গানের ওপারে তুমি পর্ব-১১

0
331

“গানের ওপারে তুমি”
পর্ব- ১১
(নূর নাফিসা)
.
.
“আমাকে মনে আছে আপনার? উম্মে ইয়ানাত বলছি। হ্যাপি বার্থডে, মিহির খাঁন। জীবনের অগ্রগতিতে শুভকামনা।”
কিন্তু এতোদিন পর সে কোত্থেকে? হঠাৎ তাকে স্মরণ করলো কি মনে করে? ইয়ানাতের ঠিকানাও দেয়া নেই। যা আছে, কেক শপের ঠিকানাটাই। ইনবক্সেও কি নক করেছে তবে? মিহির সাথে সাথেই ফোনে ইনবক্স চেক করে নিলো। কোনো টেক্সট আসেনি ইয়ানাতের কাছ থেকে। একটা মুহূর্ত ইয়ানাতই ভাবনা জুড়ে বসে পড়লো। আগের সেই প্রেমানুভূতিটা অনুভব করে না ঠিক, তবে তার দাম্ভিক আচরণের জন্য একটা বিষাদ রয়ে গেছে মনে। মেয়েটা তাকে প্রত্যক্ষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশের সুযোগটাও দিলো না, অথচ গিফট দেওয়ার সুযোগটা নিয়ে রেখেছে ঠিকঠাক। বাড়ির ঠিকানাটাও সংরক্ষণে রেখে নিয়েছে। এটা রিসিভ করা কি তার উচিত হয়েছে? ফিরিয়ে দেওয়াটাই বোধহয় উত্তম হতো। কোনো দাম্ভিকতার উপহার সে কেন রাখবে? কিন্তু সে তো ডেলিভারি বয়ের কাছ থেকে নেওয়ার সময় তখন জানতো না, ইয়ানাতও গিফট পাঠাতে পারে! তার ধারণা ছিলো বন্ধুবান্ধব কিংবা অফিসের কেউ পাঠিয়েছে। ইয়ানাতের গিফট রিসিভ করে মনে মনে কিছুটা ডিপ্রেশনে ভুগতে লাগলো মিহির। পরক্ষণে নাস্তা করার জন্য ডাকলো জিনিয়া তাবাসসুম। ইয়ানাতের ভাবনায় বিরতি নিয়ে মায়ের ডাকে সাড়া দিতে গেলো সে। কিন্তু ডাইনিং টেবিলে এসে রিপ্তিকে দেখছে না। প্লেটে খাবার নিতে নিতে পাশে বসা মাকে বললো,
“রিপ্তি কোথায়? নাস্তা করে ফেলেছে?”
“না। কেক বানাতে লেগেছে সকালে ঘুম থেকে উঠেই। ডেকে এলাম, আসার খবরই নেই।”
মিহির এখানে থেকেই ডাকতে লাগলো,
“রিপ্তি?”
“আসছি। তোমরা খাও।”
“এখন এসো।”
“আমার কাজ আছে।”
“রাখো ওই কাজ। এদিকে এসো। রিপ্তি?”
“আরে কি!”
“এসো বলছি!”
ঘনঘন ডাকে কাজে বাঁধা পেয়ে কিঞ্চিৎ বিরক্তি নিয়েই এলো রিপ্তি। প্লেট সামনে নিতে নিতে বসলো চেয়ারে। মিহির বললো,
“তোমাকে না নিষেধ করলাম এসব ঝামেলা করতে? এখন খুব সুস্থ হয়ে গেছো?”
“এমন কেন করো? আমার কি ইচ্ছে করে না কিছু করতে?”
“এখন এসবের প্রয়োজন দেখছি না তো কোনো। দেহ-মনের সুস্থতা আগে।”
রিপ্তির মুখের মলিনতা দেখে জিনিয়া তাবাসসুম আবার তার সাপোর্ট করলো,
“থাক না। করুক। তার যা কিছুতে ভালো লাগে, তা-ই করুক। মনটা ভালো থাকবে। আনন্দ নিয়ে চলাফেরা করলে শরীরটাও ভালো লাগবে।”
কিছুই বললো না মিহির। তিনজনেই নাস্তায় মনযোগ দেয়। সবজি দিয়ে ঝটপট একটা রুটি খেয়েই উঠে যাচ্ছিলো রিপ্তি। ওদিকে চুলায় তার কেক বসানো। মিহির বাম হাতে তাকে ধরে ফেলে আবার টেনে বসিয়ে দিলো। আরেকটা রুটি আর সিদ্ধ ডিম প্লেটে তুলে দিলো ডান হাতে।
“সবটুকু খেয়ে উঠবে। তার আগে একদম নড়া যাবে না।”
“আমার পেট ভরে গেছে। এর বেশি খেলেই বমি চলে আসবে।”
“খাওয়ার পর ট্যাবলেট খেয়ে নিবে। কিছু হবে না। চুপচাপ খাও।”
না চাইলেও বাধ্য রিপ্তি। রুচিতে না টানায় এবারেরটুকু ধীরে ধীরেই খেতে হলো। পরপর মায়ের প্লেটেও একটা ডিম তুলে দিলো মিহির। জিনিয়া তাবাসসুম সাথে সাথেই হাত ধরে বললো,
“আমি খাবো না। তুই খা। যতটুকু নিয়েছি, যথেষ্ট। বেশি খেলে প্রেশার বেড়ে যাবে।”
“কিছু হবে না। খাও। না খেয়ে খেয়েই আরও দুর্বল হয়ে পড়ছো।”
“আরে ছেলে! পাগল নাকি! বলছি যে প্রেশার বেড়ে যাবে। সুস্থ আছি, ভালো লাগছে না?”
ডিমের অর্ধেকটা রেখে বাকিটা ছেলের প্লেটে দিয়ে দিলেন তিনি। আর তা দেখে রিপ্তিও যেন অনুপ্রেরণামূলক শান্তি পেয়ে গেছে। নিজের প্লেটের অর্ধেক ডিম টুপ করে মিহিরের প্লেটে দিয়ে দিলো তৎক্ষনাৎ। সাথে নিজের প্লেট হাতে নিয়ে বিপরীত পাশ দিয়ে উঠে গেলো হাসতে হাসতে। মিহির শক্ত চোখে তাকাতেই সে বললো,
“স্যরি, স্যার। সম্ভব না খাওয়া।”
“আচার মেখে নাও সাথে। তবুও খাও।”
“দুপুরে গরম ভাত দিয়ে আচার মেখে খাবো। এখন কোনোভাবেই সম্ভব না।”
মিহিরের শান্ত গলার মিঠা কথায়ও কাজ হলো না। নিজের ভাগেরটা তো খেয়েই নিয়েছে। তাদের বাকিটাও তাকেই খেতে হলো। রিপ্তি খাওয়া শেষ করেই আবার ব্যস্ত হলো চুলোর পাশে। কিন্তু সময় যখন খারাপ যায় সবদিকেই যায়! ছোট ছোট দুই প্যানে বসিয়েছিলো। এক কেক সুন্দর ফুলে উঠলো, আরেকটা কেমন যেন বুদবুদ ছুটে নেতিয়ে এবড়োখেবড়ো হয়ে রইলো! এতোটা শক্ত হয়েছে, ছুরির কোপেও বোধহয় হার মানবে না। এখন এইটুকু একটা কেক-য়ে কি হবে তার? কিভাবে দিবে মিহিরের সামনে? ধ্যাৎ! নিরুপায় রিপ্তি একটাকেই সজ্জিত করতে প্রস্তুত হলো। নাস্তার পর মিহিরও এলো কিচেনে।
“কি করছো?”
“অক্ষম হাতকে সক্ষম করার চেষ্টা। ফলাফল অক্ষমই হলো।”
শক্ত কেকটা সামনে ধরে দেখালো রিপ্তি। হাসতে গিয়েও হাসলো না মিহির। অনর্থক একটু প্রশংসা ঢেলে দেওয়ার চেষ্টা করলো।
“ভালোই তো হয়েছে।”
“মজা নিচ্ছো? খেয়ে দেখো দেখি, কেমন ভালো!”
মিহির কেকটা হাতে নিয়ে বললো,
“ওজন তো দারুণ! পোড়ামাটির মতো ভাব। খেতে পারবো তো?”
“হিহিহি… দেখো ট্রাই করে, কেমন মজবুত তোমার দাত!”
শক্ত কেকে কামড় দিলো মিহির। অল্পই দিয়েছে। মুখে নিয়ে চিবাতে চিবাতে বললো,
“চুইংগাম চিবাচ্ছি মনে হচ্ছে। রোহানকে কল করলে না, আসার জন্য? আমরা বাসাতেই একটু মজা করতাম।”
“কেকটা সুন্দর করে বানাতে পারলে না করতাম! তারিকুল ভাইয়াকে দিয়ে বেলুনও এনেছিলাম ফুলানোর জন্য। সুন্দর না হওয়ায় ভালোই লাগছে না এখন।”
মিহির পাশেই প্যাকেটে বেলুন দেখে হাতে নিতে নিতে বললো,
“এগুলো?”
“হুম।”
মিহির বেলুন ফুলিয়ে রিপ্তির মাথায় ফাটিয়ে দিলো। রিপ্তি হাস্যোজ্জ্বল মুখে চোখ রাঙানোর চেষ্টা করে বললো,
“তোমার বার্থডে, তোমার মাথায় ফাটাও। আমার মাথায় কেন দাও?”
“তোমার হাসব্যান্ডের বার্থডে যে। মাকে বলে দেখি, রোহান আর বাবা-মাকে দুপুরে লাঞ্চ করার জন্য বলি।”
“আল্লাহ! আগে কেকটা কেটে পরে আসতে বলো। আব্বু আম্মু এই কেক দেখে হাসবে।”
“খেলাম তো তোমার কেক।”
“ওটা না। এই যে, আরেকটা ভালো হয়েছে তো।”
ঢাকনা খুলে ভালো কেকটা দেখাতেই মিহির চিমটি দিয়ে নিতে গেলো। রিপ্তি সরিয়ে নিয়ে বললো,
“এখন না। আমি এটাকে সাজিয়ে নেই আগে। দুইটাই সুন্দর হলে কেকটাকে দোতলা করতাম।”
“ওকে, সাজাও দেখি।”
ওদিকে জিনিয়া তাবাসসুম টিভির সামনে বসে থেকে তাকে ডেকে বলছে,
“মিহির, তোর ফোন বাজে।”
“বাজতে থাকুক। আজ সারাদিনই বাজবে। কিন্তু রিপ্তির কেকটা কি আর সারাদিন ব্যাপি সাজবে?”
গাল ভরে হেসে রিপ্তি কেক সজ্জিত করতে শুরু করলো। পাশে থেকে থেকে পরামর্শ দিচ্ছে মিহির।
“শেপটা হার্ট শেপ করো।”
“ইশ!”
“ইশ কি আবার? ভালোবেসে করছো না? একটু ভালোবাসা মাখাও। দাও, আমি শেপটা কেটে দেই।”
মিহির কেক কেটে শেপটা করে দিলো। রিপ্তি ক্রিম মেখে সাজিয়েছে তার উপর। ডালযুক্ত গোলাপও এঁকেছে, ক্রিমের মাধ্যমেও ছোট ছোট লাভ ফুটিয়ে তুলেছে। নামও লিখেছে। তার আঁকাআঁকি দেখে মিহির বললো,
“আর্ট তো ভালোই পারো। পারফেক্ট ফ্যাশন ডিজাইনার হচ্ছো তবে, বুঝাই যায়।”
“আসলেই সুন্দর হয়েছে? নাকি মজা করছো?”
“উহুম, সত্যিই সুন্দর হয়েছে। চলো, কাটি তবে।”
রিপ্তির চেষ্টাটুকুর বিপরীতে যেন ব্যর্থতা উপলব্ধি না হয়, সেজন্য নিজের উৎসুকভাবটা পরিপূর্ণভাবেই প্রকাশ করলো মিহির। আগ্রহ এবং আনন্দ প্রকাশে আরও আনন্দিত করে তুলছে রিপ্তিকে। এতোটা গুরুত্ব দেওয়ায় ভালোই লাগলো তার। খুশিতে চোখ ভিজে এসেছে কিছুটা। তা লক্ষ্য করে মিহির বললো,
“সে কি! কাঁদছো কেন? কাটবো না? শোকেসে সাজিয়ে রাখবো তবে?”
রিপ্তির মুখের হাসি আরও বেড়ে উঠলো। ওড়নায় দুই চোখ চেপে খিলখিল করে হেসে জবাব দিলো,
“তোমার বার্থডে সহ তবে তোমাকেও তুলে রেখে দিবো শোকেসে।”
মিহির শব্দযোগে হেসেই কেক এবং ছুরি হাতে বেরিয়ে ড্রয়িংরুমে যেতে লাগলো।
“এসো।”
রিপ্তির হাতে কেক রেখে মিহির ছবি তুলে নিলো আগে। এরপর মায়ের সামনে কেক রেখে ক্যান্ডেল জ্বালিয়ে আরও কিছু ছবি তুললো, ফ্যামিলি টাইমের সেল্ফি নিলো। মা এবং স্ত্রীকে সাথে নিয়ে কেক কাটলো, কেক খেলো। রিপ্তির কেকের প্রশংসা করলো মা ছেলে দুজনেই। অর্ধেকটা তারা খেয়ে বাকি অর্ধেক রেখে দিলো মিহির। দুপুরে রোহান এবং শ্বশুর শ্বাশুড়ি এলে যেন খেতে দেয়। নিজ হাতের তৈরি খাবারের স্বাদ আপনজনেরা উপভোগ না করলে কেমন হয়?
এরপর সে তার জমা ফোন কলগুলো চেক করে কাউকে কল ব্যাক করলো, কেউবা নিজেই আবার ট্রাই করলো। ফোনে দেওয়া সময়টুকুতে আসার প্রত্যেক কলই রিসিভ করলো সে। তার ফ্যানক্লাব থেকে কল করা হয়েছে, বার্থডে উপলক্ষ্যে সন্ধ্যায় একটা পার্টি রাখতে চায় তারা। মিহির যেন উপস্থিত থেকে আনন্দিত করে তাদের। কয়েকজন বন্ধুবান্ধবদের সম্মিলনে একটা রেস্তোরাঁয় বার্থডে সেলিব্রেট করতে চায় বন্ধুরা। সেটাও সন্ধ্যাতেই। মিহির যেন নিষেধ না করে। যেতেই হবে তাকে। এই দাওয়াতও গ্রহণ করতে হলো মিহিরকে। এদিকে আবার তার করা দাওয়াতে দুপুরে শ্বশুর শ্বাশুড়ি আসবে, তখনও বাড়িতেই থাকতে হবে তাকে। বিকেলে বেরিয়েই নাহয় সবার দাওয়াতে অংশগ্রহণ করা যাবে। ওদিকে অফিস থেকে দুজন কল করেছিলো যে, তাদেরকে মিহির কলব্যাক করলো। কিন্তু একজনকেও পাওয়া গেলো না। মিনিট পাঁচেক পরেই তাদের মধ্যে একজন কল করলো,
“মিহির খাঁন, বাসায় আছো?”
“হ্যাঁ, কেন?”
“বেরিয়ে একটু নিচে আসো তো।”
“তুমি কি আমার বাসার সামনে?”
“হ্যাঁ, হ্যাঁ। তাড়াতাড়ি আসো।”
“ওকে, আসছি।”
নিচে আর যেতে হলো না তাকে। বের হওয়ার জন্য দরজাটা খুলতেই হৈচৈ যোগে এক ঝাঁক হুড়হুড় করে ভেতরে চলে এলো। বেলুন ফাটিয়ে, কালারফুল চুমকি উড়িয়ে, স্প্রে করে একাকার। ভিডিও করতে ক্যামেরাও ধরে রেখেছে দুয়েকজন। অফিসের সবাইই এসেছে কেক নিয়ে তার জন্মদিন উদযাপন করতে। ওদিকে বউ শ্বাশুড়ি দুপুরের রান্নার বন্দোবস্ত করছিলো। হৈচৈ শুনে কিচেনের দরজার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। জিনিয়া তাবাসসুম মাথায় কাপড় তুলে দেখা করতে এগিয়ে গেলেও রিপ্তি কাজে ফিরে গেছে। কেক কাটার সময় মিহিরের বউকে মিহিরের পাশে থাকার জন্য স্মরণ করলে মিহির ডাকতে এলো।
“রিপ্তি, হাত ধুয়ে এসো।”
“আমি যাবো না এতো মানুষের সামনে। লজ্জা লাগে।”
“মাথায় ওড়না দিয়ে আমার সাথে এসো। চলে আসবে আবার এক্ষুনি। এমন তো নয় যে, পর্দায় আছো। না গেলে খারাপ দেখায়। এসো।”
রিপ্তি মাথায় ওড়না প্যাচিয়ে ভদ্র মহিলা সেজে গেলো সেখানে। স্বভাবে আপনদের সামনে বকবক করলেও বাইরের মানুষজনের ভীড়ে কথা তেমন বললোই না। কেক কাটার পরপরই চলে এলো আবার। জিনিয়া তাবাসসুমও এলো তাদের জন্য কিছু নাস্তা প্রস্তুত করতে। দুজন মিলে ঝটপট নুডলস পাকিয়ে সাথে রিপ্তির মিক্সড আচারগুলো থেকে এক বোয়াম আচার দিলো। কিছু ফলমূলও কেটে দিলো। তারা গল্প করলো, নাস্তা করলো। মোটামুটি ঘন্টাখানেক সময় এখানে কাটিয়ে আবার চলে গেলো। যাওয়ার পরপরই রিপ্তি ঝাড়ু নিয়ে ময়লা করা জায়গাটুকু পরিষ্কার করে গেলো। দুপুরে রিপ্তির বাবা-মা এলেও গল্পসল্প এবং একত্রে দুপুরের খাবার খাওয়া হলো। তাদের বিদায়ের পর মিহিরের বিকেল কাটলো অনলাইনে, তার গানের রিলিজ হওয়ার ব্যস্ততায়। তারপরই তৈরি হয়ে বাসা থেকে বের হলো মিহির। প্রথমে ফ্যানক্লাবে গিয়ে, পরক্ষণে বন্ধুবান্ধবদের পার্টিতে সংযুক্ত হলো। রাতে বাড়ি ফিরলো হাত ভর্তি গিফট প্যাকেট নিয়ে। বেশিরভাগই ফ্যানক্লাব থেকে পাওয়া। মিহির খাঁনের বউ হওয়া সুবাদে রিপ্তির জন্যও কিছু গিফট এসেছে। প্রতিষ্ঠিত ছেলের সুবাদে মায়ের জন্যও এসেছে কিছু উপহার, রত্নগর্ভা মা হওয়ার নিমিত্তে। রিপ্তি বসে বসে সবই দেখলো। মিহির বাইরে থেকে খেয়ে আসায় রাতে আর ঘরে খেলো না। তারা বউ শ্বাশুড়ি খেয়েদেয়ে যার যার রুমে চলে গেলো। মিহিরের মুখাবয়বে এক রকম নিস্তব্ধতা চাপা। বাইরে থেকে আসার পরই কেমন মলিন দেখাচ্ছিলো তাকে। তবু তারা বউ শ্বাশুড়ি গিফট বক্স খোলার সময় পাশে বসে থেকেই জোরপূর্বক হাসির রেশ ফুটাতে চাইছিলো যেন কথার প্রেক্ষিতে। রিপ্তির মনে হয়েছিলো সে বাইরে ঘুরেফিরে ক্লান্ত। কিন্তু এখন সেটা ক্লান্তি নয়, বরং বিষণ্ণতার জাল বলেই আখ্যায়িত হচ্ছে ভাবনার কোণে। কেমন বেদনাক্রান্ত হয়ে দাঁড়িয়ে লোকটা বারান্দার গ্রিলে শক্ত মুঠোয় চেপে! পাশে এসে দাঁড়ায় রিপ্তি। শান্ত স্বরে জানতে চায়,
“মন খারাপ?”
ধ্যানভঙ্গ হয় মিহিরের। ঘাড় ঘুরিয়ে তাকিয়ে মৃদু হাসির চেষ্টাসমেত পলক ফেলে জবাব দেয়,
“কিছুটা।”
“এমন দিনেও মনে খারাপ কেন করতে হয়? এটা একদমই অনুচিত।”
“ভাগ্য কি উচিত অনুচিত মেনে খেলা করে, রিপ্তি? এই দেখো, খুশির ছড়াছড়িতেও মন খারাপ এসে যায় মনের অজান্তে।”
দৃঢ় নিশ্বাস ফেলে পথের লণ্ঠনে দৃষ্টি রেখে প্রত্যুত্তর করে মিহির। কণ্ঠে ভারি নির্লিপ্ততা! কি হলো তার, জানতে বড় উতলা হয় রিপ্তি। বাহুতে হাত রেখে শান্ত গলায় শুধায়,
“হয়েছে কি হঠাৎ?”
“হঠাৎ না। দিনের শুরুটাই কেমন থমকানো।”
“মানে?”
“ইয়ানাতের সাথে দেখা হলো সন্ধ্যায়।”

চলবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে