গল্প: ছোঁয়ার শিহরণ পর্ব-২২

0
1837

গল্প: ছোঁয়ার শিহরণ পর্ব-২২
লেখনীতে:ফাতিমা আক্তার অদ্রি

গিটারের টুং টাং শব্দের তাল ও সুরে যেন অন্ধকারে ঢাকা আকাশটাও মেতে উঠেছে। আর পাগলাটে হাওয়া নৃত্য করছে আপনমনে। আর তারই দমকায় খ্যাপাটে আঁচড় কাটছে বন্ধুদের গায়ে। শিহরণ চোখ বুজে আছে, সুর তুলছে গিটারে। সে একটা বেতের চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে আছে। চুলগুলো খুব সুন্দর করে আঁচড়ানো । রয়্যাল ব্লু কালারের একটি শার্ট পরেছে সে । শার্টটি একদম পারফেক্ট ভাবে ফিটিং হয়েছে তার শরীরে। তার সাথে জিন্স পরেছে। দেখতে একদম ড্যাশিং লাগছে।শিহরণের হালকা সবুজাভ চোখের তারায় তখন অনুভূতিদের নানান খেলা চলছে অবলীলায় ।
বাতাসের দমকে তার কোকড়ানো ঝাঁকড়া চুলগুলো বারবার এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে।
তবে শিহরণের বিন্দুমাত্র মনোযোগ সেদিকে নেই। তার সমস্ত মনোযোগ সুর তুলার কাজে। তাছাড়া গান তো গাইতেই হবে তাকে। নিজের মনকে ডাইভার্ট করার এটা একটা অনন্য পদ্ধতি। তবুও কতটুকু সফল হতে পারবে শিহরণ সে বিষয়ে আদো সে নিশ্চিত নয়!

বন্ধুরা সবাই আজ বসেছে শিহরণদের বিল্ডিং এর সামনের সরু ওয়াকওয়েটার ডান পাশে। সমস্ত জায়গাটাতে হালকা রুপালি আলোর ছড়াছড়ি । ইচ্ছে করেই একটু আলো-আঁধারি পরিবেশ করা হয়েছে। এতে অবশ্য সুবিধে হয়েছে অনেক। কারো অভিব্যক্তি পরিষ্কারভাবে বুঝার কোনো অবকাশ নেই।

ওয়াকওয়েটার ডান পাশটায় বিশাল জায়গা জুড়ে আছে মোট নয় জনের একটা টিম। ছয় বন্ধুসহ বহ্নি, সায়মা আর রিয়া। রিয়া অনেকটা কেঁদে কেঁদে একাকার হয়েছে বলেই আসতে পেরেছে । নয়তো তার সচরাচর আসা হয় না । অনেক বায়না আর রূপকথার রাজ্যের সমস্ত অসম্ভব রকমের কথাবার্তার পর তার বাবা মা তাকে পাঠাতে রাজী হয়েছে।

এক কোণায় ফাহমি আর প্রিয় বারবিকিউ বানাচ্ছে। বহ্নি প্রয়োজনীয় সব কিছু এগিয়ে দিচ্ছে। তার মনটা একদম ফুরফুরে। বহ্নি একটা সাদা গাউন পরেছে। তার সাথে ম্যাচিং পেন্ডেট আর কানের দুল পরেছে। তার সিল্কি চুলগুলো ঘাড়ের এক পাশে করে রেখেছে। আর তাকে দেখতে একদম রূপকথার রাজকন্যার মতন লাগছে। বহ্নি এমনিতেই কিউট আর এখন এমন পোশাকে তাকে আরো অনেক বেশি কিউট লাগছে। বহ্নি তার বন্ধুদের ও ইনভাইট করেছে কিন্তু কেউই আসতে পারেনি । সবাই সামার ভ্যাকেশন কাটাতে বিভিন্ন জায়গায় চলে গেছে । অহনাও চলে গিয়েছে তার আম্মুর সাথে।

অতলকে দেখতে একদম উসখুস মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে বিষণ্ণতা নামক কোনো এক রাজ্যের রাজকুমার সে । যার চোখে মুখে সবখান জুড়ে বিষণ্ণতা বিরাজ করছে। অতল তো আসতেই চায়নি। মোহনা, প্রিয়, ফাহমি আর রাদিদ এক প্রকার জোর করেই নিয়ে এসেছে ওকে। সবাই তার এহেন ভূতগ্রস্তের মতন অবস্থা দেখে খুব অবাক হলো। প্রিয় তো হাসতে হাসতেই বলে ফেলেছিল,’কী রে? তোরে এমন আধুনিক দেবদাসের মতন দেখায় ক্যাঁ?’

প্রত্যুত্তরে অতল কিছুই বলেনি। সবার প্রশ্নের প্যাঁচাল থেকে বাঁচতে সে এক প্রকার রেডি হয়েই চলে এলো। তার পরনে একটা ছাই রঙা শার্ট। একদম ঢোলা শার্ট। উপরের দু’টি বোতাম খোলা। চুলগুলো হালকা আঁচড়ে এসেছিল। কিন্তু এখন আবারো আলুথালু হয়ে গেছে। তার সমস্ত অ্যাটায়ারে তাকে বেশ ভালোই আধুনিক দেবদাসের মতন মনে হচ্ছে!

মোহনা খুব করে খেয়াল করছে অতল আর শিহরণকে। শিহরণ এখনো চোখ বুজে আছে। গিটারের টুং টাং শব্দ পুরো ইয়ার্ড মাতিয়ে রেখেছে । তবে আজ সেই সুর যেন নিষ্প্রাণ, যেন বিষণ্ণ কোনো এক রাজ্যের করুণ সুর। যে সুরে ভেসে আসছে বাতাসে ভর করে সমস্ত কষ্টের আর্তনাদেরা!
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা

◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।

আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share


মোহনা গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে এলো অতলের দিকে। তার পাশের চেয়ারটা টেনে নিয়ে বসলো। তারপর চিন্তিত স্বরে বলল,’কী হয়েছে তোর?’

অতলের দৃষ্টি যে কোথায় ছিল এতক্ষণ কে জানে! তবে মোহনার গলার স্বর পেয়ে সে দৃষ্টি ফেরাল মোহনার দিকে। তারপর মৃদু হাসল। মলিন হাসি। বিরসমুখে বলল,’সুর শুনছি, সুর, করুণ সুর।’ তারপর ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করল,’শুনতে পাচ্ছিস না?’

মোহনা কিছুটা আন্দাজ করতে পারছে বৈ কি। কিন্তু তার এই বন্ধুটা কোনোভাবেই তার কষ্টের কারণ তাকে জানাবে না তা সে খুব ভালো করেই জানে। অতল বিষণ্ণ চোখে তাকিয়ে আছে মোহনার দিকে। মোহনা শুষ্ক মুখে বলল,’আমরা বন্ধুরা কেমন করে যেন হুট করেই একে অপর থেকে অনেক দূরে সরে গেলাম। কীভাবে যে কী হলো কে জানে! তবে খুব খারাপ হয়েছে সেটা।’ বলেই একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল মোহনা।

অতল কিছু বলার প্রয়োজন বোধ করলো না। বিষণ্ণ চোখে দৃষ্টি তখন অন্ধকারে ঢাকা অন্তরীক্ষে নিবদ্ধ। মোহনাও আর কোনো উচ্চবাচ্য করলো না।

শিহরণ ততক্ষণে গান শুরু করে দিয়েছে। শিহরণের নিজের লেখা গানই সে গাইতে শুরু করলো। যে গানের মাধ্যমে সে তার মনের সমস্ত দ্বন্দ্ব প্রকাশ করে গেলো অবলীলায় ।

Let me love u
Let me touch u
But I wanna forget u
Still my mind is over u.

Let me love u
Let me touch u
But I wanna forget u
Still my nerve is over u.

Yes, u r my love
Yes, u r my heart
U just stay in the core of my heart.
Why this happen?
Why the universe goes after u?

Let me love u
Let me touch u
But I wanna forget u.
……………………….
……………………….

প্রিয়, ফাহমি, বহ্নি, সায়মা আর রিয়া একসাথে বসেছিল। বারবিকিউ বানানো শেষ করেছে প্রিয় আর ফাহমি। তাই এখন তারা সবাই মিলে তন্ময় হয়ে শিহরণের গান শুনছিল। রিয়া বসেছে একদম প্রিয়’র গায়ের সাথে লেপ্টে। প্রিয়’র চুলগুলো বয়কাট। চেহারা গোলগাল। রিয়া প্রথম দর্শনেই প্রিয়কে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখেছে। যেন সে কোনোভাবেই ছোট চুলের মেয়েটাকে হজম করতে পারছে না। তাই সে প্রিয়’র হাত খামচে ধরে প্রশ্ন করল,’বয়কাট আপু! তুমি চুল বড় করো না কেন? তোমাকে কেমন যেন ছেলে ছেলে লাগছে। জানো মেয়েরা এরকম ছোট চুল রাখলে আমার একদম ভালো লাগে না।’ এতটুকু বলেই রিয়া গাল ফুলিয়ে প্রিয়’র দিকে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে । ফাহমি রিয়া’র কথা শুনতে পেয়ে মুখ টিপে হাসছে । ছোটো চুলের জন্য তারা বন্ধুরা কখনোই প্রিয়কে কিছু বলতে পারেনি। অথচ এই পুঁচকে মেয়ে বলল তো বলল তার উপর তার পছন্দ অপছন্দের জানান দিচ্ছে সগর্বে! আর এমন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে যেন তার কথা না শুনলে কাঁচা গিলে খাবে! ফাহমি বেশ মজাই পাচ্ছে। প্রিয় মাঝেমধ্যে ফাহমির নাস্তানাবুদ অবস্থা করে দেয় । এখন বাজুক ব্যান্ড ওর নিজের! মজাই তো লাগছে ফাহমির ! তাও আবার এত্ত পিচ্চির হাতে!

প্রিয় যেন আকাশ ফুঁড়ে পৃথিবীতে সদ্য অবতীর্ণ হয়েছে। সে নির্বাক তাকিয়ে আছে তার পাশে বসা পিচ্চি মেয়েটার দিকে। কয়েক বার মুখ হা করে আবার বন্ধ করে ফেলে। মুখ দিয়ে কোনো শব্দ বেরুচ্ছে না। কী অদ্ভুত!

রিয়া আবার হাত নেড়ে নেড়ে বলতে শুরু করল,’এভাবে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছো কেন? চোখ দুটো একদম গেলে দেব!’

প্রিয়’র বিস্ময়ের মাত্রা তখন চূড়ান্ত । হতভম্ব অবস্থা থেকে সম্বিৎ ফিরে পেতেই সে রিয়াকে থাপ্পড় লাগাতে যাচ্ছিল। সেটা দেখেই রিয়া খুব ভয় পেয়েছে। চোখ মুখ একদম কুঁচকে ফেলেছে। কিন্তু বহ্নি হুট করেই প্রিয়’র হাতটা ধরে ফেলে। রিয়া যেন এবার হাফ ছেড়ে বাঁচল । রিয়ার চোখে মুখে মুহূর্তেই আনন্দের ঝিলিক দেখা দিল।

‘ডোন্ট এভার ডেয়ার টু ডু দ্যাট অ্যাগেইন!’ বহ্নি এক গম্ভীর কণ্ঠে বলল প্রিয়কে। সে ছোটো বাচ্চাদের উপর হাত তোলা একদম পছন্দ করে না। দুষ্টামি ছোটরা না করে কি বড়রা করবে! তাই প্রিয় তার ভাইয়ের বন্ধু হওয়া সত্ত্বেও সে এমনভাবে বলেছে। বলা যায়, বাচ্চাদের উপর আঘাত করতে দেখলে তার নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ থাকে না। সে প্রিয়’র হাতটা ঝিঁকা দিয়ে ফেলে দিল। প্রিয় তখন রাগে ফুঁসছে । একদম ফুলে ফেঁপে উঠছে। তার মুখ তখন হালকা রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছে।

সে কোনো কথা বলতে পারছে না। অনেক্ষণ পরে আমতা আমতা করে বলল,’তুমি আমার হাত ধরলে কেন,বহ্নি? তুমি কি ভুলে গেছো আমি তোমার ভাইয়ের বন্ধু হই? বড়দের প্রতি কি তোমার কোনো রেস্পেক্ট নাই?’

বহ্নিকে তখন ভাবলেশহীন দেখাল। সে তাচ্ছিল্যের দৃষ্টিতে তাকাল প্রিয়’র দিকে। তারপর হাঁটা ধরল শিহরণের দিকে । হাঁটতে হাঁটতেই কী যেন সে ভাবলো! একটু হেঁটে যাবার পর আবার ফিরে এল প্রিয়’র কাছে। তারপর মৃদু স্বরে বলল,’সরি প্রিয় আপু। আসলে ও তো ছোটো । ও আমার খুব প্রিয় । তাই ওকে মারতে দেখে আমি নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারিনি। আর ও কিন্তু সবার সাথে এমন করে না। অপছন্দের কিছু দেখলে তখনই এমন উদ্ভট সব কথা বলে । আপু প্লিজ, কিছু মনে করো না।’

চলবে….ইন শা আল্লাহ্

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে