গল্প: ছোঁয়ার শিহরণ পর্ব-১৭

0
1988

গল্প: ছোঁয়ার শিহরণ পর্ব-১৭
লেখনীতে: ফাতিমা আক্তার অদ্রি

‘আই থিঙ্ক ইউ আর ইন লাভ’ শিহরণের বাবার বলা এই কথাটা তার মস্তিষ্কের প্রতিটি কোষ জুড়ে ক্রমাগত ঘুরপাক খাচ্ছে। প্রতিটি সেলের মধ্যে বিদ্যমান নিউরনগুলো যেন এই কথাটাই শুধু পিক করেছে। ক্রমাগত বাজতেই আছে। বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে হঠাৎ থামিয়ে দেবার পরেও যেমন তার সুর, তাল ও লয়ের রেশ থেকে যায় অনেক্ষণ পর্যন্ত ঠিক তেমনি তার বাবার বলা কথাটাও কানে বাজছে বাদ্যযন্ত্রের সুরের ন্যায় নির্দিষ্ট তাল, লয় ও সুরের ছন্দে!

শিহরণ ভাবলো তার এই চিন্তার বেদনা থেকে বাঁচতে হবে । তাই সে ছোঁয়ার প্রতি তার অনুভূতিগুলো সম্পর্কে নিশ্চিত হতে চায় । সে নিশ্চিত হতে চায় যে, সে কেন এমন অদ্ভুত সব অনুভূতি অনুভব করছে। তার অনুভূতিগুলোর ব্যাখ্যাই বা কী! আর এর উত্তর তার ড্যাডির থেকে ভালো করে কেউ দিতে পারবে না। তার এই দোটানাময় অবস্থা থেকে তার ড্যাডি’ই তাকে উদ্ধার করতে পারে। তবে ড্যাডিকে সরাসরি বলা যাবে না। কিছুটা অন্যভাবে বলতে হবে।
_______________________

আকাশে আজ তারাদের মেলা। তারকা উজ্জ্বল আকাশ আলো ছড়িয়ে দিয়েছে সবখানে । এমন একটা পরিবেশ কে না ভালোবাসে! শিহরণদের বাসার ছাদটা সব থেকে সুন্দর ও আকর্ষণীয় । বাসার ছাদে যেমন রয়েছে নানান ফুল গাছের মেলা ঠিক তেমনি রয়েছে সারা দেয়াল জুড়ে সবুজ লতানো গাছের সমাহার। আর এই সবুজ গাছগুলোর কারণে অফ হোয়াইট কালারের দেয়াল দেখা যাচ্ছে না। ছাদের রেলিং জুড়েও রয়েছে লতানো গাছের মেলা। তার কতকগুলোতে আবার বেগুনি ও সাদার মিশ্রণের এক অদ্ভুত সুন্দর রঙের ফুল ফুটেছে। এই ফুলগুলো যে কারো দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারে।

ছাদের মাঝ বরাবর হোয়াইট কালারের টেবিল আর চেয়ার বসানো । সাব্বির আহমেদ সেই চেয়ারে বসে রাতের আকাশ দেখছিলেন। এটা তার প্রিয় শখ। শখ ব্যক্তিবিশেষে যেমন ভিন্ন হয়ে থাকে তেমনি মানুষের নানান অদ্ভুত সব শখের উপস্থিতিও দেখা যায় । সাবিহা সাবরিন তার হাতের কাজ শেষ করেই সঙ্গ দিয়ে থাকেন সচরাচর। শিহরণ জানে তার বাবা এখন ছাদে জ্যোৎস্না বিলাস করছে। তাই সে কয়েক লাফে উঠে এলো ছাদে। ছাদের দরজায় এসেই বার কয়েক প্রলম্বিত শ্বাস নিল। তারপর যথাসম্ভব চেহারাকে স্বাভাবিক করে বাবার পাশের চেয়ারটা টেনে নিয়ে বসল। চেয়ার টানার শব্দে সাব্বির আহমেদের মনোযোগ বিচ্ছিন্ন হলো। তিনি সহসা ঘাড় ঘুরালেন। নিজের ছেলেকে পাশে বসা দেখেই তিনি প্রশস্ত হাসি হাসলেন। তারপর বললেন,’ হোয়াট হ্যাপেন্ড,শিহরণ?’

শিহরণ বেশ স্বাভাবিকভাবে শান্ত স্বরে বলল,’ড্যাড, আই ওয়ান্ট টু নো সামথিং।’

‘সো, দ্যাট মিনস দেয়ার্স সামথিং হুয়িচ ইজ বোদারিং ইউ। এম আই রাইট?’ সাব্বির আহমেদ দৃঢ় কণ্ঠে প্রশ্ন করলেন।

‘ইয়েস, ড্যাড। বাট দ্যাট প্রবলেম ইজ নট মাইন। ওয়ান অব মাই ফ্রেন্ড ইজ ইন কনফিউশন এবাউট হিজ ফিলিংস।’ শিহরণ আমতা আমতা করে বলল।

সাব্বির আহমেদকে একটু চিন্তিত মনে হলো। ডান চোখের ভ্রু কুঁচকে কপালে ভাজ ফেলে কী যেন ভাবলেন! তারপর ছেলের পিঠে আলতো করে হাত চাপড়ে বললেন,’ঠিক কোন বিষয় নিয়ে কনফিউজড সে?’

শিহরণ তার বাবার কথাটা শুনে কাশতে লাগল। বিহ্বল দেখাল তাকে। সবুজাভ চোখ জোড়া অশান্ত মনে হলো। কেমন যেন উত্তাল সমুদ্রের দূর থেকে বিশাল উচ্চতার ঢেউ এর সমুদ্র তটে আছড়ে পড়ার মতো মনে হলো। সাব্বির আহমেদ কৌতুহল মাখা দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছেন। ছেলের মাথার ঝাঁকড়া কোকড়ানো চুলগুলো ডানহাতে এলোমেলো করতে করতে খুব শান্ত স্বরে প্রশ্ন করলেন,’হোয়াট হ্যাপেন্ড মাই চাইল্ড? ইজ দেয়ার এনিথিং রং?’

শিহরণ দ্রুত বলল,’ড্যাডি ইটস্ নট মি। ইটস্ এবাউট ওয়ান অব মাই ফ্রেন্ড ।’

‘ওকে ফাইন। টেল মি এভরিথিং ইন ডিটেইল ।’ সাব্বির আহমেদ সিরিয়াস ভঙ্গিতে বললেন।

‘একটা মেয়ে আছে আমাদের ক্লাসে। দেখতে খুব পাতলা আর রোগাটে টাইপ। চুলগুলো প্রায়ই অগোছালে থাকে। মনে হয় যেন কখনো আঁচড়ায় না। সেই মেয়েটা প্রায়ই আমার বন্ধুকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখত। মাঝেমধ্যে অবশ্য সে ধরা পড়ে যেত আমার বন্ধুর কাছে। তবে মেয়েটার এভাবে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখাটা আমার বন্ধুটা একদম পছন্দ করত না। সে মেয়েটার সাথে কখনো কথা পর্যন্ত বলত না। বলেওনি।’ এতটুকু বলে শিহরণ থামল।

সাব্বির আহমেদ অধৈর্য গলায় বললেন,’তারপর বলো । সমস্যা কোথায়?’

রাতের আকাশের তারাগুলো মিটমিটিয়ে জ্বলছে। শিহরণ এক পলক সেই তারাগুলোর পানে তাকাল। তারপর সরাসরি বাবার দিকে তাকিয়ে বলল,’সমস্যাটা শুরু হয় এক মাস আগে। একদিন আমার বন্ধুটা আর মেয়েটা দুজনেই একসাথে দেরি করে স্কুলে যায় । সেদিন স্যার ওদের দুজনকে পানিশমেন্ট দেয়। এরপর থেকে খুব ধীরে ধীরে মেয়েটার প্রতি ছেলেটার দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন হতে থাকে। জানো ড্যাডি, মেয়েটা খুব কষ্ট করে!’
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা

◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।

আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share


সাব্বির আহমেদ মাঝখানে বাগড়া দিয়ে বললেন,’মেয়েটা যে কষ্ট করে তা তুমি জানলে কী করে?’

শিহরণ এবার ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল। তারপরেও অনেক কষ্টে সে কণ্ঠের স্বাভাবিকতা বজায় রেখে বলল,’ড্যাডি, অবভিয়াসলি মাই ফ্রেন্ড টোল্ড মি।’

শিহরণ থামল খানিক। তার সবুজাভ চোখ জোড়া চকচক করছে। তারপর সে তার বাবাকে অনুনয়ের সুরে বলল,’ড্যাডি, পুরো কথাটা একটু শুনো। তারপর তোমার যা খুশি তুমি প্রশ্ন করো।’

সাব্বির আহমেদ মৃদু হেসে বললেন,’হ্যাঁ, শুনছি। নাউ আই ওন্ট ইন্টারাপ্ট ইউ এনিমোর ‘

শিহরণ আবার বলতে শুরু করল,’মেয়েটার উপর প্রচণ্ড নির্যাতন করা হয়। ওর সৎ মা আর সৎ বোনেরা প্রতিনিয়ত ওর উপর শারীরিক আর মানসিকভাবে অত্যাচার করে। এর কিছুটা আমার বন্ধু নিজের চোখে দেখেছে। বাকিটা বুঝতে খুব বেশি কষ্ট করতে হয় না। তাছাড়া আঘাতের গভীর ক্ষত ও দেখেছি তার শরীরে ।’

‘দেখেছি?’ সাব্বির আহমেদ ভ্রু উঁচিয়ে সন্দিহান কণ্ঠে প্রশ্ন করলেন।

শিহরণ পড়েছে এক জ্বালায় । তার ড্যাডি শুধু তার কথার ভুল ধরতে ব্যস্ত। সমাধান করবে নাকি তাকে প্রশ্নের বেড়াজালে আবদ্ধ করবে কে জানে! শিহরণ পরাস্ত ভঙ্গিতে বলল,’ড্যাডি, আমার বন্ধুটা দেখেছে। আমিও একটু আধটু দেখেছি বৈ কি। আমরা তো একি ক্লাসে পড়ি। বললাম না?’

‘কবে বলেছিস?’ সাব্বির আহমেদ ফের প্রশ্ন করলেন ।

‘বলিনি? আচ্ছা ঠিক আছে । এখন তো বললাম। এবার দয়া করে আমার পুরো কথা শুনে আমার বন্ধুটাকে উদ্ধার কর।’ শিহরণ অসহায় মুখ করে অনুনয়ের সুরে বলল।

সাব্বির আহমেদ ছেলের এমন মুখ দেখে হেসে ফেললেন। তারপর হাসি চেপে বললেন,’আচ্ছা, ঠিক আছে। বল। তোর বন্ধুকে তো উদ্ধার করতেই হবে।’

‘মেয়েটার সাথে এক সপ্তাহের মতো সময় কাটিয়েছে আমার বন্ধুটা। মাত্র এক সপ্তাহ! কিন্তু এর মধ্যেই আমার বন্ধুর চিন্তাচেতনা জুড়ে মেয়েটা রাজত্ব। মেয়েটার কথা চিন্তা করতে গেলে তার কোনো হুঁশ থাকে না। তারপর আমার বন্ধুটা মেয়েটাকে এক পলক দেখার জন্য পাগল হয়ে যায় । জানো, মেয়েটা কয়েকদিন স্কুলে যায়নি। তাই সে মেয়েটার বাসায় পর্যন্ত চলে গেছে। চোখ বুজলেই মেয়েটার চেহারা ভেসে উঠে তার চোখের দৃশ্যপটে । অথচ জানো এই তো কিছুদিন আগে পর্যন্ত আমার বন্ধুটা মেয়েটাকে পাগলাটে, অগোছালো আর রোগাটে বলে জানত এবং মানত। অথচ এখন তার এলোমেলো চুল দেখলেও তার ভালো লাগে। জানো ড্যাডি , আমার বন্ধুটার এসব কাণ্ডে আমরা বন্ধুরা প্রচণ্ড বিরক্ত বোধ করছি….!’

‘ইউ আর ইন লাভ।’ সাব্বির আহমেদ দৃঢ় কণ্ঠে বললেন।

‘হুয়াট? ড্যাড, হুয়াট আর ইউ সেয়িং?’ শিহরণের কণ্ঠে রাজ্যের বিস্ময়।

‘আই মিন ইয়োর ফ্রেন্ড ইজ ইন লাভ।’ সাব্বির আহমেদ তার ঠোঁটের কোণে রহস্যময় হাসি ঝুলিয়ে রেখে বললেন ।

‘আর ইউ সিউর, ড্যাডি?’ শিহরণের কণ্ঠে সন্দেহ।

‘অফকোর্স।’ সাব্বির আহমেদ বলিষ্ঠ কণ্ঠে দৃঢ়তার সাথে বললেন।

শিহরণের চেহারা পুরোই ফ্যাকাশে হয়ে গেল। তার সবুজাভ চোখ জোড়ায় যেন নিমিষেই ধূসরতা ভর করল। সে বুঝতে পারছে না যে, সে এখন কি করবে বা তার কী করা উচিত! মানুষ মাঝেমধ্যেই নিজেকে খুব বিবশ মনে করে, মনে করে অপারগ। শিহরণ নিজেকে তেমন মনে করছে। শিহরণ যেন নিশ্চিত হতে পারছে না।যেন বিশ্বাস করতে পারছে না তার ড্যাডির কথা।

তাই সে পুনরায় নিশ্চিত হবার জন্য তার ড্যাডিকে প্রশ্ন প্রশ্ন করল,’ড্যাডি, তুমি নিশ্চিত তো?’

সাব্বির আহমেদ গম্ভীর কণ্ঠে পুনরায় দৃঢ়তার সাথে বললেন,’অবশ্যই নিশ্চিত।’

চলবে…..ইন শা আল্লাহ্

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে