গুমোট অনুভুতি পর্ব-১৩+১৪+১৫

0
2054

#গুমোট_অনুভুতি
#লিখাঃ Liza Bhuiyan
#পর্ব_১৩

ঘড়ির কাটায় রাত আটটা বাজে,চারপাশে ঘন কালো অন্ধকার। দূরের রাস্তায় সোডিয়াম বাতির আলোয় আলোকিত রাস্তাঘাট,কিন্তু ছাদে ঠিক ততটাই অন্ধকার। সেই ঘুটঘুটে অন্ধকারে নীল শাড়ি পরিহিতা একজন নারী দাঁড়িয়ে আছে, আচল উড়ছে কিছুটা দূর পর্যন্ত। ছেড়ে দেয়া চুলগুলো এলোমেলোভাবে মুখের উপর ঝাপটে পরছে তবে সেদিকে তার বিন্দুমাত্র খেয়াল নেই।ও তাকিয়ে আছে দূর আকাশে! ঝলঝল করে উঠা তারার দিকে তাকিয়ে আছে। অন্যদিনের মতো আজ কথার ঝুড়ি খুলে বসেনি, বরং নিস্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে!তবে এই নিস্তব্ধতা হাজারো কথা বলে দিচ্ছে।

আজ প্রায় অনেকদিন পর সেই মানুষটিকে ও দেখেছে।অনেকদিন নয় অনেক বছর পর। মানুষটি খুব সুদর্শন দেখতে ঠিক রুপকথার রাজপুত্রের মতো!তাই হয়তো ওকে ঠিক মনে ধরেনি!কিন্তু ওতো তার মায়া কাটিয়ে এখনো উঠতে পারেনি,খুব কাছের একজন মনে করতো তাকে।

ও তখন সদ্য নাইনে উঠেছিলো, গরীব হওয়ার কারণে খুব একটা বেশি মানুষ কথা বলতো না। আবার যারা কথা বলতো তারা ঠিক বন্ধু ছিলো না। তাই এতো এতো ভিড়ের মাঝে ও সম্পুর্ণ একা ছিলো, তাই স্কুলে খুব একটা যেতো না। একদিন ক্লাস শেষে বের হয়ে বাসের জন্য অপেক্ষা করেছিলো তখন হঠাৎ ওড়নায় টান খায়। পাশে তাকিয়ে দেখে একটা পিচ্ছি ছেলে হাতে ফুল আর একটা চিঠি নিয়ে দাঁড়িয়ে,ছেলেটি ওর হাতে এগুলো গুজে চলে যায়। ও ভয়ে ফেলে দিতে চেয়েও ফেললো না,চিঠি খুলে দেখলো তাতে লিখা

“তোমার এতো সুন্দর মুখের গড়ন, আজকাল চাঁদ থেকেও বেশি তোমায় সুন্দর লাগে। আচল দিয়ে মুখখানি ঢেকে নাও তো!আমি চাইনা আমি ছাড়া অন্যকারো নজর লাগুক।আচ্ছা তুমি কি আমার প্রথম মেয়ে বন্ধু হবে?”

চিঠি পড়তেই আনমনে হাটছিলো, কখন রাস্তার মাঝখানে চলে এসেছিলো বুঝতে পারেনি, একটা বাস প্রায় যখন ওর কাছে চলে আসছিলো ঠিক তখনি কেউ একজন খুব শক্ত হাতে ওকে কিনারে নিয়ে আসে আর ধমক দিয়ে বলে

“দেখে চলতে পারোনা নাকি?যদি কিছু হয়ে যেতো!”

ও ছেলেটির চেহারা দেখতে পায়নি, ছেলেটি হেলমেট পরা ছিলো। তবে ছেলেটির কন্ঠস্বর ভুলেনি, ছেলেটি চলে যাওয়ার অনেকক্ষন পরও তাকিয়ে ছিলো সে দিকে।

এরপর প্রায়ই চিঠি পেতো আর মনে কেউ একজন ওকে ফলো করছে কিন্তু ঠিক খুজে পায়নি।প্রথম প্রথম চিঠির জবাব না দিলেও পরে দেয়া শুরু করলো। ওর কৈশরের প্রথম বন্ধু ছিলো সে,তাই তার প্রতি মায়া, আবেগ সবটাই বেশি ছিলো। চিঠিতে ছেলেটি প্রায়ই ভালোবাসার কথা বললেও ও তার জবাব দেয়নি। কারণ ভালোবাসা সম্পর্কে কোন ধারণা ছিলো না ওর। শুধু এটুকু বুঝতো মানুষটা খুব কাছের কেউ আর সবচেয়ে বিশ্বস্ত বন্ধু যাকে চোখ বুঝে ভরসা করা যায়। দেখতে দেখতে ও বড়ো হতে লাগলো, স্কুলের গন্ডি পেরিয়ে কলেজে পা রাখলো সাথে বন্ধুত্বটাও গাঢ় হতে লাগলো। এখন আর চিঠি আদানপ্রদান হয়না বরং ফোনে কথা হতো।

মানুষটি প্রতিদিন ওর খোজ নিতো,হঠাৎ একদিন সিদ্ধান্ত নিলো তার সাথে দেখা করবে। বেশ পরিপাটি হয়ে নির্দিষ্ট জায়াগায় বসে ছিলো,নিজের রান্না করস খাবার নিয়ে এসেছিলো তার জন্য।ঘন্টার পর ঘন্টা পেরিয়ে গেলো কিন্তু সে মানুষটি এলোনা। ও তারপরো অপেক্ষা করেছে, বারবার ফোন করেছিলো কিন্তু তা বন্ধ ছিলো। তবুও বসে ছিলো ও এই আশায় যে সে আসবে কিন্তু সে আসেনি। রাত হয়ে যাওয়ার পর ও কাঁদতে কাঁদতে বাসায় এসেছিলো, মারও খেয়েছিলো পালক মায়ের হাতে। কিন্তু তা বুকের কষ্ট থেকে বেশি ছিলো না। সেদিনের পর মানুষটি উধাও হয়ে গিয়েছিলো, আর কখনো ফোন করেনি তবে ও অপেক্ষা করে গেছে। কারণ কারো মায়ায় একবার জড়িয়ে গেলে সেটা আর ভুলা যায়না আর ও নিজের সবচেয়ে কাছের বন্ধুকে কি করে ভুলবে?

আজ ও তাকে দেখেছে, প্রথমবারের মতো দেখেছে তাও অন্যকারোর নামের আংটি নিজের অনামিকা আংগুলে পরে ছিলো। তার কন্ঠস্বর শুনে থমকে গিয়েছিলো, ভেবেছিলো মনের ভুল কিন্তু তার লাল হয়ে চোখজোড়া আর অপরাধি চাহনি দেখে ঠিক বুঝতে পেরেছে এই মানুষটিই সেই। আজ সে অন্যকারো, তাতে ও খুশি বেশ খুশি যে সে তার জীবনের সাথি খুজে পেয়েছে, কিন্তু তাহলে ওর সাথে যা ছিলো তা কি ছিলো? প্রতিদিন নিয়ম করে যে ভালোবাসি বলতো তার কি কোনই মানে ছিলো না?শুধুমাত্র আবেগের বশে বলতো? তবে কি সে শুধু ওর মোহে পড়েছিলো যা দুদিনেই শেষ হয়ে গিয়েছিলো!

তবে তাতে ওর বিন্দুমাত্র দুঃখ নেই, ও বরং খুশি তার জন্য। তবে একটা প্রশ্নের উত্তর ও চায়! সে আসবে বলে কেনো আসেনি সে?আর যদি হারিয়ে যাওয়ার ছিলো তবে বিদায় কেনো জানায় নি?কেনো আজ পর্যন্ত তাকে অপেক্ষা করতে হলো?এর জবাব চাই ওর।

চোখ গড়িয়ে দুফোটা জল গড়ালো গাল বেয়ে, ও এখনো নির্লিপ্ত ভাবে আকাশপানে চেয়ে আছে। পেছন থেকে হঠাৎ মৃদু আওয়াজে কেউ একজন ডেকে উঠলো

“রুশানি!”

কন্ঠ শুনে ও তিক্ত হাসি দিলো, যাকে নিয়ে ভাবছিলো সেই এখানে হাজির। ও তাকায়নি তার দিকে বরং আগের মতই দাঁড়িয়ে আছে। তার দিকে তাকানোর বিন্দুমাত্র ইচ্ছে ওর নেই। সেই কণ্ঠস্বর আরো প্রখর হয়ে বললো

“কথা বলবে না আমার সাথে?”

রুশি এবার আর চুপ থাকতে পারলো না, ধরা গলায় বললো

“দুলাভাই!আমাকে কিছু বলেছিলেন?”

রুশির কথার মাঝে লুকিয়ে থাকা অভিমান গুলো ঢের পেলো ইনান, সেই ছোট্ট রুশি অনেক বড় হয়ে গিয়েছে,সে শাড়ি পরতে শিখে গেছে! ও নির্লিপ্ত ভংগিতে বললো

“কেমন আছো?”

প্রত্যুত্তরে অপরপাশ থেকে কোন জবাব আসেনি, বরং রুশি আকাশের দিকে চেয়ে আছে।তাই প্রশ্ন করলো

“এখনো তারাদের সাথে কথা বলো?”

“আমি অন্যসবার মতো নই যে অভ্যস খুব তাড়াতাড়ি বদলাতে পারি,আমি আমার জীবনের কোন জিনিসই ছেড়ে দেইনা বরং আকড়ে ধরে বেঁচে থাকি”

বলেই রুশি চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো কিন্তু দরজার কাছে গিয়ে থেমে গেলো আর ধীর কন্ঠে বললো

“একটা প্রশ্ন অনেক দিন যাবৎ জমা হয়েছিলো, আজ সুযোগ পেয়ে বলেই ফেললাম। সেদিন যদি আসার ইচ্ছেই ছিলো না তবে আমায় কেনো আসতে বলেছিলেন?কেনো মিথ্যে সম্পর্কের নাটক করে গেছেন আমার সাথে?”

অপরপাশ থেকে কোন জবাব না পেয়ে রুশি তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলো তারপর বললো

“জবাব নেই তাইনা?থাকারও কথা না, আসলে আমি নিতান্তই টাইম পাস ছিলাম কিনা!প্রয়োজন ফুরাতেই অচেনা হয়ে গিয়েছিলাম। যাইহোক কংগ্রাচুলেশনস মি.ইনান চৌধুরী ফর ইউর ওয়েডিং। আশাকরি আমার সাথে কথা বলতে গিয়ে নিজের মুল্যবান সময় আর নষ্ট করবেন না”

রুশি সেখানে আর এক মুহুর্ত দাঁড়ায়নি বরং দ্রুত পায়ে নিচে নেমে চলে এসেছে। যেটা তার কোনদিন হওয়ার নয় সেটার প্রতি অযথা মায়া বাড়িয়ে কি লাভ?তার চেয়ে সেটাকে ছাড়িয়ে সামনে পা বাড়ানোই উত্তম। রুশি তাই করছে, আজকের পর থেকে এই মানুষটির কথা ও ভাববে না। মরে গেলেও ভাববে না,যার কাছে ওর মুল্য নেই তাকে ভেবে কি লাভ?এখন ওর জীবনে শুধু ও আর ওর বেবি আর কারো জায়গা নেই।কারো না!

রুশির যাওয়ার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ইনান, কিছু বলার নেই ওর। কি বলবে ও যে আসতে চেয়েও ও আসতে পারেনি!এটা আদোও বিশ্বাস যোগ্য?কি করে বলবে এই মেয়েটিকে যে সে তার টাইম পাস কখনোই ছিলো না বরং বেচে থাকার একটা কারণ ছিলো। কি করে বলবে তাকে যে ও তাকে অনেক ভালোবাসে, পুর্বের থেকেও অনেকগুন বেশি!কিন্তু তাহলে যে কিছুক্ষণ পুর্বে যে মেয়েটিকে বিয়ের স্বপ্ন দেখিয়েছে তাকে ঠকানো হবে, তার স্বপ্ন ভেংগে চুরমার হয়ে যাবে এটা ও কি করে মেনে নিবে। ওর ভালোবাসা তো ও পায়নি আর কখনো ও পাবে না, তাই সামু নাহয় তার ভালোবাসা পাক। কিন্তু এই মনকে কি করে বুঝাবে? এই মনের রক্তক্ষরণ যে কেউ দেখতে পায়না।

কত সহজে রুশি ওর দিকে সব দোষ ঠেলে চলে গেলো কিন্তু আদোও কি ওর দোষ ছিলো!জীবন তো এতোটা জটিল না হলেও পারতো।ওর আর রুশির কি ছোট্ট একটা সংসার হতে পারতো না?তবে আজ তো তা ভাবাও পাপ কারণ সে ওয়াদাবদ্ধ! অন্যকারো মন ভাংগা যে সম্ভব নয়, মন ভাংগার কষ্ট কতটুকু তা ওর থেকে ভালো কে জানে?ও নাহয় এই বিরোহে জলে পুড়ে শেষ হয়ে যাক, তাতে কি বাকি সবাই তো ভালো থাকবে। ও নাহয় ভালো থাকার অভিনয় করে যাবে!

______________________

সায়ান রেগে ফোনটা আছাড়ি মেরে ফেলে দিলো, ওর প্রচণ্ড রাগ হচ্ছে! আজ প্রায় দুইদিন ও রুশির খোজ নেয়নি কিন্তু আজ আর থাকতে না পেরে কেয়ারটেকারকে ফোন দিলো, ইচ্ছে ছিলো রুশিকে একনজর দেখবে কিন্তু যা শুনলো তাতে ওর মাথা গরম হয়ে গেছে।

রুশি তার সবকিছু নিয়ে খান বাড়িতে চলে গেছে, এমনকি মিসেস খান এসে ওকে নিয়ে গেছে। যাওয়ার সময় কেয়ারটেকার বলেও গেছে যে ও আর ফিরবে না ওইখানে। রুশি খান বাড়িতে আছে এটা শুনে যতোটা না মেজাজ খারাপ হচ্ছে তার থেকে বেশি খারাপ হচ্ছে যে রুশি ওকে জানানোর প্রয়োজন বোধ করলো না বরং একা একা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললো!স্বামী হিসেবে ওর কি জানার অধিকার নেই?সায়ান রাগে ক্ষোভে উঠে দাঁড়ালো তারপর সাহিলের দিকে তাকিয়ে বললো

“সাহিল গাড়ি বের করো! আমি খান বাড়িতে যাবো”

বলেই হনহন করে বেরিয়ে পড়লো,সাহিল চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে। আজ প্রায় পাঁচবছর পর ও সায়ানকে খান বাড়ির দিকে যাওয়ার কথা বলতে দেখেছে। ও কি স্বপ্ন দেখছে?হাউ ইজ দিস পসিবল!

#চলবে

#গুমোট_অনুভুতি
#লিখাঃ Liza Bhuiyan
#পর্ব_১৪

চৌধুরী বাড়িতে আজ খুশির আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে,সবার চোখে মুখে উচ্ছ্বাস প্রকাশ পাচ্ছে। আজ এতোবছর পর ঘরের ছেলে ঘরে ফিরেছে তাতে যেনো সবার খুশি আর ধরছে না,বংশের প্রথম সন্তান হওয়ায় সায়ানের প্রতি সবার ভালোবাসা একটু বেশিই! এই বাড়ির মালি, কেয়ারটেকার এমনকি রাঁধুনি পর্যন্ত সবাই ছোট সাহেব বলতে পাগল। সবার সাথেই সায়ানের সুসম্পর্ক ছিলো, সায়ান একটু চঞ্চল ছিলো বইকি তাই সবার সাথে সহজে মিশে যেতো! আনন্দ হই হুল্লোড়ে মেতে থাকতো খান বাড়ি।

কিন্তু হঠাৎ এতো কারো যেনো নজর লেগে যায়। হুট করেই সায়ান স্কুল থেকে ফেরার পথে গায়েব হয়ে যায় এরপর তার আর খোঁজ পাওয়া যায়নি। প্রায় মাস খানেক কেটে যাওয়ার পর সায়ানের হদিশ মিলে,মিসেস খান গিয়ে নিজে নিয়ে আসে সায়ানকে সেখান থেকে তবে আগের সায়ানকে নয় সম্পুর্ণ এক নতুন সায়ানকে। যে গম্ভীর, চুপচাপ, রাগি আর প্রচণ্ড বদমেজাজি। কারো সাথে কথা বলতো না সায়ান তখন শুধুমাত্র একা একা ঘরে থাকতো আর কি যেনো বিড়বিড় করতো। তবে অদ্ভুত ভাবে নিজের বাবাকে সহ্য করতে পারতো না সায়ান!যে বাবাকে নিজের আইডল মানতো, বড় হয়ে তার মতো হওয়ার স্বপ্ন দেখতো সেই বাবাই যেনো ওর দুচোখের বিষ ছিলো। কেমন রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতো তার দিকে। এভাবে প্রায় বছর খানেক কেটে এর মাঝে সায়ান আর ওর বাবা জামিল খানের সম্পর্কের কোন উন্নতি ঘটেনি। কিন্তু খান বাড়িতে আরো খারাপ কিছু হওয়া বাকি ছিলো তখনো।

একদিকে সায়ানের হঠাৎ পরিবর্তন হওয়া অন্যদিকে সায়ানের বাবা হঠাৎ করেই সুইসাইড করে মারা যান আর মারা যাওয়ার পুর্বে তিনি তার রেখে যাওয়া চিরকুটে স্ত্রী ও সন্তানদের কাছে ক্ষমা চান। খান বাড়িতে যেনো শোকের ছায়া নেমে আসে, তবে অদ্ভুত ভাবে বাবার মৃত্যুতে সায়ান একটুও কাঁদেনি শুধু স্থির হয়ে তাকিয়ে ছিলো তার দিকে!

সায়ানের মা সাবিনা খানের উপর সংসারের পুরো দায়িত্ব এসে পড়ে তাই সামু আর সায়ানকে দেখাশুনো করার সময় উনি পেতেন না, দিনদিন সায়ানের অবনতি ঘটে তাই সায়ানকে ইনানের সাথে হোস্টেলে পাঠিয়ে দেয়, তবে তাতে বেশ ভালোই হয়েছিলো। সায়ান পুর্বের থেকে অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছিলো, মায়ের সাথে রিতিমতো যোগাযোগ হতো আর সামু তো ওর জান ছিলো।

হঠাৎ করেই একদিন সায়ান বাড়িতে চন্দ্রিকা একটা মেয়েকে নিয়ে আসে সাথে করে আর বলে ও যখন চাকরি পাবে তখন মেয়েটিকে বিয়ে করবে। সায়ানের মা বিষয়টিকে প্রথমে ওতোটা পাত্তা না দিলেও কোন এক কারণে তিনি চন্দ্রিকা পছন্দ করতে পারলেন না।তা সায়ান ঢের বুঝতে পেরেছিলো তাই নিজের মাকে শান্ত মাথায় বলেছিলো

“মাম্মা আমি জানি তুমি চন্দ্রিকে পছন্দ করো না, কিন্তু এই কারণেই আমি আজ এখানে তোমার সামনে জীবিত অবস্থায় আছি। আমি তাকে ওয়াদা করেছি সারাজীবন তার পাশে থাকবো আর এই ওয়াদা আমার পক্ষে ভাংগা সম্ভব নয়!আশাকরি তুমি বুঝতে পারছো”

মিসেস খান ভালোই বুঝতে পারলো যে এই মেয়ে তার ছেলের মাথা চিবিয়ে খেয়েছে, এখন তাকে যাই বলুক সায়ানের বোধগম্য হবে না। তিনি অন্য উপায়ের কথা ভাবলেন আর তাই তিনি কিছু গুণ্ডা হায়ার করলেন যাতে চন্দ্রিকা কলেজ থেকে আসার পথে ভয় দেখায় এবং চন্দ্রিকা নিজের থেকে সায়ানের জীবন থেকে চলে যায়।

তবে কি থেকে কি হয়ে গেলো তিনি ঠিক ঠাউরে উঠলেন না। সেই গুণ্ডাগুলো চন্দ্রিকাকে ভয় দেখানোর বদলে তাকে গুরুতর ভাবে আঘাত করে আর চন্দ্রিকা অলমোস্ট মুমুর্ষ্য অবস্থায় ছিলো আর তখন সায়ান খোঁজ নিয়ে জানতে পারে সেই গুন্ডাগুলো ওর নিজের মায়ের হায়ার করা, ও বিশ্বাসই করতে পারেনি যে ওর নিজের অন্যের জীবন নেয়ার মতো জঘন্য কাজ করতে চাইবে। মিসেস খান বলেছিলো যে তিনি ইচ্ছে করে এমনটি করননি শুধু মাত্র ভয় দেখাতে চেয়েছিলো কিন্তু সবচেয়ে বড় কথা হলো সায়ান নিজের চোখ আর কানকে কি করে অবিশ্বাস করবে। এরপর থেকে সায়ান খান বাড়ির সাথে সকল সম্পর্ক ছিন্ন করে দেয় আর নিজের কিনা বাড়িতে উঠে যদিও চন্দ্রিকার জন্য আলাদা থাকার ব্যাবস্থা করেছিলো। সায়ান নিজের বাবার কোম্পানিতে বসে নি বরং নিজের উদ্যোগে কোম্পানি শুরু করে ছিলো যা মাত্র পাঁচ বছরেই অনেক পরিচিতি লাভ করেছে আর এখন দেশের টপ কোম্পানির একটা!

সেই থেকে খান বাড়িতে সায়ানের পদাচরণ হয়নি। আজ প্রায় অনেক বছর পর সায়ান আবার এই বাড়িতে এসেছে এটা ভাবতেই যেনো সবাই প্রচণ্ড খুশি! সায়ানের পছন্দের খাবার ইতোমধ্যে কড়াইয়ে চড়ানো হয়ে গেছে, মেইড সার্ভেন্টরা সায়নকে নিয়ে ফিসফিস করেই যাচ্ছে। সেদিকে সায়ানের বিন্দুমাত্র মাথা নেই, ও আশেপাশে তাকিয়ে খুজে যাচ্ছে একজনকে!

এবাড়িতে আসার পরই জানতে পেরেছে কাল সামু আর ইনানের এংগেজমেন্ট কম্পলিট হয়েছে কিন্তু ও কোম্পানির কাজে ব্যস্ত থাকায় ফোন একদমি চেক করেনি আর তাই এই খবরও জানা হয়নি। নিজের বোনের এংগেজমেন্টে অংশগ্রহন করতে না পেরে ও বেশ লজ্জিত। সামুতো এক দফা রাগ ঝেড়ে গেলো ওর উপর কিন্তু অনেকদিন পর এই বাড়িতে এসেছে বলে তা ক্ষনিকের মাঝেই পানি হয়ে গেলো। ভাই-বোন অনেকক্ষণ ধরে বসে বসে গল্প করেছে, সায়ান বারবার এদিক ওইদিক তাকিয়েছে কিন্তু যার জন্য এখানে এসেছে তার দেখা মিলে নি।

সায়ানের এই চাহনি দেখে মিসেস খান বেশ খুশি! সে জানতো রুশিকে যদি এই বাড়িতে নিয়ে আসা হয় তবে সায়ান এ বাড়িতে আসবেই। আর যাইহোক তার ছেলের সাথে তার নাড়িরটান আছে, ছেলে মুখে কিছু না বললেও উনি সবকিছু বুঝে। ছেলে তার খাটি হিরের মুল্য বুঝতে পেরেও মিথ্যে মরীচিকার পেছনে দৌড়াচ্ছে তবে আর যাইহোক শুধুমাত্র ওয়াদা করেছে বলে সংসার করতে হবে এমনটা কোথায় আছে?সংসার করতে হলে ভালোবাসার প্রয়োজন, ভরসার প্রয়োজন! যা উনি নিজের ছেলের চোখে দেখেছে রুশানি নামক মেয়েটির জন্য যদিও তার ছেলে স্বিকার করতে চাইছেনা! কিন্তু তাকে যে আজ নয়তো কাল স্বীকার করতেই হবে কারণ মানুষ আর যাইহোক ভালোবাসার কষ্ট সহ্য করতে পারে না, তাই ভালোবাসা পাওয়ার জন্য ওয়াদা ছুটে পালাবে জানালা দিয়ে। বিয়ে নামক পবিত্র বন্ধনের জোরই এটা যে দুটো মানুষকে তিনকবুল সাথেসাথেই একসুত্রে বেঁধে দেয়,সেখানে তৃতীয় ব্যাক্তির কোন জায়গা থাকে না। তাই চন্দ্রিকাকে আজ নয়তো কাল সরে দাঁড়াতে হবেই। আর যদি ওনার ছেলে নিতান্তই অবুঝ হয় তবে রুশির সাথে থাকার অধিকার সে চিরকালের মতো হারাবে সাথে হয়তো নিজের সন্তানকেও।

সত্যি বলতে উনি খুব খুশি যে ঘরের ছেলে ঘরে ফিরেছে!তাই ছেলের দিকে এগিয়ে গেলেন, উনি হয়তো ওইদিন বেশিই বলে ফেলেছিলো যে

“এ বাড়িতে হয়তো চন্দ্রিকা থাকবে নয়তো আমি”

তাইতো তার ছেলে ওই মেয়েটিকে নিয়ে এ বাড়ি ছেড়ে দিয়েছিলো। রাগের বসে এমন ভুল স্টেপ না নিলেও পারতো, তাতে হয়তো তার ছেলের সাথে সম্পর্ক ঠিক আগের মতো থাকতো। উনি সায়ানের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো

“কাউকে খুজছো বাবা!”

সায়ান অপর দিকে তাকিয়ে মুখ গোমরা করে বললো

“নাহ”

তাই মিসেস খান ছেলের মতিগতি বুঝতে পারলেন যে যদিও না বলেছে কিন্তু ছেলে ঠিকই কান খাড়া করে আছে উত্তর শোনার জন্য। তাই উনি আর দেরি না করে বলেই ফেললেন

“যাকে খুঁজছ সে দোতলার দ্বিতীয় কামরায় আছে যেটা পুর্বে তোমার রুম ছিলো”

বলে উনি আর দাঁড়ালেন না বরং অন্যদিকে হাটা শুরু করলেন। এদিকে সায়ান উত্তর শুনা মাত্রই উঠে দাঁড়াল আর দ্রুত পায়ে সিঁড়ির দিকে হাটা শুরু করলো। ছেলের এমন কান্ড দেখে সাবিনা খান হাসলেন, ছেলে তার ভালোই জব্দ হয়েছে। কথায় আছে না “প্রেম যে কাঁঠালের আঠা লাগলে পরে ছাড়ে না”

আর তাছাড়া সব ছেলেদের স্বভাবই হচ্ছে তারা সেসব নারীর প্রতি আকৃষ্ট হবে যারা তাদের পাত্তা দিবে না, তাদের এটেনশন পাওয়ার চেষ্টা করবে না। তাদেরই তারা ভালোবেসে ফেলে, তবে যারা ভালোবাসতে পারেনা তারা আবার হাসিল করার পরেই প্রয়োজন ফুরিয়ে যায়। তবে তার ছেলে যে রুশিকে হাসিল করতে চায়না তা উনি বেশ বুঝতে পারছেন বরং সে রুশির এটেনশন পেতে চায়, তাকে নিজের কাছে রাখতে আর তার খেয়াল রাখতে চায় অর্থাৎ নিজের অজান্তেই তাকে ভালোবেসে ফেলেছে।

সায়ানের বাবাও এমন ছিলো,এককথায় চোখে হারাতো তাকে কিন্তু হুট করেই তাকে একা করে দিয়ে চলে গেছেন!কথাটা ভাবতেই তার চোখজোড়া ভিজে আসলো, মাঝেমাঝে বড্ড অভিমান হয় তারউপর! কারণ দিনশেষে কারো বুকে মাথা রাখার সুযোগ হয়না আর, তাকে আজ কতোবছর দেখেনা! এই চোখ যে বড় তৃষ্ণার্ত তাকে দেখার জন্য।সত্যি বলতে ভালোবাসার মানুষ হারিয়ে গেলে কেউ মরে যায়না বরং সে বেঁচে থাকে কিন্তু বেঁচে থাকার ইচ্ছেটা থাকে না। সেও তো বেঁচে আছে তবে জীবন্ত লাশ হয়ে! মন যেনো আনমনে আওড়ায়

“তাহারেই পড়ে মনে
ভুলিতে পারিনা কোন মতে”

#চলবে

#গুমোট_অনুভুতি
#লিখাঃ Liza Bhuiyan
#পর্ব_১৫

সায়ান দোতলার দ্বিতীয় রুমের সামনে দাঁড়িয়ে, রুমটি সম্পুর্ণ অন্ধকার তা বাইরে থেকে বুঝা যাচ্ছে। রুমের দরজা ভিড়ানো, এই বিদঘুটে অন্ধকার রুমে রুশি আদোও আছে কিনা তা নিয়ে সন্দিহান সায়ান। ও দরজা ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করলো,আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে দরজার এপাশটা এতো বিদঘুটে অন্ধকার অথচ বারান্দার পাশটায় কি সুন্দর জোছনার আলো!আজ পূর্ণিমা নয় তবে আকাশের ওই মাঝারি আকারের চাঁদটি যেন উজ্জ্বল আভা ছড়াচ্ছে। সায়ান ধীর পায়ে সেদিকে এগিয়ে গেলো, মনের মাঝে কোথাও একটা জোর দিয়ে কেউ বলে উঠছে

“যাকে খুজছিস সে এখানেই আছে, তোর খুব নিকটে”

সায়ান নিশ্বাস ভারী হতে শুরু করলো, যখনই রুশি নামটা মনে পড়ে তখনি কেমন এক অদ্ভুত অনুভুতি কাজ করে ওর মাঝে। তাকে এক নজর দেখার প্রবল ইচ্ছে জাগে যা চেয়েও মন থেকে সরাতে পারেনা। ছোট্ট একটা নিশ্বাস ছাড়লো সায়ান, এই অনুভুতি বড্ড জটিল জিনিস! কখন কার প্রতি কেমন অনুভুতি কাজ করে যা বুঝা যায় না আর তার কোন নাম দেয়া যায়। শুধু অনুভব করা যায় তাকে আমার চাই যেকোন মুল্যেই চাই, আচ্ছা রুশিকে কি ওর সত্যিই চাই?

সায়ান নিজের চুল চেপে ধরলো, মনে হচ্ছে আর কয়দিন এভাবে চলতে থাকলে ও পাগল হয়ে যাবে। এই নারী জিনিসটা খুব ভয়ংকর! একবার মাথায় চেপে বসলে আর শান্তি দেয়না।ওর মাথায় রুশি আর মনে চন্দ্রিকা চেপে বসে আছে নাকি মাথায় চন্দ্রিকা আর মনে রুশি সেটাই বুঝতে পারছে না!

মাথার চুল ছেড়ে সামনে তাকাতেই একজন নারীকে দেখতে পেলো,লম্বা চুলগুলো বাতাসের তালে তালে দুলছে। চাঁদের আলোয় তার মুখখানি ঝলঝল করছে, একটা হলদে ভাব চেহারায় ফুটে উঠেছে। সায়ান সেদিকে এগিয়ে গেলো ধীর পায়ে, রুশির ঠিক কিছুটা দূরে থামলো তারপর বুঝতে ওই উজ্জ্বল মুখখানি বেয়ে দুফোটা জল গড়াচ্ছে।

রুশি কি তাহলে কাঁদছে! কিন্তু কেনো?ও কিছুটা ইতস্তত বোধ করলো তারপর রুশির কাঁধে হাত রাখলো! রুশি চমকে উঠে দ্রুত নিজের চোখের পানি মুছতে লাগলো তা দেখে সায়ান প্রশ্ন করলো

“তুমি ঠিক আছো?”

কথাটা রুশি খুব ভালোভাবে নিলো না, মুহুর্তেই ওর চেহারার রঙ বদলে গেলো। সায়ানের হাত ঝাড়া মেরে সরিয়ে বললো

“আমার ঠিক থাকা বা না থাকাতে কার কি যায় আসে?”

রুশির কথায় তীব্র অভিমান প্রকাশ পেলো যা দেখে সায়ান মনে মনে খুশি হলো, কারণ কাছের মানুষের প্রতিই মানুষের অভিমান জন্মায়! তবে কি ওর রুশির কাছের কেউ?সায়ান মুচকি হেসে আবারও কাঁধে হাত রাখলো, রুশি সরাতে চেয়েও সায়ানের সাথে পেরে উঠলো তাই রেগে গিয়ে হাল ছেড়ে দিলো! সায়ান নিঃশ্বব্দে হেসে বললো

“যখন জানো পারবে না আমার সাথে তখন এতো জিদ ধরে লড়তে আসো কেনো?আর এখন ঠান্ডা লাগতেছে আর তুমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছো? ঠান্ডা লাগবে তো! চলো ভিতরে চলো”

সায়ানের আচমকা এতো কেয়ারিং দেখে রুশি বেশ অবাক হলো! তার ঠান্ডা লাগলো বা না লাগলো তাতে সায়ানের কি যায় আসে?নিশ্চিয় দয়া দেখাতে আসছে!আমার কারো দয়া চাইনা। রুশি কিছুটা তাচ্ছিল্যের স্বরে বললো

“বাই এনি চান্স দ্যি গ্রেট সায়ান জামিল খান আমার কেয়ার করছে? হাহ আই উইল বি ফ্লেটারড! ওহ আমি তো ভুলেই গিয়েছি আমার সন্তানের বাবা তো আপনি! তাই হয়তো নিজের সন্তানের জন্য চিন্তা হচ্ছে আপনার। ডোন্ট ওয়ারি বাচ্চাটা আমারো আর আমার মাঝেই বড় হচ্ছে। আপনার থেকে চিন্তাটা আমারই বেশি!আমার সন্তান হিসেবে এতটুকু ঠান্ডা সহ্য করার ক্ষমতা ওর আছে ”

রুশির কথায় সায়ান দমে গেলো আর কাঁধ থেকে হাত সরিয়ে নিলো, ও সত্যিই রুশির কথা ভেবেই কথাগুলো বলেছে। রুশি হাল্কা কাপড় পরে আছে আর যা শীত পড়েছে তাতে ঠান্ডা লাগার চান্স অনেক বেশি।তারউপর রুশি কাঁদছিলো তাই ভাবলো ওকে ওখান থেকে নিয়ে আসবে কিন্তু রুশির কথা শুনে ওর মনটা খারাপ হয়ে গেলো, ও তাড়াতাড়ি রুশিকে এক্সপ্লেইন করতে চাইলো

“তুমি যা ভাবছো ঠিক তা নয়, আমি সত্যিই তোমার…”

“থাক মি.সায়ান আমাকে আপনি আপনার দয়া আপনার কাছেই রাখুন, আমাকে কষ্ট করে তা দেখাতে হবে না। আপনি এখানে নিজের সময় নষ্ট করে আমার প্রতি দয়া দেখাচ্ছেন সেটা জানলে কেউ একজন বড্ড অখুশি হবে।আমি দ্বিতীয়বার কারো থাপ্পড় খেতে চাইনা আর না আপনাদের মাঝে তৃতীয় ব্যাক্তি হয়ে থাকবো!”

রুশি কথাগুলো শেষ করে রুমে এসে লাইট জালিয়ে দিলো তারপর সায়ানের দিকে তাকিয়ে বললো

“কারো রুমে আসতে হলে দরজায় নক করতে হয় তা কি কেউ আপনাকে শেখায়নি?যদিও এই ঘর বাড়ি সবই আপনাদের তবুও যেহেতু দয়া করে থাকতে দিয়েছেন তাই এতোটুকু প্রাইভেসি তো আশাই করতে পারি তাইনা?”

রুশির কথায় সায়ানের মুখের মাঝে ঝুলে থাকা হাসি নিমিষেই হারিয়ে গেলো, রুশি ঠান্ডা মাথায় ওকে অপমান করেছে এটা ও বেশ বুঝতে পারলো কিন্তু ও রিয়াক্ট করলো না। রুশি যা বলছে তার সবই সঠিক, ও তো সত্যিই ব্যার্থ রুশি যা চায় তা দিতে কিন্তু প্রচণ্ড খারাপ লাগা কাজ করছে।

রুশি সায়ানের মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারলো সায়ান কথাগুলো ভালো ভাবে নেয়নি। ওকি একটু বেশি বলে ফেলেছে? কিন্তু ওর তো সবটা ক্লিয়ার করার দরকার ছিলো যে ও তাদের মাঝে ইচ্ছে করে আসেনি আর না তাদের মাঝে থাকবে। বিয়ে হয়েছে বলেই যে নিজের আত্মসম্মানের জলাঞ্জলি দিয়ে সায়ানের গলায় ঝুলে থাকবে এমন মেয়ে ও নয়। আত্মসম্মান খোয়ানোর চেয়ে ওর কাছে মৃত্যু শ্রেয়! তাই মুখের ভাব ভংগি পরিবর্তন না করেই বললো

“যা বলতে এসেছেন তা বললে খুশি হবো!”

সায়ান রুশির দিকে তাকালো, এই মুহুর্তে রুশির মাথায় কি চলছে তা ওর বোধগম্য হচ্ছে না তাই ও শান্ত স্বরে বললো

“ফার্মহাউজ থেকে এখানে কেনো শিফট হয়েছো? আমি তো সেই দিনই না করে দিয়েছি মিসেস খানকে তবুও তুমি তার সাথে এখানে এসেছো কেনো?”

“ওহ তো আজ তিনদিন পরে মনে হলো আমি এখানে কেনো এসেছি তা জিজ্ঞেস করা দরকার আপনার?উপস আপনি তো জানেনই না যে এখানে আমি তিনদিন আগে এসেছি!সে যাইহোক আমার মনে হলো আপনার ওইখানে থাকলে আপনার প্রেমিকা আবারও এসে আমাকে মারতে চাইতে পারে কিংবা আমার সন্তানের কোন ক্ষতি করতে পারে তাই এখানে চলে আসা আমার কাছে সেফ মনে হলো”

“চন্দ্রিকা এমন কাজ করবে না, অন্তত কোন নিষ্পাপ প্রাণের ক্ষতি করবে না”

“আপনি তাকে ভালোবাসেন তাই আপনার তার প্রতি অগাধ বিশ্বাস কিন্তু সে আমার কেউ না তাই বিশ্বাস করার কোন কারণ নেই। মানুষ জেলাসির বসে অনেক কিছুই করতে পারে আর সেটার প্রভাব আমার বাচ্চার উপর পড়ুক আমি তা কখনোই চাইনা। আমি এখন থেকে এখানেই থাকবো!”

“আমি চাইনা তুমি এখানে থাকো,এই খান বাড়িতে থাকার কোন দরকার নেই তোমার। আমার বউকে রাখার মতো জায়গা আমার আছে”

রুশি সায়ান কথা শুনে বেশ অবাক হলো, তার বেশ তাচ্ছিল্য নিয়ে বললো

“বউ!হাহ ভালোই মজা করতে জানেন দেখছি। শুনুন আপনার এই বাড়ির সাথে যা সমস্যা সেটা নিতান্তই আপনার ব্যাক্তিগত ব্যাপার তা নিয়ে আমার মাথা ব্যাথা নেই কিন্তু আমি কোথায় থাকবো সেটা আমার ব্যাক্তিগত ব্যাপার সেটাতে ইন্টারফেয়ার করার অধিকার আমি আপনাকে দেইনি।এখানে কিছু ভালো মানুষ আছে যাদের ছায়াতলে আমার সন্তান ভালো কিছু শিখবে। এনিওয়ে আপনি এখন আসতে পারেন! এসব ফালতু কথাবার্তায় সময় নষ্ট করার মতো অঢেন সময় আপনার থাকলেও আমার নেই”

রুশির এমন কথায় সায়ানের পিণ্ডি জ্বলে উঠলো, এই মেয়ে সেই তখন থেকে ওকে অপমান করে যাচ্ছে। আর ও মিথ্যে কি বলেছে ও কি ওর বউ না নাকি?নাকি ওর বউ হওয়া লজ্জার বিষয়?আর এটা ফাউল কথা! সায়ান নিজের হাত মুষ্টিবদ্ধ করে মেকি হেসে বললো

“আসলে কি বলোতো আমি আমার বউ বাচ্চাকে ছেড়ে যেতে চাইনা, তাই ভাবছি আমিও এখানে থাকবো। আর বিয়ের পর স্বামী স্ত্রী তো একরুমেই থাকে তাই আমিও এই রুমেই থাকছি”

“আরেহ মানে কি?এখানে থাকবেন মানে?আপনার কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে?”

সায়ান আর কিছু না বলে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়লো, এই মুহুর্তে ওর মাথা ঠান্ডা করা প্রয়োজন। এই মেয়ে আস্ত ধানিলংকা! একে দেখে বুঝাই যায়না এতো সুন্দর করে সুন্দর ভাষায় কেউ অপমান করতে পারে! উফ রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে ওর।

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে