম, আচ্ছা।
উনি বললেন, ঠিক আছে। বলে আমার হাতে বিলের টাকা দিয়ে ভেতরে চলে গেলেন।
হুট করে মণিকা ভাবীর আচরনগত এত পরিবর্তন!
মন একটু খারাপ করে তার বাসা থেকে বের হয়ে আসলাম।
.
.
.
বাসায় এসে বাইরে বের হওয়ার জন্য রেডি হচ্ছি, সুপ্তি তখন আমাকে ডাক দিলো।
রুমে নিয়ে গিয়ে বসালো।
কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,
” রেশমির সাথে আমি কথা বললাম,”
ওর সম্পর্কে ভয়াবহ কিছু তথ্য জানতে পারলাম। এখন আমি স্বাভাবিক হতে পারছি না। ”
-কি জেনেছো, বলো আমাকে!
-রেশমি আমাকে অনেক মিথ্যা বলেছে রোহান। ও রফিক সাহেবকে ঠকিয়েছে। স্মরন নামের একটা ছেলের সাথে রেশমির পরকীয়ার সম্পর্ক ছিলো৷
– আচ্ছা আর কি বললো?
– ও রফিক সাহেবের লাইফ থেকে বের হওয়ার উপায় খুঁজছিলো। এজন্য রফিক সাহেবের একটা ভুল পেতেই, রফিক সাহেবকে হুট করে সবকিছু থেকে বের করে দিলো। পরে প্লান করছিলো স্মরন এর সাথে বিয়ে করে নেয়ার এবং একত্রে থাকার।
– ওহ। আচ্ছা।
– কিন্তু গত দু’দিন যাবৎ স্মরন নিঁখোজ৷ রফিক সাহেব তার দলবল নিয়ে স্মরনকে কিডন্যাপ করেছে৷ রেশমিকে একটা ভিডিও পাঠিয়েছে। স্মরন আটকানো অবস্থায় আছে৷ ওর দেহ রক্তাক্ত৷ রফিক সাহেব ভিডিও বার্তায় বলছেন, তার সব সম্পত্তি ফেরত দিতে,নইলে স্মরনকে মেরে ফেলবে।
রেশমি এ ভিডিওটা পুলিশের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছে। এরপর থেকে রফিক সাহেব এবং স্মরন সবাই নিঁখোজ।
সুপ্তির মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললাম, এটা ওদের ঝামেলা। তুমি এত সিরিয়াস হচ্ছো কেনো সোনা!
সুপ্তি বললো- রেশমিকে আমি অনেক ভালো ভাবতাম। আমি ধর্ষিতা, হয়ত আমার শরীরে অনেকের স্পর্শ আছে। কিন্তু রেশমির মত নোংরা মনের অধিকারী আমি নই রোহান। আমি ওর থেকে অনেক ভালো আছি৷ যাদের মন নোংরা থাকে,মনে অন্য মানুষদের নিয়ে চিন্তাভাবনা থাকে তারা পতিত্মতাদের থেকেও খারাপ। পতিতারা জীবন জীবিকার জন্য খারাপ কাজ করে। কিন্তু ওরা? ওদের সব থেকেও নিরবে নিভৃতে ঠকিয়ে যাচ্ছে কাছের মানুষটাকে। আমার নিজেকে অনেক অপরাধী লাগত কিছুক্ষন আগেও। রেশমির কাছ থেকে এগুলো শোনার পরে নিজেকে ওর থেকে একটু হলেও ভালো মনে হচ্ছে।”
সুপ্তির কথাগুলো শুনে ওর দিকে তাকিয়ে রইলাম। শ্রদ্ধাবোধ অনেক বেড়ে গেলো।
খারাপ কাজ কখনো ভালো ফলাফল বয়ে আনেনা। রেশমির জীবনে সব আছে। কাড়ি কাড়ি টাকা,অর্থসম্পদ, বাড়ি গাড়ি সব। কিন্তু দেখো, ওর মনে শান্তি নেই৷ একটুও শান্তি নেই৷ এসব মানুষরাই জীবন ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে সুইসাইড নামক অভিশাপের মাধ্যমে। পুলিশ যদি রফিক সাহেবকে ধরতে পারে, রেশমির এসব ব্যাপার পুরো দেশবাসীর সামনে আসবে। ও কি করে নিজেকে সামলাবে তাই ভাবছি।
.
.
.
মণিকা ভাবীর হাতে চা খুব মিস করছি। ওনার বাসায় গেলেই চা দিয়ে আপ্যায়ন হবে তা জানি৷ তাই কোন একটা উপায় খুঁজতে লাগলাম, কি উসিলায় মণিকা ভাবীর বাসায় উঁকি মারা যায়।
বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করার পরে খুচরা কিছু টাকা বেঁচে গেছিলো।
ভাবলাম ওটা নিয়েই মনিকা ভাবীর কাছে যাই।
ভাবীর দরজার কলিং বেল প্রেস করলাম বেশ কয়েকবার।
ভাবী দরজা খুলে সামনে দাঁড়িয়ে রইলেন। জিজ্ঞেস করলেন, কি প্রয়োজন?
বললাম, ভাবী টাকা গুলো বেঁচে গেছে রাখুন।
উনি বললেন, সমস্যা নেই তুমি চা খেয়ে নিও। বলে একটা হাসি দিলেন, যার অর্থ এবার তুমি আসো। অবাক হলাম। মনে মনে ভাবলাম, তিনি হুট করে আমার সাথে এমন আচরণ করছেন, হয়ত রেশমির ব্যপারে রাগ করে আছেন৷ ওনাকে সরি বলে নেই ভালোভাবে।
মণিকা ভাবীর দিকে তাকিয়ে বললাম,
ভাবী সমস্যা না থাকলে একটু ভেতরে আসতে পারি?
ভাবি মনে হয় আনকম্ফোরট্যাবল সিচুয়েশনে পড়ে গেলেন।
সে একটু হেসে বললেন,
আচ্ছা আসো ভেতরে এসে বসো।
ভেতরে ঢুকেই মোটামুটি বড় আকারে একটা ঝাটকা খেলাম।
দেখলাম বারান্দার টেবিলে বসে আছে রবিন। তার সামনে সাজানো সারি সারি খাবার। রবিনের হাতে মণিকা ভাবীর সেই ডায়েরিটা।
আমাকে ওদিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে মণিকা ভাবী জিজ্ঞেস করলো,
কি যেন বলবে বলছিলে?
বললাম, রেশমির বিষয়ে সরি বলতে এসেছিলাম।
মণিকা ভাবী বললো, আরে আমি পুরো বিষয়টাতেই মজা পেয়েছি। ছোট বেলায় বান্ধবীরা মিলে একে অন্যকে এভাবে কত জব্দ করতাম! পুরোনো দিনে ফিরে গেছিলাম। আমি এগুলোয় কিছু মনে করিনি। তুমি এবার আসো।
– আচ্ছা বলে উঠে গেলাম।
মনটা বিষন্নতায় ভরে গেলো!
আহা! মণিকা ভাবীর সাধের রান্না ঐ স্মার্ট রবিন এসে আমার থেকে কেড়ে নিয়ে গেলো।
রবিনকে জব্দ করার একটা উপায় খুঁজে বের করতে হবে। মাথায় একটা দুষ্টু বুদ্ধি খেলে গেলো কাটা দিয়ে কাটা তুলতে হবে রবিনকে সরানোর জন্য রেশমিকে ইউজ করতে হবে।
.
.
চলবে….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে