কে কোথায় যায়? পর্ব ৩০

0
683

কে কোথায় যায়? পর্ব ৩০

এটি একটি অফিসপাড়া। আশেপাশে প্রচুর সরকারী অফিস। লাঞ্চ টাইমে সবাই এই গলিতে খেতে আসে। গলির দুই পাশে বিভিন্ন খাবারের দোকান। পাশে বেঞ্চ পেতে দেওয়া রয়েছে। দোকান থেকে খাবার নিয়ে যে যার মত বেঞ্চে বসে খাচ্ছে। তামিম ‘চিত্ত বাবুর দোকান’ থেকে চিকেন স্ট্যু কিনল। একটা প্লেটে ঝোলসহ চিকেন, একটি করে সেদ্ধ পেপে ও গাজর, দুই পিস ভাজা পাউরুটি। সিম্পলের মধ্যে গর্জিয়াস খাবার। স্বাদও বেশ ভালো। তবে যারা ঝাল বেশি খায় তাদের কাছে এই খাবার পানসে লাগতে পারে।শুভা বলল,
———‘চা খাওয়া!’
তামিমের চোখ যেন কোটর থেকে বেরিয়ো আসতে চাইল।বলল,
———‘এই না এত কিছু খেলি?এরপরও চা?তোর জামাই দুই দিনে ফকিন্নি হবে।’
এরপর খেল চা। এই প্রথম কাচের কাপে চা পেল। এই চা টি ওদের খাওয়া এখন পর্যন্ত সেরা চা। আশেপাশের দোকানে আর কিছু খাওয়ার আছে কিনা খুজল। বাকি খাবারগুলো তেমন একটা সুবিধার মনে হলো না।
হাটাবার হাটা শুরু হলো আবার। ম্যাপে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল দেখা যাচ্ছে। তার আশেপাশে সবুজে ঘেরা বেশ কিছু জায়গা। ঠিক করল ওদিকেই যাবে। হেটে হেটে এসপ্ল্যানেড দিয়ে যেতে লাগল। অনেক বড় বড় রাস্তা। এক দোকানে বসে জিড়িয়ে নিয়ে চা খেয়ে আবার হাটা দিল। চার রাস্তার মোড়ে চলে এল। এখানে ট্রাফিক পুলিশ না থাকলেও সবাই সিগনাল মেনে চলে যা আমাদের দেশে চিন্তাই করা যায় না। সিগনাল মেনে চার রাস্তার মোড় পার হল। সামনে দেখল প্রেস ক্লাব। তার আরো সামনে চার রাস্তার মোড়ে পেল গান্ধীজির এক স্ট্যাচু। তার ছবি তুলে সামনে এগেলো দুজন।
বেশ সুন্দর পরিবেশ। চারদিকে সবুজে ঘেরা। শহরে থেকে খারাপ লাগছিল। এখন বিশুদ্ধ বাতাস পেয়ে ভালো লাগছে। দূরে কোলাহল শোনা যাচ্ছে। সামনে যেতেই পেয়ে গেল গড়ের মাঠ। বিশাল বড় এক মাঠ। সেখানে সবাই খেলাধুলা করছে। তামিম ভারতীয় লেখকদের বইয়ে এই গড়ের মাঠের কথা অনেক পড়েছে।
গড়ের মাঠে জিড়িয়ে আবার হাটা দিল দুজন। পথে পেল ইলিয়ট পার্ক। তবে এই পার্কের ভেতর না ঢুকে আরো সামনে এগলো। গন্তব্য সেন্ট পলস ক্যাথেড্রাল। ইন্টারনেটে এর ছবি দেখে ভালো লেগেছে দুজনের। ক্যাথেড্রালে এসে সত্যিই অবাক হয়ে গেল। খুবই সুন্দর ডিজাইনের বিল্ডিং। কিছু ছবি তুলে ভেতরে গেল। ভেতরে মিউজিয়ামের মত অনেক ছবি ও তার সাথে সবকিছু লেখা রয়েছে। চার্চে গিয়ে সবার সাথে বসল। বাকিরা প্রার্থনা করলো। ওরা বসে বসে দেখল। বিশাল উচু এক ছাদ। ছাদের উপর নানান রঙের কাচ দেয়া। আর দেয়ালজূড়ে খুবই সুন্দর কারুকাজ করা। দেখেই অসাধারণ এক ভালো লাগা অনুভব হচ্ছিলো শুভার আর তামিমের।শুভা বলল,
——-‘ওয়াও!’
সেন্ট পলসে বেশ কিছু সময় কাটিয়ে বের হল। পিছন দিকে হাটতে বিড়লা এম্পোরিয়াম পড়ল। সেখানে যেয়ে বুঝল যে, এটি আমাদের শহরের নভো থিয়েটারের মত। মাত্রই সন্ধ্যার শো টি শুরু হয়ে গেছে। পরের শো এক ঘন্টা পরে। তাই আর অপেক্ষা করল না।
পাশেই ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল। বিশাল এলাকা নিয়ে এটি। বুঝা গেল,পুরাটা কভার করা সম্ভব না। প্রচুর হাটতে হবে আর এখন সন্ধ্যা হয়ে গেছে। তারপরেও গেল। ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের পুকুড়পাড়ে গেল। তারপর হেটে হেটে আরেক রাস্তা দিয়ে বের হয়ে গেল। এখন ফেরত যাওয়া উচিত। অনেক হাটা হয়েছে। হেটেই যাবে নাকি গাড়ি নিবে সেটা ভাবতে ভাবতে একটি খাবারের দোকান পেয়ে গেল।শুভা বলল,
———‘হেঁটে যাব,চল।’
তামিম চারপাশ দেখে বলল,
——–‘কিচ্ছু খেয়ে নেই?চল!’
মমো আর রোল বিক্রি করছে। গপাগপ চিকেন মমো খেয়ে ফেলল।
হেটেই যাবে ঠিক হল। নিউ মার্কেটে দিয়ে হোটেলে গেল। তখন রাত দশটা বেজে গিয়েছে। রুম থেকে ফ্রেশ হয়ে আবার নিউ মার্কেট গেল। চকোলেট কিনতে হবে। চকোলেটের পাইকারী বাজারে গেল। এত চকোলেট দেখে মাথা নষ্ট অবস্থা! ৪-৫ বক্স কিটক্যাট, পার্ক, মাঞ্চ চকোলেট কিনে ফেলল। রাতে খাওয়ার জন্য কিছু চকোলেট, চিপস আর কেক নিয়ে নিল। কাল সকাল ৯টায় চলে যাওয়ার সময়। আজই কলকাতায় ওদের শেষ রাত।
নীহারিকা কল দিল।শুভা ব্যাস্থ হয়ে কল রিসিভ করল।
নীহারিকা ঝাঁঝালো কন্ঠে বলে উঠল,
———‘কবে আসবি তোরা?আমরা বাংলাদেশে এসে পুরাতন হইয়া গেছি আর তোরা কিনা ডিস্কো ডান্স দিচ্ছিস?’
শুভা হাসল।তামিম ফোন কেড়ে নিয়ে বলল,
———-‘শান্তিতে তো থাকতে দিলি না।কালই আসতেছি!’
নীহারিকা বলল,
———-‘ওকে বলেছিস?তোর মনের ইয়ে?’
তামিম মুখ গোমড়া করে বলল,
———-‘সময় কই?কাল বলব শিউর!’
নীহারিকা ব্যাস্থ হয়ে বলল,
———‘বলে দিস।আচ্ছা, রাখি।’
তামিম ফোন রেখে শুভার দিকে তাকাল।তামিমের মনটা যে প্রখর রোদের তাপে শূন্য মাঠের মত খা খা হয়ে আছে।এটা কি শুভা জানে না?
চলবে…..
©ইভা আহমেদ চৌধুরী

এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

▶ লেখকদের জন্য পুরষ্কার-৪০০৳ থেকে ৫০০৳ মূল্যের একটি বই
▶ পাঠকদের জন্য পুরস্কার -২০০৳ থেকে ৩০০৳ মূল্যের একটি বই
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক:
https://www.facebook.com/groups/golpopoka/

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে