কোথাও হারিয়ে যাব পর্ব-০৩

0
295

#কোথাও_হারিয়ে_যাব
#রূবাইবা_মেহউইশ
পর্ব-৩

‘রসুই ঘরের রান্না তো সারাবছরই খাই আজ ভিন্ন হোক!’
হাতের ব্যাগপত্র সব সোফার ওপর ফেলেই গা এলিয়ে বসলো রিদওয়ান৷ আজও সে অফিস কামাই করেছে তবে আজকেরটা ছুটির তালিকায় যুক্ত হবে। বৃষ্টির জন্য ছুটিপত্র গ্রহণ হয়েছে। তাই সকাল সকালই বৃষ্টি আর অর্নিতাকে নিয়ে সে চলে এসেছে অর্নিতাদের বাড়ি। তাদের উপস্থিতি টের পেতেই ছোটদাদী ধীরে হেঁটে বসার ঘরে এলেন।

‘আসসালামুআলাইকুম দাদী।’ তিনটি স্বরে একত্রেই বেজে উঠলো সালাম ধ্বনি।

ছোট দাদীও উচ্চ আওয়াজে সালামের জবাব দিয়ে বসলেন সোফায় রিদওয়ানের পাশে।

‘ওই রুজিনা শরবত বানায়া দে নাতিনগোরে।’

কাজের বুয়া জরিনা খালা তখন শরবতই বানাতে ব্যস্ত। দরজা খুলে অর্নিতাদের দেখেই বুঝেছেন এখন শরবত লাগবে। এ বাড়িতে শীত হোক বা গরম মেহমান এলেই দাদী সবসময় শরবতের কথাই বলেন তাই রুজিনাও নিজ কাজে সদা প্রস্তুত থাকেন। দ্রুত হাতে তিন গ্লাস শরবত এনে টি টেবিলে রাখলন তিনি৷ এর মাঝেই অর্নি চলে গেছে ভাইয়ের ঘরে। এক পলকে চোখ ঘুরিয়ে দেখে নিলো ঘরটা। ভীষণ পরিপাটি, ঝকঝকে ঘরটা সর্বদাই একরকম থাকে।ভাইয়া বরাবরই নিজের কাজ নিজে করতে পছন্দ করে আজও বোধহয় অফিসে যাওয়ার আগে গুছিয়ে গেছে ঘরখানা। অর্নি আসার সময় নুপুরের দেয়া গিফটটা নিয়ে এসেছিল। হাতেই আছে পার্সটা। সেটা খুলে বের করলো এন্টিকের একটা চকচকে ব্রেসলেট বক্স। ব্রেসলেটটা একদমই কারুকাজহীন তবে উপরিঅংশে ইংরেজি বর্ণ এ লেখা। খুব সাদামাটা তবুও ছেলেদের হাতে দারুণ মানাবে বলে মনে হলো অর্নির৷ সে নিতে চায়নি গিফটটা কিন্তু নুপুর এমন করে বলল যে না নিয়ে উপায় নেই। সে বারংবার বলছিলো, ‘নে না অর্নি এই ব্রেসলেটটা গোঁফওয়ালা গাব্বার সিং অর্ণব ভাইয়াকে মানাবে বেশ।’

মুখের ওপর ভাইয়ার প্রশংসা করলো নাকি নিন্দা বুঝলোই না অর্নি শেষমেশ নিয়েই নিলো গিফটটা। কিন্তু ভাইয়া যদি না নিতে চায়! বক্সটা অর্নি তার ভাইয়ার ঘরের বেডসাইড টেবিলের ড্রয়ারে রেখে দিলো। ঘর ছেড়ে বেরুবার মুখে পড়লো রিদওয়ান।

‘তুই এ ঘরে কি করছিস নিচে গিয়ে দ্যাখ বৃষ্টি কি শুরু করেছে।’

-আচ্ছা

অর্নি পা বাড়ালো নিচে যাওয়ার জন্য রিদওয়ান তা দেখে ডাকলো, অর্নি শোন!

অর্নি ফিরে তাকালো অথচ মুখে টু শব্দ করলো না। হতাশ হলো রিদওয়ান। ডাকলে কি সাড়া দিতেও বাঁধে মেয়েটার! প্রলম্বিত শ্বাস টেনে বলল, ‘কিছু না যা তুই।’

অর্নি চলে গেল নিঃশব্দে। নিচে গিয়ে দেখতে পেলো হুলস্থুল কান্ড। কথা ছিল আজকের আয়োজনে শুধু রিদওয়ানদের পরিবার আর অর্ণবের বাড়ির মানুষ থাকবে। কিন্তু বৃষ্টি নাকি উঠোনে দাঁড়িয়ে বড় দাদীর বাড়ির সকল বাচ্চাকে দাওয়াত করে ফেলেছে। বাচ্চা বলতেও একেকটা কলেজ, ভার্সিটি পড়ুয়া ভাইবোন। অর্নি কিছু বলতে চেয়েও বৃষ্টির হাস্যজ্জ্বল মুখটা দেখে থেমে গেল৷ ভাইয়াকে সে কিছু একটা বলে ম্যানেজ করে নিবে। আপাতত বৃষ্টির কথামত দুপুরের জন্য ভাত -তরকারির কথা বলতে হবে রুজিনা খালাকে। বাকি আয়োজন বিকেলে হবে। অর্নি তাই আবারও বাড়ির ভেতরে ঢুকে গেল।
______________

অর্ণব, অর্নির দাদারা ছিলেন তিন ভাই। ছোট দাদা নিঃসন্তান ছিলেন তাই অর্ণবের মা-বাবার বিচ্ছেদের পর তারা দুজনই গ্রামের আবাস গুটিয়ে শহরে এসেছিলেন৷ অর্ণবের দাদার একমাত্র সন্তান তার বাবা ছিলেন সেও পরপারে গেছেন বছর চৌদ্দ আগে। এখন পাশাপাশি বাড়িতে আছে বড় দাদা আর তার সন্তান এবং নাতি-নাতনীরা। তাদের পরিবার বিশাল বড়। এ শহরে অর্ণবের আত্মীয়ের সংখ্যা অনেক তবুও সে একলা। দূরত্বসীমা অনেক রাখলেও আনন্দ- উৎসবে না চাইতে যোগ দিতে হয় তাদের সাথে অর্ণব- অর্নিতাকে। অর্নিদের এটা পুরনো ধাঁচের দোতলা বাড়ি তার দাদার আমলে গড়া। বাবা তেমন যোগ্য সন্তান ছিলেন না বলেই পরবর্তীতে এ বাড়ির কোন মেরামত হয়নি৷ অর্ণবও সবে ব্যবসা জীবনে নিজেকে গেড়েছে তাই তার পক্ষেও পুনরায় সংস্করণ সম্ভব নয়। তবে এ বছর নভেম্বরে বাড়িটার খসে যাওয়া পলেস্তারা সরিয়ে রঙের প্রলেপ দেবে। বাড়ির সামনে, পেছনে মিলিয়ে অনেকটা জায়গা খালি পড়ে আছে সেগুলোর যথাযথ উন্নতি করবে৷ ভেবে তো রেখেছিল আস্তে ধীরে আরও বছর দুই পরে করবে সবটা কিন্তু শিবলী ভাইয়ের তাড়া দেখে মনে হচ্ছে বিয়েটা আরও জলদি হবে বোনের। তাই সবটাই আরও আগে করে নেবে বলে আপাতত ছোট্ট পরিসরে লোনের আবেদন করেছে ব্যাংকে। জলদি বলতে জানুয়ারির আগে একদমই নয়। বাবা-মায়ের ডিভোর্সটা যেদিন অফিসিয়ালি কার্যকর হলো সেদিনই কোর্টে আলাদা হলো দু ভাই-বোন। তবুও অর্ণব জোর করেই চলে গেল মায়ের সাথে নানার বাড়ি। দুটো মাস ভালোই কেটেছিলো মা আর বোনের সাথে। এরপর একদিন হুট করেই জানতে পারলো মায়ের আবার বিয়ে হবে। এগারো বছর বয়সটা তখন বড্ড কাঁচা তবুও যেন মনের ভেতর গভীর এক ভাবনার বাস। দিন রাত ভয় জমতে লাগল অর্ণবের বুকের ভেতরে। শ্বাস-প্রশ্বাসে টান লাগালো মাকে হারানোর । পড়াশোনা, বইপত্র কিছুতেই তার আর মন লাগলো না। সকাল-দুপুর- বিকেল গড়াতে লাগলো বদ্ধ ঘরে বন্দী হয়ে। নানার বাড়ির আদর যত্নে তখনো ভাটা পড়েনি তবে আড়ালে আড়ালে বাজতে থাকা কথাগুলো ঠিক কানে প্রবেশ করতো। তারপর একদিন হুট করেই মায়ের বিয়ে হলো সঙ্গে হলো বোনের সাথে সম্পর্কের ব্যবচ্ছেদ। মা হীন জীবন কত বিতৃষ্ণাময় টের পেতে লাগলো অর্ণব বাবার কাছে ফেরার পর। একটা বছর সে কাটিয়ে দিলো একা বাড়িতে কাজের বুয়ার সাথে। বাবা থেকেও যেন ছিলো না তখন। সকাল -দুপুর, রাত্রি বাবার কা/টতে লাগলো বাজে পাড়ায় আর দাদার ব্যবসায়। টাকা পয়সার জলাঞ্জলি অল্পতেই হয়ে গেল। ততদিনে জানা গেল বোনটিও ভালো নেই। তিন বছরের ওইটুকুনি মেয়েটি নাকি রাত কাটায় একা বিছানায়। নিজে থেকে যে ওয়াশরুমে যাওয়া বুঝতো না, খাবার পাতে নিয়ে খেতে জানে না, স্পষ্ট করে যে দুটি বাক্য বলতে পারে না সেই বাচ্চাটি নাকি দিনের পর দিন একাই পার করছে। অর্ণব নিজেও একদিন জেদ ধরে মায়ের নতুন সংসারে থাকতে গেলে দেখতে পেল মায়ের নতুন রূপ৷ এখনো মনে পড়ে অর্ণবের সে দিন দুপুরের খাবারের মুহূর্ত।মা তাকে একলা এক ঘরে প্লেটে করে ভাত-পানি দিল। কিছুক্ষণ পরই অর্নিকেও আনলো সে ঘরে হাতে তারও একখানা ভাতের থালা। বসিয়ে দিলো মেঝেতে। প্লেটে ছিল ডাল দিয়ে মাখা ভাত আর অর্নি সেগুলো তার ছোট ছোট আঙ্গুলে তুলতে না পেরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফেলতে লাগলো চারপাশে। অথচ দু দন্ড বসে মা তাকে এক লোকমা ভাত তুলে দিলো না মুখে। ওভাবে যেটুকু পারলো খেয়ে রেখে দিলো। অর্ণব সেদিন সারাটা সময় মাকে দেখলো পলক ভরে৷ হাতে -পায়ে ফোলাভাব, চোখে-মুখে অসুস্থতা সেসবের মাঝেও দিব্যি বাড়ির হাজারটা কাজ করছে। ও বাড়ির অবস্থা অতোটাও খারাপ নয় তবুও যেন কাজের লোক একমাত্র তার মা’ই ছিল। অথচ অর্ণবের মনে পড়ে না তাদের বাড়ি থাকাকালীন মা কখনো কাপড় ধুয়েছে কিংবা ঘর মুছেছেন! তার বাবা মানুষটা খুব ভালো না হলেও অর্থবিত্তের কার্পণ্যতায় রাখেনি মাকে৷ মায়ের সাথে সে বাড়ি সেদিন রাত কাটানোর জন্য থাকতে চেয়েও হতাশ হয়েছিল অর্ণব৷ দিন শেষে রাত্রি হতেই মা নিজের বুকে টেনে নিলো অর্নিকে। দশটা বাজার আগেই তাকে ঘুম পাড়িয়ে রেখে গেল এক ঘরে অর্ণবের থাকার ব্যবস্থাও সে ঘরেই করা হলো। অর্ণব ভেবেছিল মা বোধহয় একটু পরই ফিরে এসে বুকে নিয়ে বলবে, আয় বাবু তোকেও ঘুম পাড়িয়ে দেই। কিন্তু নাহ, তেমন কিছুই হয়নি সেদিন। এগারো বছরের বাচ্চা ছেলেটা মায়ের অপেক্ষায় ঢুলতে ঢুলতে অর্ধরাত কা/টিয়ে ফেলল। মাঝরাতে ঘুম ভেঙে অর্নি কাঁদতে লাগলে ছুটে পালালো অর্ণবের আলগোছে আসা নিদ্রাদেবী। বোনের কান্নায় অস্থির হয়ে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেল সে দরজার কাছে যে ঘরটাতে মাকে দেখেছিলো দিনের বেলায়। পাগলপ্রায় অর্ণব দরজা ধাক্কিয়ে মাকে ডাকলো৷ কেউ এলো না সেখান থেকে শুধু ভেসে আসলো মায়ের কেমন অসহায় কণ্ঠ, ‘তুই যা অর্ণব বোনকে দেখে রাখ। দরজা ধাক্কাবি না আর।’

সেটাই ছিলো অর্ণবের শেষ ধাক্কা মায়ের দরজায়, হয়তো নিজের মনের দরজায়ও। কোন কিছু পাওয়ার আশায় কড়া নাড়েনি সে আর কোথাও। সে রাতের পর অর্ণব ফিরে এসেছিল মাতাল বাবার কাছেই। তার আর মাকে দরকার পড়েনি। ভাগ্যও যেন জানতো তার আর কারোই দরকার পড়বে না। তাইতো বছর ঘুরতেই বাবার মৃ/ত্যু হলো। অতিরিক্ত মদ্যপান, উচ্চরক্তচাপ আর কোন এক চিন্তায় চুপচাপ দম ছাড়লেন তিনি। আপন মা পর হলেও মায়ের বোনেরা ঠিক আপনই রইলো। বড় খালামনি, মেজো খালামনি দুজনেই অর্ণবের দ্বায়িত্ব নিতে চাইলেন৷ কিন্তু অর্ণবের তখন মনে আঁচড় পড়েছে অসংখ্য। না চাইতেও সে এড়িয়ে গেল কারো সান্নিধ্যে যাওয়া। বয়স তখন বারো ছোটদাদা একদিন হুট করেই এলেন দাদীকে নিয়ে। অথৈ সাগরে ডুবতে গিয়েও একখানি ভেলা পেয়ে গেল অর্ণব। আর তারপরের কয়েকটা বছর ঢাল হয়ে ছিলেন দাদা আর দাদী সেই সাথে বড় খালু্। পড়াশোনা চলল কলেজ পর্যন্ত নির্বিঘ্নে কারণ দাদা তখনও ঢাল হয়ে তাদের ব্যবসা দেখছেন। এতে অবশ্য খুব বেশি লাভবান হওয়া গেল না জ্ঞাতিগুষ্টির চরম ধোঁ/কাবাজিতে। বড় দাদা মানুষ ভালো হলেও তার সন্তানেরা প্রচণ্ড লোভী। পুরো বংশে অর্থবিত্তে তারাই উচ্চপদে তবুও যেন তৃপ্ত নয় তারা। কত ছল-চাতুরী, কত ভেলকিবাজি করে গেল টানা কয়েকটা বছর শুধু মাত্র অর্ণব আর নিঃসন্তান ছোটদাদার সম্পত্তি হাতিয়ে নিতে৷ ওপরওয়ালা বরাবরই তার সৃষ্টির জন্য পরিপূরক ব্যবস্থা রাখেন অর্ণবের মনে হয়। তাইতো অবুঝ সময়ে ছোটদাদা কেমন বাবার মত আগলে নিলো। অথচ যখন অর্ণব কোমল লতা থেকে শক্ত ঢাল হয়ে উঠলো তখন সেই মানুষটা পাশে নেই৷ অর্ণবের জীবনের পরিবর্তনে অবহেলার জায়গা আর অর্নির! মায়ের নতুন সংসারে টুকুর টুকুর পায়ে একটি বছর পার করেছে তিন বছরের বাচ্চাটা। কখনো জ্বরে ভুগে বেহুশ হয়েছে একলা ঘরে কখনো আবার পানির বালতিতে পড়ে গিয়ে জমে- মানুষে টানাটানি করে মৃ/ত্যু থেকে ফিরিয়ে এনেছে৷ সেই থেকে অর্নি শ্বাস কষ্টের রোগী। ঠান্ডার প্রকোপ বাড়লেই সে অর্ধমৃত হয়ে যায়। অর্নির যখন পানির বালতিতে ডুবে মর/ণদশা তখনই বড় খালামনি জোর করে নিজের কাছে নিয়ে এলেন তাকে। মা তখন নতুন সন্তানের আগমনের দিন গুণছে। গর্ভাবস্থার শেষ সময় বলেই কিনা কে জানে মাও যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো অর্নিকে আলাদা করতে পেরে। সেই থেকেই বিচ্ছেদ মায়ের সাথে অর্নি, অর্ণবের। বেশ তো কেটে গেছে চৌদ্দ বছর মা-বাবাহীন জীবন তাদের। তবে আল্লাহ কখনো তাদের অভিভাবকহীন রাখেননি কোন পর্যায়ে। পঁচিশ পেরিয়ে ছাব্বিশে পা রাখা অর্ণব এবার নিজেই অভিভাবক হয়ে উঠবে ছোট্ট বোনটার৷ শিবলী ভাইয়ের সাথে অর্নির বিয়েটা খালারাই ঠিক করেছে তাই বলে কি সময়টাও তারাই ঠিক করবে? অর্নির সাথে শিবলী ভাইয়ের বয়সের ফারাক অনেক লম্বা এ কথা জেনেও সবাই বিয়ে ঠিক করে রেখেছে৷ তাই বলে কি অর্নির পড়াশোনা আর ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাববে না! অর্ণব এ বিষয়ে কঠোর হয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছে৷ এ সপ্তাহেই কথা পাড়বে এ বিষয়ে।

ঘড়ির কাটা টিকটিক করে চলে এসেছে তিনের ঘরে। বৃষ্টি আর রিদওয়ান মিলে অর্ণবদের উঠোনের একপাশে ইট দিয়ে চুলা বানিয়েছে। অর্নি আর বড় দাদার কয়েকজন নাতনি মিলে মুরগি কাটছে। কথা ছিলো তারাই সকলে মিলে মশলা পিষবে, পেয়াজ কাটবে কিন্তু কাজের বেলায় প্রত্যকেই বলল, পেয়াজ কাটতে জানি না, মশলা বাটতে জানিনা। শেষ পর্যন্ত পেয়াজ কাটছেন রুজিনা খালা, মশলা পিষবে বৃষ্টি। রিদওয়ান চুলা ঠিক করে গাছের ডালের ব্যবস্থা করল৷ বাড়ির পেছনেই পেয়ে গেল গাছের কে/টে ফেলে রাখা ডালপালা। প্রচণ্ড গরমে শুকিয়ে খটখটে হয়ে আছে একদম৷ কাজের ফাঁকে বার দুয়েক সে তাকিয়েছিল অর্নির দিকে। ওড়না পেঁচিয়ে আঁচলের মত করে গুঁজে রাখা কোমরে, পিঠ সমান চুলগুলো খোঁপায় বেঁধে কাঠি গুঁজেছে। চোখের চশমা আলগোছে এসে ঠেকেছে নাকের ডগায়। তাপমাত্রার চরম অবস্থায় স্বেদজল এসে জমপেছে নাকে, চিবুকে বিন্দু বিন্দু শিশিরকণার মত৷ দিনের উজ্জ্বল আলোয় চিকচিক করছে সে বিন্দু মোহনীয় সৌন্দর্য হয়ে। বেশিক্ষণ আর তাকিয়ে থাকলো না সে। আত্মসংযম, আত্মসম্মান দুটোই বড় দামী হওয়া উচিত প্রত্যেকটা মানুষের। রিদওয়ান তাই চেষ্টা করে নিজের আত্মপ্রবৃত্তিকে তুষ্ট রাখতে। যতটা সম্ভব দৃষ্টির আড়ালই রাখে ওই আদুরে মুখটাকে। এমনিতেই আজকে দিনে অপরিমিত হারে দেখা হয়ে গেছে৷ একদিনেই এত দেখলে লোভ বেড়ে যাওয়ার আশংকা থাকে। লাকড়ির ব্যবস্থা করে সে আর থাকলো না বাড়িতে। বৃষ্টিকে বলে গেল সন্ধ্যায় আসবে একবারে অর্ণবের সাথে।

এদিকে অর্ণবটা সকালে দাদীকে ফোন করেই টের পেয়ে গেছে বাড়িতে আজ আসর জমেছে। বৃষ্টিদের তৈরি সারপ্রাইজ অনেক আগেই তার কাছে ধরা পড়লেও সে কাউকে কিছু বলেনি। করুক যা করছে অযথা তাদের আনন্দ আর মাটি করবে না সে। কিন্তু সকাল থেকে যে ওই বাচ্চা মেয়েটা জ্বালিয় মা/রছে! কিছু একটা করা দরকার নইলে অল্প বয়সেই ধা/ক্কা খাবে ভীষণরকম।

চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে