গল্প: ছোঁয়ার শিহরণ পর্ব-২০

0
1833

গল্প: ছোঁয়ার শিহরণ পর্ব-২০
লেখনীতে: ফাতিমা আক্তার অদ্রি

যে দুটো দিন ছোঁয়া আসেনি সেই দুইদিন যে অতলের কী ভয়ংকরভাবে কেটেছে তা কেবল অতলই জানে। সে শুধু প্রতীক্ষা করেছে ছোঁয়ার জন্য। ছোঁয়ার উত্তরের জন্য। কয়েকবার অতলের মনে হয়েছে ছোঁয়ার বাসায় গিয়ে খোঁজ নিতে। কিন্তু সেটাও সম্ভব ছিল না। বাসায় তার বাবা আর মা দুজন মিলে খালি তাকে পড়ার রোবট বানাতে চাইছে । যে শুধু পড়বে আর খাবে। আর কোনো কাজ নেই। অথচ অতল না পড়াতে মন দিতে পারছে, না খাওয়াতে। মহা মুশকিলে পড়েছে সে। তাদের বাড়ির সামনের উঠোনটাতে পিচ্চি দুটো সানন্দে খেলছে। তাদের কোনো বাধা নেই, নেই কোনো নিষেধাজ্ঞা। অতলের তাদের দেখে মন চাইছে ফিরে যেতে সেই শৈশবের দিনগুলোতে। ইচ্ছে করছে আবার ছোট হয়ে যেতে। কিন্তু চাইলেই কী আর সব পাওয়া যায়? মানুষ অতীত থেকে শিক্ষা নিতে পারে। অতীতের সুখময় স্মৃতি চারণ করতে পারে। তবে কোনোভাবেই সেই স্মৃতিচারণের মধ্যে পুনরায় নিজের অস্তিত্ব খুঁজে পেতে পারে না। হোক তা সুখময় আর হোক তা দুঃখের কারণে প্যারাময়। এটাই অতীতের বিশেষত্ব। তাই মানুষকে বর্তমানে বাঁচা শেখা উচিত। কারণ এই বর্তমান’ই একসময় অতীতের তকমা গায়ে লাগায়। আবার যেই ভবিষ্যত নিয়ে মানুষ রাত দিন নানান জল্পনা কল্পনা করে থাকে; সেই ভবিষ্যত ও মানুষ কেবল বর্তমানে’ই উপভোগ করতে পারে এবং সময়ের পরিক্রমায় তাও আবার অতীতের তকমা গায়ে লাগিয়ে হয়ে যায় অতীত স্মৃতির একটি অংশ।

অতল ভাবছে। ভাবনার জগতটাই এমন একটা জগৎ যেখানে মানুষ স্বাচ্ছন্দ্যে বিচরণ করতে পারে।সেখানে নেই কোনো বাধা, নেই কোনো সীমাবদ্ধতা। স্কুল বন্ধ হয়ে যাবে তাই অতলের আরো বেশি দুশ্চিন্তা হচ্ছে। তাই তার মনে হচ্ছে সামার ভ্যাকেশনের আগে ছোঁয়ার সাথে তার কোনোভাবেই দেখা হবে না । তাকে আরো অপেক্ষা করতে হবে ছোঁয়ার উত্তরের জন্য । আরো দীর্ঘ অপেক্ষা । ভাবতেই একটা দীর্ঘশ্বাস ভর করল।
_____________________________

শিহরণের হয়েছে অরো এক জ্বালা। সে ছোঁয়াকে ছাড়া কিছুই ভাবতে পারছে না। তার উপর মেয়েটা স্কুলেও আসছে না সে চাইলেই তার বাসায় যেতে পারে। তবে কেন যেন যাওয়া আর হয়নি! নিজেকে সে জোর করে বেঁধে রেখেছে। মাঝেমধ্যে মানুষের অনেক কিছু করতে ইচ্ছে করে কিন্তু না করতে পারার অপারগতা হাত পা বেঁধে রাখে। তখন নিজেকে যেমন অসহায় মনে হয় শিহরণের ও তেমন মনে হচ্ছে নিজেকে।

শিহরণ মনে মনে নিজেকে প্রবোধ দিল,’ছোঁয়া ইজ মাই ফ্রেন্ড । নট মোর দ্যান এনিথিং । অ্যান্ড শি ইজ নট মাই টাইপ।’

খুব চেষ্টা করে যাচ্ছে শিহরণ। নিজেকে দূরে সরানোর এক অব্যর্থ চেষ্টা সে করেই চলেছে। মানুষ পৃথিবীর সবচাইতে বিচিত্র প্রাণী। তাই বিচিত্র পদ্ধতি তারা অবলম্বন করতেই পারে । এতে অবাক হবার কিছুই নেই।
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা

◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।

আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share


__________________________

পরদিন স্কুলে ছোঁয়া আসেনি। মায়া স্কুলে গিয়ে প্রথমেই অতলকে খোঁজ করলো। তবে দেখতে পেল না। মায়ার মনটা খারাপ হয়ে গেল। ছোঁয়া তাকে একটা কাজ দিল। অথচ সেটা যদি না করতে পারে তবে ছোঁয়া খুব কষ্ট পাবে। আর এই বিষয়টা খুবই স্পর্শকাতর একটা বিষয় । মায়া অতল আর শিহরণ দুজনেরই ভাবভঙ্গি দেখেছে। তবে মায়া চায় যাতে কোনো গণ্ডগোল না হয়। গণ্ডগোল হলে শেষমেশ আবার ছোঁয়া’ই কষ্ট পাবে। এমনিতেই তার জীবনে তাকে আঘাত করার জন্য তিন জল্লাদ তো আছেই। এর বাইরে তার ভরসার কেউ নেই, নেই নিজের কষ্টের কথা শেয়ার করার মতো বিশেষ কেউ। বিষণ্ণ মন নিয়ে মায়া ক্লাসের উদ্দেশে পা বাড়াল। পেছন থেকে কেউ গলা উঁচিয়ে তার নাম ধরে ডাকাতে সে থমকে দাঁড়াল । ঘুরে দাঁড়াতেই অতলকে দেখতে পেল। অতলকে কেমন যেন দেখাচ্ছে । মনে হচ্ছে সে ঠিকমত ঘুমোয়নি। মায়ার তার জন্য খুব মায়া হলো। কিন্তু তার হাতে আসলে কিছু নেই। সে চাইলেও কিছু করতে পারবে না। আর ছোঁয়ার পক্ষেও কিছু করা সম্ভব নয়। অতল কাছে আসতেই মায়া তাকে প্রশ্ন করল,’ কেমন আছ, অতল?’

অতল যেন একটা সূত্র খুঁজে পেয়েছে কথা বলার। মনের মধ্যে জমানো কথাগুলো বের করে দেবার। সে তার মুখটা অসহায় মতন করে বলল,’কেমন আছি! কেমন আছি তা সত্যিই আমি জানি না।’ অতল যেন স্বগতোক্তি করল।

মায়া অসহায় মুখে তাকিয়ে আছে তার দিকে। তার ইচ্ছে করছে কিছু বলতে, অতলকে সান্ত্বনা দিতে । কিন্তু সেটাও সে পারছে না। তাই মায়া নীরব থাকাটাই শ্রেয় মনে করল।

অতল আবার বলা শুরু করল,’মায়া, তোমার বান্ধবীর উত্তরের অপেক্ষায় আছি। অপেক্ষার মুহূর্তগুলো খুব পীড়া দিচ্ছে। ঘুম আসে না। খুব করুণ অবস্থা আমার। আচ্ছা ওর কি হয়েছে বল তো? ও স্কুলে আসছে না কেন? কিছু কি হয়েছে?’

অতলের একগাদা প্রশ্ন শুনে মায়া হকচকিত হয়ে তাকিয়ে আছে। তাকে এভাবে চেয়ে থাকতে দেখে অতল বলল,’ কি ব্যাপার! তুমি কোনো কথা বলছ না কেন?’

সম্বিৎ ফিরে পেতেই মায়া বলল,’অতল,এত্তগুলো প্রশ্ন একসাথে শুনে আমি যে হুঁশ হারাইনি সেটাই অনেক।’

অতল মুখটা কাঁচুমাচু করে বলল,’খুব বেশি প্রশ্ন করে ফেলেছি বুঝি? না করে তো উপায় নেই । ছোঁয়ার খবর তো কেবল তোমার কাছেই পাওয়া যাবে। আমার তো আর কোনো সোর্স নেই যার কাছ থেকে আমি ছোঁয়ার খবর জানতে পারি। তাই….।’

মায়া বলল,’কোনো সমস্যা নেই। তোমার জন্য ছোঁয়া একটা চিঠি দিয়েছে । আশা করি ওটা পড়লেই তোমার উত্তর পেয়ে যাবে।’

অতল আহ্লাদিত কণ্ঠে বলল,’সত্যি বলছ মায়া। আমি তো ভাবতেই পারিনি আমার অপেক্ষার অবসান এত তাড়াতাড়ি হতে চলেছে। তাড়াতাড়ি দাও তো দেখি।’

মায়াকে ইতস্তত দেখাল। সে ছোঁয়ার দেয়া চিঠি না পড়লেও এটা খুব ভালো করেই জানে যে সেই চিঠি পড়ে অতল খুব ভেঙ্গে পড়বে। তার খুব কষ্ট হবে। মায়া তার ব্যাগ থেকে ছোঁয়ার দেয়া চিঠিটা বের করে আতলকে উদ্দেশ্য করে বলল,’অতল, তোমার কাছে আমার একটা রিকুয়েস্ট । তুমি এই চিঠিটা এখন পড়বে না। বাসায় গিয়ে পড়বে। আরো একটা কথা তোমাকে বলতে চাই। তুমি কি শুনবে?’

মায়ার এমন কথা শুনে অতলকে দ্বিধাগ্রস্ত দেখাল। সে দ্বিধান্বিত কণ্ঠে বলল,’শুনব না কেন? বল।’

মায়া অতলের দিকে সরাসরি তাকিয়ে বলল,’একটা কথাই তোমাকে বলব যে, চিঠির উত্তর পজিটিভ হোক আর নেগেটিভ, যেটাই হোক; তুমি সেটা খুশি মনে মেনে নিও। কারণ জোর করে আর যাই হোক ভালোবাসা হয় না।’

অতল মায়ার দিকে করুণ চোখে চেয়ে আছে। একটু ধাতস্থ হয়েই সে বলল,’তার মানে কি উত্তরটা নেগেটিভ?’

মায়া ইতস্তত ভঙ্গিতে বলল,’আমি এই বিষয়ে আর কোনো কথা বলতে চাই না। শুধু বলব, বন্ধু হিসেবে আমার এই কথাটা রেখো।’ বলেই সে হাঁটা শুরু করল।

অতল ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো । তার শান্ত চোখে অশান্ত অনুভূতিদের খেলা চলছে। মনের মধ্যে এক রাশ ভয় জেঁকে বসেছে । সমস্ত চেষ্টাকে অবরুদ্ধ করে দেবার ভয় তাকে গ্রাস করেছে। তার চোখ বিবর্ণ হয়ে যাচ্ছে।মুখটা কেমন যেন ফ্যাকাশে হয়ে যাচ্ছে। সমস্ত ভাবনা চেতনাদের জ্বলাঞ্জলি দেবার সময় হয়তো ঘনিয়ে এসেছে! অতল নির্বাক দাঁড়িয়ে রইলো।

চলবে…..ইন শা আল্লাহ্

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে