কে কোথায় যায়? পর্ব ২৮

0
613

কে কোথায় যায়? পর্ব ২৮

কলকাতা শব্দটা মাথায় আনতেই ইদানীং অনুপম রায়ের কলকাতা গানের লাইন গুলো কানে ভাসে শুভার। লাস্ট কলকাতা গেছিল বছর চারেক আগে,বুবুর সাথে। এবার একরকম হুট করেই বলা যায় ঠিক করল কলকাতা ঘুরে আসার।
অসংখ্য প্রাসাদ, অট্টালিকা ও পুরনো স্থাপনার শহর কলকাতা। ইংরেজ শাসনামলের চিহ্ন এশিয়ার যে কয়টি হাতেগুনা শহরে টিকে আছে, কলকাতা তার মধ্যে শীর্ষে। শহরের দক্ষিণের অংশে ব্রিটিশরা বাস করতো যাকে বলা হতো হোয়াইট টাউন এবং উত্তর অংশে ভারতীয়েরা বাস করতো যাকে বলা হতো ব্ল্যাক টাউন। বাণিজ্যিক গুরুত্বের কারনে ১৯১১ সাল পর্যন্ত ব্রিটিশরা কলকাতাকে ভারতের রাজধানী করে রেখেছিল।কলকাতা নামের ইতিহাস বেশ কৌতূহলোদ্দীপক। ‘কলিকাতা’ নামটি এসেছে ফার্সিতে গৃহীত দুটি আরবি শব্দের সংযোগে – ‘কলি’ যার মানে অস্থির, এবং ‘কাতা’ যার মানে বদমাইসের দল বা খুনেরা। অনেক পরে ব্রিটিশ শাসকরা এর নাম দিয়েছিলো ক্যালকাটা – Calcutta। ভারত সরকার পুনরায় নাম বদলে করে কলকাতা স্যার রোনাল্ড রস, সি ভি রমন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, অমর্ত্য সেন এবং মাদার তেরেসা – কলকাতা শহর টোকিও ও কিয়োটোর পর এশিয়ার সবচেয়ে বেশী নোবেল বিজয়ী উপহার দিয়েছে।
বাংলাদেশের মানুষকে কলকাতার বাঙ্গালীরা আলাদা কদর করে। বয়সীরা এখনো ডাকে ‘জয় বাংলার লোক’ বলে। তাদের বিস্ময় কাটেনি যে মাছে ভাতে বাঙালী যুদ্ধ করে নিজেদের জন্য একটা গোটা দেশকেই স্বাধীন করে ফেলেছে ।
কলকাতার রেলওয়ে সার্ভিস না দেখলে বুঝতে পারা যায় না আসলে সার্ভিস কিভাবে করতে হয়।
বোঁনগাও থেকে শিয়ালদহ যেতে লাগে প্রায় তিনঘন্টা। তামিম আর শুভা শিয়ালদহর আগের স্টেশন উল্টডাঙ্গা বা বিধাননগর জংশনে নেমে গেল।
বিধাননগরের পূর্ব নাম ছিলো সল্টলেক বাংলাই লবণহ্রদ। পরে এটাকে বিধাননগর করা হয়েছে। ট্রেন থেকে নেমে আন্ডারপাস ধরে রোডে উঠল। তখন বিকাল বিকাল ভাব চলে এসেছে। ঘড়িতে ৩.৩০। সিটি সেন্টারে আসলেই চোখে পড়লো একটি লাইফসাইজ মডেল, একটি ঘোড়া চালিত ট্রাম। সারা কলকাতা জুড়ে এটি ঐতিহ্য বাহি গণপরিবহন। কলকাতা এসেছে আর কেউ রাস্তাই ট্রাম দেখেন নি,এটা এক প্রকার অসম্ভব।
মুকুন্দপুর যাওয়ার বাসে উঠতেই বিকালের নরম আলো মুখে এসে পড়ল দুজনের। একদম পিছনের দিকে একটি সিটে গিয়ে বসে পড়ল তারা।জানলা দিয়ে ফুটপাতের দোকান গুলো দেখছে শুভা।চুল উড়ছে বাতাসে।তামিমের দিকে তাকিয়ে বলল,
———–‘কি সুন্দর!তাই নারে?’
তামিম ছোট্ট করে বলল,
———‘হুম।’
এরপর ধর্মতলা গেল।একদিক থেকে কলকাতার মূল পয়েন্ট এটিই। অনেক রাত হয়ে আসায় দোকানপাট তেমন খোলা নেই । হালকা হালকা কুয়াশাচ্ছন্ন চারিদিক, চাদের আলো কেবল ফুটছে। কলকাতাতে আসলে আরেকটা জিনিস দারুণ ভাবে চোখে পড়বে সেটা হলো কাক। এদিক ওদিক সেদিক সবখানে।
প্রথমে গেল ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালসসে। ভারতসম্রাজ্ঞী উপাধি প্রাপ্ত রাণি ভিক্টোরিয়ার মূর্তিটি আগাগোড়া শ্বেত পাথরের তৈরি। এখানে একটা জাতীয় সংগ্রহশালাও আছে।ধর্মতলাতে এসে সবার আগে যেটা চোখে পড়বে সেটা সেন্ট পল’স। এটি একটি আ্যালিংক্যান ক্যাথিড্রাল। মূলত এটি গথিক স্থাপত্য। এশিয়ার সর্ব প্রথম এপিস্কোপ্যাল চার্চ এটি। ১৯ শ শতকে ইউরোপীয়দের আনাগোনা বেড়ে যাওয়াই তাদের কথা মাথায় রেখেই এই নির্মাণ করা। আরেকটু সামনে লেনিন রোড এর শুরুতেই দেখতে পাওয়া যায় মুঘল সম্রাজ্ঞী টিপু সুলতানের কনিষ্ঠ পূত্র প্রিন্স গোলাম মোহাম্মদের নির্মিত ঐতিহাসিক টিপু সুলতান মসজিদ।মসজিদের ওপর পাশে আছে বাঙালির পরচয় বহন করা ” কে সি দাসের মিষ্টির দোকান”। মূলত কে সি দাসের দাদা নবীনচন্দ্র ছিলেন এই মিষ্টির কারিগর। তাকে “বউবাজারের কলম্বাস ” বলে ডাকা হতো এক সময়।
দাদার ক্যারিশমাকে “কে সি দাস” ব্রান্ড করেছিলেন কে সি দাস। ছানার রসগোল্লা সহ এখানে পাবেন ছানার পায়েস”, “অমৃত কলস”
যা বাঙালীর রসনাকে তৃপ্ত করার জন্য যথেষ্ট।
. বউবাজার অঞ্চলদিয়ে হাটতে হাটতে চলে এল কলেজ স্ট্রিটে। বই প্রেমিক মানুষদের জন্য এম স্বর্গ রাজ্য। বউবাজার অঞ্চলের গণেশ চন্দ্র এভিনিউ মোড় থেকে মহাত্মা গান্ধী রোড মোড় পর্যন্ত দেড় কিলো রাস্তাটাই মূলত কলেজ স্ট্রিট। সারা পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম বইয়ের বাজার এটি। বলা হয় যে বই কলেজ স্ট্রিটে পাওয়া যাবে না সে বইয়ের অস্তিত্বই নেই। ভালো করে খুঁজলে নাকি কোনো কোনো বইয়ের মূল হাতে লেখা কপিও খুঁজে পেয়ে যেতে পারা যায়।হাটতে হাটতে প্রায় মধ্যরাত হয়ে গেছে। খিদেও পেয়েছে জমপেশ। তাই দেরি না করে বাজ ধরে সোজা চলে গেল ওরা পার্ক স্ট্রিট। এখান কার আরসালান বিরিয়ানি হাউজের আলাদা নাম ডাক শুনেছে তামিম। নিজে তাই স্বয়ং চলে এল নিজেকে বিরিয়ানি প্রেমিক প্রমাণের জন্য। জমপেশ খাওয়া চলল।শুভাও পেটপুরে খেল।বলল,
——–‘উফ কলকাতা,নামে, দামে, খাবারে সবদিক দিয়েই মুগ্ধকর। ‘
হোটেলের দ্বিতীয় তলাতে গিয়ে কোনার একটা টেবিলে বসল। মেনু কার্ড দেখে তামিম বরাবরের মতো কনফিউজড হয়ে গেলাম। কি নাম! চিকন মাটন, হায়দ্রাবাদি, লখনৌ! এগুলো সব বিরিয়ানিরর নাম। ভাবা যায়? আর যারা নিরামিষ তাদের জন্য রিয়েছে ভেজিটেবল বিরিয়ানি।
শেষ মেশ অর্ডার দিল শুভা।তামিমের কনফিউশন দেখেই সে মেনু হাতে নিল।অর্ডার দিল লখনৌ। ওয়েটার প্লেটে বিরিয়ানি আনার পর আমি স্তম্ভ হয়ে গেলা। বিরিয়ানি না বিরিয়ানি ঢিবি? এত একজনের পক্ষে শেষ করা দুষ্কর। যা হোক খাওয়ার পর বুঝা গেল, কেন এর এত নাম ডাক।কলকাতার পূর্বে পরিকল্পিত ভাবে গড়ে উঠেছে নিউটাউন। বিশ্ব বাংলা সরণি ধরে রাজারহাট। বলা যায় এটি নতুন কলকাতা। সব আইটি কোম্পানি সহ মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানি গুলো এদিকে গড়ে উঠেছে। যেতে যেতে চোখে পড়ে নারকেল বাগানে বিশ্ব বাংলা রেস্টুরেন্ট, বিশ্ব বাংলা অডিটোরিয়াম, রবীন্দ্র তীর্থ। আরেকটু সামনে এগোলে ইকো পার্ক আর ঠিক তার দুই নাম্বার গেটের বিপরীতে দিকে আছে মাদার ওয়াক্স মিউজিয়াম৷ এত দূর এসে কিছুই দেখা কপালে ছিলো না ওদের। কারণ সোমবার এই এলাকা জুড়ে ছুটি। সব বিনোদনের স্পট গুলো অফ থাকে।কলকাতা দাদা দের শহর। এখানে সবাই দাদা। এখানে না এলে বাঙালি আনার যে স্বাদ তার ষোলকলা পূর্ণ হবে না। এবার হোটেলের দিকে রওনা দিল তামিম ও শুভা।শুভা গাড়িতে উঠে বসেই বলল,
———-‘আর কি কি আছে দেখার মত?’
তামিম হাতে গুনতে গুনতে বলল,
———-‘এখানে দেখার মতো আরো আছে হাওড়া ব্রিজ, কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, সায়েন্সে সিটি, শান্তি নিকেতন। ‘
দুজনের মাঝে নিরবতা।তামিম কিছু একটা আজ বলবে।তবে বলতে পারার মত শব্দ তার শব্দভান্ডারে আসছে না।কি আশ্চর্য! কি কর্দম কথা!
চলবে……
©ইভা আহমেদ চৌধুরী

এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

▶ লেখকদের জন্য পুরষ্কার-৪০০৳ থেকে ৫০০৳ মূল্যের একটি বই
▶ পাঠকদের জন্য পুরস্কার -২০০৳ থেকে ৩০০৳ মূল্যের একটি বই
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক:
https://www.facebook.com/groups/golpopoka/

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে