গৃহযুদ্ধ পর্ব-০৯

0
1134

#গৃহযুদ্ধ পর্ব ৯
___________________
সুপ্তি চিৎকার করার ও সুযোগ পায়না এক হাত দিয়ে ওর মুখ চেপে ধরে রফিক। কানের কাছে মুখ লাগিয়ে বলে,
দেখো,
তুমি তো ছয় সাতজনের কাছে ভোগ হয়েছ-ই।
এখন আমাকে একটু শান্তি দাও, আমি তোমার মনের অপূর্ণ ইচ্ছে গুলো পূরণ করে দিব সুপ্তি।
জানোইতো আমার টাকা পয়সার অভাব নেই।
তোমার জীবনের সব সমস্যা আমি দূর করে দিব।
সুপ্তি নিজের হাত দিয়ে রফিক সাহেবকে পেছনের দিকে ধাক্কা মারে।সুপ্তির ধাক্কায় দু-তিন হাত পেছনে সরে যায় রফিক।
চাপা গলায় সুপ্তি বলে,
দ্যাখ রফিক, তোর সাথে রেশমির প্রেমের বিয়ে।এখন আমি যদি রেশমিকে ডেকে সব খুলে বলি, তোর কি অবস্থা হবে ভেবে দেখেছিস? কিন্তু আমি ওকে কোন প্রকারের কষ্ট দিতে চাইনা৷ ওর বিশ্বাস ও ভাংতে চাইনা৷ তাই তোকে সুযোগ দিলাম , নিজের চরিত্রটা শুধরে নে। তোর মত কুলাঙ্গারদেরকে পেটানোর অভ্যেস আমার ছোট থেকেই আছে।
রফিক সাহেব ও চাপা গলায় উত্তর দেয়,
– একটা বেশ্যা আর তোর ভেতরে এখন তফাৎ কি রে? আমার বাসায় থাকিস, খাস। তোকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে নামিয়ে দেব কাল।
রেশমিকে ডেকে কি বলবি তুই?.
রেশমি তোর মত ধর্ষিতার কথা বিশ্বাস করবে? নাকি ও যাকে নিজের জীবনের থেকেও বেশি ভালোবাসে তার কথা বিশ্বাস করবে?
তার থেকে চুপচাপ রাজী হয়ে যা। আমি প্রতি রাতে এসে তোকেও সুখ দিব, নিজেও তৃপ্ত হবো৷
– তোকে শেষ সুযোগ দিচ্ছি রফিক। আমি কিন্তু এখন ই রেশমিকে ডাক দিব?
– দিবি? তো দে? ওকে দুধের সাথে হাই পাওয়ারের ঘুমের ঔষধ খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে রেখেছি আমি। রফিক এত কাঁচা কাজ করে না।
সুপ্তির বুকের ভেতরে ধুকপুক করতে শুরু করে।
রফিক দাঁত বের করা কুটিল হাসি দিয়ে সামনের দিকে আগাতে থাকে ধীরপায়ে।
হঠাৎ করেই বিকট একটা শব্দ হয় সুপ্তির রুমের ভেতরে। ঝন ঝন করে কাঁচের কিছু একটা ভেংগে পড়েছে।এরপরেই শোনা যায় রফিক সাহেবের আর্তনাদ।
ফ্লোরে লুটিয়ে পরে সে। কয়েক সেকেন্ড পরে অন্ধকার কাটিয়ে রুমের বাতি জ্বলে ওঠে৷ একটা ভাংগা ফুলদানির সামনের অংশ হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে রেশমি।
ঐ ফুলদানি দিয়েই রফিকের মাথার পেছনের অংশে আঘাত করেছিল সে।রেশমি নিজে নিজেই বির বির করে বলে,
আমাকে দুধের সাথে ঘুমের ঔষধ খাইয়ে ঘুম পড়িয়ে রাখার প্লান করেছিলি! ইডিয়ট!
এরপর দ্রুত পা ফেলে ছুটে আসে সুপ্তির দিকে। মাথার পেছনের চুলগুলো মুঠি করে ধরে বলে, তুই ধর্ষিত হয়েছিস এতে যে তোর দোষ একেবারেই নেই সেটাও না। তোর মত মেয়ের কি শিক্ষা হবেনা জীবনেও? সুপ্তি ব্যাথায় ক’কিয়ে ওঠে।
সুপ্তিকে ধাক্কা মেরে বিছানার উপরে ফেলে দেয় রেশমি।
” কি দরকার ছিলো তোর সেদিন রাতে বাইরে বের হওয়ার? মেয়ে মানুষ বাইরে নিরাপদ না তা কি জানতি না তুই? আবার আজকে,
আজকে তুই কেনো দরজা লাগিয়ে ঘুমাস নি?
বল, কেন দরজা লাগাস নি?
চিৎকার করে বলে রেশমি।
উত্তরের অপেক্ষা না করেই সে রফিকের অজ্ঞান হয়ে লুটিয়ে পরা দেহটিকে টানতে টানতে সুপ্তির রুমের বাইরে নিয়ে যায়৷
সিলিং এর ঘুরন্ত ফ্যানের মাঝ বরাবর চিন্তাশূন্য ভাবে অনেক সময় ধরে তাকিয়ে থাকে সুপ্তি। আস্তে আস্তে ঘুমের কোলে ঢলে পরে সে।
সকাল হয় রেশমির ডাকে।
একটা ট্রে-তে হালকা পোড়া করে ভাজা পরোটা এবং কাপভর্তি দুধ-চা নিয়ে এসে সুপ্তির বেডের পাশে থাকা টেবিলে রেখেছে সে।
সুপ্তির ঘুম ভাঙতেই রেশমি গিয়ে ওর পাশে বসে। মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে, সরি রে, কালকে রাগ কন্ট্রোল করতে না পেরে তোকে আঘাত করে ফেলেছি। কিছু মনে করিস না।
দেখ আমি মানসিক ভাবে অত্যন্ত শক্ত দেখে
কালকের বিষয়টা বুকের মাঝে পাথরচাপা দিয়ে স্বাভাবিক আচরণ করছি।
সুপ্তি রেশমির দিকে তাকিয়ে বলে,
” একটা কথা বল তো রেশমি, কোন এক পরিস্থিতির জন্য যদি আমাকে আর রফিক ভাইকে এক রাত এক রুমে কাটাতে হত, পরদিন সকালে কি তুই তাকে সন্দেহ করতি?আমাদের মাঝে খারাপ কিছু হতে পারে এটা নিয়ে?
রেশমি, মাথা এপাশ ওপাশ নাড়িয়ে,না বলে।
” ওকে আমি আমার নিজের থেকেও বেশি বিশ্বাস করতাম। ভাবতাম আমি ছাড়া ওর চিন্তাভাবনা জুড়ে আর কেউই থাকেনা৷ ”
তোর যেমন তোর হাজবেন্ড এর উপর বিশ্বাস আছে, আমারো তেমনি রফিক ভাইয়ের উপর বিশ্বাস ছিল। সম্মান ছিল।
এজন্য দরজা দেয়ার কথা চিন্তাও করিনি। আর যখন আমি সুইসাইড এটেম্পট করেছিলাম, তুই ই আমাকে নিষেধ করেছিলি দরজা না দিতে।
– দেখ আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি দেখেই তোকে সরি বলছি। আর মন থেকেই সরি বলছি৷ কালকের ব্যপারটা ভুলে যা তো!
– ভুলে গেছি রেশমি। তুই আমাকে কিছু টাকা দিয়ে হেল্প করিস। আমি আজ ই চলে যাব।
– আমার উপর রাগ করে?
– না। তোর জামাইকে দেখলেই আমার ঘৃণা আসবে। তার সামনে পড়ব কি করে?
– সে সুযোগ নেই। তুই আমার কাছেই থাকবি।
– মানে?
– কাল রাতে রফিকের হুঁশ ফেরার পরেই ওকে ওর ব্যবহার্য জিনিসপত্র নিয়ে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছি৷
– তাড়িয়ে দিয়েছি মানে!
– এই ফ্লাটটা আমাদের তা তো জানিস।
– হুম।
– এটা রফিকের টাকাতেই কেনা। ওর ব্যাংক ব্যালেন্স, গাড়ি বাড়ি বিজনেস যা কিছু আছে সবকিছুই বিয়ের পর ও আমার নামে করে দিয়েছে৷এখন ও পুরো রাস্তার ফকিরের মত ঘুরে বেড়াবে।
– এটা ওর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করা হলো না? ওর সারাজীবনের অর্জন!
– আমার বিশ্বাসের মর্যাদা ও দিতে পারেনি। আমি কেন ওর বিশ্বাস রাখতে যাবো?
ওর সারাজীবনের অর্জন এই টাকা পয়সা। আর আমার জীবনটাই তো ও ছিলো।
এলাকার বখাটে ছেলেদের টাকা-পয়সা দিয়ে ওর পিছে লাগিয়ে দিয়েছি।
এই এলাকায় ঢুকলেই যেন ইট পাথর মেরে নাক মুখ এবড়োখেবড়ো করে দেয়।
শালা বজ্জাত কালকে তোকে যা বলেছে তা আমার কানে ভাসলেই মনে হয় ওর নিম্নাংগ শিল পাটায় বেটে ভর্তা করে কুকুরকে খাইয়ে দেই।
সুপ্তি কিছুক্ষন নিরব থেকে বলে,
আচ্ছা তোকে তো দুধের সাথে ঘুমের ঔষধ খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে রেখেছিলো তাহলে টের পেলি কিভাবে?
– দেখ সুপ্তি, ওকে আমি অনেক ভালোবাসতাম। ও আমাকে গ্লাসভর্তি দুধ খেতে দেয়ার পরে আমি ভেবেছিলাম ও ভালোবেসে আমাকে খেতে দিয়েছে, যদি না খাই তাহলে মন খারাপ করবে। তাই লুকিয়ে ফেলে দিয়েছিলাম।
সুপ্তি বলে
যাক এসব দুঃখের কথা বাদ দে। ভালো কিছু বল।
– তুই চায়ের ভেতর পরোটা চুবিয়ে খেতে পছন্দ করতি তাই তোর জন্য বানিয়ে এসেছি৷ খাওয়াদাওয়া শেষ কর। আজ সারাদিন আমরা বাইরে ঘুরবো। শপিং করবো। বড় নামি-দামি রেস্তোরাঁয় খাওয়াদাওয়া করব।
সুপ্তি হাসে। রেশমি উদ্দেশ্য করে বলে,
যত বড় রেস্তোরাঁয় ই যাইনা কেনো! তোর এই পরোটা আর চা ই আমার কাছে বেস্ট।
রেশমি প্রশংসা শুনে হাসি দেয়। সুপ্তিকে জড়িয়ে ধরে বলে, কিছু ফালতু মানুষের জন্য আমাদের জীবনটা থামিয়ে রাখবো কেনো!
লেটস চিল.. তাড়াতাড়ি খেয়ে গোসল করে রেডি হ৷
.
.
.
.
.
মুরগীর রানের অংশে কামড় দিতে দিতে রোহান বললো,
রোস্ট টা তো দারুণ হয়েছে রে ফুলি। তুইও ভালো রান্না করিস।
ফুলি হাসতে হাসতে বললো, আরেকটু পোলাও দেই!
– না থাক। আজ পেট একদম কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে গেছে। আমি বারান্দায় বসি। তুই বরং চা বানিয়ে নিয়ে আয়।
বারান্দায় গিয়ে গাছগুলোর দিকে একবার নজর বুলায় রোহান।
নতুন নতুন অনেক ফুল এসেছে।
বারান্দার কোণায় সেট করে রাখা ককাটেল পাখিদুটো ডিম দিয়েছে। ওদের ডিম থেকে বাচ্চা ফুটতে দেখতে আরো ১৭ দিন অপেক্ষা করতে হবে।
সুপ্তি কেমন আছে!
মনে পড়তেই মাথা দুদিকে ঝাকি দেয় রোহান। সুপ্তির কথা এখন একদম ই মনে করা যাবে না।
ফুলি চা নিয়ে আসে। ডান হাত দিয়ে চা নেয়ার সময় রোহানের হাতের দিকে ফুলির চোখ চলে যায়।
সাথে সাথে ও বলে ওঠে!
ও মা! ভাইজান আপনার হাতে অতখানি কাটলো কিভাবে!
রোহান পাল্টা প্রশ্ন করে ,
-পাখিতে ডিম পেড়েছে দেখেছিস?
– হ ভাইজান। দেখছি।
– ওদের ডিম ধরে দেখতে গেছিলাম।
তখন কামড় দিয়েছে।
বিশাল চিন্তায় পড়ে যায় ফুলি। কথা না বাড়িয়ে সেও রোহানের সাথে চা-পান করে।
রোহান মণিকা ভাবীর লেখা একটা কবিতা আবৃত্তি করে। ফুলি কবিতার অর্থ না বুঝেই হাত-তালি দেয়।
কিছুক্ষণ পরে নিজের বাসায় চলে যায় রোহান।
ফুলি ককাটেলের খাচার ভেতরে হাত ঢুকিয়ে ডিম বের করে আনে। পাখিদুটো ফুলিকে কামড়ায় না। ফুলি ভাবে রোহান ভাইকে তাহলে কেন কামড়ালো? ওরা কি রোহান ভাইকে অনেক বেশি অপছন্দ করে? আর এটুকু পাখিতে কামড়ালে কি অতবড় করে কেটে যায়?? গালে হাত রেখে মনে জেগে ওঠা
প্রশ্নগুলো নিয়ে চিন্তা করতে করতে অলস সময় কাটিয়ে দেয় ফুলি।
.
.
.
শপিং করতে করতে ক্লান্ত হয়ে একটা ক্যাফেতে গিয়ে বসে সুপ্তি এবং রেশমি। ক্যাফের একটা পত্রিকার প্রথম পাতায় চোখ পড়তেই হাত দিয়ে চোখমুখ ঢেকে ফেলে সুপ্তি। ছয়জন ছেলের চেহারা অনেক বড় বড় করে ছাপা হয়েছে৷ রেশমির দিকে তাকিয়ে সুপ্তি কান্না শুরু করে। রেশমি জিজ্ঞেস করে, কিরে কি হয়েছে আবার? কোনো কথা না বলেই আংগুল তুলে পত্রিকার দিকে ইশারা করে দেখায় সুপ্তি।
পত্রিকাটা হাতে নেয় রেশমি। সুপ্তি বলে, ওদিন রাতে এই ছেলেগুলোই ছিলো রেশমি!ওদের চেহারা দেখেই আমার ভয়ানক স্মৃতি গুলো মনে পড়ে গেছে।
রেশমি আগ্রহ ভরে চোখ দেয় হেডলাইনের দিকে,
লাল কালির হেডলাইনে লেখা-
নর্দমা থেকে উদ্ধার হয়েছে অজ্ঞাত ছয় যুবকের মৃতদেহ।

চলবে….
লেখকঃ হাসিবুল ইসলাম ফাহাদ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে